গলার ক্যান্সার
মাথা ও মুখগহ্বর হতে শুরু করে গলার নিচ পর্যন্ত কোনো ক্যান্সার হলে তা হেড-নেক ক্যান্সার হিসেবে পরিচিত। গলার ভেতরে ক্ষত, ঘা বা টিউমার হলে সমস্যা শুরু হয়।
প্রকারভেদ
গলার যে স্থান আক্রান্ত তার ওপর নির্ভর করে গলার ক্যান্সারের বিভিন্ন নামকরণ করা হয়। বেশিরভাগ গলার ক্যান্সার একই ধরনের কোষের সঙ্গে জড়িত। বিভিন্ন প্রকার—
l ন্যাসোফ্যারিঞ্জিয়াল ক্যান্সার
l ওরোফ্যারিঞ্জিয়াল ক্যান্সার
l ল্যারিঙ্গো বা হাইপোফ্যারিঞ্জিয়াল ক্যান্সার
l গ্লোটিক ক্যান্সার
l সুপ্রাগ্লোটিক ক্যান্সার
l সাবগ্লোটিক ক্যান্সার
কারণ
l গলার কোষগুলোর জিনগত পরিবর্তনে তা অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি বা টিউমারজনিত কারণ
l জেনেটিক মিউটেশনজনিত কারণ ও পারিবারিক ইতিহাস
l তামাক, পান-সুপারি, জর্দার ব্যবহার
l অ্যালকোহল সেবন
l হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের সংক্রমণ জিইআরডি
l অতিরিক্ত মসলা ও ঝালযুক্ত খাবার গ্রহণ
l প্যাকেটজাত খাবার, লবণাক্ত খাবার গ্রহণ
l কাঠ ও রঙের কাজের সঙ্গে জড়িত পেশাজীবীরা
l পুষ্টিজনিত সমস্যা
l পরিবেশগত কারণ
l ৫৫ বছরের অধিক বয়সী ব্যক্তি এবং পুরুষরা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।
লক্ষণ
প্রথম পর্যায় : অবিরাম গলাব্যথা, খুসখুসে কাশি, খাবার গ্রহণ বা তরল গিলতে অসুবিধা, মাঝেমধ্যে গলা ভাঙা।
দ্বিতীয় পর্যায় : ক্রমবর্ধমান গলাব্যথা, কোনো কিছু গিলতে খুবই অসুবিধা, কণ্ঠের কর্কশতা কিংবা কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন, কাশি, বমি ও বমিভাব।
তৃতীয় পর্যায় : মারাত্মক গলাব্যথা, গিলতে মারাত্মকভাবে অসুবিধা, কণ্ঠ দিয়ে কথা বের না হওয়া, কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন, শারীরিক ওজন কমতে থাকা, কাশির সঙ্গে রক্ত আসা।
চতুর্থ পর্যায় : গলায় দীর্ঘস্থায়ী এবং গুরুত্বর ব্যথা শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা, বমি ও কাশির সঙ্গে রক্ত, গলায় ফোলা বা পিণ্ড, গলায় ক্ষত বা ঘা দূরবর্তী স্থানে ছড়িয়ে পড়ে, শরীরে ওজন অস্বাভাবিকভাবে কমতে থাকা, দুর্বল হয়ে পড়া, স্বাস্থ্যের সামগ্রিক অবনতি।
রোগ নির্ণয়
রোগটি যথাযথভাবে নির্ণয়ের জন্য বায়োপসি, এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, এমআরআই, এন্ডোস্কোপি, বেরিয়াম সোসালো, পিইটি স্ক্যান, এফএনএ পরীক্ষাগুলো করা হয়।
চিকিৎসা
ক্যান্সার চিকিৎসায় অস্ত্রোপচার, রেডিওথেরাপি, কোমোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি ও ইমিওনোথেরাপির প্রয়োজন হয়।
প্রতিরোধ
l সুষম খাদ্যগ্রহণ, প্রচুর ফলমূল, শাকসবজি ও গোটা শস্য খেতে হবে
l ধূমপান, তামাক, পান-সুপারি, জর্দা পরিপূর্ণভাবে ত্যাগ করতে হবে
l অ্যালকোহল, বোতল ও প্যাকেটজাত পানীয় গ্রহণে বিরত থাকতে হবে
l এইচপিভি হতে রক্ষা পেতে টিকা গ্রহণ করতে হবে
l নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে
l নিয়মিত শরীরচর্চা ও হাঁটতে হবে
l ঝাল, লবণাক্ত ও মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।
লেখক: কনসালট্যান্ট, রেনেসাঁ হোমিও মেডিকেয়ার, ঢাকা।
২৭ মার্চ, ২০২৪