২০২৬ সালে অর্থনৈতিক সংকট প্রকট হতে পারে : দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
২০২৬ সালে অর্থনীতির সংকট আরও প্রকট হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, এর কারণ সরকারকে বৈদেশিক ঋণ ও স্থানীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে হবে। মঙ্গলবার (৭ মে) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য পরিশোধ, বিদেশি বিনিয়োগকারীর মুনাফা ও বিদেশি এয়ারলাইন্সের পাওনা দিতে পারছে না। একের পর এক সিদ্ধান্তহীনতা ও অনিশ্চয়তায় পুরো ব্যাংক খাত ভুগছে। সিপিডির এই ফেলো বলেন, তথ্য-উপাত্ত প্রকাশে সরকার অনেক বেশি সংবেদনশীল। এটা সরকারের জন্য ভালো নয়। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক তথ্য-উপাত্ত প্রকাশে বাধ্য। কিন্তু সেখানে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে। তথ্যে প্রবেশাধিকার কমে যাওয়ায় নৈরাজ্য তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের তথ্য দেওয়া হলে বাজারে প্রভাব পড়ে, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। আগে দেশে তথ্য-উপাত্তের নৈরাজ্য ছিল, এরপর শুরু হয় অন্ধত্ব। এখন দেখা যাচ্ছে, তথ্য-উপাত্তের অপঘাত হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে সম্প্রতি যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, এটা তারই প্রমাণ।  তিনি বলেন, সুবিধাভোগীদের রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তি অনেক বেশি। তাই তাদের মোকাবিলা করা যাচ্ছে না। একদিকে তথ্য লুকিয়ে রাখা হবে, আরেক দিকে ডিজিটাল বাংলাদেশ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার চিন্তা করা হবে, এ দুটি সাংঘর্ষিক।  তিনি আরও বলেন, অর্থনীতির আয়তনের তুলনায় বাজেটে বরাদ্দ বাড়েনি। মুদ্রানীতি এবং আর্থিক নীতির মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। সমন্বয় পদ্ধতি অনেকটা বিকল হয়ে গেছে। বিদেশি ঋণ পরিশোধে দেশের গর্বের জায়গায় ফাটল ধরিয়েছে সরকার। গত কয়েক মাসে ৫ বিলিয়ন টাকা পরিশোধ করতে পারছে না।  তথ্যের অপঘাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুনামের হানি হচ্ছে উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, তথ্য-উপাত্তের বড় উৎস বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যের আগে রপ্তানি-আমদানিসহ আর্থিক সূচকের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম আমরা। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ব্যবসায়ীরা তথ্য পাচ্ছে অথচ সাংবাদিকরা পাচ্ছে না। এ সময় তিনি বলেন, এখন শোনা যাচ্ছে রেমিট্যান্সের টাকা দিয়ে স্থানীয় শিল্প মালিকরা বিদেশে শিল্পের কাঁচামাল কিনছেন। এভাবে ২ বা ৩ শতাংশ প্রণোদনা দিয়ে রেমিট্যান্স বাড়ানো যাবে না। এ ক্ষেত্রে আরও নমনীয় হতে হবে। সুদহারেও নমনীয়তা আনতে হবে। মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতি সমন্বয় করার ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা রয়েছে, সেটা দূর করতে হবে অর্থনীতির স্বার্থে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন ইংরেজি দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ। 
০৭ মে, ২০২৪

‘দেশে অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হচ্ছে’
