মুখর খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি, ম্লান বান্দরবান
ঈদুল ফিতর, বাংলা নববর্ষ আর বৈসাবী উৎসবের টানা ছুটিতে পর্যটকের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে ঝরনা-ঝিরি-হ্রদ খ্যাত পর্যটন জনপদ খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি। ঈদের দিন থেকে এ দুটি জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পটে পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে উল্টো চিত্র দেখা গেছে অন্য পাহাড়ি জনপদ বান্দরবানে। সম্প্রতি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ব্যাংকে হামলা ও অস্ত্র লুটের ঘটনার পর পর্যটন খাতে কালো ছায়া পড়েছে। ভয়ে ও আতঙ্কে পর্যটকরা বুকিং বাতিল করছেন। এতে ভরা মৌসুমে লোকসান গুনছেন পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা। খাগড়াছড়ির পার্বত্য জেলা পরিষদ পার্ক (হর্টিকালচার সেন্টার), রিছাং ঝরনা, মায়াবিনী লেক, জলপাহাড়সহ খাগড়াছড়ির সবকটি পর্যটনকেন্দ্র পর্যটকদের পদচারণায় মুখর থাকলেও পর্যটকদের কাছে টানছে নান্দনিকতার ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্র। খাগড়াছড়ির হোটেল-মোটেলগুলোর প্রায় ৬০-৭০ ভাগ বুকিং হওয়ার কথা জানিয়েছেন গ্রিন ভ্যালির স্বত্বাধিকারী আবু বক্কর। রাঙামাটির বিভিন্ন পয়েন্টেও পর্যটকের ঢল নেমেছে। কটেজ মালিক সমিতি অব সাজেকের সাংগঠনিক সম্পাদক রাহুল চাকমা জন বলেন, আমাদের ১১৬টি ছোট-বড় রিসোর্ট রয়েছে, যার বেশিরভাগই ১০-১৬ তারিখ পর্যন্ত বুকিং রয়েছে। এদিকে বান্দরবান জেলায় পর্যটকদের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থানগুলো হচ্ছে রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি উপজেলা। কেএনএফ ইস্যুতে বিরাজমান পরিস্থিতিতে এই তিন উপজেলায় যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালনা করায় দর্শনীয় স্থানে যাতায়াত করা পর্যটকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ এলাকায় দোকানপাট বন্ধ। যানবাহন চলাচল সীমিত। সন্ধ্যার আগেই লোকজন ঘরবন্দি হয়ে যাচ্ছে। বান্দরবান জেলা শহরের বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন হিলভিউ হোটেলে সব মৌসুমে পর্যটকের আনাগোনা বেশি। এই হোটেলের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ পারভেজ বলেন, ঈদের পরদিন থেকে প্রায় এক সপ্তাহ আবাসিক হোটেলে পর্যটকের চাপ থাকত। রুমা ও থানচির ঘটনায় এবার অনেকে তিন দিনের বুকিং দিয়ে এক দিন বান্দরবান থেকে চলে গেছে। হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, জেলা শহর ও শহরতলিতে ৭০টিসহ রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় শতাধিক হোটেল-মোটেল ও অবকাশ যাপনকেন্দ্র আছে। পর্যটনের বিরূপ প্রভাবে হোটেল-মোটেলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রায় ১ হাজার কর্মচারী, ২৫০ জন ট্যুরিস্ট গাইড, ৫ শতাধিক গাড়িচালক, চালকের সহকারী, ১৫০ জন যন্ত্রচালিত নৌকাচালক সরাসরি বেকার হয়ে পড়েছেন। বান্দরবানের নীলাচল পর্যটনকেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা আদিব বড়ুয়া জানান, তেমন পর্যটকের সমাগম ঘটেনি। যারা এসেছেন তার বান্দরবানের স্থানীয় এবং আশপাশের উপজেলা থেকে। হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত ১০ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় শতভাগ বুকিং ছিল। কিন্তু রুমা ও থানচির ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে প্রায় ৮০ ভাগ বুকিং বাতিল করেছে। যার কারণে পর্যটন ব্যবসা তেমন হয়নি। ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ব্যবসায়ীরা। জেলার পর্যটন সেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হক বলেন, রুমা ও থানচির ঘটনায় মানুষের মাঝে আতঙ্কে ছড়িয়েছে। সেই কারণে গত বছরের চেয়ে পর্যটক কম এসেছে। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। সবাই বান্দরবান নিরাপদে ঘুরতে পারবেন। তবে যৌথ বাহিনীর অভিযানের কারণে রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলা ভ্রমণের ক্ষেত্রে পর্যটকদের কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হচ্ছে। ওই তিন উপজেলা ভ্রমণে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। তবে অন্যান্য উপজেলায় পর্যটকরা স্বাভাবিকভাবে ঘুরতে পারবেন।
১৬ এপ্রিল, ২০২৪

খাগড়াছড়ি নির্বাহী প্রকৌশলীকে সতর্ক করল তথ্য কমিশন
তথ্য প্রদানে বিঘ্ন সৃষ্টি, পরিহার এবং তথ্য অধিকার আইনের প্রয়োগকে বাধাগ্রস্ত করায় খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে সতর্ক করেছে তথ্য কমিশন বাংলাদেশ। একই সঙ্গে বিষয়টি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবকে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার তথ্য কমিশন বাংলাদেশের প্রধান তথ্য কমিশনার ড. আবদুল মালেক, তথ্য কমিশনার শহীদুল আলম ঝিনুক ও তথ্য কমিশনার মাসুদা ভাট্টি তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী শুনানি গ্রহণপূর্বক এ আদেশ দেন। শুনানিতে প্রমাণিত হয়, খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী আবেদনকারীকে তথ্য না দিয়ে আইনের প্রয়োগকে বাধাগ্রস্ত করেছেন। দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তথ্য অধিকার আইনে তাকে সতর্ক করা হয়। উল্লেখ্য যে, তথ্য কমিশনে গতকাল আটটি অভিযোগের শুনানি করে সবগুলোই নিষ্পত্তি করা হয়।
১৬ নভেম্বর, ২০২৩
X