জলাবদ্ধতা তাড়াতে আঁটঘাট বেঁধে নামছে সিডিএ-চসিক
যতটাই ঘনিয়ে আসছে বর্ষা মৌসুম, ততই বাড়ছে জলাবদ্ধতা আতঙ্ক। গেলবার টানা আগস্টের শুরুতে টানা বৃষ্টিপাতে স্মরণকালের ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে নগরের বাসিন্দারা। সেই তিক্ত অভিজ্ঞতাকে সঙ্গী করেই এবার চট্টগ্রাম থেকে জলাবদ্ধতা তাড়াতে কোমর বেঁধে নামার ঘোষণা দিয়েছেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ। পাশাপাশি পাহাড় কাটাকে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে পাহাড় কাটা রোধে জোরালো সাঁড়াশি তৎপরতা বৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন তারা। পাশাপাশি দুই সংস্থার সমন্বয়ে গঠন করা হবে কুইক রেসপন্স টিম। সোমবার (১৩ মে) নগরের টাইগারপাস এলাকায় চসিক ভবনে সমন্বয় সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সম্প্রতি মোহাম্মদ ইউনুচ সিডিএ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণের পর নগরের সেবাসংস্থাগুলোকে নিয়ে এটাই প্রথম সমন্বয় সভা। সভায় চসিক, সিডিএ ছাড়াও চট্টগ্রাম ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), চট্টগ্রাম বন্দরসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। নগরের সব সংস্থাকে সমন্বয় করে একটি শক্তিশালী কুইক রেসপন্স টিম গঠন করতে বলেছেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। জলাবদ্ধতার ভোগান্তি থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দেওয়ার জন্য কুইক রেসপন্স টিমের রূপরেখা প্রস্তাব করা হয়েছে। সেখানে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসকে প্রধান এবং চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহীন-উল ইসলাম চৌধুরীকে সদস্য সচিব করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে চসিকের পক্ষ থেকে। তাছাড়া ওয়াসা, পাউবো, বন্দরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো থেকে একজন করে প্রতিনিধি করে একটি দল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। মূলত টানা বর্ষায় নগরের যেসব এলাকায় প্রকট জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে সেসব এলাকায় তড়িৎ গতিতে কাজ করবে এ দলটি। দলে সব সংস্থার প্রতিনিধিরা যুক্ত থাকার কারণে জলাবদ্ধতা ঠেকানোর কাজটি সহজ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সিডিএ, চসিক, ওয়াসা, বন্দরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন হবে। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে ভোগান্তি কমাতে তারাই তড়িৎ সিদ্ধান্ত গঠন করে কাজ করতে পারবে। বর্ষা সন্নিকটে। আতঙ্ক বাড়ছে। সামান্য বৃষ্টিতে মুরাদপুরসহ নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।  মানুষ অসন্তোষ প্রকাশ করছে। খালের দুই পাশে গাইডওয়াল দিলেই কাজ শেষ নয়। মাটি অপসারণ করতে হবে। কিছু খালে কী পরিমাণ মাটি উত্তোলন করেছে তা জানতে হবে। পানি উঠবে, কেউ বলতে পারবে না পানি উঠবে না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেক পরিবর্তন আসছে। দুবাই শহর, নিউইয়র্ক শহরে পানি উঠছে। আমাদের খাল গভীর করতে হবে। সেই মাটি উত্তোলন করা গেলে জনগণ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে। তাছাড়া চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় কাটা নিয়ে জোরালো আলোচনা হয়েছে। নগরীতে পাহাড় কাটাকে অন্যতম কারণ উল্লেখ করে মেয়র রেজাউল বলেন, পাহাড়খেকোরা শুধু পাহাড়ই সাবাড় করছে না, সাথে তারা জলাবদ্ধতাও সৃষ্টি করছে। পাহাড় কাটার ফলে পাহাড়ের মাটি নরম হয়ে এসে নালায় পড়ছে।  এতে করে নালায় পানি নিষ্কাষণ হচ্ছে না। পাহাড় কাটা বন্ধে সব সংস্থা একযোগে কাজ করতে হবে। গতবার দেখলাম লালখান বাজারের পাহাড়ের মাটি জিইসি পর্যন্ত চলে গেছে। চসিককে লাখ লাখ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে সিলট্রেপ করতে হবে। সমন্বয় সভায় জলাবদ্ধতা তাড়াতে যৌথভাবে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন সংস্থা দুটির প্রতিনিধিরা। পাশাপাশি পাহাড় কাটা রোধ, নতুন প্রকল্প গ্রহণ, পলিথিন-ককশিটের ব্যবহার কমানো, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরানোসহ নানা ইস্যুতে একযোগে কাজ শুরুর প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন সিডিএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ। এ সময় সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, এখানে চসিক মেয়র এবং আমি দুজনই মুক্তিযোদ্ধা। আমাদের মধ্যে দেশপ্রেম