হামাস ইসরায়েলকে হামলার অজুহাত তুলে দিয়েছে
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্মম সামরিক অভিযানের জন্য ইসরায়েলের পাশাপাশি হামাসকেও দায়ী করেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। তিনি বলেছেন, হামাসের গত ৭ অক্টোবরের হামলা ইসরায়েলকে গাজায় সামরিক অভিযান চালানোর অজুহাত দিয়েছে। বৃহস্পতিবার বাহরাইনের রাজধানী মানামায় মধ্যপ্রাচ্যের আরব অঞ্চলের দেশগুলোর জোট আরব লিগের ৩৩তম সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। খবর আল আরাবিয়ার। সম্মেলনে মাহমুদ আব্বাস বলেন, ‘হামাস সম্পূর্ণ একক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে যে হামলা চালিয়েছিল, সেটিই আসলে ইসরায়েলকে গাজায় এই দীর্ঘ সামরিক অভিযানের অজুহাত তুলে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একাংশ গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানকে সমর্থন করেছে। তাদের কাছে এই অভিযান ন্যায্য এবং এই ন্যায্যতার ভিত্তিও হামাসের গত ৭ অক্টোবরের হামলা।’ উল্লেখ্য, জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা এবং পূর্ব জেরুজালেম—এ তিন ভূখণ্ড নিয়ে গঠিত ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে ক্ষমতাসীন রয়েছে মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফাতাহ সরকার, যেটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (প্যালেস্টাইনিয়ান অথরিটি-পিএ) নামে পরিচিত। ফিলিস্তিনের বৈধ শাসক হিসেবে পিএকেই স্বীকৃতি দেয় বহির্বিশ্ব। একসময় গাজা উপত্যকায়ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সরকার ক্ষমতায় ছিল, কিন্তু ২০০৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সেই সরকারকে উচ্ছেদ করে কট্টর ইসলামপন্থি সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস। ফাতাহ ও হামাসের মধ্যকার সম্পর্ক চরম বৈরী। এর প্রধান কারণ ফাতাহ নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংগ্রামের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলন চালিয়ে নিতে বিশ্বাসী। অন্যদিকে হামাস বিশ্বাস করে, সশস্ত্র পন্থা অনুসরণের মাধ্যমে ইসরায়েলকে ধ্বংসের ভিত্তিতেই ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব। গত ৭ অক্টোবর গাজার উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস ও তার মিত্রগোষ্ঠী প্যালেস্টাইনিয়ান ইসলামিক জিহাদের প্রায় ১ হাজার যোদ্ধা। ওইদিন সীমানা প্রাচীর ভেঙে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রবেশ করে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০০ মানুষকে হত্যা করে তারা, সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে ২৪২ জনকে ধরে নিয়ে যায় তারা। জবাবে ওইদিন থেকেই গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। এদিকে, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরুর পর থেকে পশ্চিম তীরে আর্থিক সহায়তা প্রদান কমিয়ে দিয়েছে ইসরায়েল ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। ফলে গত কয়েক মাস ধরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ব্যাপক আর্থিক চাপের মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছেন মাহমুদ আব্বাস। ধনী আরব রাষ্ট্রগুলোকে এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট।
১৮ মে, ২০২৪

রাফাহতে ইসরায়েলি আক্রমণে হামাস নির্মূল হবে না
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার রাফাহ শহরে সর্বাত্মক ইসরায়েলি আক্রমণে হামাস নির্মূল হবে না; বরং তা নৈরাজ্য উসকে দেবে। রোববার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএসের এক অনুষ্ঠানে ব্লিঙ্কেন এ কথা বলেন। এদিকে উত্তর গাজায় হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর তীব্র লড়াই চলছে বলে জানা গেছে। রোববার রাতে এখানকার জাবালিয়া শহরে আক্রমণ করে ইসরায়েলি বাহিনী। অন্যদিকে দক্ষিণের রাফাহ শহরে থেমে থেমে আকাশ হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। শহরটি থেকে এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৬০ হাজার মানুষ সরে গেছে। খবর রয়টার্সের। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএসের এক অনুষ্ঠানে ব্লিঙ্কেন বলেন, রাফাহতে পূর্ণমাত্রায় ইসরায়েলি আক্রমণ সম্ভাব্যভাবে অবিশ্বাস্য চড়া মূল্য নিয়ে আসতে পারে। এমনকি রাফাহতে একটি বড় আক্রমণ হামাসের হুমকির অবসান ঘটাতে পারবে না। উল্লেখ্য, রাফাহতে ইসরায়েলের সর্বাত্মক হামলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র। এ ধরনের হামলা না চালাতে ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়িয়েছে ওয়াশিংটন। কিন্তু তা সত্ত্বেও সেখানে আকাশ হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জাচি হানেবির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। এ ফোনালাপে রাফাহতে ইসরায়েলের সম্ভাব্য বড় আক্রমণের বিষয়ে ওয়াশিংটনের উদ্বেগের কথা হানেবিকে জানিয়ে দেন সুলিভান। ফোনালাপ নিয়ে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাফাহতে সম্ভাব্য একটি বড় ইসরায়েলি স্থল অভিযান নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দীর্ঘদিনের উদ্বেগের কথা সুলিভান আবার বলেছেন। হোয়াইট হাউস আরও বলেছে, হানেবি নিশ্চিত করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগকে বিবেচনায় নিচ্ছে ইসরায়েল। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। রাফাহর পূর্বাঞ্চলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এরই মধ্যে ৩ লাখ ৬০ হাজার ফিলিস্তিনি এলাকাটি ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ সতর্ক করে বলেছে, রাফাহতে পূর্ণমাত্রায় ইসরায়েলি আক্রমণ সেখানে থাকা উদ্বাস্তুদের ওপর একটি বিপর্যয়কর প্রভাব ফেলতে পারে। ইসরায়েল বলেছে, তারা রাফাহতে বেসামরিক মানুষের হতাহতের সংখ্যা ন্যূনতম রাখার চেষ্টা করছে। এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জানান, উত্তর গাজার জাবালিয়া এলাকায় বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান বোমা ফেলছে। জাবালিয়া খুবই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এখানে শরণার্থী শিবিরও রয়েছে। হামলার শুরুর আগে সাধারণ মানুষকে এলাকা থেকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয় ইসরায়েল। টাইমস অফ ইসরায়েল রোববার জানিয়েছে, ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) এক থেকে দেড় লাখ ফিলিস্তিনিকে জাবালিয়া এলাকা থেকে চলে যেতে বলেছে। জাবালিয়াতেও হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলি সেনাদের তীব্র লড়াই হচ্ছে বলে জানা গেছে।
১৪ মে, ২০২৪

যুদ্ধের অবসান ছাড়া কোনো চুক্তিতে যাবে না হামাস
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা সাত মাস ধরে চলা নির্বিচার এ হামলার জেরে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এরই মধ্যে ভেঙে পড়েছে। এর সঙ্গে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটিতে দেখা দিয়েছে তীব্র মানবিক সংকট। এমন অবস্থায় গাজায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে চলছে সর্বাত্মক চেষ্টা। যুদ্ধবিরতি অর্জনে চলছে মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে আলাপ-আলোচনাও। তবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস বলেছে, গাজায় যুদ্ধের অবসান ছাড়া কোনো যুদ্ধবিরতিতে রাজি হবে না তারা। রোববার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি। যদিও ইসরায়েলের সঙ্গে হামাস যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে এবং যে কোনো সময় এ যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসতে পারে বলে আগেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাসের এক সিনিয়র কর্মকর্তা শনিবার গভীর রাতে জোর দিয়ে জানিয়েছেন, হামাস গাজায় যুদ্ধবিরতির এমন কোনো প্রস্তাবে ‘কোনো পরিস্থিতিতেই একমত হবে না’ যেটাতে স্পষ্টভাবে যুদ্ধের সম্পূর্ণ সমাপ্তির কথা অন্তর্ভুক্ত থাকবে না। এএফপি বলছে, হামাসের ওই কর্মকর্তা ‘গাজায় আগ্রাসন বন্ধের বিষয়টি যুক্ত না করে’ কেবল বন্দিদের মুক্তির বিষয়ে চুক্তি করার বিষয়ে ইসরায়েলি প্রচেষ্টার নিন্দাও করেছেন। হামাসের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘হামাস কোনো অবস্থাতেই এমন কোনো চুক্তিতে সম্মত হবে না, যেটাতে গাজায় যুদ্ধ বন্ধের বিষয়টিকে স্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত থাকবে না। যুদ্ধের সম্পূর্ণ অবসান এবং সমগ্র গাজা উপত্যকা থেকে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর প্রত্যাহার ছাড়া কোনো চুক্তিই হবে না।’ এর আগে ইসরায়েলের উচ্চপর্যায়ের এক কর্মকর্তা শনিবার জানান, যুদ্ধের অবসান ঘটানোর যে দাবি হামাস করছে, তা ‘(যুদ্ধবিরতির বিষয়ে) চুক্তিতে পৌঁছানোর সম্ভাবনাকে ব্যর্থ করে দিচ্ছে’। এএফপি বলছে, হামাস ও ইসরায়েলের দুই কর্মকর্তার বক্তব্য এমন এক সময়ে সামনে এলো, যখন প্রায় সাত মাসের যুদ্ধে প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে শনিবার হামাসের আলোচকরা মিশরে গেছেন। ইসরায়েলি কর্মকর্তা অবশ্য বলেছেন, বন্দি চুক্তির কাঠামোর বিষয়ে ‘ইতিবাচক ইঙ্গিত’ পেলেই কেবল তারা কায়রোতে প্রতিনিধিদল পাঠাবে, যদিও এমন কিছু এখনো ঘটেছে বলে মনে হয়নি। ব্রিটেনের প্রকাশিত বিবরণ অনুসারে, সম্ভাব্য একটি চুক্তির প্রস্তাবের বিষয়ে হামাসের জবাবের জন্য অপেক্ষা করছে মিশর, কাতার এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারীরা। এই চুক্তি হলে ৪০ দিনের জন্য যুদ্ধ বন্ধ হবে এবং ইসরায়েলি কারাগারে ফিলিস্তিনিদের বন্দিদের সঙ্গে গাজায় আটক বন্দিদের বিনিময় করা হবে। অবশ্য হামাস কর্মকর্তা শনিবার গভীর রাতে জানিয়েছেন, ‘কোনো ধরনের অগ্রগতি’ ছাড়াই এদিনের আলোচনা শেষ হয়েছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘হামাস এই চুক্তিটিতে ‘সম্পূর্ণ এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির চুক্তি’ বলে একটি সুস্পষ্ট এবং পরিষ্কার বিধান অন্তর্ভুক্ত করতে অনুরোধ করেছে এবং ইসরায়েল এখন পর্যন্ত এই বিষয়টি মানেনি।’
০৬ মে, ২০২৪

স্বাধীন ফিলিস্তিন হলে অস্ত্র সমর্পণ করবে হামাস
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা প্রায় সাত মাস ধরে চলা নির্বিচার এই হামলার জেরে নিহত হয়েছে ৩৪ হাজারেরও বেশি মানুষ। লাগাতার হামলায় গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ইতোমধ্যে ভেঙে পড়েছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে এর পরও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে পরাজিত করতে পারেনি ইসরায়েল। এমন অবস্থায় অনেকটা শান্তির বার্তাই সামনে আনল হামাস। স্বাধীনতাকামী এই গোষ্ঠী বলছে, একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটি তাদের অস্ত্র সমর্পণ করবে। খবর সিএনএন ও ওয়াশিংটন পোস্টের। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরায়েলের দখল করা অঞ্চলগুলোতে ফিলিস্তিনিরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেলে হামাস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম ছেড়ে দিতে পারে বলে হামাসের কিছু কর্মকর্তা ইঙ্গিত দিয়েছেন। সিএনএন বলছে, সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটির কিছু কর্মকর্তার দেওয়া এই বার্তাটি হামাসের অবস্থান কিছুটা নরম হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। কারণ গাজা ভূখণ্ডের শাসন ক্ষমতায় থাকা এই দলটি দীর্ঘদিন ধরে ইহুদি রাষ্ট্র তথা ইসরায়েলকে ধ্বংস করার আহ্বান জানিয়ে আসছে। হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর ইস্তাম্বুলভিত্তিক সদস্য বাসেম নাইম বৃহস্পতিবার সিএনএনকে বলেন, একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে স্বাধীনতাকামী এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি নিজেদের নিরস্ত্র করতে রাজি হবে। হামাসের সশস্ত্র শাখার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের অধিকার সংরক্ষণের পাশাপাশি যদি জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়, তাহলে আল কাসামকে ভবিষ্যতে জাতীয় সেনাবাহিনীতে একীভূত করা যেতে পারে।’ হামাস ঐতিহ্যগতভাবে একটি দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানকে বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে এসেছে। এই সমাধান নীতি অনুযায়ী, ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত থাকবে। বরং এর পরিবর্তে হামাস এতদিন সব ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে কথা বলে এসেছে। প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভের প্রেসিডেন্ট মোস্তফা বারঘৌতি বলেছেন, তিনি হামাসের অস্ত্র সমর্পণের প্রস্তাব সম্পর্কে আগে থেকে অবগত নন। তবে তিনি বলেন, এটি সত্য হলে তা হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তিনি ১৯৬৭ সালে দখল করা ফিলিস্তিনের অঞ্চলগুলোতে ইসরায়েলের সামরিক নিয়ন্ত্রণের কথা উল্লেখ করে সিএনএনকে বলেন, ‘এটা এই অর্থে গুরুত্বপূর্ণ যে, ফিলিস্তিনিরা দখলদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করছে, কারণ এখানে দখলদারিত্ব চলছে। যদি কোনো ধরনের দখলদারিত্ব সেখানে না থাকে, তবে তাদের প্রতিরোধ করারও দরকার নেই।’ মূলত ১৯৬৭ সালে দখল করা ফিলিস্তিনের অঞ্চলগুলোতে এখনো লাখ লাখ ফিলিস্তিনি বাস করেন। যদিও এসব এলাকায় ইসরায়েলের সামরিক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। অন্যদিকে হামাসের একজন শীর্ষ রাজনৈতিক কর্মকর্তা দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন, ইসলামিক এই গোষ্ঠীটি ইসরায়েলের সঙ্গে পাঁচ বছর বা তার বেশি সময়ের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে ইচ্ছুক এবং ১৯৬৭ সালের আগের সীমান্ত অনুযায়ী একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে তারা তাদের অস্ত্র সমর্পণ করতে এবং রাজনৈতিক দলে রূপান্তরিত হতে ইচ্ছুক। ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, গত বুধবার দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে হামাসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা খলিল আল-হাইয়ার এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এলো, যখন গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য গত কয়েক মাস আলোচনা চললেও তা কার্যত অচলাবস্থার মধ্যে রয়েছে। এ ছাড়া হামাস নিজেদের নিরস্ত্রীকরণ করবে—এমন ইঙ্গিতটি হামাসের পক্ষ থেকে উল্লেখযোগ্য ছাড় বলে মনে হচ্ছে। কারণ হামাস এমন এক সশস্ত্র গোষ্ঠী, যারা বরাবরই ইসরায়েলকে ধ্বংস করার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল।
