সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি
বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলায় সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের আওতাধীন চাঁদপাই রেঞ্জের আমরবুনিয়া ক্যাম্পের বনাঞ্চলের আগুন এখন নিয়ন্ত্রণে আছে বলে জানিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। রোববার (৫ মে) সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়। বিবৃতিতে বলা হয়, সুন্দরবনে আগুন গাছের উপরে বা ডালপালায় বিস্তৃত হয়নি, শুধু মাটির উপরে বিক্ষিপ্তভাবে বিস্তৃত হয়েছে। ঘটনাস্থলে বন বিভাগের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট, নৌবাহিনী, পুলিশ, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, সিপিজি, স্বেচ্ছাসেবক ও স্থানীয় জনগণ আগুন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করছেন। এছাড়া, বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারও আগুন নিয়ন্ত্রণে ওপর থেকে পানি ছিটিয়ে সহায়তা করেছে। এর আগে শনিবার (৪ মে) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়িসংলগ্ন গহিন বনে এ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আগুন লাগার তথ্য জানার সঙ্গে সঙ্গে বন বিভাগের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। বন বিভাগের কর্মীরা স্থানীয় কমিউনিটি পেট্রোলিং গ্রুপ, ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম এবং স্থানীয় জনগণের সহায়তায় আগুন লাগার চারপাশে ফায়ার লাইন কাটার কাজ শুরু করে। কিন্তু সে সময় ভাটার কারণে খালে কোনো পানি না থাকায় আগুনে পানি দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে  রাতেই বন বিভাগের নিজস্ব ফায়ার ফাইটিং ইকুইপমেন্ট ও পানি দেওয়ার মেশিন এনে সেটি রেডি করে পাইপ লাগিয়ে সেট করে রাখা হয়। রোববার ভোর হতেই বন বিভাগের কর্মীরা, ফায়ার সার্ভিস, স্থানীয় জনগণ, সিপিজি, সিএমসির লোকদের নিয়ে আগুন লাগার স্থানে চারদিকে ফায়ার লাইন কাটার পাশাপাশি পানি দিয়ে আগুন নেভানোর কাজ পুরোদমে শুরু করে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগুন লাগার স্থানের চারদিকে প্রায় ৫ একর জায়গাজুড়ে ফায়ার লাইন কেটে আগুন নেভানোর কাজ চলছে। যেহেতু আগুন মাটির নিচ দিয়ে গাছের শিকড়ের মধ্য দিয়ে বিস্তৃতি লাভ করছে কাজেই সতর্কতার সঙ্গে আগুন নিভাতে হচ্ছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে থাকলেও আগামী কয়েক দিন এখানে অগ্নি নির্বাপন সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম চলমান রাখা হবে। কেননা ফরেস্ট ফায়ার আপাতত নিভে গেছে বা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে মনে হলেও আবার যে কোনো সময় এটি নতুনভাবে সৃষ্টি ও বিস্তৃতি লাভ করতে পারে। আগুন লাগার সুনির্দিষ্ট কারণ নির্ণয়ে তদন্তের জন্য বন বিভাগের পক্ষ থেকে ৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ সুন্দরবনের আগুন নির্বাপণ কর্মকাণ্ড সার্বক্ষণিকভাবে তদারকি ও সমন্বয় করছেন।  প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি অবহিত আছেন এবং তিনি নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন। এ কর্মকাণ্ড সরেজমিনে তদারকি করতে প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী সুন্দরবনের ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। তিনি এ বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রগতি ও কর্মপন্থা বিষয়ে আজ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৮টায় খুলনায় সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করবেন।
০৫ মে, ২০২৪

পরিবেশ সাংবাদিকতার সুরক্ষায় প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নেওয়া হবে : তথ্য প্রতিমন্ত্রী
পরিবেশ সাংবাদিকতার সুরক্ষায় প্রতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। শনিবার (৪ মে) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস ২০২৪’ উপলক্ষ্যে জাতীয় প্রেস ক্লাব আয়োজিত ‘জলবায়ু রাজনীতির প্রেক্ষিত ও গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী এ কথা জানান। এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, পরিবেশ নিয়ে সাংবাদিকতা চর্চা করতে গিয়ে তৃণমূলে, গ্রামে-গঞ্জে, মফস্বলে যদি কোনো সাংবাদিক বা কোনো প্রতিবেদক স্থানীয় বা তথাকথিত প্রভাবশালী দ্বারা যদি কোনো ধরনের সমস্যায় পড়েন, সেক্ষেত্রে সরকার সেই সাংবাদিকদের বা প্রতিবেদকদের পূর্ণাঙ্গ সমর্থন, সহযোগিতা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। এর কারণ জাতীয়ভাবে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে সরকারের অবস্থান পরিবেশ সুরক্ষার পক্ষে।  তিনি আরও বলেন, পরিবেশকে বিপর্যয়ে ফেলার জন্য বাংলাদেশ সবচেয়ে কম দায়ী কিন্তু বড় শিকার। যে কারণে বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পৃথিবীর যে কোনো প্লাটফর্মে আমরা এ বিষয়ে উচ্চকণ্ঠ থাকি এবং এখানে একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়ায় আমরা কাজ করি সরকার, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম সবাইকে নিয়ে।  তিনি যোগ করেন, দেশের ভেতরে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থে যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী পরিবেশকে বিপর্যয়ের সম্মুখে ফেলেন এবং সেই বিষয় নিয়ে সাংবাদিকতা করতে গিয়ে কোনো সাংবাদিক বা প্রতিবেদককে বিপদে পড়তে হয়, সরকার তাদের পাশে দাঁড়াবে এবং তাদের সুরক্ষা দেওয়ার পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা করবে। দরকার হলে এ বিষয়টি নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নেওয়া হবে। কারণ সরকার মনে করে সাংবাদিকতা চর্চা করতে গিয়ে যারা স্থানীয় পর্যায়ে বিচ্যুতি-ব্যত্যয়ের বিষয়গুলো তুলে ধরবেন, তারা সরকারকে সহযোগিতা করছেন, দেশ ও জনগণকে সহযোগিতা করছেন।  এ সময় প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা পরিবেশ-প্রতিবেশকে মাথায় রেখে টেকসই উন্নয়ন করতে চাই। আমরা যেমন পরিবেশের সুরক্ষা করতে চাই, তেমনি পরিবেশ-প্রতিবেশের সুরক্ষা করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন চালিয়ে রাখতে চাই, এগিয়ে যেতে চাই। