রাজকুমার নন্দী
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:১৪ এএম
আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৩৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকা উত্তর বিএনপির সভাপতি হতে পারেন আমিনুল, সঙ্গী কে

বহাল থাকছে দক্ষিণের কমিটি
ঢাকা উত্তর বিএনপির সভাপতি হতে পারেন আমিনুল, সঙ্গী কে

শিগগির দলের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার নতুন কমিটি দেবে বিএনপি। বিগত কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর এরই মধ্যে ১১ দিন অতিবাহিত হয়েছে। কাদের নতুন কমিটিতে জায়গা দেওয়া হবে, তা নিয়ে এখন যাচাই-বাছাই চলছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহের মধ্যে উত্তরে নতুন আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। দল এবং নেতাকর্মীদের কাছে যারা পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি (ক্লিন ইমেজ) হিসেবে পরিচিত, তাদেরই নতুন কমিটিতে প্রাধান্য দেওয়া হবে। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের মহানগর উত্তরে এরই মধ্যে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের মধ্য থেকেই নেতৃত্ব আসতে পারে।

এদিকে মহানগর উত্তর বিএনপির কমিটি ভেঙে যাওয়ায় দক্ষিণের কমিটিও বিলুপ্ত করা হতে পারে বলে নেতাকর্মীদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়। কমিটি যাতে ভেঙে দেওয়া হয়, সেজন্য দক্ষিণ বিএনপির সাবেক নেতাদের একটি অংশ জোরেশোরে তৎপরতাও শুরু করেন। তবে মহানগর দক্ষিণ বিএনপির কমিটির ব্যাপারে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সন্তুষ্ট বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে। ওই সূত্রের দাবি, রফিকুল আলম মজনু ও তানভীর আহমেদ রবিনের নেতৃত্বাধীন মহানগর দক্ষিণ বিএনপির দুই সদস্যের আংশিক আহ্বায়ক কমিটি আপাতত ভাঙছে না, সেখানে কোনো পরিবর্তনও আসছে না। এরই মধ্যে দক্ষিণ কমিটির এই দুই নেতার সঙ্গে তারেক রহমান কথা বলেছেন। তাদের যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা এবং জনসম্পৃক্ততা আরও বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন।

জানা গেছে, মহানগর উত্তরে নতুন কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বিএনপিতে নানামুখী তৎপরতা, তদবির, জল্পনা-কল্পনা চলছে। দলের ঢাকা মহানগরকেন্দ্রিক রাজনীতিতে যারা সক্রিয়, তারা নিজ নিজ বলয় থেকে নেতৃত্ব উঠিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তারা। একই সঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও তার নিজস্ব চ্যানেলে যোগ্য ও ক্লিন ইমেজের নেতৃত্বের ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন। বিশেষ করে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই, দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়—এমন নেতাদের নেতৃত্বে আনতে কাজ করছেন।

বিএনপির দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা বলেন, তারেক রহমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে চান। এ বিষয়টি মাথায় রেখে সম্পূর্ণ ক্লিন ইমেজের নেতাদের দিয়ে মহানগর উত্তর বিএনপির নতুন কমিটি গঠন করতে চান তিনি।

মাত্র আড়াই মাসের ব্যবধানে গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে বিএনপি। এর আগে গত ৭ জুলাই সাইফুল আলম নিরবকে আহ্বায়ক ও আমিনুল হককে সদস্য সচিব করে দুই সদস্যের এই আংশিক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, হাইকমান্ডের কাছে আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিভিন্ন অভিযোগ এসেছে। লিখিত এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই দল ব্যবস্থা নিয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিশৃঙ্খলা রোধ এবং সাংগঠনিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ গ্রহণ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে সারা দেশে দল ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের তিনশর অধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়। কয়েকটি জেলা কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির কমিটিও বিলুপ্ত করে হাইকমান্ড। দলটির একাধিক দায়িত্বশীল নেতার মতে, বিশৃঙ্খলা রোধে তারেক রহমানের এমন কঠোর অবস্থান দল ছাড়াও দেশের মানুষের কাছে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।

সংগঠনকে গতিশীল এবং নেতৃত্বের বিকাশে ২০১৭ সালের এপ্রিলে ঢাকা মহানগর বিএনপিকে দুই ভাগে ভাগ করে কমিটি দেওয়া হয়। উত্তরে এমএ কাইয়ূমকে সভাপতি এবং আহসানউল্লাহ হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এরপর ২০২১ সালের আগস্টে আমানউল্লাহ আমানকে আহ্বায়ক ও আমিনুল হককে সদস্য সচিব করে উত্তর বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহানগর উত্তরের নতুন কমিটিতে বিদায়ী কমিটির আহ্বায়ক সাইফুল আলম নিরবের তেমন সম্ভাবনা নেই। তবে নতুনভাবে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল এবং বিলুপ্ত কমিটির সদস্য সচিব আমিনুল হক নতুনভাবে আলোচনায় আছেন। আমিনুলের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, ঢাকা উত্তরের প্রতিটি ওয়ার্ডেই আমিনুলের সাংগঠনিক অবস্থান ভালো। জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক এই অধিনায়ক দলের নেতাকর্মীদের কাছে ‘ক্লিন ইমেজসম্পন্ন’ হিসেবেও পরিচিত।

