ইসরায়েল বিষয়ে মার্কিন নীতি পরিবর্তন হতে পারে
ফিলিস্তিনের অধিকৃত গাজা উপত্যকায় বেসামরিক মানুষ সুরক্ষিত না থাকলে ইসরায়েল বিষয়ে মার্কিন নীতি পরিবর্তন হতে পারে বলে হুমকি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে এক ফোনকলে এ হুমকি দেন তিনি। ফোনে তাদের মধ্যে আধাঘণ্টা ধরে আলোচনা হয়। এ ফোনকলের কয়েক ঘণ্টা পরই ইসরায়েল ঘোষণা দেয়, তারা অবরুদ্ধ গাজায় ত্রাণ প্রবেশের জন্য আরও কয়েকটি পথ খুলে দেবে। এদিকে জো বাইডেনের পর এবার ইসরায়েলকে সতর্কবার্তা দিয়েছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, গাজায় যদি শিগগির শান্তি ফিরে না আসে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে ইসরায়েল। খবর সিএনএনের। বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও নেতানিয়াহুর মধ্যে ফোনে ৩০ মিনিটের মতো কথা হয়। এই কলে ইসরায়েলের প্রতি সামরিক সমর্থন কমানোর হুমকি দেন বাইডেন। তিনি জানান, গাজায় বেসামরিক মানুষ ও ত্রাণকর্মীদের সুরক্ষিত রাখতে বলিষ্ঠ উদ্যোগ না নিলে মার্কিন নীতিমালা বদলাতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, এই নীতিমালা বলতে বাইডেন অস্ত্র সরবরাহ ও জাতিসংঘে ইসরায়েলকে সমর্থন জানানোর বিষয়গুলোর দিকে ইঙ্গিত করেছেন। এর কয়েক ঘণ্টা পর জেরুজালেমে যখন মধ্যরাত, তখন ইসরায়েল ঘোষণা দেয়, তারা অবরুদ্ধ গাজায় ত্রাণ প্রবেশের জন্য আরও কয়েকটি পথ খুলে দেবে। ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা আশদদ বন্দর ও ইরেজ স্থল ক্রসিংয়ের মাধ্যমে ‘সাময়িকভাবে’ ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবেশী দেশ জর্ডান থেকে কেরেম শালম ক্রসিংয়ের মাধ্যমে ত্রাণ আসার পরিমাণও বাড়িয়েছে ইসরায়েল। নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে এসব তথ্য জানানো হয়। হোয়াইট হাউস এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে এবং বলেছে ‘(মার্কিন) প্রেসিডেন্টের অনুরোধেই এই উদ্যোগ নিয়েছে ইসরায়েল’। হোয়াইট হাউস আরও জানায়, (বাইডেনের বাকি) সব অনুরোধ এখন অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। গত ছয় মাস গাজায় নিরবচ্ছিন্ন ও সর্বাত্মক হামলা চালিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র নিন্দার মুখে পড়েছে ইসরায়েল। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির সবচেয়ে বড় মিত্র ও সমর্থক যুক্তরাষ্ট্রের সুরেও এসেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। মানবাধিকার সংস্থা অক্সফাম বলেছে, জানুয়ারি থেকে উত্তর গাজার বাসিন্দারা দিনে ২৪৫ ক্যালোরির চেয়েও কম খাবার খেয়ে বেঁচে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন, যা ন্যূনতম চাহিদার ধারেকাছেও নেই। দাতব্য ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার অভিযোগ করেছে, গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল। এ সপ্তাহে গাজায় খাদ্য বিতরণ শেষে ফেরার পথে মানবিক ত্রাণ সংস্থা ডব্লিউসিকের কর্মীদের বহনকারী গাড়িবহরে হামলা চালায় ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। এতে সাত বিদেশি মানবিক কর্মী নিহত হন। গাজায় মানবিক ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা ও সার্বিক মানবিক পরিস্থিতি গ্রহণযোগ্য নয় বলে নেতানিয়াহুকে ফোনে সতর্ক করে দেন বাইডেন। বাইডেন নিশ্চিত করেন, চলমান পরিস্থিতি পরিবর্তনে ইসরায়েল তাৎক্ষণিকভাবে যেসব পদক্ষেপ নেবে, তার ওপর নির্ভর করবে গাজা প্রসঙ্গে মার্কিন নীতিমালা ভবিষ্যতে কেমন হবে। চলমান সংঘাতে এবারই প্রথম প্রত্যক্ষভাবে ইসরায়েলের প্রতি সামরিক সমর্থন কমানোর হুমকি দিলেন বাইডেন। ইসরায়েলকে ট্রাম্পের সতর্কবার্তা: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পর এবার ইসরায়েলকে সতর্কবার্তা দিলেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, গাজায় যদি শিগগির শান্তি ফিরে না আসে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে ইসরায়েল। সেই সঙ্গে গাজায় হাজার হাজার বেসামরিক নিহতের ঘটনায় এই প্রথমবারের মতো ইসরায়েলের সমালোচনাও করেন তিনি। বৃহস্পতিবার একটি রেডিওতে রিপাবলিকানপন্থি মার্কিন সাংবাদিক হিউ হেউইটকে সাক্ষাৎকার দেন ট্রাম্প। সেখানে হেউইটের এক প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ‘ইসরায়েলের সরকারকে আমি খুবই সহজ এবং সংক্ষিপ্ত একটি বার্তা দিতে চাই—দ্রুত যুদ্ধ শেষ করুন, শান্তি ফিরিয়ে আনুন এবং মানুষ হত্যা বন্ধ করুন।
০৬ এপ্রিল, ২০২৪
X