সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক
গত বছরের জুনে ‘স্মার্ট’ পদ্ধতি চালু করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু মাত্র ১১ মাসের মাথায় সে নীতি থেকে সরে আসা হয়েছে। এবার ঋণের সুদহার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। বুধবার (৮ মে) কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জারিকৃত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এখন থেকে ব্যাংকগুলো চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে ঋণের সুদহার নির্ধারণ করতে পারবে। সুদহার শতভাগ বাজার ভিত্তিক করতে ‘স্মার্ট’ ভিত্তিক সুদহার ব্যবস্থা প্রত্যাহার করা হলো। এদিকে আরেক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নীতি সুদহার বা রেপো রেট ৫০ বেসিক পয়েন্ট বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন নীতি অনুযায়ী, ৯ মে থেকে রেপো রেট হবে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। প্রজ্ঞাপনে নীতি সুদের করিডরের ঊর্ধ্বসীমা এবং নিম্নসীমাও বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নীতি সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং ল্যান্ডিং ফ্যাসিলিটির (এসএলএফ) ক্ষেত্রে সুদহার ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ১০ শতাংশে এবং নীতি সুদহার করিডরের নিম্নসীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিক পয়েন্ট বাড়িয়ে ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন সিদ্ধান্তের ফলে দেশে ব্যাংক ঋণের সুদহার আরো বাড়বে। গত মাসে ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ।   তবে বর্তমানে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা অনুসরণের মাধ্যমে ব্যাংক ঋণের সুদহার সম্পূর্ণরূপে বাজারভিত্তিক করার লক্ষ্যে ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে ‘স্মার্ট’ ভিত্তিক সুদহার ব্যবস্থা প্রত্যাহার করা হলো। এক্ষেত্রে ব্যাংকখাতে ঋণের চাহিদা ও ঋণযোগ্য তহবিলের জোগান সাপেক্ষে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণের সুদহার নির্ধারিত হবে। এ ছাড়া ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত নির্দেশনা মানতে হবে।   ক) ব্যাংকগুলো ঋণের খাতভিত্তিক সুদের হার ঘোষণা করবে এবং তুলনামূলক ঝুঁকি বিবেচনায় গ্রাহকভেদে ঘোষিত হার অপেক্ষা ১ শতাংশ কম বা বেশি হারে ঋণ প্রদান করতে পারবে। খ) ঋণের মঞ্জুরিপত্রে উক্ত ঋণের সুদহার অপরিবর্তনশীল (ফিক্সড রেট) বা পরিবর্তনশীল (ভেরিয়েবল রেট) তা উল্লেখ থাকতে হবে। কোনো ঋণের সুদহার পরিবর্তনশীল হলে তা বছরে সর্বোচ্চ কতবার বৃদ্ধি করা হবে এবং উক্ত বৃদ্ধি কত শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে, তা আবশ্যিকভাবে মঞ্জুরিপত্রে উল্লেখ থাকতে হবে। গ) কোনো ঋণ অথবা ঋণের কিস্তি সম্পূর্ণ বা আংশিক মেয়াদোত্তীর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হলে যে সময়ের জন্য মেয়াদোত্তীর্ণ হবে, উক্ত সময়ে চলমান ঋণ বা তলবি ঋণের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ঋণ স্থিতির ওপর এবং মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণ কিস্তির ওপর সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৫ শতাংশ দণ্ড সুদ আরোপ করা যাবে। ঘ) ব্যাংক কর্তৃক ঘোষিত সুদহারের অতিরিক্ত কোনো সার্ভিস চার্জ আরোপ বা আদায় করা যাবে না। ঙ) বাংলাদেশ ব্যাংক বা সরকার কর্তৃক গঠিত প্রণোদনা প্যাকেজ, বিশেষ তহবিল, পুনঃঅর্থায়ন বা প্রাক-অর্থায়ন তহবিলের আওতায় প্রদত্ত ঋণের সুদহার নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট তহবিলের জন্য প্রণীত নীতিমালা প্রযোজ্য হবে। প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ২০১২ সালের ২৫ জানুয়ারি জারিকৃত বিআারপিডি সার্কুলার নম্বর-৪ এর নির্দেশনা মোতাবেক সংশ্লিষ্ট মাসের ৭ তারিখের মধ্যে উক্ত মানের ঘোষিত সুদহার বিবরণী ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে এন্টারপ্রাইজ ডেটা ওয়্যারহাউজে (ইডিডব্লিউ) আপলোড চলমান থাকবে।   
০৮ মে, ২০২৪

জনবল নিয়োগ দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক
আদালতের নির্দেশনার এক বছরের বেশি সময় পার হলেও কার্যক্রম শুরু হয়নি অর্থ পাচার প্রতিরোধে গঠিত গবেষণা সেলের। অর্থ পাচার বন্ধের উপায়, কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে গবেষণা সেল গঠন করা হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক এখন পর্যন্ত জনবল নিয়োগ দেয়নি। ফলে দেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) অধীনে গঠিত এই সেলটির কার্যক্রমও শুরু হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আদালতের নির্দেশনার পর গত বছরের ৫ ডিসেম্বর এ বিষয়ে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বিশেষ নির্দেশনা দিয়ে সেলটির কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন দিয়েছেন। তখন বিএফআইইউর পক্ষ থেকে গবেষণা সেলটি পরিচালনার জন্য ১১ জনের একটি অর্গানোগ্রাম তৈরি করা হয়েছিল। এই জনবল নিয়োগ দেওয়ার কথা বাংলাদেশ ব্যাংকের। কিন্তু এখনো জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। একজন অতিরিক্ত পরিচালকের নেতৃত্বে গবেষণা সেলটি পরিচালিত হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কাউকে এ বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি বলেও জানা গেছে। আইন অনুযায়ী, বিএফআইইউ স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হলেও জনবল, অবকাঠামো, অর্থসহ সামগ্রিক লজিস্টিক সহায়তা বাংলাদেশ ব্যাংক দেয়। বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস কালবেলাকে বলেন, বিএফআইইউর অধিকাংশ কাজই গবেষণাধর্মী। গবেষণা সেলটি গঠন করা হয়েছে এবং কার্যক্রম চলছে। লোকবল নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা ১১ জন নিয়োগের একটি চাহিদাপত্র দিয়েছিলাম। বাংলাদেশ ব্যাংকের সব বিভাগেই লোকবলের কিছু ঘাটতি আছে। সেজন্য এখনো সেটা দিতে পারেনি। তবে শিগগির নিয়োগের আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা কঠিন। তাই পাচার রোধেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। এ উদ্দেশ্য মাথায় রেখেই গবেষণা সেলটি গঠন করা হয়েছে। পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা