ইসরায়েলি হামলা  / বাদ যাচ্ছে না মসজিদ গির্জা আশ্রয় শিবিরও
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না মসজিদ ও গির্জাও। ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর হামলায় ধসে পড়েছে গাজা উপত্যকার ঐতিহাসিক আল-ওমারি মসজিদ। গাজার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত মসজিদটি ধ্বংস হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে সেখানকার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া একটি গ্রিক অর্থোডক্স গির্জায় বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এই হামলায় কমপক্ষে ১৮ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী এবং শিশুও রয়েছে। এ ছাড়া আরও অনেক মানুষের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অন্যদিকে, পশ্চিম তীর অঞ্চলের তুলকারেম শহরের একটি ফিলিস্তিনি শরণার্থী ক্যাম্পে অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সদস্যরা। বিধ্বংসী সেই অভিযানে পাঁচ শিশুসহ ১৩ জন বেসামরিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া ৭ অক্টোবর থেকে প্রতি রাতে পশ্চিম তীরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সেসব অভিযানে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৯ শতাধিক ফিলিস্তিনিকে। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চলা ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় এ পর্যন্ত ৪ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। অনেকে স্কুল ভবন ও শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। খাবার পানি ও চিকিৎসার তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মিশর রাফাহ ক্রসিং খুলে দেওয়ার বিষয়ে রাজি হলেও এখন পর্যন্ত তা খুলে দেওয়া হয়নি। যার কারণে মানবিক সহায়তা নিয়ে সীমান্তে অপেক্ষারত ট্রাক গাজার ভেতরে ঢুকতে পারছে না। খবর আলজাজিরার। ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর হামলায় ধসে পড়েছে গাজা উপত্যকার ঐতিহাসিক আল-ওমারি মসজিদ। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম কুদস নিউজ নেটওয়ার্ক মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে শুক্রবার একটি পোস্টে ধসে পড়া মসজিদটির তিনটি ছবি প্রকাশ করে। ছবিগুলোতে দেখা যায়, মসজিদের ভেতরে নামাজ আদায়ের স্থানে বোমা ফেলা হয়েছে। তবে মসজিদটির মিনার ও গম্বুজ অক্ষত আছে। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের অবৈধ বসতি লক্ষ্য করে হামলা চালায় গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। এর পর থেকেই গাজায় বিমান হামলা চালানো শুরু করে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। তাদের এ নির্বিচার হামলায় এখন পর্যন্ত ৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে শিশুর সংখ্যাই দেড় হাজারেরও বেশি। যদিও ইসরায়েল দাবি করছে, তারা হামাসের অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। তবে হামাসের যোদ্ধাদের চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সেখানকার বেসামরিক মানুষ। বোমা হামলার পাশাপাশি গাজায় সর্বাত্মক অবরোধও আরোপ করেছে ইসরায়েল। এর মাধ্যমে ছোট এই উপত্যকায় খাদ্য, পানি, জ্বালানিসহ সব ধরনের পণ্য সরবরাহ বন্ধ রেখেছে তারা। আর অতিপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের অভাবে এখন গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় একটি গ্রিক অর্থোডক্স গির্জায় বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গাজার আল-জায়তুন এলাকায় সেন্ট পোরফিরিয়াস চার্চে চালানো এই হামলায় কমপক্ষে ১৮ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী এবং শিশুও রয়েছে। এ ছাড়া আরও কয়েক ডজন মানুষের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। যাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় নিহতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বোমা হামলায় চার্চ স্টুয়ার্ডস কাউন্সিলের ভবন সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে। সেই ভবনে বেশ কয়েকটি ফিলিস্তিনি পরিবার তাদের মধ্যে খ্রিষ্টান এবং মুসলমান উভয়ই ইসরায়েলি বোমাবর্ষণের মধ্যে গির্জায় আশ্রয় নিয়েছিল। ইসরায়েলি হামলার শিকার এই গির্জাটি গাজার সবচেয়ে পুরোনো এবং কয়েক শতাব্দী আগে নির্মিত। এদিকে ইসরায়েল গাজায় ‘গণহত্যার’ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে বলে অভিযোগ করেছে ফিলিস্তিনি চার্চ কমিটি। এদিকে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর অঞ্চলের তুলকারেম শহরের একটি শরণার্থী শিবিরে অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সেনাসদস্যরা। বিধ্বংসী সেই অভিযানে পাঁচ শিশুসহ ১৩ জন বেসামরিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। শুক্রবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইসরায়েলের দখলদার সেনাবাহিনী বৃহস্পতিবার তুলকারেমের নূর শামস শরণার্থী শিবিরে বিধ্বংসী অভিযান চালিয়েছে। এতে ওই শিবিরের সাত শিশুসহ ১৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।’ বৃহস্পতিবার নূর শামস শরণার্থী শিবির ও আশপাশের এলাকায় রাতভর অভিযান শেষে শুক্রবার সকালে সেনাসদস্যরা ওই এলাকা ত্যাগ করে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে পশ্চিম তীরের স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল প্যালেস্টাইন টিভি। গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের ভূখণ্ডে অতর্কিতে হামলা চালানোর পর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলের বিমানবাহিনী। দুপক্ষের এই সংঘাতে এ পর্যন্ত অন্তত ১ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি এবং ৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ইসরায়েল-হামাসের এই যুদ্ধের আঁচ পৌঁছেছে ফিলিস্তিনের অন্য ভূখণ্ড পশ্চিম তীরেও। যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই পশ্চিম তীরের বিভিন্ন শহর ও গ্রামে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন ফিলিস্তিনিরা। সেসব বিক্ষোভ কঠোর হাতে দমনও করছে ইসরায়েলি সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ১৩ দিনের যুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে পশ্চিম তীরে নিহত হয়েছেন অন্তত ৬১ জন এবং আহত হয়েছে ১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি। এ ছাড়া প্রতি রাতে পশ্চিম তীরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সেসব অভিযানে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৯ শতাধিক ফিলিস্তিনিকে। ফিলিস্তিনের কারাবন্দিদের আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা প্যালেস্টাইনিয়ান প্রিজনার্স সোসাইটির মুখপাত্র আমানি সারাহনেহ তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সিকে এই তথ্য জানিয়ে বলেছেন, ‘গ্রেপ্তারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক হামাস পশ্চিম তীর শাখার নেতাকর্মী রয়েছেন। এ ছাড়া ফিলিস্তিনের পার্লামেন্টের বেশ কয়েকজন সাবেক সদস্যও রয়েছেন।’
২১ অক্টোবর, ২০২৩
X