উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী মন্ত্রী-এমপিদের ১৩ স্বজন : টিআইবি
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের হস্তক্ষেপ বড় আলোচনার বিষয় হলেও এবার স্বজনদের মনোনয়ন নিয়ে চলছে বিতর্ক। প্রথম ধাপে প্রথম পর্বে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন ১৩ জন প্রার্থী হওয়ায় এগিয়ে ভাইয়েরা; চাচাতো ভাই, খালাতো ভাই, জামাতা, ভাইয়ের ছেলে আছেন তালিকায়। সোমবার (৬ মে) ধানমন্ডির টিআইবির অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।   সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, উপজেলা নির্বাচন দলীয়ভাবে হওয়ার বিধান থাকলেও তা হচ্ছে না। প্রার্থীদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। সংসদ নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনেও ব্যবসায়ী প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। রাজনীতির সঙ্গে ব্যবসায়ীদের মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। যাদের অস্বাভাবিক হারে সম্পদ বেড়েছে, তা খতিয়ে দেখা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রেসডিয়াম সদস্য ও সাংসদ শাহাজান খানের পুত্র ও চাচাতো ভাই প্রার্থী হয়েছেন। প্রার্থী আছেন সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নানের পুত্র ও ছোট ভাই। সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীপুত্রও প্রার্থী আছেন। ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর ছোট ভাই ও ভায়ের ছেলে প্রার্থী আছেন। আরও প্রার্থী আছেন সংসদ সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাকের খালাতো ভাই, শ ম রেজাউল করিমের ছোট ভাই, মাজহারুল ইসলামের চাচা ও চাচাতো ভাই, মাহবুবউল-আলম হানিফের চাচাতো ভাই এবং কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার জামাতা। টিআইবি বলছে, প্রথম ধাপের ১৫২টি উপজেলার মধ্যে ১৪৪টির প্রার্থীদের হলফনামা নির্বাচন কমিশন প্রকাশ করেছে, বাকি আটটি করেনি। ১৫২টি উপজেলার তিনটি নির্বাচনের প্রায় ৪ হাজার ৮০০টি হলফনামায় দেওয়া আট ধরনের তথ্যের বহুমাত্রিক ও তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাচন দলীয় হলেও নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে এবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলগতভাবে কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। বিএনপি এ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও তা অমান্য করে প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় ৭৩ জনকে বহিষ্কার করেছে দলটি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করা ২২ জামায়াত নেতা পরবর্তী সময়ে দলের সিদ্ধান্তে সরে দাঁড়ান। উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীর অধিকাংশই ‘আওয়ামী লীগ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী’। যদিও বেশিরভাগ স্বতন্ত্র প্রার্থীই দলের স্থানীয় নেতৃত্বের সমর্থনপুষ্ট। উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে রাজনৈতিক লড়াই হবার কথা থাকলেও সেখানে দলগত অবস্থান প্রায় শূন্য। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের হস্তক্ষেপ নিয়ে শঙ্কার মাঝে এবার বড় আলোচনার বিষয় হচ্ছে স্বজনদের মনোনয়ন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নারীর অংশগ্রহণ জাতীয় নির্বাচনের তুলনায়ও কম। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে নারী প্রার্থী আছেন মাত্র ২৫ জন।  সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ব্যবসায়ী প্রার্থীদের দাপট বাড়ছে। ব্যবসায়ী প্রার্থীদের সংখ্যা চতুর্থ নির্বাচনের তুলনায় ৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬ শতাংশ। চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ৬৯.৮৬ শতাংশই ব্যবসায়ী, ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের প্রায় ৬৬.৫৯ শতাংশ, নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ২৪.৩৭ শতাংশ ব্যবসাকে পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন। নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ৫২.২২ শতাংশই নিজেকে গৃহিণী গৃহস্থালি কাজকে পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন।  গৃহস্থালিকে পেশা হিসেবে দেখানো প্রার্থীদের সাড়ে ১৯ শতাংশের আয় আসে ব্যবসা থেকে, কৃষি থেকে আয় আসে উৎস দেখাননি। ৫ শতাংশের, আয় নেই ১২ শতাংশের, ৩৯ শতাংশ নিজেদের আয়ের স্বীকৃতি সার্বিকভাবে প্রার্থীদের ৪০ শতাংশই দেখিয়েছেন সাড়ে তিন লাখ টাকার নিচে। অর্থাৎ করযোগ্য আয় নেই তাদের। সাড়ে ১৬ লাখ টাকার বেশি আয় দেখিয়েছেন মাত্র ১০ শতাংশ প্রার্থী।
০৬ মে, ২০২৪

ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার আইন যেন তথ্য নিয়ন্ত্রণের জায়গা না হয় : টিআইবি
ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার জন্য যে আইন তৈরি হচ্ছে তা যেন ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ন্ত্রণের জায়গা না হয়, তা খেয়াল রাখতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইনের আওতায় নিরপেক্ষ কমিশন প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার নামে যে আইনটি তৈরি করা হচ্ছে তা ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ন্ত্রণমূলক আইন হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। যা আমরা চাই না। রোববার (২৮ এপ্রিল) ধানমন্ডির টিআইবি কার্যালয়ে টিআইবি ও আর্টিকেল নাইনটিন যৌথভাবে আয়োজিত ‘খসড়া ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২৪: পর্যালোচনা ও সুপারিশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।  ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সরকার ব্যক্তিগত তথ্যের ব্যবহারকারী। ডেটা সুরক্ষা অথরিটি নামে যে সংস্থারের কথা বলা আছে, সেটা সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান। ফলে স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকে যদি এর নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে থাকে। আমরা এটিকে একটি কমিশন হিসেবে দেখতে চাই। ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা কমিশন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য। যা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকবে। আইনে সরকারি বেশকিছু সংস্থাকে জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় অবাধে ব্যক্তিগত তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে অবাধ ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে, তা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করি। এখনো জাতীয় স্বার্থ বা জনস্বার্থের ব্যাখ্যা নেই। ফলে সেই ব্যাখ্যাও আইনে থাকতে হবে। এছাড়াও তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে জুডিশিয়ারি মাধ্যমে যেন হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।’ টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আইনের মূল চেতনার যে জায়গা তাতে মানবাধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়নি। এছাড়াও ব্যক্তির সংজ্ঞা এবং ব্যক্তিগত তথ্যের সংজ্ঞা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়েছে। এটা সুস্পষ্ট হওয়া উচিত। তা না হলে সরকারের কাছে একধরনের সুযোগ থেকে যাচ্ছে। ডেটা সেন্টার নির্মাণ ও স্থানীয়করণের বিষয়ে তিনি বলেন, সব অংশীজনের সম্পৃক্ততায় এটি ঢেলে সাজানোর প্রয়োজন রয়েছে। এর জন্য আমরা প্রস্তুত নই। কারণ আমাদের অবকাঠামোগত সক্ষমতা নেই। এরপরও সরকার যদি মনে করে তা করতে হবে; তবে অবশ্যই সব অংশীজনের সম্পৃক্ততা দরকার।’  আর্টিকেল নাইনটিনের আঞ্চলিক পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম বলেন, ‘এই আইনে অধিকারভিত্তিক দিকনির্দেশনা দেখতে চাই। মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে বা মৌলিক অধিকার সুরক্ষা করতে এই আইন প্রয়োজন। অপব্যবহারের জন্যই যেমন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার; সেভাবেই যেন এই আইনটাও তৈরি করা হয়েছে।’  ডেটা সেন্টারের জন্য অত্যাবশ্যকীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থানের অপ্রতুলতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আইনে ব্যক্তিগত উপাত্তের জন্য ডেটা সেন্টার নির্মাণে সবসময় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বা শীতল স্থান প্রয়োজন। সেই সুবিধা বাংলাদেশে কতটুকু? বাংলাদেশ নিজেদের বিদ্যুৎ ঘাটতিই এখনো মেটাতে পারেনি। ফলে দেশের বাইরে হওয়াটাই উত্তম। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।’ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো এই আইনেও ভালোর চেয়ে খারাপ দিকগুলো ভোগাতে পারে এমন শঙ্কাও রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অনেক ভালো দিক রয়েছে। কিন্তু ভালো দিকের তুলনায় খারাপটা আমরা বেশি দেখেছি। এই আইনেও এটা হতে পারে। এছাড়াও দেশে পর্যাপ্ত ডেটা প্রটেকশন অফিসার কিংবা ট্রেনিংপ্রাপ্ত ব্যক্তি এ দেশে না থাকায় টেকনিক্যাল পরিবর্তনও প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।’ সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের ও আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
২৮ এপ্রিল, ২০২৪

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা স্বেচ্ছাচারিতামূলক : টিআইবি
আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান এবং জনগণের অর্থের শেষ অবলম্বন বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিয়ন্ত্রণ আরোপের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এমন পদক্ষেপকে জনস্বার্থে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের তথ্য প্রকাশে গণমাধ্যমের পেশাগত দায়িত্ব পালনের পথে অভূতপূর্ব প্রতিবন্ধকতা উল্লেখ করে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।  শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) টিআইবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের তথ্য সংগ্রহে গণমাধ্যম ও সংবাদকর্মীরা বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশের ক্ষেত্রে এক মাস ধরে বাধার সম্মুখীন হচ্ছিলেন। এক্ষেত্রে নিরুপায় হয়ে সমস্যা সমাধানে গভর্নরের সহায়তা চাইলেও ইতিবাচক কোনো ফল আসেনি। এটিকে জনগণের তথ্য জানার আইনসিদ্ধ অধিকার নিশ্চিতের পথে অনৈতিক ও স্বেচ্ছাচারী পদক্ষেপ উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান প্রশ্ন রাখেন, ‘খেলাপি ঋণ, আর্থিক প্রতারণা ও জালিয়াতি এবং সার্বিক সুশাসনের অভাবসহ নানাবিধ সংকটে ব্যাংকিং খাত যখন জর্জরিত তখন তথ্যের অবাধ প্রবাহ বন্ধের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ নেতৃত্ব সবার কাছে কী বার্তা দিতে চান? কিংবা এর মাধ্যমে  বাংলাদেশ ব্যাংক কী অর্জন করতে চায়? তবে কি খাদের কিনারায় উপনীত ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নিজেদের ব্যর্থতার তথ্য গোপন করতেই এই উদ্যোগ? না-কি যারা ঋণখেলাপি ও জালিয়াতিসহ এ খাতের সংকটের জন্য দায়ী তাদের স্বার্থ সুরক্ষার প্রয়াস এটি।’   