আছে। আমাদের সঙ্গে কাউন্সিলররা আছেন তাদের মধ্যেও দেশপ্রেম আছে। আমরা হাতে হাত মিলিয়ে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একযোগে কাজ করব। আগে দেখতাম সিডিএ-চসিক ধাক্কাধাক্কি করত। এরা বলত, আমাদের কাজগুলো ওরা নিয়ে গেল, ওরা বলত আমাদের কাজগুলো এরা নিয়ে গেল। এগুলো এখন থেকে আর চলবে না। সিডিএ, চসিক, ওয়াসা পৃথকভাবে যে প্রকল্পই আনুক সেটা চট্টগ্রামের মানুষের জন্য। যদি আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করতে না পারি তাহলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাউকে ছাড় দেবেন না। সভায় উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এফ এম ফজলুল্লাহ, চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস, কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন, চসিক কাউন্সিলর ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি মোবারক আলী, কাউন্সিলর আবুল হাসনাত বেলালসহ বিভিন্ন সংস্থার বিভাগীয় প্রধানরা।
১৩ মে, ২০২৪

চারদিক / ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে আগাম পদক্ষেপ নিন
রাজধানী শহরের জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের। বর্ষা মৌসুম এলেই নগরবাসীকে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। সামান্যতম বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় ঢাকার রাস্তাঘাটসহ অনেক এলাকা। টানা কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টিপাতেই অনেক এলাকায় দুই-তিন ফুট পর্যন্ত পানি ওঠে। কিন্তু এ পানি নেমে যেতে তিন থেকে চার ঘণ্টা আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক থেকে দুদিনও লেগে যায়। যার ফলে রাস্তাঘাটে মানুষ এবং যানবাহন চলাচলে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বেশিরভাগ সময়ই জলাবদ্ধতা শুরু হওয়ার পর কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে কিন্তু বর্ষা মৌসুম আসার আগেই যদি প্রস্তুতি নেওয়া যায় তাহলে রাজধানী শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন হবে। জলাবদ্ধতায় ঢাকাবাসীকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। খুবই দুঃখজনক বিষয় হলো, বৃষ্টির সময় অনেক এলাকায় রাস্তার পাশের বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে অনেক মানুষ মারা যায়। ২০২৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর রাতের বৃষ্টির সময় মিরপুরে ঢাকা কমার্স কলেজ এলাকায় রাস্তার পাশের বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে শিশুসহ একই পরিবারের চারজনসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়। তাই এ বছর আমাদের আগেভাগেই প্রস্তুতি নিতে হবে। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ওয়াসার দায়িত্বে থাকা সব নালা ও খাল দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে সেগুলো দখলমুক্ত করে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করে তারা। খালের মূল দায়িত্ব গ্রহণের পর তারা প্রায় আড়াই বছরের মতো সময় পেয়েছে। এর মধ্যে দুই সিটি করপোরেশন জলাবদ্ধতা নিরসনে কতটুকু কাজ করতে পেরেছে তা প্রশ্ন থেকেই যায়! ঢাকার আশপাশের সবকটি নদীর অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। আগে বৃষ্টি হলে পানি খাল দিয়ে নদীতে চলে যেত কিন্তু এখন এসব খাল বা নদী প্রায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে শহরের পানি নেমে যাওয়ার মতো জায়গা পায় না, ফলস্বরূপ সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। কিন্তু জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ার আগে কর্তৃপক্ষকে শহরের পানি বের হওয়ার সব রাস্তা পরিষ্কার করতে হবে। ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতার অন্যতম প্রধান কারণ হলো, ঢাকার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় ঘাটতি। পানি নিষ্কাশনের প্রধান মাধ্যম খালগুলো অবৈধ দখল ও কঠিন বর্জ্যে ভরাট থাকা। নগরের খাল, ড্রেন, বক্স কালভার্ট ও ব্রিক স্যুয়ারেজ লাইন দিয়ে পানি নদীতে যেতে পারে না। ড্রেনেজ সিস্টেমেও সমস্যা রয়েছে। যেখানে সহজেই পানির সঙ্গে বিভিন্ন বর্জ্য যেমন—পলিথিন এবং অন্যান্য অপচনশীল পদার্থ ভেসে গিয়ে নালার মধ্যে আটকে যায়, সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতার। কিন্তু বর্ষার আগে এ সমস্যাগুলোর সমাধান করা খুব জরুরি। শহরে অনেক ছিন্নমূল মানুষ থাকে যাদের নিজস্ব বাড়িঘর নেই। রাত হলে তাড়া আশ্রয় নেয় শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে। কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে তারা সেই আশ্রয়টুকুও হারিয়ে ফেলে। আবার পথচারী থেকে শুরু করে ছোট আকারের যানবাহন প্রায়ই গর্তে পড়ে বিব্রত অবস্থায় পড়তে হয়। অনেক সময় মারাত্মক আহত হতে হয়। ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতা নিরসনে পর্যাপ্ত ড্রেনেজ নির্মাণ করতে হবে। যাতে বৃষ্টির পানি সহজেই নদীতে চলে যেতে পারে। নগরের খাল, ড্রেন, বক্স কালভার্ট ও ব্রিক স্যুয়ারেজ লাইনগুলোকে পরিষ্কার এবং পানি চলাচলের উপযুক্ত রাখতে হবে। ঢাকার আশপাশের সব নালা-খাল, নদীগুলোকে সংরক্ষণ করতে হবে। কিছুদিন পর দেখা যাবে ঢাকায় তীব্র জলাবদ্ধতা। তাই তা নিরসনে সরকারকে বর্ষার আগেই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। শুধু সরকার বা সিটি করপোরেশন জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে এটি ভেবে বসে থাকলে ফল হবে ভয়াবহ। কারণ আমরা অনেকেই বর্জ্য ড্রেনে ফেলে দিই, যে কারণে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। তাই সরকারের পাশাপাশি নিজে সতর্ক হতে হবে এবং অন্যকেও সতর্ক করতে হবে। সাকিবুল হাছান শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ, ঢাকা
১৩ মে, ২০২৪

জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি
জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ও এডিবি আওতায় চুক্তি করেছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এই চুক্তি হয়। চুক্তি সই করেন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এবং এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং। ইআরডি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে ইআরডি। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রকল্পটি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বাস্তবায়ন করবে। ক্লাইমেট রেজিলেন্ট ইন্টিগ্রেটেড সাউথ ওয়েস্ট প্রজেক্ট ফর ওয়াটার রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন করে কৃষি ও মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি, আনুষঙ্গিক উন্নয়নের মাধ্যমে আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন আনয়ন, সমন্বিত পানিসম্পদ ও অংশগ্রহণমূলক পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং উন্নত অবকাঠামো নির্মাণ ও সমন্বিত সহায়তার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন অর্জন সম্ভব হবে। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ ঋণের সুদহার ২ শতাংশ এবং পাঁচ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ মোট ২৫ বছরে পরিশোধযোগ্য। অন্য কোনো চার্জ নেই। এডিবি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী। ১৯৭৩ সালে সদস্য লাভের পর এডিবি থেকে অর্থনীতির অগ্রাধিকারভুক্ত বিভিন্ন খাতে ধারাবাহিকভাবে আর্থিক সহায়তা পেয়ে আসছে বাংলাদেশ। উন্নয়ন সহায়তার ক্ষেত্রে এডিবি সাধারণত বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবহন, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার, কৃষি, পানিসম্পদ ও সুশাসনকে প্রাধান্য দেয়।
২১ এপ্রিল, ২০২৪

জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকার দুই সিটিতে নতুন বিভাগ হচ্ছে
রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে গত এক যুগে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা খরচ করেছে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। একের পর এক প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মেলেনি নগরবাসীর। এখনো এক-দেড় ঘণ্টার মাঝারি বৃষ্টিতেই পানিতে থইথই করে ঢাকার অলিগলি। ব্যর্থতা মাথায় নিয়ে এ দায়িত্ব ছেড়েছে ঢাকা ওয়াসা। এবার জলাবদ্ধতা নিরসনে নতুন বিভাগ খুলছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। জনবল চেয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে। যাচাইয়ের পর এ প্রস্তাবনার অনুমোদন দেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের হাতে ছিল। এরপর পৌরসভা এ দায়িত্ব পালন করত। ১৯৮৮ সালে এই দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর থেকে ঢাকা মহানগরীর প্রধান ড্রেন লাইনগুলো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল ঢাকা ওয়াসার। আর শাখা লাইনগুলোর দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। ওই সময় রাজধানীর মোট ড্রেনেজ লাইনের মধ্যে ৩৮৫ কিলোমিটার ঢাকা ওয়াসার অধীনে এবং প্রায় ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার ঢাকা সিটি করপোরেশনের অধীনে ছিল। এর বাইরে ৭৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ২৬টি খাল ও ১০ কিলোমিটার বক্স-কালভার্ট রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও ছিল ঢাকা ওয়াসার। তবে জলাবদ্ধতার জন্য এক সংস্থা অন্যের ওপর দায় চাপিয়ে আসছিল। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ওয়াসার দায়িত্বে থাকা সব নালা ও খাল দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ১৫টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১১টি খালের বর্জ্য পরিষ্কার, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, খাল উদ্ধার, খালের পাড় বাঁধাই, ওয়াকওয়ে নির্মাণ, সবুজায়নসহ যাবতীয় কাজের দায়িত্ব পায়। ওয়াসার পাম্পিং স্টেশন ও ড্রেনেজ নেটওয়ার্কও সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০২২ সালের জুনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৫৫টি স্লুইসগেট ডিএসসিসির কাছে হস্তান্তর করা হয়। ‘ঢাকা/নারায়ণগঞ্জ/ডেমরা (ডিএনডি) এলাকার নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ১৪টি খাল সেনাবাহিনীর মাধ্যমে খনন করে দক্ষিণ সিটিকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ওয়াসার খাল ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হলেও তাদের জনবল ও সক্ষমতা না থাকায় জলাবদ্ধতা কাটেনি। গত বছরও মাত্র কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরীর অধিকাংশ এলাকা পানিতে ডুবে যায়। মিরপুরে বৃষ্টির পানিতে বৈদ্যুতিক তার পড়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। ২০১১ সালে স্থানীয় বিল-২০১১ অনুযায়ী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের যাত্রা শুরু হয়। পরে ২০১৬ সালে দুই সিটি করপোরেশনে ১৬টি ইউনিয়ন যুক্ত করা হয়। এতে বাড়ে ওয়ার্ডের সংখ্যা। আগের ৩৬টির সঙ্গে নতুন ১৮টি ওয়ার্ড যুক্ত হওয়ায় ডিএনসিসির ওয়ার্ড হয় ৫৪টি। একইভাবে নতুন ১৮টি ওয়ার্ড যুক্ত হওয়ায় ডিএসসিসিতে মোট ওয়ার্ড দাঁড়ায় ৭৫। দুই সিটির আয়তন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেবা প্রদানেও চ্যালেঞ্জ বাড়ে। সূত্র জানায়, জলাবদ্ধতা নিরসনে গত বছরের ১৪ জুলাই ডিএসসিসি ‘জলাবদ্ধতা নিরসন শাখা’ নামে নতুন একটি বিভাগে কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক কার্যালয়ে মোট ১১৪ পদ এবং বাজার, বিপণিবিতান নির্মাণ ও সংস্কার শাখার রাজস্ব খাতে ১৪টিসহ মোট ১২৮ পদের একটি প্রস্তাবনা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। মন্ত্রণালয় এ প্রস্তাবনার দুটি বিভাগে পদের কাজের বিবরণসহ বিধি উল্লেখ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত চেকলিস্ট অনুযায়ী স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রস্তাব পাঠানোর অনুরোধ জানায়। পরবর্তী সময়ে ডিএসসিসি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চেকলিস্ট অনুযায়ী জলাবদ্ধতা নিরসন শাখায় ১১৪টি পদ এবং বাজার, বিপণিবিতান নির্মাণ ও সংস্কার শাখার রাজস্ব খাতে ১৪টি নতুন পদ সৃষ্টি করে প্রস্তাবনা প্রস্তুত করেছে। আর ডিএনসিসি ‘ড্রেনেজ সার্কেল’ নামে একটি বিভাগে ২৬৫ ও সিটি স্যানিটেশন সেলে ৬৯ পদ তৈরির প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠায় গত অক্টোবরে। এরপর গত ১৪ মার্চ ডিএনসিসি ড্রেনেজ সার্কেলে ১৯৬ এবং সিটি স্যানিটেশন সেলে ৬৬ পদ তৈরির সংশোধিত প্রস্তাব পাঠায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে। ডিএনসিসির প্রস্তাবিত ড্রেনেজ সার্কেল বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফারুক হাসান মো. আল মাসুদ বলেন, ডিএনসিসির জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ সার্কেল ও সিটি স্যানিটেশন সেল নামে নতুন দুটি বিভাগ খোলা হচ্ছে। বিভাগ দুটিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চেকলিস্ট অনুযায়ী নতুন পদ সৃষ্টি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো হয়েছে। তারা সেখানে সংশোধনী দেওয়ার পর তা সংশোধন করে আবার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ডিএসসিসি এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে বিদ্যমান সাংগঠনিক কাঠামোর জনবল দিয়ে সম্ভব হচ্ছে না। নগরবাসীর সেবা নিশ্চিতে জলাবদ্ধতা নিরসন শাখা সৃষ্টি করে প্রয়োজনীয় আরও জনবল অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যমান সাংগঠনিক কাঠামোতে সংস্থানকৃত জনবল দিয়ে বাজার, বিপণিবিতান নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমরা জলাবদ্ধতা নিরসন আর বাজার, বিপণীবিতান নির্মাণ ও সংস্কার শাখার রাজস্ব খাতে পদ সৃষ্টি করতে একটি প্রস্তাবনা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠিয়েছি। তারা এতে কিছু সংশোধনী দিয়েছে, আমরা সেসব সংশোধনী চিহ্নিত করে আবার মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠাব।
