সম্পাদকীয় / যুদ্ধ নয় শান্তি চাই
কয়েকদিন ধরে বিশ্বজুড়ে আলোচনা ছিল ইরান যে কোনো সময় ইসরায়েলে প্রতিশোধমূলক হামলা চালাতে পারে। এসব আলোচনা ও জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ইরান গত শনিবার রাতে ইসরায়েল লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইরান বলেছে, হামলায় ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের একটি বিমান ঘাঁটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখান থেকেই জঙ্গি বিমান উড়িয়ে ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে হামলা চালানো হয়। ওই হামলায় ইরানের জ্যেষ্ঠ কয়েকজন সামরিক কমান্ডার নিহত হন। এ হত্যাকাণ্ডের বদলা নিতেই তারা এ হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনা নিয়ে গত রোববার সারা দিন আন্তর্জাতিক অঙ্গন ছিল উত্তপ্ত। ইরানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দেশটির ভূমি থেকে সরাসরি ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী বলেছে, হামলায় তিন শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগই আকাশে ধ্বংস করা হয়েছে। একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের নেভাটিম বিমান ঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে। তাতে সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ইরান বলেছে, চলতি মাসের শুরুতে সিরিয়ায় ইরানের কূটনৈতিক কম্পাউন্ডে প্রাণঘাতী হামলার বদলা হিসেবে এ হামলা চালানো হয়েছে। তেহরান এটাও বলেছে যে, ইসরায়েল যদি এর পাল্টা হামলা চালায়, তাহলে আরও বড় পরিসরে হামলার মধ্য দিয়ে তার জবাব দেওয়া হবে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইরানের হামলা নিয়ে আলোচনার জন্য তার দেশের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার বৈঠক করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ইরানের এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। হোয়াইট হাউস বলেছে, মধ্যপ্রাচ্য সংকট আরও বাড়ুক, তা চায় না যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলে হামলার জন্য ইরানের নেতৃত্বের প্রশংসা করেছে লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। তারা বলেছে, দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে আগ্রাসনের এ জবাব দেওয়াটা যথাযথ হয়েছে। ওই হামলার পর ইরানের ভাষ্যটা ছিল এমন, ‘হিসাব চুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখানেই ইতি টানছি আমরা। আপনারা পাল্টা হামলা চালাবেন না। এর ব্যতিক্রম হলে জবাবে আমরা আরও শক্তিশালী হামলা চালাব। ওই হামলা আপনারা রুখতে পারবেন না।’ তবে ইসরায়েল এর মধ্যেই ইরানের হামলার ‘উল্লেখযোগ্য জবাব’ দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ঢুকে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। জবাবে সেদিন থেকেই ফিলিস্তিনের গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। প্রায় ৩৪ হাজার ফিলিস্তিনি মারা গেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। প্রায় ৭৭ হাজার মানুষ গুরুতর আহত হয়েছে। ঈদের দিনেও হামলায় মারা গেছে ১২২ জন। গুরুতর আহত হয়েছে আরও ৫৬ জন। এসব তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। নিহত এবং আহতের প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি এ কথা বলাই বাহুল্য। কয়েক মাস ধরে ইসরায়েল নিরস্ত্র, নিরীহ ফিলিস্তিনির ওপর যে বর্বর চালিয়ে যাচ্ছে, তা হিটলার-মুসোলিনির বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। তাই বিভিন্ন দেশ থেকে যতই সংযত থাকার আহ্বান জানানো হোক না কেন, ইরানের হামলার জবাব ইসরায়েলের বর্তমান যুদ্ধকালীন সরকার দেবে না, এমন সম্ভাবনা কম। তাই এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে জটিল অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে, যা কোনো পক্ষের জন্যই সুখকর হবে না। উপরন্তু মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে। তাই আমরা এ সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান প্রত্যাশা করি।
১৬ এপ্রিল, ২০২৪

যুদ্ধ নয় হামলার জবাব দেওয়া হবে : বাইডেন
জর্ডানে মার্কিন বাহিনীর ওপর ড্রোন হামলার জবাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে বিস্তৃত বা বৃহত্তর যুদ্ধ চান না তবে জর্ডানে যে হামলা হয়েছে তার জবাব দেওয়া হবে।  বুধবার (৩১ জানুয়ারি) পৃথক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও আল জাজিরা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাইডেন বলেন, ইরান সমর্থিত কট্টর গোষ্ঠী এ হামলা চালিয়েছে এবং ‘এর জবাব দেওয়া হবে’। আমি মনে করি না আমাদের মধ্যপ্রাচ্যে বিস্তৃত যুদ্ধের প্রয়োজন।  ইরান সমর্থিত একটি মিলিশিয়া গোষ্ঠী মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলার দায় স্বীকার করেছে। সিরিয়ার সীমান্তের কাছে গত রোববারের সেই হামলায় আরও ৪০ জনেরও বেশি মার্কিন সেনা আহত হয়েছেন। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল-হামাসের সংঘাত শুরুর পর ওই অঞ্চলে এই প্রথম কোনো মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটল। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে নতুন যেসব সহিংসতা দেখা গেছে, তাতে অস্থির এই অঞ্চলে সংঘাত আরও ছড়িয়ে পড়ার উদ্বেগ বেড়েছে। রোববারের সেই হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, ইরান সমর্থিত কট্টর গোষ্ঠী এ হামলা চালিয়েছে এবং ‘এর জবাব দেওয়া হবে’। এমন অবস্থায় স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকালে সাংবাদিকরা জিজ্ঞাসা করেন, জর্ডানে ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কি না। জবাবে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘হ্যাঁ’। হামলার ঘটনায় ইরানকে দোষারোপ করা উচিত কি না তাও তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি তাদের (ইরানকে) এই অর্থে দায়ী করি, যারা এই হামলা করেছে তারা (ইরান) তাদের অস্ত্র সরবরাহ করছে।’ অবশ্য জর্ডানের সেই সামরিক ঘাঁটিতে হামলায় কোনো ধরনের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছে ইরান। এদিকে হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিক্রিয়ায় ‘কয়েকটি স্তরের পন্থা’ বেছে নিতে পারে। ফ্লোরিডায় নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহের ক্যাম্পেইনে যোগদানে বাইডেনের সফরের জন্য এয়ার ফোর্স ওয়ানে ওঠার সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘শুধু একটি পদক্ষেপ নয়, সম্ভাব্য একাধিক পদক্ষেপ থাকতে পারে... সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো সামনে আসতে পারে।’ কিরবি আরও বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট আমাদের সৈন্য এবং আমাদের অবকাঠামোগুলো রক্ষা করার জন্য এবং আমাদের জাতীয় সুরক্ষার জন্য যা করতে হবে তা করবেন।’ এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনও অবশ্য বলেছিলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যেমন বলেছেন, আমরা (হামলার) প্রতিক্রিয়া জানাব এবং সেই প্রতিক্রিয়া বহু-স্তরীয় হতে পারে, পর্যায়ক্রমে আসতে পারে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চলতে পারে।’  
৩১ জানুয়ারি, ২০২৪
X