পূর্বাচল স্টেডিয়ামের নকশা নিয়ে যা বললেন বিসিবি সভাপতি
২০৩১ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের আয়োজক বাংলাদেশ। এ জন্য পূর্বাচলে নতুন ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তবে রাজনৈতিক ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর বদলে যায় অনেক কিছু। নাজমুল হাসান পাপনের পরিবর্তে বোর্ড সভাপতির দায়িত্ব নেন ফারুক আহমেদ। দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো পূর্বাচলে স্টেডিয়ামের জায়গাটি পরিদর্শন করতে যান তিনি।  ৩১ আগস্ট (শনিবার) পূর্বাচলে স্টেডিয়ামের পরিদর্শনকালে বিসিবির সভাপতি সঙ্গে পরিচালকদের মধ্যে ছিলেন- আকরাম খান, খালেদ মাহমুদ সুজন, ইফতেখার রহমান মিঠু, কাজী এনাম আহমেদ, নাজমুল আবেদীন ফাহিম, ফাহিম সিনহা এবং বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন। সাড়ে ৩৭ একর জমি ঘুরে দেখে দুটি মাঠ তৈরির কথা জানান বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার পর আমাদের প্রধান ইচ্ছা ছিল মাঠগুলোর উন্নতি। নতুন মাঠও যদি করতে পারি, সেটা নিয়েও চিন্তা করছিলাম। যেহেতু এটা আমাদের নিজস্ব জায়গা, এটা নিয়ে একটা পরিকল্পনা ছিল। এখন এটাকে আমরা যত দ্রুত মাঠের কাঠামোতে রূপ দিতে পারি, সে চেষ্টা করব। আমাদের যে মাঠগুলো উন্নতি করার কথা, সেগুলোর সঙ্গে এটা যোগ হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ধাপে ধাপে যাব। এখানে দুটি মাঠ হওয়ার কথা ছিল, বড় স্টেডিয়াম হওয়ার কথা ছিল। এই মুহূর্তে আমরা এত বাজেট অ্যাফোর্ড করতে পারব না। সে জন্য প্রথমে একটা মাঠ দিয়ে শুরু করব, তারপর পাশের মাঠটা করার চেষ্টা করব। দ্রুতই মাঠের কাজ শুরু করব। এখন আমাদের অনেক ধরনের খেলা, আপনারা সবাই জানেন। বয়সভিত্তিক থেকে শুরু করে নারী ক্রিকেট, ক্লাব ক্রিকেট—অনেক খেলা। এখন সে জন্য মাঠটা তৈরি করব।’  দ্রুত মাঠের নির্মাণ কাজ শুরুর কথা জানান তিনি, ‘আমি আগেই উল্লেখ করেছি, কনসালটেন্সিতে আমাদের টাকা ইনভেস্ট হয়েছে। ওটাকে ধরেই বড় কোনো পরিবর্তন না করে…আপনি তো একদিনে সব করতে পারবেন না। মাঠ, ড্রেসিংরুম…আমি ওদের প্ল্যানটা পুরোপুরি দেখিনি। এটা নিয়ে আমার কথা বলাটাও ঠিক হবে না। ওই প্ল্যানটা দেখে, ড্রইং দেখে ওদের সাজেশন অনুযায়ী আমরা প্রথমে মাঠ করার চেষ্টা করব।’ মাঠের নকশা প্রসঙ্গে বলেন, ‘মাঠ করতে তো নৌকা বা স্কয়ার শেপের দরকার নেই। মাঠ করতে ওভাল দরকার। মাঠ করতে যা দরকার, তা করব।’  স্টেডিয়ামের নাম প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘এটা ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, ক্রিকেট বোর্ড মিলে সিদ্ধান্ত নেবে।’
৩১ আগস্ট, ২০২৪

বদল হবে পূর্বাচল ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নাম-নকশা?