বিগত কয়েক বছরে আর্থিক খাতের হাজার হাজার কোটি টাকা কেলেঙ্কারির যেসব তথ্য জনস্বার্থে প্রকাশিত হয়েছে তার বেশিরভাগই এসেছে গণমাধ্যমকর্মীদের বাংলাদেশ ব্যাংকে অবাধ প্রবেশাধিকারের সূত্র ধরে, এমন কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ড. জামান বলেন, ‘তবে কী ধরে নিতে হবে, বাংলাদেশ ব্যাংক এ খাতের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ঋণখেলাপি, জালিয়াতি ও অর্থপাচারের মতো অপরাধী মহলের অব্যাহত সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করছে এবং চক্রটির হাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি ও নেতৃত্ব যে জিম্মি হয়ে পড়েছে, তা গোপন করতেই এহেন নিন্দনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে।’ ব্যাংকিং খাত নিয়ে জনমনে যখন আস্থার প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, কিংবা ব্যাংকের গ্রাহকদের স্বার্থ সুরক্ষার নামে ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজেই দৃশ্যমান কিংকর্তব্যবিমূঢ়, তখন গোপনীয়তার ঘেরাটোপ আরও বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে মনে করে টিআইবি।  গণমাধ্যমকর্মীরা নিরুপায় হয়ে সমস্যা সমাধানে গর্ভনরের সহায়তা চাইলে ব্যাংকিং খাতের তথ্যের স্পর্শকাতরতা বিষয়ে গণমাধ্যম ও সংবাদকর্মীদের প্রশিক্ষণের নামে আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতার মাধ্যমে মূল বিষয়কে এড়িয়ে বাস্তবে সাংবাদিকদের বাধাহীন তথ্য সংগ্রহের সুযোগ ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে যে বাংলাদেশ ব্যাংক নারাজ, তা পরিষ্কার বলে উদ্বেগ প্রকাশ করছে টিআইবি।  যা শুধু স্বেচ্ছাচারিতার বহিঃপ্রকাশই নয়, বরং ঔপনিবেশিক মানসিকতারও পরিচায়ক আখ্যা দিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলছেন, ‘সমস্যার সমাধান না করে গভর্নর যে পাসনির্ভর ব্যবস্থা চালু করার কথা বলছেন, প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দিচ্ছেন, তা আর যা-ই হোক, গণমাধ্যমকর্মীদের পেশাগত দায়িত্ব, বিশেষ করে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বাস্তবে অপ্রতিরোধ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপই শুধু নয়, বরং এর ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে কোনো পর্যায়ের কর্মকর্তাই সাংবাদিকদের সাক্ষাৎ প্রদানে বিরত থাকতে চাইবেন। কেননা সাক্ষাতের পর সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক প্রতিবেদন প্রকাশ করলে নির্দিষ্ট কর্মকর্তাকে যে প্রশাসনিক জবাবদিহির নামে হয়রানির মুখোমুখি হতে হবে, তা না বললেও চলে। অর্থাৎ তথ্য প্রাপ্তির সুযোগ কার্যত রুদ্ধ হবে, জনগণ ব্যাংকিং খাতে কী হচ্ছে, কেন এবং কারা জনগণের অর্থ লোপাটের ফলে লাভবান হচ্ছেন, তা জানার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন। যা কোনোভাবেই সুবিবেচকের কাজ হতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের মনে রাখতে হবে, তাঁরা জনস্বার্থের সুরক্ষার ভূমিকা পালনের কথা, ঋণখেলাপি আর ব্যাংকিং খাতের সংকটের জন্য দায়ী মহলের নয়। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নেতৃত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিকদের বাধাহীন প্রবেশের পরিস্থিতি নিশ্চিতে অবিলম্বে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার ঘোষণার মাধ্যমে অবাধ তথ্য প্রকাশের পথকে সুগম করবেন- এমনটাই প্রত্যাশা করে টিআইবি।
২৬ এপ্রিল, ২০২৪

ব্যাংক একীভূতকরণ দায়মুক্তির নতুন মুখোশ : টিআইবি
ব্যাংক একীভূতকরণে আন্তর্জাতিক ও বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত নীতিমালা অনুসরণ করা হচ্ছে না বলে মনে করে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড না মানায় প্রস্তাবিত একীভূতকরণ প্রক্রিয়াগুলো স্থগিত করতে বলেছে সংস্থাটি।  মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি এই মন্তব্য করেছে। এতে সংস্থাটি বলে, ব্যাংকিং খাতের দুর্বল ব্যাংকগুলো রক্ষার নামে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একীভূতকরণের পথে হাঁটতে শুরু করেছে, যা আর্থিক খাতে সংকট মোকাবিলায় বৈশ্বিক চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিবেচিত হওয়ার কথা। কিন্তু সংবেদনশীল ও জটিল এই কাজটি করতে আন্তর্জাতিকভাবে অনুসৃত মানদণ্ড ও রীতিনীতি এবং এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজের ঘোষিত নীতিমালা না মেনে তড়িঘড়ি করা হচ্ছে। টিআইবি বলছে, স্বেচ্ছাচারীভাবে চাপিয়ে দেওয়া কয়েকটি ব্যাংক একীভূতকরণের ঘোষণা এবং এ প্রক্রিয়ায় থাকা ভালো ব্যাংকগুলোর অস্বস্তি, একীভূত হতে কোনো কোনো দুর্বল ব্যাংকের অনীহা, সব মিলিয়ে ব্যাংকিং খাতে শঙ্কা, অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা গভীরতর করেছে। যা একীভূতকরণের পুরো প্রক্রিয়াটিকে শুরুর আগেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। টিআইবি মনে করে, প্রস্তাবিত একীভূতকরণের মাধ্যমে খেলাপি ঋণে জর্জরিত দুর্বল ব্যাংকের মন্দ ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং জবাবদিহিসংক্রান্ত বিষয়গুলোতে যে ধরনের অস্পষ্টতা তৈরি করা হয়েছে, তা সংকটের মূল সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে ঋণখেলাপি ও জালিয়াতির জন্য দায়ী মহলকে “দায়মুক্তি” প্রদানের নামান্তর। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, একটি দুর্বল ব্যাংক ছাড়া কোনো ব্যাংকই নিজ উদ্যোগে একীভূত হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি, আবার এ প্রক্রিয়ায় নাম আসা সবল ব্যাংকগুলো স্বীয় উদ্যোগে স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে এতে যুক্ত হতে সম্মত হয়েছে তাও নয়। অর্থাৎ পুরো প্রক্রিয়াটি প্রথম থেকেই স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা ঘোষিত নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’ তিনি বলেন, ‘তা ছাড়া, দুর্বল ব্যাংকের সম্পদ ও দায়-দেনার পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন ছাড়া আপাত সবল ব্যাংকের ঘাড়ে একীভূতকরণের নামে ঋণখেলাপি ও জালিয়াতির বোঝা চাপিয়ে দেওয়া কতটুকু যৌক্তিক ও ন্যায়সংগত? অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, যা ঘটছে তা ক্যান্সার চিকিৎসায় প্যারাসিটামল প্রয়োগের নামান্তর। একীভূতকরণের নামে একদিকে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ও জালিয়াতির জন্য যারা দায়ী তাদের যেমন সুরক্ষা দিয়ে খেলাপি ঋণের সংস্কৃতিকে গভীরতর করা হচ্ছে, অন্যদিকে সবল ব্যাংকগুলোর সাফল্যের পরিণামে খারাপ ব্যাংক হজম করিয়ে দেওয়ার জোর প্রচেষ্টা চলছে।’ দুর্বল ব্যাংককে বাঁচানোর এই প্রক্রিয়া হিতে বিপরীত হবে কি-না আশঙ্কা প্রকাশ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘একীভূতকরণের আলোচনায় সরকারি-সরকারি, বেসরকারি-সরকারি এবং বেসরকারি-বেসরকারি তিন ধরনের ব্যাংকই রয়েছে। এক্ষেত্রে কোন বিবেচনায় এই ব্যাংকগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একীভূত করার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে, কিংবা কোন সবল ব্যাংকের সঙ্গে কোন দুর্বল ব্যাংক একীভূত হবে, তা কীভাবে ঠিক করা হয়েছে- তাও স্পষ্ট নয়।’ টিআইবি মনে করে, ব্যাংকিং খাতের মূল সমস্যা মোকাবিলায় প্রয়োজন কার্যকর জবাবদিহি-ভিত্তিক সুশাসন। এটি নিশ্চিত করা ছাড়া, শুধু একীভূত করলেই সংকট মোকাবিলা করা যাবে বা গ্রাহক স্বার্থ রক্ষা পাবে কিংবা খেলাপি ঋণ কমে আসবে- এমন ভাবনা সত্যিই অলীক।’ একীভূতকরণ নীতিমালায় দুর্বল ব্যাংকের পরিচালকদের পাঁচ বছর পর পুনরায় একীভূত হওয়া ব্যাংকের পর্ষদে ফেরত আসার সুযোগের সমালোচনা করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।  তিনি বলেন, ‘এ বিধান দুর্বল ব্যাংকের সংকটের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির বদলে পুরস্কৃত করা এবং এক ধরনের দায়মুক্তি দেবার বিধান। পাশাপাশি, দুর্বল ব্যাংকের নিরীক্ষাকালে নতুন কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতির চিত্র উঠে এলে সে বিষয় গোপন রাখার যে বিধান নীতিমালায় রাখা হয়েছে, তা শুধু আর্থিক অনিয়মের চিত্রকেই ধামাচাপা দেবে না, একই সঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির মুখোমুখি করার প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হবে। যা এক কথায় অন্যায়কে সুরক্ষা দেওয়ার শামিল।’ এভাবে একীভূতকরণের নামে যা ঘটছে, তা হতাশাজনক এবং ঋণখেলাপিদের হাতে ব্যাংকিং খাতের অব্যাহত জিম্মিদশার পরিচায়ক বলে জানিয়েছে টিআইবি।
২৩ এপ্রিল, ২০২৪

প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনে নৈরাজ্য-নিরাপত্তাহীনতা বাড়বে : টিআইবি
বিদ্যমান সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন করে শাস্তি ও জরিমানার পরিমাণ কমালে সড়কে নৈরাজ্য ও নিরাপত্তাহীনতা বাড়বে। আইনটি সংশোধনের এমন উদ্যোগকে আত্মঘাতীমূলক আখ্যা দিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতে এমন উদ্বেগ জানানো হয়েছে।  তরুণ শিক্ষার্থীদের অভূতপূর্ব আন্দোলনের প্রেক্ষিতে অনেক প্রত্যাশা নিয়ে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ প্রণয়ন করা হলেও কার্যকর ও বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে সড়কে বিশৃঙ্খলা, অনাচার ও নিরাপত্তাহীনতার মাত্রা ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। জনস্বার্থ বিবর্জিত প্রস্তাবিত সংশোধনীর ফলে আইনটি উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যূত ও দুর্বল হয়ে পড়বে। ফলে মালিক-শ্রমিক পক্ষের হাতে সড়ক ব্যবস্থাপনার জিম্মিদশা আরও বাড়বে বলে মনে করছে সংস্থাটি। বিদ্যমান আইনের অন্তত ১২টি ধারায় পরিবর্তন এনে এবং অধিকাংশ ধারায় চালক ও চালকের সহকারীদের জেল জরিমানা ও শাস্তি কমিয়ে গত ১৩ মার্চ সড়ক পরিবহন সংশোধন আইন-২০২৪ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এমন সংশোধনী উদ্বেগজনক উল্লেখ করে টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলায় এনে তা জনগণের জন্য নিরাপদ করে তুলতে যেখানে জরিমানা ও শাস্তির বিধান যৌক্তিকভাবে বাড়ানো প্রয়োজন ছিল, সেখানে সংশোধনীর মাধ্যমে শাস্তি কমিয়ে দেওয়া হলে সড়কে বিশৃঙ্খলা বাড়াবে এবং জনগণের জন্য আরও বেশি অনিরাপদ হয়ে উঠবে। একই সঙ্গে, চালক-শ্রমিকদের আইন না মানার প্রবণতার পাশাপাশি সড়কে অনিয়মকেও উৎসাহিত করবে। সড়ককে নিরাপদ করে তুলতে নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও, অবস্থাদৃষ্টে সরকারের অবস্থান ঠিক তার উল্টোদিকে বলে প্রতীয়মান হয়। এমন সংশোধনের ফলে সড়কে অনিয়ম-দুর্নীতি, নৈরাজ্য আরও বৃদ্ধি পাওয়ার ঝুঁকি যেমন সৃষ্টি হবে, তেমনি সড়ক-মহাসড়কে অনাকাঙ্ক্ষিত মর্মান্তিক মৃত্যুর মিছিল কেবল দীর্ঘই করবে।’ তবে সড়ক পরিবহন আইন ২০২৪-এ যানবাহনের বিমা বাধ্যতামূলক করা, সুপারভাইজার সংযুক্ত করা এবং গণপরিবহনে ভাড়ার চার্ট প্রদর্শন অথবা নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া দাবি বা আদায়সংক্রান্ত ধারা লঙ্ঘনের দণ্ড আলাদাভাবে করা হয়েছে। এ ৩টি সংশোধনীকে টিআইবি সতর্ক সাধুবাদ জানিয়েছে। টিআইবির সাম্প্রতিক গবেষণায় পরিবহন মালিক-শ্রমিকপক্ষের হাতে সড়ক ব্যবস্থাপনার জিম্মিদশার প্রকটতার বিষয়টি উঠে আসে উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সড়ক আইনের সংশোধনের মাধ্যমে শাস্তি ও জরিমানা কমিয়ে আনার বিষয়টি এ জিম্মিদশার সঙ্গে দৃশ্যত সম্পর্কিত। আইনে সংশোধন এনে শাস্তি কমানোর পেছনে সরকারের ওপর রাজনৈতিক মদদপুষ্ট মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের যে প্রভাব রয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। এই সংশোধনী সংসদে গৃহীত হলে জনগণের স্বার্থ ভূলুণ্ঠিত হবে। এ আত্মঘাতী পথ থেকে সরে আসার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
২৮ মার্চ, ২০২৪

বেইলি রোড ট্র্যাজেডি / প্রকৃত দোষীদের আড়াল করতে লোক দেখানো অভিযান : টিআইবি
রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যুর পর সরকারি সংস্থাগুলো যে যার মতো শত শত রেস্তোরাঁ ও ভবনে অভিযান চালিয়েছে। এসব লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজেদের দায় এড়ানো ও প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের আড়াল করার চেষ্টা করছে বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির মতে, অভিযানে এমন ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের দুর্ঘটনার মূল কারণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই। অন্যদিকে প্রকৃত অপরাধী মহল বিচারহীনতা ভোগ করছে। বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলেছে টিআইবি।  সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে আদালত বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। নানা সময়ে গঠিত তদন্ত কমিটি ও টাস্কফোর্স বেশ কিছু সুপারিশও প্রস্তাব করেছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর নিষ্ক্রিয়তা, দায়িত্বহীনতা, সমন্বয়হীনতা, পরিকল্পনার অভাব, অনিয়ম-দুর্নীতি এবং কর্মকর্তাদের জবাবদিহির ঘাটতির কারণে সুপারিশের বেশির ভাগ বাস্তবায়ন হয়নি। নিয়মিত বিরতিতে অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের দায় এড়িয়ে যাওয়ার সংস্কৃতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে টিআইবি। মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের পুনরাবৃত্তির কারণ রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের নিষ্ক্রিয়তা, সমন্বয়হীনতা, দুর্নীতি, জবাবদিহির অনুপস্থিতি ও বিচারহীনতা বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। দায়িত্বে অবহেলা ও অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিসসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন সংস্থা দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর বরাবরের মতো সমস্যার মূল কারণকে গুরুত্ব না দিয়ে লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করছে। অভিযানে এমন ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করছে, যাদের নির্ধারিত দায়িত্বের সঙ্গে দুর্ঘটনার মূল কারণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজেদের দায় এড়ানোর ও প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের আড়াল করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ধারাবাহিক এই অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানির পেছনে মূল কারণ ভবন নির্মাণে সংশ্লিষ্ট আইন অনুসরণ না করা এবং মালিক কর্তৃক ভবনে অনুমোদনবহির্ভূত কার্যক্রম পরিচালনা। এসব বিষয় তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ হিসেবে রাজউক, সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিস অনিয়মের বিষয়ে অবহিত। এসব প্রতিষ্ঠানের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ত্রুটিপূর্ণ ভবনের অনুমোদন ও যথাযথভাবে তদারকি করছেন না। যোগসাজশের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে সহায়তা করে আসছেন তারা। প্রকৃত অপরাধীমহল বিচারহীনতা ভোগ করছে। পুরান ঢাকায় একাধিকবার সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে টিআইবি ২০২০ সালে ‘নিমতলী, চুড়িহাট্টা এবং অতঃপর : পুরান ঢাকার অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিতে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণা পরিচালনা করেছিল। ওই গবেষণায় দেখা যায়, বারবার মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পরেও রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি, ব্যবসায়ী, ভবন মালিক, জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ এবং অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে রাসায়নিক পদার্থের গুদাম ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়। গবেষণাটি পুরান ঢাকায় দাহ্য পদার্থ থেকে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডকে বিবেচনায় নিয়ে করা হয়। তবে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা ও ফলাফল ঢাকা শহরের অন্যান্য