বগুড়ায় ওষুধ ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট
নওগাঁয় ঔষধ প্রশাসনের হয়রানিমূলক মামলার প্রতিবাদে বগুড়ায় ঘণ্টাব্যাপী দোকান বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন করেছে ওষুধ ব্যবসায়ীরা। রোববার (৫ মে) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিসিডিএস বগুড়া জেলা শাখার সব ওষুধ ব্যবসায়ীরা এ ধর্মঘট পালন করেন। এ সময় সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তাকের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা বাদল কুন্ডু, এনজি পোদ্দার, আতাউর রহমান, আতিকুর রহমান সোহেল, জাহিদুল বারী জাহিদ, রনি, ইনছান আলী, ফারুক হোসেন, জাহিদুর রহমান, মিজান, মাসুদ রানা প্রমুখ। বক্তারা বলেন, নওগাঁ জেলার ঔষধ প্রশাসন হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে। এর প্রতিবাদে আমরা রাজশাহী বিভাগে ঘণ্টাব্যাপী এ প্রতীকী ধর্মঘট পালন করছি। ফুড সাপ্লিমেন্ট ডাক্তাররা লিখছেন আর আমরা বিক্রি করতে গেলেই হয়রানির শিকার হচ্ছি। জরিমানা দিতে হচ্ছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। শিগগিরই যদি ওষুধ ব্যবসায়ীদের প্রশাসন কর্তৃক হয়রানি বন্ধ না হয় তাহলে আমরা বৃহত্তর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। এ সময় বক্তারা বলেন, আমাদের আন্দোলনের সময় ওষুধের দোকান বন্ধ থাকায় ক্রেতাদের সাময়িক সমস্যা হওয়ায় আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
০৫ মে, ২০২৪

ফার্মেসির দুর্বলতায় ওষুধ নিয়ে দুশ্চিন্তা
সারা দেশে চলছে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ। তীব্র গরমে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। গরমজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের চেম্বারে ভিড় বাড়ছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে ওষুধ সেবনের প্রয়োজনীয়তা। অস্বাভাবিক এই গরমে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ নিয়ে তৈরি হয়েছে আরেক দুশ্চিন্তা। কারণ বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের অধিকাংশ ফার্মেসিতে (দোকান) ওষুধ সংরক্ষণের জন্য উপযোগী তাপমাত্রা বজায় রাখা যাচ্ছে না। এ কারণে অনেক ক্ষেত্রে কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। শুধু এ বছর নয়, প্রতি এপ্রিল, মে ও জুন জুড়েই দেশের বেশিরভাগ এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশে যথাযথ তাপমাত্রায় সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকলে অনেক ওষুধই মানবদেহের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে বলে জানিয়েছেন ফার্মাসিস্টরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানী থেকে গ্রাম পর্যন্ত বাংলাদেশের বেশিরভাগ ওষুধের দোকান বা ফার্মেসি টিনশেডের। যেখানে সিংহভাগের রেফ্রিজারেটরের ব্যবস্থাই নেই, সেখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তো বিলাসিতা। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা হলো, সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণ করতে হবে। আর কিছু কিছু সংবেদনশীল ওষুধ মাইনাস তাপমাত্রায়ও রাখতে হতে পারে। তা না হলে ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট হতে পারে। সে রকম কোনো ওষুধ সেবন করলে সুস্থতার পরিবর্তে শারীরিক ক্ষতির কারণও হতে পারে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘দেশে প্রায় ছয় মাস গড় তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকে। অথচ ওষুধ সংরক্ষণের জন্য ঘরের তাপমাত্রা হতে হবে ১৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেটা না হলে ওষুধের তিন ধরনের ক্ষতি হতে পারে। প্রথমত অতিরিক্ত তাপমাত্রায় ওষুধের কার্যকারিতা হারাতে পারে। দ্বিতীয়ত ওষুধের লাইফটাইম বা মেয়াদকাল (নির্ধারিত সময়ের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া) কমে যেতে পারে। তৃতীয়ত ওষুধে ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বাড়তে পারে।’ জাতীয় ওষুধ নীতিতেও ফার্মেসিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং রেফ্রিজারেটর থাকা বাধ্যবাধকতা। অথচ শুধু ফার্মেসি নয়, সরকারি অনেক হাসপাতালেও নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণে উদাসীনতা লক্ষ করা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রচলিত সব ধরনের ওষুধ মূলত তিনটি ভাগে বিভক্ত—বায়োমেডিকেল, অ্যান্টিবায়োটিক এবং জেনারেল মেডিসিন। এর মধ্যে সব ধরনের ইনসুলিন, প্রতিষেধক ভ্যাকসিনসহ বায়োমেডিকেল ধরনের ওষুধ ৪ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হবে। ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকজনিত অ্যালার্জি, চোখ ওঠা, পেটের পীড়া, লাইম রোগ, ডায়রিয়া, যক্ষ্মা, কলেরা, মশাবাহিত ম্যালেরিয়া, মূত্রনালি প্রদাহ, যৌনবাহিত রোগ সিফিলিস, গনোরিয়া, ক্লামিডিয়া, পেনিসিলিনসহ অন্যান্য রোগের অ্যান্টিবায়োটিক সাধারণত ১২ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। এ ছাড়া দেশে প্রচলিত অন্যান্য সাধারণ ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল জাতীয় ওষুধ ১৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার নির্দেশনা রয়েছে। এর ব্যত্যয় ঘটলে ওষুধের কার্যকারিতা ও মেয়াদকাল কমে যেতে পারে। এসব ওষুধ ব্যবহার করলে জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখা না হলে অর্থ খরচ করে ওষুধ খেয়েও কাজ হবে না জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল টেকনোলজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. এ বি এম ফারুক কালবেলাকে বলেন, ‘বেশি গরমে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগেই ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। আমরা বারবার বলে আসছি, ফার্মেসিগুলোতে যেন এসি রাখে। তা না হলে দোকানদারের অজান্তেই ওষুধের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যাবে। সাধারণ মানুষ অর্থ খরচ করে ওষুধ কিনে খেয়েও কাজে আসবে না।’ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে নিবন্ধিত ফার্মেসি বা ওষুধের দোকান সংখ্যা ২ লাখ ৩২ হাজার ৫৩৫টি। এর মধ্যে মাত্র ৫২৮টিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রয়েছে। এর বাইরেও নিবন্ধনহীন অনেক ফার্মেসি রয়েছে। গত শনিবার দুপুরে সরেজমিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় দেখা গেছে, ওয়েলবিং, লাজফার্মা, একেএস, পারুল ফার্মেসিসহ হাতেগোনা কয়েকটি দোকানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে। এর বাইরে অন্তত অর্ধশত দোকানে নেই কোল্ড চেইন বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। তবে রেফ্রিজারেটর ব্যবস্থা রয়েছে অধিকাংশের। ঢামেক হাসপাতালের দক্ষিণ গেট সংলগ্ন একটি ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী কালবেলাকে বলেন, ‘নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণ না করলে গুণগত মান কমতে পারে, বিষয়টি আমরাও জানি। কিন্তু প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে কেউ খরচ বাড়াতে চায় না। তাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বা এসি স্থাপন করে খরচ বাড়াতে চাই না। তবে সংবেদনশীল ওষুধ রেফ্রিজারেটরে রাখি।’ রাজধানীর ধানমন্ডি-২ নম্বর সড়কে পপুলার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বিপরীতে ধানমন্ডি ফার্মেসিতে গিয়ে কথা কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম পরিচালক জাবের আহমেদের সঙ্গে। তিনি নিজেও একজন স্নাতক ফার্মাসিস্ট। তিনি জানান, ধানমন্ডি এলাকায় তাদের দুটি শাখা আছে। দুটোতেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে। জাবের আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ‘নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণ করা খুব জরুরি। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। অর্থ খরচ করে জীবনরক্ষাকারী ওষুধ কিনে ভোক্তা প্রতারিত হবে। তবে ব্যবসায়িক চিন্তা থেকে অনেকেই এসব বিষয়ে উদাসীন, যা মোটেও কাম্য নয়।’ ওষুধ বিপণন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে মডেল ফার্মেসি চালু করা হয়েছিল। কিন্তু সেই উদ্যোগও এখন থমকে গেছে। এ অবস্থায় সারা দেশে ফার্মেসিতে সুনির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণে নজরদারি বাড়ানোর দাবি উঠেছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুনির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণ বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে উদাসীন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। দেশের সিংহভাগ ওষুধের দোকানে নেই কোল্ড চেইন বা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণের ব্যবস্থা। এ ক্ষেত্রে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে না অধিদপ্তর। এমন পরিস্থিতিতে মাঠপর্যায়ে ওষুধের সংরক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল, ওষুধ শিল্প সমিতি, ওষুধ মালিক সমিতি, বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নয়তো অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়। জানা গেছে, প্রতিবেশী দেশ ভারতেও প্রসূতি ও নবজাতকদের মৃত্যুর ঘটনায় ওষুধের কোল্ড চেইন ঠিকমতো কাজ না করার অভিযোগ উঠেছিল। সেখানে জনস্বার্থে বিষয়টিতে বেশ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। এতে সে দেশে ওষুধ সংরক্ষণের সার্বিক পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রে ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) ওষুধ রক্ষণাবেক্ষণ যেন নিয়ন্ত্রণ করা হয়, সেদিকে কড়া নজরদারি বজায় রাখে। সৌদি আরবের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অথরিটি (এসএফডিএ), মালদ্বীপে