নারায়ণগঞ্জে ছিনতাইকালে ৪ জনকে গণপিটুনি
নারায়ণগঞ্জের গোগনগরে ছিনতাইয়ের চেষ্টার অভিযোগে ৪ জনকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয়রা। শুক্রবার (২২ মার্চ) ভোরে সদর উপজেলার গোগনগর গাউসুল আজম জামে মসজিদের সামনের রাস্তায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ আটককৃতদের কাছ থেকে ২টি চাকু উদ্ধার করেছে। গণধোলাইয়ের শিকার আটকৃতরা হলেন শহরের নয়ামাটি এলাকার নয়ন খানের ছেলে মো. অনিক (২৫), শহীদনগর এলাকার মো মোখলেছের ছেলে মো. মহিদউদ্দিন (২৬), জল্লারপাড়া এলাকার মারকত আলীর ছেলে মো. রবিন (২১), ও বন্দর রাজবাড়ি এলাকার মো. বাবুর ছেলে মো. নয়ন ( ৪৫)।   ঘটাস্থলে যাওয়া সদর মডেল থানার এএসআই সোহাগ মিয়া জানান, ভোরে মুন্সিগঞ্জ থেকে এক পথচারী তার শ্বশুরবাড়ি গোগনগর যাচ্ছিলেন। এ সময় আটককৃত চারজন মিলে পথচারীর পথ গতিরোধ করলে তার ডাক চিৎকার স্থানীয় লোকজন ছুটে আসে। পরে চারজনকে উৎসুক জনতা গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে।  এ সময় তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা যায় আটককৃতদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ছিনতাই ও মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তারা পেশাদার ছিনতাইকারী। তাদের কাছ থেকে ২টি চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
২২ মার্চ, ২০২৪

‘ডাকাত’ ঘোষণা দিয়ে গণপিটুনি নিহত
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় ডাকাত সন্দেহে গ্রামবাসীর গণপিটুনিতে চারজন নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন একজন। তাকে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়েছে। রোববার রাত ১১টার দিকে উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের বাগরি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-অঞ্চল) শেখ বিল্লাল হোসেন। তিনি জানান, গণপিটুনিতে তিনজন ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে তিনি সেখানে মারা যান। নিহতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন—উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের মুছারচর গ্রামের আমানুল্লাহর ছেলে জাকির (৪০), আড়াইহাজার উপজেলার জাঙ্গালিয়া গ্রামের সামসুল হকের ছেলে আব্দুর রহিম (৪৮), জালাকান্দি গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে নবী হোসেন (৩৫)। আহত অবস্থায় পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন মোহাম্মদ আলী নামে একজন। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, রাতে গ্রামের বাগরি বিলে কয়েকজন অপরিচিত ব্যক্তিকে দেখতে পান স্থানীয়রা। তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক দেখে মসজিদের মাইকে ‘গ্রামে ডাকাত পড়েছে’ বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর গ্রামবাসী বিলের সামনে জড়ো হয়ে ধাওয়া দিলে তারা বিলের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। স্থানীয়রা তাদের মধ্যে পাঁচজনকে ধরে গণপিটুনি দেন। নারাণগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, আহত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন তারা আট-দশজন মিলে ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সোনারগাঁর পরিদর্শক (তদন্ত) মহসিন মিয়া জানান, ঘটনাস্থল থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হবে। এর আগে গত শুক্রবার রাতে সোনারগাঁ উপজেলার কাজরদি কুন্দেরপাড়া এলাকার শামসুল হক মাস্টারের বাড়িতে এবং একই গ্রামের ইসলাম মুন্সী বাড়ির দুই পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় ডাকাত সদস্যরা চাপাতি দিয়ে ইসলাম মুন্সীর হাতে, পায়ে ও মাথায় কুপিয়ে গুরুতর জখম করে।
