মৈমনসিংহ গীতিকার আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন নারীর ক্ষমতায়নের কথাও বলেছেন
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেছেন, আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন ‘অসমিয়া দুহিতা সুধালতা দুয়ারিয়া’কে নিয়ে ইংরেজি ভাষায় বই লিখেছিলেন। সুধালতা দুয়ারিয়া আসামের প্রথম নারী ছিলেন যিনি বিএ-এমএ পাশ করেছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি সবাইকে জানিয়েছেন, তেমনি নারীদের উৎসাহিত করেছেন। মৈমনসিংহ গীতিকার আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন তার লেখার মধ্য দিয়ে নারীর ক্ষমতায়নের কথাও বলেছেন। নারীকে সামনে এগিয়ে দিয়েছেন। তার এ বইয়ের অনুবাদ করে অধ্যাপক ড. মন্দিরা দাস এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে ড. দীনেশচন্দ্র সেন গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ ও আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন রিসার্চ সোসাইটি, ভারত এর যৌথ উদ্যোগে ‘দীনেশচন্দ্র সেন স্মৃতি স্বর্ণপদক অর্পণ-২০২৪’ এবং ‘দীনেশচন্দ্র সেন- সিস্টার নিবেদিতা স্মৃতি স্বর্ণপদক অর্পণ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, তার উত্তরসূরি দেবকন্যা সেন পূর্বপুরুষের স্মৃতিকে লালন করছেন, ধারণ করছেন। আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন এর আদর্শ, বাংলা নিয়ে তার চিন্তাকে তার নামে স্বর্ণপদক প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত দুই বাংলার মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এটা দেবকন্যা সেনের একার কাজ নয়। আমাদের বাংলার সম্পদ আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন এর কাজকে এগিয়ে নিয়ে বাংলা ভাষাভাষী সকলকে এগিয়ে আসা উচিত। দীনেশচন্দ্র সেন স্মৃতি স্বর্ণ পদক পেয়েছেন বাংলাদেশ ভারতের ৪ বিশিষ্ট ব্যক্তি। তারা হলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদা, ভারতের বীরভূমের কবি জয়দেব মহাবিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. বিমল কুমার থান্দার, বিশিষ্ট সাহিত্যিক ড. নাসরীন জেবিন ও সৈয়দা রুখসানা জামান শানু।  দীনেশচন্দ্র সেন ও সিস্টার নিবেদিতা স্বর্ণ পদক পেয়েছেন ২ বিশিষ্ট ব্যক্তি। তারা হলেন সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস।  পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন। দীনেশচন্দ্র সেন স্মৃতি স্বর্ণপদক প্রাপ্তির অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন- ব্যক্তি, পারিবারিক, গোত্রীও এবং জাতি পরিচয় বিকশিত করে জাতি রাষ্ট্র গঠনে তারাই বিভিন্নভাবে যুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। এরপর স্বাধীন সার্বভৌম জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশের আমরা গর্বিত নাগরিকে পরিণত হয়েছি। বাংলাদেশকে জাতি রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীন করেছি। পুরস্কার প্রদানে আন্তরিকতার ছোঁয়া রয়েছে।  অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে মোস্তাফা জব্বার বলেন, আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন মৈমনসিংহ গীতিকার ভূমিকা লিখেছিলেন ২৪ নভেম্বর। সেই হিসেবে ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের পক্ষ থেকে সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ অনুষ্ঠানটি শুরু করেছিলেন। আগামীতে মৈমনসিংহ গীতিকার শতবর্ষ উদযাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্বাগত বক্তব্যে আচার্য দীনেশচন্দ্র সেনের উত্তরসূরি ভারতের আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন, রিসার্চ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদিকা দেবকন্যা সেন বলেন, রবীন্দ্রনাথ দীনেশচন্দ্র সেনের প্রতিটি রচনাকে মানবসমাজের অমূল্য সম্পদ বলে স্বীকার করেছেন। তিনি বাংলার গ্রামে গ্রামে ঘুরে বহু প্রাচীন পুঁথি সংগ্রহ করেছিলেন। তার এই সংগ্রহ বাংলার সম্পদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক উইলিয়াম প্রলয় সমাদ্দার বাপ্পি, ভারতের আসামের তিনসুকীয়া রুপাই ডুমডুমা কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মন্দিরা দাস এবং বাংলাদেশ বৌদ্ধ যুব পরিষদ সিলেটের  প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি উৎফল বডুয়া প্রমুখ।
২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

গীতিকার জাহিদুল হকের ইন্তেকাল
সুবীর নন্দীর গাওয়া ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’-সহ অজস্র কালজয়ী গানের গীতিকার ও কবি জাহিদুল হক মারা গেছেন। গতকাল সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। জাহিদুল হকের হৃদযন্ত্রে জটিলতা ছিল। শেখ সাদী খানের সুরে জাহিদুল হকের লেখা ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’ গানে কণ্ঠ দিয়েছেন শিল্পী সুবীর নন্দী। প্রকাশের পর থেকেই গানটি শ্রোতাদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এ ছাড়া ‘কথা দাও, কথাগুলো ফেরত দেবে না’, ‘স্বাধীনতা তুমি আমার বাড়িতে এসো’, ‘স্বপ্ন আমার কাজল পুকুর তুমি’, ‘যে দেশে বাতাস স্মৃতির স্পর্শে ভার ‘, ‘কতদিন পরে দেখা, ভালো আছ তো’ সহ বহু গান লিখেছেন ষাটের দশকের এই গীতিকবি। জাহিদুল হকের প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘পকেট ভর্তি মেঘ’, ‘তোমার হোমার’, ‘নীল দূতাবাস’, ‘সেই নিঃশ্বাসগুচ্ছ’ ‘পারীগুচ্ছ ও অন্যান্য কবিতা’, ‘এই ট্রেনটির নাম গার্সিয়া লোরকা’, ‘তোমার না আসার বার্ষিকী’, ‘আমজাদ আলির মেঘবাড়ি’। ১৯৪৯ সালের ১১ আগস্ট ভারতের আসামের বদরপুরে জাহিদুল হকের জন্ম। তার বাড়ি কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী ইউনিয়নের আকদিয়া গ্রামে। জাহিদুল হক চট্টগ্রামের নগেন্দ্রচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৩ সালে মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৬৬ সালে ফেনী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। স্কুলজীবন থেকে তার লেখালেখির শুরু। তার প্রথম কবিতা প্রকাশ হয় ১৯৬৫ সালে দৈনিক সংবাদের ঈদ সংখ্যায়। বাংলাদেশ বেতারে তিনি উপমহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া রেডিও ডয়েচে-ভেলের সিনিয়র এডিটর ও ব্রডকাস্টার হিসেবে কাজ করেছেন। দৈনিক সংবাদের সিনিয়র সহকারী সম্পাদক ও বেতার বাংলা পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য জাহিদুল হক বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (২০০২), বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার-২০১৭ (সংগীত বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার (২০০০) লাভ করেন।
১৬ জানুয়ারি, ২০২৪

‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’- গীতিকার জাহিদুল হক আর নেই