মালদ্বীপস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অথরিটি (এমএফডিএ), ঘানায় ফুডস অ্যান্ড ড্রাগ অথরিটি ওষুধ সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় তদারকির ব্যবস্থা করে। বাংলাদেশে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ওষুধের মান ও বিপণন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে। ওষুধ রক্ষণাবেক্ষণে অন্যান্য দেশের মতো তাদেরও আরও কার্যকরী ভূমিকা নিতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ‘তীব্র তাপপ্রবাহের পাশাপাশি দেশে এখন বিদ্যুৎ বিভ্রাটও রয়েছে। এ কারণে রেফ্রিজারেটরেও নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। অনেক ওষুধ আছে তাপ সংবেদনশীল। তাদের মাইনাস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। ওষুধের প্যাকেটে লেখা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে। স্টোরে এর বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করলে কার্যকারিতা থাকবে না। এতে যে সমস্যা হবে, ওষুধ খেয়েও রোগ সারবে না। কোনো ক্ষেত্রে বিপরীতও হতে পারে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। আবার সংক্রমণজনিত রোগের ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট হলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। সুতরাং এটা জনস্বাস্থ্যের জন্য বেশ উদ্বেগের কারণ। এ বিষয়ে জাতীয় ওষুধ নীতিমালায়ও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘শুধু ফার্মেসি নয়, সরকারি হাসপাতালের ওষুধ সংরক্ষণের স্টোরেও কিন্তু নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণের নির্দেশনা উপেক্ষা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে মনিটরিং বাড়াতে হবে। সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগের প্রতিটি পর্যায়ে যেন নীতিমালা অনুসরণ করা হয়। এই তাপমাত্রা কিন্তু ক্ষণস্থায়ী নয়। সামনে দিনে আরও বাড়তে পারে। এখনই পরিকল্পনামাফিক কাজ না করা হলে আগামীতে ওষুধ কার্যকারিতা নষ্টের ফলে বড় ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।’ জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন কালবেলাকে বলেন, ‘সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওষুধ সংরক্ষণের কথা আমরা জানি। সারা দেশে ফার্মেসিগুলোর বেশিরভাগ নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই কথাটি সত্য। এখন তাপপ্রবাহ চলছে। এতে ফার্মেসিতে ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে খোঁজ নিতে বলব। তারা যেন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।’ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আসরাফ হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘ফার্মেসিতে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণ ও বিপণনের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মনিটরিং করা হচ্ছে। বিজ্ঞানসম্মত ধারণা হলো, অন্তত ছয় মাস পর্যন্ত ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও সাধারণ ওষুধ সংরক্ষণ করা যায়। এর চেয়ে বেশি সময় ধরে ৪০ ডিগ্রিতে সংরক্ষণ করা হলে সমস্যা হতে পারে।’ তিনি বলেন, বর্তমান তাপমাত্রা তো সাময়িক। তার পরও সারা দেশের ফার্মেসিগুলোতে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। দাবদাহের এই সময়ে সার্বক্ষণিক ফ্যান চালিয়ে রাখতে হবে। ফ্রিজিং ব্যবস্থা বৃদ্ধি করতে হবে। দিনের শুরুতে দোকানের সামনে আলো প্রতিরোধের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে করে ওষুধের গায়ে সরাসরি সূর্যের তাপ না লাগে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কথাও বলা হচ্ছে। তবে এক দিনে তো সব শুধরে দেওয়া যায় না। ধীরে ধীরে সবাইকে সচেতনতার আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে মডেল ফার্মেসি কনসেপ্টটা আরও ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’
৩০ এপ্রিল, ২০২৪

ডেঙ্গুতে নাকাল আর্জেন্টিনা ওষুধ সংকট ভয়াবহ
দক্ষিণ আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ আর্জেন্টিনায় মশাবাহিত প্রাণঘাতী রোগ ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত আর্জেন্টিনায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৬৩ হাজার ৪১৯ জন। আক্রান্তদের মধ্যে সব বয়সী নারী-পুরুষ রয়েছেন। এরই মধ্যে অনেকের মৃত্যুও ঘটেছে। খবর বিবিসির। কতজনের মৃত্যু হয়েছে সেই সংখ্যা প্রকাশ করেনি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে প্রাদেশিক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়গুলো থেকে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত আর্জেন্টিনায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৬৩ হাজার ৪১৯ জন এবং তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১ হাজার জনের। এদিকে