কেমন, তাও পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থ পাচার দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় বাধা। বিদেশে অর্থ পাচার দিন দিন বাড়ছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ বিপদের কারণ হতে পারে। এটি প্রতিরোধ করতে না পারলে দেশের উন্নয়ন ভেস্তে যাবে। জাতীয় আয়ের একটি বড় অংশ পাচারের মাধ্যমে বেরিয়ে যাচ্ছে। দেশের একশ্রেণির সরকারি আমলা, রাজনীতিক, ব্যবসায়ীসহ উচ্চাভিলাষী ব্যক্তিরাই অর্থ পাচার করছেন। তারা অবৈধ অর্থ, ব্যাংকের টাকা, জনগণের আমানত, দেশের সম্পদ ইত্যাদি আত্মসাৎ ও লুট করে নিজের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। সরকারকে এ বিষয়ে অবশ্যই আন্তরিক হতে হবে। বাংলাদেশ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর কালবেলাকে বলেন, অর্থ পাচার প্রতিরোধে আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও জনবলের কারণে সেলটির কার্যক্রম শুরু না করার মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয় যে, এ বিষয়ে সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। ভালো একটি উদ্যোগ নেওয়া হলেও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে কার্যক্রম এগোচ্ছে না। কারণ অর্থ পাচারকারীদের মধ্যে সরকারি আমলা, রাজনীতিক, ব্যবসায়ীসহ উচ্চাভিলাষী ব্যক্তিরাই রয়েছেন। সরকারের সদিচ্ছার অভাবেই এসব অর্থ পাচার প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, সরকার যদি আন্তরিকভাবে এ গবেষণা সেল গঠন করত, তাহলে অবশ্যই এটি একটি ভালো উদ্যোগ হতো এবং এর মাধ্যমে অর্থ পাচার প্রতিরোধ অনেকাংশে ঠেকানো যেত। সেলের কার্যপরিধিতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচার প্রতিরোধের বিদ্যমান ব্যবস্থা পর্যালোচনা করা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করা, অর্থ পাচার বন্ধে উপায় বের করতে গবেষণা করা, পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে বিভিন্ন দেশের নেওয়া উদ্যোগ বিশ্লেষণ করা। এর মধ্যে বাংলাদেশের জন্য গ্রহণীয় পদক্ষেপের প্রস্তাব তৈরি, বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা ও সফলতা পাওয়া ঘটনাগুলোর পর্যালোচনা, পাচার হওয়া অর্থের তথ্য সন্ধানে যেসব দেশের সঙ্গে চুক্তি করতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো, অর্থ পাচার প্রতিরোধ ও পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে বিদ্যমান আইনে সংশোধনের কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে কি না, তা পর্যালোচনা করা ইত্যাদি। গত বছরের ৩১ আগস্ট অর্থ পাচারকারীদের চিহ্নিত করতে এবং পাচারের অর্থ ফেরত আনতে একটি গবেষণা সেল গঠনে বিএফআইইউকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পরবর্তী সময়ে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াত লিজুর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশের সময় তিন মাস বাড়িয়ে দেন। এরপর ডিসেম্বরে সেলটি গঠন করা হয়। গত বছরের ১০ আগস্ট বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড বলেছিলেন, সুইস ব্যাংকে অর্থ জমা নিয়ে বাংলাদেশ নির্দিষ্ট কারও তথ্য চায়নি। এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএফআইইউ প্রধানকে আদালতে ডাকা হয়েছিল। সেই সময় উচ্চ আদালতের নির্দেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে ১০ দেশের সঙ্গে চুক্তি করার কথা আদালতে হলফনামা আকারে জমা দিয়েছে বিএফআইইউ। দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, হংকং-চীন। মূলত এসব দেশেই সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়—বিএফআইইউর পক্ষ থেকে এমন তথ্য জানানো হলেও বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর কী পরিমাণ অর্থ পাচার হচ্ছে, তার আনুষ্ঠানিক তথ্য সংস্থাটি প্রকাশ করে না। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ও সংস্থা থেকে পাওয়া তথ্যই দেশের সংবাদমাধ্যমে প্রচার হয়ে আসছে। সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি নাগরিকদের কী পরিমাণ অর্থ রয়েছে, তার হিসাব সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে পাওয়া যায়। সর্বশেষ ২০২২ সালে যে হিসাব দেওয়া হয়েছে, সেখানে অস্বাভাবিক হারে বাংলাদেশিদের জমাকৃত অর্থের পরিমাণ কমে গেছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশেরও জমার পরিমাণ কমেছে। যদিও এর আগে প্রতি বছরই বাংলাদেশিদের পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ বেড়েছিল। সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সাল শেষে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা হওয়া অর্থের পরিমাণ ছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ কোটি ৫৩ লাখ সুইস ফ্রাঁতে। অর্থাৎ মাত্র এক বছরের ব্যবধানে দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশিদের অর্থ প্রায় ৮২ কোটি সুইস ফ্রাঁ বা ৯৪ শতাংশ কমে গেছে। বাংলাদেশে সুইস ফ্রাঁর খুব বেশি লেনদেন হয় না। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতি সুইস ফ্রাঁর বিনিময় মূল্য প্রায় ১২১ টাকা। সেই হিসাবে ৫ কোটি ৫৩ লাখ সুইস ফ্রাঁতে দাঁড়ায় প্রায় ৬৬৯ কোটি টাকা। যদিও ২০২০ সালে জমার পরিমাণ ছিল ৫৬ কোটি ২৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা ৫ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ২০২১ সালে বেড়েছিল ২ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা বা ৫৫ শতাংশ। হঠাৎ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে যাওয়ার জন্য দেশের চলমান ডলার সংকটকে বড় কারণ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলেছেন, দেশে ডলার সংকট দেখা দেওয়ায় দেশটিতে অর্থ জমার বা বিনিয়োগের সক্ষমতা হারিয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান সেখান থেকে অর্থ তুলে নিয়েছে। এদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পরিদর্শন প্রতিবেদনে দেখা যায়, ইসলামী ধারার ৩ ব্যাংকের মাধ্যমে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এর আগে উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা লোপাট, ফারইস্ট ইসলামিক ইন্স্যুরেন্স, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচারাল ব্যাংক, পিপলস লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান হতে ১২ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। ২০১১ সালে হলমার্ক নামক কোম্পানির মালিক সোনালি ব্যাংক থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা উঠিয়ে নেয়। গত এক দশকে জনতা ব্যাংক থেকে অ্যাননটেক্স, ক্রিসেন্ট ও থার্মেক্স গ্রুপ ১১ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ও ফার্মার্স ব্যাংক (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) থেকে লোপাট হয়েছে সাড়ে ১২০০ কোটি টাকা। বেসিক ব্যাংক থেকে লুট করা হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। এসব লোপাট করা অর্থের সামান্যও ফেরত পাওয়া যায়নি। গবেষণা সংস্থা সিপিডির এক গবেষণার ফলাফলে জানা যায়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে তছরুপকৃত টাকার বেশিরভাগই বিদেশে পাচার হয়েছে।
