ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উদযাপিত
নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সারা দেশে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উদযাপিত হয়েছে। ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের দিনটি উদযাপন উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বর্ণিল কর্মসূচির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা ও তার ভাষণের মর্মার্থ ও গুরুত্ব তুলে ধরে দিনটি উদযাপন করে। গতকাল সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। এই মহান নেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। প্রধানমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষের পদচারণায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এদিন প্রধানমন্ত্রী গণভবনে একটি স্মারক ডাকটিকিট, একটি উদ্বোধনী খাম এবং একটি ডাটা কার্ড ৭ অবমুক্ত করেন। বিকেলে তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আলোচনা সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেন শেখ হাসিনা। সিরডাপ মিলনায়তনে ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট ইনার গার্ডেনে ‘স্মৃতি চিরঞ্জীব’ স্মারকসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। ইউজিসি ভবনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে আলোচনা সভা ও বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
০৮ মার্চ, ২০২৪

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আবেগঘন স্মৃতিচারণ
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, এই মাস এলেই মনে হয় হৃদয়ের মাস, বঙ্গবন্ধুর মাস চলে এসেছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের কারণে নিরস্ত্র বাঙালি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) বিকেলে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সরকারি গিরিজা শংকর মডেল স্কুল ও কলেজ মাঠে ‘মায়ের তরী’র আয়োজনে দুই দিনব্যাপী লোকসংগীত উৎসবের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ৭ মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তার ভাষণের আবেগে আমরা পেছনে ফিরে না তাকিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আজ সেই ঐতিহাসিক ৭ মার্চ।’ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। এ সময় অর্ধনীতিবিদ প্রফেসর ড. মোজাম্মেল হক, রংপুর বিভাগীয় পুলিশের মহাপরিদর্শক আব্দুল বাতেন, লালমনিরহাট পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম, কবি ও সমাজসেবক ফেরদৌসী বেগম বিউটি, লালমনিরহাট পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম স্বপন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
০৭ মার্চ, ২০২৪

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ নিয়ে যা বললেন সাকিব আল হাসান
মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান বলেন, ‘আমার মনে হয়, ৭ মার্চের এই দিনের মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে পুরো বাঙালি জাতি একত্রিত হয়। তারা যেভাবে যুদ্ধে নেমেছিলেন বিশ্বে আর কোথাও এটা ঘটেনি।’ বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) সকালে মাগুরা বীর মুক্তিযোদ্ধা আছাদুজ্জামান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘৭ মার্চের’ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সাকিব আরও বলেন, ‘এই বক্তব্যে (৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ) যে তাৎপর্য আছে সেই তাৎপর্যকে আমরা নিয়মিতভাবে তুলে ধরব। বিশেষ করে প্রতিটি পাঠাগারে নিয়মিত আলোচনা করতে হবে। এতে তরুণ প্রজন্ম দেশ প্রেমে আরও উদ্বুদ্ধ হতে পারবে।’ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক প্রশান্ত কুমার বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন মাগুরা-২ আসনের সংসদ সদস্য ড. বীরেন শিকদার, পুলিশ সুপার মশিউদ্দৌলা রেজা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ফাত্তাহ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পঙ্কজ কুমার কুন্ডু, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবু নাসির বাবলু, পৌর মেয়র খুরশীদ হায়দার টুটুল, মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক রিজভী জামান, সিভিল সার্জন ডাক্তার মো. শামীম কবির অন্যরা। এর আগে সকাল ১০টায় স্থানীয় নোমানী ময়দানে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে অতিথিদের নিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন সাকিব আল হাসান।
০৭ মার্চ, ২০২৪

