পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে ‘শেখ হাসিনা সরণি’ করার দাবি
রাজধানীর কুড়িল থেকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ পর্যন্ত নির্মিত পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের নাম ‘শেখ হাসিনা সরণি’ করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষ। তারা বলছেন, ৩০০ ফুট নামে পরিচিত দেশের সর্বাধুনিক এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের প্রস্তাবকারী, আধুনিক ডিজাইন থেকে শুরু করে উন্নত সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত ও জমি অধিগ্রহণে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তা ছাড়া গত ১৫ বছরে উন্নয়নে মাইলফলক অর্জন করেছে দেশ। কিন্তু নিজের নামে তিনি কিছু করেননি। তাই ধারাবাহিক উন্নয়নের স্মারক হিসেবে এই এক্সপ্রেসওয়ের নাম ‘শেখ হাসিনা সরণি’ করার দাবি যৌক্তিক।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাজ শেষ পর্যায়ে। এবার উদ্বোধনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পেতে প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে। আনুষ্ঠানিক সম্মতিও মিলেছে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত তারিখ চূড়ান্ত হয়নি বলে জানা গেছে।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কর্তকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী ১০ অথবা ১২ নভেম্বর প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করতে পারেন। ইতোমধ্যে উদ্বোধনের জন্য সার্বিক প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। উদ্বোধনী ফলক নির্মাণে তারিখের অপেক্ষায় আছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
প্রকল্পের নথি বলছে, অত্যাধুনিক এই এক্সপ্রেসওয়েতে থাকবে না কোনো ধরনের স্টপওভার পয়েন্ট, সিগন্যালিং সাইন কিংবা অন্য কোনো প্রতিবন্ধকতা। ছোট, মাঝারি ও বড়—সব ধরনের যানবাহন চলবে আপন গতিতে। গাড়িতে ৬-৭ মিনিটে বাধাহীনভাবে পার হওয়া যাবে সাড়ে ১২ কিলোমিটার পথ।
বলা হচ্ছে, এটি হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় এক্সপ্রেসওয়ে। এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকা। পশ্চিমের প্রগতি সরণি ও বিমানবন্দর সড়কের সঙ্গে পূর্বের ইস্টার্ন বাইপাসকে সংযুক্তকারী এই সড়ক এখন অন্যতম পর্যটন স্থাপনাও। আট লেনের এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে থাকছে ছয় লেনের সার্ভিসওয়ে। মোট ১৪ লেনের এই পথের দুই পাশে রয়েছে ১০০ ফুটের পাড় বাঁধানো খাল। সৌন্দর্য বাড়াতে ৭৩ হাজার ফলদ ও বনজ গাছ লাগানো হচ্ছে। ধীরে ধীরে সবুজে ছেয়ে যাচ্ছে পুরো এলাকা। বিগত ৫০ বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ধরে পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজনীয় সব রকমের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে প্রকল্পে। এক দিনের বৃষ্টিতে চার লাখ গ্যালন পানি জমা হলেও কোনো সমস্যা হবে না বলে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। সব মিলিয়ে এক সময়ের বিনোদন, ভ্রমণের কেন্দ্রস্থলে রূপ নেওয়া ৩০০ ফুট সড়ক এখন চেনার উপায় নেই। এক অন্যরকম আধুনিক শহরে রূপ নিয়েছে পুরো এলাকাটি। রাস্তার কাজ শেষ হওয়ায় যানবাহন চলাচল করছে। সংযোগ পথগুলোও ইতোমধ্যে খুলে দেওয়া হয়েছে।
গতকাল সরেজমিন স্থানীয় লোকজন, ব্যবসায়ী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা হয়। এ প্রকল্পের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সবাই। প্রকল্পের বেশিরভাগ অংশ পড়েছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায়। এই উপজেলায় রয়েছে সাতটি ইউনিয়ন। রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছালাউদ্দিন ভূঞা কালবেলাকে বলেন, আমরা আন্তরিকভাবে চাই এক্সপ্রেসওয়ের নাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে হোক। এজন্য কোথাও যদি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে আবেদন করতে হয়, তাতেও সম্মত আছি।
