বান্দরবানে সেনা অভিযানে কেএনএফ সন্ত্রাসী সদস্য নিহত
বান্দরবানে সেনাবাহিনীর অভিযানে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) এক সন্ত্রাসী নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৭ মে) জেলার কেওক্রাডং পাহাড় সংলগ্ন দুর্গম দার্জিলিং পাড়ায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।  পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, অভিযানে কেএনএ সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করা বাঙ্কার, পর্যবেক্ষণ চৌকি ছাড়াও ৩টি একে-২২ রাইফেল, ১টি শটগান, ৭১ রাউন্ড তাজা অ্যামোনিশন, ১৫৭ রাউন্ড শটগান অ্যামোনিশন, বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক সরঞ্জামাদি, ১টি ড্রোন, ৩টি জুম্মল্যান্ডের পতাকা ও মোবাইল ফোনসহ ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়। রুমা থানার ওসি শাহজাহান জানান, রুমা দার্জিলিং পাড়া থেকে একজন কেএনএফ সদস্যের লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। তবে এখনও নিহত কেএনএফ সদস্যের নাম পরিচয় জানা যায়নি। ময়নাতদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে। উল্লেখ্য, গত ২ ও ৩ এপ্রিল রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি, অস্ত্র লুট ও অপহরণের ঘটনা ঘটায় কেএনএফ সন্ত্রাসীরা। এরপর থেকে পাহাড়ে শুরু হয় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ অভিযান। এপর্যন্ত যৌথ অভিযানে ৫ জন কেএনএফ সদস্য নিহত হয়েছেন। এছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে কেএনএফ’র ৮২ সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে যৌথ বাহিনী।
০৭ মে, ২০২৪

সেনাবাহিনীর অভিযানে ২ কেএনএফ সন্ত্রাসী নিহত
বান্দরবানের রুমা উপজেলায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) দুই সদস্য নিহত হয়েছেন। রোববার ভোরে দুর্গম বাকলাইপাড়া এলাকায় সেনাবাহিনীর অভিযান পরিচালনার সময় এ ঘটনা ঘটে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। আইএসপিআর জানায়, রাত সাড়ে ৩টার দিকে সেনাবাহিনীর টহল দল ওই এলাকাটি ঘেরাও করে তল্লাশি করে। ভোর ৪টা ৫৫ মিনিটে কেএনএফের সন্ত্রাসীরা টহল দলের ওপর গুলি চালায়। সেনাবাহিনীও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে কেএনএফের দুই সন্ত্রাসী নিহত এবং বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হন। নিহত দুজন থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি করা দলের সদস্য ছিলেন বলে আইএসপিআর জানিয়েছে। ওই এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে সেনাবাহিনীর টহল দল তিনটি এসবিবিএল, বিপুলসংখ্যক কার্তুজ, ওয়াকিটকি সেট, মোবাইল ফোন এবং ইউনিফর্ম উদ্ধার করেছে। অভিযান এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে তল্লাশি কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর। ২ এপ্রিল রুমা উপজেলার সোনালী ব্যাংকে আক্রমণ করে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী। তারা পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ১৪টি অস্ত্র লুট করে নিয়ে যায়। অপহরণ করা হয় ব্যাংকটির ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে। তবে দুদিন পর রুমার একটা পাহাড়ি এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। রুমার ঘটনার পরদিন থানচি উপজেলার সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের দুটি শাখা থেকে সাড়ে ১৭ লাখ টাকা লুট করে অস্ত্রধারীরা। দুটি ঘটনায় কেএনএফ বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপর থেকে লুট হওয়া অস্ত্র-অর্থ উদ্ধার, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রুমা ও থানচিতে অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ সদস্যের যৌথ বাহিনী। অভিযানে বিভিন্ন এলাকা থেকে এখন পর্যন্ত ৭৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
