৭ মার্চ : যে ভাষণে আন্দোলিত হয়েছিল পুরো পৃথিবী
Jakob F. Field সম্পাদিত ÒWe Shall Fight on the Beaches: The Speeches that Inspired HistoryÓ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ইতিহাসের অন্যতম ভাষণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৩১ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ইতিহাস সৃষ্টিকারী ভাষণগুলোর মধ্যে ৭ মার্চ যেমন শিল্প-সাহিত্যে অভিব্যক্ত হয়েছে তেমনি আলোড়ন সৃষ্টি করে চলেছে বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গনে। কোটি বছর বয়সী এই পৃথিবীর পাঁচ হাজার বছরের মানব সভ্যতার ইতিহাসে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের মতো কোনো ভাষণ শোনা যায়নি। যদিও অনেকে এই মহাকাব্যিক ভাষণের তুলনা করে থাকেন আব্রাহাম লিংকনের গেটিসবার্গের ভাষণের সঙ্গে অথবা তুলনা দেওয়া হয় মহাত্মা গান্ধীর ১৯৪১ সালের ৮ আগস্ট কুইট ইন্ডিয়া ভাষণের। কিন্তু লিংকন অথবা গান্ধীর শব্দ উচ্চারণ, ক্ষোভ প্রকাশ, মানব মুক্তির স্বপ্ন সবই ভিন্ন ছিল আমাদের জাতির পিতার ঐতিহাসিক ভাষণটি থেকে।  সেদিনের রেসকোর্স ময়দান ও বর্তমানের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সেই ভাষণটিকে কেন্দ্র করে নির্মলেন্দু গুণের ‘স্বাধীনতা এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো’ কবিতার পঙ্‌ক্তিমালায় যথার্থই উপস্থাপিত হয়েছে- ‘লাখ লাখ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে/ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে।’ দশ লাখেরও বেশি মানুষের সেই সমাবেশ মানব সভ্যতার ইতিহাসের বিরল ঘটনা। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে জয়ী হয়ে দীর্ঘদিনের শোষণ বঞ্চনা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন জনগণের মুক্তির স্বপ্নে বিভোর ঠিক তখনই পাকিস্তানি শাসকচক্র ষড়যন্ত্র করে ১ মার্চ ঘোষণা দিয়ে ৩ মার্চের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করে। কারণ পাকিস্তানি পিপলস পার্টির নেতা ভুট্টো বলেছিল তাদের দল বাদ দিয়ে অধিবেশন বসলে পেশোয়ার থেকে করাচি পর্যন্ত জীবনযাত্রা নীরব নিথর করে দেওয়া হবে। ইয়াহিয়া তার হুমকির কাছে মাথা নত করে। আর তার ঘোষণার পরে বাংলাদেশ অগ্নিগর্ভ উত্তাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়।    প্রথমে অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিলেও ৭ মার্চের ভাষণেই বঙ্গবন্ধু সশস্ত্র সংগ্রামের ডাক দেন। ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার আহ্বান ছিল এরকম- ‘তোমাদের কাছে অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সবকিছুই- আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে।’ একই বক্তৃতায় তিনি হানাদার পাকিস্তানিদের প্রতি শান্তি প্রস্তাব দিয়েছেন; বলেছেন- ‘তোমরা আমার ভাই, তোমরা ব্যারাকে থাকো, কেউ তোমাদের কিছু বলবে না।’ এই প্রস্তাবে সাড়া না দিলে ‘আমরা ভাতে মারবো, আমরা পানিতে মারবো’ অর্থাৎ নিরস্ত্র প্রতিরোধের ডাকও দিয়েছেন তিনি। ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্লেষণ করে সকলেই স্বীকার করেছেন এটি ছিল স্বতঃস্ফূর্ত কিন্তু সুচিন্তিত এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এর প্রভাব ছিল প্রত্যক্ষ।  মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের ডাক ছিল বঙ্গবন্ধুর সাময়িক কৌশল; বিশ্বাস নয়। তার বিশ্বাস ছিল সুভাষচন্দ্রের সশস্ত্র যুদ্ধের রাজনৈতিক বিশ্বাস। লক্ষণীয় তার ভাষণজুড়ে রয়েছে সামরিক প্রসঙ্গ। পাকিস্তানিদের তিনি নির্দেশ দিয়েছেন- ক) সামরিক আইন বা মার্শাল ল প্রত্যাহার করতে হবে। খ) সামরিক বাহিনীর সমস্ত লোকদের ব্যারাকের ভিতর ঢুকতে হবে। গ) যে ভাইদের সেনাবাহিনী হত্যা করেছে তার তদন্ত করতে হবে। তার এই নির্দেশ ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে কর্মরত বাঙালিদের জন্য ‘গ্রিন সিগন্যাল’। এ জন্যই ২৫ মার্চের হানাদার বাহিনীর আক্রমণের পরে দ্রুত বাঙালি সেনা অফিসাররা প্রতিরোধ যুদ্ধে নেমে পড়েন। ৭ মার্চের পরেই ছাত্রজনতা এবং আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কর্মীরা সংগ্রামের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীদের ডামি রাইফেল নিয়ে সামরিক ট্রেনিং শুরুর সেই চিত্র সকলেরই মনে থাকার কথা। পূর্ববাংলা বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন ১৫ মার্চ কর্মীদের মধ্যে এক বিশেষ গোপন সার্কুলার প্রচার করেছিল। সেটির একটি অংশ- ‘জাতি আজ বুঝিতে পারিয়াছে যে, একমাত্র সশস্ত্র সংগ্রামেই সে স্বাধীনতা অর্জন করিতে পারে এবং সেইজন্য নিজস্ব উদ্যোগে সশস্ত্র হইবার চেষ্টা করিতেছে।... আমরা আজ এক যুদ্ধকালীন অবস্থার মধ্যে রহিয়াছি। এ যুদ্ধ জাতীয় যুদ্ধ। এই যুদ্ধে আমরা অংশগ্রহণ করিতেছি এবং জয়যুক্ত হইতে চাই।...