‘দেশে সুশাসন ও ন্যায়বিচারের অভাব রয়েছে’
রাজনৈতিক শূন্যতা, সুশাসন ও ন্যায়বিচারের অভাব থাকায় সারা দেশে দুর্নীতি, মাদক এবং আমলা ও ক্ষমতাসীনদের স্বেচ্ছাচারিতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গণতন্ত্র বিকাশ মঞ্চের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান শেখ ছালাউদ্দিন ছালু। গতকাল শনিবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে একটি হোটেলে কূটনীতিক, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের সম্মানে গণতন্ত্র বিকাশ মঞ্চ আয়োজিত আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। এতে আরও বক্তব্য দেন এনপিপির আব্দুল হাই মণ্ডল, মো. ইদ্রিস চৌধুরী, শেখ আবুল কালাম, আনিসুর রহমান দেওয়ান, সৈয়দ মাহমুদুল হক আক্কাছ, গণতন্ত্র বিকাশ মঞ্চের মহিউদ্দিন আহাম্মেদ বাবলু প্রমুখ।
৩১ মার্চ, ২০২৪

‘দেশে সুশাসন ও ন্যায়বিচারের অভাব রয়েছে’
গণতন্ত্র বিকাশ মঞ্চের সমন্বয়ক ও ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান শেখ ছালাউদ্দিন ছালু বলেছেন, দেশে বর্তমানে রাজনৈতিক শূন্যতা, সুশাসন এবং ন্যায়বিচারের অভাব রয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশে দুর্নীতি, মাদক এবং আমলা ও ক্ষমতাসীনদের স্বেচ্ছাচারিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। শনিবার (৩০ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে একটি হোটেলে কূটনীতিক, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের সম্মানে গণতন্ত্র বিকাশ মঞ্চ আয়োজিত এক আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। শেখ ছালু বলেন, ইদানীং কিছু দল ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। এই ডাকে বিএনপিও সমর্থন দিয়েছে। আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, এটা রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা ছাড়া আর কিছুই না। আমাদের রাজনীতি হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করার জন্য, কারও লেজুড়বৃত্তি করার জন্য নয়। দেউলিয়াপনার যে রাজনীতি চলছে- সেটা যদি অব্যাহত থাকে, দেশে কোনো আদর্শিক রাজনীতি থাকবে না। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের হামলার নিন্দা জানিয়ে এনপিপির চেয়ারম্যান বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদিদের হত্যার কারণে হিটলার এবং তার সহযোগীদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার হয়েছিল। কিন্তু মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্বের দুর্বলতা থাকায় তারা আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর বিচার দাবি করতে পারছে না কিংবা ইসরায়েলকে প্রতিহত করতে পারছে না। ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিশ্বের মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর বিচারের আহ্বান জানান তিনি। ইফতার মাহফিলপূর্ব আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন- এনপিপির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল হাই মণ্ডল, মহাসচিব মো. ইদ্রিস চৌধুরী, জাগপার সভাপতি ও গণতন্ত্র বিকাশ মঞ্চ এর সদস্য সচিব এ কে এম মহিউদ্দিন আহাম্মেদ (বাবলু), এনপিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ আবুল কালাম, মো. আনিসুর রহমান দেওয়ান, সৈয়দ মাহমুদুল হক আক্কাছ, বাংলাদেশ কনজারভেটিভ পার্টির (বিসিপি) চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমান দেশ, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (বিজিএ) চেয়ারম্যান এ আর এম জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ইফতার মাহফিলে এনপিপি ও গণতন্ত্র বিকাশ মঞ্চের কেন্দ্রীয়, জেলা ও মহানগর নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ইফতারের আগে দেশ ও জাতির কল্যাণ এবং এনপিপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মরহুম শেখ শওকত হোসেন নিলুসহ দল ও জোটের প্রয়াত সব নেতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