১৯ এপ্রিল, ২০২৪

ঢাকা দক্ষিণে মশা নিয়ন্ত্রণে, হবে না জলাবদ্ধতা : মেয়র তাপস
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় মশা নিয়ন্ত্রণে আছে বলে দাবি করেছেন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। এবার বর্ষা মৌসুমে দক্ষিণ সিটিতে জলাবদ্ধতা হবে না বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। এ সময় মেয়র জানান, পান্থকুঞ্জকে আগামী জুলাইয়ের আগে নান্দনিক উদ্যানে পরিণত করা হবে। বুধবার (১৭ এপ্রিল) কারওয়ানবাজার মোড়ে অবস্থিত পান্থকুঞ্জ পার্কের অভ্যন্তরে পান্থপথ বক্স কালভার্টের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র এসব কথা জানান। মশার উপদ্রপের অভিযোগ তোলায় সুনির্দিষ্ট করে দক্ষিণ সিটির কোন ওয়ার্ডে মশা আছে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে জানতে চান মেয়র তাপস। জুরাইন ও যাত্রীবাড়ী এলাকায় এখনো মশার উপদ্রপ দেখা যাচ্ছে-ডিএসসিসি মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, যাত্রীবাড়ী-জুরাইন এলাকায়ও এখন মশা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিউলেক্স মৌসুম প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আমি আগেও বলেছিলাম, ইনশাল্লাহ আমরা মশা নিয়ন্ত্রণে রেখেই মৌসুম শেষ করতে পারব। শেখ তাপস বলেন, তারপরও যদি দুএক জায়গায় বেড়ে যায়, সেগুলোও নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নেব। একজন কর্মচারী গাফিলতি করতেই পারে কিন্তু আমরা কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেই। অব্যাহতভাবে গাফিলতি করলে চাকরিচ্যুত করা হয় এবং কর্মচ্যুত করলে সঙ্গে সঙ্গে অন্য জনবল নিয়োজিত করে থাকি। মশককর্মী বা মশক সংক্রান্ত কার্যক্রমে কোনো জনবল সংকট নেই। আমাদের নিয়োজিত সকালে সাতজন, বিকেলে ছয়জন এবং একজন মশক সুপারভাইজর—১৪ জন শুক্রবার ছুটি বাদে প্রতিদিনই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করছেন। তিনি বলেন, করপোরেশন এলাকায় ২৪টি থানা, সেগুলো এডিস মশা বিস্তারের জন্য অভয়ারণ্য হয়ে থাকে। প্রস্তুতি পর্ব থেকে আমরা তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে এগুলো আগে করতে চাই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো পরিষ্কার রাখতে চাই। যাতে মৌসুমে গিয়ে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ না করে বা সংকটে পরিণত না হয়। এ বছর দক্ষিণ সিটিতে জলাবদ্ধতা হবে না জানিয়ে তাপস বলেন, একদিনে জলাবদ্ধতা নিরসন, অন্যদিকে এডিস মশার বিস্তার রোধে সব প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম আমরা নিচ্ছি। গত বছর যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা ছিল, এবার সে এলাকায় কাজ করা হয়েছে। তাই জলাবদ্ধতা না হওয়ায় সম্ভাবনা আছে। পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করায় জলাবদ্ধতা রোধ করা যাবে। ঢাকায় বিচ্ছিন্ন কয়েকটি জায়গা ছাড়া তেমন কোনো জায়গায় এখন দীর্ঘ সময় জলবদ্ধতা থাকে না। এ সময় অন্যদের মধ্যে দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, সচিব আকরামুজ্জামানসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
১৭ এপ্রিল, ২০২৪

জলাবদ্ধতা নিরসনে কাউন্সিলরদের মাঠে থাকার নির্দেশ মেয়র তাপসের
জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ ও বাস্তবায়নাধীন কার্যক্রম নিবিড়ভাবে তদারকি করার জন্য করপোরেশনের কাউন্সিলরদের মাঠে থাকতে নির্দেশনা দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।  মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) দুপুরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের মেয়র হানিফ মিলনায়তনে ২৪তম করপোরেশন সভায় মেয়র এই নির্দেশনা দেন।  ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত সমস্যাগুলোর একটি জলাবদ্ধতা। দায়িত্বভার গ্রহণের পর হতে জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা নিজস্ব অর্থায়নে অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কার, খাল-নালা-নর্দমা হতে বর্জ্য অপসারণসহ ব্যাপক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছি। অনেক জায়গায় এখনো কাজ চলমান এবং নতুন করে অনেক জায়গায় কাজ হবে। এই সামষ্টিক কার্যক্রমে আপনাদের নিরলস কর্ম প্রয়াস আমাদের সহযোগিতা করে থাকে। তাই, জলাবদ্ধতা নিরসনের সুফল ঢাকাবাসীর দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে মাঠপর্যায়ে আপনাদের তদারকি আরও বাড়াতে হবে। সেসব কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে অতীতের চাইতে আরও বেশি মাঠে থাকতে হবে। হাঁটার পথ, রাস্তার ঢাল ও নর্দমা পরিষ্কার কার্যক্রমে কোনো ধরনের গাফিলতি ও অবহেলা যেন থাকে সে বিষয়ে কাউন্সিলরদের তদারকি জোরদার করার নির্দেশনা দেন মেয়র। তিনি বলেন, আমাদের হাঁটার পথ ও রাস্তার মধ্যে নর্দমার যে মুখগুলো থাকে সেগুলো সংস্কার এবং ঢালগুলো ঠিক করতে ইতোমধ্যে প্রকৌশল বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে করে দ্রুত পানি নিষ্কাশিত হতে পারে। এ ছাড়াও আমাদের নর্দমাগুলোর পরিষ্কার কার্যক্রম শুরু হবে। সেগুলোর দরপত্র কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। নর্দমাগুলো যেন সঠিকভাবে পরিষ্কার হয়, এ কার্যক্রমে যেন কোনো ধরনের গাফিলতি-অবহেলা না থাকে সেগুলোও আপনারা যথাযথভাবে তদারকি করবেন বলে আশা করি। দক্ষিণ সিটির সচিব আকরামুজ্জামানের সঞ্চালনায় সভায় করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়াও কাউন্সিলরবৃন্দ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন।  সভায় অন্যান্যের মধ্যে করপোরেশনের পরিবহন মহাব্যবস্থাপক মো. হায়দর আলী, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হক, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাসিম আহমেদ, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কাইজার মোহাম্মদ ফারাবী, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. সিরাজুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং কাউন্সিলরগণ উপস্থিত ছিলেন। 
১৯ মার্চ, ২০২৪

ফতুল্লায় ১২ মাস জলাবদ্ধতা আন্দোলনে এলাকাবাসী
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ১২ মাস জলাবদ্ধতায় ভুগছে এলাকাবাসী। সদর উপজেলার ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ড স্টেশনের পূর্ব পাশে দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে এবার রাস্তায় নামলেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং ব্যবসায়ী মহল। গতকাল সোমবাব সকালে ভুক্তভোগী মহল এ কর্মসূচির আয়োজন করে। স্থানীয়রা জানান, সারা বছর ধরে এখানে জলাবদ্ধতা থাকায় স্বাভাবিক জীবন যাপন ব্যাহত হচ্ছে। ফতুল্লা ইউপি সদস্য হাসমত আলীর বাড়ির সামনের রাস্তায় ১২ মাস ধরেই বর্ষাকাল থাকে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ফরিদ আহমেদ টিটু জানান, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় এখানে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। অথচ এ সমস্যা সমাধানে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য কিংবা সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী সদস্যকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। ফলে বাধ্য হয়ে পিলকুনি, তক্কারমাঠ, শেহাচরের লাখো মানুষ সব সময়ই ময়লা, দুর্গন্ধযুক্ত পানি মাড়িয়ে এখান দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সহকারী প্রকৌশলী মো. রমজান হোসেন জানান, এ রাস্তাটি সংস্কারের জন্য কিছুদিনের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হবে। তবে ড্রেনের কাজের জন্য ইতোমধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। নির্বাচনের কিছুদিন আগে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেন্ডার পেয়েছে। শিগগির ড্রেনের কাজ শুরু হবে। রাস্তার দুপাশে ডায়িং কারখানার দূষিত পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় রাস্তার ওপরে গিয়ে পড়ে ফলে বেশি দিন ড্রেন ভালো থাকে না।
৩০ জানুয়ারি, ২০২৪

জলাবদ্ধতা নিয়ে মেয়রের কাছে অভিযোগ নানকের
