চরভদ্রাসন সরকারি কলেজের ভবনে ফাটল
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন সরকারি কলেজের ভবনের বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা খসে পড়ছে। কোথাও কোথাও বের হয়ে গেছে বিমের রড। এই ভয়াবহ অবস্থার মধ্যেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছেন শিক্ষার্থীরা। চরভদ্রাসন বাজার সংলগ্ন সোনালী ব্যাংকের মোড় থেকে চরভদ্রাসন পাইলট উচ্চবিদ্যালয় পর্যন্ত চলে গেছে একটি সড়ক। সোনালী ব্যাংকের মোড় থেকে ঈশান কোণ বরাবর সড়ক দিয়ে ৩০০ মিটার পথ এগোলেই চরভদ্রাসন সরকারি কলেজ। কলেজের উত্তর দিকে পাশাপাশি একটি তিনতলা ও একটি দোতলা ভবনে চলছে কলেজের কার্যক্রম। সামনে রয়েছে একটি বড় মাঠ। ভবন দুটির পূর্ব দিকে রয়েছে একটি বড় পুকুর। এ ভবন দুটি ছাড়াও ওই কলেজ ক্যাম্পাসে রয়েছে একটি টিনের ঘর। সেখানে রান্নার কাজ হয়। এ ছাড়া রয়েছে চারটি চৌচালা টিনের ঘর। তবে এখন এই টিনের ঘরগুলো পরিত্যক্ত। এক সময় এগুলোতে শিক্ষকরা থাকতেন। কলেজ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৮ সালে ১০ একর ৪৮ শতক জমি নিয়ে কলেজটি চালু করা হয়। তখন এ কলেজের নাম ছিল ‘চরভদ্রাসন আইউব কলেজ’। মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে কলেজের নাম থেকে ‘আইউব’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘চরভদ্রাসন কলেজ’ নামকরণ করা হয়। ১৯৮৮ সালের ২ জানুয়ারি কলেজটি সরকারীকরণ করা হয়। বর্তমানে কলেজটিতে উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক মিলে ১ হাজার ৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। এখানে শিক্ষকের পদ ২৯টি। এর মধ্যে কর্মরত ২২ জন।  চরভদ্রাসন সরকারি কলেজে শিক্ষকের সাতটি পদ শূন্য রয়েছে। এগুলো হচ্ছে সমাজকল্যাণ বিভাগে দুটি এবং ইংরেজি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, রসায়ন ও গণিতে একটি করে পদ। এ ছাড়া ২১ কর্মচারীর বিপরীতে রয়েছেন ৬ জন। কলেজে একটি তিনতলা ও একটি দোতলা ভবন রয়েছে। তিন তলাটি বিজ্ঞান ভবন এবং দোতলা ভবনটি মানবিক ভবন হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বিজ্ঞান ভবনটি নাজুক অবস্থায় রয়েছে। ১৯৯২ সালে তিনতলা বিশিষ্ট এ ভবন নির্মাণ করা হয়। এর নিচতলায় পাঁচটি কক্ষ রয়েছে এর একটি অধ্যক্ষের, একটি উপাধ্যক্ষের, একটি শিক্ষক মিলনায়তন, কর্মচারীদের জন্য একটি কক্ষ এবং একটি ভান্ডার কক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। দোতলায় ছয়টি কক্ষ রয়েছে এর মধ্যে দুটি শ্রেণিকক্ষ, একটি রোভার ডেন ও একটি সায়েন্সল্যাব। এ তলায় দুটি কক্ষ অব্যবহৃত রয়েছে। এর মধ্যে পশ্চিম দিকের শ্রেণিকক্ষের বিমের ঢালাইকৃত বেশ কিছু অংশ ভেঙে রড বের হয়ে গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে ফাটলও রয়েছে। ভবনটি উত্তর দিকে কিছুটা হেলে পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল। কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় ২০২২ সালের ১৮ জানুয়ারি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর তিন তলায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। সেই থেকে তিনতলা পরিত্যক্ত হিসেবে রয়েছে। এখানে একটি সম্মেলন কক্ষ, একটি কম্পিউটার ল্যাব ও একটি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে।  মানবিক ভবন হিসেবে ব্যবহৃত কলেজ ক্যাম্পাসের দোতলা ভবনটির অবস্থা তুলনামূলক ভালো। এ ভবনও নির্মিত হয়েছে ১৯৯২ সালে। মানবিক ভবনের নিচতলায় কলেজের পাঠাগার অবস্থিত, যার নাম অধ্যক্ষ আজহারুল হক পাঠাগার। এ ছাড়া দুটি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। দোতলায় রয়েছে একটি বড় কক্ষ। কক্ষটি কলেজের শিক্ষকরা অবাসনস্থল হিসেবে ব্যবহার করেন। কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গী গ্রামের জাবেদ হাসান (১৭) জানায়, এ কলেজে ক্লাস করতে এসে নিজেদের খুব অসহায় মনে হয়। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় মনে হয় এই বুঝি ছাদ ভেঙে পড়ল। ওই বিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাগর মন্ডলের বাবা বালিয়াডাঙ্গী গ্রামের শওকত মন্ডল বলেন, ছেলের কাছে ওদের ভবনের জীর্ণদশার কথা শুনেছি। ছেলেটা যখন কলেজে যায় চিন্তায় থাকি। কখন না জানি কী বিপদ ঘটে যায়। কলেজের ভবনগুলো সংস্কারের বিষয়ে অধ্যক্ষ নিখিল রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, আমি কলেজটিতে সম্প্রতি যোগ দিয়েছি। এসে দেখছি অবকাঠামোগত সমস্যা, শিক্ষকদের পদ শূন্য ও ছাত্রাবাস নেই। আমার আগে যারা কলেজটিতে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন, তারা এসব সমস্যা ঊর্ধ্বতনদের কাছে লিখেছেন, কিন্তু কাজ হয়নি।
২৬ জানুয়ারি, ২০২৪
X