এক দশকে সবচেয়ে বেশি মানবিক বিপর্যয় ২০২৩ সালে
এক দশকের মধ্যে বিশ্বে মানবিক বিপর্যয়ের যত ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক ঘটনা ২০২৩ সালে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, গত বছর প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে সর্বোচ্চ মানবিক বিপর্যয়ের সাক্ষী হয়েছে বিশ্ব। সদ্য বিদায় নেওয়া বছরটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অন্তত ২৯টি দেশ প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট বিভিন্ন দুর্যোগের কারণে ৪৩ বার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। গত শুক্রবার ইউএনএইচসিআর এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে রেকর্ড ১১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এর আগে এক বছরে এত সংখ্যক মানুষ আশ্রয়হীন হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। চলতি বছর আরও ১৩ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছ বলে আশঙ্কা জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর। এ ছাড়া ২০২৩ সালের বড় এবং উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক ও মানবিক বিপর্যয়ের একটি তালিকাও করেছে ইউএনএইচসিআর। এতে স্থান পেয়েছে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তুরস্ক ও সিরিয়ায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্প, এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে সুদানের সামরিক বাহিনী ও আধাসামরিক আরএসএফের সংঘাত, মে মাসে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় মোচা, গাজায় হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধসহ বিভিন্ন ঘটনা। ইউএনএইচসিআরের এক্সটার্নাল রিলেশনস বিভাগের পরিচালক ডমিনিক হাইড বলেছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বৈরী আবহাওয়ার পাশাপাশি সংঘাত ও মানবাধিকার লঙ্ঘন কোটি কোটি পরিবারকে বাস্তুচ্যুত করেছে। পাশাপাশি ত্রাণ ও মানবিক সহায়তার জন্য তাদের হাত পাততে বাধ্য করেছে। ২০২৩ সালে দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের কারণে বিশ্বের অজস্র মানুষকে যে ভয়াবহ ভোগান্তির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে, তা এক কথায় অবর্ণনীয় বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ২ কোটি ৪০ লাখ মানুষ। ২০২৩ সালে লিবিয়ার ৫ প্রদেশে প্রবল বর্ষণ এবং বানের জলে বাড়িঘর ও সহায় সম্পদ হারিয়েছেন ৯ লাখ মানুষ। ঘূর্ণিঝড় মোচার কারণে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের এক কোটিরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সবচেয়ে বড় বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে সুদানে। সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর সংঘাতে উত্তর আফ্রিকার এই দেশটিতে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ৭০ লাখ মানুষ। এ ছাড়া অক্টোবরে আফগানিস্তানের হেরাত প্রদেশে ভয়াবহ ভূমিকম্পে বসতবাড়ি হারিয়ে এক লাখেরও বেশি মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। সংঘাতের কারণে বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে আজারবাইজানের নাগোরনো-কারাবাখ এলাকার এক লাখেরও বেশি মানুষ। মধ্য আফ্রিকার দেশ ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক (ডি আর) কঙ্গোয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭০ লাখেরও বেশি মানুষ। সংস্থাটি জানিয়েছে, বিভিন্ন দেশে তাদের পরিচালিত শরণার্থী শিবিরে বর্তমানে ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ আশ্রিত অবস্থায় রয়েছে।
২১ জানুয়ারি, ২০২৪

নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয় গাজায়
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি হামলায় নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। উত্তর গাজা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার পর এখন দক্ষিণ গাজায় চলছে ইসরায়েলি বর্বরতা। আরও বড় ধরনের হামলার জন্য দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহর থেকে সাধারণ মানুষকে সরে যেতে বলেছে ইসরায়েলি বাহিনী। কিন্তু পুরো গাজা উপত্যকায় হামলা চলায় আশ্রয় নেওয়ার নিরাপদ জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। আর হামলার জন্য কোনো মানবিক সহায়তা ঢুকতে পারছে না গাজায়। যার কারণে গাজার অর্ধেক মানুষই না খেয়ে দিন পার করছে। সেইসঙ্গে দেখা দিয়েছে খাওয়ার পানির তীব্র সংকট। গাজা পরিদর্শন শেষে এমনটিই জানিয়েছেন জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) উপপরিচালক কার্ল স্কাউ। এদিকে গাজাজুড়ে ব্যাপক হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না আহতদের বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সও। হামলায় নিহত ১৭ হাজার ৭০০ ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে ইসরায়েলি বাহিনী একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করেছে হামাস যোদ্ধারা অস্ত্র সমর্পণ করছে। ভিডিওতে দেখা যায়, সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে অর্ধনগ্ন কিছু পুরুষ অস্ত্র জমা দিচ্ছে। ভিডিওটি সাজানো বলে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি করা হয়েছে। খবর আলজাজিরার। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) উপপরিচালক কার্ল স্কাউ গত শুক্রবার গাজা পরিদর্শন করেন। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘এখানে পর্যাপ্ত খাবার নেই। মানুষ অভুক্ত থাকছে। প্রয়োজনীয় ত্রাণসহায়তার সামান্যই গাজায় ঢুকতে পারছে। এখানকার বাসিন্দাদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনেরই প্রতিদিন খাবার জোটে না। গাজার পরিস্থিতির কারণে ত্রাণ পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে।’ ডব্লিউএফপি দলের গাজা পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে কার্ল আরও বলেন, তারা গুদাম ও বিতরণকেন্দ্রগুলোর সামনে হাজারো ক্ষুধার্ত মানুষকে মরিয়া হয়ে অপেক্ষা করতে দেখেছেন। সেখানকার দোকানগুলো ছিল শূন্য। আর শৌচাগারের সামনে ছিল দীর্ঘ লাইন। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। ওই দিনই সীমান্ত বন্ধ করে দিয়ে পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজায় ত্রাণসহায়তা প্রবেশেও বিধিনিষেধ আরোপ করে দেশটি। অবরুদ্ধ গাজার বাসিন্দারা ত্রাণসহায়তার ওপর নির্ভরশীল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এ পর্যন্ত ১৭ হাজার ৭০০ জনের বেশি নিহত হয়েছে। নিহত ফিলিস্তিনিদের ৭০ ভাগই নারী ও শিশু। শুধু নিহত শিশুর সংখ্যাই ৭ হাজারের বেশি।
১১ ডিসেম্বর, ২০২৩
X