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম কর্মদিবসে শেখ হাসিনা জাতীয় যুব ইনস্টিটিউটের নাম পরিবর্তন কথা জানান আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘যেহেতু বাংলাদেশে সহিংসতার সঙ্গে শেখ হাসিনার নাম জড়িত আছে। অনেক শিক্ষার্থী ও জনতা মারা গেছে। আমরা মনে করি, তিনি এর পেছনে জড়িত। সে জায়গা থেকে শুধু আমাদের নয় প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে এটা করা হবে। তাই শেখ হাসিনা জাতীয় যুব ইনস্টিটিউটের নাম পরিবর্তন করে আমরা এটি—বাংলাদেশ জাতীয় যুব ইনস্টিটিউট করছি। দ্রুতই এটা সম্পন্ন করা হবে।’  ক্রীড়া উপদেষ্টার কথায় স্পষ্ট ‘শেখ হাসিনা’র নামে বাংলাদেশে সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনা থাকবে না। সে দিক বিবেচনা করে বলা যায় পূর্বাচলে হতে যাওয়া নতুন ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নাম ও নকশা বদলে যেতে পারে! আগেই চূড়ান্ত করা হয়েছিল নৌকার আদলে নকশাকৃত স্টেডিয়ামটির নাম হবে- দ্য বোট-শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ২০৩১ বিশ্বকাপের আয়োজক বাংলাদেশ। এ ছাড়া আগামী কয়েক বছরে বেশি কিছু আইসিসির ইভেন্টও রয়েছে। বেশ কয়েকটি স্টেডিয়ামের সঙ্গে এটির নির্মাণ কাজে হাত দেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। জমি অধিগ্রহণের পর অপেক্ষায় ছিল নির্মাণ কাজ শুরুর।  তবে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর দেশের বর্তমান বাস্তবতায় বদলে যাচ্ছে অনেককিছু। ক্রীড়া উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নামে এ স্টেডিয়ামটির নামকরণ থাকবে না এটা অনেকটা নিশ্চিত। এ ছাড়া স্টেডিয়ামের নকশা করা হয় নৌকার আদলে। তখন নদী মাতৃক বাংলাদেশের কথা বোঝায় বলা হলেও নৌকা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক।  তাই এ থেকে ধারণা করা যায় বদলে যেতে পারে এ স্টেডিয়ামের নকশাও। সোমবার (১৯ আগস্ট) বিসিবির অবকাঠোমো পরিদর্শনের পাশাপাশি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এ সময় শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সব সুযোগ-সুবিধা ঘুরে দেখেন।  তার বিসিবি পরিদর্শন নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজামুদ্দিন চৌধুরী সুজন। শেখ হাসিনা স্টেডিয়ামের ভাগ্য নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা একটা কনসার্ন। দেখেছেন যে, বিভিন্ন কর্মকর্তা যারা বিরোধিতা করেছেন, তাদের অন্যতম বিষয় ছিল এটা। সম্ভবত আগামী বোর্ড সভায় এটা নিয়ে কথা হবে। (টাকা প্রসঙ্গে) এই মুহূর্তে বলতে পারব না।’ ২০১৯ সালে স্টেডিয়ামটি নির্মাণের ঘোষণা দেওয়া হয়। করোনা মহামারীসহ বেশ কিছু কারণে গত ৫ বছরে স্টেডিয়ামের নির্মাণকাজ শুরু করতে পারেনি বিসিবি। দেশের প্রায় সব স্টেডিয়াম সরকারি অর্থায়নে নির্মিত হয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) মাধ্যমে।  তবে পূর্বাচলের স্টেডিয়ামটি নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করতে চেয়েছিল বিসিবি। তবে ধারণা করা হচ্ছে- পূর্বাচলে তৈরি হলেও নাম ও নকশা পরিবর্তন হচ্ছে স্টেডিয়ামটির।
২০ আগস্ট, ২০২৪

পূর্বাচল ও ঝিলমিল প্রকল্প নিয়ে অসন্তোষ সংসদীয় কমিটির
পূর্বাচল নতুন শহর ও ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্প এখনো বসবাস উপযোগী না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি। তারা প্রকল্প দুটি সরেজমিন পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া চলমান প্রকল্পগুলো শেষ না হওয়া পর্যন্ত আর কোনো প্রকল্প না নিতে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে কমিটি। গতকাল রোববার জাতীয় সংসদে অনুমতি হিসাব সম্পর্কিত কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়। কমিটির সভাপতি ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও অংশগ্রহণ করেন কমিটির সদস্য ও চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, মাহবুব-উল আলম