বাজেট প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর অংশ হয়ে গেছে : দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
আগে বাজেটের গাম্ভীর্য ছিল। বাজেট এখন অনেক ক্ষেত্রেই প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর অংশ হয়ে গেছে। বাজেটের ভেতর দিয়ে গত ১৫ বছরে সরকারের যে অর্জনগুলো ছিল, শত শত পৃষ্ঠার ভেতর দিয়ে তা মনে দাগ কাটেনি। কারণ, ওটাকে আত্মস্থ করে না বলতে পারা। গতকাল বুধবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংস্থার সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপ সদস্য সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ। ড. দেবপ্রিয় বলেন, এবারের বাজেট প্রণয়নে রাজনীতিবিদ ও নাগরিকদের সম্পৃক্ততা ছিল না। রাজস্ব আহরণে মরিয়া হয়ে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হচ্ছে, তা রাজনৈতিক বিবেচনায় মূল্যায়ন করা হয়েছে বলেও মনে হয় না। এটা যে নির্বাচনী বাজেট না, তা লক্ষণীয়। পদক্ষেপগুলো একটি রাজনৈতিক সরকারের বিবেচনায় কতখানি গ্রহণযোগ্য, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। এ বাজেট আমলাতান্ত্রিকভাবে রাজস্ব আহরণের প্রয়োজনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে হয়েছে। এবার রাজস্ব আদায়ের মরিয়া চেষ্টা দেখা গেছে। সরকারের হাতে খরচ করার মতো টাকাও নেই, ডলারও নেই। তাই খরচ করার টাকা সংগ্রহ করতে চাচ্ছে। কারণ, আইএমএফ বলেছে, প্রতিবছর শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়াতে হবে। সেটারও একটি বিষয় রয়েছে। আইএমএফের প্রথম সমীক্ষা হয়ে গেছে। দ্বিতীয় সমীক্ষা বছরের শেষ নাগাদ হবে। দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পেতে হলে বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, এত মরিয়া চেষ্টার পরও আধা শতাংশ বর্ধিত করের লক্ষ্যমাত্রা কিন্তু বাজেটে প্রাক্কলন করা সম্ভব হয়নি। তিনি আরও বলেন, রাজস্ব আহরণে যে পদক্ষেগুলো নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে ২ হাজার টাকা সারচার্জসহ অন্যগুলো নিম্ন মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র মানুষকে প্রভাবিত করবে নেতিবাচকভাবে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা যেটি নির্ধারণ করতে হচ্ছে, তা বর্তমান বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে না। এটি সবাই জানে, এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। রাজস্ব আদায়ের মরিয়া চেষ্টা কিছুটা হলেও অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও আইএমএফের শর্ত পূরণের জন্য। কিন্তু এখানে কোনো রাজনৈতিক ধোলাই হয়নি। রাজনৈতিক ধোলাই যদি হতো, তাহলে সংসদ সদস্য ও স্থায়ী কমিটিগুলোর কাছে নিয়ে যেতেন, এগুলোর অনেকগুলোতেই তারা রাজি হতেন না। তার প্রকাশ কিন্তু এখন সংসদ আলোচনায় ক্রমান্বয়ে বের হবে। বিদ্যুতের আলোচনা, আমদানি নিয়ন্ত্রণের আলোচনা—এগুলো সবই আগামীতে আসবে।
০৮ জুন, ২০২৩
X