নড়াইলের ইতনা গণহত্যা দিবস আজ
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ইতনা গ্রামে ৭১’র ২৩ মে একটি ভয়াল দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী লোহাগড়া উপজেলার পূর্বাঞ্চলের ইতনা গ্রামে একের পর এক ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। নির্বিচারে গুলি চালিয়ে শিশুসহ হত্যা করে হিরু মাস্টার, সফি উদ্দিন মোল্যা, তবি শেখ, হাদি সিকদার, নালু খাঁসহ ৩৯ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে। নিহতদের লাশ ঘর-বাড়ির জ্বলন্ত আগুনে ফেলে দিয়ে উল্লাস করে। মুক্তিযুদ্ধে লোহাগড়া উপজেলার মধুমতী নদী তীরবর্তী পাশাপাশি দুই গ্রাম ইতনা ও চরভাট পাড়া। এই দুই গ্রামে বসেই মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর ওপর আক্রমণের নানা পরিকল্পনা করত। ভৌগোলিক ও কৌশলগত কারণে আশপাশের বিভিন্ন এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা এই দুই গ্রামে অবস্থান করে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালাতেন। পাকিস্তানি বাহিনী গানবোট করে ১৯৭১ সালের ২৩ মে ভোরে ফজরের আজানের সময় ইতনা গ্রামে ইতিহাসের এক জঘন্যতম গণহত্যা চালায়। গণহত্যায় শিশুসহ ৩৯ জন নারী-পুরুষ হত্যার শিকার হয়। ২৩ মে ইতনা গ্রাম প্রেতপুরীতে পরিণত হয়। নিহতদের কবর দেওয়ার মতো কোনো লোক ইতনা গ্রামে ছিল না। পরে নিহতদের আত্মীয়-স্বজন ৩৯ জনকে গ্রামেই গণকবর দিয়ে প্রাণ ভয়ে অন্যত্র পালিয়ে যান। নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলায় ১৯৭১ সালে ২৩ মে ইতনা গ্রামে সংগঠিত গণহত্যার ইতিহাস অবিস্মরণীয় ঘটনা। অথচ গণহত্যায় নিহতদের আজও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। সেখানে নির্মাণ হয়নি কোনো সমাধি বা স্মৃতিসৌধ। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে রয়েছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ।  ১৯৯৪ সালের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ২৩ মের বীর শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে ইতনা গণগ্রন্থাগারের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শিক্ষক ফিরোজ আহম্মদের উদ্যোগে ইতনা গ্রামের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে গণহত্যায় নিহতদের নামের তালিকা টাঙিয়ে দেওয়া হয়। সেই থেকে প্রতি বছর ২৩ মে ইতনা গণগ্রন্থাগারের উদ্যোগে ইতনা গণহত্যা দিবস পালিত হয়ে আসছে। এ বছরও ৭১-এর ২৩ মে গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে ইতনা গণগ্রন্থাগারের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
২৩ মে, ২০২৪

নানা আয়োজনে গজারিয়া গণহত্যা দিবস পালিত
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাদের হাতে গণহত্যার শিকার শহীদদের স্মরণে সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।  বৃহস্পতিবার (৯ মে) বিকেল সাড়ে ৫টায় দিবসটি উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে গজারিয়া ইউনিয়নে গণকবরে শহীদ পরিবারে সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে শহীদদের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কোহিনুর আক্তার। পরে স্থানীয় মসজিদের ইমাম শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া করেন। গজারিয়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল খালেক আলো সেদিনের স্মৃতিচারণা করে বলেন, তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের রসায়ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। যুদ্ধ শুরু হলে দেশকে রক্ষার স্বপ্ন গ্রামের বাড়ি গজারিয়া সদরের গোসারচরে চলে যাই। পরে ত্রিপুরা গিয়ে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রামে ফিরে ‘আলোর দিশারী’ নামে একটি স্কুল গড়ে তুলি যেখানে ২০০ মুক্তিযোদ্ধাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর মধ্যে খোকা চৌধুরী, শামস চৌধুরী, গফুর চৌধুরী, মোজাফফর আলীসহ আরও কয়েকজন রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার খবর পাকিস্তানি ক্যাম্পে পৌঁছে দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ৯ মে আমাদের গ্রামে হামলা চালায় পাকিস্তানি সেনারা, খুঁজতে থাকে আমাকে। এ বীর মুক্তিযোদ্ধা জানান, হামলায় গজারিয়া, নয়ানগর এবং গোসাইরচর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এই এলাকাগুলোর প্রতিটি বাড়িতেই সেদিন অন্তত একজনের মৃত্যু হয়েছিল। ওই রাতে বাশগাঁও, সোনাইরকান্দি, নাগেরচর, ফুলদী, কালিয়াপুর ও বেলতলীর মতো এলাকায়ও হামলা হয়। তিনি বলেন, ওই হামলায় আমি আমার ছোট ভাই মোয়াজ্জেমকে হারিয়েছি...