‘  ১৮ মার্চ বিমানবাহিনীর সাবেক জওয়ানরা ঢাকায় শহীদ মিনারে এক সমাবেশ করে বাংলার মুক্তিসংগ্রামকে ভিয়েতনামের মুক্তিসংগ্রামের মতো রূপ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন। স্বাধীন বাংলা বিমানবাহিনী গঠনের লক্ষ্যে তাদের সমাবেশ ছিল ৭ মার্চের প্রত্যক্ষ ফল। ১৯ মার্চ সামরিক কর্তৃপক্ষ জয়দেবপুরে অবস্থানরত এক ব্যাটালিয়ন বাঙালি সৈন্যকে অস্ত্রসমর্পণের নির্দেশ দেয়, কিন্তু বাঙালি সৈন্যরা এ নির্দেশ মানতে অস্বীকার করেন। অন্যদিকে একইদিনে বঙ্গবন্ধু ও কর্নেল ওসমানী ঢাকায় এক গোপন বৈঠকে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বিভিন্ন খুঁটিনাটি দিক পর্যালোচনা করেছিলেন। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অনেক অফিসারও এসময় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে গোপনে দেখা করে নির্দেশাবলি গ্রহণ করেন।  ২০ মার্চ ছাত্র ইউনিয়নের ট্রেনিংপ্রাপ্ত শত শত গণবাহিনীর ঢাকার রাজপথে ডামি রাইফেল কাঁধে নিয়ে মার্চপাস্ট ছিল মানুষের কাছে নতুন উদ্যমের দৃষ্টান্ত। পাকিস্তানি দিবস হিসেবে পালন করে আসা ২৩ মার্চকে বঙ্গবন্ধু ‘লাহোর প্রস্তাব দিবস’ ঘোষণা করেন এবং দিনটি ছুটি ঘোষিত হয়। সেদিন পল্টন ময়দানে সকাল ৯টায় ‘জয় বাংলা বাহিনী’র কুচকাওয়াজ ও মহড়া অনুষ্ঠিত হয় এবং কুচকাওয়াজ শেষে সারাশহর ঘুরে মার্চ করে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে গিয়ে তার অভিবাদনের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়। আর এসব আয়োজনই সম্ভব হয়েছিল ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর প্রদীপ্ত ভাষণের পরে। সে জন্য কামান, মর্টার ও রাইফেল নিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ২৫ মার্চ বাঙালিদের ওপর অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়লে প্রাথমিক প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয়েছে তাদের। ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হয়ে ফার্মগেটে এসে পাকিরা যেমন বাধা পেয়েছে তেমনি পিলখানায় ইপিআর আর রাজারবাগে পুলিশের প্রতিরোধের মধ্যে পড়েছে। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু এই সংবাদ পেয়ে ওয়ারলেস, টেলিগ্রাফ ও টেলিফোনে ‘সমস্ত শক্তি জড়ো করে প্রতিরোধ আর স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুতি নিতে’ নির্দেশ দেন। বঙ্গবন্ধু ২৫ মার্চের রাতে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘এই-ই হয়তো তোমাদের জন্য আমার শেষ বাণী। আজকে থেকে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। যে যেখানেই থেকে থাকো, যে অবস্থায় থাকো, হাতে যার যা আছে, তাই দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে, যতদিন পর্যন্ত না দখলদার পাকিস্তানিদের শেষ সৈনিকটি বাংলাদেশের মাটি থেকে বহিষ্কৃত হচ্ছে এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হচ্ছে।’   বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণেই তিনি স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন। ২৫ মার্চ বললেন, ‘বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ'। বঙ্গবন্ধু ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা থেকে শুরু করে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পূর্বদিন পর্যন্ত দেশের গণমানুষের উন্নয়নের কথা বলেছেন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের পক্ষে ছিল তার রাষ্ট্রনীতি। তিনি সবসময় শোষিতের মুক্তি কামনা করেছেন। আজীবন সংগ্রামে যেমন তিনি অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি; তেমনি স্বাধীন দেশের সমাজকে সব অপশক্তির কবল থেকে মুক্ত করার জন্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিল তার বলিষ্ঠ ভূমিকা। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা এবং ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগের ৬ দফা কর্মসূচিতেও শোষণের বিরুদ্ধে অবস্থান ঘোষণা করা হয়। ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক ভাষণে বঙ্গবন্ধু সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির কথা বলেন। তিনি দীপ্তকণ্ঠে উচ্চারণ করেন, ‘আওয়ামী লীগের মাথা কেনার মতো ক্ষমতা পুঁজিপতিদের নেই।’ সদ্য স্বাধীন দেশে ১৯৭২ সালে ১৬ জানুয়ারি তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু ব্যবসায়ী জিনিসপত্রের দাম বাড়াবার চেষ্টা করছে।’ এসব মুনাফাখোর কালোবাজারীদের কঠোর ভাষায় হুঁশিয়ারি করে দেন তিনি। এ সময় তিনি শোষণহীন সমাজ গড়ার জন্য ধৈর্য ধরে কাজ করার কথাও বারবার উল্লেখ করেন। অন্যদিকে সাতচল্লিশের দেশভাগের আগেই শেখ মুজিবুর রহমান অসাম্প্রদায়িক চেতনায় স্নাত হন।  তিনি তার আত্মজীবনী লেখার ডিকটেশন দেয়ার সময় আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে বলেছিলেন, ‘দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন থেকে ফজলুল হক, ফজলুল হক থেকে সুভাষচন্দ্র, সুভাষচন্দ্র থেকে আবুল হাশিম-শরৎচন্দ্র (সুভাষ বসুর ভাই) এবং দেশভাগের পর ভাষা আন্দোলন ও ছয়দফা পর্যন্ত যদি বাংলার রাজনীতির গতিধারা বিশ্লেষণ করো, তাহলে দেখবে অসামপ্রদায়িক স্বাধীন বাংলার সুপ্ত চেতনার জন্ম সাতচল্লিশের বাংলাভাগের আগেই এবং সেই চেতনারই প্রথম বহিঃপ্রকাশ আটচল্লিশ সালেই অসাম্প্রদায়িক ভাষা আন্দোলনের মধ্যদিয়ে।’ আর ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধু। এভাবে ঐতিহাসিক কালানুক্রমিক ঘটনাধারা মনে রাখলে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব সহজেই অনুধাবন করা সম্ভব।  একাত্তরের ১৩ মার্চে কূটনৈতিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী কিসিঞ্জার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে এক স্মারকে জানিয়েছিলেন, ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দান থেকে নিবৃত্ত থাকাটা দৃশ্যত কৌশলগত। আর এই স্মারকেই কিসিঞ্জার বঙ্গবন্ধুর প্রতি একটা গভীর শ্রদ্ধাপূর্ণ মন্তব্য করেন। শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে তাঁর নেতিবাচক মন্তব্যগুলো অনেক বেশি প্রচার পেয়েছে কিন্তু যেটি পায়নি সেটি হলো কিসিঞ্জার নিজেই নিক্সনকে বলেছিলেন, শেখ মুজিব যেভাবে গান্ধীর মতো অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পরিচালনা করছেন, তাতে সেখানে দমন-পীড়ন চালানোর যথার্থতা দেওয়া কঠিন। কিসিঞ্জারের নিজের ভাষায়, ...রহমান হ্যাজ এমবার্কড অন এ গান্ধিয়ান টাইপ নন-ভায়োলেন্ট নন-কো-অপারেশন ক্যাম্পেইন হুইচ মেকস ইট হার্ডার টু জাস্টিফাই রিপ্রেশন। ১ থেকে ৭ মার্চ-বিষয়ক নথির একটি পৃষ্ঠা ৭ মার্চের ভাষণ সম্পর্কে কিসিঞ্জারের ঘনিষ্ঠ সহকারী জোসেফ সিসকো ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ‘সব ইঙ্গিত স্পষ্ট করেছে যে ৭ মার্চে শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবেন এবং সম্ভবত সেটা হবে স্বাধীনতার সমতুল্য।’ আগামী প্রজন্ম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সামগ্রিক ইতিহাসের পটভূমিতে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর ৭ মার্চের ভাষণে উল্লিখিত স্বাধীনতার তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস। কারণ পৃথিবীর কোথাও এ রকম ভাষণ শোনা যায়নি।  সেদিনের রেসকোর্স ময়দান ও বর্তমানের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ৭ মার্চের ভাষণটিকে কেন্দ্র করে নির্মলেন্দু গুণের ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো’ কবিতার পঙ্‌ক্তিমালায় যথার্থই উপস্থাপিত হয়েছে- ‘লাখ লাখ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে/ ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে।’ দশ লাখেরও বেশি মানুষের সেই সমাবেশ মানব সভ্যতার ইতিহাসের বিরল ঘটনা। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে জয়ী হয়ে দীর্ঘদিনের শোষণ বঞ্চনা থেকে বঙ্গবন্ধু যখন জনগণের মুক্তির স্বপ্নে বিভোর ঠিক তখনই পাকিস্তানি শাসকচক্র ষড়যন্ত্র করে ১ মার্চ ঘোষণা দিয়ে ৩ মার্চের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করে। নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী ক্ষমতা হস্তান্তর করলে ভুট্টোদের বঙ্গবন্ধুর কর্তৃত্ব মেনে নিতে হতো। সেটা না মানার জন্যই পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা ভুট্টো বলেছিল তাদের দল বাদ দিয়ে অধিবেশন বসলে পেশোয়ার থেকে করাচি পর্যন্ত জীবনযাত্রা নীরব নিথর করে দেওয়া হবে।  ইয়াহিয়া তার হুমকির কাছে মাথা নত করে। আর তার ঘোষণার পরে বাংলাদেশ অগ্নিগর্ভ উত্তাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ‘জাগো জাগো বাঙালি জাগো’, ‘পদ্মা- মেঘনা-যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো সোনার বাংলা মুক্ত করো’, ‘পিণ্ডি না ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা’, ‘পাঞ্জাব না বাংলা, বাংলা বাংলা’, ‘ভুট্টোর মুখে লাথি মারো বাংলাদেশ স্বাধীন করো’- এসব স্লোগান কণ্ঠে নিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশ তখন মিছিলের সমুদ্র। বঙ্গবন্ধু জানান বিনা চ্যালেঞ্জে তিনি কোনো কিছুই ছাড়বেন না। ছয়দফার প্রশ্নে আপস না করারও ঘোষণা আসে। ১ থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল চলতে থাকে।  বঙ্গবন্ধুর আদেশে ছাত্রলীগ আর ডাকসুর সমন্বয়ে ‘স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’গঠিত হয়। চলমান অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। গণজাগরণের এই পরিস্থিতিতে ৭ মার্চ ছিল স্মরণীয় দিন। ৭ মার্চের ভাষণের মধ্যে কলকাতার অধুনালুপ্ত দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার এককালের সম্পাদক বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় দেখেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা এবং উপমহাদেশের দুটি শক্তিশালী রাজনৈতিক ধারার দর্শনের প্রভাব অর্থাৎ গান্ধীজির নিরস্ত্র নৈতিক যুদ্ধের আহ্বান এবং নেতাজী সুভাষচন্দ্রের সশস্ত্র সংগ্রামের রাজনৈতিক দর্শন। এ ছাড়া স্বাধীনতা যুদ্ধের পরবর্তী ধাপেরও নির্দেশ রয়েছে বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণে। উপরন্তু ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বাক্যটি সারা দুনিয়ার নির্যাতিত মানুষের কাছে মুক্তিমন্ত্রতুল্য। খ্যাতিমান গবেষকের মন্তব্য, ‘বাঙালির মুক্তির সনদ ছিল এই ভাষণটি। এই দিনই রাষ্ট্রের ভিত্তি তৈরি হয়ে যায়। পাকিস্তানকে বাঙালিরা প্রত্যাখ্যান করে।’ ৭ মার্চ নিয়ে রচিত হয়েছে অনেকগুলো কবিতা। ‘রাজনীতির কবি’র ৭ মার্চের ভাষণই একটি মহাকবিতা। পাকিস্তানের অপশাসনের বিরুদ্ধে তার জ্বালাময়ী ভাষণ জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছে বারবার, ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬৬-এর ছয় দফা, ৬৯-এর গণআন্দোলন সংঘটিত হয় তার নেতৃত্বে। ৭১-এর প্রথম মাস জানুয়ারি থেকে তিনি মুক্তিকামী মানুষের শৃঙ্খল মোচনের শপথে উদ্দীপিত করেন সাধারণ মানুষকে- রাজনৈতিক কর্মী ও মুক্তিযোদ্ধা এবং বুদ্ধিজীবী মহলের প্রত্যেককে; কবি-শিল্পী-সাহিত্যিক নির্বিশেষ। বাঙালির নিজের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে চিনতে শেখা তার মাধ্যমেই। ৭ মার্চে ভাষণের আগে ‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়া হয়েছিল। এসবই আছে কবিতার মধ্যে। বঙ্গবন্ধুর আত্মদানকে অর্থবহ করার জন্যই এই কবিতাবলি। তার রক্তের ঋণ শোধ হবে না কিন্তু তার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় জেগে থাকবে এসব কবিতার মধ্য দিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের সময় লিখিত জসীম উদ্দীনের ‘বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক কবিতায় এই ঐতিহাসিক ভাষণের কথা বলা হয়েছে। বিশেষত বঙ্গবন্ধুর একাত্তরের মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া অসহযোগ আন্দোলনের বিষয়টিকে কবি তুলে ধরেছেন দীর্ঘ কবিতাটির একটি অংশে- ‘তোমার হুকুমে রেল-জাহাজের চাকা যে চলেনি আর হাইকোর্টের বন্ধ দরজা খুলিবে সাধ্য কার! . . .         . . .            . . . তোমার হুকুমে তুচ্ছ করিয়া শাসন-ত্রাসন ভয়, আমরা বাঙালি মৃত্যুর পথে চলেছি আনিতে জয়।’ কবি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের গুণাবলির প্রশংসা করেছেন। তার আপসহীন অবস্থান ও মানুষের আস্থা-ভরসার নেতা হিসেবে মুক্তিসংগ্রামে বিজয়ের চিত্রও তুলে ধরেছেন তিনি। ৭ মার্চের ভাষণই মানুষকে নতুন এক স্বপ্নে আন্দোলিত করে। জাগরণ ও শিহরণে উদ্দীপিত মানুষ মুক্তির স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে উৎসাহী হয়। জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান বঙ্গবন্ধু। নির্মলেন্দু গুণের ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’, ওমর আলীর ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’, সানাউল হকের ‘সাতই মার্চ একাত্তর’, আল মাহমুদের ‘নিশিডাক’ বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণকেন্দ্রিক কবিতা। নির্মলেন্দুর কবিতার একটি অংশ- ‘শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন। তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল, হৃদয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার সকল দুয়ার খোলা। কে রোধে তাহার বজ্রকণ্ঠ বাণী? গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি; ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের।’ কবির বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে ৭ই মার্চের ভাষণই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। ১৫ আগস্টের পরে জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে গণ্য করার প্রচেষ্টা নিরর্থক - এই কবিতাই তার সাক্ষ্য। আল মাহমুদের কবিতার অংশ বিশেষ- ‘তাঁর আহ্বান ছিল নিশিডাকের শিস্ তোলা তীব্র বাঁশীর মত। প্রতিটি মানুষের রক্তবাহী শিরায় কাঁপন ধরিয়ে দিয়ে তা বাজত . . . সে যখন বলল, ‘ভাইসব’। অমনি অরণ্যের এলোমেলো গাছেরাও সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে গেল  সে যখন ডাকলো, ‘ভাইয়েরা আমার’।. . . অসীম সাহার কবিতায় এভাবে প্রকাশিত ৭ই মার্চ-  ‘তুমি হাত উত্তোলিত করলেই হিমালয় মাথা নিচু করে তোমার পায়ের কাছে এসে আনত প্রজার মতো জানায় কুর্নিশ।’  এ ছাড়া শামসুল আলমের ‘এবারের সংগ্রাম... স্বাধীনতার সংগ্রাম’, তাহমীদুল ইসলামের ‘সমুদ্রের অর্কেস্ট্রাঃ ৭ মার্চ ১৯৭১ খৃস্টাব্দ’ প্রভৃতি কবিতা একই প্রসঙ্গে রচিত। শামসুল আলমের কবিতায় ৭ই মার্চের ভাষণকে ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।    ‘স্বাধীনতার কবি’ শামসুর রাহমানের একাধিক কবিতায় বঙ্গবন্ধু রূপক-প্রতীকে আবার কখনো সরাসরি আত্মপ্রকাশ করেছে। ‘ধন্য সেই পুরুষ’, ‘যাঁর মাথায় ইতিহাসের জ্যোতির্বলয়’, ‘ইলেকট্রার গান’, ‘তোমারই পদধ্বনি’ প্রধান কবিতা। ‘ইলেকট্রার গান’ বেশ ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত বাঙলাদেশের সাথে: ‘বিদেশী মাটিতে ঝরে নি রক্ত; নিজ বাসভূমে,/ নিজবাসগৃহে নিরস্ত্র তাঁকে সহসা হেনেছে ওরা।’ স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডকে। কিন্তু কবিতাটি আদ্যন্ত গীতিময়, জাতিসত্তার বাণীবহ মহাকাব্যিক চারিত্র এর নয়। তবে এ কবিতায় এ্যাগামেননের (বঙ্গবন্ধু) হত্যাকাণ্ডের পর নিহত পিতার জন্য কন্যা ইলেকট্রার(শেখ হাসিনা) শোক সার্বজনীন হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে ১৫ আগস্টের পর বঙ্গবন্ধুর জন্য হাহাকার ব্যক্ত হয়েছে। এ কবিতায় বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়াকে নিয়তি বলে ধরে নিতে দেখা যায়। শোকে কবি লুকিয়ে বিলাপ করেন, তাতে মন সান্ত্বনা মানে না। হত্যাকারীরা নির্ভয়ে ঘুরে বেড়ায় আর কবির ওপর চোখ রাখে। তবুও কবি অন্তরে শোক লালন করে যাবেন। ‘ধন্য সেই পুরুষ’ কবিতায় উন্মোচিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর মহিমা। তাঁর নেতৃত্ব ও মানুষের জন্য ব্রতের সমুজ্জ্বল চিত্রণ এখানে অনন্য। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত এই কবিতাটি আমার মতে শামসুর রাহমানের শ্রেষ্ঠ কবিতা। কবির বিভিন্ন কবিতার কিছু কিছু অংশ-   ক) ‘ধন্য সেই পুরুষ, যার নামের ওপর পতাকার মতো      দুলতে থাকে স্বাধীনতা,      ধন্য সেই পুরুষ, যার নামের ওপর ঝরে      মুক্তিযোদ্ধাদের জয়ধ্বনি।’ খ) ‘যতদিন আমি এই পৃথিবীর প্রত্যহ ভোরে     মেলব দুচোখ, দেখব নিয়ত রৌদ্র-ছায়ার খেলা,      যতদিন পাব বাতাসের চুমো, দেখব তরুণ       হরিণের লাফ, ততদিন আমি লালন করব শোক। . . .              . . .        . . .      নিহত জনক, এ্যাগামেমনন, কবরে শায়িত আজ।’ গ) ‘তারই কি আশ্চর্য প্রতিদান     যিশুর ধরনে পেয়ে গেলে তুমি। তবে ইতিহাস     চিরকাল মিথ্যার কুহক ছিঁড়ে গাইব সত্যের জয়গান।’ কবিতাকে শেখ মুজিবের সূর্যমুখী ভাষণের মতো বলেছেন কবি। মুজিবের নাম জুঁইয়ের মতো, কৃষকের সানকিতে ফোটার কথাও বলেছেন তিনি। অন্যদিকে শামসুর রাহমানের মতো যিশুর প্রতীকটি মুহম্মদ নূরুল হুদার কবিতায়ও উচ্চারিত হয়েছে- ‘ফুরাবে না গঙ্গাধারা, ফুরাবে না বঙ্গভাষী কবিদের নিব ফুরাবে না এই রক্ত, পিতা, তুমি যিসাস মুজিব।’   বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত কবিতায় পিতৃ-ইমেজ ব্যবহার সম্পর্কে কবীর চৌধুরী বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু যখন কবিতায় এসেছেন তখন স্বাভাবিকভাবেই জনক বা পিতার অনুষঙ্গ বারবার কবিদের লেখায় ব্যবহৃত হয়েছে। পিতার ইমেজ সহজভাবে কবিদের লেখনীতে উঠে এসেছে, যেমনভাবে জাতির জনকের শিরোপা তার মাথায় কৃতজ্ঞ জাতি স্বতঃস্ফূর্তভাবে পরিয়ে দিয়েছে।’ পিতৃইমেজ আছে মহাদেব সাহার ‘তোমার হত্যাকারী’ এবং শিহাব সরকারের ‘পিতা’ কবিতায়। শোকাভিভূত কবিদের চেতনায় এভাবেই পিতৃহত্যার প্রতিশোধ স্পৃহা জেগে ওঠে। এজন্য আসাদ চৌধুরী ‘এ কেমন জন্মদিনে’ বলেন - ‘ যে ঘাতক তোমার সুবিশাল ছায়াতলে  থেকে কেড়ে নিলো তোমার নিশ্বাস- শিশুঘাতী, নারীঘাতী ঘাতকেরে যে করিবে ক্ষমা তার ক্ষমা নাই- আমরণ অনুগত, তোমারই অবাধ্য হবে আজ, পিতা, অনুমতি দাও।’ মূলত বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত কবিতায় বাঙালি জাতির ভাষার স্মৃতি উচ্চকিত হয়েছে। তাঁর মতো মহাপুরুষকে নিয়ে রচিত সৃজনকলায় কবিরা সমাজ ও জীবনের প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে বাধ্য। কারণ কবিতার মাধ্যমে কবি একাত্মতার বাণী প্রচার করেন। মানুষের সঙ্গে মানুষের একাত্ম হওয়ার এই বাণী অসংখ্য কবির অজস্র চরণে কখনো শেখ মুজিব, কখনো বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষরিত হয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে। স্বাধীনতার মহাকাব্য ৭ মার্চের ভাষণ শিল্প-সাহিত্যের অনন্য উদ্দীপনা। কারণ এই ভাষণেই স্বাধীনতার ঘোষণা দেদীপ্যমান। (ভাষা ও বানানরীতি লেখকের নিজস্ব) ড. মিল্টন বিশ্বাস: বঙ্গবন্ধু গবেষক, অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ  
০৯ মার্চ, ২০২৪

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উদযাপিত
নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সারা দেশে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উদযাপিত হয়েছে। ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের দিনটি উদযাপন উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বর্ণিল কর্মসূচির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা ও তার ভাষণের মর্মার্থ ও গুরুত্ব তুলে ধরে দিনটি উদযাপন করে। গতকাল সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। এই মহান নেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। প্রধানমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষের পদচারণায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এদিন প্রধানমন্ত্রী গণভবনে একটি স্মারক ডাকটিকিট, একটি উদ্বোধনী খাম এবং একটি ডাটা কার্ড ৭ অবমুক্ত করেন। বিকেলে তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আলোচনা সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেন শেখ হাসিনা। সিরডাপ মিলনায়তনে ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট ইনার গার্ডেনে ‘স্মৃতি চিরঞ্জীব’ স্মারকসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। ইউজিসি ভবনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে আলোচনা সভা ও বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
