দিনমজুরের কার্ড হাতিয়ে ৮ বছর ধরে চাল আত্মসাৎ করেন ডিলার
কার্ড থাকলেও দীর্ঘ ৮ বছর ধরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল পান না এক পরিবার। অভিযোগ উঠেছে ডিলার নিজেই তাদের চাল আত্মসাৎ করছে।  সম্প্রতি সরকার তথ্য হালনাগাদ করায় কার্ডধারীর আপডেট ছবি ও আঙুলের ছাপ প্রয়োজন হয়। আর এভাবেই ফাঁস হয় ঘটনা।  এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মমিনুর ইসলাম অভিযুক্ত ডিলার এনামুল হক ভরসার নামে লিখিত অভিযোগ দিলে ঘটনা জানাজানি হয়। ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নে। জানা গেছে, ওই ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার এনামুল চালের কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে ২০১৬ সালে দিনমজুর মমিনুর ইসলামের কাছ থেকে তার ও তার মায়ের পরিচয়পত্রের ফটোকপি সংগ্রহ করেন। পরিচয়পত্র নিয়ে উপজেলা খাদ্য অফিস থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড করলেও তা মমিনুরকে দেননি। পরে ২০১৮ সালে মমিনুরের মা রশিদা বেগম মারা গেলেও তার নামে বরাদ্ধের চাল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন ডিলার এনামুল হক। এদিকে গত বছর সরকার কার্ডধারীদের তথ্য ডিজিটাল করায় বিপাকে পড়েন ডিলার এনামুল।  কারণ, কার্ডধারীর আপডেট ছবি ও আঙুলের ছাপ লাগবে। তখন কৌশলে এনামুল মৃত কার্ডধারী রশিদার পুত্রবধূ ছকিনার নামে কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে ছকিনা ও তার স্বামী মমিনুর ইসলামের ছবি ও আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করেন। এরপর মৃত রশিদার স্থলে তার পুত্রবধূ ছকিনার নামে কার্ড তৈরি করেন ওই ডিলার। একইসঙ্গে দিনমজুর মমিনুরের নামে কার্ডের তথ্য ডিজিটালে হালনাগাদ করে কার্ড দুটি নিজের কাছেই রেখে দেন ডিলার এনামুল।  এদিকে স্ত্রী ছকিনার কার্ডটির জন্য দীর্ঘদিন ধরে দিনমজুর মমিনুর ডিলারের পিছে ঘুরেছেন। খাদ্য সংকটে পড়ায় একপর্যায়ে মমিনুর ডিলারের হাতে ধরে অনুনয় করেও কার্ডটি নিতে পারেননি। উল্টো ডিলার জানায়, মমিনুরের নামে কোনো কার্ডই অনুমোদন হয়নি। একপর্যায়ে গত মাসের চাল বিতরণকালে উপজেলা খাদ্য বিভাগ ডিলারদের মাঝে কার্ডধারীদের তালিকা নতুন করে বন্টন করেন শফিকুল ইসলাম নামে নতুন এক ডিলার। তার হাতে পড়ে মমিনুরের স্ত্রী ছকিনা বেগমের কার্ড। সেই কার্ডে চাল নিতে আসেন পূর্বের ডিলার এনামুল হক ভরসার দোকানের কর্মচারী নাইম মিয়া। এতে সন্দেহ হওয়ায় ছকিনা বেগমকে ফোন করেন নতুন ডিলার শফিকুল ইসলাম। আর তখনই দিনমজুর মমিনুরের পরিবার জানতে পারেন ছকিনার নামে খাদ্যবান্ধবের কার্ড হয়েছে। তবে কার্ড হয়েছে মর্মে স্বীকার করলেও ৫ হাজার টাকা না দিলে কার্ড দেবে না বলে জানায় আগের ডিলার এনামুল হক। নিরুপায় দিনমজুর মমিনুর ইসলাম অল্প দামে চাল পেতে ডিলার ভরসাকে ধার দেনা করে ২ হাজার টাকা দেন কার্ডটি ফেরত পেতে। কিন্তু টাকা নিলেও কার্ড বা চাল কোনোটাই দেননি ভরসা।  উপজেলা খাদ্য অফিসে গিয়ে বিষয়টি মৌখিকভাবে জানালেও কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী মমিনুরকে সহায়তা না করে উল্টো ডিলার ভরসার বিরুদ্ধে না গিয়ে ভরসার কথামতো চলার পরামর্শ দেন।  তবে ওই অফিস থেকে মমিনুর জানতে পারেন, সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালুর দিন থেকে দীর্ঘ ৮ বছর যাবত তার নামে কার্ড ও চাল বরাদ্ধ ছিল। যার কার্ড নং - ১৬৯ এবং তার মৃত মা রশিদার পরিবর্তে তার স্ত্রী ছকিনার কার্ড নং ১৪৮০ নামেও কার্ড চাল বরাদ্ধ ছিল। পরিবারে দুইটি কার্ড থাকার পরেও এক ছটাক চাল নিতে পারেননি দিনমজুর মমিনুর - ছকিনা দম্পতি। অবশেষে বুধবার (২৭ মার্চ) তাদের নামে বরাদ্ধকৃত খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড ও দীর্ঘ দিন ধরে আত্মসাৎ করা চাল উদ্ধার এবং অভিযুক্ত ডিলার এনামুল হক ভরসার বিরুদ্ধে বিচার দাবি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মমিনুর ইসলাম। আর তখনি সরকারি চাল আত্মসাতের ঘটনা প্রকাশ পায়। ভুক্তভোগী মমিনুর ইসলাম বলেন, আমার অভাবের সংসার। সন্তানদের মুখের দিকে চেয়ে ডিলার ভরসার হাতে পায়ে ধরে কার্ডটা চেয়েছিলাম। তিনি শুধু বলতেন, অফিস অনুমোদন দিলে হবে। এখন জানতে পারলাম এ কর্মসুচি চালু থেকে আমার পরিবারের দুটি কার্ড থাকার পরেও আমি এক ছটাক চাল কিনতে পারিনি। এনামুল আমার পরিবারের মুখের খাবার কেড়ে নিয়ে আত্নসাৎ করেছেন। আমি এর বিচার চাই। অভিযুক্ত ডিলার এনামুল হক ভরসা বলেন, মমিনুরের মা মারা যাবার পর তার স্ত্রীর নামে কার্ড হয়েছে। সেই কার্ডের চাল তুলে তার বাড়িতে পাঠাইতে গিয়েছিল আমার দোকানের কর্মচারী। কিন্তু তারা বাড়িতে ছিল না। আর তার নামেও কার্ড ছিল। যা সে জানত এবং প্রতি টিপে চাল তুলে নিত। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।  আদিতমারী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হাসনা আখতার বলেন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ তালিকা অনুমোদন করে পাঠালে আমরা কার্ড প্রস্তুত করে চাল বরাদ্ধ দিয়ে থাকি। ডিলার চাল কাকে দিল তা দেখার সুযোগ নেই।  আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূর ই আলম সিদ্দিকী বলেন, দিনমজুরের সঙ্গে এমন প্রতারণা করে চাল আত্মসাতের অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২৮ মার্চ, ২০২৪