আগুনে পুড়ে যাওয়া মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের জলাবদ্ধতার বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। একই সঙ্গে দ্রুত সমস্যাটি সমাধানে উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানান। গতকাল সোমবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনায় মেয়রের কাছে ওই অভিযোগ জানান নানক। এর আগে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট পরিদর্শন করেন তিনি। ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতি নির্দেশনা দিয়ে মেয়র বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে আপনি নিজে উদ্যোগ নিয়ে এই সমস্যার সমাধান করবেন। এরপর আমাকে ছবি পাঠিয়ে তা নিশ্চিত করবেন। এক দিনও যেন বেশি না লাগে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ না করতে পারলে আপনারা (ব্যবসায়ীরা) আমাকে ছবি পাঠিয়ে জানাবেন, আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। ডিএনসিসির স্থানীয় ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সলিমুল্লাহ সলুর সভাপতিত্বে ক্ষতিগ্রস্ত মার্কেট কমিটির সদস্য, ব্যবসায়ী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য সাদেক খান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজাসহ আরও অনেকে।
২৪ অক্টোবর, ২০২৩

জলাবদ্ধতা নিয়ে মেয়রের কাছে অভিযোগ জানালেন নানক
আগুনে পুড়ে যাওয়া মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের জলাবদ্ধতার বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামের কাছে অভিযোগ জানিয়ে দ্রুত এই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। আজ সোমবার (২৩ অক্টোবর) রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার সময় মেয়রের কাছে এ অভিযোগ জানান নানক। এর আগে তিনি অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট পরিদর্শন করেন। জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘সামান্য বৃষ্টি হলেই এই কৃষি মার্কেটের সামনে রাস্তায় পানি জমার আগেই মার্কেটের ভেতরে এক হাঁটু পানি জমে যায়। জলাবদ্ধতায় মার্কেটের দোকানের চালসহ অন্যান্য সব মালামাল নষ্ট হয়ে যায়। তাই আমি অনুরোধ করব ব্যবসায়ীদের ক্ষতি থেকে মুক্তি দিতে মেয়র আপনি এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।’ এ সময় বৈঠকে উপস্থিত মার্কেটের দোকান মালিক, ব্যবসায়ী, কর্মচারী সকলে করতালির মাধ্যমে জাহাঙ্গীর কবির নানকের দাবির প্রতি সমর্থন জানান। সেই সঙ্গে দাবি আদায়ে সবাই একসঙ্গে স্লোগান দিতে থাকেন। পরে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলামের বক্তব্যের সময় মেয়র ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘আগামী ৭ দিনের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান করে দেওয়া হবে।’ আতিকুল ইসলাম ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতি নির্দেশনা দিয়ে বলেন, ‘আগামী ৭ দিনের মধ্যে আপনি নিজে উদ্যোগ নিয়ে এই সমস্যার সমাধান করবেন। এরপর আমাকে ছবি পাঠিয়ে এই কাজটা যে করা হয়েছে তা নিশ্চিত করবেন। সাত দিনের একদিনও যেনো বেশি না লাগে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ না করতে পারলে আপনারা (ব্যবসায়ীরা) আমাকে ছবি পাঠিয়ে জানিয়ে দিবেন, আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ মেয়র আতিক আরও বলেন, ‘আপনারা যেনো কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হোন সেজন্য আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করে আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে কৃষি মার্কেট নতুন করে অস্থায়ী ভিত্তিতে নির্মাণকাজ শুরু করব। এরপর যার যেখানে দোকান ছিল, যতটুকু জায়গা ছিল সে অনুযায়ী আপনারা দোকান বরাদ্দ পাবেন। আপাতত আপনাদের ব্যবসা যেন বন্ধ না থাকে, আপনারা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হোন, সেজন্যই আমাদের এই সিদ্ধান্ত। তবে আমরা পরে এখানে পরিকল্পিত বহুতল ভবন মার্কেট নির্মাণ করব। তখন মার্কেটে নির্মাণের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। নতুন বহুতল মার্কেট নির্মাণ হওয়ার পর আপনারা অবশ্যই এখানে দোকান বরাদ্দ পাবেন। এটি নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই।’ ডিএনসিসির স্থানীয় ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সলিমুল্লাহ সলুর সভাপতিত্বে ক্ষতিগ্রস্ত মার্কেট কমিটির সদস্য, ব্যবসায়ীরা ছাড়া উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য সাদেক খান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজাসহ আরও অনেকে।
২৩ অক্টোবর, ২০২৩

জলাবদ্ধতা নিরসনে ভরাট খাল কেটে দিল গ্রামবাসী