৩০ মার্চ, ২০২৪

উন্নয়নের পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিত করতে চাই : পলক
উন্নয়নের পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিত করতে চাই। এই লক্ষ্যে  নিয়মিতভাবে ইউনিয়ন পর্যায়ে গণশুনানির আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। শনিবার (২০ জানুয়ারি) বিকেলে নাটোরের সিংড়া গোল-ই-আফরোজ সরকারি অনার্স কলেজ মাঠে নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। পলক বলেন, নান্দনিক মানবিক সিংড়া গড়ে তোলার লক্ষ্যে পাঁচটি নীতি অনুসরণ করতে চাই। নির্বাচনের প্রাক্কালে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামতের ভিত্তিতে যে ইশতেহার প্রণয়ন করা হয়েছে, তা পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে চাই। পাঁচটি নীতির প্রথমটি ‘জাল যার জলা তার’। এই নীতিতে সরকারি সকল জলাশয়ে জেলেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। কোনো প্রবাহকে অবৈধ বাধাগ্রস্ত করা হলে তা নির্মূল করা হবে। দ্বিতীয় নীতি ‘দলিল যার জমির মালিকানা তার’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সকল অবৈধ দখলদারিত্বের অবসান ঘটানো হবে। তৃতীয় নীতি ‘মেধা, যোগ্যতা ও দক্ষতা যার চাকরি তার’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিয়োগের ক্ষেত্রে সকল অবৈধ লেনদেন বন্ধ করা হবে।  চতুর্থ নীতি ‘জনপ্রিয়তার নিরিখে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সকল কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সৎ, জনবান্ধব ও কর্মীবান্ধব এবং জনপ্রিয় নেতাদের পদে আসীন করা হবে। পঞ্চম ‘দুর্নীতির মুলোৎপাটন’ নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমাজের এই ব্যাধিকে নির্মূল করা হবে। তিনি আরও বলেন, স্মার্ট সিংড়া তথা দেশ গড়ার প্রতিবন্ধক দুর্নীতি, সুদ এবং ঘুষ। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই তিনটি প্রতিবন্ধকতা নির্মূল করতে চাই। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যেতে চাই।
২০ জানুয়ারি, ২০২৪

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে বিইআরসি
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. নুরুল আমিন। জ্বালানি খাতে প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টি, ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা, ট্যারিফ নির্ণয়ে স্বচ্ছতা আনা, বেসরকারি বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি এবং ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণ করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। ন্যায্য অধিকার, সুশাসন ও ন্যায়পরায়ণতা প্রতিষ্ঠায় কমিশন অঙ্গীকারবদ্ধ। সম্প্রতি দৈনিক কালবেলার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমাদের কাছে যেসব অভিযোগ আসে তার বেশিরভাগই অবৈধ সংযোগ, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল, মিটার টেম্পারিং, ন্যূনতম বিল আরোপ, বকেয়া বিলের কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন, ইভিসি মিটারে বিল না করা ইত্যাদি। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এ পর্যন্ত বিরোধ নিষ্পত্তি আবেদন ৮৩টির বিপরীতে আগের বকেয়াসহ ৯৩টি আবেদন নিষ্পত্তি করেছে—যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৭০৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকার সমান। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কমিশন ১০২টি বিরোধ নিষ্পত্তি করেছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত বিরোধ ৩৮টি, গ্যাস (শিল্প ও বাণিজ্য) সংক্রান্ত বিরোধ ৫১টি এবং গ্যাস (সিএনজি) সংক্রান্ত বিরোধ ১৩টি। কমিশন সূচনালগ্ন থেকেই নিয়মিত উন্মুক্ত সভা ও গণশুনানির মাধ্যমে যৌক্তিক ট্যারিফ নির্ধারণ, গ্রাহক হয়রানি রোধ, প্রি-পেইড ও ইভিসি মিটার স্থাপন, মোবাইল বিলিং পদ্ধতি, অনলাইন গ্রাহক সেবা, বার্ষিক বিল পরিশোধ প্রত্যয়ন চালুসহ অসাধু এবং একচেটিয়া ব্যবসা সম্পর্কিত বিরোধের উপর্যুক্ত প্রতিকার নিশ্চিত করতে কাজ করে আসছে। তিনি আরও জানান, কমিশন তার নিজস্ব আয় দ্বারা পরিচালিত হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কমিশনের আয় হয় ৫৭ দশমিক ৭৬ কোটি টাকা। এ অর্থ থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য খরচ দিয়েও সরকারি কোষাগারে ১২ কোটি টাকা জমা দেওয়া হয়। বিইআরসি ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন-২০০৩-এর ৬ ধারা অনুযায়ী একজন চেয়ারম্যান (সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি পদমর্যাদায়) এবং চার সদস্যের (হাইকোর্টের বিচারপতি পদমর্যাদায়) সমন্বয়ে এ কমিশন গঠন করা হয়।
০৯ নভেম্বর, ২০২৩

চবিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অংশীজন সভা অনুষ্ঠিত
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির আওতায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল কর্মপরিকল্পনা ২০২৩-২৪ এর আলোকে নির্ধারিত সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অংশীজনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে চবি উপাচার্য দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। রেজিস্ট্রার অফিসের সহকারী রেজিস্ট্রার শামীমা আক্তার জাফরের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নুর আহমদ। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দেও সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভায় বক্তব্য রাখেন সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক এবং চবির কলেজ পরিদর্শক ও সিটিজেন চার্টার কমিটির ফোকাল পয়েন্ট অধ্যাপক ড. শ্যামল রঞ্জন চক্রবর্তী। অধ্যাপক ড. শিরিণ আখতার বলেন, আমরা যদি নিজেদের কাজে শ্রদ্ধাশীল হই, তাহলে আমরা নিজেদের প্রতি আত্মবিশ্বাসী হব। কাজের প্রতি শ্রদ্ধা হলে যেকোনো প্রতিষ্ঠান সহজেই এগিয়ে যাবে। অধ্যাপক বেনু কুমার দে বলেন, আমাদের নির্ধারিত অফিস টাইমের প্রতি যথাযথ সচেতন থাকতে হবে। কেউ যেন তার কাজে ফাঁকি না দেন। অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ বলেন, সঠিক তথ্যের মাধ্যমে আপনারা যদি মানুষের বিশ্বাস স্থাপন করতে পারেন, তাহলে এটা দেশের জন্য বড় অর্জন হবে। সুতরাং, আপনাদের অফিস কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা সঠিক তথ্যের মাধ্যমে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করবেন। অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যে, শিক্ষক শিক্ষার্থীদেরকে আমরা সঠিক সার্ভিসটা দিতে পারছি কি না। সে হোক বর্তমান বা সাবেক। আমাদেরকে সঠিক তথ্য প্রদানের প্রতি সবসময় সচেতন ও যত্নবান হতে হবে। এ ছাড়াও সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন চবির সকল অফিস প্রধান ও সেকশন অফিসাররা।