মৃত নারীর ভিজিডি কার্ডের চাল আত্মসাৎ করলেন চেয়ারম্যান
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে মৃত নারীর ভিজিডি কার্ডের চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওই নারীর স্বামী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। তবে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিন্টু তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে জানান, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ওই কার্ডটি ভোগ করেন। লিখিত অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের ১ নম্বর চরমেখলি ওয়ার্ডের ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী ফিরোজা খাতুন ২০২৩-২৪ চক্রে ভিজিডি কার্ডের তালিকাভুক্ত হন। গত বছর জানুয়ারিতে প্রথম চাল বিতরণের দিন ফিরোজা স্বামীসহ চাল নিতে গেলে চেয়ারম্যান তার নামে কোনো কার্ড নেই বলে জানান। এর মধ্যে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ফিরোজা। কিন্তু তিনি মারা গেলেও বন্ধ হয়নি তার কার্ডের চাল উত্তোলন। অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মিন্টু বলেন, অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। চরমেখলি ওয়ার্ডের সদস্য ইলিয়াস ওই কার্ডের চাল ভোগ করেন। মিথ্যা অভিযোগ করার কারণে আমি মানহানির মামলা করব। ইউপি সদস্য ইলিয়াস হোসেন জানান, চেয়ারম্যান কার্ড না দিয়ে চাল তুলে নিয়েছেন। আর এখন আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন। ইউএনও সিব্বির আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
১৭ জানুয়ারি, ২০২৪

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী / দুস্থ নারীর কার্ড লুকিয়ে ৬ মাসের চাল আত্মসাৎ
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ভিজিডি কর্মসূচির তালিকায় নাম থাকলেও কার্ড লুকিয়ে এক দুস্থ নারীর ৬ মাসের চাল তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে ৬ মাসের মোট ১৮০ কেজি পুষ্টি চাল না পেয়ে চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছে পরিবারটি। ভুক্তভোগী মিনা বেগম (৫৫) উপজেলার গজের কুটি গ্রামের দিনমজুর জপুর আলীর স্ত্রী। জানা গেছে, নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন সচিব শফিকুল ইসলামের মাধ্যমে ২০২৩-২৪ চক্রে ভিজিডি কার্ডের আবেদন করে তালিকাভুক্ত হন মিনা বেগম। কিন্তু প্রথম বিতরণের দিন চাল তুলতে গেলে তার নামে ভিজিডি কার্ড হয়নি বলে তাকে জানানো হয়। ভিজিডি কার্ড না হওয়ায় কিছুদিন পর ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ফেরদৌসী বেগম মিনা বেগমের নামে ১৫ টাকা কেজির চালের একটি রেশন কার্ড করে দেন। কিন্তু রেশন কার্ডের চাল তুলতে গিয়েও মিনা বেগম দেখেন রেজিস্ট্রারে তার নাম নেই। এ বিষয়ে খোঁজ নিতে মিনা বেগমের স্বামী জপুর আলী উপজেলা খাদ্য অধিদপ্তরে গিয়ে জানতে পারেন, ভিজিডি কার্ডের তালিকায় মিনা বেগমের নাম থাকায় তার রেশন কার্ড হয়নি। পরে উপজেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরে গেলে তাকে জানানো হয় তার স্ত্রী মিনা বেগমের ভিজিডি কার্ড নম্বর-৪৩ ওয়ার্ড নম্বর-০৯। ভুক্তভোগী মিনা বেগম ও তার স্বামী জফুর আলী জানান, কার্ড লুকিয়ে রেখে তাদের ছয় মাসের চাল তুলে খেয়েছে কে বা কারা। তারা ৬ মাসের চালসহ ভিজিডি কার্ডটি উদ্ধারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। ইউপি চেয়ারম্যান হাছেন আলীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি দেখব। উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মোছা. সোহেলী আক্তার বলেন, মিনা বেগমের নামে বরাদ্দের পুষ্টি চাল কে তুলছে সামনের চাল বিতরণের সময় জানা যাবে। তদন্ত সাপেক্ষে ৬ মাসের ১৮০ কেজি পুষ্টি চাল ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। ইউএনও সিব্বির আহমেদ জানান, বিষয়টি গুরুত্ব নিয়ে মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাকে জানানো হচ্ছে। ভিজিডি কার্ডের অনিয়ম পাওয়া গেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
X