কারওয়ান বাজার শাহবাগ মেট্রো স্টেশন চালু হচ্ছে আজ
বছরের শেষ দিন আজ রোববার সকালে মেট্রোরেলের কারওয়ান বাজার ও শাহবাগ স্টেশন চালু করা হবে। এর মধ্য দিয়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সব স্টেশন চালু হচ্ছে। ১৬ স্টেশনেই ট্রেন থামবে নিয়মিত। বর্তমানে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত উত্তরা-মতিঝিল-উত্তরা রুটে মেট্রোরেল চলাচল করছে। আর উত্তরা-আগারগাঁও-উত্তরা রুটে চলাচল করছে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। পুরো কাজ শেষ হলে ট্রেন ছাড়বে প্রতি ১০ মিনিট পর পর। ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা হবে। চলবে ২৪ জোড়া ট্রেন। মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক জানান, সকাল থেকেই এসব স্টেশনে যাত্রীরা ওঠানামা করতে পারবেন।
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩

তিন মার্কেট বানিয়েও সরানো গেল না কারওয়ান বাজার
কারওয়ান বাজারকে তিন ভাগ করে তিনটি মার্কেটে সরিয়ে নেওয়ার কথা ছিল। নতুন মার্কেট নির্মাণের দশ বছর পরও সেটি আর বাস্তবায়ন হয়নি। রাজধানীর তিনটি স্থানে সুবিশাল তিনটি কাঁচাবাজারের নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০১৩ সালে। এরই মধ্যে নির্মিত মহাখালী কাঁচাবাজার হয়ে গেছে আধুনিক হাসপাতাল। আমিনবাজার পাইকারি কাঁচাবাজার ভবনের আংশিক হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) যান্ত্রিক বিভাগের কার্যক্রম। এর বাইরে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে এই মার্কেটের ছোট-বড় বেশ কয়েকটি ভবন। অন্যদিকে, ১০ বছর ধরে নীরবে দাঁড়িয়ে আছে নির্মিত যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার ভবন। দিন দিন এ স্থাপনাটি হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। প্রশ্ন উঠেছে, ৩৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে এসব ভবন নির্মাণের আগেই কেন ব্যবহার করার প্রক্রিয়া নিয়ে ভাবা হয়নি। উন্নয়ন কাজে অর্থ ব্যয়ে সিটি করপোরেশনের অতি আগ্রহের কারণেই ভবনগুলো নিয়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। সিটি করপোরেশনের নথি ঘেঁটে এবং বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘স্মার্ট বাংলাদেশে ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে ঝুঁকিপূর্ণ পাইকারি কাঁচাবাজার থাকতে পারে না’—এমন বিবেচনা থেকে বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিটি করপোরেশন কারওয়ান বাজারকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। এই মার্কেট যে কোনো সময় ভেঙে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। একটি গতিময়, পরিচ্ছন্ন নগর গড়তে এই মার্কেট সরানোর সিদ্ধান্ত নেয় সিটি করপোরেশন। শহরের মাঝখানে পচনশীল পাইকারি বাজার রাজধানী বাসীকে কষ্ট দিচ্ছে বলেও তাদের নথিতে উল্লেখ করা হয়। এসব কারণে দেশের বৃহত্তম পাইকারি কাঁচাবাজার সরানোর লক্ষ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ২০০৬ সালের ৪ অক্টোবর ‘ঢাকা শহরের তিনটি পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণ প্রকল্প’ অনুমোদন পায়। অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন ২০০৭ সালে এ তিন মার্কেটের নির্মাণকাজ শুরু করে। আমিনবাজারে ৩৩ বিঘা, মহাখালীতে ৭ বিঘা এবং যাত্রাবাড়ীতে ৫ বিঘা জমির ওপর এ তিনটি কাঁচাবাজার নির্মাণ করে সিটি করপোরেশন। শুরুতে প্রকল্পের আকার ছিল ২০৬ কোটি টাকা। পরে বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩১ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে তিনটি মার্কেটের নির্মাণকাজ শেষ হয়। সে সময় থেকেই কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের সরানোর চেষ্টা করে আসছে সিটি করপোরেশন। কিন্তু তাদের রাজি করাতে পারেনি। সম্প্রতি কারওয়ান বাজারের টিসিবি ভবন মিলনায়তনে এক সভায় ব্যবসায়ীরা কারওয়ান বাজার না ছাড়ার বিষয়ে তাদের কঠোর অবস্থানের কথা জানান। সরানোর চেষ্টা করা হলে আত্মাহুতিরও হুমকি দেন তারা। সম্প্রতি গাবতলী-বাবুবাজার বেড়িবাঁধ সড়ক-সংলগ্ন আমিনবাজার পাইকারি কাঁচাবাজার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে কার্যক্রম চলছে উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেকানিক্যাল ওয়ার্কশপের। ওই মার্কেটের দুটি ভবনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসার জন্য জায়গা করা হয়েছে। এ ছাড়া অবকাঠামোর বিশাল একটি অংশ রয়েছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। একই অবস্থায় আছে ছোট-বড় অনেক ভবন। অনেক খালি জায়গাও পড়ে আছে, যা মার্কেটের জন্য প্রয়োজন ছিল। কিন্তু মেকানিক্যাল ওয়ার্কশপ বানানোর কারণে এসবই এখন পরিত্যক্ত। স্থানীয়রা আশায় ছিলেন এখানে বড় বাজার হবে; ব্যবসা-বাণিজ্য করে খাবেন। সে আশায় এখনো প্রহর গুনছেন তারা। ওয়ার্কশপে ঢুকতেই প্রধান ফটকের পাশে একটি চায়ের দোকান। দোকানে বসা স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘বাজারের কথা বলে বিশাল এলাকাজুড়ে বেশ কয়েকটি ভবন বানিয়েছে। বাজার না হওয়ায় ভবনগুলো খালি পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। দেয়ালের ভেতরে ও বাইরের এলাকায় এখন মাদকের হাট।’ মহাখালীতে কাঁচাবাজারের জন্য নির্মিত ভবনটিতে চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। ডিএনসিসি কাঁচাবাজারকে হাসপাতালে রূপান্তরে নানা যুক্তি দেখিয়েছে। তারা বলছে, সেখানে ৭০০টি দোকান বরাদ্দের জন্য দরপত্রও আহ্বান করা হয়েছিল। কভিডের কারণে সেই প্রক্রিয়া পরে থেমে যায়। এর পরই মহাখালীর পাইকারি কাঁচাবাজারকে আধুনিক মানের হাসপাতাল বানানোর ঘোষণা দেন ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। তবে ভবনটি হাসপাতালে রূপান্তর করার কারণে কারওয়ানবাজার স্থানান্তর আরও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর বাইরে যাত্রাবাড়ীর কাজলা রোডে নির্মিত পাইকারি কাঁচাবাজারটি এখনো অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারা প্রায় নিশ্চিত যে কারওয়ান বাজার সরছে না। কারণ, তিনটি মার্কেটের দুটি অন্য কাজে ব্যবহার হলে কারওয়ান বাজার সরানো সম্ভব হবে না। বাকি একটি মার্কেটে সবার স্থান সংকুলান হবে না। ঢাকা সিটি করপোরেশন বিভক্তির পর পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ডিএনসিসির জনবল হওয়ায় পুরো প্রকল্প ডিএনসিসির অধীনে চলে যায়। এখন অবশ্য কাঁচাবাজারটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মার্কেট নির্মাণ সেলের আওতাধীন রয়েছে। সেখানে বর্তমানে ভবনের বিভিন্ন স্থানে রং করা এবং মেরামত চলছে। যাত্রাবাড়ী পাইকারি কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে শ্রমিকরা ঘষামাজার কাজ করছেন। ২০১৩ সালে প্রথমবার কাজ শেষ হয় এই মার্কেটের। এরপর এ পর্যন্ত আর বাজার চালু হয়নি। মার্কেটের পূর্বপাশের চায়ের দোকানি জানান, ট্রাক-বাস থামিয়ে চালক ও যাত্রীরা মার্কেটের সামনে এসে মূত্র ত্যাগ করেন। এতে দুর্গন্ধে এখানে বসবাস করা দায় হয়ে গেছে। পাশের এক ফল ব্যবসায়ী বলেন, ‘সন্ধ্যার পর এখানে বসে মাদকের আড্ডা। রাত ১২টা পর্যন্ত চলে এ অবস্থা। মাঝেমধ্যে পুলিশ অভিযান চালায়। সাত-আট বছর ধরেই এমনটা দেখে আসছি।’ এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ও নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, পাবলিকের টাকায় যে প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়েছে, তা কেন বাস্তবায়ন করা হয়নি, এটা আত্মানুসন্ধানের বিষয়। কেবল অবকাঠামো বানালেই হয় না, ম্যানেজমেন্টের বিষয়ও এখানে জড়িত। তিনি বলেন, কারওয়ান বাজার স্থানান্তরের বিষয়ে সিটি করপোরেশন ব্যর্থ হয়েছে। তারা ব্যবসায়ীদের বোঝাতে পারেনি। সব সময় মানুষকে শতভাগ আগ্রহী (কনভেন্সড) করা সম্ভব নয়। করপোরেশন যদি এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে না পারে, তবে অন্য প্রকল্পের ক্ষেত্রেও এমনটা হতে পারে। বাজার স্থানান্তরের আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি চূড়ান্ত করা দরকার ছিল। তাদের দাবি-দাওয়া আমলে নিয়ে কাজ করা উচিত ছিল। সার্বিক বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা কালবেলাকে বলেন, এই ক্রান্তিকালের (ক্রাইসিস পিরিয়ড) মধ্যেও নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, কারওয়ান বাজারকে যাত্রাবাড়ী ও আমিনবাজারে সরিয়ে নেওয়া হবে। ঠিক কতদিনের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হবে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনই দিন মাস উল্লেখ করে বলা যাচ্ছে না। ভবনগুলো নির্মাণের আগে পরিকল্পনায় কোথাও কোনো ভুল ছিল কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, এমনটি একেবারেই মনে হয় না।
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৩
X