হানিফ, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, প্রাণ গোপাল দত্ত, অপরাজিতা হক, শাহরিয়ার আলম এবং খাদিজাতুল আনোয়ার। জানতে চাইলে ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম বলেন, প্রকল্প দুটো যাতে দ্রুত বসবাসের উপযোগী হয় সে পরামর্শ দিয়েছি। শুধু রাস্তা করলেই হবে না। সেখানে ওয়াসার সুযোগ-সুবিধা, বিদ্যুৎ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান লাগবে। এগুলো হলেই মানুষ বাড়িঘর করে সেখানে থাকবে। উল্লেখ্য, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। কাজ শুরুর পর প্রকল্পের মেয়াদ এখন পর্যন্ত সাতবার বাড়ানো হয়েছে। সবশেষ প্রকল্পের মেয়াদ দেড় বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়। কেরানীগঞ্জে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের পাশে ঝিলমিল আবাসিক এলাকার প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ১৯৯৭ সালে।
২৯ এপ্রিল, ২০২৪

পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে শেখ হাসিনা সরণি
রাজধানীর কুড়িল থেকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ পর্যন্ত নির্মিত পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের নামকরণ হয়েছে ‘শেখ হাসিনা সরণি’। ১৪ লেনের দেশের সবচেয়ে আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর সড়কটি আগামী ১৪ নভেম্বর সকাল ১০টায় ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধন শেষে সরণিটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। গত ৩ নভেম্বর পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে ‘শেখ হাসিনা সরণি’ করার দাবি শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে কালবেলা। ৩০০ ফুট নামে পরিচিত প্রকল্পটি তৈরির উদ্যোগ, বাস্তবায়ন, নকশা থেকে শুরু করে জমি অধিগ্রহণ পর্যন্ত সব কিছুতেই মুখ্য ভূমিকা পালন করেন প্রধানমন্ত্রী। এই বিবেচনায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের দাবি ছিল প্রধানমন্ত্রীর নামে সড়কটির নাম হোক। সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়নের স্মারক হিসেবে এই এক্সপ্রেসওয়ের নাম ‘শেখ হাসিনা সরণি’ করার দাবি যৌক্তিক বলে মনে করেন তারা। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন) উজ্বল মল্লিক কালবেলাকে বলেন, আগামী ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি প্রকল্পটি উদ্বোধনের সম্মতি দিয়েছেন। ‘শেখ হাসিনা সরণি’ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলে ঢাকা থেকে বৃহত্তর চট্টগ্রামসহ দেশের পূর্বাঞ্চলে যাতায়াতের পথ আরও বেশি সুগম হবে। প্রকল্পের নথি থেকে জানা যায়, অত্যাধুনিক এই এক্সপ্রেসওয়েতে নেই কোনো ধরনের স্টপওভার পয়েন্ট, সিগন্যালিং সাইন কিংবা অন্য কোনো প্রতিবন্ধকতা। ছোট, মাঝারি ও বড়—সব ধরনের যানবাহন এখানে চলবে আপন গতিতে। ৬-৭ মিনিটে গাড়ি বাধাহীনভাবে পার হবে সাড়ে ১২ কিলোমিটার পথ। এ জন্য রাখা হয়েছে পাঁচটি অ্যাট-গ্রেড ইন্টারসেকশন, যাতে দ্রুতগতির যানগুলো স্পিড না কমিয়ে লেন পরিবর্তন করতে পারে। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় এক্সপ্রেসওয়ে। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকা। পশ্চিমের প্রগতি সরণি ও বিমানবন্দর সড়কের সঙ্গে পূর্বের ইস্টার্ন বাইপাসকে সংযুক্তকারী এই সড়ককে অন্যতম পর্যটন স্থাপনাও বলা হচ্ছে। আট লেনের এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে থাকছে ৬ লেনের সার্ভিসওয়ে এবং দুই পাশে ১০০ ফুটের পাড় বাঁধানো খাল। দুটি খালেরই দুই পাশে রয়েছে সার্ভিস রোড। এখানেও আছে একাধিক লেন। তার বাইরেও থাকছে বিভিন্ন আবাসিক এলাকা থেকে যুক্ত হওয়ার জন্য গেটওয়ে। এক্সপ্রেসওয়ের সৌন্দর্য বাড়াতে লাগানো হচ্ছে ৭৩ হাজার ফলদ ও বনজ গাছ। ধীরে ধীরে সবুজে ছেয়ে যাচ্ছে পুরো এলাকা। বিগত ৫০ বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ধরে পানি নিষ্কাশনের সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের মতে এক দিনের বৃষ্টিতে চার লাখ গ্যালন পানি জমা হলেও কোনো সমস্যা হবে না। প্রকল্পে মূল লেন তৈরি ছাড়াও সংস্কার হয়েছে ডুমনি, বোয়ালিয়া ও এডি-৮ খাল। নির্মাণ হয়েছে ১০টি বড় সেতু। এক অন্যরকম আধুনিক শহরে রূপ নিয়েছে পুরো অঞ্চল।