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে অনেকে বিতর্ক তৈরির অপচেষ্টা করে থাকে। পরিবেশকে অনেক ক্ষেত্রে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। উন্নয়ন-অগ্রগতিকে থামিয়ে দেওয়ার জন্য পরিবেশকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সাংবাদিকতা হয়, সেটা পেশাদার সাংবাদিকতা বলা যায় না।  তিনি আরও বলেন, যারা সততা, সাহসিকতা এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে সাংবাদিকতা করবেন তাদের জন্য বেশকিছু প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষা থাকা দরকার। সাংবাদিকতার সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তাদের কল্যাণে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুদান দিয়ে এ ট্রাস্টের কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। সত্যিকার অর্থে যারা সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে তাদের নিয়ে আমরা কাজ করতে চাই। সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য এ ধরনের আরও কিছু উদ্যোগ নেওয়া হবে। সাংবাদিকদের আর্থিক স্বাধীনতা তৈরির জন্য যে ধরনের পলিসি নেওয়া দরকার, সেটা নিয়েও সরকার কাজ করছে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ)-এর করা বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অবস্থান প্রসঙ্গে এ সময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, আরএসএফ-এর সূচক প্রকাশ ভালো উদ্যোগ। তবে তাদের মেথডোলজির মধ্যে অনেক দুর্বলতা আছে। আরএসএফ বিভিন্ন দেশে স্কোরিং করার ক্ষেত্রে যাদের মতামত নিচ্ছে, তাতে কিছু মানুষের মতামতের প্রতিফলন ঘটছে। সেটা কোনোভাবেই গোটা দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পরিবেশের প্রতিফলন হচ্ছে না। এটা কোনো দেশের ক্ষেত্রেই হচ্ছে না। তবে একইসঙ্গে এ ধরনের প্রতিবেদনে কোনো সত্য বা আমাদের দুর্বলতা থাকলে সেটা বিবেচনায় নিয়ে শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করা হবে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও সংসদ সদস্য ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক ও ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ এর সভাপতি নুরুল ইসলাম হাসিব আলোচনা সভায় বক্তব্য প্রদান করেন। আলোচনা সভায় ‘জলবায়ু রাজনীতি: সাংবাদিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির পরিচালক ড. মো. লিয়াকত আলী। এদিকে শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস ২০২৪ উপলক্ষে সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত অপর এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী। আলোচনা সভায় তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের অবস্থান মূলত পরিবেশ সুরক্ষার পক্ষে। শুধু পরিবেশ সুরক্ষা না, মুক্ত গণমাধ্যম, গণমধ্যমের সুরক্ষা এবং গণমাধ্যমের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার বিষয়ে আমাদের অঙ্গীকার আছে এবং থাকবে। তবে রাজনীতিতে যেমন অনেক ক্ষেত্রে অপরাজনীতি আছে, বিভিন্ন পেশায় যেমন কিছু নেতিবাচক দিক আছে, এমনি তথ্যের সাথেও আমরা অপতথ্যের বিস্তৃতি অনেক সময় দেখি। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অপসংবাদিকতাও আমরা দেখি যে কোনো বিষয়কে কেন্দ্র করে। এটি কিন্তু শুধু আমি বলছি না আমাদের সাংবাদিক বন্ধুরাও বলেন। এ সময় প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, গণমাধ্যম যত মুক্ত হবে, তারা স্বাধীনতা যত চর্চা করবে এবং অপতথ্যের বিপরীতে যত তথ্যের প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে ততই সমাজে গুজব, অপপ্রচার এগুলো রোধ হবে। সরকার মনে করে গণমাধ্যম এবং পেশাদার সাংবাদিকতা সরকারের বন্ধু। তারা সরকারকে সহযোগিতা করেন।  সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য প্রদান করেন নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর সভাপতি ও সংসদ সদস্য এ. কে. আজাদ, সম্পাদক পরিষদের সহসভাপতি ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা)-এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান, ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহান, দৈনিক দেশ রূপান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা মামুন।
০৪ মে, ২০২৪

৭০ শতাংশ পরিবেশ সাংবাদিক হামলা-হুমকির মুখে রিপোর্ট করেন : জাতিসংঘ
বিশ্বের ১২৯টি দেশের ৭০ শতাংশ পরিবেশ সাংবাদিক তাদের চাকরি সংক্রান্ত হামলা, হুমকি বা চাপের মুখে পড়ে রিপোর্ট করছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘ জানায়, তাদের মধ্যে পাঁচজনের মধ্যে দু’জন পরবর্তীতে শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। ভোটের জন্য ৯শ’টিরও বেশি সাংবাদিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। জাতিসংঘের শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা পরিবেশ ও জলবায়ু নিয়ে রিপোর্টকারী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বৃদ্ধি এবং ভয় দেখানোর বিষয়ে সতর্ক করেছে। এক বিবৃতিতে ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অড্রে আজোলে বলেছেন, চলমান পরিবেশগত সংকট সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য বৈজ্ঞানিক তথ্য ব্যতীত, আমরা কখনোই এটি কাটিয়ে উঠার আশা করতে পারি না। এখনো আমরা যে সাংবাদিকদের ওপর নির্ভর করি এই বিষয়ের তদন্ত করতে তারা সারা বিশ্বে অগ্রহণযোগ্যভাবে উচ্চ ঝুঁকির সম্মুখীন। জলবায়ু-সম্পর্কিত বিভ্রান্তি সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে চলছে। ইউনেস্কো বলছে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে অন্তত ৭৪৯ সাংবাদিক এবং নিউজ মিডিয়া পরিবেশগত বিষয়ে রিপোর্ট করে খুন, শারীরিক নির্যাতন, আটক ও গ্রেপ্তার, অনলাইন হয়রানি বা আইনি আক্রমণের শিকার হয়েছেন। ২০১৯ এবং ২০২৩-এর মধ্যে আক্রমণ ঘটেছে ৩০০টিরও বেশি, যা আগের পাঁচ বছরের তুলনায় ৪২ শতাংশ বেশি। সমস্যাটি বিশ্বব্যাপী, বিশ্বের সমস্ত অঞ্চলের ৮৯টি দেশে হামলা হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৫ বছরে তাদের কাজের জন্য কমপক্ষে ৪৪ জন পরিবেশবাদী সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। মাত্র পাঁচটি ক্ষেত্রে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। শারীরিক নির্যাতনের শিকার জরিপে অংশ নেওয়া সাংবাদিকদের এক-তৃতীয়াংশ বলেছেন, তাদের সেন্সর করা হয়েছে। প্রায় ৪৫ শতাংশ সাংবাদিক বলেছেন, তারা হামলার ভয়ে তাদের উৎস প্রকাশ করার ভয়ে বা তাদের গল্পগুলো সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ার কারণে পরিবেশকে কভার করার সময় তারা নিজেরাই সেন্সর আরোপ করেছিল। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এই সপ্তাহে চিলিতে একটি সংবাদ স্বাধীনতা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে ইউনেস্কো নিপীড়নের সম্মুখীন ৫০০টিরও বেশি পরিবেশগত সাংবাদিকদের আইনি ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের জন্য একটি অনুদান কর্মসূচি চালু করার ঘোষণা দেবে।