একটি পুরোনো খালের কিছু অংশ ভরাট করে ফেলায় দীর্ঘ তিন বছর ধরে জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছিল গ্রামবাসী। স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি কর্তৃক খাল ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করায় গ্রামজুড়ে এতদিন ছিল জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতা নিরসনে গত দুই বছরে একাধিক দপ্তরে গ্রামবাসীর পক্ষে দেওয়া হয়েছে একাধিক লিখিত অভিযোগ, করা হয়েছে একাধিক গ্রাম সালিশ। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সম্প্রতি টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ও খাল ভরাট করে ফেলায় গ্রামের শত শত একর জমিতে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। কৃষকদের জমির ফসলের ক্ষতির পাশাপাশি পানি ঢুকে পড়ে বসত ভিটায় ও পোল্ট্রি খামারে। ফলে বাধ্য হয়েই একত্র হয় পুরো গ্রামবাসী। সম্মিলিতভাবে গ্রামের সবাই খালের ভরাট করা স্থানে মাটি সরিয়ে ড্রেন করা শুরু করে। এতে গ্রামবাসীর সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ায় খাল ভরাট করা লোকজন। ঘটনাটি ঘটে বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের চরছায়েট গ্রামের পশ্চিমপাঁড়া গ্রামে। খবর পেয়ে বেলাব থানা পুলিশ ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিন্নাবাইদ পশ্চিমপাঁড়া গাংকুল পাঁড়া এলাকার আড়িয়াল খাঁ নদের তীর ঘেঁষে একটি পুরোনো খালের মাধ্যমে পানি নিরসন হতো দীর্ঘদিন ধরে। কয়েক বছর আগে এ খালের কিছু অংশের জায়গা কিনে নিয়ে খাল ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করে ফেলে বিন্নাবাইদ চরাছায়েট গ্রামের শুকুর আলী.আবুল কাশেম, বজলু মিয়া, নুরু মিয়াসহ কয়েকজন। খাল ভরাটের কারণে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বর্ষা মৌসুমে ও বৃষ্টির মৌসুমে পুরো গ্রামজুড়েই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এ জলাবদ্ধতা নিরসনে ও ভরাট করা খাল খুলে দেওয়ার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসী বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো সুরাহা পায়নি।  সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে চরছায়েটসহ আশপাশের গ্রামজুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে বসতভিটা ও ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গ্রামের প্রায় সহস্রাধিক লোক একত্র হয়ে ভরাট খালে কোদাল চালায়। এ সময় শুকুর আলীসহ খাল ভরাট করা লোকেরা গ্রামবাসীর সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। ফলে উভয় পক্ষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসন ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। তবে দীর্ঘদিনের ভরাট খাল খুলে সাময়িকভাবে হলেও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করায় এলাকার হাজারো মানুষের মুখে ফুটে উঠেছে তৃপ্তির হাসি। তারা সরকারের কাছে স্থায়ীভাবে এ সমস্যার সমাধান চায়। এলাকাবাসী জানান, এ খালটি অনেক পুরোনো। এ খাল দিয়ে চরছায়েট গ্রামসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের পানি নিষ্কাশন হয়। কিন্তু শুকুর আলী, আবুল কাশেম, বজলু মিয়া, নুরু মিয়াসহ কয়েকজন খালের একটি অংশ ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করে। এতে বৃষ্টির পানি আটকে গ্রামে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। আর এই জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাবার জন্য গ্রামবাসী সম্মিলিতভাবে আজকে ভরাট করা স্থানে মাটি কেটে ড্রেন নির্মাণ করে। অভিযুক্ত শুকুর আলী বলেন, খালের যে জায়গা ভরাট করা হয়েছে সেই জায়গা আমি কিনেছি। আমার কেনা জায়গায় আমি মাটি ভরাট করে গরুর খামার নির্মাণ করেছি। খাল ভরাট করা লোকদের মধ্যে আলতাফ হোসেন বলেন, খাল যেখানে ভরাট করা হয়েছিল সে অংশটি আমাদের কেনা ছিল। এখন গ্রামে জলাবদ্ধতা। গ্রামবাসীর সুবিধার্থে তারা ভরাট করা স্থানে ড্রেন করছে এতে আমাদের আপত্তি নেই। বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুলতানা রাজিয়া স্বপ্না বলেন, খাল ভরাট করে ফেলায় বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের একাধিক গ্রামে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ফসলি জমি নষ্ট হয়ে গেছে। বসতভিটাতেও পানি ঢুকেছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য গ্রামবাসী সাময়িকভাবে ভরাট করা খালের স্থানে ড্রেনের মতো করে কেটেছে। বেলাব থানার ওসি মো. তানভীর আহমেদ বলেন, ভরাট খাল কাটাকে কেন্দ্র করে প্রথমে গ্রামবাসীর জন্য অভিযুক্তদের ঝগড়া সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা ছিল। এ খবর শুনে আমি ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করি।
১০ অক্টোবর, ২০২৩
X