১৯ মার্চ, ২০২৪

মহাসড়কে ডাকাতির সময় দুজনকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ
শরীয়তপুরের জাজিরায় ঢাকা-শরীয়তপুর মহাসড়কে ডাকাতির সময় দুজনকে গণপিটুনি দিয়েছে স্থানীয়রা। পরে তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়। শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৩টার দিকে শরীয়তপুরের পদ্মা দক্ষিণ থানাধীন মজিদ বেপারীর কান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আটক হওয়া দুজন হলেন- শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঘড়িষার এলাকার জীবন বেপারী (৩৫) ও বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার বদরপুর এলাকার রিপন মৃধা (৩৮)। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বেশকিছু দিন ধরে মধ্যরাতে ঢাকা-শরীয়তপুর মহাসড়কে গাাড়ি থামিয়ে ডাকাতি করছিলেন সংঘবদ্ধ একটি চক্র। এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা ডাকাত দলের সদস্যদের আটক করার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছিলেন। শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে আব্দুল মজিদ বেপারী কান্দি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন কাঠ ব্রিজের ওপরে দাঁড়িয়ে ডাকাত দলের ৩-৪ জন সদস্য দেশীয় অস্ত্র নিয়ে একটি মোটরসাইকেল ও একটি প্রাইভেটকারের গতিরোধ করে। এ সময় গতিরোধ করা গাড়ির যাত্রী ও স্থানীয়রা মিলে ডাকাত দলটির ২ সদস্য রিপন ও জীবনকে আটক করে গণধোলাই দেয়। পরবর্তীতে তাদেরকে পদ্মা দক্ষিণ থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। পুলিশ গুরুতর আহত অবস্থায় দুজনকে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। বর্তমানে তারা চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে পদ্মা দক্ষিণ থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) এনামুল হক শিমুল কালবেলাকে বলেন, ডাকাত দলের দুই সদস্যকে স্থানীয়রা আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে। আহত অবস্থায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

গণপিটুনি ও চিড়িয়াখানার বাসিন্দারা
ইংরেজিতে বলে Lynching, আমরা বাংলায় বলি গণপিটুনি বা গণপিটুনিতে হত্যা। এক কথায় অপরাধী অথবা নিরপরাধী কাউকে আইনবহির্ভূতভাবে একদল মানুষের দ্বারা পিটিয়ে হত্যা হলো গণপিটুনি। এ গণপিটুনি শুধু একটি হত্যাকাণ্ডবিষয়ক শব্দই নয়—মানব সমাজের অন্ধকার দিক, মানুষের ঘৃণা, ক্রোধ ও অবিচারের অধ্যায়কে পরিচয় করিয়ে দেয়। তুরস্কের লেখক মেহমেত মুরাত ইলদান দুঃখ করে বলেছেন, ‘যে সমাজ গণপিটুনি দিয়ে একজন মানুষকে হত্যা করে, সেই সমাজের জন্য প্রয়োজন একটি বড় চিড়িয়াখানা এবং অবশ্যই তা পশুর জন্য নয়, ওই সমাজের মানুষগুলো বাস করবে সেই চিড়িয়াখানায়।’ এই ধরাধামে যত ধরনের হত্যাকাণ্ড আছে তার মধ্যে সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম হলো এ গণপিটুনি। এক বা একাধিক মানুষকে মাটিতে ফেলে হাতের ভারী লাঠি, রড, বাঁশ দিয়ে একদল মানুষ পেটাতে পেটাতে মৃত্যু নিশ্চিত করে। যখন গায়ে সজোরে বাড়িগুলো পড়ে, তখন ভিকটিমের শরীরের অভ্যন্তরের বিভিন্ন অঙ্গ চূর্ণ-বিচূর্ণ হতে থাকে। কোনো একটি বাড়ি গিয়ে পড়ে চোখে, কোনো বাড়ি গিয়ে পড়ে মুখে, কোনোটা বুক, তলপেট বা হাঁটুতে। একজন বা একাধিক ব্যক্তিকে যখন একদল ক্ষিপ্ত মানুষ নির্বিচারে পেটাচ্ছে, তখন ভিকটিমের পুরোপুরি জ্ঞান থাকে এবং প্রতিটি আঘাতের ব্যথা তাকে অনুভব করতে হয়। তার চেয়েও মর্মান্তিক বিষয় হলো, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গণপিটুনির শিকার মানুষটি দেখা যায় হয় নিরীহ-নির্দোষ অথবা যে দোষে সে অভিযুক্ত, তা হয়তো আইনের দৃষ্টিতে বড়জোর তিন মাসের কারাভোগের উপযুক্ত। কিন্তু একদল মানুষ বিবেক, আইন, মমতা সবকিছু ত্যাগ করে হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে বিষধর সাপ হত্যার মতো বেধড়ক পিটিয়ে মানব সন্তানকে মেরে ফেলে। অধিকন্তু মৃত্যুমুখে পতিত মানুষটি জেনে যায়, তাকে একটি সমাজ নিষ্ঠুরভাবে মেরে ফেলল! তাই মেহমেত মুরাত ইলদানের কথাটাই বারবার মনে হয়। গণপিটুনির ইতিহাসে সর্বাধিকসংখ্যক নিহতের ঘটনার পেছনে রয়েছে জাত, ধর্ম অথবা বর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর দি অ্যাডভান্সমেন্ট অব কালার্ড পিপল বা এনএএসিপির হিসাব অনুযায়ী, ১৮৮২ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে গণপিটুনিতে হত্যার রেকর্ড হয়েছে ৪ হাজার ৭৭৩টি। এর মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি কৃষ্ণাঙ্গ, ১০ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ গণপিটুনিতে নিহতের শিকার হয়েছে এ ধরনের মৃত্যুতে বাধা প্রদানের জন্য। বাকিরা মেক্সিকো অথবা ইউরোপ থেকে আসা ভিন্ন জাতি হওয়ার কারণে। আবার দেখতে সবাই শ্বেতাঙ্গ হলেও সবাইকে শ্বেতাঙ্গ মনে করা হতো না। যেমন আমেরিকার গৃহযুদ্ধের আগে-পরে ইতালিয়ানদের শ্বেতাঙ্গ মনে করা হতো না। আমেরিকার ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর ওই সময়কে বলা হতো লিঞ্চিং এরা বা গণপিটুনির যুগ। ইউরোপেও একসময় গণপিটুনি দিয়ে মানুষ হত্যার রেওয়াজ ছিল। বিশেষ করে মধ্যযুগে ডাইনি আখ্যায়িত করে যে কোনো বাড়ির যে কোনো মেয়েকে একজন মানুষ যদি বলত সে ডাইনি, তাহলেই হয়ে গেল। বিশেষ করে চার্চের কেউ বললে তো কথাই নেই। অসংখ্য নারীকে ধর্ষণ করতে না পেরে, অথবা ধর্ষণের পর দায় লুকানোর জন্য ‘ডাইনি’ বলে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সেই সময় পূর্ব ইউরোপে ইহুদিদের কথায় কথায় হত্যা করা হতো গণপিটুনিতে। এজন্য সংগঠিত দল ছিল এ হত্যাকাণ্ড ঘটানোর জন্য। ইউরোপে জাতিগত সংঘাত ছিল তীব্র এবং অনেক জাতি কাছাকাছি বসবাস করত। ফলে প্রতিশোধপরায়ণ এক জাতির মধ্যে আরেক জাতির কোনো ব্যক্তির সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটলে পিটিয়ে হত্যার কালচার ছিল। ইউরোপ আমেরিকায় এসব এখন ইতিহাস। বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যখন সভ্য হয়ে উঠতে থাকে, অর্থনীতি বিকশিত হয়, সমাজ আলোকিত হতে থাকে, চার্চের প্রভাব হ্রাস পেতে থাকে—তখন সমাজ নতুন করে গড়ে ওঠে। গণপিটুনির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন হয়, তহবিল সংগ্রহ করা হয়। তারপরও যে কদাচিৎ দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেনি, তা নয়। আমেরিকায় আশির দশকের শুরুতেই এমন