২৯ এপ্রিল, ২০২৪

গুচ্ছ পরীক্ষায় হামলার হুমকি দিয়েছিল কেএনএফ
বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্রে হামলার হুমকি দিয়েছিল পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। হামলার মাধ্যমে বড় সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে জিম্মি করার উদ্দেশ্য ছিল তাদের। গতকাল শনিবার গুচ্ছের ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ হুমকির কথা জানান ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন। হুমকির পর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে কর্তৃপক্ষ। উপাচার্য বলেন, ‘পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কেএনএফ আমাদের একটা চিঠি দিয়েছিল। চিঠিতে তারা জানিয়েছিল, আমাদের গুচ্ছের বড় কেন্দ্রগুলোতে হামলা করবে। এ হামলার মাধ্যমে তারা বড় সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে নেবে। এ ধরনের একটি চিঠি পাওয়ার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবগত করেছি। তারা আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছে।’ অধ্যাপক আনোয়ার বলেন, ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিটি বাহিনী সর্বোচ্চ সজাগ ছিল। তারা আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। বিশেষ করে রাঙামাটি অঞ্চলের কেন্দ্রে সেনাবাহিনী সশস্ত্র অবস্থানে ছিল। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখেও হয়তো আপনার এ বিষয়ে কিছুটা অনুমান করতে পেরেছেন। গুচ্ছভুক্ত ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি) ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত একযোগে ২২টি কেন্দ্রে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ ইউনিটে পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ লাখ ৭০ হাজার ৫৯৯ জন। পরীক্ষা শেষে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, এ ইউনিটের পরীক্ষায় গড়ে ৯০ শতাংশ পরীক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। জবিতে ব্যতিক্রমী আয়োজন: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য ছিল বিশুদ্ধ পানি, মেডিকেল টিম ও চেয়ারের ব্যবস্থা। সার্বক্ষণিক সেবা দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ দুটি মেডিকেল টিম। মাগুরা থেকে পরীক্ষা দিতে আসা অনিক আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে দেখলাম পানির ব্যবস্থা আছে। এটা খুবই সুন্দর উদ্যোগ। গাজীপুর থেকে আসা এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, অনেক ক্যাম্পাসে বসার জায়গা পাওয়া যায় না। গরমে পানি ও চেয়ারের ব্যবস্থাটা খুবই ভালো উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া কেন্দ্রের বাইরে ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের সহায়তায় নিয়োজিত ছিল বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও এলাকাভিত্তিক ছাত্রসংগঠন। দূর থেকে আসা শিক্ষার্থীদের ব্যাগ, মোবাইল, বই, খাতাসহ অন্যান্য জিনিসপত্র গচ্ছিত রেখেছেন তারা। এ ছাড়াও বিনামূল্যে শরবত, বিস্কুট ও পানিও দিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। পাশাপাশি ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ছিল জয় বাংলা বাইক সার্ভিস। শাখা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ করা হয়। দেরিতে আসা শিক্ষার্থীদেরও পরীক্ষায় বসার সুযোগ: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে দেরিতে এসেছিলেন অনেক পরীক্ষার্থী। তাদেরও পরীক্ষায় বসার সুযোগ দিয়েছে প্রশাসন। ঢাকার যানজটে নির্দিষ্ট সময়ে কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারেননি বলে জানান তারা। এ বিষয়ে জবি উপাচার্য বলেন, আমাদের ভর্তি কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই এসব পরীক্ষার্থীকে কেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
