মারা গেছেন জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাশ
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার নকশাকার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শিবনারায়ণ দাশ আর নেই। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর ৪ মাস। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এর আগে শিবনারায়ণ দাশ রাজধানীর পান্থপথে একটি বেসরকারি হাসপাতাল ভর্তি ছিলেন।   ১৯৭০ সালের ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে রাত ১১টার দিকে জাতীয় পতাকার নকশা করেন তিনি। একাত্তরের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় উত্তোলন করা হয়েছিল। একাত্তরের ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিটি বাড়ি, প্রতিষ্ঠানে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা নামিয়ে শিবনারায়ণ দাশের নকশা করা বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। শিবনারায়ণ দাশের জন্ম কুমিল্লায়। তার বাবা সতীশচন্দ্র দাশকে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা হত্যা করে। তার স্ত্রী গীতশ্রী চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, নিমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে ২ এপ্রিল রাত ১টায় তাকে শমরিতা হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে বক্ষব্যধি বিশেষজ্ঞ ডা. রাজশীষ চক্রবর্তীর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছিল। আইসিইউতে থাকলে অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত হতে পারেন ভেবে তিনি আইসিউতে তাকে না রেখে কেবিনটাকে আইসিউর মতো করে চিকিৎসা সেবা দেন। তিনি বলেন, বাম বুকে নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। এতেই তিনি বেশি কষ্ট পেয়েছেন। নিউমোনিয়া সারলেও শ্বাস টানতে বুকে প্রচণ্ড চাপ পড়ত। যেটা তিনি সহ্য করতে পারতেন না। সেখানে হৃদরোগের বিশেষজ্ঞকেও দেখানো হয়। চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে ১৬ এপ্রিল আবার শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় আক্রান্ত হলে আইএসডিতে নেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১৭ এপ্রিল বুধবার রাতে তাকে চিকিৎসকদের পরামর্শে বিএসএমএমইউর ইনটেনসিভ কেয়ারের মেডিসিন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। শিবনারায়ণ দাশের ছেলে অর্ণব আদিত্য দাস কালবেলাকে বলেন- বাবা দেশ, দেশের মানুষের জন্য আজীবন কাজ করেছেন। অনেকে বলেন, আমার বাবা অভিমানী। কিন্তু আমার বাবা অভিমানী নন। তিনি ছিলেন একজন প্রচারবিমুখ মানুষ। তিনি দেশের জন্য যে কাজ করেছেন তার ক্রেডিট নিতে চাননি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আপামর বাঙালি যেভাবে অংশ নিয়েছেন। দেশের স্বাধীনতার জন্য বাবাও তার জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন। আমার বাবা আমাকে সেই শিক্ষাই দিয়েছেন। তিনি বলেন, বাবার শেষ ইচ্ছে ছিল- তার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মানবকল্যাণে মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাবিদ্যায় ব্যবহারে দান করার।  এই হাসপাতালকে তার দেহ দান করা হবে। তার চোখের কর্ণিয়া সন্ধানীতে দান করে গেছেন। ঢাকা জেলা প্রশাসন, কুমিল্লা জেলা প্রশাসন, গণ্যমান্য ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিবিদ, সংস্কৃতিকর্মীরা তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে চান। এজন্য শনিবার সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার মরদেহ নেওয়া হবে। সেখানে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করবেন। সেখান থেকে তার মরদেহ কুমিল্লা টাউন হলে বিকেল ৪টার দিকে নেওয়া হবে। সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু কালবেলাকে বলেন, শিব নারায়ণ দাশ ৬০ এর দশকের ছাত্রলীগের কর্মী, মুক্তিযোদ্ধা, শিল্পীও ছিলেন। তিনি কুমিল্লা থেকে ঢাকায় গিয়েছিলেন। সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে রব, শাহজাহান সিরাজ, কাজী আরিফ আহমেদ, মার্শাল মনি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন। তিনি একটি বড় পোস্টার কাগজে জাতীয় পতাকা এঁকে দিয়েছিলেন। এরপর তা সেলাই করা হয়। জাতীয় পতাকা তৈরির সিদ্ধান্তের একজন শরিক ছিলেন শিবনারায়ণ দাশ। সুতরাং তিনি ইতিহাসের অংশ। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেও স্মরণীও হয়ে থাকবেন। তার মৃত্যু সংবাদ শুনে হাসপাতালে ছুটে এসেছেন সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য শিরীন আখতার, বাংলাদেশের হাইকোর্ট বিভাগের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস বাবু, চলচ্চিত্র পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী, রাজনীতিবিদ, সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব ও স্বজনরা।
১৯ এপ্রিল, ২০২৪
X