একদিকে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব, অন্যদিকে ডলারের মজুত তলানিতে ঠেকে যাওয়ায় ব্যাপক মূল্যস্ফীতিতে টালমাটাল আর্জেন্টিনায় ডেঙ্গুর ওষুধ দুর্লভ হয়ে ওঠায় ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন সাধারণ জনগণ। খোদ রাজধানী বুয়েন্স এইরেসের অধিকাংশ ফার্মেসি-ওষুধের দোকানে ‘ডেঙ্গুর ওষুধ নেই’—নোটিশ ঝুলছে। হাতেগোনা অল্প কয়েকটি ওষুধের দোকানে এবং অনলাইনে যদিও ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে, তবে তার দাম সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফলে অধিকাংশ মানুষের সামনে বিনা চিকিৎসায় ডেঙ্গুতে ভোগা ব্যতীত আর কোনো বিকল্প থাকছে না। আর্জেন্টিনার সরকার অবশ্য শিগগির এ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে। অর্থমন্ত্রী মারিও রুশো বেতার সংবাদমাধ্যম রেডিও কন্টিনেন্টালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘সাপ্লাই চেইনে কিছু সমস্যা থাকায় ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। তবে এটি সাময়িক, শিগগির সমাধান করা হবে।’ তবে আর্জেন্টিনার ওষুধ কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, কাঁচামাল সংকটের কারণে তারা ওষুধ তৈরি করতে পারছে না। এই সংকট সমাধানে আরও কয়েক মাস লাগবে বলে ধারণা তাদের। আমেরিকা মহাদেশভুক্ত দেশগুলোর স্বাস্থ্য নিরাপত্তা-সংক্রান্ত আন্তঃসরকার সংস্থা প্যান আমেরিকান হেলথ অর্গানাইজেশনের (পাহো) তথ্য অনুসারে, চলতি ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে যত মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, শতকরা হিসাবে তাদের হার গত বছর ২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসের তুলনায় অন্তত তিনগুণ বেশি।
০৬ এপ্রিল, ২০২৪

ভৈরবে ৫ দিন ওষুধ সাপ্লাই বন্ধ
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ক্লিনিক মালিক ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের মধ্যকার দ্বন্দ্বে পাঁচ দিন ধরে ওষুধ সাপ্লাই বন্ধ রেখেছে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সংগঠন। ক্লিনিক মালিক ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব জেলা সিভিল সার্জনের আল্টিমেটামের পরও শেষ হয়নি। উভয় পক্ষ আগের অবস্থানে অনড় আছেন। ফলে ওষুধের সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় পঞ্চম দিনের মতো আজ বুধবারও ক্লিনিকের ফার্মেসিগুলো ওষুধ পাচ্ছে না। এতে একদিকে ক্লিনিকগুলোতে ওষুধের সংকট যেমন বেড়েছে, অন্যদিকে কোম্পানি প্রতিনিধিরা পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন।  তবে সাধারণ মানুষের যেন সমস্যা না হয়, সেজন্যে তারা অন্যান্য ফার্মেসি ও সরকারি হাসপাতালে তাদের কাজ অব্যাহত রেখেছেন। ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সংগঠন ফারিয়ার কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগটি ভৈরব ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাজী মোশাররফ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান কবির অস্বীকার করেছেন। অভিযুক্ত সভাপতি হাজী মোশাররফ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান কবির জানান, রোগীদের ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলা ও রোগীর ভিড়ে ডাক্তারের রুমে প্রবেশ করাসহ কয়েকটি অভিযোগ এনে চারটি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিকে সংগঠনের আওতাধীন ৩৪টি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডাক্তার ভিজিট, অর্ডার ও আর্থিক লেনদেন না করার জন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন প্রত্যেক হাসপাতালে নোটিশ টানিয়েছেন। এ ঘটনার সঙ্গে চাঁদা চাওয়া না চাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের কাছে কখনো কেউ কোনো টাকা-পয়সা চাননি বলে দাবি করেন এ হাসপাতাল মালিক সংগঠন।  ফারিয়া ভৈরব শাখার সভাপতি পায়েল মুন্সি ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কালামসহ ৩৫টি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আজ সকালে তাদের মানববন্ধন কর্মসূচি ছিল। কিন্তু সিভিল সার্জনের আল্টিমেটাম পেয়ে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি থেকে তারা সরে আসে।  ফারিয়া ভৈরব শাখার সভাপতি পায়েল মুন্সি বলেন, দ্রুত সমাধান আমাদেরও চাওয়া। তবে এই সমাধান হওয়া উচিত উভয় পক্ষকে নিয়ে তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতিতে। তাহলে পেশায় পরবর্তী সময়ে নেতিবাচক প্রভাব থাকবে না। না হলে সমাধানের পরও ঝামেলা থেকে যেতে পারে। উল্লেখ্য, গত ৩০ মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য হাসপাতাল মালিক সংগঠনের আওতাধীন সকল হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডাক্তার ভিজিট, নতুন অর্ডার নেওয়া ও পুরাতন অর্ডারের ওষুধ ডেলিভারি থেকে বিরত থাকাসহ সকল ধরনের ওষুধ সাপ্লাই বন্ধের ঘোষণা দেন। তারা শুধু সরকারি হাসপাতাল এবং খোলা ফার্মেসিগুলোতে ফারিয়ার প্রতিনিধিরা কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন।