২৮ এপ্রিল, ২০২৪

কেএনএফ সন্দেহে গ্রেপ্তার ৫৩ জন রিমান্ডে
বান্দরবানের রুমায় সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফের) ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার ৫৩ জনকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এর মধ্যে এক নারীকে এক দিন ও ৫২ জনকে দুদিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুটের মামলার আসামিদের হাজির করা হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. নাজমুল হোসাইনের আদালত পুলিশের রিমান্ড আবেদন এবং আসামিদের জামিন আবেদনের শুনানি করেন। পরে শুনানি শেষে প্রত্যেককে দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) বিশ্বজিৎ সিংহ জানিয়েছেন, রিমান্ড মঞ্জুর আদেশে দুটি মামলায় অন্তঃসত্ত্বা এক নারীকে কারাগারের ফটকে এক দিন ও ৫২ জনকে দুদিন করে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য বলা হয়েছে। আদালতে হাজির ৫৭ আসামির মধ্যে চারজনকে আরও অন্য মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
১৯ এপ্রিল, ২০২৪

কেএনএফ প্রধান নাথান বমের স্ত্রীকে বদলি
কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) প্রতিষ্ঠাতা ও সংগঠনের বর্তমান প্রধান নাথান বমের স্ত্রীকে বান্দরবানের রুমা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বদলি করা হয়েছে। তার নতুন কর্মস্থল লালমনিরহাটের ২০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল। নাথানের স্ত্রীর সঙ্গে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরেক সিনিয়র নার্স দিপালী বাড়ইকেও বদলি করা হয়েছে। সোমবার (৮ এপ্রিল) নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) উপসচিব মো. নাসির উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়। অফিস আদেশে আরও বলা হয়, বদলিকৃত সিনিয়র নার্সদের ৯ এপ্রিলের মধ্যে কর্মস্থলে আবশ্যিকভাবে যোগদান করবেন। নতুন কর্মস্থলে যোগদান না করলে ৯ এপ্রিল বিকেলে স্ট্যান্ড রিলিজ বলে গণ্য করা হবে। তবে বদলির পেছনে কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাথানের স্ত্রীর নাম লেলসমকিম বম। তিনি সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে এতদিন রুমা হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। উল্লেখ্য, নাথানের নেতৃত্বাধীন কেএনএফ গত ২ এপ্রিল রুমা উপজেলা সোনালী ব্যাংকে হানা দিয়ে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর ১৪টি অস্ত্র এবং চার শতাধিক গুলি লুট করে। এ ঘটনার এক দিন পরই থানচি উপজেলার সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে হানা দিয়ে প্রায় ১৮ লাখ টাকা লুট করে তারা। এসব ঘটনার পর বান্দরবানে কেএনএফের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এই অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫৬ জন গ্রেপ্তার হয়েছে বলে জানা গেছে।
১১ এপ্রিল, ২০২৪

কেএনএফ সংশ্লিষ্টতায় আরও ৪৯ জন আটক
বান্দরবানের রুমায় যৌথবাহিনী গতকাল সোমবার দিনভর অভিযান চালিয়ে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আরও ৪৯ জনকে আটক করেছে। তাদের মধ্যে ১৮ জন নারী রয়েছে। এ ছাড়া অভিযানে আটকৃতদের কাছ থেকে ৭টি দেশি বন্দুক, ২০ রাউন্ড গুলি, কেএনএফের পোশাক, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত ল্যাপটপ, দুই জোড়া বুট, একটি ছুরি ও বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হোসাইন মো. রায়হান কাজেমী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গতকাল বিকেলে আটককৃতদের বান্দরবান সদর থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। মামলা দিয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে তাদের আদালতে