সুবীর নন্দীর গাওয়া ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’সহ অজস্র কালজয়ী গানের গীতিকার জাহিদুল হক আর নেই। সোমবার (১৫ জানুয়ারি) ঢাকায় দুপুরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। জাহিদুল হক বাংলা কবিতায় যুক্ত করেছিলেন নতুন মাত্রা। উচ্চকণ্ঠের বিপরীতে সংবেদী অথচ সবল উচ্চারণ তাকে বাংলা কবিতাভুবনে বিশিষ্ট স্থান দান করেছিল। কবিতা ছাড়াও প্রবন্ধ ও গল্পেও তিনি ছিলেন সমান পারদর্শী। তিনি ষাটের দশকের বিশিষ্ট কবি ও গীতিকার। জাহিদুল হক চট্টগ্রামের নগেন্দ্রচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৩ সালে মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৬৬ সালে ফেনী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। স্কুলজীবন থেকে তার লেখালেখির শুরু। তার প্রথম কবিতা প্রকাশ হয় ১৯৬৫ সালে দৈনিক সংবাদের ঈদ সংখ্যায়। তিনি বাংলা একাডেমির একজন ফেলো। বাংলাদেশ বেতারে তিনি উপমহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া রেডিও ডয়েচে-ভেলের সিনিয়র এডিটর ও ব্রডকাস্টার হিসেবে কাজ করেছেন। দৈনিক সংবাদের সিনিয়র সহকারী সম্পাদক এবং ‘বেতার বাংলা’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের সদস্য ছিলেন। ১৯৭৮ সালে রেডিওতে রেকর্ডকৃত তার প্রথম গানটি পরে ‘মহানায়ক’ ছবিতে যুক্ত হয়। গানটির সুর করেছেন শেখ সাদী খান। জাহিদুল হকের কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প গান মিলিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৮টি। তার প্রথম কবিতার বই ‘পকেট ভর্তি মেঘ’ প্রকাশ হয় ১৯৮২ সালে। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- পকেট ভর্তি মেঘ (১৯৮১), তোমার হোমার (১৯৮৪), নীল দূতাবাস (১৯৮৫), সেই নিঃশ্বাসগুচ্ছ (১৯৮৯), পারীগুচ্ছ ও অন্যান্য কবিতা (১৯৯৪), এই ট্রেনটির নাম গার্সিয়া লোরকা (১৯৯৬), এ উৎসবে আমি একা (১৯৯৭)। কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য জাহিদুল হক বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (২০০২), বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার-২০১৭ (সংগীত বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), জসীমউদদীন সাহিত্য পুরস্কার (২০০০) লাভ করেন। বাংলা একাডেমি প্রয়াত কবি জাহিদুল হকের আত্মার শান্তি কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছে।
১৫ জানুয়ারি, ২০২৪

গীতিকার রাজীবের প্রয়াণ
বাংলাদেশি গীতিকার ও নির্মাতা রাজীব আশরাফ মারা গেছেন। গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। বাংলাদেশের নন্দিত গায়ক অর্ণবের বেশ কিছু গানের গীতিকার রাজীব আশরাফ। ‘হোক কলরব’, ‘প্রকৃত জল’, ‘নাম ছিল না’, ‘ধূসর মেঘ’, ‘ঘুম’, ‘রোদ বলেছে হবে’, ‘প্রতিধ্বনি’, ‘একটা মেয়ে’, ‘মন খারাপের একটা বিকেল’সহ বেশ কিছু গান উপহার দিয়েছেন অর্ণব-রাজীব জুটি। কিছু টেলিছবিতে গান লিখেছেন তিনি। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো, ‘জলকণা উড়ে যায়’ (ভালোবাসি তাই), ‘ভালোবাসি তাই ভালোবেসে যাই’ (ভালোবাসি তাই ভালোবেসে যাই), ‘এই আমার শহর’ (অ্যাট-এইটিন অলটাইম দৌড়ের ওপর), ‘যাযাবর পাখনা’ (মাংকি বিজনেস), ‘এই যাত্রার শেষ কোথায় অজানা’ (ইউ-টার্ন)। হাবিবের সুর-সংগীতে চ্যানেল ওয়ানের থিম সং ‘সম্ভাবনার দুয়ার’সহ বাংলালিংক, মোজো, সেভেন আপসহ কয়েকটি বিজ্ঞাপনচিত্রেরও জিঙ্গেল লিখেছেন রাজীব আশরাফ। এ ছাড়া সিনেমার গীতিকার হিসেবেও সুখ্যাতি রয়েছে তার। রেদওয়ান রনির ‘আইসক্রিম’ সিনেমায় রাজীবের লেখা ‘বোকা চাঁদ’ গানটিও গেয়েছেন অর্ণব। অনেক নাটক ও টেলিছবিতে অভিনয়ও করেছেন রাজীব। সেগুলোর মধ্যে আশুতোষ সুজনের ‘টিনের তলোয়ার’, অমিতাভ রেজার রচনা ও আবিদ মল্লিক পরিচালিত ‘কিশোর ছবি আঁকতে পারে’, মনোয়ার কবিরের রচনা ও অনিমেষ আইচের ‘হলুদ’, নূরুল আলম আতিকের ‘মজিদের টেলিভিশন’, অমিতাভ রেজার পরিচালনায় ‘একটা ফোন করা যাবে প্লিজ’ উল্লেখযোগ্য।
০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
X