২৭ এপ্রিল, ২০২৪

কাতার ছাড়ছে হামাস
গত অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকরে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে বড় ভূমিকা রেখে আসছে পারস্য উপসাগরের ছোট দেশ কাতার। তবে যুদ্ধের এক মাসের মাথায় দুপক্ষের মধ্যে সাত দিনের একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি করাতে পারলেও এরপর আর কোনো চুক্তি আলোর মুখ দেখেনি। নতুন যুদ্ধবিরতি ও বন্দি মুক্তি চুক্তি বাস্তবায়ন না করতে পারায় দোহার ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নে হামাসের ওপর আরও চাপ বাড়াতে কাতার সরকারকে চাপ দিচ্ছে তেল আবিব ও ওয়াশিংটন। এমন পরিস্থিতিতে কাতার থেকে নিজেদের রাজনৈতিক কার্যালয় সরিয়ে অন্য দেশে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে হামাস। যদি হামাস এমনটা করে তাহলে ইসরায়েলের সঙ্গে নতুন কোনো চুক্তি সম্পাদন আরও কঠিন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হামাস যদি কাতার ত্যাগ করে তাহলে গাজায় বন্দি কয়েক ডজন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্ত করার জন্য যে আলোচনা চলছে, তা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এ ছাড়া হামাসের সঙ্গে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা আদান-প্রদানের পথ আরও কঠিন হয়ে পড়বে। হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে রেখেছে ইসরায়েল ও তাদের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। তাই ফিলিস্তিনি এই সংগঠনের সঙ্গে এই দুই দেশের কোনো সরাসরি যোগাযোগ নেই। তাই হামাস নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কাতার, মিসর বা তুরস্কের মতো দেশের ওপর নির্ভর করতে হয় তেল আবিব ও ওয়াশিংটনকে। এখন হামাস যদি কাতার ছেড়ে যায়, তাহলে এই যোগাযোগ প্রক্রিয়া আরও কঠিন হবে। আরব কর্মকর্তারা বলছেন, দোহা থেকে নেতাদের সরিয়ে নিতে সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের দুটি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে হামাস। দুটির একটি দেশ হলো ওমান। তবে অন্য দেশের নাম জানা যায়নি। তারা বলছেন, বর্তমানে যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি চুক্তি আলোচনায় যে ধীরগতি দেখা দিয়েছে, তা আরও কয়েক মাস চলতে পারে বলে মনে করে হামাস। তাই কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করতে হতে পারে তাদের। এ বিষয়ে জানাশোনা আছে এমন একজন আরব মধ্যস্থতাকারী বলেছেন, যুদ্ধবিরতি আলোচনা এরই মধ্যে স্থগিত হয়ে গেছে। এটি শিগগির শুরু হবে এমন কোনো লক্ষণ নেই। এজন্য হামাস ও আলোচকদের মধ্যে অবিশ্বাস বাড়ছে। ২০১২ সাল থেকে কাতারের রাজধানী দোহায় বসবাস করছেন হামাসের প্রথম সারির নেতারা। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে তাদের আশ্রয় দিয়েছিল কাতার। পরে ইসরায়েলের অনুরোধে হামাসকে অর্থকড়ি দেয় দেশটি। এসবের বিনিময়ে গত এক দশকে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় সহায়তা করে আসছিল কাতার। গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে প্রবেশ করে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে ১২০০ ইসরায়েলিকে হত্যার পাশাপাশি প্রায় ২৫০ ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে গাজায় বন্দি করে নিয়ে আসে হামাস। একই দিন হামাসকে নির্মূল এবং বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী এই সংগঠনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ইসরায়েল। গত নভেম্বরে সাত দিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিনিময়ে ১১০ ইসরায়েলি বন্দিকে হামাস মুক্তি দিলেও এখনো তাদের হাতে শতাধিক বন্দি আছেন। এর পর থেকে হামাসের সঙ্গে নতুন আরেকটি চুক্তি বাস্তবায়নে মধ্যস্থতা করে আসছে কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র। তবে চুক্তির শর্ত নিয়ে দুপক্ষে মতবিরোধ থাকায় এটি আর বেশি দূর অগ্রসর হয়নি। অন্যদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ১২ জনে পৌঁছেছে। তাদের অধিকাংশ নারী ও শিশু। এ ছাড়া এ পর্যন্ত আহত হয়েছে ৭৬ হাজার ৮৩৩ জন।
