লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৯:২১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

দিনমজুরের কার্ড হাতিয়ে ৮ বছর ধরে চাল আত্মসাৎ করেন ডিলার

লালমনিরহাটের মানচিত্র। গ্রাফিক্স : কালবেলা
লালমনিরহাটের মানচিত্র। গ্রাফিক্স : কালবেলা

কার্ড থাকলেও দীর্ঘ ৮ বছর ধরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল পান না এক পরিবার। অভিযোগ উঠেছে ডিলার নিজেই তাদের চাল আত্মসাৎ করছে।

সম্প্রতি সরকার তথ্য হালনাগাদ করায় কার্ডধারীর আপডেট ছবি ও আঙুলের ছাপ প্রয়োজন হয়। আর এভাবেই ফাঁস হয় ঘটনা।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মমিনুর ইসলাম অভিযুক্ত ডিলার এনামুল হক ভরসার নামে লিখিত অভিযোগ দিলে ঘটনা জানাজানি হয়। ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নে।

জানা গেছে, ওই ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার এনামুল চালের কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে ২০১৬ সালে দিনমজুর মমিনুর ইসলামের কাছ থেকে তার ও তার মায়ের পরিচয়পত্রের ফটোকপি সংগ্রহ করেন। পরিচয়পত্র নিয়ে উপজেলা খাদ্য অফিস থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড করলেও তা মমিনুরকে দেননি।

পরে ২০১৮ সালে মমিনুরের মা রশিদা বেগম মারা গেলেও তার নামে বরাদ্ধের চাল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন ডিলার এনামুল হক। এদিকে গত বছর সরকার কার্ডধারীদের তথ্য ডিজিটাল করায় বিপাকে পড়েন ডিলার এনামুল।

কারণ, কার্ডধারীর আপডেট ছবি ও আঙুলের ছাপ লাগবে। তখন কৌশলে এনামুল মৃত কার্ডধারী রশিদার পুত্রবধূ ছকিনার নামে কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে ছকিনা ও তার স্বামী মমিনুর ইসলামের ছবি ও আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করেন।

এরপর মৃত রশিদার স্থলে তার পুত্রবধূ ছকিনার নামে কার্ড তৈরি করেন ওই ডিলার। একইসঙ্গে দিনমজুর মমিনুরের নামে কার্ডের তথ্য ডিজিটালে হালনাগাদ করে কার্ড দুটি নিজের কাছেই রেখে দেন ডিলার এনামুল।

এদিকে স্ত্রী ছকিনার কার্ডটির জন্য দীর্ঘদিন ধরে দিনমজুর মমিনুর ডিলারের পিছে ঘুরেছেন। খাদ্য সংকটে পড়ায় একপর্যায়ে মমিনুর ডিলারের হাতে ধরে অনুনয় করেও কার্ডটি নিতে পারেননি। উল্টো ডিলার জানায়, মমিনুরের নামে কোনো কার্ডই অনুমোদন হয়নি।

একপর্যায়ে গত মাসের চাল বিতরণকালে উপজেলা খাদ্য বিভাগ ডিলারদের মাঝে কার্ডধারীদের তালিকা নতুন করে বন্টন করেন শফিকুল ইসলাম নামে নতুন এক ডিলার। তার হাতে পড়ে মমিনুরের স্ত্রী ছকিনা বেগমের কার্ড। সেই কার্ডে চাল নিতে আসেন পূর্বের ডিলার এনামুল হক ভরসার দোকানের কর্মচারী নাইম মিয়া। এতে সন্দেহ হওয়ায় ছকিনা বেগমকে ফোন করেন নতুন ডিলার শফিকুল ইসলাম। আর তখনই দিনমজুর মমিনুরের পরিবার জানতে পারেন ছকিনার নামে খাদ্যবান্ধবের কার্ড হয়েছে। তবে কার্ড হয়েছে মর্মে স্বীকার করলেও ৫ হাজার টাকা না দিলে কার্ড দেবে না বলে জানায় আগের ডিলার এনামুল হক।

নিরুপায় দিনমজুর মমিনুর ইসলাম অল্প দামে চাল পেতে ডিলার ভরসাকে ধার দেনা করে ২ হাজার টাকা দেন কার্ডটি ফেরত পেতে। কিন্তু টাকা নিলেও কার্ড বা চাল কোনোটাই দেননি ভরসা।

উপজেলা খাদ্য অফিসে গিয়ে বিষয়টি মৌখিকভাবে জানালেও কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী মমিনুরকে সহায়তা না করে উল্টো ডিলার ভরসার বিরুদ্ধে না গিয়ে ভরসার কথামতো চলার পরামর্শ দেন।