দেশের চলমান আর্থ-সামাজিক সংকটে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে খেলাফত মজলিস। দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে সরকারের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশে অর্থনৈতিক সংকট দিন দিন ঘনীভূত হচ্ছে। নেতারা বলেন, জালজালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে লুটপাট করা হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এই লুটপাটের অর্থ বিদেশে পাচারের কারণে জনগণের আমানত ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রার তুলনায় টাকার অবমূল্যায়ন বেড়েছে। দ্রব্যমূল্য এখনো ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। তীব্র গরমের মধ্যেও লোডশেডিং বেড়েছে। দেশের এই সংকট মেনে নেওয়া যায় না। গতকাল শনিবার বিকেলে ঢাকায় খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব জাহাঙ্গীর হোসাইনের সঞ্চালনায় নির্বাহী পরিষদের এ বৈঠক হয়। পরে বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
২৮ এপ্রিল, ২০২৪

দেশে অর্থনৈতিক সংকট ঘণীভূত হচ্ছে: খেলাফত মজলিস
দেশের চলমান আর্থ-সামাজিক সংকটে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে খেলাফত মজলিস। দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে সরকারের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশে অর্থনৈতিক সংকট দিন দিন ঘণীভূত হচ্ছে। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে লুটপাট করা হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এই লুটপাটের অর্থ বিদেশে পাচারের কারণে জনগণের আমানত ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রার তুলনায় টাকার অবমূল্যায়ন বেড়েছে। দ্রব্যমূল্য এখনো ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। তীব্র গরমের মধ্যেও লোডশেডিং বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের এই সংকট মেনে নেওয়া যায় না। শনিবার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে ঢাকায় খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দলের আমীর মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ সভাপতিত্ব করেন। পরিচালনা করেন দলের যুগ্ম মহাসচিব জাহাঙ্গীর হোসাইন। নেতৃবৃন্দ বলেন, সম্প্রতি নারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বোরকা-নেকাব পরিধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম আই ইনফার্মারি অ্যান্ড ট্রেইনিং কমপ্লেক্স (সিইআইটিসি)’র কর্তৃপক্ষ। আমরা এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। অবিলম্বে কর্তৃপক্ষকে এই অসাংবিধানিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানাই। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন- যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল জলিল, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান, মাওলানা শামসুজ্জামান চৌধুরী, মাস্টার সিরাজুল ইসলাম, মাস্টার আবদুল মজিদ, অধ্যাপক খুরশিদ আলম, বায়তুলমাল সম্পাদক আলহাজ আবু সালেহীন, প্রচার ও তথ্য সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুল হাফিজ খসরু, সাহাব উদ্দিন আহমদ খন্দকার, মুফতি আবদুল হক আমিনী, ডা. আবদুর রাজ্জাক, জহিরুল ইসলাম, জিল্লুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুল ইসলাম, ডা. বোরহান উদ্দিন সিদ্দিকী, মাওলানা আফতাব উদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক মাওলানা আজিজুল হক, মুফতি সাইয়েদুর রহমান, হাজী নুর হোসেন, মাওলানা নুরুল হক, অধ্যক্ষ আবদুল হান্নান, মাওলানা সাইফুদ্দিন আহমদ খন্দকার, আবুল হোসেন, মাওলানা আজিজুল হক প্রমুখ।
২৭ এপ্রিল, ২০২৪