০৩ মে, ২০২৪

পরিবেশ রক্ষায় ইসলামের তাগিদ
পৃথিবীতে মানুষ যেসব বিরূপ পরিবেশ ও পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়, তার প্রধানতম কারণ ব্যক্তিগত বা সম্মিলিত পাপ। মানুষের উপর্যুপরি পাপের ভারে প্রকৃতি আজ ভারসাম্য হারিয়ে বিরূপ আচরণ করছে মানুষের সঙ্গে। শীতের মৌসুমে পরিবেশ শীতল হচ্ছে না, কিন্তু যখন শীত নামছে সেটা মানুষের শরীরে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে। বৃষ্টির মৌসুমে বৃষ্টি হচ্ছে না, কিন্তু যখন বৃষ্টি হচ্ছে, সব প্লাবিত করে দিচ্ছে। গ্রীষ্মে গরমের স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক থাকছে না, বরং প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে মানুষ ক্লান্ত ও বিপর্যস্ত। পরিবেশের এ বিরূপ আচরণ মানুষের পাপের ফসল। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলে-স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে, ফলে তাদের কোনো কোনো অপকর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ (সুরা রোম, আয়াত : ৪১) কিন্তু মানুষ নিজের সাময়িক স্বার্থ পূরণে পরিবেশের ওপর নির্মম অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। গাছগাছালি ও প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস করে চলেছে অবলীলায়। এসবের অবশ্যম্ভাবী ক্ষতির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে পৃথিবীর জলবায়ুতে। পৃথিবীর তাপমাত্রা অধিক পরিমাণে বাড়ছে, জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে। পৃথিবীর সব অঞ্চলেই খরা, বন্যা ও পশুপাখির বিলুপ্তি ঘটছে। একশ্রেণির দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী অন্যায়ভাবে অর্থ উপার্জনের জন্য নির্বিচারে বনজঙ্গলের কাঠ কেটে বিক্রি করছে এবং পাহাড় কেটে ধ্বংস করছে। দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ বিনষ্ট করছে এবং এতে জনগণ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে; এমনকি পরিবেশ বিপর্যয়ে শত শত লোক মৃত্যুবরণ করছে। আসলে আল্লাহতায়ালা তার সৃষ্টিজগতে সবকিছু সৃষ্টি করেছেন পরিমিতরূপে আর এতে রেখেছেন প্রাকৃতিক ভারসাম্য। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেককে পরিমিত করেছেন যথাযথ অনুপাতে।’ (সুরা আল-ফোরকান, আয়াত : ২) ইসলামে যেমন ইবাদতের তাৎপর্য রয়েছে, তেমনি রয়েছে পরিবেশের গুরুত্ব। কোন পরিবেশে বসবাস করলে মানুষের সুবিধা হবে বা মানুষ সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারবে, ইসলাম তা সুনিশ্চিত করেছে। আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে, যেমন—গাছপালা, বাড়িঘর, মাটি, পানি, বায়ু, জীবজন্তু, পশুপাখি, রাস্তাঘাট, নদীনালা, পাহাড়-পর্বত, যানবাহন, কলকারখানা ইত্যাদি নিয়েই পরিবেশ। এগুলো সবই মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। এরশাদ হচ্ছে—‘আমি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছি এবং এতে পর্বতমালা সৃষ্টি করেছি। আমি পৃথিবীতে প্রতিটি বস্তু সুপরিমিতভাবে সৃষ্টি করেছি। এতে তোমাদের জন্য জীবিকার ব্যবস্থা করেছি। আর তোমরা যাদের জীবিকাদাতা নও, তাদের জন্যও। প্রতিটি বস্তু ভান্ডার আমার কাছে রয়েছে। আমি তা প্রয়োজনীয় পরিমাণে সরবরাহ করে থাকি। আমি বৃষ্টিগর্ভ বায়ু প্রেরণ করি। এরপর আকাশ থেকে মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করি। তা তোমাদের পান করতে দিই। এর ভান্ডার তোমাদের কাছে নেই।’ (সুরা হিজর : ১৯-২২) মানুষ ও অন্যান্য সৃষ্টিজীবের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান খুব দরকার। এগুলোর বিনাশ বা ক্ষতিসাধন করা হলে প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হয়। অথচ ইসলাম তার অনুসারীদের সামগ্রিকভাবে সৌন্দর্যমণ্ডিত দেখতে চায়। তাই স্বাস্থ্যসম্মত পরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং উন্নত জীবনমান পদ্ধতি একে অন্যের পরিপূরক। পৃথিবীর মানুষকে গাছপালা ও পাহাড়-পর্বতকে ধ্বংস না করার জন্য সতর্কবাণী দিয়ে পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে—‘তিনিই আল্লাহ, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন। এরপর তা (বায়ু) মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে। অতঃপর তিনি (আল্লাহ) মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছে আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তাকে (মেঘমালাকে) স্তরে স্তরে রাখেন। এরপর তুমি দেখতে পাও যে, তার মধ্য থেকে বৃষ্টিধারা নির্গত হয়। তিনি (আল্লাহ) তার বান্দাদের মধ্যে যাদের ইচ্ছে তা (বৃষ্টি) পৌঁছান; তখন তারা আনন্দিত হয়।’ (সুরা রোম : ৩৮) যেখানে-সেখানে, উন্মুক্ত স্থানে ময়লা-আবর্জনা, কফ, থুতু ও মলত্যাগে পরিবেশ দূষিত হয়ে স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করে। নোংরা ও দূষণযুক্ত পরিবেশ রোগব্যাধির প্রধান কারণ। তাই এসব দূষণযুক্ত পরিবেশের কবল থেকে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখলে মারাত্মক ও সংক্রামক রোগব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে এসব নোংরা পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখার ওপরই নির্ভর করে জনস্বাস্থ্যের সফলতা। তাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষা ও দূষণ প্রতিরোধে সবার যথোচিত দায়িত্ব পালন করা উচিত। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা নিক্ষেপ ও রুচিহীনতা পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ। অথচ ইসলাম এটাকে নিষিদ্ধ করেছে। সুস্থতা, সৌন্দর্য, মননশীলতা, উৎকর্ষ ও সমৃদ্ধির কথা বলে ইসলাম। সুতরাং ময়লা-আবর্জনা দিয়ে পরিবেশ দূষিত করা ঠিক নয়। নবী (সা.) সাবধান করে বলেছেন—‘তোমরা তোমাদের আঙিনাকে পরিচ্ছন্ন রাখো।’ (তিরমিজি : ২৭৯৯)। পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতার ব্যাপারে রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইমানের অঙ্গ।’ (মুসলিম : ২২৩) সুন্দরভাবে বাঁচার জন্য চাই সুস্থ মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ। অনুকূল ও সুন্দর পরিবেশ ছাড়া কোনো জীবের অস্তিত্ব দীর্ঘ হতে পারে না। বনভূমি ও বন্য পশুপাখি আল্লাহতায়ালার দান ও প্রকৃতির শোভাবর্ধক। রাসুল (সা.) প্রকৃতি-পরিবেশ সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিশেষভাবে দিকনির্দেশনা আরোপ করেছেন। তাই বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুস্থ-সুন্দর জীবনযাপনের জন্য অবশ্যই ইসলামের আলোকে পরিবেশ সংরক্ষণে বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন করা বাঞ্ছনীয়। পরিবেশ সংরক্ষণ ও তাপমাত্রা কমানোর জন্য বন-জঙ্গল ও গাছপালা অতীব প্রয়োজনীয়, যা মানুষ নির্বিচারে ধ্বংসে মেতেছে। অথচ প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে ইসলামের আরেকটি মৌলিক নীতি হলো, প্রকৃতির অন্যান্য সৃষ্টির কোনোরূপ ধ্বংস, বিনাশ, অপচয় বা অপব্যবহার করা যাবে না। প্রত্যেকটি সৃষ্টি কোনো না কোনোভাবে মানুষ অথবা অন্য কোনো সৃষ্টিকে সেবাদান করে। পরিবেশ ধ্বংসের যে কোনো ধরনের উদ্যোগ বা চেষ্টা মানুষসহ অন্যান্য সৃষ্টিকে আল্লাহ প্রদত্ত সেবা থেকে বঞ্চিত করার শামিল। বিনা প্রয়োজনে অযৌক্তিকভাবে কোনো সেবা থেকে বঞ্চিত করার কোনো নৈতিক অধিকার মানবজাতিকে প্রদান করা হয়নি। প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয়, বিনাশ অথবা অপরিমিত ব্যবহার কোনোটিই ইসলামের দৃষ্টিতে সমর্থনযোগ্য নয়। ইসলাম পরিবেশ সংকটের অবসান প্রত্যাশা করে। পরিবেশ ও প্রকৃতির বিপর্যয় রোধে বৃক্ষকর্তনের পরিবর্তে বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন জরুরি। ইসলাম বৃক্ষরোপণে বিপুলভাবে উৎসাহিত করে। যদি জানা যায় যে আগামীকাল কেয়ামত, তথাপিও আজ যদি কারও হাতে কোনো বীজ বা চারাগাছ থাকে, তবে তা বপন করে দিতে রাসুলুল্লাহ (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ কতিপয় বনখেকো মানুষ যে কী পরিমাণে বনভূমি উজাড় করেছেন, তার হিসাব করলে উদ্বিগ্ন হতে হয়। এমনকি এসব কাজে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিদেরও জড়িত থাকার খবর শোনা যায়। অথচ অনর্থক গাছ কাটা ও বন উজাড় করাকে ইসলামে শরিয়ত গর্হিত কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রাস্তাঘাটে বা মাঠে-ময়দানে যেসব বৃক্ষমালা ছায়া দেয়, যেখানে মানুষ বা পশু বিশ্রাম নেয়, এমন গাছকে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেটে ফেলা অত্যন্ত জঘন্য অপকর্ম। যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে তার কোনো ফায়দা ছাড়া গাছ নিধন করেছে, যার নিচে পথিক ও পশু আশ্রয় নেয়, তার শাস্তি সম্পর্কে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে অকারণে একটি কুলগাছও কেটেছে, তাকে আল্লাহ মাথা নিচু করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।’ (আবু দাউদ) প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের জীবন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মানুষ গাছ থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং সেই অক্সিজেনে বেঁচে থাকে। তেমনি প্রশ্বাসের সঙ্গে মানুষ যে কার্বন ডাইঅক্সাইড ত্যাগ করে তা গ্রহণ করে গাছ বেঁচে থাকে। এজন্য পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছ অপরিহার্য। গাছ আল্লাহতায়ালার গুণগান করে। তার ধ্যানে সর্বদা মত্ত থাকে, সিজদা করে। পরিপূর্ণভাবে প্রভুর হুকুম মেনে চলে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তুমি কি দেখো না, আল্লাহকে সিজদা করে যা কিছু আকাশমণ্ডলীতে ও পৃথিবীতে, সূর্য, চন্দ্র নক্ষত্রমণ্ডলী, পর্বতরাজি ও বৃক্ষলতা, জীবজন্তু ও মানুষের মধ্যে অনেকে।’ ইসলামের দৃষ্টিতে গাছ লাগানোকে ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। হজরত আনাস (রা‍.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি কোনো মুসলিম বৃক্ষ রোপণ করে অথবা ক্ষেতে ফসল বোনে, মানুষ কিংবা চতুষ্পদ প্রাণী খায়, তাহলে তা তার জন্য সদকা হিসেবে গণ্য হবে।’ (বোখারি : ২৩২০)। কোনো ব্যক্তির লালন-পালনে বেড়ে ওঠা বৃক্ষ থেকে কেউ উপকৃত হলে তার সওয়াব ওই ব্যক্তির আমলনামায় লেখা হবে। লোকটি মারা গেলেও এর সওয়াব সে পাবে। নবীজি (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি বৃক্ষরোপণ করে তা ফলদার হওয়া পর্যন্ত তার পরিচর্যা ও সংরক্ষণে ধৈর্য ধারণ করে, তার প্রতিটি ফল যা নষ্ট হয়, তার বিনিময়ে আল্লাহ পাক তাকে সদকার নেকি দেবেন।’ (মুসনদে আহমদ : ১৬৭০২)। আসলে পরিবেশ নির্দিষ্ট কোনো দেশ বা জাতির সম্পদ নয়, পরিবেশ সবার সম্পদ এবং এর বিপর্যয় নির্দিষ্ট কোনো এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকে না; বরং মানবজাতির বিপর্যয় হিসেবে গণ্য হয়। তাই পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার। তা না হলে মানুষকে হাশরের ময়দানে আল্লাহর দরবারে আসামির কাঠগড়ায় জবাবদিহির জন্য দাঁড়াতে হবে। আগামী প্রজন্মের জন্য দূষণমুক্ত পরিবেশ গঠনে বিশ্বব্যাপী পরিবেশের প্রতি যত্নশীল হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প, দাবদাহ ও তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচতে হলে প্রচুর পরিমাণে বৃক্ষরোপণ ও সবুজ বনায়ন করা প্রয়োজন। তাই দেশের মানুষের উচিত যে কাজে জাতির ক্ষতি হয়, দেশের সর্বনাশ হয়, তা থেকে অবশ্যই বিরত থাকা। মানুষের অন্যায় অপকর্ম থেকে ফিরে এসে পৃথিবীকে বিপদমুক্ত ও নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখা একান্ত প্রয়োজন। লেখক: মুহাদ্দিস ও ইসলামী চিন্তাবিদ
০৩ মে, ২০২৪

জিয়াউর রহমানের কর্মপন্থা বাস্তবায়িত হলে দেশে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটত না : আমিনুল হক
