কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০১:৩১ পিএম
আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০২:১৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ঐক্য-ন্যায়ের কাছে বন্দুকের শক্তি টিকতে পারে না : মঈন খান

ডিআরইউতে এক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেন ড. মঈন খান। ছবি : কালবেলা
ডিআরইউতে এক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেন ড. মঈন খান। ছবি : কালবেলা

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, মানুষের ঐক্য ও ন্যায়ের শক্তির কাছে বন্দুকের শক্তি টিকতে পারে না। সুতরাং সরকারকে বলব, গণতন্ত্রের পথে এসে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দিন। না হলে পরিণতি ভালো হবে না।

সোমবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘নব্য বাকশালের মূলোৎপাটনে শহীদ জিয়ার রাষ্ট্রদর্শন’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভাটির আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)।

ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান। অনুষ্ঠানটির সার্বিক তত্ত্বাবধান করেন সংগঠনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান। ইউট্যাবের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক নূরুল ইসলামের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী, ইউট্যাবের সহসভাপতি একেএম মতিনুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল কালাম সরকার, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক ড. তৌফিকুল ইসলাম মিথিল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আতাউর রহমান, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জামশেদ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক শের মাহমুদ প্রমুখ। এসময় ইউট্যাবের কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মঈন খান বলেন, গুলি, বন্দুক ও টিয়ারগ্যাস দিয়ে মানুষকে পরাভূত করা যাবে। কিন্তু জনগণের ভালোবাসা পাওয়া যাবে না। গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। যা বিশ্বের সকল গণমাধ্যমে বলা হয়েছে। তবুও সরকার বুঝতে পারছে না যে, তাসের ঘরের মতো তারা কখন ধসে যাবে!

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে না। তারা একটি দলের সরকার এবং লগি-বৈঠার রাজনীতি করে। তারা দেশের সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে কুক্ষিগত করে রেখেছে। তারা সংবিধানের কথা বলে প্রতারণা করে যাচ্ছে। উন্নয়ন দিয়ে জনগণের মন ভুলিয়ে রাখা যায় না।

তিনি বলেন, কোন সংবিধানে লেখা আছে যে, আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ সরকার কুক্ষিগত করতে পারবেন?

ড. আবদুল মঈন খান বলেন, একটি দেশ যখন গণতন্ত্রহীনতায় নিপতিত হয় তখন কেউ বসে থাকতে পারে না। শিক্ষকসহ সকল পেশাজীবীদের এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা নব্য বাকশাল কথা বাকশাল-২ এর পদ্ধতির মূলোৎপাটন করতে চাই। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের যে দর্শন সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে। এই বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মধ্যে কিন্তু মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, চাকমা, গারো সকল উপজাতি ঐক্যবদ্ধ ছিলো। আমরা বিভেদের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না।

মঈন খান বলেন, এখন তো কথা বলার সময় না। এখন আমাদের প্রতিবাদ করার সময়। আমরা গত ১৫ মাস ধরে লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছি। সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি। কোনো সহিংস রাজনীতিতে বিএনপি বিশ্বাসী নয়। অথচ বিএনপিকে মৌলবাদী দল হিসেবে বিদেশিদের বোঝানোর বৃথা চেষ্টা করছে সরকার। কিন্তু সেটা বিদেশিরা খায় না। সে জন্যই তো গণতান্ত্রিক বিশ্বের দলগুলো ভুয়া নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেয়নি। বিশ্বের প্রভাবশালী গণমাধ্যম বাংলাদেশের বর্তমান ব্যবস্থাকে উত্তর কোরিয়া মডেল আখ্যা দিচ্ছে। আর সরকার বলছে তারা নাকি বাংলাদেশকে বিশ্বে রোল মডেল বানিয়েছে!

তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল আকাঙ্ক্ষা আজকে পূরণ হয়নি। দেশের স্বাধীনতার অস্তিত্ব বিলীন হতে চলেছে। পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করে যে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলাম সেই দেশে গণতন্ত্র নেই কেন? আমাদের ভবিষ্যৎ কোথায়? এই সরকারকে আপনারা প্রশ্ন করুন কেনো তারা গণতন্ত্র হত্যা করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করছে?