এই মুহূর্তে কী ম্যাজিক দেখাবেন অর্থমন্ত্রী
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে নতুন সরকারের পুনর্গঠিত মন্ত্রিসভার কার্যক্রম ইতোমধ্যে পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে। নতুন মন্ত্রীদের অল্প কদিনের সচল কার্যক্রমের মাধ্যমে আপাতত রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর হলেও তা দিয়ে সংকটাপন্ন অর্থনীতির চেহারার এখনো বদল ঘটানো সম্ভব হয়নি। যদিও অর্থনীতিতে এখন নতুন অভিভাবক মিলেছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন নতুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। যেই মুহূর্তে তিনি এই দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন, তখন দেশের অর্থনীতি নানামুখী চক্রাকার সমস্যার মধ্যে আবর্তিত হচ্ছে। এই সংকট উত্তরণের নতুন রোডম্যাপ কী হবে, কবে নাগাদ তার সুফল মিলবে? আগের সরকারের আমলে নেওয়া পদক্ষেপগুলোই তার আগামী কর্মপরিকল্পনায় সংকট মোচনের পাথেয় হবে কি না, এর কোনো কিছুই এখনো পরিষ্কার হয়ে ওঠেনি। সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, অর্থনীতির বিদ্যমান সমস্যাগুলো অনেক পুরোনো, যা কাটিয়ে উঠতে আগে থেকেই অনেক পদক্ষেপ বাস্তবায়নাধীন, যদিও সেসব পদক্ষেপের মধ্যে অল্প কিছু পয়েন্ট বেসিসের মূল্যস্ফীতি কমে আসার লক্ষণ ছাড়া, অন্য কোনো দৃশ্যমান সুফল অর্থনীতিতে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এখন নতুন অর্থমন্ত্রী আগের পদক্ষেপগুলোর ধারাবাহিকতা ধরে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নতুন কী সংযোজন ঘটাবেন, সেটিই এখন দেখার বিষয়। যদিও দায়িত্ব নেওয়ার পর সামগ্রিক অর্থনীতি নিয়ে তিনি গণমাধ্যমে কথা বলেছেন খুবই কম। মন্ত্রণালয়ে একাধিক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রশ্নের পর প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হলেও তার যথার্থ উত্তর আসেনি। বলেছেন, ‘খুব মেপে মেপে এবং অতি অল্প কথায়। অনেকটা দেখছি, ‘দেখা যাক’, ‘আমরা কাজ করছি’। ‘একটু বুঝি, সময় দেন’, ‘আমরা সফল হব’ ইত্যাদি ধরনের মন্তব্য। দেশের অর্থনীতির গতিপথ পরিবর্তনের কৌশল প্রয়োগের বিষয়ে এখনই তিনি কিছু জানাতে চান না। অর্থ মন্ত্রণালয়ে একাধিক বৈঠক শেষে কালবেলার এ-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী শুধু জানিয়েছেন, মাত্র তো এলাম। একটু বুঝতে দেন। আগে কাজটি করতে দেন। একটু সময় দেন। অর্থাৎ অর্থনীতির চলমান সংকট মোচনের কাজটি তিনি করতে চান ধীরে ধীরে, বুঝেশুনে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, একদিকে দেশের আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার উপক্রম। ব্যাংকে ব্যাংকে তারল্য সংকট। ধার দিয়ে অনেক ব্যাংককে কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। খেলাপি ঋণের হার উদ্বেগজনক। আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোর পর্ষদ নিয়েও রয়েছে সীমাহীন অভিযোগের তীর। এই যখন অবস্থা, তখন সামষ্টিক অর্থনীতির চিত্রও নেই স্বস্তির জায়গায়। ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন। নানা পদক্ষেপেও দূর করা যাচ্ছে না ডলার সংকট। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চিতি বা রিজার্ভের ক্ষয়িষ্ণু দশাও কাটেনি, বরং ধারাবাহিক ঘাটতির কারণে ইতোমধ্যে দেশে বহুমুখী সংকট তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে নিত্যপণ্য আমদানি ছাড়া অন্যান্য আমদানিতে চাহিদানুযায়ী ডলার সরবরাহ মিলছে কম। আবার দাতা সংস্থাগুলোর বৈদেশিক ঋণের আগের ৫ মাসের তুলনায় গত ডিসেম্বরে দ্বিগুণ অর্থ ছাড় হলেও সেটি রিজার্ভের ঘাটতি পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পারছে না। যে পরিমাণ অর্থ ছাড় হচ্ছে, এই দিয়ে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রার চাহিদাও পূরণ হচ্ছে না। অনুদানের দরজাও প্রায় বন্ধ। অন্যদিকে বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর হার বাড়লেও সে অনুযায়ী প্রবাসী আয় আসছে কম। রপ্তানি আয় এখনো প্রবৃদ্ধির মধ্যে থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন থেকে অনেক দূরে। তদুপরি নতুন সংকট হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে লোহিত সাগরে হুতি বিদ্রোহীদের হামলার আতঙ্কে বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী পণ্যবাহী জাহাজের গতিপথ পরিবর্তন। ফলে কনটেইনারপ্রতি বাড়তি গুনতে হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ ডলার। এতে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানির নিট আয় কমে আসার সমূহ শঙ্কা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার পদক্ষেপও হিতে বিপরীত ফল দিচ্ছে। সব মিলে লাগামহীন মূল্যস্ফীতি অর্থনীতির জন্য এখন নীরব ঘাতক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সবচেয়ে বড় আতঙ্কের বিষয় হলো, সরকারের স্বনির্ভরতার মূল নিয়ামক রাজস্ব আদায়েও নেই গতি। বরং অর্থবছরের ৬ মাসের হিসাবে এরই মধ্যে ঘাটতি বেরিয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। সব মিলে সামষ্টিক অর্থনীতি এমন পর্যায়ে নেমে এসেছে, যেখানে খোদ সরকারকেই এখন রাজস্ব নীতির সঙ্গে মুদ্রানীতির সাংঘর্ষিক পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে কোনো লক্ষ্যই সঠিকভাবে অর্জিত হচ্ছে না। একদিকে রাজস্ব আয়ে ধস নামার পাশাপাশি বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ প্রবাহেও দেখা দিয়েছে তথৈবচ অবস্থা। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পায়নের উদ্যোগও গতি হারাতে বসেছে। সংকুচিত হয়ে আসছে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র। এসবের যোগফল মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিকেও এখন তলানিতে নামিয়ে এনেছে। সার্বিকভাবে জনতুষ্টি বজায় রেখে অর্থনীতি এগিয়ে নেওয়ার যে বাজেট রয়েছে, চলতি অর্থবছরে এর অধিকাংশ সূচকের লক্ষ্য অর্জন এখন ঝুঁকির মধ্যে। এ অবস্থায় সংকটাপন্ন অর্থনীতির হাল ধরতে নেমে ওইসব পদক্ষেপের সঙ্গে কী নতুন ম্যাজিক কৌশল দেখাবেন অর্থমন্ত্রী? এই নিয়ে ন্যূনতম অর্থনীতি বুঝেন—এমন সাধারণেরও কৌতূহলের শেষ নেই। অর্থমন্ত্রীর ম্যাজিক কৌশল জানতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উইংয়ে বেশ কিছুদিন যোগাযোগের চেষ্টা করেছে কালবেলা। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘আসলে অর্থনীতির বিদ্যমান সংকট সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বেশ ওয়াকিবহাল। তা ছাড়া সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে উত্তরণের অংশ হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয় আগে থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক-এনবিআরসহ বিভিন্ন অংশীজনের নিয়ে পরিকল্পিত রোডম্যাপ নিয়ে কাজ করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় বৈদেশিক ঋণ, মুদ্রানীতি, মুল্যস্ফীতি, ডলার বাজার, রাজস্ব খাত, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় সর্বোপরি চলতি অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে একের পর এক কাজ চলমান। এখন নতুন অর্থমন্ত্রীর সংকট মোচনের পদক্ষেপে আরও নতুন কিছু সংযোজন হয়তো হবে। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর, এনবিআর চেয়ারম্যান, অর্থ সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিবসহ বিভিন্ন ব্যাংকের প্রধানদের সঙ্গে দফায় দফায় বসে শলাপরামর্শ করেছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, খাদ্য ও শিল্পায়ন, জলবায়ুসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের গৃহীত পদক্ষেপের সম্পৃক্ততা এবং তার ফলাফল দেখছেন। একই সঙ্গে তিনি বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করেছেন। সামনে আরও আলোচনা হবে। এসবের ভেতর দিয়ে চলমান পদক্ষেপ বা কর্মসূচিগুলোর হালনাগাদ ফলাফল সমন্বয় করে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করবেন। সেখানে আগে নেওয়া হয়নি এমন অভিনব কিছু অর্থনৈতিক পদক্ষেপও আসতে পারে, যা সময় হলেই সবার কাছে স্পষ্ট হবে। অর্থনীতি নিয়ে কাজ করা বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর কালবেলাকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় জানান, ‘অর্থনীতির বিদ্যমান বাস্তবতা বলছে, এই মুহূর্তে সংকট মোচনের কোনো ম্যাজিক কৌশল অর্থমন্ত্রীর হাতে নেই। সেটি সম্ভবও নয়। আবার আগের পদক্ষেপগুলো এড়িয়ে সংকট উত্তরণের আরও নতুন কোনো কৌশল আছে বলেও আমি মনে করি না। কারণ, অর্থনীতির টুলসগুলো ব্যাকরণ মেনে চলে। সেখানে উদ্যোগ ছিল। অনেক ক্ষেত্রে কার্যকর হয়নি। নতুন অর্থমন্ত্রীকে সেই কাজের কাজটিই সুচারুভাবে করতে হবে। এর জন্য কিছুটা সময় তো অবশ্যই দেওয়া দরকার। এক প্রশ্নের জবাবে এই অর্থনীতিবিদ অর্থমন্ত্রীর প্রতি পরামর্শ রেখে বলেন, আর্থিক খাত (ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান), রাজস্ব খাত (শুল্ক-কর ও ভ্যাট), সার্বিকভাবে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট, মুদ্রাবাজার) নিয়ে খাতভিত্তিক বিশেষজ্ঞ ও সরকার প্রতিনিধির সমন্বয়ে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন পৃথক পৃথক কমিটি গঠন করা জরুরি। এ কমিটির চেয়ারম্যান হতে হবে সর্বজনস্বীকৃত বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি। যার তত্ত্বাবধানে গঠিত কমিটি ওই খাতের পোস্টমর্টেম করে প্রতিবেদন দেবে। অর্থমন্ত্রী সেই সুপারিশের আলোকে আগামীদিনের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন উদ্যোগ নিলে অর্থনীতির চলমান সংকট মোচন সম্ভব, যা দীর্ঘমেয়াদে টেকসই রূপ পাবে অর্থনীতি। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন কালবেলাকে বলেন, অর্থমন্ত্রীর সামনে এখন অনেক কাজ। সব কাজ তিনি একসঙ্গে সারতে পারবেন না। অগ্রাধিকার নির্ধারণের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক কিছু উদ্যোগ জরুরি, বিশেষ করে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফেরাতে সবার আগে নজর দেওয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও ডলারের সংকট দূরীকরণের উদ্যোগে আরও গতি বাড়িয়ে তার কঠোর প্রয়োগে যাওয়া জরুরি। এর সঙ্গে চলতি বাজেটের লক্ষ্যমাত্রাগুলো বাস্তবায়ন হবে না, সেটি এরই মধ্যে বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এখন এই বাজেটের যৌক্তিক সংশোধন ও সময়ের বাস্তবতায় আগামী বাজেটের নতুন কলাকৌশল নির্ধারণে মনোযোগী হতে হবে। তাহলে অর্থনীতি নিয়ে সরকারের চাপ অনেকাংশে কমে আসবে। এ ছাড়া আর্থিক খাত সংস্কার এবং রাজস্ব আদায় বাড়াতে কিছু উদ্যোগ মধ্যমেয়াদি এবং কিছু দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য ধরে অর্থমন্ত্রীকে কাজ করতে হবে। যেসব পদক্ষেপ এরই মধ্যে বাস্তবায়নাধীন, সেগুলোতে যদি কোনো জটলা থাকে তা ঝেড়ে ফেলতে হবে। বিশেষ করে অর্থনীতিকে নিরাপদ রাখতে হলে আর্থিক খাত সংস্কারে নতুন অর্থমন্ত্রীকে জোর দিতেই হবে।