আমার পাঁচ চাচাতো ভাই ও চাচা সেই হামলায় মারা গেছে। এ ছাড়াও, প্রায় ১০ জন প্রতিবেশী, যারা আমাদের দূরসম্পর্কের আত্মীয় ছিল, তাদেরও হত্যা করা হয়। এ সময় আমার মা একটি কথাই বললেন, ‘তুই যুদ্ধে চলে যা। যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করতে হবে। প্রয়োজন হলে আমিও যুদ্ধে যাব’। এরপর ১১ মে আমি গ্রামের অন্যদের সঙ্গে যুদ্ধে যোগ দেই। এক সময় আমাকে গজারিয়ার মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ডার করা হয়। আলো বলেন, ১৪ আগস্ট ছিল পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস, তাই চূড়ান্ত হামলার জন্য আমরা এই দিনটিকে বেছে নিয়েছিলাম। এরপর থেকে তাদের ওপর বিরতিহীন হামলা করেছে মুক্তিযোদ্ধারা। পরে ১০ ডিসেম্বর বিকেলে মেঘনা নদীর পাশে তৎকালীন গজারিয়া থানায় পরাজয় স্বীকার করে ৬০ জনেরও বেশি সেনা সদস্য আত্মসমর্পণ করে। টানা ৮ মাস যুদ্ধ করে শত্রুমুক্ত হয় গজারিয়া। তবে গজারিয়ায় যে গণহত্যা চালিয়েছিল পাকিস্তানি বাহিনী, তার ক্ষত আজও শুকায়নি। তাই প্রতিবছর ৯ মে গজারিয়াবাসী এ দিনটি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। পালন করে নানা কর্মসূচি। প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দেশের যেসব অঞ্চলে গণহত্যা সংঘটিত হয়, এর মধ্যে গজারিয়া গণহত্যা অন্যতম। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, স্বাধীনতার ৫৪ বছর হতে চলল, রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ৩৮ কিলোমিটার অদূরে পাকিস্তানি বাহনীর নৃশংস গণহত্যার সাক্ষী সেই বধ্যভূমিগুলো আজও যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। নেওয়া হয়নি তেমন কোনো সরকারি উদ্যোগও।
০৯ মে, ২০২৪

গজারিয়া গণহত্যা দিবস আজ
আজ ৯ মে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়াবাসীর জন্য এক শোকাবহ দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী গজারিয়ার মেঘনার শাখা নদী ফুলদী তীরের গোসাইরচর, নয়ানগর, বালুরচর, বাঁশগাঁও জেলেপাড়া, ফুলদী, নাগের চর, কলসেরকান্দি, দড়িকান্দি, ইসমানিরচর ও গজারিয়া এই ১০ গ্রামে ৩৬০ জন নিরীহ নিরপরাধ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে। এই গণহত্যায় ঘরে ঘরে কান্নার রোল পড়ে যায়।  গণহত্যা থেকে বেঁচে ফেরা লোকজনের বর্ণনা থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালের মধ্য এপ্রিলের ঘটনা। আব্দুল খালেক আলো নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক যুবক গোসাইচর গ্রামে ‘আলোর দিশারী’ নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। সেই স্কুলে উপজেলার প্রায় ২০০ তরুণকে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং ক্যাম্প গড়ে তোলেন। স্থানীয় রাজাকারদের মাধ্যমে এই ট্রেনিং ক্যাম্পের খবর পেয়ে যায় পাক হানাদার বাহিনী।  ৯ মে নীরব-নিস্তব্ধ রাতের মৌনতা শেষে ভোরের সূর্য ওঠার সময় পাকিস্তানি বাহিনীর মর্টার ও কামানের আওয়াজ এলাকাবাসীকে আতঙ্কিত করে তোলে। ফুলদী নদী দিয়ে স্পিডবোটে গজারিয়ার ভবেরচর ইউনিয়নের ১০টি গ্রামে হানা দেয় তারা। রাজাকাররাই তাদের পথ দেখিয়ে গজারিয়া নিয়ে এসেছিল। সেদিন সকাল ৬টার মধ্যেই সোনালি মার্কেট এলাকায় রাস্তার ওপর সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে বুদ্ধিজীবী, ছাত্র, কৃষক, মুক্তিযোদ্ধাসহ ১১০ জনকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে পাকিস্তানিরা। সন্ধ্যা পর্যন্ত আক্রান্ত গ্রামগুলোকে থেকে খুঁজে খুঁজে হত্যা করা হয় মোট ৩৬০ জনকে। সেদিন কাফনের কাপড়ের অভাবে কলাপাতা আর পুরনো কাপড় পেঁচিয়ে নিহত স্বজনদের ১০টি গণকবরে দাফন করেছিলেন গ্রামবাসী।   