০৩ এপ্রিল, ২০২৪

দেশে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগী বাড়ছে
মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ এলাকার বাসিন্দা আইয়ুব আলী (৫৬)। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ধূমপান করেন। গত বছর প্রচণ্ড খুশখুশে কাশি নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। কফ পরীক্ষায় তার যক্ষ্মা শনাক্ত হয়। কিছুদিন ওষুধ সেবনের পর তিনি সুস্থবোধ করেন। কাশি কমে যায়। এরপর তিনি ওষুধ সেবন বন্ধ করে দেন। এতে যক্ষ্মার জীবাণু ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। চিকিৎসকদের ভাষ্যমতে, যক্ষ্মা রোগীর অনিয়মিত ওষুধ সেবন কিংবা চিকিৎসার মাঝপথে ওষুধ বন্ধ করে দেওয়ায় এই সমস্যা তৈরি হয়। আবার জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও যক্ষ্মার জীবাণু ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। গত বৃহস্পতিবার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট শ্যামলী যক্ষ্মা হাসপাতালে যান আইয়ুব আলী। কথা হয় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। তিনি জানান, চিকিৎসক অভয় দিয়ে তাকে বলেছেন, এই অবস্থারও (ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা) চিকিৎসা রয়েছে। আইয়ুব আলীর মতো অনেকেই চিকিৎসায় অবহেলা করে। মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়। সরকারি তথ্যমতে, ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগীর হার সবচেয়ে বেশি গার্মেন্টকর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী, জেলখানার কয়েদি ও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের রোগীদের মধ্যে। একাধিক চিকিৎসক বলেন, যক্ষ্মা বাংলাদেশের জন্য একটি অন্যতম মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের যে ৩০টি দেশে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা সর্বাধিক, তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তবে ১৯৯৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যক্ষ্মাকে গ্লোবাল ইমার্জেন্সি ঘোষণা করার পর বাংলাদেশ সরকার ও কিছু বেসরকারি সংস্থা যক্ষ্মার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গত বছর জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের যক্ষ্মাবিষয়ক সভায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা যক্ষ্মা নির্মূলের লক্ষ্যে যেসব সুপারিশ ও সাহসী লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করেছে সেগুলো বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার বদ্ধপরিকর। মাঠ পর্যায়ে সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মী যক্ষ্মা স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। জেলখানা, শহরাঞ্চলের বস্তি এলাকায়, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী এবং গার্মেন্টসে কর্মরত শ্রমিকদের বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে মোবাইল ভ্যানে জিন এক্সপার্ট মেশিন ও ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন দিয়ে যক্ষ্মা শনাক্তের কাজ জোরদার করা হয়েছে। টেকনাফ, উখিয়া ও ভাষানচর এলাকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মাঝেও যক্ষ্মা কর্মসূচি সম্প্রসারিত করা হয়েছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মাঝে গত বছর দুই হাজার ৪৩৭ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বাংলাদেশে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগী প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ২০২৩ সালে এধরণের ২ হাজার ৭২৯ জন রোগী শনাক্ত হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার জন্য রোগী ও তার স্বজনদের অবহেলা দায়ী। নিয়মিত ওষুধ খেলে যক্ষ্মা ভালো হয়; কিন্তু কিছুটা সুস্থবোধ করার পর ওষুধ ছেড়ে দেওয়ায়ও ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগী বাড়ছে। তবে সরকার এসব রোগীর চিকিৎসায় জোর দিচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। ১৮৮২ সালে ২৪ মার্চ রবার্ট কোচ যক্ষ্মা রোগের জীবাণু মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলসিস আবিষ্কার করেন। এর ১০০ বছর পর ১৯৮২ সালে দিনটিকে স্মরণীয় করা ও যক্ষ্মারোগের চিকিৎসা সম্পর্কে গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রতি বছর ২৪ শে মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস উদযাপন করা হয়। এমন পরিস্থিতে আজ ২৪ মার্চ ‘হ্যাঁ! আমরা যক্ষ্মা নির্মূল করতে পারি!’