৩০ জানুয়ারি, ২০২৪

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে নতুন মডেলে কাজ করতে চায় আইএমএফ
দেশের অর্থনীতিতে গতিশীলতা বাড়াতে ব্যাংক, রাজস্ব ও পুঁজিবাজারের মোট ৪৭টি সংস্কার প্রস্তাবের পাশাপাশি নতুন করে অর্থনৈতিক ভবিষ্যদ্বাণী মডেল প্রস্তুত করতে আগ্রহ দেখিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।  বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অর্থনৈতিক ভবিষ্যদ্বাণী মডেল প্রস্তুত প্রস্তাব করে আইএমএফের ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল। এ সময় সংস্থাটির পক্ষ থেকে ‘ইকোনমিক মডেল ফরকাস্টিং’ শীর্ষক একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করা হয়।  ঢাকায় সফররত দাতা সংস্থাটির কারিগরি সহায়তা (টিএ) প্রতিনিধি দল জানায়, নতুন মডেলের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সংকট নিরসন হবে এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি কমিয়ে আসবে। যার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে ও নতুন করে গতি লাভ করবে। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার আইএমএফের প্রতিনিধি দলের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এমন প্রস্তাব বাস্তবায়নে সকল সহযোগিতা করা হবে।  বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেছেন, আইএমএফের কারিগরি কমিটির সঙ্গে বৈঠকে অর্থনৈতিক ফরকাস্টিং মডেলসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনা হয়েছে। গভর্নর তাদের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, গত ১৮ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে নীতি সুদহারের করিডোর প্রথা, সুদহারের সীমা প্রত্যাহার ও রিজার্ভের প্রকৃত হিসাবায়নসহ নানা বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। তার আগে গত বছরের জুলাই মাসে সংস্থাটির কাছে ঋণের আবেদন করে সরকার। ঋণের শর্ত হিসাবে সংস্থাটির পক্ষে থেকে ৪৭টি সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এসব দাবি ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদ দেওয়া হয়। যার প্রথম কিস্তির অর্থ ছাড় করে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ নভেম্বর মাসে মিলতে পারে।  
২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

মো. মশিউর রহমান / বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের উপায়
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের আড্ডা থেকে গ্রামের চায়ের আড্ডা—সবাই দেশের অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে কথা বলছে, সবাই বলছে ঋণ বেশি, দ্রব্যমূল্য বেশি, খেলাপি ঋণ বেশি, রপ্তানি কম, রেমিট্যান্স কম এবং ডলার সংকট প্রভৃতি। আমরা আজকের লেখায় সমস্যার সমাধান লেখার চেষ্টা করব।  মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা: কোনো পণ্য বা সেবার দাম বেড়ে গেলে সেই বর্ধিত দামকে বলে মূল্যস্ফীতি। মূল্যস্ফীতি মোকাবিলার জন্য সবাই ঋণের সুদের হার বাড়িয়ে দেয় এই যুক্তিতে, অর্থ সরবরাহ কমলে মানুষ কম কিনবে তাই পণ্যের দামও কমে যাবে। ইহা একটি ভুল ধারণা, কারণ যারা ব্যবসা করেন তাদেরও তখন উচ্চসুদে ঋণ নিতে হয়। তাই তাদের উৎপাদন খরচ বা ব্যবসা খরচ বেড়ে যায়। খরচ বাড়লে কেউই আর কমদামে বিক্রি করতে পারে না অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যায়। মূলকথা হলো, মূল্যস্ফীতি আর সুদের সঙ্গে রয়েছে ধনাত্মক সম্পর্ক। অর্থাৎ একটি বাড়লে আরেকটি বাড়ে। তাই সুদের হার বাড়িয়ে আমরা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ভুল দর্শনে এগিয়ে যাচ্ছি।   মূল্যস্ফীতির প্রধান খাত হলো, খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়া এবং আমদানি দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়া। বাংলাদেশে একদিকে যেমন প্রচুর মানুষ রয়েছে অন্যদিকে রয়েছে উর্বর জমি। কৃষিঋণ সহজীকরণ (স্বল্প সুদ ও প্রান্তিক কৃষককে সরাসরি ঋণপ্রদান) ও আধুনিক উৎপাদন পদ্ধতিতে বাংলাদেশ খুব সহজেই খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে পারে এবং খাদ্য পরিবহন ও ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে সব ধরনের অনিয়ম বন্ধে ব্যবস্থা নিলে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতির সমস্যা সমাধান হবে, যেমন: পাইকারি বাজারের ব্যবস্থাপনা ও পরিবহন খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। অন্যদিকে দেশের ভেতরেই প্রচুর মানুষ থাকায় উৎপাদন বাড়লেও যথেষ্ট ভোক্তা পাওয়া যাবে তাই মন্দার সৃষ্টি হবে না। কৃষির ওপর বিশেষ নজরই দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে, যা একই সঙ্গে জনতুষ্টিও ঘটাবে। অন্যদিকে, আমদানি দ্রব্যের মধ্যে বিলাসদ্রব্য দেশে উৎপাদন সহজতর হলে এবং ব্যবসায় সব ধরনের বাধা দূর করা গেলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ কোনো কঠিন কাজই হবে না।   রাজস্ব আদায় ও আয়-ব্যয়ের ঘাটতি কমিয়ে আনা:  কম রাজস্ব ও অতিরিক্ত রাজস্ব উভয়ই ক্ষতিকর। উচ্চ ট্যাক্স ও ভ্যাট দুর্নীতি বাড়িয়ে দেয়। কারণ তখন অনেকেই ঘুস দিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দিতে চাইবে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য সর্বত্র ট্যাক্স গভরন্যান্স বাস্তবায়ন করতে হবে। ট্যাক্স গভরন্যান্স ছাড়া করপোরেট গভরন্যান্স কেবল ফাঁকা বুলি।  উল্লেখ্য, অনেক ব্যবসায়ীর, ব্যাংকঋণ, আয়, ট্যাক্স, ক্যাশফ্লো ও খরচের সঙ্গে ম্যাচিং পাওয়া যায় না। অনেকের আবার একাধিক কোম্পানির লাইসেন্স থাকলেও মজুত পণ্য একই গুদামে থাকে। কারণ, তাদের ব্যবসার ধরন অভিন্ন। অভিন্ন পণ্য নিয়ে একাধিক কোম্পানির ব্যবসা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এ প্রক্রিয়ায় এবং সচ্ছতা ও জবাবদিহির মাধ্যমে রাজস্ব আদায় ও আয়-ব্যয়ের ঘাটতি কমিয়ে আনা সম্ভব।     ব্যালেন্স অব পেমেন্ট এবং বৈদেশিক মুদ্রা:  অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির যে অস্থিতিশীলতা রয়েছে, তা সমাধানে মূল্যস্ফীতি, বিনিময়মূল্যের অস্থিরতা, ব্যালেন্স অব পেমেন্ট ঘাটতি কমিয়ে আনা আর রিজার্ভ কমে যাওয়া; এসবের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এসব কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়া, শ্রমবাজারে সংকট তৈরি হওয়া এবং সামাজিক সহায়তা কর্মসূচি সীমিত হয়ে পড়া। এগুলোর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। যেহেতু বৈদেশিক লেনদেনের ওপর ঘাটতি বড় আকারে এসেছে, সে জন্য টাকার বিনিময় হারের ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে। টাকার আরও পতন হলে তো আমদানি করা পণ্যের দাম আরও বাড়বে।  