তবে পাকিস্তানি বাহিনী ওই দিন শুধু নিরীহ নিরস্ত্র মানুষদের হত্যা করে ক্ষান্ত হয়নি। সমানতালে ধর্ষণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগসহ গ্রামবাসীদের অর্থ-সম্পদ লুণ্ঠন। গজারিয়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল খালেক আলো সেদিনের স্মৃতিচারণা করে বলেন, তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের রসায়ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। যুদ্ধ শুরু হলে দেশকে রক্ষার স্বপ্ন গ্রামের বাড়ি গজারিয়া সদরের গোসারচরে চলে যাই। পরে ত্রিপুরা গিয়ে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রামে ফিরে ‘আলোর দিশারী’ নামে একটি স্কুল গড়ে তুলি যেখানে ২০০ মুক্তিযোদ্ধাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরইমধ্যে খোকা চৌধুরী, শামস চৌধুরী, গফুর চৌধুরী, মোজাফফর আলীসহ আরও কয়েকজন রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার খবর পাকিস্তানি ক্যাম্পে পৌঁছে দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ৯ মে আমাদের গ্রামে হামলা চালায় পাকিস্তানি সেনারা, খুঁজতে থাকে আমাকে। এই বীর মুক্তিযোদ্ধা জানান, হামলায় গজারিয়া, নয়ানগর এবং গোসাইরচর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এই এলাকাগুলোর প্রতিটি বাড়িতেই সেদিন অন্তত একজনের মৃত্যু হয়েছিল। ওই রাতে বাশগাঁও, সোনাইরকান্দি, নাগেরচর, ফুলদী, কালিয়াপুর ও বেলতলীর মতো এলাকায়ও হামলা হয়। তিনি বলেন, ওই হামলায় আমি আমার ছোট ভাই মোয়াজ্জেমকে হারিয়েছি...আমার পাঁচ চাচাতো ভাই ও চাচা সেই হামলায় মারা গেছে। এছাড়াও, প্রায় ১০ জন প্রতিবেশী, যারা আমাদের দূরসম্পর্কের আত্মীয় ছিল, তাদেরও হত্যা করা হয়। এ সময় আমার মা একটি কথাই বললেন, ‘তুই যুদ্ধে চলে যা। যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করতে হবে। প্রয়োজন হলে আমিও যুদ্ধে যাব’। এরপর ১১ মে আমি গ্রামের অন্যদের সঙ্গে যুদ্ধে যোগ দেই। এক সময় আমাকে গজারিয়ার মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ডার করা হয়। আলো বলেন, ১৪ আগস্ট ছিল পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস, তাই চূড়ান্ত হামলার জন্য আমরা এই দিনটিকে বেছে নিয়েছিলাম। এরপর থেকে তাদের ওপর বিরতিহীন হামলা করেছে মুক্তিযোদ্ধারা। পরে ১০ ডিসেম্বর বিকেলে মেঘনা নদীর পাশে তৎকালীন গজারিয়া থানায় পরাজয় স্বীকার করে ৬০ জনেরও বেশি সেনা সদস্য আত্মসমর্পণ করে। টানা ৮ মাস যুদ্ধ করে শত্রুমুক্ত হয় গজারিয়া। তবে গজারিয়ায় যে গণহত্যা চালিয়েছিল পাকিস্তানি বাহিনী, তার ক্ষত আজও শুকায়নি। তাই প্রতিবছর ৯ মে গজারিয়াবাসী এ দিনটি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। পালন করে নানা কর্মসূচি। প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দেশের যেসব অঞ্চলে গণহত্যা সংঘটিত হয়, এর মধ্যে গজারিয়া গণহত্যা অন্যতম। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, স্বাধীনতার ৫৪ বছর হতে চলল, রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ৩৮ কিলোমিটার অদূরে পাকিস্তানি বাহনীর নৃশংস গণহত্যার সাক্ষী সেই বধ্যভূমিগুলো আজও যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। নেওয়া হয়নি তেমন কোনো সরকারি উদ্যোগও। 
০৯ মে, ২০২৪

কলারোয়া পালপাড়া গণহত্যা দিবস আজ
সাতক্ষীরার কলারোয়া পালপাড়া গণহত্যা দিবস (২৮ এপ্রিল) রোববার। একাত্তরের বেদনাবহ এই দিনে কলারোয়ার মানুষের স্মৃতিপটে নতুন করে ভেসে ওঠে পাকবাহিনীর ভয়াল, বীভৎস ও নির্মম এক হত্যাযজ্ঞের কথা। স্বাধীনতা অর্জনের ৫৩তম বছরে এসেও মুক্তিকামী মানুষ ভুলতে পারেন না কলারোয়ার উত্তর মুরারিকাটি কুমারপাড়ার সেই ভয়াল হত্যাযজ্ঞের কথা। কলারোয়ার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে পালপাড়ার কুমার সম্প্রদায়ের শহীদ ৯ মুক্তিকামী কুম্ভকারের আত্মত্যাগের কথা চিরদিন অম্লান থাকবে। বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে কুমার পাড়ার স্বজনহারা মানুষ এ দিনটি শোকাবহচিত্তে স্মরণ করেন। সূত্রমতে, একাত্তরের ২৮ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাক-হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের শিকার হন কলারোয়ার পালপাড়ার ৯ জন মুক্তিকামী কুম্ভকার। প্রকাশ্যে ঘটা এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড সেদিন অনেক মানুষ প্রত্যক্ষ করেন। যাদের অনেকেই ওই বীভৎস স্মৃতি নিয়ে আজও বেঁচে আছেন। ঘটনাস্থল পৌরসদরে বেত্রবতী নদীর পূর্ব পার্শ্বে অবস্থিত উত্তর মুরারিকাটি কুমারপাড়া বা পালপাড়া। বর্বরতার এক নৃশংস ও ভয়াল দৃশ্যপট রচিত হয় সেখানে। মানুষ যে মানুষকে এত নিষ্ঠুরভাবে মেরে ফেলতে পারে, তা পালপাড়ার গণহত্যা যারা দেখেননি বা জানেন না, তারা বুঝতে পারবেন না। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ তখন রীতিমতো উত্তাল। জীবনবাজি রেখে বাংলার দামাল ছেলেরা তখন লড়ছে রণাঙ্গনে। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত এবং কুমার সম্প্রদায়ের প্রায় সবাই তখন সীমান্ত পেরিয়ে আশ্রয় নিচ্ছিলেন ভারতে। কুমারপাড়াতেও চলছিল ভারতে যাওয়ার তোড়জোড়। সিদ্ধান্ত ছিল দু’এক দিনের মধ্যেই তারাও এদেশ ছেড়ে পাড়ি জমাবেন ভারতে। কিন্তু কীভাবে যেন এদের এই পরিকল্পনার কথা জেনে যায় হানাদার বাহিনীর দোসররা। তাই তারা সুযোগ পাননি দেশ ছাড়ার। এলো সেই ভয়াল দিন একাত্তরের ২৮ এপ্রিল, বাংলা-১৬ বৈশাখ, শুক্রবার, ১৩৭৮ বঙ্গাব্দ। দুপুর আড়াইটার দিকে হানাদার পাক সেনা ও তাদের এদেশীয় দোসররা সশস্ত্র পৈশাচিক হামলা চালায় উত্তর মুরারিকাটি গ্রামের কুমারপাড়ার নিরীহ নিরস্ত্র মানুষের ওপর। জানা যায়, এ সময় পালপাড়ার অনেকে দুপুরের খাওয়া শেষ করেছেন। অনেকেই আবার খাদ্য নিয়ে বসেছেন খেতে। ঠিক এই সময় তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে নির্বিচারে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। গুলিতে ও বেয়নেটের আঘাতে জর্জরিত প্রাণহীন দেহগুলো লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। পড়ে থাকে দুপুরের সেই রক্তমাখা খাবারগুলো। বৈশাখের তপ্তমাটি সিক্ত হয় দেশপ্রেমীদের তাজা রক্তে। এই পৈশাচিক ঘটনার ভয়াল স্মৃতি এ জনপদের মানুষ কখনো ভুলবেন না। ভুলতে পারেন না। পাকবাহিনীর নির্মম-নারকীয় গণহত্যার শিকার হন, বৈদ্যনাথ পাল (৪৫), নিতাই পাল (৪০), গোপাল পাল (৪২), সতীশ পাল (৪৫), রাম চন্দ্র পাল (৪০), বিমল পাল (৪২), রঞ্জন পাল (৪০), অনিল পাল (৪৫) ও  রামপদ পাল (৪২)। শিবু পাল মারাত্মকভাবে বেয়নেটবিদ্ধ হয়েও জীবিত ছিলেন। আহত ত্রৈলক্ষ পালকে ভর্তি করা হয় ভারতের সাঁড়াপুল হাসপাতালে। তার সাথে স্বজনদের যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও ভাষা সৈনিক প্রয়াত শেখ আমানুল্লাহ। অপর আহত শিবু পাল চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন ভারতের বনগাঁ সদর হাসপাতালে। উল্লেখ্য, একই দিনে সকালের দিকে কলারোয়ার মাহমুদপুর গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা আফছার আলী (৪৮) হানাদার বাহিনীর হাতে প্রথম শহিদ হন। কুমারপাড়ার শহীদদের সমাধিস্থল সংরক্ষণ করে গড়ে তোলা হয়েছে স্মৃতিসৌধ। এর পাশেই রয়েছে ‘রাধা-গোবিন্দ’ মন্দির। প্রতি বছর এদিন উপলক্ষে শহীদদের সন্তান, স্বজন ও সতীর্থরা বিদেহী আত্মার মঙ্গল কামনা করে এখানে পালন করেন বিভিন্ন মঙ্গলাচার ও নামসংকীর্তন অনুষ্ঠান। উদযাপন কমিটির সভাপতি গোষ্ঠ চন্দ্র পাল ও হরেন্দ্রনাথ পাল জানান, শোকাবহ এ দিবস উপলক্ষে উত্তর মুরারিকাটি পালপাড়া শহীদ স্মৃতি শ্রী শ্রী রাধাগোবিন্দ মন্দিরের ভক্তরা সম্মিলিতভাবে ৪ দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে, রোববার (২৮ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শহীদ সমাধিস্থলে মঙ্গল প্রদীপ ও মোমবাতি প্রজ্বালন, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শুভ অধিবাস আরম্ভ ও রাত ৮টায় ভগবত আলোচনা। ২৯ ও ৩০ এপ্রিল, সোম ও মঙ্গলবার ১৬ প্রহরব্যাপী অখণ্ড মহানাম সংকীর্তন। সবশেষে ১ মে, বুধবার ভোগ মহোৎসব।
২৮ এপ্রিল, ২০২৪

জাতীয় গণহত্যা দিবস পালিত
