ডলার সংকট ঠেকাতে এবার অফশোরে জোর
ডলার সংকট ঠেকাতে এবার অফশোর ব্যাংকিংয়ে জোর দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল রোববার এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেন বিদেশি মুদ্রা বাংলাদেশে এনে সার্ভ করে। আমরাও ভালো সুদ দেব। এটা ভালো উদ্যোগ। গত ৫-৭ বছরে ভারত এ উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। ফিলিপাইন, থাইল্যান্ডসহ অনেক দেশ এতে সফল হয়েছে। আমরাও শুরু করেছি। এখন ব্যাংকগুলোর উচিত এটা ভালোভাবে বুঝে পণ্য তৈরি করে মার্কেটিং ও বিভিন্নভাবে প্রমোশন করা। সেটা কীভাবে কী হবে, সে বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। একীভূতকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চার-পাঁচটা ব্যাংক নিজেরাই মার্জারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা সময়মতো কাজ করতে থাকবে। আমার মনে হয় না এটা নিয়ে এত হইচই করার প্রয়োজন আছে। এটা ধীরে ধীরে হবে। ব্যাংক একীভূত পৃথিবীজুড়ে হয়। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আমাদের দেশেও ধীরে ধীরে হবে। এটা নিয়ে এত চিন্তার কিছু নেই। গত ২২ এপ্রিল অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের অর্জিত মুনাফা বা সুদের ওপর কোনো কর দিতে হবে না বলে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। আয়কর আইন ২০২৩-এর ধারা ৭৬-এর উপধারার (১) ক্ষমতাবলে এই অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অন্য কোনো আইনে কোনো প্রকার কর অব্যাহতি দেওয়া হলে সেই কর অব্যাহতি ততক্ষণ পর্যন্ত কার্যকর হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না এনবিআর সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অব্যাহতি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। তারও আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ অফশোর ব্যাংকিং আইন ২০২৪-এর খসড়া প্রস্তুত করে। তবে খসড়া বিধানে স্টেকহোল্ডার হিসেবে এনবিআরের মতামত অগ্রাহ্য করা হয়েছিল। অফশোর ব্যাংকিংয়ের খসড়া আইনের দফা ১৩(ক) তে বলা হয়েছে, অফশোর ব্যাংকিং ব্যবসায় অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট কর্তৃক অর্জিত সুদ বা মুনাফার ওপর আয়কর বা অন্য কোনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কর আরোপ করা যাবে না।
২৯ এপ্রিল, ২০২৪

সেমিনারে বক্তারা / ডলার সংকট সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঠিক কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন
ডলার সংকটে আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে পণ্যের দাম। এ পরিস্থিতিতে কারেন্সি সোয়াপ ব্যবস্থা বা নিজস্ব মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে ভারত, চীনসহ কয়েকটি দেশ। অব্যাহত ডলার সংকটের মুখে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোকে চীনের মুদ্রা ইউয়ানে অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যা সঠিকভাবে বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঠিক কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন।  শুক্রবার ১৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে আয়োজিত ‘ইউয়ান-টাকায় ট্রেড ও বাংলাদেশে ডলার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত গবেষণাভিত্তিক সংগঠন ‘এডুকেশন, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ইআরডিএফবি)’- এ সেমিনারের আয়োজন করে। বক্তরা বলেন, চীনের মুদ্রার ওপর নিঃসন্দেহে ভরসা করা যায়। চীনের ইউয়ান এবং বাংলাদেশি টাকায় বাণিজ্য পরিচালনার উদ্যোগটি বাংলাদেশের ডলার রিজার্ভের ওপর চাপ প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এতে সন্দেহ নেই। ইউয়ান-টাকায় ট্রেড হলে বাংলাদেশ ও চীনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বেশি জোরদার হবে। এর মাধ্যমে দেশ দুটোর মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাড়বে। বাংলাদেশি রিজার্ভে ইউয়ানের জোগান বাড়বে যা ব্যবহার করে বাংলাদেশের অব্যাহত ডলার সংকট মোকাবিলা করা অনেকটা সহজ হবে। সেমিনারে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী অধ্যাপক ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুইফট বন্ধ করে দিয়েছিল। এর ফলে বিনিময়ের ক্ষেত্রে বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এই ধরনের পরিস্থিতি এড়ানোর লক্ষ্য ভারত এবং চীনের মতো বিশ্বের অনেক দেশ ডলার ব্যতীত অন্য মুদ্রায় বিনিময়ের কথা ভাবতে শুরু করে। বিশ্ব অনেকটাই অনিশ্চিত। