একটি পুরোনো খালের কিছু অংশ ভরাট করে ফেলায় দীর্ঘ তিন বছর ধরে জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছিল গ্রামবাসী। স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি কর্তৃক খাল ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করায় গ্রামজুড়ে এতদিন ছিল জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতা নিরসনে গত দুই বছরে একাধিক দপ্তরে গ্রামবাসীর পক্ষে দেওয়া হয়েছে একাধিক লিখিত অভিযোগ, করা হয়েছে একাধিক গ্রাম সালিশ। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
সম্প্রতি টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ও খাল ভরাট করে ফেলায় গ্রামের শত শত একর জমিতে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। কৃষকদের জমির ফসলের ক্ষতির পাশাপাশি পানি ঢুকে পড়ে বসত ভিটায় ও পোল্ট্রি খামারে। ফলে বাধ্য হয়েই একত্র হয় পুরো গ্রামবাসী। সম্মিলিতভাবে গ্রামের সবাই খালের ভরাট করা স্থানে মাটি সরিয়ে ড্রেন করা শুরু করে। এতে গ্রামবাসীর সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ায় খাল ভরাট করা লোকজন। ঘটনাটি ঘটে বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের চরছায়েট গ্রামের পশ্চিমপাঁড়া গ্রামে।
খবর পেয়ে বেলাব থানা পুলিশ ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিন্নাবাইদ পশ্চিমপাঁড়া গাংকুল পাঁড়া এলাকার আড়িয়াল খাঁ নদের তীর ঘেঁষে একটি পুরোনো খালের মাধ্যমে পানি নিরসন হতো দীর্ঘদিন ধরে। কয়েক বছর আগে এ খালের কিছু অংশের জায়গা কিনে নিয়ে খাল ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করে ফেলে বিন্নাবাইদ চরাছায়েট গ্রামের শুকুর আলী.আবুল কাশেম, বজলু মিয়া, নুরু মিয়াসহ কয়েকজন। খাল ভরাটের কারণে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বর্ষা মৌসুমে ও বৃষ্টির মৌসুমে পুরো গ্রামজুড়েই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এ জলাবদ্ধতা নিরসনে ও ভরাট করা খাল খুলে দেওয়ার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসী বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো সুরাহা পায়নি।
সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে চরছায়েটসহ আশপাশের গ্রামজুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে বসতভিটা ও ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গ্রামের প্রায় সহস্রাধিক লোক একত্র হয়ে ভরাট খালে কোদাল চালায়। এ সময় শুকুর আলীসহ খাল ভরাট করা লোকেরা গ্রামবাসীর সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। ফলে উভয় পক্ষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা।
খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসন ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। তবে দীর্ঘদিনের ভরাট খাল খুলে সাময়িকভাবে হলেও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করায় এলাকার হাজারো মানুষের মুখে ফুটে উঠেছে তৃপ্তির হাসি। তারা সরকারের কাছে স্থায়ীভাবে এ সমস্যার সমাধান চায়।
এলাকাবাসী জানান, এ খালটি অনেক পুরোনো। এ খাল দিয়ে চরছায়েট গ্রামসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের পানি নিষ্কাশন হয়। কিন্তু শুকুর আলী, আবুল কাশেম, বজলু মিয়া, নুরু মিয়াসহ কয়েকজন খালের একটি অংশ ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করে। এতে বৃষ্টির পানি আটকে গ্রামে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। আর এই জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাবার জন্য গ্রামবাসী সম্মিলিতভাবে আজকে ভরাট করা স্থানে মাটি কেটে ড্রেন নির্মাণ করে।
অভিযুক্ত শুকুর আলী বলেন, খালের যে জায়গা ভরাট করা হয়েছে সেই জায়গা আমি কিনেছি। আমার কেনা জায়গায় আমি মাটি ভরাট করে গরুর খামার নির্মাণ করেছি।
খাল ভরাট করা লোকদের মধ্যে আলতাফ হোসেন বলেন, খাল যেখানে ভরাট করা হয়েছিল সে অংশটি আমাদের কেনা ছিল। এখন গ্রামে জলাবদ্ধতা। গ্রামবাসীর সুবিধার্থে তারা ভরাট করা স্থানে ড্রেন করছে এতে আমাদের আপত্তি নেই।
বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুলতানা রাজিয়া স্বপ্না বলেন, খাল ভরাট করে ফেলায় বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের একাধিক গ্রামে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ফসলি জমি নষ্ট হয়ে গেছে। বসতভিটাতেও পানি ঢুকেছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য গ্রামবাসী সাময়িকভাবে ভরাট করা খালের স্থানে ড্রেনের মতো করে কেটেছে।
বেলাব থানার ওসি মো. তানভীর আহমেদ বলেন, ভরাট খাল কাটাকে কেন্দ্র করে প্রথমে গ্রামবাসীর জন্য অভিযুক্তদের ঝগড়া সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা ছিল। এ খবর শুনে আমি ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করি।
মন্তব্য করুন