বিএনপির ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেছেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময়ে স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে যে খাল কাটা, পুকুর খনন ও বৃক্ষরোপণের মতো জনকল্যানমূলক গণমুখী কর্মসূচি ছিল, বর্তমান আওয়ামী সরকার গত ১৭ বছর ধরে এ ধরনের কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছে। আজকে বাংলাদেশে পরিবেশের যে বিপর্যয় ঘটেছে, সেটাই তার প্রমাণ।  তিনি দাবি করে বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের এই কর্মপন্থা বাস্তবায়ন হলে আজকে দেশে যে তীব্র দাবদাহ, এ ধরনের বির্পযয় ঘটত না। বুধবার (১ মে) দুপুরে কাফরুল থানাধীন ৪ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির পঞ্চম দিনের কর্মসূচি অনুযায়ী সাধারণ জনগণ ও পথচারীদের মাঝে বোতলজাত পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আমিনুল হক এসব কথা বলেন।  বিএনপির এই নেতা বলেন, এই আওয়ামী ভোটারবিহীন ফ্যাসিস্ট সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা আজকে জনগণের পাশে নেই। তারা এসি রুমে বসে ঠান্ডা বাতাস খাচ্ছেন। কারণ, তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। সে কারণে জনগণের কাছে তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। আজকে দেশের মানুষ আগুনে পুড়ছে। মানুষ গরমের ভেতর বিপর্যয় জীবনযাপন করছে। কিন্তু সেদিকে সরকারের কোনো দৃষ্টি নেই।  তিনি বলেন, বাংলাদেশে আজকে দুঃশাসন চলছে। দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। মানুষ শান্তিতে নেই। আজ দুবেলা দুমুঠো ভাত পেট ভরে খেতে পারছে না। সাংবাদিকদের  কথা বলা ও সঠিক তথ্য তুলে ধরার স্বাধীনতা নেই। জনগণের বাক-স্বাধীনতা না থাকায় তারা তাদের অধিকারের জন্য প্রতিবাদটুকুও করতে পারছে না।  অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য  তারিকুল আলম তেনজিং, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টি, মহানগর সদস্য গোলাম কিবরিয়া মাখন, হাজী মো. ইউসুফ, এবিএমএ রাজ্জাক, কাফরুল থানা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আকরামুল হক আকরাম, যুগ্ম আহবায়ক ফজলুর রহমান মন্টু, কামাল উদ্দিন কামাল, গোলাম কিবরিয়া শিপু, থানা সদস্য মো. ওয়াহিদ, মহিলা দলের থানা সভানেত্রী নাজমা আক্তার, যুবদলের মো. শাহীন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মো. সুমন, শ্রমিক দলের সদস্য সচিব শফিকুল রহমান রুবেল, ১৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. শিমুল হোসেন ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান পল্টু, ছাত্রদল মহানগর পশ্চিমের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মন্জুরুল আহসান ইফাতসহ প্রমুখ নেতারা।
০১ মে, ২০২৪

পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ, ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ (ইউপিআর) ও বাংলাদেশের অবস্থান, মানবাধিকার সুরক্ষার বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ ও পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন এইচআরএফবির প্রতিনিধিদল। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) ২০টি মানবাধিকার সংগঠনের জোট হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশের (এইচআরএফবি) একটি প্রতিনিধিদল জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসব তথ্য তুলে ধরেন। প্রতিনিধি দলের উপস্থাপিত দাবির প্রেক্ষাপটে কমিশনের চেয়ারম্যান পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিপূর্ণ, সহিংসতামুক্ত ও ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। সামগ্রিক বিবেচনায় যাতে পাহাড়ি এলাকার মানবাধিকার সুরক্ষিত থাকে তা নিশ্চিত করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান। কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, সার্বক্ষণিক সদস্য মো. সেলিম রেজা, পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) মো. আশরাফুল আলম, পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) কাজী আরফান আশিক, প্রতিনিধি দলে নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, মানবাধিকার কর্মী তামান্না হক রীতি ও কাপেং ফাউন্ডেশন নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। আলোচনায় বান্দরবানের লামা উপজেলায় ম্রো জাতিগোষ্ঠীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় কমিশনের আন্তরিক ভূমিকা এবং মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার খাসিয়াপুঞ্জিতে খাসিয়া জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার সুরক্ষায় কমিশনের ইতিবাচক পদক্ষেপের জন্য বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এইচআরএফবির প্রতিনিধিদল। উল্লিখিত প্রেক্ষাপটে, কমিশনের ভূমিকায় যে সংশ্লিষ্ট সমস্যার অগ্রগতি হয়েছে তা মানবাধিকার সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে বলে প্রতিনিধিদল মন্তব্য করেন। বৈঠকে জাতীয় কমিশনের সঙ্গে একযোগে ও সমন্বিতভাবে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন এইচআরএফবির প্রতিনিধিদল। সমর্থন জানিয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ মানবাধিকার সুরক্ষিত ও সমুন্নত রাখতে সকল ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস প্রদান করেন। আলোচনায় পার্বত্য চট্টগ্রামে কেএনএফের সন্ত্রাসী কাজের নিন্দা প্রকাশ করে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ। একইসাথে কেএনএফের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানে কোনো ব্যক্তি যাতে হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন প্রতিনিধিদল। এ বিষয়ে এইচআরএফবির পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিবৃতি কমিশনের সঙ্গে বিনিময় করা হয়। তারা উল্লেখ করেন, বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলায় সোনালী ব্যাংকের দুটি শাখায় এবং কৃষি ব্যাংকের একটি শাখায় কেএনএফের সদস্য দলের নেতৃত্বে ব্যাংকে হামলা, টাকা লুট, রুমা শাখার ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ, ব্যাংকের সিকিউরিটির দায়িত্বে নিয়োজিত গার্ড, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ওপর আক্রমণ এবং আগ্নেয়াস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে। সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষিতে গত ৭ এপ্রিল থেকে যৌথ বাহিনী অভিযান পরিচালনা করছে। তারা লক্ষ্য করেছে যে, তল্লাশি পরিচালনাকালে নিরাপত্তাহীনতায় ও আতঙ্কিত হয়ে কুকি চিন জনগোষ্ঠীর অনেক নিরপরাধ ব্যক্তিও বসতবাড়ি ছেড়ে বনভূমিতে আশ্রয় নিচ্ছেন। এর ফলে তাদের জীবন-জীবিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অভিযোগ পাওয়া যায়, ৫ কেজির বেশি চাল কিনতে বাধা দেওয়া হয়। অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখার এবং ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান এইচআরএফবির প্রতিনিধিদল।