অগ্নিদুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও প্রাসঙ্গিক উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, অগ্নিকাণ্ডের কার্যকর প্রতিরোধের লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। অবিলম্বে আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক ভবন এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাণিজ্যিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অগ্নিকাণ্ডের জন্য প্রকৃত দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারায় নির্মম প্রাণহানির ঘটনা স্বাভাবিকতায় রূপ নিয়েছে। বিষয়টি সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে সাধারণ মানুষের জীবনের মূল্য না থাকার দুঃখজনক উদাহরণ। নিরপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানি না করে দায়িত্বে অবহেলা ও অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত সবার বিরুদ্ধে জবাবদিহি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছে টিআইবি। প্রসঙ্গত, ঢাকা মহানগর পুলিশ ১০ দিনে ১ হাজার ১৩২টি রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়েছে। রাজউক ৩৩টি ভবনে অভিযান চালিয়ে সাড়ে ৪৭ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন দুটি ভবন ও দুটি রেস্তোরাঁ সিলগালা করার পাশাপাশি ৭টি প্রতিষ্ঠানকে ৭ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন জরিমানা করেছে ২২টি প্রতিষ্ঠানকে, পরিমাণ ৬ লাখ ১৮ হাজার টাকা।
১৪ মার্চ, ২০২৪

অসত্য গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে টিআইবি : বিআরটিএ
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) মোটরযান নিবন্ধন, ফিটনেস সনদ ইস্যু, রুট পারমিট ও নবায়নে ঘুষসহ অন্যান্য সেবায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুমান নির্ভর, অসত্য ও উদ্দেশ্যমূলক বলে মন্তব্য করেছেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার। বুধবার (৬ মার্চ) রাজধানীর বনানী বিআরটিএ ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এক প্রশ্নের জবাবে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, আপনি যেভাবে বলছেন এখানে ১০০ পার্সেন্টের বিষয় না। তারাই (টিআইবি) তো বলেছে ৪৬ শতাংশ। ঘুষ লেনদেন হয় না, এটা হান্ড্রেড পার্সেন্ট কেউ হলফ করে বলতে পারবে না। যদি হয়ে থাকে, সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা তো আছে। পৃথিবীর সব দেশে যারা অনিয়ম-দুর্নীতি করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আছে। নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, বিআরটিএ ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখান করছে। কারণ, এতে বিআরটিএসহ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের অনুমাননির্ভর তথ্য যা জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টিসহ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে এরূপ প্রতিবেদন প্রকাশে বিরত থাকার জন্য তাদেরকে অনুরোধ করা যাচ্ছে। আমরা টিআইবির কাছে এর লিখিত ব্যাখ্যা চাইবো। পাশাপাশি, টিআইবি যে গঠনমূলক-বাস্তবধর্মী সুপারিশগুলো করেছে তা আমলে নেওয়া হবে। বিআরটিএ অনলাইন বিভিন্ন সেবার কথা তুলে সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান বলেন,  ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারী পরীক্ষার দিনই বায়োমেট্রিক দিয়ে দক্ষতা যাচাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে অনলাইনে প্রযোজ্য ফি জমা প্রদানপূর্বক আবেদন দাখিল করে ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স ওই দিনেই পেয়ে যাচ্ছে। যা ব্যবহার করে গাড়ি চালাতে পারছে। এছাড়াও অনলাইনে আবেদন দাখিলের ৭-১৫ দিনের মধ্যে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স ডাকযোগে আবেদনকারীর ঠিকানায় পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। যেহেতু সেবা পেতে সশরীরে বিআরটিএতে আসার প্রয়োজন হয় না। সেহেতু উল্লেখিত সেবা পেতে ঘুষ, দুর্নীতি বা হয়রানির শিকার হওয়ার বিষয়টি যুক্তিযুক্ত নয়। বিআরটিএ চেয়ারম্যান আরও বলেন, সেবা পেতে ঘুষ, দুর্নীতি বা হয়রানির শিকার হওয়া এবং সংশ্লিষ্ট সেবা পেতে গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখিত গড় সময় ৩০ কর্মদিবসের বিষয়টি অসত্য-কল্পনাপ্রসূত। ১৫ অক্টোবর ২০২০ থেকে ফিটনেস নবায়নে অনলাইনে অ্যাপয়নমেন্ট গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে জানিয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, অ্যাপয়নমেন্ট অনুযায়ী নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে মোটরযান সংশ্লিষ্ট সার্কেল অফিসে হাজির করে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় উপযুক্ততা সাপেক্ষে ফিটনেস সার্টিফিকেট একই দিনে প্রদান করা হয়।   