২৯ এপ্রিল, ২০২৪

আপাতত একীভূতকরণ প্রস্তাব নেবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক
আপাতত পদ্মা, বিডিবিএল, ন্যাশনাল, রাকাব ও বেসিকের বাইরে অন্য কোনো ব্যাংক একীভূত হওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করবে না বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের বিষয়টি জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক। ব্যাংক খাত সংস্কারের প্রথম পদক্ষেপের অংশ হিসেবে গত মাসে শরিয়াহভিত্তিক এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ডুবতে থাকা বেসরকারি খাতের পদ্মা ব্যাংক। এরপর একে একে কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব), সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল), বেসরকারি সিটি ব্যাংকের সঙ্গে সরকারি বেসিক ব্যাংক এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) সঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংকের একীভূত হওয়ার খবর বেরিয়ে আসে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে স্বেচ্ছায় একীভূত হতে চাওয়া ১০ ব্যাংকের বাইরে নতুন করে আর কোনো ব্যাংক একীভূতকরণের প্রস্তাব গ্রহণ না করার কথা জানাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই ১০ ব্যাংক একীভূত করার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন করে একীভূত করার প্রয়োজন দেখা দিলে তখন ভাবা হবে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক। তিনি বলেন, ব্যাংক মার্জারের সরকারি-বেসরকারি পাঁচটি প্রপোজাল পেয়েছি। আপাতত এই প্রস্তাবগুলোর বাইরে আর নতুন কোনো প্রস্তাব আমরা নেব না। এই পাঁচটি প্রস্তাবের ব্যাংকগুলো একীভূত করার পরে প্রয়োজন হলে নতুন মার্জারে যাওয়া হবে। তিনি বলেন, ব্যাংক একীভূত করতে অনেক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। অডিটর নিয়োগ, সম্পদ ও দায় ঠিক করা, শেয়ার দর ঠিক করা, শেয়ার অংশ নির্ধারণ ও আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে। এই পাঁচ প্রস্তাব বাস্তবায়ন করে আমরা (বাংলাদেশ ব্যাংক) অভিজ্ঞতা নেব, অভিজ্ঞতারও প্রয়োজন আছে। তারপর দেখা যাবে। সাধারণত দুটি ব্যাংক একীভূত করার সব ধরনের প্রস্তুতি ও আইনি প্রক্রিয়া শেষ করতে তিন-থেকে চার বছর লেগে যেতে পারে। পাঁচটি প্রস্তাবের মধ্যে কোন কোন ব্যাংক রয়েছে—এমন প্রশ্নের উত্তরে মেজবাউল হক বলেন, ব্যাংকগুলোর মধ্যে পদ্মা ও এক্সিম ব্যাংক রয়েছে। বাকি নামগুলো তো গণমাধ্যমে চলে এসেছে। অর্থনীতি বিবেচনায় দেশে ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় বরাবরই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমালোচনা করছেন অর্থনীতিবিদরা। রাজনৈতিক বিবেচনায় এত ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভুল সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন তারা। বিশেষ করে গত দুই বছরে নানা অনিয়মের কারণে বিষয়টি আরও বেশি আলোচনায় আসে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংক সংখ্যা কমিয়ে আনতে দুর্বল ব্যাংক সবলের সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আড়াই বছরের ‘রোডম্যাপ’ ঠিক করার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে এক বছর সময় দিয়ে ‘প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন, পিসিএ’ নীতি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ‘রোডম্যাপ’ ও ‘পিসিএ’ নীতিমালা করে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষণা দিয়েছিল আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে স্বেচ্ছায় কোনো ব্যাংক একীভূত হতে চাইলে সুযোগ দেওয়া হবে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক ‘দুর্বল ব্যাংক’ চিহ্নিত করবে। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত দেবে কোন ব্যাংক কার সঙ্গে একীভূত হবে। এর পরই একে একে ১০টি ব্যাংক নিজেদের মধ্যে একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে দাবি বাংলাদেশ ব্যাংকের। যদিও এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর একাধিক কর্মকর্তা।
১৬ এপ্রিল, ২০২৪

২৫ কেজি স্বর্ণ বিক্রি করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক
প্রায় ১৬ বছর পর নিলামে স্বর্ণ বিক্রি করল বাংলাদেশ ব্যাংক। বিভিন্ন মানের ২৫ কেজি ৩১২ গ্রাম স্বর্ণ বিক্রি হয়েছে ১৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকায়। গতকাল বুধবার সব প্রক্রিয়া শেষে ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ভেনাস জুয়েলার্সের কাছে স্বর্ণগুলো হস্তান্তর করা হয়। এই স্বর্ণই ২০২২ সালের নভেম্বরে নিলাম ডেকেও উপযুক্ত দরদাতা না পাওয়ায় বিক্রি করতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, শুল্ক গোয়েন্দার জব্দ করা স্বর্ণ নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছে। এর বিপরীতে পাওয়া ১৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা কাস্টমসের অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, স্থায়ী খাতে নেওয়া স্বর্ণের প্রায় ২ হাজার ৪২৯ কেজি ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কিনে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যোগ করেছে। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত মালিককে ফেরত বা নিলামে বিক্রি করা হয়েছে ১ হাজার ৮৭ কেজি ৪০০ গ্রাম। সর্বশেষ ২০০৮ সালের জুলাইয়ে প্রায় ২২ কেজি স্বর্ণ নিলামে বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২২ সালের নভেম্বরে স্থায়ী খাতের আরও ২৫ কেজি ৩১২ গ্রাম বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে ওই বছরের নভেম্বরে নিলাম হয়। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নিলেও অপেক্ষাকৃত কম দর প্রস্তাব করে। ফলে সে সময় বিক্রি না করে আবার নিলামের উদ্যোগ নেওয়া হয় গত বছরের মে মাসে। পরে গত অক্টোবরে অনুষ্ঠিত নিলামে অংশ নেয় তিনটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তাবিত দর মূল্যায়ন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান প্রস্তাবিত দরে ২৫ কেজির দাম দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি টাকার কিছু বেশি। কিন্তু এই দাম কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজেকশন রেটের চেয়ে কম হওয়ায় সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি নিলাম কমিটি। বিষয়টি নিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট টিমের সভায় বিস্তারিত আলোচনা হলেও বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়নি। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) প্রদত্ত রেটের চেয়ে অন্তত ১০ থেকে ২০ শতাংশ কম ধরে প্রজেকশন রেট ঠিক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিলামে ওই রেটের সমান বা বেশি পাওয়া গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ-সংক্রান্ত কমিটি স্বর্ণ বিক্রি করে দেয়।
০৪ এপ্রিল, ২০২৪

দুই ডেপুটি গভর্নর পেল কেন্দ্রীয় ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক খুরশীদ আলম ও প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. হাবিবুর রহমান ডেপুটি গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। গতকাল বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে পৃথক দুটি আদেশে তাদের আগামী তিন বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গত ২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি দুই ডেপুটি গভর্নরের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তারা এ নিয়োগ পেয়েছেন। গত ২ ফেব্রুয়ারি একেএম সাজেদুর রহমান খান এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি আবু ফরাহ মো. নাছেরের ডেপুটি গভর্নর হিসেবে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। তাদের স্থলাভিষিক্ত হলেন খুরশীদ আলম ও হাবিবুর রহমান। এর আগে খুরশীদ আলম বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক-১ ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের স্নাতকোত্তর। পরে এমবিএ করেন। তিনি ১৯৮৮ সালে সহকারী পরিচালক পদে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দেন। ড. হাবিবুর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ছিলন। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। ড. রহমান ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বিভাগে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএইড) বৃত্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের ইস্টার্ন ও ওয়েস্টার্ন মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায়োগিক অর্থনীতিতে যথাক্রমে মাস্টার্স এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

মূল্যস্ফীতি কমাতে আবারও নীতি সুদহার বাড়াল কেন্দ্রীয় ব্যাংক
দেশের চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে আবারও নীতি সুদহার দশমিক ৫০ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে এখন থেকে রেপো রেট হবে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এতদিন নীতি সুদহার ছিল ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। এর ফলে বাড়বে আমানত ও ঋণের সুদহারও। রোববার (২৬ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত ২২ নভেম্বর পুনর্গঠিত মনিটারি পলিসি কমিটির (এমপিসি) অনুষ্ঠিত প্রথম সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান, প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মো. হাবিবুর রহমান, অর্থনীতিবিদ ড. সাদিক আহমেদ, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাসুদা ইয়াসমিন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. এজাজুল ইসলাম।  বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জারিকৃত এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য সব ধরনের নীতি সুদহার আবারও বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে বাড়বে আমানত ও ঋণের সুদহারও। নীতি সুদহার বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত আগামীকাল সোমবার থেকে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ গত অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছিল। নীতি সুদহার বাড়ানোসহ মুদ্রানীতি কমিটির সভায় নতুন চারটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রথমত, রেপো রেট একবারে দশমিক ৫০ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়ানো হবে। এখন নীতি সুদহার ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ, তা বৃদ্ধি করে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো যে টাকা ধার করে, তার সুদহার বাড়বে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোতে রাখা আমানত ও ব্যাংকঋণের সুদহারও বাড়বে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক গত অক্টোবরে যে সংকুলানমুখী মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছিল, এখন সেটি আরও বেশি সংকোচনমুখী করা হয়েছে।  