২১ এপ্রিল, ২০২৪

তুরস্কের সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন হামাস প্রধান
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ইস্তাম্বুল পৌঁছেছেন হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াহ। শনিবার তুর্কি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন হামাসের রাজনৈতিক শাখার এই প্রধান। ইরান এবং গাজায় নতুন করে ইসরায়েলের হামলার প্রস্তুতির কথা জানানোর পর মধ্যপ্রাচ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার মধ্যেই তিনি এ সাক্ষাৎ করছেন।  এরদোয়ান ফিলিস্তিন সংঘাতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেও  ব্যর্থ হয়েছেন। তুর্কি প্রেসিডেন্টের হামাস নেতার সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে আন্তরিক রয়েছেন। খবর এএফপি’র।  শুক্রবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এরদোয়ান বলেন, আমরা আমাদের এবং হানিয়ার মধ্যে আলোচ্যসূচি রাখব। তবে কাতার বলেছে, তারা হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে তাদের ভূমিকা পুনর্বিবেচনা করবে।  এরদোয়ান হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে চেয়ে নতুন ইঙ্গিত দিয়ে বুধবার তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানকে দোহায় পাঠান।  ২০১১ সাল থেকে তুরস্কে হামাসের একটি কার্যালয় রয়েছে। ওই সময় তুরস্ক ইসরায়েলি সৈন্য গিলাদ শালিতকে মুক্ত করার জন্য হামাস গ্রুপের জন্য চুক্তিটি নিশ্চিত করতে সহায়তা করেছিল। বারবার তুরস্ক সফর করা হানিয়াহের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন এরদোয়ান।   
২০ এপ্রিল, ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রের দাবি হামাস নেতা ইসা ইসরায়েলি হামলায় নিহত
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের নেতা মারওয়ান ইসা এক ইসরায়েলি বিমান হামলায় মারা গেছেন। সোমবার হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তা জ্যাক সুলিভান এমন দাবি করেন। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি অনুসারে, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ শুরুর পর এ পর্যন্ত নিহত হামাস নেতাদের মধ্যে ইসা সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ। তবে গাজা উপত্যকার শাসনক্ষমতায় থাকা হামাস তাদের নেতা ইসার মৃত্যু প্রসঙ্গে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে মন্তব্য করেনি। খবর সিএনএনের ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম সূত্রগুলো বলছে, এক সপ্তাহ আগে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইসা নিহত হয়েছেন। গাজার মধ্যাঞ্চলে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের ভূগর্ভস্থ একটি সুড়ঙ্গকে লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়। হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জেদিন আল-কাসাম ব্রিগেডের উপ-কমান্ডার ছিলেন ইসা। তিনি ইসরায়েলের শীর্ষ তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের একজন। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের নেতৃত্বাধীন হামলার ঘটনায় সরাসরি সম্পৃক্ততার অভিযোগে ইউরোপীয় ইউনিয়নও ইসাকে তাদের সন্ত্রাসী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। প্রথম ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদার সময় (১৯৮৭-১৯৯৩) তাকে পাঁচ বছর কারাবন্দি রেখেছিল ইসরায়েল। ১৯৯৭ সালে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ তাকে আটক করে। ২০০০ সালে দ্বিতীয় ইন্তিফাদা শুরুর আগ পর্যন্ত তাকে আটক রাখা হয়েছিল। ৭ অক্টোবরের পর ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর হামলায় হামাসের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা নিহত হন। বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় দাহিয়েহ এলাকায় এক বিস্ফোরণে হামাসের রাজনৈতিক নেতা সালেহ আল আরুরি নিহত হন। ওই হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করা হয়ে থাকে। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুলিভান বলেন, ধারণা করা হয় গাজায় হামাসের সুড়ঙ্গগুলোর গভীরে সংগঠনটির নেতারা লুকিয়ে আছেন। শীর্ষ হামাস নেতাদের খুঁজে বের করতে ইসরায়েলকে সহযোগিতা দিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন তিনি। সুলিভান বলেন, ‘তাদের জন্যও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে।’ তবে হামাসের বিরুদ্ধে অভিযানে সমর্থন দিলেও ফিলিস্তিনে বেসামরিক মৃত্যুর ঘটনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আবারও উদ্বেগ জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন সুলিভান। সোমবার এক ফোনালাপে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে এ উদ্বেগ জানান।