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত সঠিক কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা। সঠিক কর্মপরিকল্পনা থাকলে এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ স্বল্পকালে কিছুটা চ্যালেঞ্জিং মনে হলেও দীর্ঘকালে তার প্রভাব হবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের মতো বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মধ্যে এরকম যুদ্ধ শুরু হলে যে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে তার চাপ কমানোর প্রস্তুতি হিসেবে ইউয়ান-টাকা ট্রেড করার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের যে অর্জন আমরা তাতে ধাক্কা খেতে চাই না। সেক্ষেত্রে সঠিক কর্মপরিকল্পনা নিয়ে ডলারের ওপর অধিক নির্ভরশীলতা কমানোর লক্ষ্যে ইউয়ান-টাকায় ট্রেডের চর্চা এখন থেকেই শুরু করা উচিত। বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ গত ৩০ বছরের ইতিহাসে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি দেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্ব বাংলাদেশ বিগত বছরগুলোতে লেনদেন হিসাবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে পেরেছে। গত ১২ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নের পেছনে সরকার যে ব্যয় করেছে তা স্বাধীনতার পর ইতিহাসে প্রথম। সরকারের এই ব্যয় নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের লেনদেন হিসেবের ভারসাম্য রক্ষায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। ডলার ব্যতীত হঠাৎ করে ইউয়ান-টাকায় ট্রেডের সিদ্ধান্ত কিছুটা ব্যয়বহুল হতে পারে। তবে সঠিক কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগুলো ভবিষ্যতে তার সুফল পাওয়া যেতে পারে।  বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর সদস্য ও ইআরডিএফবির সম্মানিত সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লক্ষ্য এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে বাংলাদেশের তরুণ সমাজকে শিক্ষা-দিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করে স্মার্ট নাগরিক সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য স্মার্ট কর্মসংস্থান তৈরি করার মাধ্যমে স্মার্ট ক্যারিয়ার গড়ে তোলার পরিবেশ তৈরি করা। সেক্ষেত্রে ইউয়ান-টাকায় ট্রেড স্মার্ট নাগরিক সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে নিঃসন্দেহে অনেক গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ইআরডিএফবি-এর সাধারণ সম্পাদক এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, একক কোনো মুদ্রার ওপর নির্ভরশীলতা কখনোই একটা দেশের অর্থনীতির জন্য সুখকর হতে পারে না। বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের মতো ডলারের ওপর অধিক নির্ভরশীলতা বাংলাদেশে বর্তমান ডলার সংকটের জন্য দায়ী। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ডলারের পাশাপাশি অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহে রাখা অনেক জরুরি। সেক্ষেত্রে ইউয়ান-টাকায় ট্রেড বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি চীনের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে। সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন। সেমিনারের উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইআরডিএফবির সিনিয়র সভাপতি এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল জব্বার খাঁন।
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

শিগগিরই কাটবে ডলার সংকট
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান বলেছেন, রিজার্ভে চাপ কমাতে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। সরকার রপ্তানি বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। কাজেই শিগগিরই ডলার সংকট কেটে যাবে। বর্তমান গ্যাস সংকট সাময়িক সমস্যা বলেও উল্লেখ করেন তিনি। গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ভবনে মতবিনিময় সভা শেষে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় ছিলেন ঢাকা জেলার প্রশাসক আনিসুর রহমান, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান প্রমুখ। সালমান এফ রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী রপ্তানি বাড়াতে বলেছেন। অনেক নতুন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। রপ্তানি বহুমুখী করতে কাজ চলছে। আমদানি অনেক কমে গেলেও ডলারের ওপর চাপ থাকছে। এই মুহূর্তে দুটো জিনিস চাপ কমাতে সহযোগিতা করতে পারে। এর একটি, রেমিট্যান্স বাড়াতে হবে। আরেকটি হচ্ছে রপ্তানি বাড়াতে হবে। এগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিগগিরই ডলার সমস্যার সমাধান হবে, আশা করছি। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির কারণ খুঁজতে তদন্ত হচ্ছে। নানা উদ্যোগে মূল্যস্ফীতি কমলেও আশানুরূপ পর্যায়ে নেমে আসেনি বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির অন্যতম কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি। এ ছাড়া দেশে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে অযৌক্তিকভাবে। সরকারের নানা পদক্ষেপে এগুলোর দাম এরই মধ্যে কিছুটা কমেছে। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ হচ্ছে। আমাদের কৃষি খাত ভালো করছে। বিষয়টি নিয়ে অন্যান্য মন্ত্রণালয়কে নিয়ে অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে। অচিরেই দ্রব্যমূল্য আরও নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টা। চলমান গ্যাস সংকট নিয়ে তিনি বলেন, এটি সাময়িক। পরিস্থিতি সামাল দিতে আরও এলএনজি কেনা হয়েছে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে জোগান বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সালমান এফ রহমান বলেন, ভবিষ্যতের জন্য ভালো খবর হচ্ছে, অনেক নতুন গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। ভোলায় আগে আমরা পেয়েছি। এখন শেভরন পেয়েছে, পেট্রোবাংলাও পেয়েছে। সার্বিকভাবে এ নিয়ে একটি পরিকল্পনা হচ্ছে। সব কাজ ঠিকমতো হলে আশা করছি আগামীতে গ্যাস সংকট কমে যাবে। রপ্তানি বহুমুখী করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন পণ্য চিহ্নিত হয়েছে। এটায় আমি আশাবাদী। আমরা ফুলফল, এগ্রো প্রসেসড প্রোডাক্ট রপ্তানি করছি। ছোট আকারে হলেও শুরু হয়েছে। রপ্তানি বহুমুখী হলেও পরিমাণ বাড়ছে না। পোশাক খাতের মতো চামড়া ও পাটকে সুবিধা দেওয়া হবে বলে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন। অন্য খাতকে একই সুবিধা দিলে বহুমুখী রপ্তানি বাড়বে বলে আমার বিশ্বাস।
৩০ জানুয়ারি, ২০২৪

শিগগিরই ডলার সংকট কেটে যাবে : সালমান এফ রহমান
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান জানিয়েছেন, শিগগিরই ডলার সংকট কেটে যাবে। ইতোমধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওস্থ বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ভবনে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী রপ্তানি বাড়াতে বলেছেন। অনেকগুলো নতুন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, রপ্তানিকে বহুমুখী করতে কাজ করা হচ্ছে। আর আমদানি অনেক কমে গেছে। তারপরও ডলারের ওপর চাপ থাকছে। নতুন যে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আইন করা হবে যে, বিদেশি অ্যাকাউন্টে প্রবাসীরা ডলার রাখতে পারবে। এসব পদক্ষেপে আশা করি শিগগিরই ডলার সমস্যার সমাধান হবে। মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সালমান এফ রহমান বলেন, মূল্যস্ফীতি বাড়ার অন্যতম কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি। এ ছাড়াও দেশের বাজারে কিছু পণ্যের দাম অযৌক্তিভাবে বেড়েছে। এসব ক্ষেত্রে সরকারের এরই মধ্যে ব্যবস্থায় দাম কিছুটা কমেছে। বিষয়টি নিয়ে অন্যান্য মন্ত্রণালয়কে নিয়ে অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে। আশা করা যায়, অচিরেই দ্রব্যমূল্য আরও নিয়ন্ত্রণে আসবে। অর্থ, বাণিজ্য ও খাদ্যমন্ত্রী বাজার নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন, বিষয়টি জানিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, আামি আশাবাদী বাজার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসবে। যেটা ডিমান্ড সাপ্লাইয়ের সঙ্গে বাড়ে সেটাতে কিছু করার নাই। অনেক সময় অস্বাভাবিক ভাবেও দাম বেড়ে যায়। সেখানে সরকার নজরদারী করছে। শিল্পক্ষেত্রে গ্যাসের সংকট নিয়ে তিনি বলেন, এখন যা হচ্ছে এটা সাময়িক। আমাদের ২টা এফএসআরইউ (ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রি-গ্যাসফিকশন ইউনিট) আছে। যেগুলোকে বছরে একবার সংস্কার করতে হয়। সংকট কেটে যাবে। ভবিষ্যতের জন্য ভালো খবর আছে। অনেক নতুন গ্যাস আমরা পেয়েছি। ভোলাতে গ্যাস পেয়েছি। ওভার অল গ্যাসের একটা পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সব কাজ ঠিক মতো হলে গ্যাসের সংকট কেটে যাবে।