দ্বিতীয়ত, রিভার্স রেপো (বর্তমান নাম স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি-এসডিএফ) নিম্নসীমার সুদহার ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ হতে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়েছে। বাজারে উদ্বৃত্ত টাকা থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংক রিভার্স রেপোর সুদ বাড়িয়ে তা তুলে নেয়। তৃতীয়ত, নীতি সুদহার করিডরের ঊর্ধ্বসীমা স্পেশাল রেপো বা এসএলএফ-স্টান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটির সুদহার ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ ব্যবস্থায় সংকটে পড়া ব্যাংক উচ্চ সুদে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ধার করে। চতুর্থত, যে পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে এখন ঋণের সুদহার নির্ধারিত হচ্ছে, সেই স্মার্ট বা সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিলের সুদ ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানো। এখন স্মার্ট রেট ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ, ব্যাংকগুলো এর সঙ্গে সাড়ে ৩ শতাংশ পর্যন্ত সুদ যুক্ত করতে পারে। নতুন সিদ্ধান্তে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ যুক্ত করতে পারবে ব্যাংকগুলো। তাতে ব্যাংকঋণের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ। এ ছাড়া ডলারের বিনিময় হারকে বাজারমুখী করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের চলমান প্রচেষ্টা জোরদার ও ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত রাখা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির জন্য এতদিন মূলত ডলারের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করে আসছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তিন মাস ধরেই খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশের ওপরে রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে, গত অক্টোবর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা গত ১১ বছর ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। অক্টোবরে সার্বিক মূল্যস্ফীতিও কিছুটা বেড়ে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সভায় অভ্যন্তরীণ এবং বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বর্তমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ গতি-প্রকৃতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ ছাড়া বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি, বিনিময় হার, তারল্য ও সুদহার পরিস্থিতি এবং নীতি সুদহারের গতিবিধি নিয়ে বিশদ পর্যালোচনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ, যেমন নীতি সুদহার বৃদ্ধি, আমানত ও ব্যাংকঋণের সুদহারের সীমা তুলে দিয়ে তা বাজারমুখী করা, টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ প্রদান স্থগিতকরণ, আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ এবং রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধির কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারকে বাজারমুখী করা, আমদানি মূল্য যাচাইসহ বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে তদারকি বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ থেকে অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যের আমদানি ব্যয় মেটানোর ব্যবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে কমিটির সদস্যদের অবহিত করে।   কমিটির সদস্যরা সভায় এসব বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন। বাজারভিত্তিক বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে এবং ব্যাংকিং খাতে ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণের সমস্যা মোকাবিলায় বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে সভায় গুরুত্বারোপ করা হয়। এ ছাড়াও বর্তমানে বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ বিনিময় হার এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ প্রশমনে বাংলাদেশ ব্যাংকের চলমান প্রচেষ্টাকে অব্যাহত রাখার ব্যাপারে সভায় ঐকমত্য পোষণ করা হয়। সভায় সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত নীতি পদক্ষেপ, বিশ্ববাজারের পণ্য মূল্যে নিম্নমুখী ধারা, আসন্ন আমন ধানের ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা এবং শীতকালীন ফসল সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে আগামী দিনে মূল্যস্ফীতি সহনীয় মাত্রায় নেমে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। আলোচনা ও পর্যালোচনা শেষে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ডিসেম্বরে ৮ শতাংশে এবং আগামী জুন শেষে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করা হয়। পাশাপাশি বিনিময় হার ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নীতি সুদহার বাড়ানোর। 
২৬ নভেম্বর, ২০২৩

কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দিচ্ছে না
টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেওয়া থেকে বিরত রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিবর্তে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ঋণ বাড়ছে। বিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রেকর্ড ঋণ নিলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ২৫ হাজার ৭০৯ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে। একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আগের নেওয়া ঋণের ২৯ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। এতে সরকারের নিট ব্যাংক ঋণ দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৩ হাজার ৭৭৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১০ হাজার ৫০৯ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এর আগে, বিদায়ী অর্থবছর শেষে সরকারের নিট ঋণ বেড়ে ১ লাখ ২৪ হাজার ১২২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেই ঋণ নিয়েছে ৯৮ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা, যার পুরোটাই ছাপিয়ে দেওয়া হয়। আগের অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিয়েছিল ৩২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। আর অর্থবছর শেষে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিয়েছে ২৫ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নেওয়ায় অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদনেও সরকারকে ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে সঞ্চয়পত্র থেকে বেশি ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। এরপর চলতি অর্থবছরের প্রথম থেকেই সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া থেকে বিরত রয়েছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমানে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিবর্তে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নেওয়া মঙ্গলজনক। কেননা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া মানেই টাকা ছাপানো। আর বাজারে নতুন টাকা ঢুকলে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যায়। তাই সরকারকে আপাতত বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকেই ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, তাদের পরামর্শ যদি আরও আগে নেওয়া হতো, তাহলে হয়তো মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতির চাপে দেশের সাধারণ মানুষের এতটা কষ্ট হতো না। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর কালবেলাকে বলেন, বর্তমান মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতির সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া ভালো। কারণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে তা সরাসরি মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়ে। তিনি আরও বলেন, এ ক্ষেত্রে ঋণের অকশনগুলো যথাযথ নিয়ম মেনে করতে হবে। অর্থাৎ কাউকে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটাও সরকারকে বুঝতে হবে। সেজন্য সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। এ ছাড়া বর্তমানে ব্যাংকগুলো তারল্য পরিস্থিতি আগের চেয়ে কিছুটা ভালো রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক যে টাকাটা ছাপিয়েছে, সেটাই ব্যাংকগুলোতে এসেছে, যা আবার সরকারকে ঋণ হিসেবে দিতে পারবে ব্যাংকগুলো। একই বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সাবেক চিফ ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন কালবেলাকে বলেন, গত অর্থবছর সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সিংহভাগ ঋণ নিয়ে যেভাবে ঘাটতি অর্থায়ন করেছিল, চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত তারা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে উল্টো পরিশোধ করেছে। এটা যদি ধরে রাখতে পারে, তাহলে অন্তত বাজেট অর্থায়নের কারণে মূল্যস্ফীতি গত বছর যেভাবে উসকে দিয়েছিল, এ বছর হয়তো কিছুটা কম হবে। ধরে রাখতে পারবে কি না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। আর ধরে রাখতে না পারলে মূল্যস্ফীতির নিয়ন্ত্রণ আরও কঠিন হয়ে যাবে। যেহেতু সরকার কাঙ্ক্ষিত হারে রাজস্ব আদায় না করতে পারে, তাহলে বাজেটের ব্যয়েও সরকারকে সাশ্রয়ী হতে হবে। এদিকে, প্রতিবছরই বড় অঙ্কের ঘাটতি রেখে বাজেট পেশ করে আসছে সরকার। এ ঘাটতি মেটানো হয় দুটি উৎস থেকে। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক খাত। বৈদেশিক খাত থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তা পাওয়া না গেলে অভ্যন্তরীণ উৎসের ওপরই বেশি নির্ভর করতে হয় সরকারকে। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে রয়েছে ব্যাংক ব্যবস্থা ও সঞ্চয়পত্র খাত। সাধারণত সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতের প্রয়োজনীয় ঋণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেইসঙ্গে ব্যাংক ঋণের সুদের হারও বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে। এতে বেসরকারি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হয়। তাই অর্থনীতিবিদরা বরাবরই ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে যতটা সম্ভব কম ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছেন। চলতি অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেওয়া হবে ৮৬ হাজার ৫৮০ কোটি। আর স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেওয়া হবে ৪৫ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর শেষে সরকারের মোট ব্যাংক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯০ হাজার কোটি ১৯ লাখ টাকা। গত ৩০ জুন শেষে যা ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। এই হিসাবে অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সরকারের নিট ব্যাংক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৩ হাজার ৭৭৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া ব্যাংক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ১৫২ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যা গত ৩০ জুন শেষে ছিল ১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৩৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া সরকারের নিট ঋণ ঋণাত্মক ২৯ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৮৬৬ কোটি ১১ লাখ টাকা। অন্যদিকে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের নেওয়া ব্যাংক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা, যা গত ৩০ জুন শেষে ছিল ২ লাখ ৩৬ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। ফলে জুলাই-সেপ্টেম্বর শেষে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা। যদিও গত অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকেও সরকারের নিট ঋণ ঋণাত্মক ৩৫৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে এ লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ১ লাখ ১৫ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ওই সময়ে সরকারের ব্যাংক ঋণের নিট পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা, যা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে।
১১ অক্টোবর, ২০২৩

মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে সুদহার বাড়াল কেন্দ্রীয় ব্যাংক
