সৌরভ লোধ, বরুড়া (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:৪৯ এএম
অনলাইন সংস্করণ

গ্রামীণ পরিবেশে ইউরোপীয় আদলে ভূমিহীনদের জন্য তৈরি গ্রাম শামীমপুর

ইউরোপ-আমেরিকার গ্রামের আদলে তৈরি শামীমপুর। ছবি : কালবেলা
ইউরোপ-আমেরিকার গ্রামের আদলে তৈরি শামীমপুর। ছবি : কালবেলা

‘স্বপ্নের আশ্রয়ণ’ নামের হলেও স্থানীয়রা ভালোবেসে গ্রামটির নাম দিয়েছেন শামীমপুর। এ গ্রামটি সম্পূর্ণ ইউরোপ-আমেরিকার গ্রামের আদলে তৈরি করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের বুকে প্রথম স্মার্ট গ্রাম বলে দাবি স্থানীয়দের।

কুমিল্লার বরুড়া উপজেলা সদর থেকে ১২ কিমি পশ্চিমে ঝলম ইউনিয়নের চেঙ্গাচাল ও ফরিদপুর গ্রামের পাশে অবস্থান এ গ্রামটির। প্রতিষ্ঠা করেছেন এসকিউ গ্রুপের চেয়ারম্যান, শিল্পপতি এজেড এম শফিউদ্দিন শামীম, যা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত গ্রামটি তৈরিতে ৪ একর জমি কেনেন শিল্পপতি শফিউদ্দিন শামীম। পরে তা ভরাট করা হয় মাটি দিয়ে। দোতলা ফাউন্ডেশন দেওয়া একতলা বিশিষ্ট মোট ৬৫টি ইউনিট করা হয়। প্রতিটি বাসস্থানের আয়তন ১৩৫০ বর্গফুট। প্রতিটি ইউনিটে ২টি থাকার কক্ষ, ১টি গোসলখানা, ১টি টয়লেট, ১টি রান্নাঘর ও ১টি টিউবওয়েল রয়েছে, যা ছোট একটি পরিবার বসবাসের জন্য খুবই উপযোগী। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির পাশাপাশি ইউনিটগুলো তৈরিতে দেওয়া হয়েছে নান্দনিকতার ছোঁয়া। সিরামিক ব্রিকসে নির্মিত এসব ভবনের ওপরে রয়েছে ছাদ। ব্যবহার করা হয়েছে উন্নতমানের নির্মাণসামগ্রী। এ ছাড়া এখানে বসবাসকারী ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য করা হয়েছে অত্যাধুনিক খেলার মাঠ। পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা, পয়োনিষ্কাশনের বিশেষ ড্রেনেজ, সেপটিক ট্যাংকসহ যাবতীয় অত্যাধুনিক সব কিছু। সড়কের পাশে লাগানো হয়েছে ফুল ও খেজুর গাছ, যা সহজেই দৃষ্টি কাড়ে সবার।

শুধু ইউনিটই নয়। গ্রামটিতে ঠাঁই পাওয়া মানুষদের জন্য গ্রামে ঢোকার মুখেই তৈরি করা হয়েছে দোতলা একটি মার্কেট। মার্কেটটির নিচতলায় করা হয়েছে ১০টি দোকান। ওপরের তলায় কমিউনিটি সেন্টার। গ্রামে বসবাসকারী মানুষের বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হবে এ কমিউনিটি সেন্টারটি।

গ্রামটির নির্মাণের সকল কাজ শেষ। বৈদ্যুতিক সংযোগ টানানো হয়েছে। শুধু মিটার আর সংযোগ স্থাপন হলেই পরিপূর্ণ হবে গ্রামটি। তবে ইতোমধ্যেই প্রায় ২৫টি পরিবার বুঝে নিয়েছেন তাদের আবাসন। কেউ কেউ মালপত্র আনছেন। অনেকে ইতোমধ্যে গ্রামটিতে বসবাস শুরু করেছেন। এই গ্রামে বিনামূল্যে জমিসহ দালান পেয়ে আনন্দের যেন কমতি নেই ঠাঁই পাওয়া মানুষের।

এখানে ঠাঁই পাওয়া অশ্বদিয়া গ্রামের আব্দুল মমিন কালবেলাকে জানান, আমি একটি বাজারে নৈশপ্রহরীর কাজ করে সংসার চালাই। বাবার ১ তোলা সম্পত্তি নেই। কয়েক বছর আগে জটিল রোগে আক্রান্ত হই। পরিবার নিয়ে খুব সমস্যায় ছিলাম। কিন্তু শামীম সাহেবের দয়ার কারণে আমাকেও একটি ঘর দেওয়া হয়েছে। আমি কোনোদিন ভাবতে পারিনি স্ত্রী সন্তান নিয়ে এমন একটা বিল্ডিংয়ে থাকতে পারব। আল্লাহ পাক শামীম সাহেবকে আরও বেশি ধনসম্পদ দান করুক, যেন আরও মানুষের উপকার করতে পারেন তিনি।