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

শরীফ শেখের নিবন্ধ / সুশাসন না থাকলে সমাজে মানব নিরাপত্তা আশা করা যায় না
মানব নিরাপত্তা বা হিউম্যান সিকিউরিটির ব্যাপ্তি ব্যক্তি থেকে পরিবার, পরিবার থেকে সমাজ, সমাজ থেকে রাষ্ট্র বা তারও পরিধির বাইরে বিস্তৃত। এ নিবন্ধে হিউম্যান সিকিউরিটির বিভিন্ন দিক এবং পরিশেষে বাংলাদেশে হিউম্যান সিকিউরিটির পরিস্থিতি সম্বন্ধে আলোকপাত করতে প্রয়াস পাব।  মানবের বা মনুষ্যজীবনের অস্তিত্বের সব ধরনের বিপদাপদই মানব নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই নিরাপত্তা হুমকি বা সিকিউরিটি থ্রেট কোথা হতে আসে? এর মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ভূমিকম্প, বন্যা, ঝড়, তুফান, টাইফুন, রোগব্যাধি, যুদ্ধ, খাদ্যাভাব, দুর্ভিক্ষ, বাস্তুচ্যুতি ইত্যাদি সবকিছুই পড়ে।  জাতিসংঘ হিউম্যান সিকিউরিটির সাতটি উপাদান চিহ্নিত করেছে। যথা- অর্থনৈতিক, পরিবেশগত, খাদ্য, স্বাস্থ্য, রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত ও সম্প্রদায়গত উপাদান। মানুষের কর্মসংস্থানের অভাব বা বেকারত্ব মানব নিরাপত্তা হুমকির একটা অন্যতম প্রধান কারণ। দারিদ্র এবং অসম আয় বণ্টন বা সম্পদের অসম বণ্টন মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলে। মানুষের কার্যকর কাজ না থাকলে, অর্থ উপায় করে ন্যূনতম প্রয়োজন মেটাতে না পারলে, সেই মানুষের মস্তিষ্ক থেকে আজেবাজে চিন্তা আসে; এ জন্য বলা হয়ে থাকে অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। সমাজের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য অনিষ্টকর হতে পারে তা। বেকারত্ব তাই মানব নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় একটি মানব নিরাপত্তা হুমকি বা হিউম্যান সিকিউরিটি থ্রেট। একজন নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির অধিকার ক্ষুণ্ন হলে তার স্বাস্থ্য নিরাপত্তা থাকে  না। বায়ুদুষণ, বিশ্ব উষ্ণায়ন, গ্রিনহাউজ গ্যাসের প্রভাব, নদী, সমুদ্র, খাল বিল জলাশয় দূষণ ইত্যাদি পরিবেশগত মানব নিরাপত্তা হুমকির উদাহরণ।  একজনের বাড়ি বা জমি দখল তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকেই শুধু বিঘ্নিত করে না। সামাজিক সন্ত্রাস ও মাস্তানতন্ত্রের পথকে উৎসাহিত করে তা। মানব নিরাপত্তা হুমকি এটা। একজন মহিলা বা নারী যদি একাকী নির্ভয়ে চলাফেরা করতে না পারে, তা তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকে সংকুচিত করে, যা মানব নিরাপত্তার প্রতি হুমকি, হিউম্যান সিকিউরিটি থ্রেট। একটি সমাজের রাজনৈতিক নেতৃত্বের অংশ যদি দুষ্টের লালন করে, শিষ্টের দমন এমনিতেই তখন ত্বরান্বিত হয়। মানুষ তার সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে বসবাস করতে পারে না। দেশের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তখন দায়িত্ব পালন করতে পারে না। সুশাসনের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। সুশাসন না থাকলে সমাজে মানব নিরাপত্তা আশা করা আর কৃষ্ণপক্ষের অন্ধকার আকাশে চাঁদ দেখার আশা করা একই।  মানব নিরাপত্তা বা হিউম্যান সিকিউরিটির বিভিন্ন দিক বা ডাইমেনশন আছে। বিভিন্ন ডাইমেনশনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডাইমেনশনগুলোকে মোটাদাগে দুভাগে ভাগ করা যায়। এক- অভাব থেকে মুক্তি, দুই-ভয় থেকে মুক্তি।  