ফিটনেস নবায়নে মোটরযান ভেহিকেল ইন্সপেকশন সেন্টার (ভিআইসি) এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদানের লক্ষ্যে বিআরটিএ ঢাকা মেট্রো-১ সার্কেল, মিরপুর অফিসে ১২ লেন বিশিষ্ট ভিআইসি চালু করা হয়েছে। অন্যান্য সার্কেল অফিসে ফিটনেস প্রদানের সময় সংশ্লিষ্ট মোটরযানের সচিত্র ছবি ধারণ করে ডিজিটালি আর্কাইভ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ফিটনেস নবায়নে ১৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টার মধ্যে সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ফিটনেস সনদ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে যেহেতু স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়েছে সেহেতু সংশ্লিষ্ট সেবা পেতে ঘুষ, দুর্নীতি বা হয়রানির শিকার হওয়ার বিষয়টি সঠিক নয় এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মঙ্গলবার (৫ মার্চ) টিআইবির পক্ষ থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস থেকে বছরে ১ হাজার ৫৯ কোটি টাকা ঘুষ ও চাঁদা আদায় করা হয়। বিআরটিএ বাসের ফিটনেস ও অন্যান্য কাগজ হালনাগাদ করতে ৯০০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ঘুষ নেয়। মামলা থেকে বাঁচতে বাস মালিকরা হাইওয়ে এবং ট্রাফিক পুলিশকে ৮৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ঘুষ দেন। রাজনৈতিক পরিচয়ে চাঁদা তোলা হয় ২৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। মালিক ও শ্রমিক সংগঠন ১২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে বাস থেকে। সিটি করপোরেশন, পৌরসভার ইজারাদাররা পার্কিং ইজারার নামে ৩৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা চাঁদা তোলেন।   দেশের মানুষ অভ্যন্তরীণ চলাচলে মূলত নির্ভর করেন ব্যক্তি মালিকানা বাসের উপর। বড় শহরে গুলোতেও এই নির্ভরতা কম নয়। ২০২৩ সালে বিআরটিএ-এর তথ্য অনুযায়ী, এই নির্ভরতা ৯৮ ভাগের বেশি। বিআরটিএতে দালাল নেই বললেই চলে দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান বলেন, টিআইবির প্রতিবেদন অবশ্যই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রতিবেদনে চাঁদাবাজির কথাও বলা হয়েছে। এটা তাদের একটা গোঁজামিল রিপোর্ট। সবকিছু মিলে তারা ৯০০ কোটি টাকা রাখতে হিসাব দিয়েছে। এই ৯০০ কোটি টাকার হিসাব তারা কোথায় পেলো এখানে তথ্য প্রমাণ টা কি? সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণসহ তারা তো আমাদের কাছেও আসতে পারতো। তারা আসলে আমরা সেই ভাবে ব্যবস্থা নিতাম। এখানে আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। আমরা দুর্নীতিকে কখনও প্রশ্রয় দেই না দিব না। আমরা চাই হয়রানি মুক্ত কাজ হোক।
০৬ মার্চ, ২০২৪

বাস থেকে বছরে ১০৫৯ কোটি টাকা চাঁদা আদায় : টিআইবি
দেশে ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস ও মিনিবাস থেকে বছরে ১ হাজার ৫৯ কোটি টাকা চাঁদা আদায় হয়। আর এই চাঁদার ভাগ পায় দলীয় পরিচয়ধারী ব্যক্তি বা গোষ্ঠী, ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কর্মকর্তা-কর্মচারী, মালিক-শ্রমিক সংগঠন ও পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধিরা। নিবন্ধন ও সনদ হালনাগাদ করতে ৫২ দশমিক ৯ শতাংশ যাত্রীবাহী বাস বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) ঘুষ দেয়। বাসপ্রতি মাসিক ১৭ হাজার ৬১৯ টাকা ঘুষ নিয়ম বহির্ভূতভাবে আদায় করে বিআরটিএ। এভাবে বছরে ৯০০ কোটি টাকা ঘুষ আদায় করে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। মঙ্গলবার (৫ মার্চ) ‘ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস পরিবহন ব্যবসায় শুদ্ধাচার’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির গবেষক মুহা. নূরুজ্জামান ফারহাদ, ফারহানা রহমান ও মোহাম্মদ নূরে আলম এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। ২০২৩ সালের মে মাস থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩২টি জেলার বাস কর্মী, শ্রমিক, মালিক ও যাত্রীদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ গবেষণা চালানো হয়েছে। এতে ৩২ জেলার ৫১টি বাস টার্মিনাল পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। ৬৯৬ জন যাত্রী, ৭০১ জন বাস কর্মী ও ১৬৮ জন বাস মালিকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশের বৃহৎ বাস কোম্পানির প্রায় ৯২ শতাংশ পরিচালনার সঙ্গে রাজনীতিবিদরা সম্পৃক্ত। তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে যুক্ত। গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, যাত্রীদের ৬০ দশমিক ৫ শতাংশ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন। আন্তঃজেলা দূরপাল্লার বাসগুলোকে বার্ষিক এক হাজার ১৯ টাকা, সিটি সার্ভিসগুলোকে পাঁচ হাজার ৬৫৬ টাকা ও আন্তঃজেলা আঞ্চলিক বাসগুলোকে এক হাজার ১৩৩ টাকা ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশকে ঘুষ হিসেবে দিতে হয়। পাশাপাশি টার্মিনালে বাস রাখতে বাসপ্রতি দৈনিক ১০৫ টাকা চাঁদা দিতে হয়। প্রতিবেদনে টিআইবি বলছে, দেশের পুরো পরিবহন খাত কতিপয় কোম্পানি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। শুদ্ধাচারের ঘাটতি থাকায় শ্রমিকরা অবহেলিত ও যাত্রীরা মানসম্মত সেবা থেকে বঞ্চিত। এ খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের সুষ্ঠু প্রয়োগসহ ১৫টি সুপারিশ করেছে টিআইবি। বিআরটিএর এই ঘুষ লেনদেন মন্ত্রণালয় পর্যন্ত পৌঁছায় কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এখানে একটু গণতন্ত্র বিরাজ করছে, ভাগাভাগি হচ্ছে। পার্টিকুলার কোথায় যাচ্ছে সেটা বলা যাবে না। দলীয় পরিচয়ে সড়কে চাঁদাবাজি হচ্ছে। ট্রাফিক হাইওয়ে পুলিশ, সিটি করপোরেশনে অনিয়ম হচ্ছে। বিআরটিএ তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, অনুমান করা যায় বিআরটিতে যে ঘুষ নেওয়া হয় তা সংস্থাটির কর্মকর্তাদের একাংশ পেয়ে থাকে। যেহেতু বিআরটিএকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, সেহেতু এর অংশীদারত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, মালিক-শ্রমিক আঁতাতের কাছে সরকার তুলনামূলকভাবে ক্ষমতাহীন। সরকারি আইনে সবচেয়ে বড় বাধা এই মালিক-শ্রমিক আঁতাত। তারাই সরকারের চেয়ে বেশি ক্ষমতাবান, এ কারণে যাত্রীরা প্রত্যাশিত সেবা পায় না। তিনি বলেন, চাঁদাবাজির এ হিসাব খুবই রক্ষণশীল। বাস্তবে এর চেয়ে বহুগুণ বেশি চাঁদাবাজি হয়। এই চাঁদার ভাগ নানা পর্যায়ে যায়। যেহেতু খাতটি রাজনীতিবিদদের নিয়ন্ত্রণে, ফলে চাঁদার নিয়ন্ত্রণও তাদের হাতে।
