জয়পুরহাটে সেচযন্ত্রের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার চুরি ঠেকাতে মাইকিং
জয়পুরহাটে গভীর-অগভীর নলকূপের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার চুরির ঘটনায় দিশেহারা নলকূপের মালিকরা। নলকূপের নৈশপ্রহরীর হাত-পা বেঁধে মারপিট করে ট্রান্সফর্মার চুরির ঘটনা ঘটছে জয়পুরহাটে। ভয়ে নলকূপ পাহারায় দায়িত্ব নিয়ে থাকতে চাচ্ছে না নৈশপ্রহরীরা। গত ছয় মাসে জেলার পাঁচটি উপজেলায় গভীর ও অগভীর নলকূপের ২৩৭টি ট্রান্সফর্মার চুরি হয়েছে। চলতি নভেম্বর মাসের ২২ দিনে জেলায় ট্রান্সফর্মার চুরি হয়েছে ৬৫টি। ট্রান্সফর্মার চুরি রোধে গ্রাহকদের সচেতনতা সৃষ্টিতে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করছে জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। এসব চুরির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ বলছে, ট্রান্সফর্মার চুরির ঘটনায় জড়িতদের অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার জিয়াপুর গ্রামের বিল হাওয়াই মাঠে গত ১৭ নভেম্বর রাতে জিয়াপুর গ্রামের ছানোয়ার কাজী, আবুল কালাম ও আজিজুল ইসলামের তিনটি গভীর বৈদ্যুতিক নলকূপের ৯টি ট্রান্সফর্মার চুরি হয়। দুর্বৃত্তরা ছানোয়ার কাজীর গভীর নলকূপের নৈশপ্রহরী যষ্টি চন্দ্র দাসের হাত-পা বেঁধে তাকে বেদম প্রহার করে ট্রান্সফর্মার চুরি করে নিয়ে যায়। একই রাতে কালাম ও আজিজুলের ৬টি ট্রান্সফর্মার চুরি করে। চুরি যাওয়া ৯ ট্রান্সফর্মারের মূল্য ৬ লাখ ১৫ হাজার ৫৩৮ টাকা। ট্রান্সফর্মার চুরি হওয়ায় নলকূপ মালিকরা দিশেহারা। গত মঙ্গলবার রাতে আমদই ইউনিয়নের পলিকাদোয়া গ্রামের সুলতান হোসেনের ৩টি ট্রান্সফর্মার চুরি হয়েছে। জেলার আক্কেলপুর উপজেলায় ৮ নভেম্বর এক রাতে ১২টি ট্রান্সফর্মার চুরির ঘটনা ঘটে। ওই রাতে রায়কালী ইউনিয়নের মুনজিয়া গ্রামের মতিয়র রহমান ও ফরিদ উদ্দীনের গভীর নলকূপের ৬টি এবং কৃষণোকোলা গ্রামের আবু বক্করের চালকলের ৩টি এবং শ্যামগ্রামের আজিজুর রহমানের ৩টি ট্রান্সফর্মার চুরি হয়।  জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একটি সূত্র জানায়, জেলায় সেচযন্ত্রে ও শিল্প কারখানায় প্রকারভেদে ৫ কেবি, ১০ কেবি, ১৫ কেবি এবং ২৫ কেভি পর্যন্ত ট্রান্সফর্মার ব্যবহার করতে হয়। প্রথম বার ট্রান্সফর্মার চুরি হলে সেই গ্রাহককে ওই ট্রান্সফর্মারের অর্ধেক মূল্য জমা দিয়ে ট্রান্সফর্মার কিনতে হয়। দ্বিতীয়বার চুরি হলে গ্রাহককে ট্রান্সফর্মারের সম্পূর্ণ মূল্য দিয়ে কিনতে হয়। জেলায় বিদ্যুতচালিত গভীর নলকূপ রয়েছে ২ হাজার এবং অগভীর ৩ হাজার ২০০টি। জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, জেলার পাঁচটি উপজেলায় চলতি নভেম্বর মাসের ২২ তারিখ পর্যন্ত জেলার আক্কেলপুর উপজেলায় ২৬, পাঁচবিবি ১৭, সদর ১১, ক্ষেতলাল ১০ এবং কালাইয়ে ১টি ট্রান্সফর্মার চুরির ঘটনা ঘটে।  জেলায় গত জুলাইয়ে ৬০, আগস্টে ৪৭, সেপ্টেম্বরে ১৬, অক্টোবরে ৪৯ এবং নভেম্বরের ২২ দিনে ৬৫টি ট্রান্সফর্মার চুরি হয়।  জিয়াপুর গ্রামের আবুল কালাম মন্ডল বলেন, তার ৩টি ট্রান্সফর্মার চুরি যাওয়ায় তাকে এখন ২ লাখ টাকা খরচ করে ট্রান্সফর্মার নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, নলকূপের পাহারাদারকে মারপিটের ঘটনায় মাঠের মধ্যে ভয়ে নলকূপ পাহারায় কেউ থাকতে চাচ্ছে না। কোমর গ্রামের কৃষক আবুজার হোসেন বলেন, তারও একটি গভীর নলকূপে শেয়ার আছে। এ সময় নলকুপের ট্রান্সফর্মার চুরি হলে আলু সেচ ব্যাহত হবে। আলুতে যথা সময়ে সেচ দিতে না পারলে ফলন কম হবে। জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. ইউসুফ আলী ট্রান্সফর্মার চুরির তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, চুরিরোধে এলাকায় গ্রাহক ও জনসাধারণকে সচেতন করতে মাইকিং, লিফলেট বিতরণ করছেন তারা। চুরির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করে পুলিশের সহায়তা চেয়েছেন। জেলায় বর্তমানে ট্রান্সফর্মারের স্বল্পতা থাকা সত্ত্বেও ট্রান্সফর্মার অভাবে যেন ফসলের ক্ষতি না হয় সে দিকটিতে নজর রাখা হচ্ছে বলে জিএম জানান। চুরি যাওয়া ট্রান্সফর্মারের ভেতরের তামার তার বের করে নিয়ে ট্রান্সফর্মারের খোলস ফেলে রেখে যায় চোররা। জয়পুরহাট পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলম বলেন, চুরি ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ সব মামলায় গ্রেপ্তারও করা হচ্ছে। চক্রটিকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। 
০১ ডিসেম্বর, ২০২৩
X