২০ মার্চ, ২০২৪

৪০ দিনের যুদ্ধবিরতির খসড়া খতিয়ে দেখছে হামাস
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসকে ৪০ দিনের যুদ্ধবিরতির একটি খসড়া প্রস্তাব দিয়েছে মধ্যস্থতাকারী দুই দেশ কাতার ও মিশর। প্রস্তাবটি হামাসের নেতারা পর্যালোচনা করছেন বলে জানা গেছে। প্রস্তাবিত এই খসড়ায় ৪০ দিনের যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি গাজার হাসপাতাল-রুটি-বিস্কুট-কেক তৈরির কারখানাগুলোর পুনর্গঠন ও নির্মাণ, প্রতিদিন উপত্যকায় ত্রাণবাহী ৫০০টি ট্রাকের প্রবেশ এবং গৃহহীন ফিলিস্তিনিদের জন্য কয়েক হাজার তাঁবু পাঠানোর মতো বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, আসন্ন রমজানে গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধ রাখতে ইসরায়েলি বাহিনী সম্মত হয়েছে এবং তিনি আশা করছেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই গাজায় দ্বিতীয় দফা যুদ্ধবিরতি শুরু হবে। খবর আলজাজিরার। খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে নিজেদের কবজায় থাকা জিম্মিদের মধ্য থেকে নারী, ১৯ বছরের কম বয়সী কিশোর-কিশোরী, বয়স পঞ্চাশের বেশি—এমন ব্যক্তি এবং অসুস্থ ৪০ জন জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে হামাসকে। সেই সঙ্গে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি থাকা ৪০০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল। গত সপ্তাহে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বৈঠক করেন ইসরায়েল, কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। সেই বৈঠকেই খসড়া প্রস্তাবটি প্রস্তুত করা হয়। গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা গাজার উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জন মানুষকে হত্যার পাশাপাশি ২৪০ জন ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে ধরে নিয়ে যায়। অভূতপূর্ব সেই হামলার পর সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। চার মাসেরও বেশি সময় ধরে চলমান সেই অভিযানের শুরু থেকে এ পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন প্রায় ৩০ হাজার মানুষ, আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭০ হাজার। এ ছাড়া ইসরায়েলি বাহিনীর গোলায় বাড়িঘর হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন আরও লাখ লাখ ফিলিস্তিনি। এই যুদ্ধের শুরু থেকেই হামাস ও ইসরায়েলের সরকারের মধ্যে মধ্যস্থতার ভূমিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও কাতার। এই তিন দেশের ব্যাপক প্রচেষ্টায় গত ২৫ নভেম্বর প্রথম যুদ্ধবিরতি হয়েছিল গাজায়। সেই বিরতির সময় নিজেদের কবজায় থাকা জিম্মিদের মধ্যে শতাধিক ব্যক্তিকে মুক্তি দিয়েছিল হামাস। বিনিময়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে দেড়শ জনকে ছেড়ে দিয়েছিল দেশটির সরকার। সম্প্রতি আবার গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে। তার জেরেই প্যারিসে বৈঠক হয় গত সপ্তাহে। সেই বৈঠকে ইসরায়েল, কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা যোগ দিয়েছিলেন। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের রাজধানী নিউইয়র্ক সিটিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, আসন্ন রমজানে গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধ রাখতে ইসরায়েলি বাহিনী সম্মত হয়েছে এবং তিনি আশা করছেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই গাজায় দ্বিতীয় দফা যুদ্ধবিরতি শুরু হবে। জো বাইডেন বলেন, ‘আমার জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা আমাকে জানিয়েছে যে, আমরা গাজায় পরবর্তী একটি যুদ্ধবিরতির বেশ কাছাকাছি রয়েছি। আশা করছি, খুব শিগগির যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসবে।’ উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বৈঠকের আলোচনার সূত্র ধরে মিশরের একাধিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, আসন্ন রমজানের আগেই গাজায় দ্বিতীয় দফায় যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসতে পারে। আগামী মার্চের ১১ কিংবা ১২ তারিখ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে চলতি বছরের রমজান মাস।
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

ইসরায়েল হামাস যুদ্ধের পরে কী হবে?