৩০ এপ্রিল, ২০২৪

পরিবেশ রক্ষায় পাশে থাকার অঙ্গীকার কক্সবাজার সমিতির
১৯৯১ সালের ভয়াল ২৯ এপ্রিলকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা, টেকসই বেড়িবাঁধ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে পাঠ্যপুস্তকে সংযুক্তি, প্যারাবন উদ্ধারসহ নানাবিধ পরামর্শ ও আলোচনার মাধ্যমে দিবসটিকে স্মরণ করেছে ঢাকাস্থ কক্সবাজার সমিতি। সমিতির সভাপতি স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ খোরশেদ আলমের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্যকার কাউছার চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক সাদাত উল্লাহ খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিজানুর রহমান, সহসভাপতি সন্তোষ শর্মা, সহসভাপতি ইয়াছিন মোহাম্মদ শামসুল হুদা, সহসভাপতি স্বপন কান্তি পাল, সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মোস্তাকিম প্রমুখ। অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা ২৯ এপ্রিলের ভয়াল অভিজ্ঞতা স্মরণ করে প্যারাবন তথা ম্যানগ্রোভ বনায়ন রক্ষায় সর্বমহলের সহযোগিতা চান। প্রাকৃতিক সাইক্লোন নয়, প্যারাবন ধ্বংসকে তিনি অরাজনৈতিক দুর্বৃত্ত সাইক্লোন উল্লেখ করে দুর্বৃত্তদের রুখে দিতে সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান। কাউছার চৌধুরী সেই প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে নিহতের স্মরণ করে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী ত্রাণ-সাহায্য বিতরণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। লেখক সাদাত উল্লাহ খান প্যারাবন ধ্বংসের নিন্দা জানান এবং এই প্যারাবন ছাড়া মহেশখালীর অস্তিত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি প্যারাবন ধ্বংসকারীদের দুর্বৃত্ত আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান। কক্সবাজার সমিতির সহসভাপতি দৈনিক কালবেলার সম্পাদক সন্তোষ শর্মা নীতিনির্ধারকদের কাছে কক্সবাজারে যে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন যাতে পরিবেশবান্ধব করা হয়, সেই অনুরোধ করেন। তিনি পাহাড় নিধনের নিন্দা জানিয়ে কক্সবাজার সমিতিকে পরিবেশ রক্ষার যে কোনো উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানান। সভাপতির বক্তব্যে সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদ সেই ঘূর্ণিঝড়ের স্মৃতিচারণ করে দিনটির গুরুত্ব তুলে ধরেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন প্রণিধানযোগ্য উদ্যোগকে তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন হালনাগাদ করেছে। আইনের মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবিলাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
৩০ এপ্রিল, ২০২৪

পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়গুলো পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে : পরিবেশমন্ত্রী
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাসংক্রান্ত বিষয়গুলো পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যক্রমে পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সোমবার (২৯ এপ্রিল) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে টেকসই নগরায়ণ ও পরিবেশের সুরক্ষা সুপারিশমালাবিষয়ক জাতীয় সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, পাঠ্যক্রমে পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয় যুক্ত করে ছোট থেকেই শিশুদের সচেতন করার তাগিদ হিসেবে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বায়ু ও শব্দদূষণ রোধেও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সবার অভ্যাসগত দৈনন্দিন ব্যবহার পরিবর্তনের তাগিদ দেন মন্ত্রী। তিনি প্লাস্টিক ব্যবহারে সবাইকে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। বর্জ্য অপসারণে নগর সংশ্লিষ্টদের কার্যকরী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, সরকার এককভাবে কিছু করতে পারবে না, সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে। নির্বাচনের আগে যারা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এমন ৪৬ জন সংসদ সদস্যকে নিয়ে সংসদে একটি ককাস গঠনের আহ্বান জানান মন্ত্রী। সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউএসএইডর বাংলাদেশের অফিস ডিরেক্টর মোহাম্মদ খান, কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনালের ভাইস প্রেসিডেন্ট অব প্রোগ্রামস গোয়েনডোলিন অ্যাপেল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক অধ্যাপক ও ডিন, ডিপার্টমেন্ট অব কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং ড. ইজাজ হোসেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফিদা হাসান।
২৯ এপ্রিল, ২০২৪

শ্রম পরিবেশ উন্নয়নে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন আইন