১০ নভেম্বর, ২০২৩

পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে ‘শেখ হাসিনা সরণি’ করার দাবি
রাজধানীর কুড়িল থেকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ পর্যন্ত নির্মিত পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের নাম ‘শেখ হাসিনা সরণি’ করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষ। তারা বলছেন, ৩০০ ফুট নামে পরিচিত দেশের সর্বাধুনিক এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের প্রস্তাবকারী, আধুনিক ডিজাইন থেকে শুরু করে উন্নত সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত ও জমি অধিগ্রহণে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তা ছাড়া গত ১৫ বছরে উন্নয়নে মাইলফলক অর্জন করেছে দেশ। কিন্তু নিজের নামে তিনি কিছু করেননি। তাই ধারাবাহিক উন্নয়নের স্মারক হিসেবে এই এক্সপ্রেসওয়ের নাম ‘শেখ হাসিনা সরণি’ করার দাবি যৌক্তিক। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাজ শেষ পর্যায়ে। এবার উদ্বোধনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পেতে প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে। আনুষ্ঠানিক সম্মতিও মিলেছে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত তারিখ চূড়ান্ত হয়নি বলে জানা গেছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কর্তকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী ১০ অথবা ১২ নভেম্বর প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করতে পারেন। ইতোমধ্যে উদ্বোধনের জন্য সার্বিক প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। উদ্বোধনী ফলক নির্মাণে তারিখের অপেক্ষায় আছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের নথি বলছে, অত্যাধুনিক এই এক্সপ্রেসওয়েতে থাকবে না কোনো ধরনের স্টপওভার পয়েন্ট, সিগন্যালিং সাইন কিংবা অন্য কোনো প্রতিবন্ধকতা। ছোট, মাঝারি ও বড়—সব ধরনের যানবাহন চলবে আপন গতিতে। গাড়িতে ৬-৭ মিনিটে বাধাহীনভাবে পার হওয়া যাবে সাড়ে ১২ কিলোমিটার পথ। বলা হচ্ছে, এটি হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় এক্সপ্রেসওয়ে। এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকা। পশ্চিমের প্রগতি সরণি ও বিমানবন্দর সড়কের সঙ্গে পূর্বের ইস্টার্ন বাইপাসকে সংযুক্তকারী এই সড়ক এখন অন্যতম পর্যটন স্থাপনাও। আট লেনের এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে থাকছে ছয় লেনের সার্ভিসওয়ে। মোট ১৪ লেনের এই পথের দুই পাশে রয়েছে ১০০ ফুটের পাড় বাঁধানো খাল। সৌন্দর্য বাড়াতে ৭৩ হাজার ফলদ ও বনজ গাছ লাগানো হচ্ছে। ধীরে ধীরে সবুজে ছেয়ে যাচ্ছে পুরো এলাকা। বিগত ৫০ বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ধরে পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজনীয় সব রকমের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে প্রকল্পে। এক দিনের বৃষ্টিতে চার লাখ গ্যালন পানি জমা হলেও কোনো সমস্যা হবে না বলে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। সব মিলিয়ে এক সময়ের বিনোদন, ভ্রমণের কেন্দ্রস্থলে রূপ নেওয়া ৩০০ ফুট সড়ক এখন চেনার উপায় নেই। এক অন্যরকম আধুনিক শহরে রূপ নিয়েছে পুরো এলাকাটি। রাস্তার কাজ শেষ হওয়ায় যানবাহন চলাচল করছে। সংযোগ পথগুলোও ইতোমধ্যে খুলে দেওয়া হয়েছে। গতকাল সরেজমিন স্থানীয় লোকজন, ব্যবসায়ী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা হয়। এ প্রকল্পের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সবাই। প্রকল্পের বেশিরভাগ অংশ পড়েছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায়। এই উপজেলায় রয়েছে সাতটি ইউনিয়ন। রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছালাউদ্দিন