মূল্যস্ফীতি লাগাম টানতে ঋণের সুদ হার দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, ঋণের সুদ হার হবে ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ। বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবৃদ্ধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সম্পর্কিত একটি সার্কুলার জারি করে তফশিলি ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের পাঠানো হয়েছে। সার্কুলারে বলা হয়েছে, পূর্বে জারিকৃত সার্কুলার অনুযায়ী সিক্স মান্থ সুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিলের (স্মার্ট) সুদ হার ৭ দশমিক ২ শতাংশের সঙ্গে ৩ শতাংশ যোগ করে সুদ হার নির্ধারিত হয়েছে। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, স্মার্টের সঙ্গে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ যোগ করে সুদ হার নির্ধারিত হবে। এক্ষেত্রে সুদ হার হবে (৭.২+৩.৫) ১০ দশমিক ৭ শতাংশ। এ ছাড়া প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ঋণ এবং কৃষি ও পল্লী ঋণের সুদহারের ক্ষেত্রে স্মার্টের সঙ্গে ২ শতাংশ যোগ করে সুদহার নির্ধারিত হতো। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ হবে। এক্ষেত্রে সুদ হার দাঁড়াবে (৭.২+২.৫) ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ানোর ফলে মূল্যস্ফীতি কমাতে সহায়তা করবে।
০৫ অক্টোবর, ২০২৩

কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভে ব্যর্থতা স্বীকার করল
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের অন্যতম শর্ত ছিল গত জুনে বৈদেশিক মুদ্রার প্রকৃত (নিট) রিজার্ভ থাকতে হবে ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার। শর্ত অনুযায়ী সেই পরিমাণ রিজার্ভ রাখতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। ঢাকা সফররত আইএমএফ মিশনের কাছে নির্ধারিত সময়ে রিজার্ভ কাঙ্ক্ষিত স্তরে ধরে রাখতে না পারার বিষয়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যর্থতা স্বীকার করেছে। তবে কেন এবং কোন পরিস্থিতিতে তা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি মিশনটির কাছে, তার ব্যাখ্যাও তুলে ধরা হয়েছে। অন্যদিকে ঋণের শর্ত মূল্যায়নে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক চিত্র সম্পর্কে একটি বিশদ ধারণা নিয়েছে এবং ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করেছে আইএমএফ মিশনটি। উদ্দেশ্য যাতে টানা ১৬ দিনের সিরিজ বৈঠকে ইস্যুভিত্তিক সব বিষয় তাদের নখদর্পণে থাকে। সফরসূচির প্রথম দিনে সংস্থাটির এশিয়া প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি প্রথমে অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারের সঙ্গে বৈঠক করেন। এতে অর্থ বিভাগের সামষ্টিক উইং, বাজেট-১, ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ব্যয় ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তারা অংশ নেয়। পরে প্রতিনিধিদলটি একই দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারসহ বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিভিন্ন শর্ত পূরণের অগ্রগতি, সফলতা ও ব্যর্থতা তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি আলোচনায় রিজার্ভের শর্ত পূরণে ব্যর্থতার কথাও আইএমএফের কাছে প্রকাশ করা হয়। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে প্রথম দিনের বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধিদলটি কোনো পরামর্শ রাখেননি বলে জানিয়েছেন বৈঠক সংশ্লিষ্টরা। বেশকিছু বিষয়ে নির্দিষ্ট শর্ত দিয়ে আইএমএফ বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে চলতি বছরের জানুয়ারিতে। এই ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার এরই মধ্যে পেয়েছে বাংলাদেশ। ওই সময় থেকেই আইএমএফের শর্তপূরণের চেষ্টায় রয়েছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে অনেক শর্ত পূরণও হয়েছে। কিন্তু চলমান ডলার সংকট সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছে। এই সময়ে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়া খুবই জরুরি এবং নভেম্বরে এই কিস্তি পাওয়ার কথা, যা নির্ভর করছে ঋণের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া শর্ত পরিপালনের ওপর। তাই দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে সরকারি বিভাগগুলো শর্ত পূরণে কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে, সেসব বিষয় মূল্যায়ন করতেই এই সিরিজ আলোচনা শুরু হয়েছে। জানতে চাইলে অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, আইএমএফ মিশন মাত্র আলোচনা শুরু করেছে। তারা বিভিন্ন দিক মূল্যায়ন করবে। আমরা আমাদের দিকগুলো তুলে ধরছি। সার্বিক যে অগ্রগতি তাতে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানান তিনি। জানা গেছে, আগামী ১৫ দিন অংশীজনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সিরিজ বৈঠকে আইএমএফ মিশনটি দেশের আর্থিক খাতের স্থায়িত্ব, ব্যাংক খাতের সংস্কার, তারল্য ব্যবস্থাপনা, ডলারের বাজারভিত্তিক লেনদেন, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন, ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ গণনা পদ্ধতি, সুদের হার ও মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে। এরই অংশ হিসেবে প্রথম দিন সকাল ৯টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনায় বসে সংস্থাটির বিশেষ প্রতিনিধিদল। যা চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৯টায়। এরপর বিভিন্ন বিভাগের সাথে দিনভর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আইএমএফের ঋণের যেসব শর্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের পূরণ করার কথা, তার মধ্যে বেশিরভাগ শর্তই পূরণ হয়েছে। তবে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রাখার শর্ত দেওয়া হয়েছিল, সেই পরিমাণ রিজার্ভ ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। জানতে চাইলে বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, আইএমএফ ঋণ অনুমোদনের সময় আমাদের কিছু শর্ত দিয়েছিল। এর মধ্যে বেশকিছু শর্ত পূরণ করা হয়েছে। দু-একটি জায়গায় ব্যর্থতা আছে। রিজার্ভ কিছু কম আছে। রাজস্ব আহরণ কম হয়েছে। তবে অনেক কিছু বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন প্রকাশের কথা ছিল, বাংলাদেশ ব্যাংক সেটি প্রকাশ করেছে। বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ হিসাবায়ন করা হচ্ছে। এ ছাড়া মুদ্রার বাজার-নির্ধারিত বিনিময় হার প্রবর্তন করা হয়েছে। সুদহারের নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে। তাদের দেওয়া যেসব শর্ত অর্জন হয়েছে তা জানিয়েছি, আর যেগুলো অর্জন হয়নি সেগুলো কেন হয়নি, তাও জানানো হয়েছে। শর্ত পূরণ ও ব্যর্থতা নিয়ে আইএমএফের পক্ষ থেকে কী বলা হয়েছে— এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, প্রথম