কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

আ.লীগকে বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে : জামায়াত আমির  

কোয়ালিশন ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস ইন বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। ছবি : কালবেলা
কোয়ালিশন ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস ইন বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। ছবি : কালবেলা

যুক্তরাজ্য সফররত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘সত্য একবার বললেই প্রতিষ্ঠিত হয় কারণ সেটা সত্য। আর মিথ্যা প্রতিষ্ঠিত করতে বারবার বলতে হয়। আওয়ামী লীগ আত্মস্বীকৃত ফ্যাসিস্ট। এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য। ১৬ বছর দেশের মানুষের সঙ্গে আওয়ামী লীগ যে আচরণ করেছে তার জন্য তাদের বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে।

তারা মানুষের অধিকারই শুধু হরণ করেনি, তারা দেশে এক অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছিল। তারা চোখের সামনে মানুষকে হত্যা করেছে। আমরা চাই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের বিচার হোক।’ ডা. শফিক আরও বলেন, ‘আমি নিজেও অন্যায় বিচারের একজন ভিকটিম। আমাকে গ্রেপ্তার করে বলা হয়েছে, আমি না কি বিছানার নিচে ককটেল নিয়ে ঘুমিয়েছি!’

রোববার (১৭ নভেম্বর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় লন্ডনের রয়েল রিজেন্সিতে কোয়ালিশন ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস ইন বাংলাদেশ কর্তৃক তার সম্মানে আয়োজিত এক ‘সিভিক রিসিপশন’ (নাগরিক সংবর্ধনা) অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এসময় বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে পাচারকৃত টাকা বাংলাদেশে ফেরত আনার ব্যাপারে যুক্তরাজ্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন জামায়াতের আমির। পাচারকৃত টাকা ফেরত পেলে বাংলাদেশের মানুষ কৃতজ্ঞ থাকবে।

সাবেক ছাত্র নেতা আবু সালেহ ইয়াহইয়া ও শামসুল আলম গোলাপের পরিচালনায় পূর্ব লন্ডনের দ্য রয়েল রিজেন্সি হলে অনুষ্ঠিত ওই নাগরিক সংবর্ধনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কমিউনিটি নেতা সিরাজুল ইসলাম শাহীন। আরও উপস্থিত ছিলেন টাওয়ার হেমলেটস কাউন্সিলের সাবেক স্পিকার কাউন্সিলর জাহেদ চৌধুরী, সাবেক কেবিনেট মেকাউন্সিলর কবির হোসাইন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে কোরআন তেলাওয়াত করেন হাফিজ কাজি হামিদুল হক। শিল্পী নওশাদ মাহফুজ ও কামাল হোসাইনের নেতৃত্বে ইসলামিক নাশিদ পরিবেশন করা হয়। লন্ডনের বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, বিপুল সংখ্যক সাধারণ জনতা, নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের উপস্থিতিতে নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি এক বিশাল গণজমায়েতে রূপলাভ করে। এ সময় অনুষ্ঠানের আয়োজক কোয়ালিশন ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস ইন বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে জনাব মাহফুজ নাহিদের নেতৃত্বে ফুলের তোড়া দিয়ে ডা. শফিকুর রহমানকে বরণ করে নেওয়া হয়।

জামায়াত আমির বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর ৫৭ জন দেশপ্রেমিক চৌকষ কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ তাদের খুনের রাজনীতি শুরু করেছিল। এর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়ার হীন প্রচেষ্টা চালায় এবং একইসঙ্গে বিডিআর বাহিনীকেও শেষ করে। এই দুই খুনের মিশনের পর তারা আঘাত করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উপর। অনেকেই ভেবেছিলেন, এ রকম পরিস্থিতি যদি জামায়াতের ওপর দিয়ে যায় তবে দেশ বুঝি শান্ত হয়ে যাবে। কিন্তু তা হয়নি।

ডা. শফিকুর রহমান যুক্তরাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগের দ্বারা নির্যাতিতদের আশ্রয় এবং নাগরিকত্ব দেওয়ায় আমি যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং আশা প্রকাশ করছি আপনারা কোনো দুষ্কৃতকারীকে প্রশ্রয় দেবেন না। তিনি প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আপনারা আমাকে সংবর্ধনা নিয়ে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে সম্মানিত করেছেন। আপনারা প্রবাসে থেকে ফ্যাসিবাদের প্রতিবাদ করেছেন। রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছেন। এজন্য আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