Ñ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ উদযাপন করা হবে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। আজ (রোববার) দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক র্যালি, আলোচনা সভা ও লিফলেট বিতরণ করা হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ্যামলী যক্ষ্মা হাসপাতাল ও মহাখালী জাতীয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগীদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড চালু হয়েছে। সেখানে তাদের চিকিৎসা চলছে। শ্যামলী হাসপাতালে প্রতিদিন অন্তত ১০০ থেকে ১৫০ জন রোগী যক্ষ্মার উপসর্গ নিয়ে আসেন। শ্যামলী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার কালবেলাকে বলেন, ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগী বাড়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ রোগীরা নিয়মিত ওষুধ খায় না। আবার জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও অনেক অ্যান্টিবায়েটিক রেজিস্ট্যার্ন্ড হচ্ছে। তিনি বলেন, ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা মোকাবিলায় শ্যামলী যক্ষ্মা হাসপাতালে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার রয়েছে। আলাদা ওয়ার্ড রয়েছে। মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালেও আলাদা ওয়ার্ড রয়েছে। এই রোগটি যাতে অন্যদের মধ্যে ছড়াতে না পারে সে জন্য চিকিৎসক-নার্সও আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। যক্ষ্মা একটি ছোঁয়াচে রোগ। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে একজন থেকে অন্যজনে সংক্রমিত হয়। শনাক্তের পরিমাণ যত বাড়বে যক্ষ্মা তত কম ছড়াতে পারবে। সারা দেশে যক্ষ্মা রোগী শনাক্তের হার বাড়ছে। গ্রামাঞ্চলেও এখন রোগী শনাক্তের ব্যবস্থা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ২০২২ সালের বিশ্ব যক্ষ্মা প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০২১ সালে বিশ্বের এক কোটি ৬ লাখ মানুষ যক্ষ্মা আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মাত্র ৬০ শতাংশ রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। মারা গেছে ১৬ লাখ মানুষ। আর ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা হয়েছে সাড়ে ৪ লাখ মানুষের। এর মধ্যে মাত্র ৩৬ শতাংশ রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। বিশ্বে বর্তমানে প্রায় ২০০ কোটি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশে এর চিত্র খুবই ভয়াবহ। এখনো যক্ষ্মার উচ্চ ঝুঁকির দেশ হিসেবে বিবেচিত বাংলাদেশ। দেশে প্রতি মিনিটে একজন যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছে আর প্রতি ১২ মিনিটে একজনের মৃত্যু ঘটছে। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির হিসেব মতে, গত বছর (২০২৩ সালে) যক্ষ্মার উপসর্গ আছে এমন প্রায় ৩০ লাখের বেশি মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ৩ লাখ ১ হাজার ৫৬৪ জনের নমুনায় রোগটি শনাক্ত হয়। তাদের চিকিৎসার আওতায় আনা হয়েছে। এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়ার্ল্ড টিবি রিপোর্ট-২০২২ বলছে, ২০২১ সালে বাংলাদেশে তিন লাখ ৭৫ হাজার টিবি রোগী ছিল। এর মধ্যে ৫৪ শতাংশ পুরুষ, ৪৬ শতাংশ নারী। এদের মধ্যে আবার ৮ শতাংশ শিশু। ৪ হাজার ৫০০ জন ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগী ছিলেন। ওই বছর ৪২ হাজার মানুষের যক্ষ্মায় মারা যায়। যক্ষা শনাক্তে সারা দেশের উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত জিন এক্সপার্ট ল্যাব, ট্রুনাট মেশিন, এলইডি মাইক্রোস্কোপ, লিকুইড কালচার, এলপিএ, ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন রয়েছে। এ ছাড়াও রাজধানীতে একটি ন্যাশনাল রেফারেন্স ল্যাবরেটরি ও ৫টি রিজিওনাল রেফারেন্স ল্যাবরেটরির মাধ্যমে জাতীয় ও বিভাগীয় পর্যায়ে যক্ষ্মা রোগ শনাক্ত করা হয়। চিকিৎসায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে গত বছর ২ হাজার ৭২৯ জন ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার রোগী শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। সরকারি ৪৪ টি বক্ষব্যাধি ক্লিনিক, ০৭টি বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এ অন্তর্বিভাগ ও বহির্বিভাগ এবং এনজিও ক্লিনিক-এ যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। ২০৩৫ সালের মধ্যে শনাক্তকরণ, নোটিফিকেশন, সেবার সহজলভ্যতা, প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম, রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি এবং সবার অংশগ্রহণে যক্ষা নির্মূল করা সম্ভব। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যক্ষ্মা নির্মূল কার্যক্রম বলছে, সরকারের উদ্যোগের কারণে গত ১০ বছরে যক্ষ্মায় মৃত্যু কমেছে। ২০১২ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৩ লাখ জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। ২০১৫ সালে জনসংখ্যার অনুপাতে যেখানে প্রতি লাখে ৪৫ জনের মৃত্যু হতো, ২০২১ সালে এসে তা প্রতি লাখে ২৫ জনে নেমেছে। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে মৃত্যুহার ৭৬ শতাংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে। একই সময়ে রোগী শনাক্তের হারও ৫০ শতাংশে উন্নতির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (সমন্বয়) ডা. কাজী মো. সালেহীন তৌহিদ কালবেলাকে বলেন, যক্ষ্মা নির্মূলে ব্যাপক কর্মসূচি ও তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। রোগটি নির্ণয়ে ৬২২টি অত্যাধুনিক জিন এক্সপার্ট মেশিনসহ উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। গত বছর এক লাখ ৬৫ হাজার ৬৩৯ জন রোগীকে টিবি প্রিভেনটিভ থেরাপি প্রদান করা হয়েছে, যা ওই বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি। যক্ষ্মা রোগ নির্ণয় পরবর্তী প্রতিটি রোগীকে বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহের পাশাপাশি নিয়মিত ওষুধ সেবন নিশ্চিত করতে প্রতিটি রোগীর সঙ্গে একজন ডিওটিএস প্রোভাইডার নিশ্চিত করা হয়। রোগ শনাক্তের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি যক্ষ্মা রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনা হয়। ২০১০ সাল থেকে ৯৫ শতাংশের বেশি রোগী চিকিৎসায় সুস্থ হয়েছে। যক্ষ্মা রোগে মৃত্যুহার কমেছে। ২০১০ সালে দেশে যক্ষ্মা রোগে আনুমানিক মৃত্যু ছিল প্রতি লাখে ৫৪ জন। গত দুই বছরে তা কমে প্রতি লাখে ২৫ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার চিকিৎসায় (ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কমানোর লক্ষ্যে) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী স্বল্প মেয়াদি ছয় মাস ওষুধ খাওয়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যা যক্ষ্মার চিকিৎসায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
২৪ মার্চ, ২০২৪

খুমেক হাসপাতাল থেকে ওষুধ চুরি
আবারও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থেকে পাচার হওয়ার সময় সরকারি ওষুধ জব্দ করা হয়েছে। গতকাল রোববার দুপুর ১২টায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে ওষুধ নিয়ে বের হওয়ার সময় এক ফ্রি সার্ভিস কর্মী ও তার স্বামীকে আটক করেন আনসার সদস্যরা। পরে তাদের সোনাডাঙ্গা থানায় সোপর্দ করে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি হাসপাতালের ওষুধ চুরি নিয়ে কর্তব্যরত আনসার সদস্যদের তৎপর থাকার নির্দেশ দিয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।। রোববার হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে সরকারি ওষুধ নিয়ে যাওয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে সালেহান নামে হাসপাতালের ফ্রি সার্ভিস কর্মী ও তার স্বামী। এ সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচ পিস সরকারি অ্যান্টিবায়োটিক, ২০ পিস ক্যাথেটার, অক্সিজেন মাস্কসহ সরকারি বিপুল পরিমাণ ওষুধ জব্দ করা হয়।
১৮ মার্চ, ২০২৪

বিনামূল্যের ওষুধ বিক্রি করতেন তারা, অতঃপর...
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ওষুধের দোকানে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় বিনামূল্যে সরবরাহের ওষুধ বিক্রির উদ্দেশ্যে রাখায় দুটি দোকান মালিককে জরিমানা এবং সেসব জব্দ করা হয়।  বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে শিমরাইল মোড় হালিমা শপিং মার্টে জেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লাইলাতুল হোসেনের নেতৃত্বে এ অভিযান হয়।  নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লাইলাতুল হোসেন জানান, যেসব ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়, সেসব ওষুধ বিক্রির উদ্দেশ্যে রাখার অপরাধে ‘মা ফার্মেসি ও আলী আকবর মেডিসিন হাউস’ নামে দুটি প্রতিষ্ঠানকে ৫ হাজার করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের সতর্ক করা হয়েছে।
১৪ মার্চ, ২০২৪

ইঁদুর মারার ওষুধ খেয়ে এনজিও কর্মকর্তার আত্মহত্যা 
নওগাঁর মান্দায় আমানতের টাকা ফেরত নেওয়ার চাপে সিরাজুল ইসলাম বকুল (৪৫) নামে এক এনজিও কর্মকর্তা আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা গেছে। শুক্রবার (৮ মার্চ) সন্ধ্যার পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। নিহত সিরাজুল ইসলাম বকুল উপজেলার কশব গ্রামের ইয়াদ আলী সরদারের ছেলে। তিনি সুরমা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ নামে বেসরকারি সংস্থার পলাশবাড়ি শাখায় ব্যবস্থাপক পদে কর্মরত ছিলেন। জানা গেছে, দুই সপ্তাহ আগে কার্যালয় তালাবদ্ধ করে আমানতকারীদের জমা করা অন্তত ৬ কোটি টাকা নিয়ে রাতারাতি উধাও হন সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আমানতকারীদের চাপের মুখে শুক্রবার (৮ মার্চ) বিকেলে টাকা ফেরত দেওয়ার দিন ধার্য ছিল। এ অবস্থায় শুক্রবার দুপুরের দিকে গ্যাসবড়ি (ইঁদুর মারার বিষের ট্যাবলেট) খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন সিরাজুল