২৯ জানুয়ারি, ২০২৪

গভর্নরের দাবি দেশে ডলার সংকট নেই
দেশের ডলার সংকট নিয়ে বিভিন্ন মহল দীর্ঘদিন ধরে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে এলেও তা নাকচ করে দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি দাবি করেছেন, দেশে ডলারের কোনো সংকট নেই। বিভিন্ন ধরনের এলসি খুলতে ডলার সরবরাহেরও কোনো ঘাটতি নেই। গতকাল রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয়ের জরুরি সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন। দুই ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এতে অন্যান্যের মধ্যে বৈঠকে অংশ নেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
২২ জানুয়ারি, ২০২৪

বিকল্প জ্বালানিতে না গেলে ডলার সংকট আরও বাড়বে
বিকল্প জ্বালানিতে যেতে না পারলে ডলারের ক্ষয় কমিয়ে আনা কঠিন। আর এতে দেশে ডলার সংকট বাড়তে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে ‘কারেন্ট চেইঞ্জ-কোয়ার্টারলি ব্রিফ অব দ্য পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি সেক্টর’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সহযোগী গবেষক হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তী। খন্দকার গোলাম মেয়াজ্জেম বলেন, ডলার সংকট সহজে সমাধান হবে না। এটা দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জের বড় উৎস জ্বালানি খাত। এ খাতে যদি ডলার অপচয় বন্ধ করতে বা বিকল্প জ্বালানি খুঁজতে না পারি, তাহলে ডলার ক্ষয় কমিয়ে আনা কঠিন। ঋণ করে কয়েক মাসের সংস্থান করতে পারব; কিন্তু সংকট দীর্ঘমেয়াদি হবে। ক্যাপাসিটি চার্জকে বড় রকমের অপচয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত ১২ বছরে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়েছে সরকার। ২০০৯ সালে বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল। সে সময়ে ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়ে বেসরকারি খাতকে আকৃষ্ট করার যুক্তি ছিল; কিন্তু এখন আর ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার যৌক্তিকতা নেই। এখন এর থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। এটি একটি বড় অপচয়। এ অপচয় নেওয়ার মতো সামর্থ্য আমাদের অর্থনীতিতে নেই। সরকার জ্বালানি রূপান্তরে উল্টো পথে যাত্রা শুরু করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কয়লা নির্ভরশীলতা কমানোর কথা বলা হচ্ছে; কিন্তু সেখানে কয়লাজনিত ব্যয় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থায় ত্রুটির কারণে লোডশেডিং বাড়ছে। জ্বালানি খাতে প্রচুর বিল বকেয়া রয়েছে। জ্বালানি আমদানির অসমর্থ্যতাও দেখতে পাচ্ছি। অভ্যন্তরীণ গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির সুযোগ থাকলেও সেটা করা হচ্ছে না। এলএনজি আমদানির জন্য ঋণ নেওয়া হচ্ছে। আর নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে সরকারের আগ্রহ দেখা গেলেও এর সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। জ্বালানি খাতের বিভিন্ন দিক উল্লেখ করে সিপিডির গবেষণা সহযোগী হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তি বলেন, ব্যয়বহুল গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমাতে ৪৬টি গ্যাস কূপ খনন ত্বরান্বিত করা জরুরি। এর জন্য সরকারের আরও অর্থ বরাদ্দ করা উচিত। উচ্চ মূল্যের পেট্রোলিয়াম তেল এবং এলএনজির কারণে আমদানি ব্যয় বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপ প্রয়োজন। রিনিউবেল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে অগ্রগতি প্রত্যাশার চেয়ে কম। প্রতিবেদনে সিপিডি বলছে, বাংলাদেশে গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে কার্বন নিঃসরণ বেড়েছে। গত ১১ বছরে এ বৃদ্ধির হার ৬৮ শতাংশ। পাশাপাশি বায়ুদূষণের কারণে গড় আয়ু হারাচ্ছে মানুষ বলেও মনে করে বেসরকারি এ গবেষণা সংস্থা।
১৭ নভেম্বর, ২০২৩

বিকল্প জ্বালানির দিকে না গেলে ডলার সংকট কমবে না : সিপিডি