জামায়াতের আমির বলেন, আমরা একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিক স্বীয় মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করবে। যেখানে আমাদের নারীরা মর্যাদা ও নিরাপত্তার সাথে বসবাস করবে। আমাদের বিশাল ম্যানপাওয়ারকে আমাদের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

জামায়াতের নেতারাকে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে শহীদ করা হয়েছে উল্লেখ করে শফিকুর রহমান বলেন, বেগম খালেদা জিয়া, সাবেক আমিরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামীসহ জামায়াতের সকল নেতাদের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ ছিল মিথ্যা ও বানোয়াট। এটা প্রমাণিত হয়েছে।

তিনি ২০২৪ এর জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের ভয়াবহ স্মৃতি উল্লেখ করে বলেন, ছাত্ররা তাদের অধিকারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিল, পরে জনতা তাদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে আসে। শহীদ আবু সাঈদ দু-হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দিয়ে বলেছিল, হয় অধিকার দাও, না হয় গুলি কর। আহত ও পঙ্গু হয়েছে হাজারো ছাত্র-জনতা। ছাত্র-জনতার এমন ত্যাগের বিনিময়েই দেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে। এখন আমাদেরকে আহতদের সুচিকিৎসার পাশাপাশি আহত ও নিহতদের পরিবারকে পুনর্বাসিত করতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন কমিউনিটির পরিচিত মুখ মুফতি সদরুদ্দিন, ইসলামিক স্কলার মওদুদ হাসান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ইউরোপের মুখপাত্র ব্যরিস্টার আবু বকর মোল্লা, ড. হাসনাত হোসাইন এমবিই, ব্যারিস্টার আতাউর রহমান, ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ, মুসলিম ভয়েস-এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মাহফুজ নাহিদ, মির্জা আসহাব বেগ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মাহি ফেরদাউস জলিল, সাংবাদিক রেজা আহমেদ চৌধুরী শুয়েব, লন্ডনের টাওয়ার হেমলেটস কাউন্সিলের স্পিকার সাইফুদ্দিন খালেদ, অলি উল্লাহ নোমান, ইসলামিক স্কলার মাওলানা সাদেকুর রহমান, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মোমিন, নির্যাতিত সাংবাদিক এনাম চৌধুরী প্রমুখ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নারীসহ দুজনকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও প্রচার, চাঁদা দাবি

পুলিশকে কামড়ে পালানো সেই ছাত্রদল নেতা বহিষ্কার

ভূমিকম্পে ঢাকায় কোন এলাকা নিরাপদ, ‘ব্লাইন্ড ফল্ট’ কোথায়

চার বছর পর ফিরল শতবর্ষী প্যাডেল স্টিমার পিএস মাহসুদ

ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর হামলা

চাঁদপুরের বাণিজ্য সম্ভাবনা ও প্রতিবন্ধকতা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

পুলিশ আগে আমাকে গ্রেপ্তার করত, এখন স্যালুট দেয় : শাহজাহান চৌধুরী

সমাধান ছাড়াই শেষ হলো ববি ও বিএম কলেজের আলোচনা

দেশে আর কোনো স্বৈরশাসকের জন্ম হবে না : সেলিমুজ্জামান

আটকে গেল ১৩ শিক্ষার্থীর জজ হওয়ার স্বপ্ন

১০

যৌন হয়রানীর অভিযোগে মামলা করলেন শুটার রত্না

১১

মাতৃমৃত্যুর ৫৫ শতাংশই হয় প্রসব পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায়

১২

মজলুম থেকে জালিম হইয়েন না : আসিফ মাহমুদ

১৩

ইসলামিসহ কয়েকটি দল নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে : আমিনুল হক

১৪

বন্যা-ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাঁড়াল শ্রীলঙ্কা দল

১৫

দেশজুড়ে বিএনপির দোয়া মাহফিল / খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ‘সংকটময়’

১৬

বিএনপির আরেক নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

১৭

যুক্তরাষ্ট্র ভিসা না দেওয়ায় বিশ্বকাপ ড্র বয়কট করছে ইরান

১৮

আরাকান আর্মির মাদক সন্ত্রাসে বিপর্যস্ত দেশ

১৯

বিমানবন্দরে যাত্রীর লাগেজ চুরি, ব্যাখ্যা দিল কর্তৃপক্ষ

২০
X