দিনের বৈঠকে কেবল আমাদের যেসব শর্ত ছিল, তার কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে সেই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সঙ্গে বসে আলোচনা করবে। প্রাথমিকভাবে তথ্য নিচ্ছে তারপর আবার বৈঠক করবে। আগামী ১৯ অক্টোবর শেষ মিটিং, সেখানে তাদের মতামত জানাবে। আমরাও আমাদের বিষয়গুলো জানাব। আইএমএফের শর্তের মধ্যে অন্যতম ছিল জুনে প্রকৃত রিজার্ভ ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার রাখা, সেপ্টেম্বরে তা ২ হাজার ৫৩০ কোটি ডলার এবং ডিসেম্বরে ২ হাজার ৬৮০ কোটি ডলারে রাখতে হবে। সেইসঙ্গে জুনের মধ্যে রিজার্ভের মজুত হিসাব পদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী শুরু করার শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ। উদ্দেশ্য ছিল এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বচ্ছতা ও রিপোর্টিংয়ের মান বাড়ানো। আইএমএফের ঋণের আরও শর্তের মধ্যে রিজার্ভ থেকে গঠন করা রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল বা ইডিএফ বাদ দেওয়ার বিষয়টিও ছিল। এ ছাড়া প্রকৃত রিজার্ভের হিসাব করতে রিজার্ভের অর্থে গঠন করা লং টার্ম ফান্ড (এলটিএফ) ও গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ), বাংলাদেশ বিমানকে উড়োজাহাজ কিনতে সোনালী ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে দেওয়া অর্থ এবং পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের খনন কর্মসূচিতে রিজার্ভ থেকে দেওয়া অর্থ বাদ দেওয়ার শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ। এখন রিজার্ভের তিন ধরনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। যেমন মোট রিজার্ভ, বিপিএম ৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ও প্রকৃত রিজার্ভ। দুই ধরনের হিসাব (মোট রিজার্ভ, বিপিএম ৬) বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশ করলেও প্রকৃত রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে না। তবে প্রকৃত রিজার্ভের তথ্য নিয়মিত আইএমএফকে জানাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য বলছে, গত জুনে দেশের মোট (গ্রস) রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ১২০ কোটি ডলার। আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম ৬ (ব্যাল্যান্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) অনুযায়ী জুনে রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৪৭৫ কোটি ডলার। সর্বশেষ ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট রিজার্ভ আছে ২ হাজার ৭০৫ কোটি ডলার আর বিপিএম ৬ অনুযায়ী আছে ২ হাজার ১১৫ কোটি ডলার। এর বাইরেও প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি তথ্য আছে, যা প্রকাশ করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই হিসাব অনুযায়ী, এখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আছে ২০ বিলিয়ন ২ হাজার কোটি ডলারের মতো, যা আইএমএফকে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রকৃত এ রিজার্ভ দিয়ে এখন তিন মাসের আমদানি দায় পরিশোধ করতে পারবে বাংলাদেশ।
০৫ অক্টোবর, ২০২৩

এসক্রো বাস্তবায়ন কমিটি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এসক্রো সার্ভিস নামে বিশেষ সেবা চালু করা হয়েছে। এই সেবা বাস্তবায়নে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কমিটিতে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইক্যাব) এবং ই-কমার্স খাতের ব্যবসায়ীদের অন্তর্ভুক্ত করার কথাও জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল সোমবার এফবিসিসিআই ও ইক্যাবের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সৌজন্য সাক্ষাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব তথ্য জানায়। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হকসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। এফবিসিসিআইর সহসভাপতি ও ইক্যাবের সভাপতি শমী কায়সারের নেতৃত্বে বৈঠকে ছিলেন ইক্যাবের পরিচালক ও অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্ম ‘দারাজ’-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তাসফিন আলম, ই-ক্যাব পরিচালক মো. ইলমুল হক সজীব, অনন্য রায়হান প্রমুখ। এ সময় শমী কায়সার বলেন, নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশের ই-কমার্স খাত সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। এ খাতে নারীদের অংশগ্রহণ আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ই-কমার্স খাতের সহযোগিতায় সবসময় পাশে থাকার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি ধন্যবাদ জানান তিনি। শমী কায়সার আরও বলেন, বৈশ্বিক মার্কেটে বাণিজ্য সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশের ই-কমার্স খাতকে আরও সমৃদ্ধ করতে পলিসি লেভেলে কিছু কাজ করতে চাই আমরা। এ ক্ষেত্রে ক্রস বর্ডার ই-কমার্স মডিফিকেশন অত্যন্ত জরুরি। ই-কমার্স খাতে এখনো কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। এই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনকে নিয়ে পলিসি সামিট করবে এফবিসিসিআই। এ সময় ক্রেডিট কার্ডের ক্যাপ বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। ক্রেডিট কার্ডের ক্যাপ বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা ও প্রয়োজনে পরে বাড়ানো হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়। এ সময় এ-সংক্রান্ত কিছু দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে। সৌজন্য সাক্ষাতে বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা এসক্রো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গ্রাহকদের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে কেনাকাটায় উৎসাহিত করতে এবং প্রতারণা এড়াতে ‘মার্চেন্ট অ্যাকোয়ারিং ও এসক্রো সেবা নীতিমালা ২০২৩’ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এই উদ্যোগকে আরও সংশোধিত ও এর বাস্তবায়নে একটি কমিটি গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেই কমিটিতে এফবিসিসিআই, ই-ক্যাবসহ ই-কমার্স খাতের ব্যবসায়ী ও অন্যান্য অংশীজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
০৩ অক্টোবর, ২০২৩
X