বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে নোরা শরীফ : কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান বলেছেন, নোরা শরীফের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে আইনি লড়াই করার জন্য তিনি স্যার উইলিয়াম টমাসকে পাঠানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এমনকি বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বিচারের জন্য যুক্তরাজ্যে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বইমেলা প্রাঙ্গণে ‘নক্ষত্রের নাম নোরা শরীফ’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, নোরা শরীফের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। তিনি সিলেটে আসলে আমাদের বাসায় থাকতেন। কাঁটাযুক্ত মাছ খেতে ভালোবাসতেন। এই নোরা শরীফের জন্মদিন আমরা বাংলাদেশে পালন করেছিলাম। যখন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে ছিল তখন। জাতি যতদিন থাকবে ততদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে নোরা শরীফের অবদান। কারণ তিনি বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী মো. নুরুল মজিদ বলেন, ভাষার মাসে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ৭ই মার্চ থেকে শুরু করে অনেক আন্দোলন সংগ্রামের পঠভূমি। নোরা শরীফ বিদেশি হলেও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের জনগত গঠনে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশের রাষ্ট্র গঠনে তিনি অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সঙ্গে ভাবে সম্পর্কিত ছিলেন। তার অবদান চিরকাল জাতি হিসেবে মনে রাখবে। উল্লেখ্য, শাহ আহমেদ সারওয়ার কবির সম্পাদিত নক্ষত্রের নাম নোরা শরীফ। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের কৃত্রিম বন্ধু ব্যারিস্টার নুরা শরীফ। জন্মসূত্রে নোরা ছিলেন একজন আইরিশ। তার জন্ম আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে ১৯৪৩ সালে। বাঙালির মহান মুক্তি সংগ্রামে নোরা শরীফের ভূমিকা ছিল অনন্য। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বিশ্ব জনমত গঠনে নুরা পালন করেন ঐতিহাসিক ভূমিকা। ব্রিটিশ এমপিদের সঙ্গে বাংলাদেশের পক্ষে লবিংয়ে দিনের পর দিন, বিভিন্ন শহরে চষে বেরিয়েছেন নুরা। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ব্যারিস্টার নুরা শরীফ প্রায় প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি নিয়ে ইংল্যান্ডের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেরিয়েছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠনে। এমনকি পূর্ব পাকিস্তানের নারী ও শিশুদের হত্যা বন্ধে সাহায্য করার জন্য তিনি ব্রিটেনের রানীকে একটি পিটিশন প্রদানের জন্য বার্কিংহাম প্যালেসে নারী ও শিশুদের একটি মিছিল বের করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ৪ এপ্রিল, ১৯৭১ ট্রাপালগার স্কয়ারে বিশেষ সমাবেশের ব্যবস্থা করেছিলেন। বিশ্ব মিডিয়ার সাথে যোগাযোগ, বিভিন্ন দেশ থেকে শরণার্থী যারা লন্ডনে এসেছিলেন তাদেরও সহায়তা করেছেন নুরা শরীফ। এমনকি বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য বিভিন্ন দেশের সমর্থন আদায়ে তিনি কাজ করেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন তিন বছর। পরবর্তী বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের দাবিতে নুরা শরীফ সক্রিয় ছিলেন। এমনকি ১/১১’র সময় শেখ হাসিনা কারারুদ্ধ হলে যুক্তরাজ্যের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামের প্রথম কাতারে তিনি ছিলেন। তাছাড়া একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পক্ষেও জনমত সংগ্রহে বিশেষ ভূমিকা রাখেন তিনি।
১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
X