জ্বালানি খাতে ক্যাপাসিটি চার্জ্যের নামে অপচয় করার সামর্থ্য দেশের নেই উল্লেখ করে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, আমরা পই পই করে খুঁজছি কোন জায়গা থেকে একটা ডলার বাঁচানো যায়। কিন্তু সেখানে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিতে হচ্ছে অথবা বাকি রাখতে হচ্ছে। অন্যদিকে এলএনজি ও কয়লা আমদানি করতেও বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হচ্ছে। তিনি বলেছেন, আমরা এক ধরনের জ্বালানি সংকটে রয়েছি। জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানি না করা ছাড়া আমাদের উপায় নেই। ডলার সংকট সহজে সমাধান হবে না। এটি দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ। দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জের বড় উৎস জ্বালানি খাত। জ্বালানি খাতে যতক্ষণ পর্যন্ত না ডলার অপচয় বন্ধ না করতে পারছি, বিকল্প জ্বালানি না খুজঁতে পারি তাহলে ডলার ক্ষয় কমিয়ে আনা কঠিন। ডলার সংকট বাড়তে থাকবে যদি না আমরা বিকল্প জ্বালানিতে যাই। ঋণ করে কয়েক মাসের সংস্থান করতে পারব, কিন্তু আমার সংকটটা লম্বা।  বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি পরিবর্তনের স্রোত : বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ত্রৈমাসিক সংক্ষিপ্ত বিবরণ শীর্ষক ত্রৈমাসিক সংক্ষিপ্ত বিবরণ প্রকাশ করেছে। ধানমন্ডিতে সিপিডির কার্যালয়ে বিবরণী প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। জ্বালানি খাতের ত্রৈমাসিক সংক্ষিপ্ত বিবরণীর বিভিন্ন দিক উল্লেখ করে সিপিডির গবেষণা সহযোগী হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তি বলেন, অতিরিক্ত অব্যবহৃত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও, বিপিডিবি ইনস্টলড বিদ্যুৎ সম্প্রসারণ করেছে। সঞ্চালন লাইন ও সাবস্টেশনে অগ্রগতি সত্ত্বেও জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও বিভ্রাট বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব সমস্যা দূরীকরণে স্মার্ট গ্রিড এবং আধুনিক ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম গড়ে তোলা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, ব্যয়বহুল গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমাতে ৪৬টি গ্যাস কূপ খনন ত্বরান্বিত করা জরুরি। ৪৬টি গ্যাস কূপ খননের কাজ ত্বরান্বিত করার জন্য সরকারের আরও অর্থ বরাদ্দ করা উচিত। উচ্চমূল্যের পেট্রোলিয়াম তেল এবং এলএনজির কারণের আমদানি ব্যয় বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপ প্রয়োজন। রিনিউএবেল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে অগ্রগতি প্রত্যাশার চেয়ে কম।  ক্যাপাসিটি চার্জকে বড় রকমের অপচয় উল্লেখ করে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিদ্যুৎ খাতে বেসিরকারি খাতের বিনিয়োগকারীরা যখন সন্ধিহান থাকেন তারা বিনিয়োগ করবেন কি না ওই দেশে, সরকার তাদেরে পেমেন্টগুলো দিতে পারবে কি না সেক্ষেত্রে সরকারকে গ্যারান্টি দিতে হয়। তখন সরকার থেকে বলা হয় তুমি করো। বিদ্যুৎ যতটুকু তুমি দিতে পারবে ততটুকুই না, নির্দিষ্ট পরিমাণ ব্যবহার না করলেও তোমাকে আমি টাকা দিব। সেই হিসেবে আমরা মনে করি ২০০৯ সালে বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল, সেই সময়ে ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়ে বেসরকারি খাতকে আকৃষ্ট করার যুক্তি ছিল। তখন আমাদের ঘাটতি ছিল। কিন্তু পর্যায়ক্রমে বেসরকারি খাত উদ্বৃত্ত হয়েছে। উদ্বুত্ত থেকে এখন বাহুল্য হয়েছে। এটা বাহুল্য বা মাথা ব্যথার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিমাণ উদ্বৃত্ত আপনার দরকার নেই। এখন আর ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার যৌক্তিকতাই নেই। এখন ক্যাপাসিটি চার্জ থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। এটি একটি বড় রকমের অপচয়। এই অপচয় নেবার মত সামর্থ্য আমাদের অর্থনীতির নেই। তিনি আরও বলেন, সংকটপূর্ণ জ্বালানি পরিস্থিতির জন্য ৭টি বিষয় আমরা তুলে ধরতে পারি। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে দুর্বল জ্বালানি নিরাপত্তা। আলোচ্য সময়ে প্রচুর লোডশেডিং হচ্ছে, জ্বালানি আমদানির অসমার্থ্য দেখতে হচ্ছে। কয়লা ব্যবহারের প্রবণতা তৈরি হয়েছে। জ্বালানি রূপান্তরে সরকার উল্টো যাত্রা করছে। জ্বালানি সঞ্চালন ও বিতরণের ইতিবাচক হলেও তা অপর্যাপ্ত। এলএনজি আমদানির প্রবণতা বাড়ছে। এলএনজি অবকাঠামোর উন্নয়ন হচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে জড়িত প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন রয়েছে।
১৬ নভেম্বর, ২০২৩
X