পাঠানো হবে। এর আগে রোববার রাতে যৌথবাহিনীর অভিযানে রুমার সোনালী ব্যাংকের সহকারী ক্যাশিয়ারসহ কেএনএফের আরও ছয় সদস্যকে আটক করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে সাতটি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। ওইদিন বান্দরবানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে কেএনএফ সন্ত্রাসীদের আটকের কথা নিশ্চিত করেছেন সেনাপ্রধান এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ। এ সময় তাদের কাছ থেকে অস্ত্র জব্দের কথাও জানান তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করে রুমার সেনা জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কেএম আরাফাত আমিন গণমাধ্যমকে জানান, রুমা সেনাবাহিনীর অভিযানে ব্যাথেলপাড়ায় অভিযান চালিয়ে ৭টি দেশি বন্দুক, ২০টি রাউন্ড গুলি, কেএনএফের পোশাক, বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় সন্দেহভাজন হিসেবে রুমা সোনালী ব্যাংকের সহকারী ক্যাশিয়ার এবং কেএনএফের ৬ সদস্যকে আটক করা হয়েছে। গত ২ এপ্রিল রাতে রুমার সোনালী ব্যাংকে শতাধিক কেএনএফ সদস্য অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা চালায়। তারা অস্ত্রের মুখে পুলিশ, আনসার সদস্যদের জিম্মি করে ১৪টি অস্ত্র লুট এবং সোনালী ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে তুলে নিয়ে যায়। এ ঘটনার ১৭ ঘণ্টার মধ্যে ৩ এপ্রিল থানচিতে গুলিবর্ষণ এবং কৃষি ও সোনালী ব্যাংক থেকে ১৫ লাখ টাকা লুট এবং ৪ এপ্রিল ফের থানচির সোনালী ব্যাংক ও বাজারে আক্রমণ করলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে কেএনএফ দমনে পাহাড়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করছে যৌথ বাহিনী।
০৯ এপ্রিল, ২০২৪

কেএনএফ সদস্য সন্দেহে ১৮ নারীসহ আটক ৪৯
বান্দরবানের রুমায় বেথেলপাড়া থেকে সন্ত্রাসবিরোধী যৌথ বাহিনীর অভিযানে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সদস্য সন্দেহে ১৮ জন নারীসহ ৪৯ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। সোমবার (৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হোসাইন মো. রায়হান কাজেমী এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি আরও বলেন, সোমবার বিকেলে তাদের আটক করে বান্দরবান সদর থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। আগামীকাল সকালে আদালতে তাদের নিয়ে যাওয়া হবে। তবে এদের মধ্যে কেউ কেউ কেএনএফ সদস্য আছে। প্রসঙ্গত, গত ২ এপ্রিল রাতে রুমার সোনালী ব্যাংকে শতাধিক কেএনএফ সদস্য অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা করে অস্ত্রের মুখে পুলিশ, আনসার সদস্যদের জিম্মি করে ১৪টি অস্ত্র লুট ও সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে। এ ঘটনার ১৭ ঘণ্টার মধ্যে ৩ এপ্রিল থানচিতে গুলিবর্ষণ এবং কৃষি ও সোনালী ব্যাংক থেকে ১৫ লাখ টাকা লুট ও ৪ এপ্রিল ফের থানচির সোনালী ব্যাংক ও বাজারে আক্রমণ করলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে কেএনএফ দমনে পাহাড়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করছে যৌথ বাহিনী।
০৮ এপ্রিল, ২০২৪

এনজিও থেকে কেএনএফ এখন পাহাড়ের বিভীষিকা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের রুমা উপজেলার এডেনপাড়ার নিজ এলাকায় ফিরে গিয়েছিলেন নাথান বম। এরপর পাহাড়ি জনজীবন উন্নয়নে কাজ করা আন্তর্জাতিক একটি সংস্থায় চাকরির চেষ্টা করেন। মাঝে একটি রিসোর্টও চালু করেছিলেন তিনি। এরপর ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-কেএনডিও’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) গড়ে তোলেন। এর মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া বম জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেন নাথান বম। সেই কেএনডিও একপর্যায়ে রূপান্তরিত