বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
নৌকা হারিয়ে আ.লীগ প্রার্থীর ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস
বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু) আসনে দীর্ঘ ২২ বছর পর নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দেওয়া হয়েছিল। প্রার্থী ছিলেন কাহালু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র হেলাল উদ্দিন কবিরাজ। কিন্তু আবারও ১৪ দলীয় জোটের শরিক জাসদকে আসনটি ছেড়ে দিতে হয়। এতে আশাহত হয়ে নৌকা হারিয়ে আ.লীগ প্রার্থী হেলাল উদ্দিন কবিরাজ ‘মনে হয় কোনো জন্মে পাপ করেছি’ লিখে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেই স্ট্যাটাসে নেটিজেনসহ ভক্তরা নানা মন্তব্যও করছেন। কাহালু ও নন্দীগ্রাম উপজেলার আ.লীগের একাধিক নেতাকর্মী জানান, বগুড়া-৪ আসনটি দীর্ঘদিন জামায়াত ও বিএনপির দখলে ছিল। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নন্দীগ্রামের শহীদুল আলম দুদুকে নৌকার মাঝি করা হয়েছিল। ১৪ দলীয় জোট গঠনের পর থেকে এই আসনের জনগণ আ.লীগের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেননি। এই আসনটি জেলা জাসদ সভাপতি এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনকে ছেড়ে দেওয়ায় আমরা শোকাহত। ওই ব্যক্তি আ.লীগের ভোটে দুবার এমপি হন। কিন্তু কখনও আ.লীগের নেতাকর্মীদের আপদে-বিপদে পাশে দাঁড়াননি। তিনি (তানসেন) শুধু নিজস্বার্থ দেখেছেন। তার নিজ দলের নেতাকর্মীরাও ক্ষুব্ধ। এ নিয়ে ১১ ডিসেম্বর দুপুরে নন্দীগ্রাম উপজেলা জাসদের নেতাকর্মীরা কর্মিসভা থেকে প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসনেকে বয়কটের ঘোষণা দেন। উপজেলা জাসদের সভাপতি কামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে কর্মিসভায় বক্তব্য রাখেন, জাসদ নেতা শামীম হোসেন, শহীদুল ইসলাম, অনিল চন্দ্রসহ অনেকে। তারা বলেন, বিগত সবগুলো জাতীয় নির্বাচনে আমরা তার (তানসেন) পক্ষে ভোট করেছি। তিনি দুবার এমপি নির্বাচিত হলেও কখনও নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করেননি। তাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো নেতাকর্মী জাসদপ্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনের ভোট করবেন না। এই নির্বাচনে আমরা পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করব। সভা শেষে নন্দীগ্রাম উপজেলা জাসদ সভাপতি কামরুজ্জামান বলেন, আমরা চাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে হোক। কিন্তু আমাদের দলীয় প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনের পক্ষে এবার ভোট করব না। তার নীতি-নৈতিকতার খুব অভাব। তিনি বারবার দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। এ ছাড়া জাসদ নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করেননি। এজন্য আমিসহ আমাদের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনের ভোট বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ প্রসঙ্গে বঞ্চিত প্রার্থী কাহালু উপজেলা আ.লীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিন কবিরাজ বলেন, মনে কষ্ট পেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছি। অন্য কোনো কিছু মনে করে দেইনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থাশীল। তিনি যা ভালো মনে করেছেন, তাই করেছেন। দলের বাইরে কথা বলার ইচ্ছা নেই। নন্দীগ্রাম উপজেলা আ.লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন রানা বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও আ.লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই আমাদের সিদ্ধান্ত। তিনি যাকে প্রার্থী করবেন, তার পক্ষেই আমরা কাজ করব। জানতে চাইলে বগুড়া-৪ আসনে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী জেলা জাসদের সভাপতি এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন বলেন, এর আগেও ১৪ দল থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছি। উপজেলা পর্যায়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি থাকতে পারে। এটাও থাকবে না।
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৩

আশুলিয়ায় ট্রিপল মার্ডার / কবিরাজ সেজে বাসায় ঢুকে কাঙ্ক্ষিত টাকা না পেয়ে হত্যা
পোশাক শ্রমিক দম্পতি মোক্তার হোসেন ও সাহিদা বেগমের বাড়িতে লক্ষাধিক টাকা পাওয়া যাবে—এ আশায় লুটের পরিকল্পনা করেন সাগর আলী ও তার স্ত্রী ঈশিতা বেগম। কবিরাজ সেজে মোক্তার ও সাহিদার বাসায় ঢোকেন তারা। কবিরাজির ওষুধের কথা বলে ঘুমের ওষুধ সেবন করানো হয় মোক্তার, সাহিদা ও তাদের ১২ বছরের সন্তান মেহেদী হাসান জয়কে। পরে তাদের হাত-পা বেঁধে পুরো বাসা খুঁজে মেলে মাত্র ৫ হাজার টাকা। কাঙ্ক্ষিত টাকা না পেয়ে শিশু জয় ও তার পোশাক শ্রমিক বাবা-মাকে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন সাগর ও ঈশিতা। গত ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে সাভারের আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় বহুতল ভবনের চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে এ ঘটনার শিকার হয় ওই পরিবার। ৩০ সেপ্টেম্বর ফ্ল্যাট থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে ভবনের ভাড়াটিয়ারা পুলিশকে জানান। পরে তাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় আশুলিয়া থানায় গত রোববার একটি হত্যা মামলা হয়। এ মামলায় র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৪ অভিযান চালিয়ে গত সোমবার গাজীপুরের শফিপুর থেকে সাগর আলী ও তার স্ত্রী ঈশিতাকে গ্রেপ্তার করে। গতকাল মঙ্গলবার কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। এতে জানানো হয়, প্রথমে অর্থের লোভে ও পরে কাঙ্ক্ষিত অর্থ না পেয়ে ক্ষোভ থেকে হত্যাকাণ্ডটি ঘটায় সাগর ও ঈশিতা। গত ২৮ সেপ্টেম্বর সাভারের বারইপাড়ার একটা চায়ের দোকানে ভুক্তভোগী মোক্তারের সঙ্গে পরিচয় হয় সাগরের। মোক্তার তখন পাশের একটি কবিরাজি ও ভেষজ ওষুধের দোকানে তার শারীরিক সমস্যার বিষয়ে চিকিৎসা নিয়ে কথা বলছিলেন। সাগর জানতে পারেন মোক্তার ওই দোকানে ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসা বাবদ ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ করেছেন। কিন্তু ফলাফল পাননি। সাগর কৌশলে মোক্তারকে ডেকে নিয়ে আসেন সেখান থেকে। কথায় কথায় জানতে পারেন মোক্তারের কবিরাজি চিকিৎসায় আগ্রহ ও আস্থা রয়েছে। মোক্তার তার ও তার পরিবারের বেশ কিছু শারীরিক সমস্যার কথাও সাগরকে জানান। সাগর তখন মোক্তারকে জানান, তার স্ত্রী ঈশিতা একজন কবিরাজ। তিনি মোক্তারের পরিবারের সমস্যার সমাধান করে দেবেন। একপর্যায়ে চিকিৎসার জন্য সাগরের সঙ্গে মোক্তারের ৯০ হাজার টাকার চুক্তি হয়। পরে কবিরাজি ওষুধের কথা বলে পরিবারের সবাইকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তাদের টাকাসহ মূল্যবান সামগ্রী লুট করবেন। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী সাগর গাজীপুরের মৌচাক এলাকার একটি ফার্মেসি থেকে ১ বক্স (৫০টি) ঘুমের ওষুধ কিনে আনেন। গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে মোক্তারের সঙ্গে কথা বলে নেন সাগর। চুক্তি অনুযায়ী ৯০ হাজার টাকা দিয়ে দেওয়া হবে এই আশ্বাস দেন মোক্তার। আশ্বাস পেয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে সাগর ও ঈশিতা মোক্তারের বাসায় যান। সাগরের স্ত্রী ঈশিতা সমস্যার কথা শুনে ইসপগুলের শরবতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসার ওষুধ বলে মোক্তারের পরিবারের তিন সদস্যকে খাওয়ান। কিছু সময় পরই স্ত্রী-সন্তানসহ ঘুমের কোলে ঢলে পড়েন মোক্তার। ঘুমন্ত মোক্তার ও তার স্ত্রীকে পৃথক দুটি কক্ষে হাত-পা বেঁধে রাখেন তারা। খন্দকার মঈন জানান, দুজনকে হাত-পা বেঁধে রাখার পর মোক্তারের মানিব্যাগ, তার স্ত্রীর পার্স ও বাসার অন্যান্য স্থানে অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রীর জন্য তল্লাশি করে মানিব্যাগে পায় মাত্র ৫ হাজার টাকা। তখন নড়াচড়া করছিলেন মোক্তার। কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ টাকা না পাওয়ায় ক্ষিপ্ত হন সাগর। দুজন মিলে বঁটি দিয়ে প্রথমে মোক্তারের গলায় উপর্যুপরি কোপ দিয়ে হত্যা করেন। পরে অন্য কক্ষে গিয়ে মোক্তারের স্ত্রী সাহিদা বেগম ও ছেলে মেহেদী হাসান জয়কে একই বঁটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। মৃত্যু নিশ্চিত করার পর টাকা, মোক্তারের হাতে থাকা আংটি নিয়ে পালিয়ে যান সাগর ও ঈশিতা। এরপর দুজন ভিন্ন পথে রিকশায় গাজীপুরের মৌচাকে তার শ্বশুরবাড়ি (ভাড়া বাসায়) আসেন এবং সেখানেই অবস্থান করতে থাকেন। ঘটনাটি মিডিয়া ও আশপাশের এলাকায় ব্যাপকভাবে প্রচার হলে তারা দুজন একসঙ্গে আত্মগোপনে যান। পরে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গাজীপুরের শফিপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে র্যাব। এর আগেও একই কায়দায় ২০২০ সালে টাঙ্গাইলের মধুপুরে একই পরিবারের চারজনকে গলা কেটে হত্যা করেন সাগর। এই মামলায় প্রায় ৩ বছর কারাভোগের পর গত জুনে জামিনে বেরিয়ে আসেন সাগর। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন কালবেলাকে জানান, জেলে থাকা অবস্থায় সাগরের সঙ্গে এক রাজনৈতিক নেতার পরিচয় হয়। ওই নেতাও কারাগারে রয়েছেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় সাগর ও ওই রাজনৈতিক নেতার মধ্যে সখ্য হয়। একপর্যায়ে ওই নেতা সাগরের সঙ্গে চুক্তি করেন, জামিনে বের করা হবে সাগরকে। বের হওয়ার পর জেলে থাকা রাজনৈতিক নেতার প্রতিপক্ষকে হত্যা করবে। চুক্তি অনুযায়ী জেলে থাকা রাজনৈতিক নেতার সহযোগিতায় গত জুন মাসে জামিনে বেরিয়ে আসেন সাগর। জেলগেট থেকেই কারাগারে থাকা রাজনৈতিক নেতার সহযোগীরা সাগরকে রিসিভ করে ৩ লাখ টাকাও দেন। টাকা নেওয়ার পর সাগর ওই কাজটি না করে আত্মগোপনে চলে যান। এক জেলা থেকে অন্য জেলায় নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে থাকতে শুরু করেন। জুলাই মাসে অবৈধ পথে পার্শ্ববর্তী দেশে গিয়ে ২০-২৫ দিন থেকে আসেন সাগর। আগস্ট মাসে দেশে ফিরে এসে কুমিল্লায় কিছুদিন অবস্থান করেন। পরে গত ২৬ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের মৌচাক এলাকায় তার শ্বশুরবাড়িতে আসেন। এরই মধ্যে লক্ষাধিক টাকা লুটের জন্য ২৯ সেপ্টেম্বর কবিরাজির কথা বলে মোক্তারের বাসায় ঢুকে তার পরিবারের তিনজনকে হত্যা করেন। র্যাব জানিয়েছে, জেলে থাকা রাজনৈতিক নেতার প্রতিপক্ষ ও ট্রিপল মার্ডারের শিকার হওয়া মোক্তারের পরিবার ভিন্ন। কারাগারে থাকা অবস্থায় রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে চুক্তি ও হত্যার পরিকল্পনায় সাগরকে জামিন করানোর বিষয়ে গ্রেপ্তার সাগরের দেওয়া তথ্যগুলো র্যাব যাচাই-বাছাই করছে।
০৪ অক্টোবর, ২০২৩
X