একটি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। তবে এখন, বিশেষ করে শেষ পাঁচ-ছয় দশকে ইউরোপ-আমেরিকায় কেউ ভাবতেই পারে না যে একজন মানুষ যত বড় অন্যায়কারীই হোক, তাকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা যায়! এ সংস্কৃতি তাদের কাছে অপরিচিত হয়ে গেছে। অতি দুঃখের বিষয়, একবিংশ শতাব্দীতে প্রবেশ করে আমরা এক-পঞ্চমাংশ সময় পার করে দিয়েছি। আজও গণপিটুনি আমাদের কালচারের অংশ হয়ে আছে। এখানে আইন কাজ করেনি, মানবতা কাজ করেনি, শিক্ষা কাজ করেনি। এ গণপিটুনির প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশ ও পাকিস্তানেই সর্বাধিক লক্ষ করা যায়। ভারতেও এ প্রবণতা আছে। তবে সেখানে গণপিটুনি বিষয়ে আইন সংশোধন করা হচ্ছে বারবার। ভারতে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ২০১৯ সালে মন্তব্য করেছেন, ‘জনগণের বিচারকে কখনোই আইনসিদ্ধ করা যায় না। শক্ত হাতেই এ প্রবণতা রক্ষা করতে হবে।’ ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এ বছর জুলাই মাসে লোকসভার একটি বিলের আলোকে রাজ্য সরকারগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন, গণপিটুনিতে অভিযুক্তকে প্রমাণসাপেক্ষ কমপক্ষে সাত বছরের কারাদণ্ড প্রদান করতে। অনেকে আইনের শাসনের অভাবকেই মূলত দায়ী করে থাকেন। তা আংশিক সত্য। তবে মানবতাবোধ ও কমনসেন্স না থাকলে আইন দিয়ে সবকিছু হয় না। মনে আছে, ২০১১ সালে শবেকদরের রাতে ঢাকার ছয় শিক্ষার্থী তরুণ-তারুণ্যের খেয়ালে ভোররাতে আমিনবাজার এলাকায় গেলে তাদের ডাকাত সন্দেহে মাইকে ঘোষণা দিয়ে সারা গ্রামের মানুষ এসে পিটিয়ে হত্যা করে। আমি বহুকাল ভেবে পাইনি, নিরস্ত্র ছেলেগুলোকে দেখে এলাকার কোনো মানুষের একবার মনে হলো না যে, পেটানো বন্ধ করে একটু জিজ্ঞাসাবাদ করে দেখি! সেই ছেলেরা চিৎকার করে বলছিল, আমরা ছাত্র আমরা ডাকাত না! কেউ শোনেনি! এই তো ২০১৯ সালের ২০ জুলাই বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসেন তাসলিমা আক্তার রেনু নামে দুই সন্তানের মা, তার সন্তানদের ভর্তির ব্যাপারে খোঁজ নিতে। তখন পদ্মা সেতুতে ‘শিশুর মাথা লাগবে’ বলে এক আজগুবি প্রচার চলছিল দেশে। সন্দেহের বশবর্তী হয়ে প্রধান শিক্ষকের কক্ষ থেকে বের করে নিয়ে পিটিয়ে এই মাকে হত্যা করে কয়েকশ মানুষ জড়ো হয়ে। ৪০০ থেকে ৫০০ লোকের বিরুদ্ধে মামলা হয়। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত গণপিটুনিতে দেশে ৮০০ মানুষ নিহত হয়েছে! প্রাসঙ্গিক একটি কথা না বললেই নয়। একসময়, বিশেষ করে প্রাচীন ও মধ্যযুগে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করতে মানুষের রক্ত ব্যবহার করার কুসংস্কার ছিল, যাকে ব্লাড স্যাক্রিফাইস বলা হয়। বিভিন্ন জনপদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও কুসংস্কার থেকে এর উৎপত্তি হয়েছিল। মায়া, অ্যাজটেক থেকে শুরু করে আফ্রিকা এশিয়া সর্বত্র দেখা গেছে। সেই প্রাচীন বিশ্বাস আজ কোনো জনপদে নেই। পদ্মা সেতুতে ব্লাড স্যাক্রিফাইসের গল্প যখন তৈরি হয় তখন দেখেছি, অসংখ্য মানুষ তা বিশ্বাসে নিয়েছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় পাস অথবা পড়ুয়া মানুষকেও বিশ্বাস করতে দেখেছি। তাই এ সমাজ থেকে অন্ধকার কতটা কেটেছে, তা নিয়ে আমরা বিশেষভাবে সন্দিহান। আজও পত্রপত্রিকা খুললে আমরা বহু ধরনের গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনা দেখতে পাই। প্রায়ই কাউকে না কাউকে চোর