সাবেক এই মন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমান সরকার চায়- এ দেশের কেউ যেন তাদের সমালোচনা না করে। আমরা চাই বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে। মানুষের ন্যায়ের শক্তির কাছে বন্দুকের শক্তি টিকতে পারে না। গত ৭ জানুয়ারি কোনো নির্বাচন না হলেও সরকার ইলেকশনের নামে সিলেকশনের উৎসব পালন করেছে। অথচ সরকারি দলের লোকেরাও ভোট দিতে যায়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু এভাবে দেশ চলতে পারে না। পরাশক্তির বিভাজনের কারণে সরকার পার পেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু গণতান্ত্রিক দেশ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে বাংলাদেশের গণতন্ত্র মৃত।

মঈন খান আরও বলেন, ৭ জানুয়ারি ভোট বর্জনের আহ্বানে লিফলেট বিতরণের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেও বাধা দিয়েছে। এখন এই সরকারের বিরুদ্ধে কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি দিয়েছি। কিন্তু হুমকি এসেছে যে কালো পতাকা মিছিল করলে নাকি গত ২৮ অক্টোবর যেভাবে আক্রমণ করেছে সেভাবে করবে। আমরা কোন দেশে বাস করছি? সরকারকে বলব- গণতন্ত্রের পথে এসে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দিন। না হলে পরিণতি ভালো হবে না।

সভাপতির বক্তব্যে ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের সংকটে একজন ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। ৭১ সালে তার নেতৃত্বে দেশের মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধে লড়াই করে দেশ স্বাধীন করেছেন। এরপর ৭ নভেম্বর আবারও দেশের সংকটে তিনি দেশের হাল ধরেন। বাংলাদেশের সকল মানুষের একটি মাত্র পরিচয় বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জিয়াউর রহমান। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই দেশকে পেছনে নিয়ে গেছে। তারা কেবল নিজেদের উন্নয়ন করেন। যেখানেই ব্যর্থতা সেখানেই আওয়ামী লীগ।

কাদের গণি চৌধুরী বলেন, জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক। তিনি বাংলাদেশকে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্রে পরিণত করে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। যে কারণে বর্তমান আওয়ামী সরকার প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলার চক্রান্ত করছে। তবে ষড়যন্ত্র করে কাজ হবে না। জিয়াউর রহমান এ দেশের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন।

ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন কিন্তু সরকার গঠন হয়ে গেছে। কারণ কোনো বিরোধী দলের প্রার্থী তো ছিল না। এরপরও নিজেরা নিজেরা সংঘর্ষে জড়িয়ে শাসকদলেরই কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছেন। এটাকে তো সত্যিকারের গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বলা যায় না। যা ইতিমধ্যেই টিআইবি সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে। সুতরাং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ভোট বর্জন করে বিএনপি সঠিক কাজটি করেছে। আমি বিশ্বাস করি আওয়ামী লীগ সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে ইনশাআল্লাহ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ম্যানসিটি ছাড়ছেন আর্জেন্টিনার ‘নতুন মেসি’

‘৫১ লাখ টাকার স্টেডিয়াম ১৪ কোটিতে করার অনুমোদন’, কী ব্যাখ্যা দিলেন সচিব

জনপ্রিয় ব্রিটিশ পত্রিকায় বাংলাদেশ নারী দলের প্রশংসা

ইউআরপি ও ডিএলআর মডিউল প্রস্তুত / মালয়েশিয়ায় শ্রমিক যাবে শূন্য অভিবাসন ব্যয়ে

রাশিয়া শক্তিশালী, এটা মেনে নিতেই হবে : ট্রাম্প

ময়মনসিংহ থেকে বাস চলাচল শুরু, ভাঙচুরের ঘটনায় কমিটি

আইপিএলে ভালো করলেও ভারত দলে জায়গা নিশ্চিত নয়

ফেব্রুয়ারির কত তারিখে রোজা শুরু হতে পারে 

দুই শিক্ষককে প্রাণনাশের হুমকি প্রদানের ঘটনায় আহমাদুল্লাহর উদ্বেগ

সরকারি কর্মচারীরা দাফনের জন্য পাবেন টাকা

১০

দেড় যুগেও নির্মাণ হয়নি জহির রায়হান মিলনায়তন

১১

দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা, দুই উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি

১২

৫ অভ্যাসে বার্ধক্যেও ভালো থাকবে হৎপিণ্ড

১৩

অনশন প্রত্যাহার করল বেরোবি শিক্ষার্থীরা

১৪

‘ভুল চিকিৎসায়’ একদিনে দুই শিশুর মৃত্যু

১৫

সরকারি কর্মচারীদের জন্য সুখবর

১৬

কাভার্ডভ্যানের চাপায় মা-মেয়ের মৃত্যু

১৭

মাস্ক পরে হাসপাতালে দীপু মনি

১৮

ছাত্র সংসদের দাবিতে ‘আমরণ অনশন’ ঘিরে বিভক্ত বেরোবির শিক্ষার্থীরা

১৯

বন্ধুত্ব চাইলে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করুন : লায়ন ফারুক

২০
X