০৮ মার্চ, ২০২৪

৭ মার্চ ও বঙ্গবন্ধু গোটা পৃথিবীর অনুপ্রেরণা
যতদিন পৃথিবীতে মুক্তির সংগ্রাম থাকবে ততদিন ৭ মার্চের ভাষণ ও বঙ্গবন্ধু শুধু আমাদের জন্য নয় গোটা পৃথিবীর কাছে অনুপ্রেরণা হিসেবে থাকবে। বাঙালির স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ভাষণে বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবাবের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তিনি জানতেন, তিনি যদি সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, তাহলে সেই সময় রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি বাহিনী ওই সভা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অ্যাখ্যা দিয়ে আমাদের স্বাধীনতার আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে পারে ভেবেই সরাসরি ওইদিন স্বাধীনতার ঘোষণা না দিয়েও কৌশলে বাঙালিকে স্বাধীনতার ডাক দেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) দুপুর ১২টায় রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ আয়োজিত ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ৭ মার্চের ভাষণ গুরুত্ব বিবেচনায় এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ নির্মাণে নায়ক ছিলেন বঙ্গবন্ধু। প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ৭ মার্চ ছিল হাজার বছরের বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। সেদিনের ভাষণের যে প্রেক্ষাপট তা এক দিনে তৈরি হয়নি। রেসকোর্স ময়দানের সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি সমগ্র জাতিকে হিমালয়ের মতো আগলে ধরেন। যা আমরা পরবর্তীতে ফিদেল কাস্ত্রোর মূল্যায়নে দেখতে পাই। ফিদেল কাস্ত্রো হয়তো এ জন্যই বলেছিলেন আমি হিমালয় দেখিনি, আমি একজন শেখ মুজিবকে দেখেছি। প্রধান অতিথি ছাড়াও অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন অধ্যাপক উত্তম কুমার বড়ুয়া, রফিকুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য বিশ্বজিত চন্দ্র চন্দ, বঙ্গবন্ধু গবেষক মেজর (অব.) হাফিজ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শফিকুল করিম সাবু, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক বিশ্বজিত ঘোষ প্রমুখ। সভাপতির বক্তব্যে সম্প্রতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বাঙালি জাতির জন্য এক ঐতিহাসিক দিন ছিল। এদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত সুকৌশলে একটি জাতির স্বাধীনতার ইস্তেহার ঘোষণা করেছিলেন। সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল।
০৮ মার্চ, ২০২৪

যারা ৭ মার্চ পালন করে না, তাদের নিয়ে সন্দেহ আছে
যারা ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালন করে না, বাংলাদেশের স্বাধীনতায় তাদের বিশ্বাস নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, যারা আজকে ঐতিহাসিক ৭ মার্চকে অস্বীকার করে, তারা আসলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে কতটুকু বিশ্বাস করে, সেটি নিয়ে সন্দেহ আছে। বিএনপিসহ তাদের মিত্ররা ৭ মার্চ পালন করে না। বাংলাদেশের ইতিহাস, স্বাধীনতা ৭ মার্চ ছাড়া হতে পারে না। সুতরাং যারা এটি মানে না বা পালন করে না, তারা আসলে স্বাধীনতাতেই বিশ্বাস করে কি না সন্দেহ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ শুধু একটি ভাষণ নয়। এটি একটি জাতির মুক্তির লক্ষ্যে রচিত মহাকাব্য। জাতির পিতা ঘোষণা করেছিলেন—এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। তিনি এও বলেছিলেন, যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থেকো, শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। অর্থাৎ তিনি নিরস্ত্র জাতিকে সশস্ত্র জাতিতে রূপান্তরিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং ২৬ মার্চ পর্যন্ত সময় নিয়েছিলেন। এরপর তিনি চূড়ান্ত স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। হাছান মাহমুদ বলেন, প্রকৃতপক্ষে ৭ মার্চেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। সেদিন ঢাকা থেকে পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থা রাওয়ালপিন্ডিতে রিপোর্ট পাঠিয়েছিল—‘চতুর শেখ মুজিব কার্যত পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করে দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না।’ অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু এমনভাবে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন যে, তাতে করে তাকে অভিযুক্ত করারও সুযোগ ছিল না।
০৮ মার্চ, ২০২৪

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আবেগঘন স্মৃতিচারণ