নানা আয়োজনে গতকাল সোমবার জাতীয় গণহত্যা দিবস পালিত হয়েছে। সারা দেশে এদিন রাত ১১টা থেকে ১১টা ১ মিনিট পর্যন্ত প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হয়। আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতির দাবিতে এদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাহজাহান খান। বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম প্রমুখ। বাংলা একাডেমিতে দোয়া মাহফিল ও একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সূচনা বক্তব্য দেন একাডেমির সচিব নায়েব আলী। একক বক্তৃতা দেন লে. কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ‘পলিটিক্স অব জেনোসাইড রিমেম্বারেন্স’ শীর্ষক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বক্তব্য দেন সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, কিনোট পেপার পড়েন লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশনের নির্বাহী পরিচালক ড. ইলিশা ডন জডেন ফর্গি ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সদস্য মফিদুল হক। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আসাদুজ্জামান নূর। দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করে শিল্পকলা একাডেমি। ‘সংলাপ: গণহত্যার বিশ্ব-রাজনীতি ও বাংলাদেশ গণহত্যা: ভুলে থাকা সাংস্কৃতিক দায়’ সংলাপে অংশ নেন সাংবাদিক জাহিদ রেজা নূর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুবুল হক, লেখক ও গবেষক চঞ্চল আশরাফ প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। এ ছাড়া ছিলেন একাডেমির সচিব সালাহ উদ্দিন আহাম্মদ। গণহত্যা দিবসে গতকাল রাত ৭টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনে আলোক প্রজ্বালন ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে সিপিবি। সমাবেশে বক্তব্য দেন সিপিবির সভাপতি শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স ও সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ। পরে শপথবাক্য পাঠ করান সিপিবি সভাপতি। সমাবেশে সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা এম এম আকাশ, মন্টু ঘোষসহ কেন্দ্রীয় নেতারা ও কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
২৬ মার্চ, ২০২৪

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণহত্যা দিবস পালিত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যৌথ উদ্যোগে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত্রি স্মরণে যথাযোগ্য মর্যাদায় ‘গণহত্যা দিবস’ পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে সোমবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে মোমবাতি প্রজ্বলন ও শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।  পরে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে অনুষ্ঠিত আলোচন সভায় বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত।  এ সময় প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদাসহ শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সভার আগে গণহত্যার উপর একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। শহিদদের অমর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশে নিরস্ত্র ও নিরীহ মানুষের উপর যে গণহত্যা চালিয়েছিল, তা ছিল পরিকল্পিত।  তিনি বলেন, পাকিস্তানি শাষকগোষ্ঠী বুঝে গিয়েছিল যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এদেশের স্বাধীনতার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গণআন্দোলন গড়ে উঠবে এবং এই আন্দোলন তারা দমিয়ে রাখতে পারবে না।  ২৫শে মার্চ রাতে হানাদার বাহিনীর অন্যতম টার্গেট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, রোকেয়া হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল (তৎকালীন ইকবাল হল), ঐতিহাসিক বটতলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি স্থাপনাসহ বিভিন্ন স্থানে শান্তিপ্রিয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের উপর নৃশংসতম গণহত্যা চালায়। এধরণের গণহত্যা পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যকোনো দেশে কখনও ঘটেনি। উপাচার্য আরও বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশে যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে আন্তর্জাতিক গণহত্যার সংজ্ঞা অনুযায়ী সেটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি রাখে। এই গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়া হলে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে এখনও যারা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তারা সতর্ক হবে। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ অভিযানের নামে পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনী পরিচালিত এই নারকীয় গণহত্যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে অতিদ্রুত স্বীকৃতি প্রদানের জন্য জাতিসংঘসহ বিশ্বসম্প্রদায়ের প্রতি উপাচার্য আহ্বান জানান। প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিরা এদেশের মানুষের উপর যে নিষ্ঠুর, নির্মম অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার অন্যতম স্বাক্ষী। এই গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি করে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন, সংগ্রাম ও ত্যাগের মধ্যে দিয়ে আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি তার ইতিহাস প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে আলোচনা সভা শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জগন্নাথ হল গণসমাধিতে মোমবাতি প্রজ্বলন ও শহিদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে জগন্নাথ হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা উপস্থিত ছিলেন। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাত ১১টা থেকে ১১টা ০১ মিনিট পর্যন্ত জরুরি স্থাপনা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সব জায়গায় এক মিনিট ‘ব্লাক-আউট’ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ ছাড়া, গণহত্যা দিবস পালন উপলক্ষে বাদ জোহর মসজিদুল জামিয়াসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার মসজিদসমূহে এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে শহিদদের রুহের মাগফেরাত/শান্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত/প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়।
২৫ মার্চ, ২০২৪

আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস পালিত
একাত্তরের ২৫ মার্চ কালো রাতে শহীদদের স্মরণে দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সোমবার দিনব্যাপী জাতীয় গণহত্যা দিবস পালিত হয়েছে। সারা দেশে রাত ১১টা থেকে রাত ১১টা ০১ মিনিট পর্যন্ত প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হয়েছে। তবে কেপিআই এবং জরুরি স্থাপনা এ কর্মসূচির আওতামুক্ত ছিল। আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি প্রদানের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাব এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় বক্তারা দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের দাবি জানান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান খান বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার মাধ্যমে সুপরিকল্পিতভাবে ২৫ মার্চের কালরাতে সংঘটিত হওয়া গণহত্যার ইতিহাসকেও মুছে ফেলতে চেয়েছে। তিনি বলেন, গণহত্যার জাতীয় স্বীকৃতি মিললেও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি। সেজন্য দেশের সাংবাদিক সমাজকে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের গণহত্যার ইতিহাসকে আরও বেশি করে তুলে ধরতে হবে। বিশেষ অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ২৫ মার্চের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য তথ্য উপাত্তসহ নতুন প্রজন্মের কাছে জোরালোভাবে তুলে ধরতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে যে সব বধ্যভূমি রয়েছে সেগুলোর তথ্য উপাত্তসহ আন্তর্জাতিক মহলের কাছে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে উপস্থাপন করতে হবে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যাকে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় তার প্রতিটি মানদণ্ড গণহত্যা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি রাখে।   জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, দেশের বধ্যভূমিগুলোর করুণ অবস্থা এবং রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে এখনও কোনো জেনোসাইড মিউজিয়াম স্থাপন করা যায়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।  