এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক  বা এডিবি আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংক হিসেবে পরিচিত। এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরও দ্রুত, বেগবান ও সহজ করাই এ ব্যাংকটির মূল উদ্দেশ্য। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ইতিহাস এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা পেয়েছে মূলত কিছুসংখ্যক জাপানিদের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে। তারা ১৯৬২ সালে ব্যাংকের মাধ্যমে আঞ্চলিক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রাইভেট প্ল্যান বা বেসরকারি পরিকল্পনা ও চিন্তাধারা গ্রহণ করে। পরে জাপান সরকার এতে সরাসরি জড়িয়ে পড়ে। জাপানিরা অনুভব করেছিল, বিশ্বব্যাংক এশিয়ার অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ করবে না। ফলে এশিয়া তথা এশীয়দের তেমন কোনো উন্নয়ন ঘটবে না। ফলে একটি ব্যাংক প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গঠনের মাধ্যমে জাপান লাভবান হবে। অতঃপর ১৯৬৬ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বা এডিবি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই জাপান ব্যাংকটির শীর্ষস্থানে আসীন হয়। তারা সভাপতির আসন দখল করে। এ ছাড়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সংরক্ষিত পদও তাদের দখলে। এরমধ্যে প্রশাসনিক বিভাগ অন্যতম। জাপানের অর্থনৈতিক লাভের প্রেক্ষাপটে এডিবি কাজ করে যায়। এর অধিকাংশ ঋণ সহায়তা কার্যক্রমে ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ফিলিপাইনকে সম্পৃক্ত করে। কেননা জাপানের সঙ্গে দেশগুলোর ব্যাপক বৈদেশিক লেনদেন পরিচালিত হয়। ১৯৬৭-৭২ সাল পর্যন্ত দেশগুলো এডিবির মোট ঋণের ৭৮.৪৮% অর্থ পেয়েছিল। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সদস্য দেশ জাতিসংঘের এশীয় এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক কমিশন (সাবেক ইউএনএসকেপ)-এর সদস্য এবং অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর সমন্বয়ে ব্যাংকটি গঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালে ব্যাংকের সদস্য সংখ্যা ছিল ৩১টি। ২০২০ সালের ২৬ আগস্ট পর্যন্ত ৬৮টি দেশ এর সদস্য হয়। এরমধ্যে ৪৮টি দেশই এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার। বাকি ২০টি দেশ বহিঃবিশ্ব থেকে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ এডিবির সদস্য পদ লাভ করে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) গঠনতন্ত্র বিশ্বব্যাংকের মতো করেই এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সদস্যভুক্ত দেশগুলোর অর্থনৈতিক বুনিয়াদের ওপর নির্ভর করে ভোট প্রদানের সীমারেখা নির্ধারিত করা হয়েছে যা বিশ্বব্যাংকের সমস্তরের। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপান প্রত্যেকেই ৫ লাখ ৫২ হাজার ২১০টি শেয়ারের অধিকারী। এরফলে তারা প্রত্যেকেই মোট শেয়ারের ১২.৭৫৬% শেয়ার নিয়ে শীর্ষস্থান দখল করে আছে। এ ছাড়াও চীন ২ লাখ ২৮ হাজার এবং ভারত ২ লাখ ২৪ হাজার ১০ সংখ্যক শেয়ার নিয়ে যথাক্রমে ৬.৪২৯% এবং ৬.৩১৭% দখল করেছে। এরফলে তারা ২য় এবং ৩য় স্থান অর্জন করেছে। ব্যাংকের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক হিসেবে ১২ সদস্যের বোর্ড অব গভর্নেস রয়েছে। পর্যায়ক্রমে তারা পরিচালক ও সহকারী পরিচালক নির্বাচিত করে থাকে। তার মধ্যে এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে আটজন এবং বহিঃবিশ্ব থেকে চারজন অন্তর্ভুক্ত হয়। ব্যাংকের তিনটি তহবিল রয়েছে। সেগুলো হলো—এশীয় উন্নয়ন তহবিল, বিভিন্ন উদ্দেশ্যে বিশেষ তহবিল ও কারিগরি সাহায্য তহবিল। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কার্যালয় বোর্ড অব গভর্নেস থেকে ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হয়। তিনি পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হিসেবে ব্যাংক পরিচালনা করে থাকেন। প্রেসিডেন্ট পাঁচ বছর সময়কালের জন্য নিযুক্ত হন। প্রয়োজনে তিনি আবারও নির্বাচিত হতে পারেন। সচরাচর এবং সর্বোবৃহৎ মালিকানার অধিকারী বিধায় জাপানিরাই এর প্রেসিডেন্ট হয়ে থাকেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন মাসাতসুগু আসাকাওয়া। তিনি ২০১৩ সালে হারুহিকোর স্থলাভিষিক্ত হন। এডিবির সদর দপ্তর ফিলিপাইনে অবস্থিত। এ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় এর প্রতিনিধিত্বকারী কার্যালয় বা শাখা রয়েছে। ব্যাংকে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। সদস্যভুক্ত ৫৫টি দেশ থেকেই কর্মরত ও নিযুক্ত রয়েছেন তারা। তার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশিসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীই ফিলিপাইনের অধিবাসী বা ফিলিপিনো।  
১৭ নভেম্বর, ২০২৩
X