মালয়েশিয়ায় দূতাবাসের উদ্যোগে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালিত
মালয়েশিয়ায় রাজধানী কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের দূতাবাসের উদ্যোগে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) রাজধানী কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। পরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামিম আহসান।  এ সময় হাইকমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারিবৃন্দ ও কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া অনুষ্ঠান শেষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।  সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে দিবসটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ইউনেস্কো স্বীকৃত বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুধুই একটি ভাষণ নয়, এ ভাষণ পুরো জাতিকে দিক নির্দেশনা দিয়েছিল। এ ভাষণের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণাও দিয়ে গেছেন বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।   এ সময় দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন হাইকমিশনের কাউন্সেলর (কনসুলার) জি এম রাসেল রানা ও প্রথম সচিব (বাণিজ্য) প্রণব কুমার ঘোষ।  প্রথম সচিব (রাজনৈতিক) রেহানা পারভিনের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ভাষণের কিছু অংশ দেখানো হয়।  এ সময় স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর শহীদদের স্মরণে দোয়া ও মোনাজাত এবং এক মিনিটের নিরাবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকর্মী, মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও শ্রমিকলীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
০৭ মার্চ, ২০২৪

আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ
আজ বৃহস্পতিবার ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক অনন্য দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তদানীন্তন রেসকোর্স ময়দান) বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন। এদিন লাখ লাখ মুক্তিকামী মানুষের উপস্থিতিতে এই মহান নেতা বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব, ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একাত্তরের ৭ মার্চ দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণ পরবর্তীতে স্বাধীনতার সংগ্রামের বীজমন্ত্র হয়ে পড়ে। একইভাবে এ ভাষণ শুধু রাজনৈতিক দলিলই নয়, জাতির সাংস্কৃতিক পরিচয় বিধানের একটি সম্ভাবনাও তৈরি করে। মূলত বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণের আহ্বানেই মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করে বাঙালি। পরে ২৫ মার্চের কালরাতে পাকবাহিনীর নৃশংস গণহত্যার পর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিকবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো। একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর এই উদ্দীপ্ত ঘোষণায় বাঙালি জাতি পেয়ে যায় স্বাধীনতার দিক-নির্দেশনা। এরপরই দেশের মুক্তিকামী মানুষ ঘরে ঘরে চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর এই বজ্রনিনাদে আসন্ন মহামুক্তির আনন্দে বাঙালি জাতি উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। যুগ যুগ ধরে শোষিত-বঞ্চিত বাঙালি ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে যায় কাঙ্ক্ষিত মুক্তির লক্ষ্যে। ১৯৪৭ সালে ধর্মীয় চিন্তা, সাম্প্রদায়িকতার মানসিকতা ও দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে গঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিসত্ত্বা, জাতীয়তাবোধ ও জাতিরাষ্ট্র গঠনের যে ভিত রচিত হয় তারই চূড়ান্ত পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর ছাত্র-কৃষক-শ্রমিকসহ সর্বস্তরের বাঙালি স্বাধীনতা অর্জনের জন্য মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে আনে বাঙালি জাতি। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণে গর্জে ওঠে উত্তাল জনসমুদ্র। লাখ লাখ মানুষের গগনবিদারী স্লোগানের উদ্দামতায় বসন্তের মাতাল হাওয়ায় সেদিন পত্ পত্ করে ওড়ে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লাল-সবুজের পতাকা। লক্ষ শপথের বজ্রমুষ্টি উত্থিত হয় আকাশে। সেদিন বঙ্গবন্ধু মঞ্চে আরোহণ করেন বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে। ফাগুনের সূর্য তখনো মাথার ওপর। মঞ্চে আসার পর তিনি জনতার উদ্দেশে হাত নাড়েন। তিনি দরাজ গলায় তাঁর ভাষণ শুরু করেন, ‘ভাইয়েরা আমার, আজ দুঃখ-ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি...।’ এরপর জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বাংলা ও বাঙালির স্বাধীনতার মহাকাব্যের কবি ঘোষণা করেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম..., এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ মাত্র ১৯ মিনিটের ভাষণ। এই স্বল্প সময়ে তিনি ইতিহাসের পুরো ক্যানভাসই তুলে ধরেন। তিনি তাঁর ভাষণে সামরিক আইন প্রত্যাহার, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, গোলাগুলি ও হত্যা বন্ধ করে সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া এবং বিভিন্ন স্থানের হত্যাকাণ্ডের তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি জানান। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ভাইয়েরা আমার, আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, মানুষের অধিকার চাই। প্রধানমন্ত্রিত্বের লোভ দেখিয়ে আমাকে নিতে পারেনি। ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে দিতে পারেনি। আপনারা রক্ত দিয়ে আমাকে ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্ত করে এনেছিলেন। সেদিন এই রেসকোর্সে আমি বলেছিলাম, রক্তের ঋণ আমি রক্ত দিয়ে শোধ করব। আজও আমি রক্ত দিয়েই রক্তের ঋণ শোধ করতে প্রস্তুত।’ তিনি বলেন, ‘আমি বলে দিতে চাই আজ থেকে কোর্ট-কাচারি, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সব অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। কোনো কর্মচারী অফিসে যাবেন না। এ আমার নির্দেশ।’ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সর্বশেষ দুটি বাক্য, যা পরবর্তীতে বাঙালির স্বাধীনতার চূড়ান্ত লড়াইয়ের দিক-নির্দেশনা ও প্রেরণার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব, ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা’। ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান তার একটি লেখায় বলেছেন, ‘সাতই মার্চের ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক চিন্তাধারার পরিচয় দিয়েছেন। রণকৌশলের দিক থেকে এই ভাষণ অসাধারণ। এই বক্তৃতা এখনো মানুষকে শিহরিত করে। তিনি বলেন, এই বক্তৃতার আগে রাজনৈতিক কর্মী ও জনসাধারণ স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতা ঘোষণা করলে যে পাকিস্তানি সেনা শাসকরা সর্বশক্তি প্রয়োগ করে তাঁদের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়ে যাবে, সে বিষয়েও তিনি অবহিত ছিলেন। আনিসুজ্জাামান বলেন, স্বাধীনতা ঘোষণা করবেন কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু নিউজউইকের এক সাংবাদিককে বলেছিলেন ‘আমরা তো সংখ্যাগরিষ্ঠ। পশ্চিমাদের ওপর নির্ভর করছে তারা বিচ্ছিন্ন হতে চায় কি না।’ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এবং সেই সভায় উপস্থিত তোফায়েল আহমেদ তার একটি লেখায় বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর চশমাটা সেদিন ডায়াসের ওপর রেখে ১৯ মিনিটের যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তার পুরোটাই অলিখিত। একদিকে তিনি পাকিস্তানিদের প্রতি চার দফা শর্ত আরোপ করলেন, অন্যদিকে ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তুলতে বললেন। ভাতে মারার কথা বললেন, পানিতে মারার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘সাতই মার্চের আগে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি গিয়েছিলাম। একজন তাঁকে বললেন জনগণ কিন্তু সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ঘোষণা ছাড়া মানবে না। বঙ্গবন্ধু তাঁকে বললেন, তুমি তোমার কাজ করো। আমি তাদের নেতা, আমি তাদের পরিচালিত করব, তারা আমাকে নয়।’ বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের শ্রেষ্ঠত্বের কথা তুলে ধরে ইতিহাসের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণের পর গোটা বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের পরিবর্তে বাঙালিদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। অনেকে বিভিন্ন জায়গায় পূর্ব পাকিস্তান শব্দ মুছে বাংলাদেশ লিখে। তিনি বলেন, এ ভাষণের পর গোটা দেশ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় চলতে থাকে। এ ভাষণ গুটিকয়েক রাজাকার ছাড়া গোটা বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ ভোর ৬টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। এ ছাড়া এদিন বিকেল ৪টায় ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবনে (তেজগাঁও) আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
০৭ মার্চ, ২০২৪
X