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের অভ্যন্তরে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। পরবর্তী সময়ে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় আগ্রাসন শুরু করে ইসরায়েল। ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছে ২১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, যার অধিকাংশই নারী ও শিশু। অন্যদিকে নিহত হয়েছে ৫০১ ইসরায়েলি সৈন্য। জাতিসংঘের হিসাব মতে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে উপত্যকার ৪০ শতাংশ মানুষ। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা এবং ইসরায়েলের আগ্রাসী মনোভাব, ফলে সংকট আগে থেকেই ছিল। গাজায় ইসরায়েলের স্থল অভিযানের পর একটি প্রশ্ন আবারও সামনে আসছে, তা হলো—এই সংকটের শেষ কোথায়? ঠিক এমনই প্রশ্ন উঠেছিল ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের পর। অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েল তার স্থল অভিযান শুরু করলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ম্যাগাজিন দি আটলান্টিকের নিবন্ধকার ফ্রাঙ্কলিন ফোয়ার তার নিবন্ধের শিরোনামে প্রশ্ন রেখেছিলেন ‘আমাকে বলুন এই যুদ্ধের শেষ কোথায়?’ ফ্রাঙ্কলিনের সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সহজ নয়। তবে আমরা যেটি দেখছি তা হলো প্রতিদিন নিরপরাধ বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে... কীভাবে এই সংকটের শেষ হয়?—ফ্রাঙ্কলিনের সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে এই নিবন্ধে। আগামীতে কী করা হতে পারে বা কী করা উচিত, সে বিষয়ে কিছু দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হলো এই নিবন্ধে— ইসরায়েল গাজার দখল রাখলে কী হবে?: ইসরায়েলের প্রধান লক্ষ্য গাজা উপত্যকা থেকে হামাসকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা। কিন্তু এই লক্ষ্য পূরণ হওয়া অসম্ভব। আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞ হুসেইন ইবিশ বলেছিলেন, ‘ইসরায়েলিরা যদি গাজায় থেকে যায় তবে তা হবে হামাসের জন্য একটি বড় রাজনৈতিক বিজয়। এবং এই রাজনৈতিক বিজয় প্রকৃতপক্ষে হামাসের জন্য মূল্যবান। যদি এমনটিই ঘটে, তবে এই যুদ্ধ কয়েক মাস বা বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকবে।’ দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান?: ইসরায়েলি বা ফিলিস্তিনিরা কেউই তাদের জাতীয় পরিচয় ত্যাগ করবে না। কেউই তাদের জন্মস্থান ও তাদের ভূমি ছেড়ে অন্য কোথাও যাবে না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আরাশ আজিজি তার নিবন্ধে লিখেছেন, ‘যারা সত্যিই পবিত্র ভূমিতে শান্তি ও ন্যায়বিচার চান তাদের এই বাস্তবতাকে স্বীকৃতি দিয়ে এগিয়ে যাওয়া উচিত। দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে শুরু করা উচিত।’ কার্যকর কূটনৈতিক কৌশল গ্রহণ?: বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সাহসী কূটনীতি অনুশীলন করেছেন জো বাইডেন। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যুতেও সেটি কাজ করতে পারে। সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েল কার্টজার লিখেছেন, ‘শান্তির সম্ভাবনার অগ্রগতি, ইসরায়েলি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ফিলিস্তিনিদের অভিযোগের সমাধান করা জরুরি। সেই লক্ষ্যে কূটনীতি অনুশীলন চালিয়ে যেতে হবে।’ নেতানিয়াহুর পরের যুগ: ইসরায়েল শক্তিশালী একটি রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং টিকে আছে। কিন্তু এর পেছনে তাদের নেতাদের থেকে বেশি অবদান ইসরায়েলের জনগণের। দি আটলান্টিকের লেখক ইয়ার রোজেনবার্গ লিখেছেন, ‘ইসরায়েলের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং প্রধানমন্ত্রী ও তার কট্টর ডানপন্থি মিত্ররা ব্যর্থ হয়েছেন। রাষ্ট্রের শক্তির আসল উৎস জনগণ। নেতানিয়াহু একসময় বিদায় নেবেন এবং ইসরায়েল কট্টরপন্থি অবস্থান থেকে হয়ত সরে আসবে।’ ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের নাগরিকরা শান্তি চায়: ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন সংকট এবং সংঘাতের কারণে প্রাণ হারিয়েছে অনেক মানুষ। স্বাভাবিক জীবন থেকে বঞ্চিত হয়েছে হাজার হাজার ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি। সাম্প্রতিক সময়ের ভয়াবহতা সত্ত্বেও-বা সম্ভবত এই সংঘাতের কারণেই অনেক ইহুদি এবং ফিলিস্তিনি আগের চেয়ে বেশি শান্তি চাইছে। ব্রিটিশ ফিলিস্তিনি লেখক জন আজিজ লিখেছেন, ‘ফিলিস্তিনিদের শান্তি দরকার। তার থেকেও বেশি দরকার সঠিক নেতৃত্ব। মুসলিম ও অমুসলিম সম্প্রদায়গুলোর প্রতিও যাদের দায়িত্বশীল দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে। যারা কাউকে নিপীড়ন করার পরিবর্তে সবার স্বার্থ রক্ষায় কাজ করবে।’ শান্তির বার্তা: ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংকটের সামরিক সমাধান কখনো হয়নি, হবেও না। ফিলিস্তিনে আমেরিকান টাস্ক ফোর্সের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াদ আসালি লিখেছেন, ‘হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে গাজাকে ধ্বংস করে ফেলতে পারে ইসরায়েল। এটি করার জন্য তাদের কাছে বড়বড় অস্ত্র এবং বোমা রয়েছে। তবে এটি ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন হওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে ধ্বংস করতে পারবে না।’
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩

ইসরায়েলের সঙ্গে দীর্ঘ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হামাস
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা দেড় মাস ধরে চালানো এ হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন সাড়ে ১১ হাজার ফিলিস্তিনি। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই প্রায় ৮ হাজার। এ পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের সঙ্গে দীর্ঘ যুদ্ধের জন্য ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস প্রস্তুত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়া। এমনকি হামাসের ক্ষমতা শত্রুর চেয়েও বেশি বলে জানিয়েছেন তিনি। গতকাল শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকার প্রতিরোধ বাহিনীগুলো ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রয়েছে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরো প্রধান। এদিন রেকর্ডকৃত এক বক্তৃতায় ইসমাইল হানিয়া ফিলিস্তিনি জনগণের অবিচল মনোভাব এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সক্ষমতা দুর্বল করতে প্রতিরোধ দলগুলোর সমন্বয়ের প্রশংসাও করেন। ইসমাইল হানিয়া বলেন, যদি শত্রুপক্ষ দীর্ঘ যুদ্ধ করতে চায়, তবে তাদের জানাতে চাই, আমাদের লড়াইয়ের ক্ষমতা শত্রুর চেয়েও দীর্ঘ এবং আমাদের প্রতিরোধই চূড়ান্তভাবে জয়ী হবে। তিনি গাজা উপত্যকার মাটিতে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের অর্জিত বিজয়গুলোর দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, প্রতিরোধের বীর নায়করা গাজায় গৌরবের ইতিহাস লিখছেন। নিজেদের বীরত্ব, সাহস এবং সাহসিকতা প্রমাণ করে তারা শত্রুর সেনাবাহিনী এবং তাদের যানবাহনকে বেদনাদায়ক আঘাত দিচ্ছেন। ২০০৫ সালে গাজা থেকে ইসরায়েলের বিচ্ছিন্নতার কথা উল্লেখ করে ইসমাইল হানিয়া বলেন, আল-কাসাম ব্রিগেড এবং প্রতিরোধ দলগুলো গাজায় ইসরায়েলি দখলদারিত্বকে পরাজিত করবে, যেমনটি তারা ১৮ বছর আগে করেছিল। বিশ্ব এটাই প্রত্যক্ষ করবে। তারা (ইসরায়েল) আরও ব্যর্থতা, হতাশা এবং পরাজয় ছাড়া আর কিছুই পাবে না। ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতি বা জোরপূর্বক বন্দিদের পুনরুদ্ধারের বিষয়ে শত্রুদের যে লক্ষ্য ও পরিকল্পনা ছিল, সেটিকে ব্যর্থ করে দিয়েছে গাজার বাসিন্দা এবং প্রতিরোধ যোদ্ধারা। এর আগে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ এ ভূখণ্ডে ইসরায়েলি আগ্রাসন নিয়ে বেশ কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন ইসমাইল হানিয়া। গত মাসের শেষের দিকে তিনি বলেন, গাজায় চলমান যুদ্ধ পুরো অঞ্চলকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যাবে।
১৮ নভেম্বর, ২০২৩
X