তিস্তার চরে চাষ করা ফসলের বাম্পার ফলন
শুষ্ক মৌসুম আসতে এখনো অনেক বাকি। মাত্র ২ মাসেই খরস্রোতা তিস্তা নদী এখন পানিশূন্য হয়ে বালুচরে পরিণত হয়েছে। নাব্য হারিয়ে তিস্তা এখন মৃতপ্রায়। সেই তিস্তার চর এখন ফসলের জমি। চারদিকে সবুজের হাতছানি। সবুজের মাঝে কৃষকের স্বপ্ন। তিস্তার জেগে ওঠা চরে ফসল ফলাতে ব্যস্ত কৃষক। কৃষকেরা চাষ করছেন আলু, ভুট্টা, রসুন, গম, তামাক মিষ্টি কুমড়া, গাজর, পেঁয়াজসহ ১০ রকমের ফসল। বানের পানিতে সম্বল হারানো মানুষ এখন ঘুরে দাঁড়াতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতি বছর তিস্তার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকরা চরে ফসল ফলানো শুরু করেন। এদিকে তিস্তা নদী ভারতের মেখলিগঞ্জ হয়ে লালমনিরহাট জেলার পাঁচটি উপজেলার পশ্চিম দিকে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশে প্রায় ১১২ কিলোমিটার পথ প্রবাহিত হয়ে তিস্তা কুড়িগ্রামের চিলমারীতে যমুনার সঙ্গে মিশেছে। কালীগঞ্জ উপজেলার গ্রামের কৃষক বাবুল বলেন প্রতি বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরে তিস্তার পানি শুকিয়ে যায়। এতে তিস্তায় বড় বড় চর জেগে ওঠে। চরগুলোতে সাধারণ কৃষকরা ফসল ফলান। তিস্তাপাড়ের মানুষের একমাত্র সম্বল চরের জমিতে চাষাবাদ করে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকে। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, তিস্তার পানি এখন কমতে শুরু করছে। পানি কম থাকায় ব্যারাজের সব গেট বন্ধ রাখা হয়েছে। এ কারণে উজানে পানিশূন্যতা দেখা দিয়েছে। লালমনিরহাটের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, এবার তিস্তায় জেগে ওঠা চরে ব্যাপক চাষাবাদ হয়েছে। তিস্তাপাড়ের কৃষকদের পরামর্শ দিতে পাঁচটি উপজেলা কৃষি উপসহকারী অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

হলুদ ফুলে অপরূপ সাজে দুধকুমার নদের চরাঞ্চল
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দুধকুমার নদে শুকনো মৌসুমে জেগে ওঠে বিস্তীর্ণ চর। এই বালুময় চরাঞ্চলে চাষাবাদ হয় সবজিসহ বিভিন্ন ফসল। এ বছর চরের অধিকাংশ জমিতে সরিষা চাষ করেছেন চাষিরা। উপজেলার অন‍্যান‍্য জমির পাশাপাশি সরিষার হলুদ ফুলে অপরূপ সাজে সেজেছে দুধকুমার নদের চরাঞ্চল। হেমন্তের সকালে সোনালি রোদের উষ্ণতায় মৌমাছিরা মধু আহরণ করতে ব‍্যস্ত। মধু আহরণে আসা মৌমাছির গুনগুন শব্দে মুখরিত সরিষা ক্ষেত। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে এবার। বারী ১৪, ১৭, ১৮ ও বিনা ৮, ৯ ও ১১ জাতের সরিষা চাষ করেছেন চাষিরা। এ বছর বন্যায় ও উজান থেকে স্রোতে ভেসে আসা পলিমাটির আবরণ পড়ে উর্বর আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে দুধকুমার নদের বুকে জেগে ওঠা চর। সেখানে বিভিন্ন ফসল ফলিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা করছে নদীভাঙা জনপদ। সরিষাসহ শীতকালীন বিভিন্ন সবজি চাষ করে পরিবারে চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন তারা। সরেজমিনে উপজেলার পাইকেরছড়া, গছিডাঙ্গা, কালীহাট, পাইকডাঙ্গা, চর উত্তর তিলাই, দক্ষিণ ছাট গোপালপুরের বইজার চর, চর বারুইটারী ও চর বলদিয়ার দুধকুমার নদীর তীরবর্তী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, যতদূর চোখ যায় কেবলই হলুদ আর সবুজের সমারোহ। শত শত হেক্টর জমিতে সরিষার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলানো হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস জানান, সরিষা খুবই লাভজনক ফসল। অতি অল্প সময়ে, অল্প পুঁজিতে কৃষকরা লাভবান হন। তাই অধিকাংশ কৃষক এখন সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকছেন। আমন ও বোরো চাষের মধ‍্যবর্তী ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করছেন চাষিরা। ৭৫ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে ফলন ঘরে তোলা যায়। তাই সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকছে কৃষকরা। পাইকের ছড়া চর এলাকার সরিষা চাষি হামিদ ও জয়ফুল জানান, তারা দুধকুমার নদীতে জেগে ওঠা চরে সরিষা চাষ করেছেন। তারা আশা করছেন খুব ভালো ফলন হবে।  উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার বলেন, সরিষা মূলত একটি মসলা জাতীয় ফসল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক তেল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি প্রণোদনায় সার ও বীজ সঠিক সময়ে কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। উপজেলায় এবার সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
১১ জানুয়ারি, ২০২৪