অভাব থেকে মুক্তি  অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার তিনটি অনুষঙ্গ হলো- দারিদ্র্য, অর্থনৈতিক শোষণ, এবং মৌলিক চাহিদাপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি। সরকার গুচ্ছগ্রাম তৈরি করে আশ্রয়হীনকে ঘরবাড়ি দেওয়ার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, যা উদ্যোগ হিসেব অবশ্যই প্রশংসনীয়। তদুপরি দেশে বহু প্রান্তিক নাগরিক আছে, যাদের নিজেদের খাদ্য নিজেরা উৎপাদন করে খাবারের মতো জমিজিরেত নেই অথবা তাদের তিনবেলা প্রয়োজনীয় আহার জোটানোর মতো ক্রয়ক্ষমতা নেই; স্বাস্থ্যসেবা, স্যানিটেশন, শিক্ষার সুযোগ ভীষণ সীমিত। বেকারত্বজনিত সামাজিক অবক্ষয় আমাদের দেশে বিদ্যমান। এই দেশে ৫০০ টাকা আয়ের বিনিময়ে একজন বেকার যুবক, অভাবগ্রস্ত কিশোরকে দেখা যায়, কোনো আদর্শিক কারণবিহীন রাজধানীতে এসে রাজনৈতিক নেতাদের সমর্থনে মিছিল সমাবেশে যোগ দেয়, নিজের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা তুচ্ছ করে। রাজধানীর বিভিন্ন বাণিজ্যিক ভবনের নিচে, ফুটপাতে অনেককেই ঘুমাতে দেখা যায়। এমন নয় যে, এরা কাজ করতে চায় না, আমেরিকান হিপ্পিদের মতো। দারিদ্র এবং আয়ের অভাবেই আমাদের দেশে এটা বিদ্যমান।  ভয় থেকে মুক্তি  হরতাল শব্দটা এদেশেই দেখেছি আমরা নিকট অতীতে, যার অর্থ তোমাকে কাজ করতে দেব না। অনেকেই হুমকির মুখে বাধ্য হয়, মিছিল স্লোগানে যোগ দিতে। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ছাত্ররাজনীতিতে কোন্দল, চাদাবাজি একটা জঘন্য সমস্যা আমাদের দেশে। বহু ছাত্র আজকাল হলে না থেকে পার্শ্ববর্তী এলাকায় মেস করে থেকে লেখাপড়া করে এ জন্য যে, হলে উঠতে হলে ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে উঠতে হয়, লেখাপড়া বাদ দিয়ে মিছিলে যেতে হয়, মারামারিতে অংশ নিতে হয়। এই পরিস্থিতি যে দেশে বা যে সমাজে বিদ্যমান সে সমাজে মানব নিরাপত্তা কতটুকু হুমকিতে থাকে তা সহজেই অনুমেয়। রাজনৈতিক চাপের কারণে যখন দেশের পুলিশ বা প্রশাসন স্বাধীনভাবে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে না, যখন বিভিন্ন সরকারি সেক্টর রাজনীতিকীকরণ হয়ে যায়, তখন সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়া অলীক কল্পনা হয়ে যেতে বাধ্য।  বর্তমান সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য শান্তিবাহিনীর সঙ্গে শান্তি চুক্তি বা পিস ট্রিটি করেছে। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভ্রমণ সাধারণের জন্য সহজ হয়েছে। তদুপরি এখনো বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে গ্রুপিং, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি আছে । বেশ কিছুকাল আগে সামাজিক মাধ্যমে মেয়েদের কপালে টিপ পরা এবং স্কুল ছাত্রীর হিজাব পরা নিয়ে বিরাট হইচই হলো। এতে প্রমাণিত হয়, আমাদের সমাজে ভদ্রতা, সদাচরণ ও অধিকারবোধে সমস্যা আছে।  দেশে দারিদ্র্যতা এবং অভাবের কারণে এখানে মানব পাচারের যথেষ্ট নজির আছে। প্রতারক দালাল শ্রেণি বিদেশে উন্নত বেতনের কাজের লোভ দেখিয়ে দেদারসে নারী পাচার করছে। এমতাবস্থায় মানব নিরাপত্তার দিক এখানে আঙুল তুলে দেখিয়া দেওয়ার প্রয়োজন নেই।  মানব নিরাপত্তা সমস্যার সমাধান কীভাবে  মানব নিরাপত্তা একটি সমাজ বা দেশের মানবাধিকারের সঙ্গে সম্পর্কিত। আমি সমাজে বা রাষ্ট্রে আমার স্বাভাবিক চলাফেরার স্বাধীনতা নিয়ে নিরাপদে থাকব, আমার প্রতি কেউ জুলুম নির্যাতন করবে না, এটা আমার মৌলিক মানবাধিকার। এটা কীভাবে অর্জন করা যাবে? রাষ্ট্র ও সমাজের দায় আছে মানব নিরাপত্তার বিষয়ে দেখভাল করার। রাজনৈতিক নেতৃত্বের সব স্তরে সততা এবং আইন মেনে চলার অঙ্গীকারের প্রতিফলন থাকলে এই সমস্যার প্রায় সমাধান হয়ে যাবে। উদাহরণস্বরূপ একজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি যদি স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটির কাছে চাঁদা না খায়, বরং স্কুলের সমস্যার জন্য সৎভাবে