গত ১৫ বছরে দেশের যে উন্নয়ন করেছেন তাতে শেখ হাসিনার নাম হাজার বছর জাতি স্মরণ করবে উল্লেখ করে রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান ভূঁইয়া কালবেলাকে বলেন, পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের নাম যদি তার (শেখ হাসিনা) নামে নামকরণ হয়, তাহলে আমি খুশি, আমার ইউনিয়নের মানুষও খুশি।
জানতে চাইলে ভুলতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল হক ভূঁইয়া কালবেলাকে বলেন, উন্নয়নের স্মারক হিসেবে এই এক্সপ্রেসওয়ের নাম শেখ হাসিনার নামে হোক, এটা আমি চাই। তিনি উন্নয়ন করেছেন; কিন্তু নিজের নামে কিছু করেননি। আমার দাবি, তিনি সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে নিজের নামে এই রাস্তার নামকরণে সম্মতি দেবেন।
ডুবনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া কালবেলাকে বলেন, পূর্বাচলে প্রধানমন্ত্রীর নামে একটি স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হচ্ছে। তিনি যদি চান নিজের নামে রাস্তার নাম হবে, তাতে আপত্তি নেই।
ডুমনী বাজারের ব্যবসায়ী সোহাগ বলেন, এলাকাবাসী চায় প্রধানমন্ত্রীর নামে এই রাস্তাটি হোক। এটি যেন রাস্তা নয়, পর্যটন কেন্দ্র। বহু মানুষ বেড়াতে আসে নিয়মিত।
স্থানীয় শিক্ষার্থী বিপ্লব পাল বলে, কয়েক বছরের মধ্যে পুরো এলাকাটি বদলে দিয়েছে এই রাস্তা। এখন ৩০০ ফুট মানেই বিশ্বের আধুনিক পথের একটি।
বোটঘাট এলাকার অটোচালক মিজান জানান, এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের জন্য লিঙ্ক রোড খুলে দেওয়া হয়েছে। আমাদের দাবি থাকবে, যেন ছোট ছোট যানবাহন চলার ব্যবস্থা করা হয়।
দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নূরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, আমি চাই এই সড়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অথবা তার ভাই শেখ রাসেলের নামে নামকরণ করা হোক।
প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, কুড়িল থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত মূল রাস্তাটি আট লেনের। দুই পাশে ১০০ ফুট করে দুটি খাল। দুটি খালেরই দুই পাশে রয়েছে সার্ভিস রোড। সার্ভিস রোডেও আছে একাধিক লেন। এর বাইরেও থাকছে বিভিন্ন আবাসিক এলাকা থেকে যুক্ত হওয়ার জন্য গেটওয়ে।
পূর্ব-পশ্চিমে কিংবা পশ্চিম-পূর্ব যে দিক থেকেই চলাচল হোক, এক্সপ্রেসওয়েতে থামার সুযোগ থাকছে না। এজন্য রাখা হয়েছে পাঁচটি অ্যাট-গ্রেড ইন্টারসেকশন, যাতে দ্রুত যানগুলো স্পিড না কমিয়ে লেন পরিবর্তন করতে পারে।
প্রকল্পে মূল লেন তৈরি ছাড়াও সংস্কার হয়েছে ডুমনী, বোয়ালিয়া ও এডি-৮ খাল। কুড়িল থেকে বালু নদী পর্যন্ত হয়েছে আট লেনের এক্সপ্রেসওয়ে। দুই পাশে আছে সার্ভিস লেন। বালু থেকে কাঞ্চন পর্যন্ত ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়ে। নির্মাণ হয়েছে ১০টি বড় সেতু। বোয়ালিয়া এলাকার বাসিন্দা পলাশ জানান, আমরা এই সড়ক পেয়ে খুব খুশি। এক্সপ্রেসওয়েটি পুরো এলাকার চিত্র বদলে দিয়েছে। এটিই এখন নতুন ঢাকা।
জানতে চাইলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন) উজ্জ্বল মল্লিক কালবেলাকে বলেন, প্রকল্পটি উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠানোর পর সম্মতি পেলেও এখন পর্যন্ত তারিখ চূড়ান্ত হয়নি। আশা করছি শিগগির উদ্বোধনের তারিখ ও সময় জানতে পারব। আমরা ইতোমধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছি।
কুড়িল-পূর্বাচল লিঙ্ক রোডের উভয় পাশে ১০০ ফুট চওড়া খাল খনন ও উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের পরিচালক এম এম এহসান জামিল কালবেলাকে বলেন, কাজ শেষে আমরা এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছি।
সম্পাদনা: রাসেল
০৩ নভেম্বর, ২০২৩