জানতে চাইলে আমিনুল হক কালবেলাকে বলেন, ‘মহানগর উত্তর বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে জড়িত রয়েছি। এর আগেও সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেছি। নেতাকর্মীদের সুখে-দুঃখে তাদের পাশে রয়েছি। সবসময়ই সততার সঙ্গে কাজ করেছি। আগামীতেও আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হলে তা শতভাগ নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে পালন করব। এ ক্ষেত্রে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাকেই স্বাগত জানাব।’

মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এম কফিল উদ্দিনও নেতৃত্বের আলোচনায় রয়েছেন। তিনি একাধারে ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদ। স্থানীয়ভাবে তার পারিবারিক একটি অবস্থান ও সুনাম রয়েছে। তিনি উত্তরের সাধারণ সম্পাদক পদে নেতৃত্বে আসতে চান।

জানতে চাইলে কফিল উদ্দিন বলেন, ‘দলের প্রয়োজনে হাইকমান্ড যখন যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা সবসময় সততার সঙ্গে পালন করার চেষ্টা করেছি এবং আজীবন করে যাব। বিগত সময়ের মতো এবারও দলের শীর্ষনেতা সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।’

আলোচনায় আছেন এসএম জাহাঙ্গীর হোসেনও। তিনি ঢাকা মহানগর উত্তরে ছাত্রদল ও যুবদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২০ সালে ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নও পান তিনি। সেই হিসেবে উত্তরে তার একটা শক্ত অবস্থান আছে। মহানগরের নেতৃত্বের জন্য অনেকেই তাকে যোগ্য মনে করছেন।

এসএম জাহাঙ্গীর জানান, মহানগর উত্তরের রাজনীতির সঙ্গে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে জড়িত রয়েছেন। দল যখন যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা তিনি শতভাগ সততার সঙ্গে পালন করার চেষ্টা করেছেন। দল যদি তাকে ঢাকা মহানগর উত্তরের নেতৃত্বের জন্য যোগ্য মনে করে, তিনি আস্থার সঙ্গে পালন করবেন।

এ ছাড়া সভাপতি পদে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এমএ কাইয়ূমও আলোচনা রয়েছেন। তিনি উত্তরে কাউন্সিলর ছিলেন। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যুবদলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি মামুন হাসান, মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, এজিএম শামসুল হক, মোস্তফা জামান, আক্তার হোসেন, সাবেক সদস্য এবিএমএ রাজ্জাকের নামও শোনা যাচ্ছে।

জানতে চাইলে মোস্তফা জামান কালবেলাকে বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে মহানগর উত্তর বিএনপির রাজনীতি করছি। দলের দুঃসময়ে দলের জন্য কাজ করেছি, নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমার নামে প্রায় দেড়শ মামলা। তিনবার জেল খেটেছি। আশা করি, দল আমার কাজের মূল্যায়ন করবে।’

বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নেতৃত্বের জন্য অনেক নেতাই আলোচনায় থাকলেও ‘ক্লিন ইমেজের’ আমিনুলের ব্যাপারে দলের হাইকমান্ড অত্যন্ত ইতিবাচক। এরই মধ্যে মহানগরীর নেতাদের সঙ্গে মিটিংয়ে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন তারেক রহমান। আমিনুলকে সভাপতি ধরে সাধারণ সম্পাদক খুঁজছেন তিনি। এক্ষেত্রে এসএম জাহাঙ্গীর সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। অনেকেই ধারণা করছেন, শেষ মুহূর্তে দলের কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ কোনো নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া না হলে উত্তরে আমিনুল-জাহাঙ্গীর কমিটি হওয়ার সম্ভাবনাই উজ্জ্বল।

নতুন কমিটি প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কালবেলাকে বলেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যখন উপযুক্ত মনে করবেন, তখনই কমিটি দেবেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জাকসু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছাত্রদল-শিবিরসহ ৮ প্যানেল

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১১ সেপ্টেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি

৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচন আজ

আত্মহত্যা প্রতিরোধে জাতীয় সমাবেশ

সুখে-দুঃখে জনগণের পাশে থাকার অঙ্গীকার বিএনপি নেতা আনোয়ারুজ্জামানের

ডাকসুতে শিবিরের নিরঙ্কুশ জয়, নেপথ্যে কয়েক কারণ

সংকটে আন্তঃধর্মীয় সহযোগিতা বিশেষভাবে জরুরি : কার্ডিনাল কোভাকাদ

ডাকসুতে বিজয়ীদের শুভেচ্ছা হাসনাতের, জানালেন নিজের প্রত্যাশা

রাত পোহালেই ৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচন

১০

ফরিদা পারভীন লাইফ সাপোর্টে

১১

জাকসু নির্বাচনে জিতুর পাশে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ

১২

কাতারের পর মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশে ইসরায়েলের হামলা, নিহত ৯

১৩

পান্থকুঞ্জ-হাতিরঝিল অংশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা

১৪

ভারতের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুললেন ক্ষমতাচ্যুত কেপি শর্মা

১৫

সাবেক ডিসি সুলতানাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত

১৬

সেন্টমার্টিন থেকে ৪০ জেলেকে ধরে নিয়ে গেল আরাকান আর্মি

১৭

হাবিপ্রবিতে জুলাই আন্দোলনে হামলাকারী ৭৯ জনের নাম প্রকাশ

১৮

মৌসুমি বায়ু সক্রিয়, ৪ বিভাগে ভারী বৃষ্টির শঙ্কা

১৯

অলিতে গলিতে ব্যানার-ফেস্টুন নগরীর সৌন্দর্যহানি, রাজস্ব ক্ষতি

২০
X