সন্দেহে, ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে হত্যার শিকার হতে দেখা যায়। যে সমাজে ব্যক্তিভাবনার চেয়ে কালেকটিভ ভাবনা বেশি প্রাধান্য পায়, সেই সমাজে মব সাইকোলজি প্রাধান্য পায়। ব্যক্তিভাবনা তৈরি হতে শিক্ষা ও কমনসেন্সের প্রয়োজন হয়। মানুষ ভাবে, অন্য দশজন যখন একটি লোককে পিটিয়ে মারছে, তাহলে এটাই সঠিক। সেই ভাবনা থেকে সেও যোগ দেয়। দ্বিতীয়ত, গণপিটুনিতে হত্যার বিচার এসব দেশে খুব একটা জোরের সঙ্গে আমলে নেওয়া হয় না। খুব কমই বিচার হতে দেখা যায়। এটিও উৎসাহিত করে। সর্বশেষ ২৮ অক্টোবর একজন পুলিশকে যে নিষ্ঠুরভাবে গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনা সারা দেশ টেলিভিশনের পর্দায় দেখল, সেটা অন্ধকার চিন্তারই বহিঃপ্রকাশ। কে বা কোন দল করেছে সেটা আমাদের প্রশ্ন নয়, করেছে হোমোজেনিয়াস জাতির একটি অংশ। এরা ভুলে গিয়েছিল পুলিশের দায়িত্ব পালনের কথা। পুলিশ সদস্যও এ দেশেরই একজন মানুষ। এমনও তো হতে পারত যে, ওই পুলিশ সদস্যকে যারা মেরেছে, মনে মনে সে তাদেরই একজন সমর্থক? সে শুধু তার প্রতি নির্দেশ পালনে ব্যস্ত ছিল। পুলিশকে তো তার ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশ পালন করতে হয়। অথচ পিটিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করা হলো। কেউ সে কথা ভাবল না। আজও আমাদের এমন দৃশ্য দেখতে হয়! তাই এ সমাজ কতটা এগিয়েছে, কতটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য প্রস্তুত হয়েছে, কতটা মানবিক উন্নয়ন ঘটেছে এই জনপদের—সে প্রশ্ন মোটেই অবান্তর নয়। লেখক : সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক
৩১ অক্টোবর, ২০২৩

স্কুলের সামনে থেকে ছাত্রীকে অপহরণচেষ্টা, তিনজনকে গণপিটুনি
ফরিদপুর শহরের কোমরপুর আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউটের দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে মাইক্রোবাসে করে অপহরণের চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ওই ছাত্রীর চিৎকার শুনে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী এসে চালকসহ তিনজনকে ধরে গণপিটুনি দেয়। পরে আটককৃতদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এর মধ্যে মাইক্রোবাসেও আগুন দেওয়া হয়। ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আবদুল গফফার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। সোমবার (১৬ অক্টোবর) সকালে ফরিদপুর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পূর্ব পাশে কোমরপুর আবদুল আজিজ ইনস্টিটিউটের সামনে এ ঘটনা ঘটে। খোঁজ নিয়ে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, সকাল পৌনে ১০টার দিকে চার ছাত্রী বিদ্যালয়ে আসছিল। পথিমধ্যে একটি মাইক্রোবাস নিয়ে কয়েকজন এসে তাদের গতিরোধ করেন। পরে  দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে জোরপূর্বক তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় শিক্ষার্থী চিৎকার দিলে এলাকাবাসীসহ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে এসে মাইক্রোবাসের চালকসহ তিনজনকে ধরে গণপিটুনি দেয়। তবে এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ফরিদপুর সদরের মাচ্চর ইউনিয়নের ধুলদী এলাকার বিধান পোদ্দার (২৮) পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হলে আটক দুজনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। মাইক্রোবাসে আগুন দেওয়া নিয়ে ফরিদপুর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কুদ্দুসুর রহমান বলেন, ‘এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা মাইক্রোবাসের চালকসহ তিনজনকে পিটুনি দেওয়ার সময় কে বা কারা মাইক্রোবাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ফরিদপুর থেকে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল এসে আগুন নেভায়।’ ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আবদুল গফফার বলেন, ‘ওই ছাত্রীকে স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে উত্ত্যক্ত করতেন বিধান পোদ্দার। তবে এ ব্যাপারে ওই কিশোরী তার অভিভাবক কিংবা বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কিছু জানায়নি। আজ সুযোগ পেয়ে ওই ব্যক্তি কিশোরীকে অপহরণের চেষ্টা করেন।’ এ ঘটনায় দুজনকে আটক করে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন আবদুল গফফার। আটক আসামিরা হলেন ফরিদপুর সদর উপজেলার ইশান গোপালপুর ইউনিয়নের জয়দেবপুর গ্রামের ইসমাইলের ছেলে মামুন (৫০) ও শহরের গোয়ালচামট এলাকার বাদশা মোল্লার ছেলে আলমগীর(৫২)। এ ঘটনার পর স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।  পুলিশ সুপার মো. শাহাজাহান জানিয়েছেন, ‘স্থানীয় জনতা অপহরণের চেষ্টাকালে দুই অপহরণকারীকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। এরপর পুলিশ খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুজনকে আটক করা হয়েছে। অপর মূল আসামিকে আটকের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।’
১৬ অক্টোবর, ২০২৩

শ্রীমঙ্গলে যুবলীগ নেতাকে গণপিটুনি
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ফুল মিয়া মহালদার (৪৫) নামে এক যুবলীগ নেতাকে গণপিটুনি দিয়েছে এলাকাবাসী। গত শনিবার রাতে উপজেলার সাইটুলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ফুল মিয়া উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি। জানা যায়, ওই যুবলীগ নেতা ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার সাইটুলা এলাকায় পুটিয়াছড়া থেকে অবৈধ বালু তুলে এলাকার ফসলি জমি, রাস্তাঘাট ও সরকারি ব্রিজের ক্ষতিসাধন করে আসছেন। এলাকাবাসী স্থানীয় সংবাদকর্মীদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার অবস্থা দেখাতে নিয়ে গেলে ফুল মিয়ার নেতৃত্বে তার সন্ত্রাসী বাহিনী এলাকাবাসী ও সাংবাদিকদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে আক্রমণ করতে আসে। তখন এলাকাবাসী ফুল মিয়াকে গণপিটুনি দেয়। পরে ফুল মিয়া দৌড়ে তার গাড়ি নিয়ে পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পান। এ সময় হামলায় ওই এলাকার মাসুক মিয়ার স্ত্রী আছমা বেগমসহ (৪৫) কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে ফুল মিয়া মহালদারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। শ্রীমঙ্গল থানার ওসি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার জানান, কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজীব মাহমুদ মিঠুন জানান, অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করে বালু জব্দ ও জরিমানা করা হচ্ছে। সাইটুলা এলাকার ঘটনাটি তিনি জেনেছেন এবং ওই এলাকায় জোরালোভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
১০ জুলাই, ২০২৩
X