এসব সমস্যার সমাধানের অন্যতম একটি উপায় হলো প্রবাসীদের নিরাপত্তা, সম্মান ও সহযোগিতা এবং আরও বেশিসংখ্যক মানুষকে দক্ষ করা ও ভর্তুকি ঋণে বিদেশে শ্রমিক পাঠানো। দেশের ভেতরে একটি নিরাপদ ও কম ব্যয়বহুল পেমেন্ট সিস্টেম গড়ে তোলা, উদ্যোগ নিলে সহায়তা করতে পারব। বাংলাদেশের সর্বত্র ইন্টারনেট সুবিধা বিদ্যমান এবং দরিদ্র মানুষের হাতেও রয়েছে স্মার্টফোন। এ প্রক্রিয়ায় মোবাইলভিত্তিক ব্যয়বহুল পেমেন্ট সিস্টেম এর পাশাপাশি স্বল্প খরচের ইন্টারনেটভিত্তিক পেমেন্ট সিস্টেম একান্ত প্রয়োজন। ইন্টারনেটভিত্তিক পেমেন্ট সিস্টেমে সব ব্যাংকের জন্য একটি মাত্র অ্যাপ্লিকেশন (অ্যাপ) ডেভেলপ কার্যকর করা যেতে পারে। ইহা একান্ত প্রয়োজন। অন্যদিকে দেশের যুবক শ্রেণির মানুষ সব থেকে বেশি, তাই সাহসী উদ্যোগ নেওয়া একান্ত কাম্য। কারিগরি শিক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিয়ন্ত্রণও প্রয়োজন, যার অনেকটাই বর্তমানে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।  সেবা ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবহার হয় তার একটি খাত হলো, লেটার অব ক্রেডিট বা এলসির জন্য সুইফটে তথ্য আদান-প্রদান।  বাংলাদেশে রপ্তানির বিপরীতে প্রচুর ব্যাক টু ব্যাক এলসি খুলতে হয় যার কিছু থাকে দেশের ভেতরে এবং কিছু থাকে দেশের বাইরে। দেশের অভ্যন্তরে ব্যাক টু ব্যাক এলসির জন্য সুইফট ম্যাসেজের পরিবর্তে নিজেরাই একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে পারি, যার কেন্দ্রে থাকবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এভাবে আমরা ডলার খরচ কমাতে পারি এবং নিজ দেশে সফল হলে অন্যদেশে বিক্রয় করেও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন সম্ভব।   এভাবে আমরা বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়াতে পারি এবং খরচ কমাতে পারি, যা একান্ত প্রয়োজন।   আর্থিক খাতের ব্যবস্থাপনা:  দেশে এখনো নন-ব্যাংক পপুলেশন অনেক বেশি তাই ব্যাংকিং পরিধি পল্লি এলাকায় ছড়িয়ে যাচ্ছে এবং আরও ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন। ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোগ একটি সময় উপযোগী ও সঠিক সিদ্ধান্ত।  অন্যদিকে খেলাপি ঋণের বৃদ্ধি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে উইপোকার মতো খেয়ে ফেলে সব অর্জন ধ্বংস করে দিচ্ছে। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ দুটি। যথা, ঋণগ্রহীতা নির্বাচনের আগে তার ঋণ প্রয়োজনীয়তা ও আচরণ যাচাই করে না নেওয়া বা দুর্বলভাবে নেওয়া। দ্বিতীয় কারণ হলো, ঋণ দেওয়ার পরে ঋণের ব্যবহার নিয়ে যথাযথ নিয়ন্ত্রণ না থাকা। এ দুটি সমস্যার সমাধান করা গেলে খেলাপি ঋণের সমস্যা অনেকাংশেই সমাধান হয়ে যাবে।   এ কারণেও আমাদের একটি দক্ষ, নিরাপদ ও কম খরচের পেমেন্ট সিস্টেম একান্ত প্রয়োজন। ট্যাক্স গভরন্যান্স এবং খেলাপি ঋণের সঙ্গে ক্যাশফ্লো মিলিয়ে দেখা একান্ত প্রয়োজন। বৃহৎ করপোরেট যেন ব্যাংকে ঋণের জন্য না যায় বরং ক্যাপিটাল মার্কেটে যায় সে ব্যবস্থা করতে হবে এবং ব্যাংকঋণের ক্ষেত্র খুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে।  এভাবেই আমরা দক্ষ জনবল, উন্নত কৃষি ও খাদ্য সমস্যার সমাধান, স্বচ্ছ ও শক্তিশালী আর্থিক ব্যবস্থা, কম ব্যায়ের নিরাপদ পেমেন্ট সিস্টেম, বৈদেশিক মুদ্রার সরবারহ বৃদ্ধিতে সহজ সমাধান খুঁজে পেতে পারি এবং একটি সত্য ও সুন্দরের উন্নত বাংলাদেশ পেতে পারি।   মো. মশিউর রহমান : ব্যাংকার 
০৫ আগস্ট, ২০২৩
X