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, এই মাস এলেই মনে হয় হৃদয়ের মাস, বঙ্গবন্ধুর মাস চলে এসেছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের কারণে নিরস্ত্র বাঙালি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) বিকেলে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সরকারি গিরিজা শংকর মডেল স্কুল ও কলেজ মাঠে ‘মায়ের তরী’র আয়োজনে দুই দিনব্যাপী লোকসংগীত উৎসবের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ৭ মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তার ভাষণের আবেগে আমরা পেছনে ফিরে না তাকিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আজ সেই ঐতিহাসিক ৭ মার্চ।’ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। এ সময় অর্ধনীতিবিদ প্রফেসর ড. মোজাম্মেল হক, রংপুর বিভাগীয় পুলিশের মহাপরিদর্শক আব্দুল বাতেন, লালমনিরহাট পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম, কবি ও সমাজসেবক ফেরদৌসী বেগম বিউটি, লালমনিরহাট পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম স্বপন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
০৭ মার্চ, ২০২৪

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ নিয়ে যা বললেন সাকিব আল হাসান
মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান বলেন, ‘আমার মনে হয়, ৭ মার্চের এই দিনের মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে পুরো বাঙালি জাতি একত্রিত হয়। তারা যেভাবে যুদ্ধে নেমেছিলেন বিশ্বে আর কোথাও এটা ঘটেনি।’ বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) সকালে মাগুরা বীর মুক্তিযোদ্ধা আছাদুজ্জামান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘৭ মার্চের’ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সাকিব আরও বলেন, ‘এই বক্তব্যে (৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ) যে তাৎপর্য আছে সেই তাৎপর্যকে আমরা নিয়মিতভাবে তুলে ধরব। বিশেষ করে প্রতিটি পাঠাগারে নিয়মিত আলোচনা করতে হবে। এতে তরুণ প্রজন্ম দেশ প্রেমে আরও উদ্বুদ্ধ হতে পারবে।’ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক প্রশান্ত কুমার বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন মাগুরা-২ আসনের সংসদ সদস্য ড. বীরেন শিকদার, পুলিশ সুপার মশিউদ্দৌলা রেজা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ফাত্তাহ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পঙ্কজ কুমার কুন্ডু, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবু নাসির বাবলু, পৌর মেয়র খুরশীদ হায়দার টুটুল, মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক রিজভী জামান, সিভিল সার্জন ডাক্তার মো. শামীম কবির অন্যরা। এর আগে সকাল ১০টায় স্থানীয় নোমানী ময়দানে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে অতিথিদের নিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন সাকিব আল হাসান।
০৭ মার্চ, ২০২৪

মালয়েশিয়ায় দূতাবাসের উদ্যোগে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালিত
মালয়েশিয়ায় রাজধানী কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের দূতাবাসের উদ্যোগে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) রাজধানী কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। পরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামিম আহসান।  এ সময় হাইকমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারিবৃন্দ ও কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া অনুষ্ঠান শেষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।  সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে দিবসটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ইউনেস্কো স্বীকৃত বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুধুই একটি ভাষণ নয়, এ ভাষণ পুরো জাতিকে দিক নির্দেশনা দিয়েছিল। এ ভাষণের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণাও দিয়ে গেছেন বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।   এ সময় দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন হাইকমিশনের কাউন্সেলর (কনসুলার) জি এম রাসেল রানা ও প্রথম সচিব (বাণিজ্য) প্রণব কুমার ঘোষ।  প্রথম সচিব (রাজনৈতিক) রেহানা পারভিনের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ভাষণের কিছু অংশ দেখানো হয়।  এ সময় স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর শহীদদের স্মরণে দোয়া ও মোনাজাত এবং এক মিনিটের নিরাবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকর্মী, মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও শ্রমিকলীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
০৭ মার্চ, ২০২৪

৭ মার্চ স্মরণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে বিটিআরসি চেয়ারম্যানের শ্রদ্ধা
