বশির হোসেন, খুলনা
প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৪, ০২:১৭ এএম
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৪, ১২:১৫ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

খুলনায় সরকারি ওষুধ চুরির মহোৎসব

অভিনব কায়দায় পাচার
খুলনায় সরকারি ওষুধ চুরির মহোৎসব

খুলনার সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত ওষুধ পাচারের ঘটনা নতুন নয়। গত এক মাসে জেলার দুটি বড় হাসপাতাল থেকে পাচারের সময় চার দফায় ওষুধ ও সার্জিক্যাল সামগ্রী জব্দের ঘটনা ঘটেছে। আলাদা দুটি মামলায় পুলিশ তিনজনকে আটক করলেও থামানো যাচ্ছে না ওষুধ পাচারের মহোৎসব। এতে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বাধ্য হয়ে ওষুধ ও গুরুত্বপূর্ণ সার্জিক্যাল সামগ্রী কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে। অথচ সেগুলো বিনামূল্যে হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করার কথা। এতে বিপাকে পড়েছেন রোগীরা।

২০১৪ সালে খুলনার একমাত্র বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতাল থেকে ৩ লাখের বেশি টাকার ওষুধ পাচার করার সময় আটক করা হয় হাসপাতালের তিন ফার্মাসিস্টকে। এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলায় স্টোর অফিসারের দায়িত্বে থাকা এক চিকিৎসকও জেল খাটেন। সরকারি ওষুধ চুরির ঘটনায় সেখানে তিনটি মামলা ১০ বছর ধরে এখনো চলমান। এর পরও সংশ্লিষ্টরা অভিনব কায়দায় ওষুধ চুরি ও পাচার করছে। সরকারি ওষুধের গায়ে সিল ও নির্দিষ্ট রং থাকায় এগুলো বাইরে বিক্রির সুযোগ নেই। অথচ সাপ্লাই না থাকার দোহাই দিয়ে বেশিরভাগ ওষুধ রোগীদের বাইরে থেকে কিনতে বাধ্য করেন কর্তব্যরত কিছু নার্স। রোগীরা বাইরে থেকে ওষুধ কিনে আনলেও সেগুলো গোপনে সরিয়ে রেখে চিকিৎসায় সরকারি ওষুধই ব্যবহার করা হচ্ছে। রোগীর কেনা ওষুধ পরে বাইরে বিক্রি করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন নার্স ও কর্মচারী।

ইউরোলজি বিভাগে চিকিৎসাধীন কয়েক রোগী জানান, অপারেশনের আগে ক্যাথেটার থেকে শুরু করে হাতের গ্লোভস পর্যন্ত তাদের কিনে দিতে হয়েছে। আমরা গরিব মানুষ, কিন্তু অপারেশনের সময় ২ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকার ওষুধ ও অন্যান্য সামগ্রী কিনতে হয়।

একের পর এক ওষুধ পাচারের ঘটনা: শহীদ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে নির্ধারিত বেডের বাইরে রোগী না নেওয়ায় হাসপাতালে ওষুধ ও সার্জিক্যাল আইটেমে কখনোই ঘাটতি থাকে না। তার পরও সাপ্লাই নেই বলে গরিব রোগীদের কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে ক্যাথেটার ইনফিউশন সেট, ক্যানোলার মতো সামগ্রী। গত বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগ থেকে তিনটি ব্যাগে করে ওষুধ ও সার্জিক্যাল সামগ্রী পাচারের সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন সুমন নামে এক ব্যক্তি। ওয়ার্ডের দায়িত্বরত আয়া নুরজাহান ওষুধসহ ধরে ফেলেন সুমনকে। ইউরোলজি ওয়ার্ডের নার্সিং ইনচার্জ তহমিনা খানম ওই যুবকের মাধ্যমে নিয়মিত ওষুধ পাচার করেন বলে জানিয়েছেন আয়া নুরজাহান ও অন্য নার্সরা।

শিউলি নামে এক আয়া কালবেলাকে বলেন, সপ্তাহে এই ওয়ার্ড থেকে অন্তত তিন দিন তহমিনা খানম রোগীদের দিয়ে ওষুধ কিনিয়ে নিয়ে সেই ওষুধ বাইরে পাচার করেন।

জব্দ হওয়া ওষুধের মধ্যে রয়েছে বাইরে থেকে কেনা ২৩০ পিস ক্যানোলা, ক্যাথেটার ৫০ পিস, ইনফিউশন সেট ৫০ পিস, মাইক্রোপোর ৫০ পিস, জেএমআই ব্লাড সেট ৫০ পিস, হ্যান্ড গ্লোভস ৫০ পিস। আরও কিছু সার্জিক্যাল সামগ্রী ছিল, যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৫০ হাজার টাকার বেশি। আটক সুমনকে খালিশপুর থানায় সোপর্দের পর মামলা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্ত তহমিনা খানমকেও মামলার আসামি করা হয়েছে।

এদিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পাচারের সময়ও তিন দফা রোগীদের কেনা ওষুধ জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া গত ২২ মার্চ ৫০০ পিস ডিস্টিল ওয়াটার (পাউডার ওষুধ গোলানোর কাজে ব্যবহৃত) পাওয়া যায় হাসপাতালের একটি ময়লার ঝুড়িতে। ১৮ মার্চ জরুরি বিভাগ থেকে কেনা ওষুধ ও সার্জিক্যাল সামগ্রীসহ এক দম্পতিকে আটক করেন আনসার সদস্যরা। পরে তাদের নামে মামলা হয়। সালেহা বেগম ২০২২ সাল পর্যন্ত আউটসোর্সিং ও পরে ফ্রি সার্ভিস কর্মী হিসেবে কাজ করতেন মেডিসিন ইউনিটে। ১ মার্চ প্রসূতি বিভাগের ক্লাসরুম থেকে বিপুল পরিমাণ সরকারি ওষুধ জব্দ করা হয়। নার্সদের দুটি গ্রুপের দ্বন্দ্ব থাকায় অন্যপক্ষ ওষুধ জব্দ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানায়। যার তদন্ত এখনো চলমান।

বহনকারীদের ফাঁসিয়ে আড়ালে মূল অপরাধীরা: ২০২১ সালে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার থেকে ৪২ ধরনের ৮টি আলমারি ভর্তি রোগীদের কেনা ওষুধ জব্দ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ সময় লোকদেখানো তদন্ত করে মূলহোতা নার্সিং ইনচার্জকে শুধু চার্জ থেকে সরিয়ে পুরো দায় চাপানো হয় ওয়ার্ডে কাজ করা ফ্রি সার্ভিস আয়া মুকুলীর ওপর। অথচ যে আলমারি থেকে ওষুধগুলো জব্দ করা হয় তার চাবি থাকে নার্সিং ইনচার্জের কাছে। একই বছর এপ্রিল মাসে লেবার ওয়ার্ড থেকে ৪ শতাধিক সরকারি কেনলা, ওষুধসহ হাতেনাতে ধরা পড়েন জেসমিন নামে আউটসোর্সিংয়ের এক কর্মচারী।

এর আগে হাসপাতালের আউটডোরে তৎকালীন ফামের্সি ইনচার্জ মফিজ বিপুল পরিমাণ ওষুধ পাচারকালে হাতেনাতে ধরা পরেন গত ১ মে। কিন্তু বদলির মধ্যেই তার শাস্তি সীমাবদ্ধ। বর্তমানে তিনি তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত।

ওষুধ পাচারের বিষয়ে শহীদ আবু নাসের হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. আবু শাহীন বলেন, কিছু পরিমাণ ওষুধ জব্দ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় তদন্ত চলছে। এর সঙ্গে জড়িত এক নার্সের নাম আসছে। তার সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত কি না, তদন্তে সব জানা যাবে। জড়িত কেউ রেহাই পাবে না।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. হুসাইন শাফায়াত বলেন, যোগদানের পর থেকে সীমিত সামর্থ্য নিয়েই প্রতিদিন সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষকে সেবা দিই। যোগদানের পর থেকে হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। এখন আর তেমন কেউ হাসপাতালের বা রোগীর ওষুধ বাইরে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৮ দিন ধরে নিখোঁজ হাফেজ সিফাত

কবে বিয়ে করছেন কেয়া? জানালেন নিজেই

ঢাকায় ৭ম আই-ইইই এসসিআই আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু বৃহস্পতিবার

মানুষ জামায়াতে ইসলামীকে আস্থার প্রতীক হিসেবে নিয়েছে : ড. মোবারক

দুপুরে নামাজের নিষিদ্ধ সময় কি ঠিক ১২টা?

ঢাবির ডেপুটি রেজিস্ট্রার লাভলু ৩ দিনের রিমান্ডে

৫ বছর বয়সী শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা, অতঃপর...

কলাপাতায় মোড়ানো মরদেহ, বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

আমাকে একা রেখে চলে গেলে : হেমা

প্রায় ৩০ হাজার বিয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন হৃতিক

১০

কাজ থাকলে মৌসুমী-মাহিরা দেশ ছাড়ত না : মিশা সওদাগর

১১

সব অপরাধ বন্ধের ম্যাজিক আমার কাছে নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

১২

তপশিল : রেকর্ডের জন্য বিটিভি-বেতারকে আহ্বান ১০ ডিসেম্বর

১৩

মানুষের ভালোবাসা ও দোয়ায় খালেদা জিয়া সুস্থ হবেন, প্রত্যাশা ফারুকের

১৪

অর্থনীতি নিয়ে বিভ্রান্তিকর বার্তা ছড়ানো হচ্ছে : প্রেস সচিব

১৫

ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে অস্ট্রেলিয়ার দুই রাজ্য 

১৬

নরসিংদীতে দু’গ্রুপের সংঘর্ষ / ১৫ দিন আগে দেশে আসা মামুনের জীবন গেল গুলিতে

১৭

বাংলাদেশ দলে উপেক্ষিত আরহাম ডাক পেলেন অস্ট্রেলিয়া দলে

১৮

রোমানিয়ার ভিসা আবেদন নিয়ে বাংলাদেশিদের জন্য সুখবর

১৯

হঠাৎ রেলক্রসিংয়ে ব্যারিকেড, দ্রুত সমাধান চান স্থানীয়রা

২০
X