হয় সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টে (কেএনএফ)। পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। রুমার এডেনপাড়ার স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, কেএনডিও সৃষ্টি করে এর প্রধান হন নাথান বম। তাকে কেন্দ্র করেই একসময় সেটি সশস্ত্র গ্রুপে রূপ নেয়। শুরুতে এই সংগঠন নিজ সম্প্রদায়ের লোকজনের খোঁজখবর নেওয়ায় তারাও ছিলেন আনন্দিত। ২০১৯ সালের দিকে ওই সংগঠনের আড়ালে নাথান বমের ভয়ংকর রূপ সামনে আসে রুমা এলাকার বাসিন্দাদের কাছে। কেএনএফের অপতৎপরতা শুরু হলে বিব্রত হন তারা। সংগঠনটির সাম্প্রতিক বিভীষিকা আর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে পাহাড়ের বাসিন্দারা যেমন আতঙ্কিত, তেমনি আতঙ্কে বম সম্প্রদায়ের সাধারণ লোকজনও। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য জুয়েল বম কালবেলাকে বলেন, ‘নাথান বমকে নিয়ে তারা সবাই বিব্রত।’ পলাতক নাথানের শুরুর দিকের অবস্থা জানিয়ে তিনি বলেন, যখন তার (নাথানের) অপকর্ম সামনে আসতে থাকল, তখন থেকেই তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এরপর ২০১৯ সাল থেকে তাকে খুব বেশি প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। গত কয়েক বছর ধরে একেবারেই নিরুদ্দেশ নাথান। তিনি বলেন, বমদের মধ্যে যারা বিপথে গেছে, তাদের কিন্তু স্বাভাবিক জীবনে ফেরার একটা পথ তৈরি হয়েছিল। একটা শান্তি আলোচনা চলছিল জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে। কিন্তু এর মাঝে যেসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটল, তা শান্তি প্রক্রিয়াকে বড় রকমের ধাক্কা দিয়েছে। শুরুর দিকে বম সম্প্রদায়ের যুবকদের ঐক্যবদ্ধ করা, পরে পাহাড়ে তৎপর রাজনৈতিক সংগঠন জেএসএস এবং চাকমাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো কাজ হয়ে ওঠে নাথানের কেএনএফের। ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে ভয়ংকর রূপ। পাহাড়ের অধিবাসীদের ধরে এনে নির্যাতন, হত্যাসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে আলোচনায় থাকে সংগঠনটি। ২০২২ সালের দিকে ফেসবুকে একটি আলাদা রাজ্য গঠনের ঘোষণা দিয়ে বেশ আলোচনায় আসে সংগঠনটি। ওই বছরের অক্টোবরে জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল আনসার আল হিন্দাল শারক্বীয়ার সদস্যদের পাহাড়ে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র চুক্তির বিষয়টি সামনে আসে র্যাবের অভিযানে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বান্দরবানে ব্যাংক লুট, অপহরণ আর থানা আক্রমণ চেষ্টায় কেএনএফ বড় আতঙ্ক ছড়ায়। গত মঙ্গল ও বুধবার বান্দরবানের রুমা এবং থানচি উপজেলার কৃষি ও সোনালী ব্যাংকের তিনটি শাখায় হামলা চালায় সশস্ত্র কেএনএফ সদস্যরা। তারা ব্যাংক থেকে টাকা লুট করে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধর করে এবং সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজারকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। লুট করে বেশ কিছু অস্ত্র ও গুলি। এরপর বৃহস্পতিবার রাতে বান্দরবানের থানচি বাজার এলাকায় পুলিশের সঙ্গে কেএনএফ সদস্যদের প্রায় এক ঘণ্টা গোলাগুলি হয়। আলোচনায় আসতে পরিকল্পিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কেএনএফের: কয়েক বছর ধরে কেএনএফ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালালেও মূলত ২০২২ সালের শুরুর দিকে সংগঠনটি মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠে। ওই বছর ফেসবুকে পেজ খুলে এই শসস্ত্র গোষ্ঠী তাদের অস্তিত্বের জানান দেয়। কেএনএফ ফেসবুক পেজে দাবি করে, রাঙামাটি ও বান্দরবান অঞ্চলের বম, পাংখোয়া, লুসাই, খিয়াং, ম্রো ও খুমি—এই ৬ জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে তারা। রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি এবং বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদম—এই উপজেলাগুলো নিয়ে আলাদা রাজ্যের দাবি করে কল্পিত রাজ্যের মানচিত্রও প্রকাশ করা হয় ফেসবুকে। এরপর তারা নানা সময়ে ফেসবুকে উসকানিমূলক পোস্ট করে আসছে। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গত কয়েক দিনে ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুটের ঘটনার দুটি উদ্দেশ্য থাকতে পারে। প্রথমত, টাকা লুটপাট ও অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়া। দ্বিতীয়ত, সক্ষমতা প্রদর্শন করা। হয়তো কেএনএফ তাদের সমর্থক ও প্রতিদ্বন্দ্বী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে দেখাতে চাইছে, তারা যথেষ্ট শক্তিশালী একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী।’ র্যাব মুখপাত্র বলেন, ‘কেএনএফ সন্ত্রাসীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এই লক্ষ্যে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি কাজ করছিল। এর মধ্যেই তারা এ ধরনের কার্যকলাপ করছে। কেএনএফ সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে ব্যাংক ডাকাতি, অপহরণ, অস্ত্র লুট, পুলিশ ক্যাম্পে গুলিবর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রম চালিয়েছে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না, যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান চলছে।’ নাথান বম কোথায়?: এত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যে সংগঠনের প্রধানের নাম, সেই নাথান বম এখনো অধরা। তার দলে অস্ত্র আর অর্থের জোগান আসে কোথা থেকে—তাও পরিষ্কার নয়। তিনি কোথায় আছেন, জানে না কেউ। অবশ্য স্থানীয় মানুষ আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারণা, মোস্ট ওয়ান্টেন্ড নাথান বম প্রতিবেশী দেশের রাজ্য মিজোরামে অবস্থান করে থাকতে পারেন। স্থানীয়রা বলছেন, এই নাথান বম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে স্নাতক শেষ করেন। পরে নিজ এলাকায় গিয়ে আন্তর্জাতিক একটি সংস্থায় চাকরির চেষ্টা করেন। তখন তার চাকরি না হলেও চাকমা জনগোষ্ঠীর কয়েকজনের চাকরি হয়। এতে তার ভেতর ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে তিনি এলাকায় একটি রিসোর্ট তৈরি করে পর্যটন ব্যবসায় নাম লেখালেও তাতে লোকসান হলে তা বন্ধ করে দেন। তবে তার এনজিও কেএনডিও চলছিল। পাহাড়ে তার পরিচিতজনরা বলছেন, নাথান মূলত নিজের গড়া এনজিও কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (কেএনডিও) আড়ালে সশস্ত্র সংগঠনের জন্য কর্মী সংগ্রহ করেছিলেন। জনশ্রুতি রয়েছে, ২০১৮ সালের শেষদিকে নাথানসহ বেশ কয়েকজন মিয়ানমারের চিন রাজ্যে গিয়ে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নেন। পরে তারা এলাকায় ফিরে আসেন। ওই বছর জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্রও তোলেন। তবে বাছাইয়ে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। ২০১৯ সালের দিকে তার কর্মকাণ্ড অনেকের চোখেই সন্দেহের সৃষ্টি করে। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা তার কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্নও তুলেছিলেন। এরপর মাঝেমধ্যে দেখা গেলেও ২০২২ সালের শুরুর দিকে একেবারে হাওয়া হয়ে যান তিনি। গতকাল শনিবার বান্দরবান পরিদর্শনে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘একটি সশস্ত্র সংগঠন তাদের অবস্থান জানান দেওয়ার জন্য এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা মনে করি যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গিয়ে অপরাধ করেছে। কাজেই রাষ্ট্র চুপ থাকতে পারে না। আমরা এ জন্য যা যা করণীয় তা করব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আমরা পুলিশ, র্যাব, আনসার সদস্যের সংখ্যা বৃদ্ধি করব। আমরা সীমান্তে বিজিবি বৃদ্ধি করব।’ তিনি বলেন, ‘যারা এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তারা যদি বিদেশেও আশ্রয় নেয়, আমরা ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাদের দেশে ফেরত এনে বিচারের ব্যবস্থা করব।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘কোনো ধরনের অস্ত্রধারীকে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে থাকতে দেব না। আমরা অনেক ধৈর্যের সঙ্গে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তাদের সঙ্গে দুবার আলোচনায় বসেছেন। তারা আলোচনায় না গিয়ে তাদের অবস্থান জানান দেওয়ার জন্য এ ধরনের কর্মকাণ্ড করেছে।’
০৭ এপ্রিল, ২০২৪

বান্দরবানে তাণ্ডব / ৭ মামলায় নাম নেই কেএনএফ সদস্যদের
বান্দরবানের থানচি ও রুমায় দফায় দফায় ব্যাংকে হামলা, টাকা ও অস্ত্র লুট এবং ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণের ঘটনায় ৭টি মামলা হয়েছে। কিন্তু এ মামলায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর কোন নেতা ও সশস্ত্র সদস্যদের নাম উল্ল্যেখ করে আসামি করা হয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও র‌্যাব ওই ঘটনায় কেএনএফ সম্পৃক্ততা পাওয়ার কথা বললেও এ ঘটনায় রুমায় ৪টি ও থানচিতে ৩টি মোট ৭টি মামলায় অজ্ঞাত নামা প্রায় ১৮০ জনকে আসামি করে মামলা হলেও মামলায় কেএনএফ সদস্যের নাম নেই। শুক্রবার (৫ এপ্রিল) রাত ১১ টা ৫৫ মিনিটে বান্দরবান জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়া মামলা সংক্রান্ত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কুকি-চিন সদস্যের নাম না থাকার তথ্যটি জানা যায়। বুধবার (৩ এপ্রিল) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বান্দরবানের রুমা-থানচিতে ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনায় কুকি চিন নামে একটি জঙ্গি সংগঠন জড়িত বলে জানা গেছে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হামলা, ব্যাংকের টাকা ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় রুমা থানায় গত ৫ এপ্রিল পুলিশ, আনসার, সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা ও মসজিদের ইমাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলের ১৩০-১৫০ জনকে আসামিকে করে বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ ও ২০০৯ সালের সন্ত্রাস বিরোধী আইনের বিভিন্ন ধারায় ৪টি মামলা দায়ের করে এবং সেই সঙ্গে থানচি থানায় অজ্ঞাতনামা ডাকাত দলের ২৫-৩০ জনকে আসামি সোনালী, কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা ও পুলিশ বাদী হয়ে বিভিন্ন ধারায় তিনটিসহ মোট ৭টি মামলা দায়ের করে এবং আরও একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন। এই বিষয়ে থানচি থানার ওসি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, অজ্ঞাতদের আসামি করে থানচি থানায় ৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আরও একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে, আসামি ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। মামলায় বলা হয়, গত ২ এপ্রিল ৮ টা ১৫ মিনিটে রুমা থানার রুমা বাজারস্থ সোনালী ব্যাংকে শতাধিক অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ১৩০-১৫০ জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল সোনালী ব্যাংক এর উত্তর দিক (বেথেল পাড়া) হতে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে বিদ্যুৎ না থাকার সুযোগ নিয়ে অতর্কিত হামলা ও মারধর করে অস্ত্রের মুখে পুলিশ, আনসার ও অন্যান্য লোকজনদেরকে জিম্মি করে ফেলে। আক্রমণকালে সোনালী ব্যাংকের ডিউটিরত গার্ড কনস্টেবলসহ সর্বমোট ১০ জনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ২টি এসএমজি ও ৬০ রাউন্ড গুলি, ৮ টি চায়না রাইফেল ও ৩২০ রাউন্ড গুলি, আনসার সদস্যদের ৪ টি শর্টগান ও ৩৫ রাউন্ড কার্তুজ ও সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার মো. নিজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। হামলাকারী দলের সদস্যরা ওই রাত ৯ টা ১৫ মিনিটে হামলা শেষে লুটকৃত অস্ত্রগুলি ও ম্যানেজার মো. নেজাম উদ্দিনকেসহ ঘটনাস্থলের উত্তরে বেথেল পাড়ার দিকে চলে যায়। বান্দরবান পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন জানান, আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। মামলায় আরও বলা হয়, গত ৩ এপ্রিল আনুমানিক ১২ টা ৪০ মিনিটে ২৫-৩০ জনের একটি সশস্ত্র সঙ্গবদ্ধ ডাকাত দল থানচি থানাধীন সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে হামলা চালায়। এসময় ১৫ হতে ২০ লক্ষ টাকা এবং কৃষি ব্যাংক থেকে আনুমানিক ৩ লক্ষ টাকাসহ ব্যাংকের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও উপস্থিত লোকজনদের কাছ থেকে আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ টি মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে কয়েক রাউন্ড ফায়ার করে ত্রাস সৃষ্টি করে ঘটনাস্থল থেকে পশ্চিম দিকে শাহাজাহান পাড়ার পাহাড়ী এলাকার দিয়ে চলে যায়। এদিকে শনিবার (৬ এপ্রিল) জেলার রুমার সোনালী ব্যাংক পরিদর্শন কালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আজ (শনিবার) থেকে ব্যাংকে ডাকাতি, অস্ত্রলুটের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যাবস্থা নেওয়া হবে এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হবে। এছাড়া এ ঘটনা ঘটার আগাম তথ্য দেওয়ার বিষয়ে গোয়েন্দাদের ব্যার্থতা থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
০৭ এপ্রিল, ২০২৪

কেএনএফ কেন অস্ত্র হাতে নিল, তদন্ত চলছে : ওবায়দুল কাদের
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) হঠাৎ কেন অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে তা জানতে তদন্ত হচ্ছে। পাহাড়ে যৌথ অভিযান চলছে। আশা করি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। শনিবার (৬ এপ্রিল) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, চীন ও ভারত সীমান্তের কাছে চীন নামে তাদের একটি রাজ্য রয়েছে। মূলত সেখানে তাদের একটি ঘাঁটি আছে বলে মনে করা হয়। কুকি চিনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনাও হয়েছে। এরপর হঠাৎ করে তারা কেন অস্ত্র হাতে নিল, সেই কারণ বের করতে তদন্ত হচ্ছে। কাদের বলেন, হঠাৎ করে এমনটা হতে পারে। ওই এলাকা সম্পর্কে যদি আপনার ধারণা থাকে, যদিও আমি পাহাড়ের সর্বত্র অনেক রাস্তা ও সেতু করেছি, তবুও এগুলো বিচ্ছিন্ন এলাকা, যেমন রুয়াংছড়ি, থানচি ও রুমা। এসব এলাকায় আমি গেছি। সেখানে সেতু উদ্বোধন করেছি। এটা এখন তদন্ত হচ্ছে, সবই বেরিয়ে আসবে। কাদের আরও বলেন, সীমান্ত থেকে কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন বা সন্ত্রাসের মদদ দেওয়া হবে বলে আমরা মনে করি না। তবে যাতে পরিস্থিতির আর কোনো অবনতি না হয়, তা নিশ্চিত করতে যৌথ অভিযান চলছে। আশা করি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। ২০১৭ সালে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফ (বম পার্টি নামেও পরিচিত, প্রতিষ্ঠাতা নাথাম বম) প্রতিষ্ঠার পর বিভিন্ন সময় হামলা, অপহরণসহ নানাভাবে তাদের শক্তি জানান দেয়। কয়েক দফা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযানও পরিচালনা করেছিল। মাঝখানে কিছুদিন ‘শান্ত’ থাকার পর আবারও তৎপরতা শুরু করেছে বিচ্ছিন্নতাবাদী এ সশস্ত্র সংগঠনটি। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে ডাকাতি করে নতুন করে আলোচনায় আসে তারা। এর ১৬ ঘণ্টা না পেরোতেই গতকাল বুধবার বান্দরবানের আরেক উপজেলা থানচির কৃষি ও সোনালী ব্যাংক থেকে দিনদুপুরে টাকা লুট করে নিয়ে যায়। পরপর এ দুটি ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি তাদের ভয়ংকর একটি বার্তা।   
০৬ এপ্রিল, ২০২৪
X