গৌরনদীর চরাঞ্চলে তৈরি হচ্ছে খাঁটি আখের গুড়
ভেজালের ভিড়ে খাঁটি শব্দটি হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। খাদ্য থেকে শুরু করে নানাবিদ জিনিসপত্রে হরহামেশাই মেশানো হচ্ছে ভেজালদ্রব্য। যার প্রভাব পড়ছে জনস্বাস্থ্যে। এত এত ভেজালের ভিড়ে নিরাপদ খাদ্য খুঁজে বের করা বেশ কষ্টসাধ্য। তবে সম্পূর্ণ ভেজালমুক্ত আখের গুড় তৈরি করে সেই কঠিন কাজটিই করে দেখিয়েছেন বরিশালের গৌরনদী উপজেলার আড়িয়াল নদী চরের দুই গ্রামের আখ চাষিরা। সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার কুড়িরচর ও মিয়ারচর গ্রামের একাধিক আখ চাষিরা নিজ নিজ জমি থেকে আখ কেটে পরিষ্কার করে তা মেশিনের সাহায্যে মাড়াই করে রস বের করছেন। মাটির চুলার ওপরে রাখা টিনের তাফালে রস ছেঁকে ঢালছেন গুড় তৈরির কারিগররা। এরপর চুলায় দীর্ঘ সময় জ্বাল দেওয়ার পর বিশেষ প্রক্রিয়ায় ক্রেতাদের সামনে প্রকাশ্যে তৈরি হচ্ছে ভেজালমুক্ত আখের গুড়। তবে ভেজালমুক্ত গুড় তৈরি করতে গিয়ে লাভের চেয়ে এ বছর লোকসানের আশঙ্কা করছেন চাষিরা। কুড়িরচর গ্রামের আখ চাষি আব্দুল খালেক খান জানান, এ বছর ১০০ শতক জমিতে আখ চাষ করেছি। আখগুলো বর্তমানে পরিপক্ব হওয়ায় তা দিয়ে ভেজালমুক্ত গুড় তৈরি করে আসছি। আখ চাষের পর কৃষি অফিসের কোনো লোকজন এ পর্যন্ত কোনো খোঁজখবর নেয়নি। কৃষি কর্মকর্তাদের কাছে ধরনা দিয়েও তাদের আখক্ষেত পরিদর্শন করাতে পারিনি। সরকারি সহায়তা না পেলে আগামী বছর আখ চাষ বন্ধ করে দিতে হবে।  ওই গ্রামের আরেক চাষি তারিফ হোসেন বলেন, ৪০০ শতক জমিতে আখ চাষ করেছি। এ বছর আখক্ষেতে পোকায় আক্রমণ করে আখ নষ্ট করে দিয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা ক্ষেত পরিদর্শন করে পরামর্শ দিলে এবং কৃষি সহায়তা পেলে লাভবান হতে পারতাম। মিয়ারচর গ্রামের চাষি আজিজুল প্যাদা বলেন, শ্রমিকদের মজুরি বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা দরে প্রতি কেজি গুড় বিক্রি হচ্ছে। তাতেও আমরা লাভবান হতে পারবো না। প্রতি কেজি গুড় ২০০ টাকা দরে বিক্রি করলে লাভবান হতে পারব।  একাধিক ক্রেতা জানিয়েছেন, বাজারের গুড়ের চেয়ে এ গুড় ভেজালমুক্ত। আমাদের চোখের সামনেই আখের রস দিয়ে ভেজালমুক্ত গুড় তৈরি করে দিচ্ছেন আখ চাষিরা। গৌরনদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সেকেন্দার শেখ বলেন, উপজেলার ১০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে আখ চাষ করা হয়েছে, যা দিয়ে খাঁটি গুড় তৈরি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কৃষি অফিস থেকে যাবতীয় পরামর্শ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। চাষিরা আখের দাম ভালো পেলে আগামীতে আখ চাষ আরও সম্প্রসারণ হবে।
১১ নভেম্বর, ২০২৩

সিরাজগঞ্জে যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত, চরাঞ্চল প্লাবিত
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার মাত্র ১৭ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে।  সোমবার (২৮ আগস্ট) সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৭৩ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ১২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে কাজিপুরের মেঘাই পয়েন্টে পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৫৫ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ১৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ নিয়ে গত দুই মাসে তিন দফায় যমুনার পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হলো।  এদিকে দফায় দফায় পানি বাড়ায় আবাদি জমি প্লাবিত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চরের কৃষকরা। কাওয়াকোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জিয়া মুন্সী বলেন, কয়েকদিন আগে চরাঞ্চলের জমি থেকে পানি নেমে গিয়েছিল। কিছু কিছু স্থানে কৃষকরা চাষাবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু আবারও পানি বাড়ায় বিপাকে পড়েছে এখানকার কৃষকরা। এখন শীতকালীন সবজি চাষের মৌসুম। দফায় দফায় পানি বেড়ে চরের আবাদযোগ্য জমিগুলো প্লাবিত হওয়ায় চাষাবাদ করতে পারছে না এ অঞ্চলের কৃষক।  মেছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ মাস্টার বলেন, ইতিমধ্যে চরের আবাদি জমি তলিয়ে বাড়িতেও পানি উঠতে শুরু করেছে। এ নিয়ে তিন দফায় পানি বেড়ে চাষাবাদ ব্যহত হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এ অঞ্চলের কৃষক।  সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের  উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রনজিত কুমার সরকার জানান, উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। আরও দু-একদিন বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিপৎসীমা অতিক্রমও করতে পারে। তবে বন্যার আশঙ্কা নেই। দুদিন পর থেকে পানি কমতে শুরু করবে।
২৮ আগস্ট, ২০২৩
X