ইআরডিএফবি এর আয়োজনে `বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন ভাবনা' শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত গবেষণাভিত্তিক সংগঠন 'এডুকেশন, রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম বাংলাদেশ (ইআরডিএফবি) এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে "বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন ভাবনা" শীর্ষক সেমিনার। ২৫ আগষ্ট (শুক্রবার) জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য ও ইআরডিএফবি'র সম্মানিত সভাপতি অধ্যাপক ড. মোঃ সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে উক্ত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সম্মানিত প্রাক্তন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী।
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, সর্বকালের-সর্বযুগের-সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের একটি চেতনা ও অধ্যায়ের নাম। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এই দুটি নাম একে অপরের পরিপূরক যা আজ ঐতিহাসিকভাবে সমাদৃত। বঙ্গবন্ধু ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, সুস্থ, সবল জ্ঞান, চেতনা সমৃদ্ধ, কোনরকম ভেদ বৈষম্যহীন, শোষণহীন, অসাম্প্রদায়িক, চেতনায় উদ্বুদ্ধ দেশপ্রেমিক মানুষের উন্নত সমৃদ্ধ এক আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুননির্মাণের পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প, সংস্কৃতি, গবেষণা, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে বঙ্গবন্ধু গ্রহণ করেছিলেন বিভিন্ন ধরনের যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
সেমিনারে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামান। উক্ত সেমিনারের উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ‘ইআরডিএফবি’ এর সম্মানিত সিনিয়র সভাপতি এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল জব্বার খান।
প্রধান অতিথি অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেন, উন্নত বাংলাদেশ গড়তে যা যা দরকার ১৯৭০ এর নির্বাচনি ইশতেহারে বঙ্গবন্ধু তা তুলে ধরেছিলেন। সকল প্রকার অন্যায় এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে আপোষহীন বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন একটি উন্নত এবং সমৃদ্ধশালী অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণার উন্নয়ন এবং নারী ক্ষমতায়নসহ বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ৯২ ডলার থেকে মাত্র ৩ বছরে ৩ গুন বাড়িয়ে তা ২৫০ থেকে ৩০০ ডলারে উন্নিত করেন। বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন ভাবনা ছিলো মূলত এদেশের খেটে-খাওয়া অসহায় কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর দরিদ্র মানুষের উন্নয়নকেন্দ্রীক। এখন যারা বাংলাদেশের উন্নয়ন কাজের সাথে জড়িত তাদের উচিত বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শনকে অনুসরণ করে সকল অসমতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া।
প্রধান আলোচক অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন ভাবনার মূল দর্শন ছিল, কাউকে বেশি ধনী হতে দেওয়া যাবেনা এবং কেউ গরীব থাকবেনা। আজকে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও যা হবে তার রূপরেখা বঙ্গবন্ধু এঁকেছিলেন স্বাধীনতার পূর্বেই। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই ছিল বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন ভাবনার মূল লক্ষ্য। উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মানে বঙ্গবন্ধুই প্রথম একটি পরিকল্পনা কমিশন গঠন এবং পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। উন্নত ও এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণে কৃষি, শিল্প এবং অবকাঠামো উন্নয়ন কিভাবে সাজাতে হবে তা ৭০ এর নির্বাচনী ইশতেহারে বঙ্গবন্ধু তুলে ধরেছিলেন।
সেমিনারে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উন্নয়ন দর্শনকে মুছে দিতে ৭৫ এর পর বঙ্গবন্ধুর খুনীরা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল। বঙ্গবন্ধু সবসময় মানবাধিকার ,শিক্ষা, গবেষণা, স্বাস্থ্য, কৃষি এবং শিল্পের উন্নয়নের কথা বলতেন। বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন ভাবনাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা উন্নত, সমৃদ্ধ এবং অসাম্প্রদায়িক বর্তমান বাংলাদেশের উন্নয়ন ব্যাহত করতে একটি কুচক্রী মহল ওঠে পড়ে লেগেছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু এই অদম্য বাংলাদেশকে দমিয়ে রাখা যাবেনা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এছাড়াও বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন ভাবনা ছিলো মানবিক উন্নয়ন ভাবনা। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু যে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার সবগুলোই তিনি করে দেখিয়েছেন। একটি মানব উন্নয়নমূলক বাংলাদেশ গঠনে বঙ্গবন্ধু জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত কাজ করে গিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর মতো এমন কমিটেড একজন নেতা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম বলেন, সকলের জন্য সমঅধিকার নিশ্চিত করে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মানে বঙ্গবন্ধু জীবনের শেষ সময়টুকু পর্যন্ত লড়ে গিয়েছেন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের অসহায় এবং দরিদ্র মানুষের উন্নয়ন এবং যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় নারীদের পিতৃ পরিচয় দিয়ে বীরাঙ্গনা সম্মানে ভূষিত করেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন ভাবনার উপর ভিত্তি করেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন উন্নত ও ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের পথে হাটছে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় কোষাধ্যক্ষ এবং ইআরডিএফবি এর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোঃ বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় সেমিনারে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপ-উপাচার্য ও ইআরডিএফবি এর সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খান।
২৫ আগস্ট, ২০২৩