কাজ করে, শিক্ষক নিয়োগে যদি বাণিজ্য না হয়, তাহলে ওই স্কুলে ভাল শিক্ষক থাকবে, ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়ার পরিবেশ পাবে, ফলাফল ভালো হবে। আমার একখণ্ড জমি যদি স্থানীয় মাস্তানরা দখল করে, আর আমি পুলিশ প্রশাসনকে জানাই, তবে পুলিশ প্রশাসনকে অ্যাকশনে যাওয়ার আগে যদি চিন্তা করে মাস্তানটি কোন দলের, তার ওপর নির্ভর করবে তার বিচার, তাহলে সুশাসন কখনো প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। এই ধরনের সমস্যা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান বা যে কোনো যে দেশেই থাকুক, সেই দেশেই সুশাসনের আশা বৃথা। সংবাদ মাধ্যমকে স্বাধীনতা দিতে হবে, যাতে তারা সঠিক সংবাদ প্রকাশ করতে পারে, একই সঙ্গে সংবাদপত্র এবং সাংবাদিককেও সৎ ও নিরপেক্ষ হতে হবে, হতে হবে ভয়মুক্ত।  আমাদের এখানে শিক্ষক, ছাত্র, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, সাংবাদিক সবাই রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত। ফলে তারা তাদের স্ব-স্ব রাজনৈতিক মতাদর্শকে ধারণ করার জন্য কথা বলে বা চুপ থাকে। ফলে তারা কখনো অন্ধ, কখনো একচক্ষুবিশিষ্ট হয়ে সত্য প্রকাশে বিরত থাকে এবং মিথ্যার সাক্ষী হয়ে থাকে, ধীরে ধীরে বিবেকশূন্য হয় সমাজ, মানুষ। এরকম সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পরিবেশে মানব নিরাপত্তা শুধুই কল্পনায় পর্যবসিত হবে, এটাই স্বাভাবিক। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ওপর মানুষের হাত নেই। এদেশের মানুষ যে কোনো প্রাকৃতিক দৈবদুর্বিপাকে একতাবদ্ধ হয়ে মোকাবেলা করেছে, তার ঐতিহ্য আছে। কিন্তু রাজনৈতিক বিভক্তি, প্রতিহিংসা এমনই একটি সমস্যা, যে সমস্যা বিদ্যমান থাকলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, আইনশৃঙ্খলার প্রতি আনুগত্য এসবের আশা করা যায় না। দেশপ্রেমের শিক্ষা তখন বড়ই কাগুজে হয়ে যায়।  শরীফ শেখ: লেখক, কবি ও সংস্কৃতিকর্মী 
৩১ আগস্ট, ২০২৩

দেশে সুশাসন ও গণতন্ত্র রয়েছে - তথ্যমন্ত্রী
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিশ্ব গণতন্ত্র সূচকে দুই ধাপ এবং সুখী দেশের সূচকে আমাদের সাত ধাপ অগ্রগতি প্রমাণ করে যে, দেশে গণতন্ত্র সংহত হয়েছে, সুশাসন রয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অসুস্থ, অসচ্ছল ও দুর্ঘটনায় আহত এবং নিহত সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ৬৯ লাখ টাকার চেক বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার এতে স্বাগত বক্তব্য দেন। তথ্যমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট আজকে সত্যিকার অর্থে দেশে যেসব সাংবাদিক কষ্টে থাকেন, দুর্ঘটনায় পতিত হন কিংবা নিহত হন, তাদের ও পরিবারের জন্য একটি ভরসার স্থল হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে গণমাধ্যমের বিকাশের সঙ্গে গণতন্ত্রের বিকাশও ঘটেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন, প্রতিনিয়ত বিরোধী দল, বিশেষ করে মির্জা ফখরুলসহ তাদের নেতারা বলেন, আমাদের কথা বলার অধিকার নেই। তারা তিনবেলা কথা বলেন, আর বলেন—আমাদের কথা বলার অধিকার নেই। তাদের এই হাঁকডাক এবং ‘গণতন্ত্র হুমকির সম্মুখীন’ মন্তব্যের মধ্যেই বাংলাদেশ গত বছর গণতন্ত্র সূচকে দুই ধাপ এগিয়ে ৭৩তম স্থানে উন্নীত হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭৪২ জন সাংবাদিকের অনুকূলে ট্রাস্ট থেকে ৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা এবং ২ হাজার ২৯৮ জনকে প্রধানমন্ত্রীর করোনাকালীন বিশেষ সহায়তা হিসেবে ২ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।
১১ জুলাই, ২০২৩
X