তবে ওই অফিস থেকে মমিনুর জানতে পারেন, সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালুর দিন থেকে দীর্ঘ ৮ বছর যাবত তার নামে কার্ড ও চাল বরাদ্ধ ছিল। যার কার্ড নং - ১৬৯ এবং তার মৃত মা রশিদার পরিবর্তে তার স্ত্রী ছকিনার কার্ড নং ১৪৮০ নামেও কার্ড চাল বরাদ্ধ ছিল। পরিবারে দুইটি কার্ড থাকার পরেও এক ছটাক চাল নিতে পারেননি দিনমজুর মমিনুর - ছকিনা দম্পতি।

অবশেষে বুধবার (২৭ মার্চ) তাদের নামে বরাদ্ধকৃত খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড ও দীর্ঘ দিন ধরে আত্মসাৎ করা চাল উদ্ধার এবং অভিযুক্ত ডিলার এনামুল হক ভরসার বিরুদ্ধে বিচার দাবি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মমিনুর ইসলাম। আর তখনি সরকারি চাল আত্মসাতের ঘটনা প্রকাশ পায়।

ভুক্তভোগী মমিনুর ইসলাম বলেন, আমার অভাবের সংসার। সন্তানদের মুখের দিকে চেয়ে ডিলার ভরসার হাতে পায়ে ধরে কার্ডটা চেয়েছিলাম। তিনি শুধু বলতেন, অফিস অনুমোদন দিলে হবে। এখন জানতে পারলাম এ কর্মসুচি চালু থেকে আমার পরিবারের দুটি কার্ড থাকার পরেও আমি এক ছটাক চাল কিনতে পারিনি। এনামুল আমার পরিবারের মুখের খাবার কেড়ে নিয়ে আত্নসাৎ করেছেন। আমি এর বিচার চাই।

অভিযুক্ত ডিলার এনামুল হক ভরসা বলেন, মমিনুরের মা মারা যাবার পর তার স্ত্রীর নামে কার্ড হয়েছে। সেই কার্ডের চাল তুলে তার বাড়িতে পাঠাইতে গিয়েছিল আমার দোকানের কর্মচারী। কিন্তু তারা বাড়িতে ছিল না। আর তার নামেও কার্ড ছিল। যা সে জানত এবং প্রতি টিপে চাল তুলে নিত। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।

আদিতমারী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হাসনা আখতার বলেন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ তালিকা অনুমোদন করে পাঠালে আমরা কার্ড প্রস্তুত করে চাল বরাদ্ধ দিয়ে থাকি। ডিলার চাল কাকে দিল তা দেখার সুযোগ নেই।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূর ই আলম সিদ্দিকী বলেন, দিনমজুরের সঙ্গে এমন প্রতারণা করে চাল আত্মসাতের অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জয়ের পরও শান্তর মুখে হতাশা

ঘুষ ছাড়া ফাইল ছাড়েন না কর্মকর্তা, রাজশাহী মাউশি কার্যালয়ে দুদক

জিআই স্বীকৃতি পেল নরসিংদীর লটকন

মুসলিম ছাত্রকে পাকিস্তানের পতাকায় মূত্রত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগ ভারতে

পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে ‘কড়া হুঁশিয়ারি’ ভারতের

মে মাসে পুড়তে পারে দেশ

ভাঙা হলো ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের ‘বীক্ষণ’ মঞ্চ

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের সঙ্গে পুলিশের মতবিনিময় 

সেঞ্চুরির পর ৫ উইকেট আর জয়, মিরাজের ধন্যবাদ পেলেন যারা

সূর্যের তাপে পুড়ছে পাকিস্তান

১০

রাজনৈতিক মতৈক্যে করিডরের সিদ্ধান্ত নিন, সরকারকে সমমনা জোট

১১

ঈদের আগেই বাজারে আসছে নতুন নোট, যা থাকছে নকশায়

১২

মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাশে ঢাবি অ্যালামনাই

১৩

পদোন্নতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে চিকিৎসকদের অবস্থান কর্মসূচি

১৪

সাংবাদিককে হুমকি দেওয়া সেই অধ্যক্ষকে কেন্দ্র সচিবের পদ থেকে অব্যাহতি

১৫

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া করিডর নয় : শেখ বাবলু

১৬

ইবিতে সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্রদলের নিন্দা

১৭

ইসরায়েলি গুপ্তচর সন্দেহে ইরানে এক জনের ফাঁসি কার্যকর

১৮

তীব্র তাপদাহের সঙ্গে মে মাসে কালবৈশাখী-ঘূর্ণিঝড়ের আভাস

১৯

ফ্যাসিস্ট আমলে হাজার হাজার শ্রমিককে পথে বসানো হয়েছে : রিজভী

২০
X