থাইরয়েডের রোগ লক্ষণ ও চিকিৎসা
মানবশরীরের অপরিহার্য অনুষঙ্গ থাইরয়েড হরমোন। এটি কমবেশি হলে সমস্যা দেখা দেয়। নির্দিষ্ট মাত্রায় থাইরয়েড হরমোন থাকা জরুরি।
শরীরের বিভিন্ন কোষে শর্করা, আমিষ ও স্নেহ জাতীয় খাবারের বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করাই থাইরয়েড হরমোনের মূল কাজ। এটি শরীরের বৃদ্ধি, স্নায়ুর গঠন, যৌনক্ষমতা, প্রজনন ইত্যাদিও নিয়ন্ত্রণ করে। বন্ধ্যত্বের অন্যতম কারণও থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতা।
থাইরয়েড হরমোন নিঃসৃত হয় থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে। এই গ্রন্থি গলার সামনের উঁচু হাড়ের পেছনের দিকে ট্রাকিয়া বা শ্বাসনালিকে পেঁচিয়ে থাকে।
থাইরয়েডের হরমোনজনিত সমস্যা চার ধরনের: হরমোনের কার্যকারিতাজনিত সমস্যা, থাইরয়েডের গঠনগত সমস্যা (যেমন গলগণ্ড), থাইরয়েড গ্রন্থির প্রদাহ ও গ্রন্থির ক্যান্সার।
হরমোনের কার্যকারিতাবিষয়ক সমস্যা দুই রকম হয়—হাইপোথাইরয়েডিজম ও হাইপারথাইরয়েডিজম।
হাইপোথাইরয়েডিজম: এ রোগে পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি ভোগে। কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়েডিজম বা জন্মগত থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতির কারণে এটি হয়। আবার থাইরয়েড হরমোনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি সক্রিয় হলেও এটি হয়। কারও কারও অপারেশনের কারণে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড বাদ দিতে হলে বা অন্য কারণেও থাইরয়েড নষ্ট হয়ে গেলে এটি হতে পারে। মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্রন্থি যথেষ্ট টিএসএইচ নিঃসরণ না করলেও এ সময় দেখা দেয় এবং গর্ভাবস্থায় মায়ের থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা থাকলে, রক্তে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলে এটি হতে পারে।
এর লক্ষণ হলো অবসাদ ও অলস ভাব, ওজন বেড়ে যাওয়া, পায়ে পানি আসা, ক্ষুধামান্দ্য, চুল পড়া, ত্বক খসখসে হওয়া, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, রক্তচাপ বৃদ্ধি, বন্ধ্যাত্ব, গর্ভপাত, শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে বাধা, শরীরে শীত শীত ভাব এবং অনিয়মিত পিরিয়ড ইত্যাদি।
হাইপারথাইরয়েডিজম: রক্তে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলে হাইপারথাইরয়েডিজম হয়।
এর প্রধান কারণ গ্রেভস ডিজিজ, যাতে অ্যান্টিবডি অতিরিক্ত মাত্রায় থাইরয়েডকে উত্তেজিত করলে হাইপারথাইরয়েডিজমের সমস্যা দেখা দেয়। অন্যান্য কারণের মধ্যে থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের প্রদাহ, ওষুধের প্রতিক্রিয়া, টিউমার ইত্যাদি।
এর লক্ষণগুলো হলো, ক্ষুধা বেড়ে গেলে ওজন কমা, শরীরে গরম অনুভব, বুক ধড়ফড় করা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, ত্বক কালো হওয়া, রক্তচাপ বাড়া, অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, পিরিয়ডের সমস্যা ও বন্ধ্যাত্ব।
পরীক্ষা ও চিকিৎসা: থাইরয়েড গ্রন্থি ও হরমোনের রোগ নির্ণয়ে যে পরীক্ষাগুলো করা হয়: রক্তে হরমোনের মাত্রা, এফএনএসি, আলট্রাসনোগ্রাম ও রেডিও-অ্যাকটিভ আয়োডিন আপটেক ও স্ক্যানটেস্ট।
হাইপো বা হাইপার দুই ক্ষেত্রেই ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করা সম্ভব। তবে হাইপারথাইরয়েডিজমের ক্ষেত্রে ওষুধে কাজ না করলে সার্জারি বা রেডিও-অ্যাকটিভ আয়োডিনথেরাপি দেওয়া হয়।
থাইরয়েড গ্রন্থির গঠনগত সমস্যা: থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে গেলে তাকে থাইরয়েড নডিউল বলে। অনেক সময় হরমোন নরমাল থেকেও থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে যেতে পারে। সাধারণত আয়োডিনের অভাবে গলাফোলা রোগ হয়ে থাকে। যাকে সাধারণ ভাষায় বলে ঘ্যাগ বা গলগণ্ড রোগ।
আয়োডিনের অভাব: বেশিরভাগ স্কুলগামী শিশু ও অন্তসঃত্ত্বার আয়োডিনের অভাব রয়ে গেছে। এ আয়োডিন শরীরে অতি প্রয়োজনীয় থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দুঃখের বিষয়, সারা পৃথিবীতে এখনো ২০০ কোটি মানুষ আয়োডিনের অভাবে ভুগছে। জিনগত কারণেও থাইরয়েড নডিউল হতে পারে। আবার থাইরয়েড নডিউল বিনাইন বা ম্যালিগন্যান্ট (ক্যান্সার) দুই রকমই হতে পারে।
চিকিৎসা: সময়মতো রোগ নির্ণয় করা গেলে এ ক্যান্সার নিরাময় করা যায়। বিনাইন নডিউলের চিকিৎসা রোগ অনুযায়ী ওষুধ দ্বারা অথবা নডিউল থেকে পানি বের করে অথবা রেডিও-অ্যাকটিভ আয়োডিন সেবনের মাধ্যমে করা হয়। ক্যান্সার হলে অপারেশন ও ওষুধ দিয়েও চিকিৎসা করা হয়। অনেকের ক্ষেত্রে রেডিও-অ্যাকটিভ আয়োডিন সেবনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়।
১২ মে, ২০২৪