পাশের ইউনিটে থাকা আরেক নারী বাসিন্দা বলেন কালবেলাকে জানান, আমি আজ ১১ বছর ধরে স্বামী পরিত্যক্তা। আমার দুটো সন্তান নিয়ে খুব বিপাকে আছি। থাকার মতো কোনো জায়গা নেই। আমার মেয়ে খুব মেধাবী। শামীম সাহেব স্কুল থেকে আমার মেয়ের নাম নিয়ে পরে আমাদেরকে একটি ঘর দিয়েছেন এখানে। আমার মেয়ে এখান থেকে পড়াশোনা করে মানুষের মতো মানুষ হবে। শামীম সাহেবের কাছে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা।

জাকির হোসেন নামের এক রিকশাচালক বলেন, রিকশা চালিয়ে কোনোরকমে সংসার চালাই। সহায়সম্বলহীন পরিবারে বড় হয়ে এখন নিজেও পরিবার চালাচ্ছি। শামীম সাহেব অনেক দয়ালু মানুষ। তিনি নিজের টাকায় এতগুলো বাড়ি তৈরি করে আমাদের ঠাঁই দিয়েছেন। বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে এসেছি দেখাতে। খুব ভালো লাগছে।

মনিরুজ্জামান খোকন নামের এক সহকারী শিক্ষক এই বিষয়ে কালবেলাকে বলেন, বাংলাদেশে অনেক বিত্তশালী আছেন। কিন্তু শফিউদ্দিন শামীম সাহেবের মতো এত বড় হৃদয়ের মানুষ খুব একটা নেই। তার উদাহরণ এই শামীমপুর গ্রাম। এখানে এলে মনে হয় না এটি বাংলাদেশের কোনো গ্রাম। মনে হবে ইউরোপ-আমেরিকার কোনো এলাকায় এসেছি। সত্যিই তিনি মহান মানুষ। নিজের টাকায় জমি কেনাসহ এ টু জেড সকল কাজ শেষ করে অসহায় মানুষকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন একেবারে বিনামূল্যে। তার দ্বারাই সম্ভব বরুড়া উপজেলাকে একটি স্মার্ট উপজেলা হিসেবে রূপান্তর করার।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লার সাবেক সভাপতি আলমগীর খান বলেন, আপনার কাছে যে গ্রামটির কথা শুনলাম, আমার ইচ্ছে করছে এখনই গিয়ে দেখে আসি। আমি মনে করি যে ব্যক্তি গ্রামটি নির্মাণ করেছেন, তার মতো করে দেশের সকল বিত্তবানদের কোনো না কোনো ভূমিকা রাখা উচিত একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে। শফিউদ্দিন শামীমকে অনেক ধন্যবাদ দিলেও কম হবে।

গ্রামটির প্রতিষ্ঠাতা শিল্পপতি এজেড এম শফিউদ্দিন শামীম আমাদের বলেন, আমি দেখেছি অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রী আছে আমাদের সমাজে। যারা সঠিক পরিবেশ না থাকায়, আবাসন না থাকায় অল্প বয়সে কর্মজীবনকে বেছে নিচ্ছে। আমি এমন মেধাবীদের তুলে আনার জন্য প্রকল্পটির পরিকল্পনা শেষ করেছি। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা দিয়েছেন ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের। আমি সেই লক্ষ্যে একটি আধুনিক, স্মার্ট বরুড়া উপজেলা নির্মাণে হাত দিয়েছি। আপনারা দোয়া করবেন যেন এ জনপদকে আমার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে নিয়ে যেতে পারি। সারাদেশের মধ্যে আমার বরুড়া উপজেলা হবে একটি মডেল উপজেলা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাংলাদেশ দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছেন সাকিব

এবার গোপালগঞ্জে ইউএনওর গাড়িতে হামলা-ভাঙচুর

ইসির ওয়েবসাইট থেকে সরানো হলো ‘নৌকা’ প্রতীক

আবু সাঈদের কবরে শ্রদ্ধা

লিঙ্গসাম্যের জন্যই মূর্খ তৈরি হচ্ছে: কঙ্গনা রানাউত

আজ দেশে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে

বৃষ্টিতে শিশুর যত্নে সহজ কিছু পরামর্শ

১৬ জুলাই / আবু সাঈদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে ক্ষোভের বিস্ফোরণ

মহেশপুর সীমান্তে ৭ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর বিএসএফের

ঢাকায় বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অফিসের নতুন বার্তা

১০

গোপালগঞ্জে পুলিশের ওপর নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের হামলা

১১

যে তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন ফাতিমা

১২

দুর্নীতি দমন কমিশনের নতুন সচিব খালেদ রহীম

১৩

গোপালগঞ্জে পুলিশের গাড়িতে আগুন

১৪

একযোগে গাজার বিভিন্ন এলাকায় হামলা, নিহত ৬১

১৫

চুরি করতে গিয়ে পুলিশ সদস্যের স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ

১৬

টিভিতে আজকের খেলা

১৭

যমুনা গ্রুপে বিশাল নিয়োগ

১৮

বৃষ্টি যেন সবজিচাষিদের কান্না হয়ে ঝরছে

১৯

বর্ষায় বন্ধুদের সঙ্গে কোথায় ঘুরতে যাবেন?

২০
X