ভূঞা কালবেলাকে বলেন, আমরা আন্তরিকভাবে চাই এক্সপ্রেসওয়ের নাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে হোক। এজন্য কোথাও যদি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে আবেদন করতে হয়, তাতেও সম্মত আছি। গত ১৫ বছরে দেশের যে উন্নয়ন করেছেন তাতে শেখ হাসিনার নাম হাজার বছর জাতি স্মরণ করবে উল্লেখ করে রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান ভূঁইয়া কালবেলাকে বলেন, পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের নাম যদি তার (শেখ হাসিনা) নামে নামকরণ হয়, তাহলে আমি খুশি, আমার ইউনিয়নের মানুষও খুশি। জানতে চাইলে ভুলতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল হক ভূঁইয়া কালবেলাকে বলেন, উন্নয়নের স্মারক হিসেবে এই এক্সপ্রেসওয়ের নাম শেখ হাসিনার নামে হোক, এটা আমি চাই। তিনি উন্নয়ন করেছেন; কিন্তু নিজের নামে কিছু করেননি। আমার দাবি, তিনি সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে নিজের নামে এই রাস্তার নামকরণে সম্মতি দেবেন। ডুবনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া কালবেলাকে বলেন, পূর্বাচলে প্রধানমন্ত্রীর নামে একটি স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হচ্ছে। তিনি যদি চান নিজের নামে রাস্তার নাম হবে, তাতে আপত্তি নেই। ডুমনী বাজারের ব্যবসায়ী সোহাগ বলেন, এলাকাবাসী চায় প্রধানমন্ত্রীর নামে এই রাস্তাটি হোক। এটি যেন রাস্তা নয়, পর্যটন কেন্দ্র। বহু মানুষ বেড়াতে আসে নিয়মিত। স্থানীয় শিক্ষার্থী বিপ্লব পাল বলে, কয়েক বছরের মধ্যে পুরো এলাকাটি বদলে দিয়েছে এই রাস্তা। এখন ৩০০ ফুট মানেই বিশ্বের আধুনিক পথের একটি। বোটঘাট এলাকার অটোচালক মিজান জানান, এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের জন্য লিঙ্ক রোড খুলে দেওয়া হয়েছে। আমাদের দাবি থাকবে, যেন ছোট ছোট যানবাহন চলার ব্যবস্থা করা হয়। দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নূরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, আমি চাই এই সড়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অথবা তার ভাই শেখ রাসেলের নামে নামকরণ করা হোক। প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, কুড়িল থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত মূল রাস্তাটি আট লেনের। দুই পাশে ১০০ ফুট করে দুটি খাল। দুটি খালেরই দুই পাশে রয়েছে সার্ভিস রোড। সার্ভিস রোডেও আছে একাধিক লেন। এর বাইরেও থাকছে বিভিন্ন আবাসিক এলাকা থেকে যুক্ত হওয়ার জন্য গেটওয়ে। পূর্ব-পশ্চিমে কিংবা পশ্চিম-পূর্ব যে দিক থেকেই চলাচল হোক, এক্সপ্রেসওয়েতে থামার সুযোগ থাকছে না। এজন্য রাখা হয়েছে পাঁচটি অ্যাট-গ্রেড ইন্টারসেকশন, যাতে দ্রুত যানগুলো স্পিড না কমিয়ে লেন পরিবর্তন করতে পারে। প্রকল্পে মূল লেন তৈরি ছাড়াও সংস্কার হয়েছে ডুমনী, বোয়ালিয়া ও এডি-৮ খাল। কুড়িল থেকে বালু নদী পর্যন্ত হয়েছে আট লেনের এক্সপ্রেসওয়ে। দুই পাশে আছে সার্ভিস লেন। বালু থেকে কাঞ্চন পর্যন্ত ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়ে। নির্মাণ হয়েছে ১০টি বড় সেতু। বোয়ালিয়া এলাকার বাসিন্দা পলাশ জানান, আমরা এই সড়ক পেয়ে খুব খুশি। এক্সপ্রেসওয়েটি পুরো এলাকার চিত্র বদলে দিয়েছে। এটিই এখন নতুন ঢাকা। জানতে চাইলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন) উজ্জ্বল মল্লিক কালবেলাকে বলেন, প্রকল্পটি উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠানোর পর সম্মতি পেলেও এখন পর্যন্ত তারিখ চূড়ান্ত হয়নি। আশা করছি শিগগির উদ্বোধনের তারিখ ও সময় জানতে পারব। আমরা ইতোমধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছি। কুড়িল-পূর্বাচল লিঙ্ক রোডের উভয় পাশে ১০০ ফুট চওড়া খাল খনন ও উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের পরিচালক এম এম এহসান জামিল কালবেলাকে বলেন, কাজ শেষে আমরা এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছি। সম্পাদনা: রাসেল
০৩ নভেম্বর, ২০২৩
X