এছাড়াও বক্তব্য দেন বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, বিএফইউজের সভাপতি ওমর ফারুক, সাবেক মহাসচিব আবদুল জলিল ভূইয়া, ডিইউজের সাবেক সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, প্রেস ক্লাব সদস্য চপল বাশার, মাহফুজা জেসমিন প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক আইয়ুব ভুঁইয়া। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সেমিনার, মিট দ্য প্রেস ও আন্তর্জাতিক লিয়াঁজো উপ-কমিটির আহ্বায়ক জুলহাস আলম। অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদ স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সন্ধ্যা সাতটায় ক্লাব প্রাঙ্গনে মোমবাতি প্রজ্জলন করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। বাংলা একাডেমি কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে জাতীয় গণহত্যা দিবস স্মরণে দোয়া মাহফিল ও একক বক্তৃতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির সচিব মোহা. নায়েব আলী। একক বক্তৃতা  দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা লে. কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির (বীরপ্রতীক)। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক ড. সাহেদ মন্তাজ। অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদ স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় মাওলানা মো. মাহফুজের পরিচালনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।   বীর মুক্তিযোদ্ধা লে. কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির (বীরপ্রতীক) বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিস্মৃত ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে আমাদের তৎপর হতে হবে। গণহত্যা ও নির্যাতনের প্রামাণ্য ইতিহাস সংরক্ষণ ও প্রচারে মনোযোগী হতে হবে।   মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, পাকিস্তান বাহিনী গোটা বাঙালি জাতিকে নির্মূলের অশুভ উদ্দেশ্যে যে পৈশাচিক বর্বরতা চালায়, মানবতা সুরক্ষার স্বার্থে তার আন্তর্জাতিক তদন্ত ও স্বীকৃতি প্রয়োজন।  জাতীয় গণহত্যা দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ‘পলিটিক্স অফ জেনোসাইড রিমেম্বারেন্স’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এছাড়াও বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, কিনোট পেপার পড়েন লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশনের নির্বাহী পরিচালক ড. ইলিশা ডন জডেন ফর্গি ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সদস্য মফিদুল হক। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন আসাদুজ্জামান নূর। জাতীয় গণহত্যা দিবস উপলক্ষে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচী পালন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। সেমিনার, সংলাপ, আর্ট ক্যাম্প, গণহত্যার পরিবেশ থিয়েটার প্রযোজনার পোস্টার ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস ঘোষণার দাবিতে জাতীয় গণহত্যা দিবস-এ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংলাপ: গণহত্যার বিশ্ব-রাজনীতি ও বাংলাদেশ গণহত্যা: ভুলে থাকা সাংস্কৃতিক দায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন একাডেমির সচিব সালাহ উদ্দিন আহাম্মদ।
০১ জানুয়ারি, ১৯৭০

রিয়াদে গণহত্যা দিবস পালিত
সৌদি আরবের রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়েছে জাতীয় গণহত্যা দিবস। আলোচনা অনুষ্ঠানে দিবসটি উপলক্ষ্যে দেওয়া রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধে নিহত সকল শহিদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। আলোচনা সভায় রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ১৯৭১ সালে মার্চ মাসে বাংলাদেশের মানুষের নায্য অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চলমান আন্দোলন প্রতিহত করতে ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর নীল নকশায় ২৫ মার্চ কালরাতে বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। নির্মমভাবে হত্যা করে শত শত নিরস্ত্র মানুষকে, রচিত করে মানব ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। এদিন