০৫ মার্চ, ২০২৪

টিআইবির প্রতিবেদন প্রসঙ্গে তিন মন্ত্রী / আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করেনি টিআইবি
নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ না করেই ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) রিপোর্ট দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত। তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক কোনো জার্নাল তাদের এ গবেষণা প্রকাশ করবে না। কারণ এ গবেষণায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখা হয়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, সংসদ নির্বাচন নিয়ে যারা এ গবেষণা করেছেন, তাদের গবেষণার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। আন্তর্জাতিক জার্নালে তাদের কোনো গবেষণা নেই। টিআইবির গবেষণা বৈজ্ঞানিক মিসকন্ডাক্টকে (অসদাচরণ) ছাড়িয়ে গেছে। তারা অসত্য তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের সুশীল সমাজ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণের মাধ্যমে গবেষণা করে তার ফলাফল জনগণের সামনে তুলে ধরবে। টিআইবি যেটা করেছে, সেটা গবেষণা না, তাদের মতামত। প্রতিমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে কিছু অনিয়ম হলেও নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নিয়েছে। যারা অনিয়ম করেছেন তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে। অনিয়মের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের শক্ত অবস্থানকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বরং মিথ্যা ছড়িয়ে তাদের মনোবল দুর্বল করার চেষ্টা করা হয়েছে। তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, তারা মানুষের মতামতকে তথ্য হিসেবে দেখিয়েছে। ৪২ হাজার কেন্দ্র থেকে মাত্র ৫০টি কেন্দ্রের ফলাফল নিয়ে পুরো নির্বাচন ঘিরে তৈরি রিপোর্ট কখনো সঠিক হতে পারে না। এত অল্প কেন্দ্রের ফলাফল বিশ্লেষণ করে কি করে এমন রিপোর্ট প্রকাশ করা সম্ভব?
১৯ জানুয়ারি, ২০২৪

টিআইবির প্রতিবেদন প্রসঙ্গে তিন মন্ত্রী / টিআইবি বিএনপির দালাল
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) রিপোর্ট একপেশে এবং সরকারবিরোধী। তারা একটি পক্ষের ওকালতি করে; বিএনপি যে ভাষায় কথা বলে, তারাও একই কথা বলে। তারা বিএনপির দালাল। গতকাল বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সেতুমন্ত্রী বলেন, টিআইবি যা গবেষণা করে, বাস্তবতা আমরা খুঁজে পাই না। তারা বিএনপির সুরে কথা বলে। ইতিহাস বলে, তারা সব সময় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ছিল। তারা বিএনপির পক্ষে কথা বলে। তাদের গবেষণার নিরপেক্ষতা আমরা খুঁজে পাইনি। তিনি বলেন, একটা প্রতিষ্ঠান আছে, যাদের কোনো নিবন্ধন নেই। অথচ কিছু কিছু গণমাধ্যম আছে তাদের কথা ফলাও করে প্রচার করে। এখন ধরুন, অ্যাকসিডেন্টে যদি ১০০ লোক মারা যায়, তারা এটিকে ৫০০ বানাবে। টিআইবিও এ রকম একটা প্রতিষ্ঠান। তারা গবেষণা করে, কিন্তু তাদের গবেষণার বাস্তবতা খুঁজে পাই না। টিআইবির বিরুদ্ধে আইনি কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন কি না—এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, এই যে তাদের নিয়ে কথা বলছি এটাই তো যথেষ্ট, তারা একপেশে পক্ষপাতিত্ব করে, সেটা বলছি। সব ব্যাপারেই কি মামলা ঠুঁকে দিতে হবে। টিআইবি সরকারের বা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করলেও সংস্থাটির বিরুদ্ধে মামলা করবে না আওয়ামী লীগ। নির্বাচন-পরবর্তী বিভিন্ন স্থানের সহিংসতা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, রাজনীতিতে রণকৌশল থাকবেই। আমাদের দ্বন্দ্ব কোন্দল আছে, থাকবেই। সব দলেই আছে। এসব নিয়ে আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাচ্ছে। যেখানে যত সমস্যায় থাকুক, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবাই ঐক্যবদ্ধ। উপজেলাসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক থাকবে কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সামনে উপজেলাসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করার এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত আছে। আওয়ামী লীগের বোর্ড সভায় সবই সিদ্ধান্ত হবে। দ্রব্যমূল্য নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, দোষারোপ নয়, দ্রব্যমূল্য নিয়ে বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এজন্য শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ অন্য সব ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়গুলো বাস্তবতার নিরিখে তাদের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছে। এ সময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন ও সুজিত রায় নন্দী, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সাঈদ খোকন, পারভীন জামান কল্পনা, মেরিনা জাহান কবিতা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
১৯ জানুয়ারি, ২০২৪
X