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ স্মরণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ। বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) সকালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি। এ সময় স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ, লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের কমিশনার মো. আমিনুল হক, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমান, লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের মহাপরিচালক আশীষ কুমার কুন্ডু, সচিব (বিটিআরসি) নূরুল হাফিজ এবং কমিশনের বিভিন্ন বিভাগের পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত, ৭ মার্চ বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার তৎকালীন রমনা রেসকোর্স ময়দানের (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসভায় ঐতিহাসিক ভাষণে জাতিকে স্বাধীনতার প্রশ্নে উদ্দীপ্ত করেছিলেন। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’-এ দৃপ্ত উচ্চারণে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের নিষ্পেষণ থেকে বাঙালির মুক্তির মূলমন্ত্র ঘোষণা করেছিলেন তার ভাষণে। ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো।
০৭ মার্চ, ২০২৪

‘৭ই মার্চ ও বঙ্গবন্ধু গোটা পৃথিবীর অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে’
যতদিন পৃথিবীতে মুক্তির সংগ্রাম থাকবে ততদিন ৭ই মার্চের ভাষণ ও বঙ্গবন্ধু শুধু আমাদের জন্য নয় গোটা পৃথিবীর কাছে অনুপ্রেরণা হিসাবে থাকবে। বাঙালির স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ছয় মার্চ অত্যন্ত চাতুর্যতার সঙ্গে ভাষণে বলেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবাবের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তিনি জানতেন, তিনি যদি সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন তাহলে সেই সময়ের রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানী বাহিনী এই সভাকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সভা অ্যাখ্যা দিয়ে আমাদের স্বাধীনতার আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে পারে ভেবেই সরাসরি ওইদিন স্বাধীনতার ঘোষণা না দিয়েও কৌশলে বাঙালিকে স্বাধীনতার ডাক দেন।  বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) বেলা ১২টায় রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ আয়োজিত ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ গুরুত্ব বিবেচনায় এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ নির্মাণে নায়ক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।  প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ৭ই মার্চ ছিল হাজার বছরের বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। ৭৫ এর পরবর্তী সময়ে আমাদের এই ভাষণ শুনতে দেওয়া হয়নি। তখন এই ভাষণ শোনার জন্য আমরা নানা রকম অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছি। ফিদেল কাস্ত্রো হয় তো এই জন্যই বলেছিলেন আমি হিমালয় দেখিনি আমি একজন শেখ মুজিবকে দেখেছি। আজকের 'এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় প্রত্যেক আলোচকের আলোচনা সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এখানে যারা বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাদের আলোচনা অনেক তথ্যবহুল যা জাতির জানা উচিত।  প্রধান অতিথি ছাড়াও অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন অধ্যাপক ড. উত্তম কুমার বড়ুয়া, রফিকুল ইসলাম,বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য বিশ্বজিত চন্দ্র চন্দ্, বঙ্গবন্ধু গবেষক মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, জেষ্ঠ সাংবাদিক শফিকুল করিম সাবু বলেন, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য  অধ্যাপক বিশ্বজিত ঘোষ প্রমুখ। আলোচনা সভার সভাপতিত্বকালে সম্প্রতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ১৯৭১ সাল ৭ই মার্চ বাঙালি জাতির জন্য এক ঐতিহাসিক দিন ছিল। এদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অত্যন্ত সুকৌশলে একটি জাতির স্বাধীনতার ইস্তেহার ঘোষণা করেছিলেন। আমি তখন ২১ বছরের যুবক আমিও অন্যান্য তরুণদের মত সেই সময় রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত হয়েছিলাম। শুনেছিলাম তার অগ্নিঝরা কণ্ঠস্বর। ভাবা যায় ১০ লক্ষ মানুষের সামনে কোনরকম প্রস্তুতি ছাড়া এবং সুকৌশলে একটি জাতির স্বাধীনতা আন্দোলনকে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন বলে চালিয়ে দেওয়ার চক্রান্তে থাকা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সামনে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রস্তুতির আহ্বান জানালেন।  অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সম্প্রীতি বাংলাদেশের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল। 
০৭ মার্চ, ২০২৪
X