মধ্যরাতের পর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন যা তৎকালীন ইপিআর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলার মানুষ। রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব ২০১৭ সালে জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় এবং তখন থেকে থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। গণহত্যা দিবস পালন বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে নিহত ত্রিশ লাখ শহিদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতির পাশাপাশি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক। তিনি বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সংঘটিত গণহত্যার বিচার হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ গণহত্যা থেকে শুরু করে বিভিন্ন গণহত্যার বিচার হয়েছে। তাই ১৯৭১ সালে সংঘটিত ভয়াবহ গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি জরুরী। আর এই স্বীকৃতি আদায়ে সরকারের পাশাপাশি বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশি কমিউনিটি, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। দূতাবাসের কাউন্সেলর মো. বেলাল হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মিশন উপপ্রধান মো. আবুল হাসান মৃধা, ডিফেন্স অ্যা্টাসে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. গোলাম ফারুক বক্তব্য প্রদান করেন। এছাড়া আরও বক্তব্য প্রদান করেন রিয়াদস্থ বাংলাদেশি কমিউনিটির বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, ব্যবসায়ী এম আর মাহাবুব। বক্তারা সবাই ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে সংঘটিত ভয়াল গণহত্যার বিচার ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবী করেন। 
২৫ মার্চ, ২০২৪

সরাইলে গণহত্যা দিবস পালন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে যথাযোগ্য মর্যাদায় গণহত্যা দিবস পালিত হয়েছে। বর্তমান প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস চর্চায় উৎসাহিত করতে হবে বলে বক্তারা জানান। সোমবার (২৫ মার্চ) সকালে উপজেলা মিলনায়তনের সম্মেলন কক্ষে  ইউএনও মো. মেজবা উল আলম ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ রফিক উদ্দিন ঠাকুর। বক্তারা বলেন, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব ও ঘোষণায় মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়, আমরা জয়লাভ করি। ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যার নৃশংসতা ছিলো ভয়াবহ। অচিরেই আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে এ দিবস স্বীকৃতি লাভ করবে এবং গণহত্যার বিচার করা সম্ভব হবে বলে বক্তারা আশা প্রকাশ করেন। পানিরশ্বর ইউনিয়নের বিটঘর বধ্যভূমি প্রাঙ্গনে গণহত্যার স্মৃতিস্তম্বে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিশেষ মুনাজাত ও প্রার্থনা আয়োজন করা হবে।  এসময় বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার নাসরিন সুলতানা, থানা এসআই আতিকুর রহমান, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইসমত আলী, পানিরশ্বর  ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য মো. আমজাদ হোসেন প্রমুখ।
২৫ মার্চ, ২০২৪

কয়রায় গণহত্যা দিবস পালন
খুলনার কয়রা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালন উপলক্ষে আলোচনা ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (২৫ মার্চ) সকাল ১০টার দিকে উপজেলা পরিষদের সম্মেলনকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিএম তারিক-উজ-জামানের সভাপতিত্বে ও শিক্ষক এস এম নুরুল আমিন নাহিনের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল্যাহ আল মামুন, প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মুস্তাইন বিল্যাহ, কয়রা থানার ওসি (তদন্ত) মো. টিপু সুলতান, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মামুনার রশিদ, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ, শিক্ষা কর্মকর্তা তপন কুমার বর্মন, প্রধান শিক্ষক এস এম খায়রুল আলম, শিক্ষার্থী মৃদ মন্ডল, তানিয়া সুলতানা ইতি প্রমুখ।
২৫ মার্চ, ২০২৪
X