সুবীর নন্দীর গাওয়া ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’সহ অজস্র কালজয়ী গানের গীতিকার জাহিদুল হক আর নেই। সোমবার (১৫ জানুয়ারি) ঢাকায় দুপুরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
জাহিদুল হক বাংলা কবিতায় যুক্ত করেছিলেন নতুন মাত্রা। উচ্চকণ্ঠের বিপরীতে সংবেদী অথচ সবল উচ্চারণ তাকে বাংলা কবিতাভুবনে বিশিষ্ট স্থান দান করেছিল। কবিতা ছাড়াও প্রবন্ধ ও গল্পেও তিনি ছিলেন সমান পারদর্শী। তিনি ষাটের দশকের বিশিষ্ট কবি ও গীতিকার।
জাহিদুল হক চট্টগ্রামের নগেন্দ্রচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৩ সালে মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৬৬ সালে ফেনী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
স্কুলজীবন থেকে তার লেখালেখির শুরু। তার প্রথম কবিতা প্রকাশ হয় ১৯৬৫ সালে দৈনিক সংবাদের ঈদ সংখ্যায়। তিনি বাংলা একাডেমির একজন ফেলো। বাংলাদেশ বেতারে তিনি উপমহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া রেডিও ডয়েচে-ভেলের সিনিয়র এডিটর ও ব্রডকাস্টার হিসেবে কাজ করেছেন। দৈনিক সংবাদের সিনিয়র সহকারী সম্পাদক এবং ‘বেতার বাংলা’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের সদস্য ছিলেন।
১৯৭৮ সালে রেডিওতে রেকর্ডকৃত তার প্রথম গানটি পরে ‘মহানায়ক’ ছবিতে যুক্ত হয়। গানটির সুর করেছেন শেখ সাদী খান। জাহিদুল হকের কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প গান মিলিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৮টি। তার প্রথম কবিতার বই ‘পকেট ভর্তি মেঘ’ প্রকাশ হয় ১৯৮২ সালে। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- পকেট ভর্তি মেঘ (১৯৮১), তোমার হোমার (১৯৮৪), নীল দূতাবাস (১৯৮৫), সেই নিঃশ্বাসগুচ্ছ (১৯৮৯), পারীগুচ্ছ ও অন্যান্য কবিতা (১৯৯৪), এই ট্রেনটির নাম গার্সিয়া লোরকা (১৯৯৬), এ উৎসবে আমি একা (১৯৯৭)।
কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য জাহিদুল হক বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (২০০২), বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার-২০১৭ (সংগীত বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), জসীমউদদীন সাহিত্য পুরস্কার (২০০০) লাভ করেন।
বাংলা একাডেমি প্রয়াত কবি জাহিদুল হকের আত্মার শান্তি কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছে।
মন্তব্য করুন