ইসলাম। পরে তাকে উদ্ধার করে মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সন্ধ্যার পর তিনি মারা যান। এতে দিশোহারা হয়ে পড়েছেন ৮৮ থেকে ৯০ জন আমানতকারী। সংস্থায় জমা করা অন্তত ৬ কোটি টাকা ফেরত পাওয়া নিয়েও শঙ্কায় তারা। স্থানীয়রা জানান, প্রায় দুইবছর আগে কশব ইউনিয়নের পলাশবাড়ি বাজারে সুরমা মাল্টিপারপাসের একটি শাখা খোলা হয়। এরপর দৈনিক কিস্তিতে এলাকার ব্যবসায়ীদের মাঝে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণের কার্যক্রম শুরু করে সংস্থাটি। অল্প দিনেই এর ব্যবসায়ীসহ এলাকার লোকজনের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন সংস্থার ব্যবস্থাপক ও মাঠকর্মীরা। পলাশবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ময়েন উদ্দিন বলেন, সুরমা মাল্টিপারপাস পলাশবাড়ি শাখার ব্যবস্থাপক সিরাজুল ইসলাম বকুল এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের মাঝে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণের পাশাপাশি ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে আমানত সংগ্রহের জন্য তৎপরতা শুরু করেন। এক লাখ টাকায় প্রতিমাসে দুই হাজার টাকা করে মুনাফা দেওয়ার প্রলোভন দেওয়া হয়। ভুক্তভোগী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ম্যানেজার বকুলের প্রলোভনে পা দিয়ে ওই সংস্থায় আমি ২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করি। চুক্তি অনুযায়ী কয়েক মাস ঠিকভাবে মুনাফার টাকা দেওয়া হয়েছে। এর পর থেকে টালবাহানা শুরু করে। দুই সপ্তাহ আগে কার্যালয় তালা দিয়ে তারা পালিয়ে যান। এ বিষয়ে জানতে সুরমা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির কোনো লোকজনকে পাওয়া যায়নি। মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক কাজী বলেন, বিষয়টি জেনেছি। রাজশাহী হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর তার মরদেহ পরিবারের লোকজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় মান্দা থানায় অপমৃত্যুর একটি মামলা হয়েছে।
১০ মার্চ, ২০২৪

ভুয়া বিজ্ঞাপনে কোটি টাকার ওষুধ বিক্রি
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঢুকলেই দেখা যেত বিভিন্ন আইডি ও পেইজ থেকে দেওয়া হচ্ছে ওষুধ বিক্রির বিজ্ঞাপন। সেই বিজ্ঞাপনের নিচে আবার লেখা থাকত অভিজ্ঞ চিকিৎসকের নাম। এভাবে ভুয়া বিজ্ঞাপন দিয়ে মাসে প্রায় ৪০ লাখ টাকার ওষুধ বিক্রি করত একটি প্রতারক চক্র। এখন পর্যন্ত তারা প্রায় হাতিয়ে নিয়েছে কোটি টাকার ওপর। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি এ চক্রের ছয় সদস্যকে রাজধানীর মিরপুর ও যশোর থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তাররা হলো মো. জহুরুল ইসলাম (৪১), সাবিদ চৌধুরী (৩৩), মো. হাসিব চৌধুরী (২৭), মোহাম্মদ আলী (৪১), রাফিদ ইসলাম নুহিন (১৯) ও জাকির নাসের (২২)। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন মডেলের আটটি মোবাইল ফোন, ১৩টি সিম কার্ড, তিনটি ল্যাপটপ, দুটি আইডি কার্ড, ডিয়া ফিক্স নামে ১৪০ বোতল ওষুধ, বুস্টার বক্স ৪১০ বোতল, লেবেল ছাড়া সবুজ রঙের ক্যাপসুল ৩৭০ বোতল, যৌন উত্তেজক পাউডার, বিভিন্ন ওষুধ ও সাপ্লিমেন্ট তৈরির ফর্মুলা লেখা একটি ডায়েরি ও প্রায় ৩৮ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর কলাবাগান থানায় একটি প্রতারণার মামলা করেন নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ এবং কুমিল্লা-৭ আসনের এমপি অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের চেম্বার সহকারী মো. বদরুল ইসলাম (৩৩)। মামলার তদন্তে নেমে রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতারক চক্রের ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিবি প্রধান বলেন, চক্রটি ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের নাম ও ছবি ব্যবহার করে বিভিন্ন ফেসবুক আইডি ও পেইজ থেকে বিভিন্ন পরামর্শ সংবলিত পোস্ট ও কমেন্ট করে ডিয়া ফিক্স নামক অননুমোদিত ডায়াবেটিসের ওষুধ বিক্রি করত। এসব ওষুধ ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের উদ্ভাবিত ও নিজস্ব প্রোডাক্ট বলে বিক্রয় করত তারা। বিজ্ঞাপন দেওয়ার সময় তারা প্রাণ গোপাল দত্তের ছবি ব্যবহার করত। এ ছাড়া এমপির নামে বিভিন্ন মিথ্যা বিজ্ঞাপন ও মেডিকেল পরামর্শ দিত, যেন তাদের ওষুধ বেশি বিক্রি হয়। গ্রেপ্তারের পর প্রতারকদের কাছে কয়েক কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতি মাসে তারা ৩৮ লাখ টাকার ওষুধ বিক্রি করত। তারা ফোনে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে সমন্বয় করত। আর এই কাজটি যশোর থেকে করত মো. হাসিব চৌধুরী ও রাফিদ ইসলাম নুহিন। গ্রেপ্তারের পর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর মিরপুর থেকে আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই চক্রের প্রধান হলো মো. জহুরুল ইসলাম।
০৬ মার্চ, ২০২৪
X