শ্রমিকের নিরাপত্তা ও সার্বিক অধিকার নিশ্চিতে বেশ সরব ইউরোপের নীতি-নির্ধারকরা। গত কয়েক বছর ধরেই বারবার তাদের আলোচনায় এসেছে বিষয়টি। আর সে লক্ষ্যে শ্রমিকের নিরাপত্তা ও সার্বিক অধিকার নিশ্চিতে আইন প্রণয়ন করার সিদ্ধান্ত নিলেন ইইউ পার্লামেন্টের সদস্যরা। বুধবার (২৪ এপ্রিল) আইনটি পাস হয় ইইউ পার্লামেন্টে।  ইউরোপীয় পার্লামেন্ট অনুমোদিত নতুন এই আইন বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর শ্রম ও পরিবেশগত মান উন্নত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ, দেশের ৬৪ শতাংশেরও বেশি পোশাক ইউরোপে রপ্তানি হয়।  আর ডিউ ডিলিজেন্স আইনটি ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) ব্যবসা করতে শ্রমিকদের সুরক্ষার মান নির্ধারণ করে দেবে। বাংলাদেশে রানা প্লাজা ভবন ধসে এক হাজার ১৩৮ পোশাক শ্রমিক নিহত ও দুই হাজারের বেশি মানুষ আহত হওয়ার ১১তম বার্ষিকীতে ইইউ পার্লামেন্টে এই ভোট হয়।  ২০৩০ সাল পর্যন্ত ধীরে ধীরে কার্যকর হতে যাওয়া এই আইন রপ্তানি ও আমদানিকারকদের উত্পাদন, কমপ্লায়েন্স ও দায়িত্বশীল ব্যবসার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারে। ইইউ পার্লামেন্টে এই আইনের পক্ষে ভোট পড়ে ৩৭৪টি ভোট দানে বিরত ছিল ১৯ জন আর বিপক্ষে ভোট পড়েছে ২৩৫।  ডিউ ডিলিজেন্স আইনে বলা হয়েছে, দেশে-বিদেশে ইইউর যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করবে এবং যাদের বার্ষিক বিক্রি ন্যূনতম ৪৫০ মিলিয়ন ইউরো ও কর্মী সংখ্যা ১০০০ এর উপরে তারা নতুন এই আইনের আওতায় পড়বে। সেসব করপোরেটদের নিশ্চিত করতে হবে শ্রমিক ও পরিবেশ নিরাপত্তা। নাহলে তাদের জরিমানা করা হবে। বাংলাদেশের ইইউ ডেলিগেশন প্রধান চার্লস হোয়াইটলি এ বিষয়ে বলেন, ইউরোপের মালিকানাধীন কিংবা অন্য দেশীয় প্রতিষ্ঠান যাদের ১০০০ এর ওপর কর্মী আছে এবং বার্ষিক বিক্রি ন্যূনতম ৪৫০ মিলিয়ন ইউরো তাদের সবাইকে যদি ইউরোপের বাজারে আগামীতে ব্যবসা করতে হয় তবে তাদের আগে কারখানায় শ্রমিকদের পরিবেশের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।  তবে এখনই শ্রম ইস্যুতে উদ্বিগ্ন না হয়ে সরকার ও প্রতিষ্ঠান মালিকদের শ্রম পরিস্থিতি উন্নয়নে জাতীয় রোডম্যাপ বাস্তবায়নে মনযোগী হবার আহবান জানান তিনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিগত বছরগুলোতে শিল্প কারখানায় পরিবেশগত ঝুঁকি এবং শ্রমিকদের সার্বিক অধিকারের ক্ষেত্রে অগ্রগতি করেছে। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে যদি কোনো ইইউ প্রতিষ্ঠান দুটি বিষয় নিশ্চিত না করে, বার্ষিক মুনাফার ৫ শতাংশ জরিমানা গুনতে হবে তাদের। নতুন আইনটি পাস হলেও এখন সদস্য রাষ্ট্রের সাথে আলোচনা শেষে আইনটি কার্যকর হতে আরও দুই বছর সময় লাগবে বলেও জানান চার্লস।   
২৫ এপ্রিল, ২০২৪

তাপদাহ দীর্ঘদিনের পরিবেশ ধ্বংসের ফল
রিকশা ও মসজিদের শহরখ্যাত রাজধানী ঢাকা পরম মমতায় আগলে রেখেছে বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। একসময়ের সবুজের আচ্ছাদনে মোড়ানো ঢাকা ক্রমেই যেন হারিয়ে ফেলছে তার শ্যামলিমার সৌন্দর্য। ঢাকায় একদিকে যেমন বাড়ছে বায়ুদূষণ, এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তাপমাত্রা। গত বছর ১৫ এপ্রিল ঢাকায় ৪০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং এ বছর ১৬ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল; যেটি ১৯৬৫ সালের পর অর্থাৎ ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল। হঠাৎ করে এই তাপদাহ নাভিশ্বাস তুলেছে জনজীবনে। ঢাকার বর্তমান তাপদাহ পরিস্থিতি দীর্ঘদিনের পরিবেশ ধ্বংসের একটি ফল। পরিবেশ, আবহাওয়া ও জলবায়ু অনুযায়ী ঢাকা কতটা বসবাস উপযোগী, সেটিই এখন মূল আলোচনা। গত কয়েক বছরে সবচেয়ে বায়ুদূষণ নগর হিসেবে রেকর্ড করেছে ঢাকা। এখন রেকর্ড তাপমাত্রা যেন নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে সবাইকে। যেখানে সারা বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার জন্য লড়াই চলছে ঠিক একই সময়ে গত ২০ বছরে রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপদাহের এ বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ঢাকাসহ অন্য জেলা শহরগুলোয় দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য বা তারতম্য কমে আসবে; যার কারণে সব সময়ই গরম অনুভূত হবে। নগরাঞ্চলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি শুধু বাংলাদেশেরই সমস্যা নয়; বরং এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। জলবায়ু ও পরিবেশগত পরিবর্তন ছাড়াও জনসংখ্যা ও তার ঘনত্ব এবং মানুষের কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভর করে কোন স্থানের তাপমাত্রা কেমন হবে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য জলবায়ু পরিবর্তন যতটা দায়ী, তার চেয়ে অনেক বেশি দায়ী অপরিকল্পিত নগরায়ণ, নগরে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনা। প্রধানত বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও স্থানীয় এই তিনটি কারণে ঢাকা শহরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৈশ্বিক কারণের ভেতরে রয়েছে পৃথিবীর ফুসফুস আমাজন ফরেস্ট নষ্ট হওয়া, উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে কার্বন নিঃসরণ ও ফুয়েল বার্ন বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি বাণিজ্যিক কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর জন্য বাংলাদেশ খুব বেশি দায়ী না হলেও এর প্রভাব বাংলাদেশের ওপরই পড়ছে। ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, আফগানিস্তান ও চীন এই জোনে এক সময় প্রবহমান অসংখ্য নদী ছিল। কিন্তু দিনে দিনে এই নদীগুলোকে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে মেরে ফেলা হয়েছে। ফলে নদীগুলোর সংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে দৈর্ঘ্য-প্রস্থ কমে গেছে। যেসব জায়গায় নদী কমেছে তার কয়েকটিতে বালু ভরাট করা হয়েছে আবার কোথাও স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। ফলে সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণ তাপ ছড়িয়ে পড়ছে। অন্যদিকে বালু থাকার কারণে মরুময় একটি অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে এবং এসব কারণে আশপাশের অঞ্চলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রথম আঞ্চলিক কারণ। দ্বিতীয় আঞ্চলিক কারণটি হলো হিমালয়ের বরফ গলে যাওয়া। হিমালয়ের বরফে রিফ্লেক্ট হয়ে তাপমাত্রা ফের বায়ুমণ্ডলে ফিরে যেত। কিন্তু এখন বরফ গলে যাওয়ার কারণে সেখানে কঠিন পাথর দেখা যাচ্ছে। ফলে এই পাথরে ধারণকৃত তাপমাত্রা বাতাসের মাধ্যমে আশপাশের অঞ্চলে ছড়িয়ে যাচ্ছে এবং এক ধরনের তাপদাহ সৃষ্টি করছে। এই অঞ্চলগুলোতে মেগাসিটি বা শহর বৃদ্ধি পাচ্ছে তারই ধারাবাহিকতায় বাড়ছে যানবাহন ও জনসংখ্যা। যেমন ভারতে লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে এখন চীনের সমপরিমাণ হয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর মোট লোক সংখ্যার এক-পঞ্চমাংশের বেশি মানুষ এই অঞ্চলে বসবাস করছে। এই বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যাকে তাদের নাগরিক সুবিধা দিতে গিয়েও তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো, স্থানীয় কারণ যা স্থানীয়ভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে। এই স্থানীয় কারণগুলোর মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো ঢাকা শহরের সবুজায়ন কমে যাওয়া। একসময় বাংলাদেশে ২৫ ভাগের বেশি সবুজায়ন থাকলেও বর্তমানে এর পরিমাণ খুবই নগণ্য। গাছপালা পরিবেশ থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড ও তাপ শোষণ করে অক্সিজেন সরবরাহ করে। ফলে বাতাসে অক্সিজেন ছড়িয়ে আশপাশের এলাকা শীতল রাখে। কিন্তু এখন শহরের সৌন্দর্যবর্ধনের নামে রাস্তার বিভাজনের বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। ফলে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন ও জলীয় বাষ্প কমে গিয়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং একই কারণে বৃষ্টিপাতও কমে যাচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির দ্বিতীয় অন্যতম কারণ হলো জলাধার কমে যাওয়া। গবেষণা থেকে দেখা যায়, ঢাকা শহরের জলাধার বা পুকুরের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমছে। জলাধার মাটির পরিবর্তে বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। এটিও তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। ঢাকা শহরের ৩৬টি স্থান নিয়ে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব এলাকায় সবুজের উপস্থিতি রয়েছে, সেসব এলাকায় তাপমাত্রা তুলনামূলক কম। এর মধ্যে ৯টি স্থানে ছিল তাপমাত্রা বেশি। কারণ এগুলোতে গাছপালা কম ছিল। আর বাকি ৯টি স্থানে বৃক্ষ বেশি থাকায় তাপমাত্রাও কম ছিল। আর অন্য ১৮টি স্থানে মধ্যমানের তাপমাত্রা ছিল। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে কম তাপমাত্রা ছিল বোটানিক্যাল গার্ডেন ও জাতীয় চিড়িয়াখানায়। দ্বিতীয় কম তাপমাত্রার অন্য এলাকাগুলো ছিল রমনা পার্ক, ধানমন্ডি লেক পাড়, ক্যান্টনমেন্টসহ কিছু এলাকা। অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রার এলাকা ছিল তেজগাঁও, মতিঝিল, মিরপুর, যাত্রাবাড়ীসহ কিছু বাণিজ্যিক এলাকা। এগুলোতে তিন থেকে সাড়ে তিন ডিগ্রি তাপমাত্রার তারতম্য ছিল। এতেই প্রমাণিত সবুজ জলাভূমি তাপমাত্রা কম কিংবা বৃদ্ধির অন্যতম উৎস। তৃতীয়ত, ঢাকার অত্যধিক জনসংখ্যাও তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। ইউএস-ইপিএর মতে, সাধারণত প্রতি ১০ লাখ লোকের জন্য যে কোনো এলাকার তাপমাত্রা ১.৮-৫.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বাড়তে পারে। আবার মানুষের শরীরের একটি নিজস্ব তাপমাত্রা রয়েছে, যাকে বলা হয় মেটাবোলিক হিটিং এবং প্রত্যেক ব্যক্তির ক্ষেত্রেই এই তাপমাত্রার পরিমাণ ১০০ ওয়াট। অর্থাৎ একই স্থানে যত বেশি সংখ্যক মানুষ থাকবে, সেই স্থানের তাপমাত্রা ততই বেশি হবে। ঢাকা শহরের বর্তমান জনসংখ্যা ২ কোটিরও বেশি যেটি প্রত্যক্ষভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি করছে। এ ছাড়া নগরের একটি বিশাল অংশের মানুষ রান্নার কাজে কাঠ পোড়ান। এর বাইরে নগরীতে প্রায় ২০ লাখ পরিবার রয়েছে যাদের ২০ লাখ চুলায় গড়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩ ঘণ্টা করে রান্নার কাজ চলে। ঢাকায় তাপমাত্রা বৃদ্ধির চতুর্থ কারণ হলো যত্রতত্র বর্জ্য পোড়ানো। বর্জ্যের ভেতরে থাকা প্লাস্টিক পোড়ানোর ফলে বিভিন্ন রকম দূষিত গ্যাস ও মাইক্রো প্লাস্টিক বস্তুকণা বাতাসের সঙ্গে মিশে বাতাসকে দূষিত করছে। বাতাসে ভাসমান এই প্লাস্টিক কণাগুলো তাপ ধরে রেখে বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে তুলছে। একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধকরণ ও প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর লক্ষ্যে এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল প্লাস্টিক দূষণ। এ বছর পরিবেশ দিবসের ৫০ বছর শেষ হলো। ৫০ বছর ধরেই পরিবেশ রক্ষার দাবিতে ৫ জুন পরিবেশ দিবস পালন করা হচ্ছে। কিন্তু দিনে দিনে পরিবেশ দূষণ ও পরিবেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের পরিবর্তন হচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে আমাদের জীবনযাত্রার ওপর। তাপমাত্রার অসহনশীল পরিবর্তনই এর অন্যতম উদাহরণ। পঞ্চমত, রাজধানীর অধিক যানবাহন ও যানজট সমস্যাও তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। যার মধ্যে রয়েছে রাজধানীতে চলাচলকারী প্রায় ৫২ লাখ গাড়ি। যার এক-তৃতীয়াংশ ফিটনেসবিহীন চলাচল করছে। যানজটের কারণে গাড়িগুলোকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ইঞ্জিন চালু করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এতে করে ইঞ্জিন থেকে প্রচণ্ড পরিমাণে তাপ নির্গত হয়, যা বাতাসের সাহায্যে ছড়িয়ে পড়ে শহরের পরিবেশকে উত্তপ্ত করে তোলে। ষষ্ঠ কারণের মধ্যে রয়েছে ঢাকা শহরের পিচঢালা রাস্তা। এই রাস্তা দিনের বেলা উত্তপ্ত হয় এবং রাতের প্রথমভাগ পর্যন্ত তাপ ধারণ করে থাকে। এরপর যখন তা রিলিজ করে তখন তা নগরে তাপ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। এজন্য রাস্তার ডিভাইডারে গাছ প্রয়োজন, যা উত্তাপ কমাতে সহায়ক। কিন্তু এখন শহরের সৌন্দর্যবর্ধনের নামে ডিভাইডারের গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। তাতে তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সপ্তম কারণ হলো, নতুন করে তৈরি বহুতল ভবনগুলোতে অতিরিক্ত গ্লাসের ও এসির ব্যবহার এবং ভবনের ভেতরের সরু রাস্তা। এতে করে গ্লাসে ধারণ করা তাপ ও এসি থেকে নিঃসৃত তাপ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে তাপমাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। আবার ভবনের ভেতরকার সরু রাস্তা বায়ুর স্বাভাবিক চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করে, যার ফলে দুপুরের চরম তাপ ভবনগুলোর মাঝে ট্র্যাপ হয়ে যায় এবং হঠাৎ করেই সন্ধ্যার পর ওই এলাকার তাপমাত্রা বেশি পরিলক্ষিত হয়। ঢাকা শহরের এই ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সর্বপ্রথম যে পদক্ষেপ নিতে হবে, তা হলো শহরের প্রতিটি ফাঁকা স্থানে গাছ লাগাতে হবে। রাস্তার বিভাজনে শোভাবর্ধনকারী গাছ ছাড়াও ভূমির ধরনের ভিত্তিতে বিভিন্ন রকম উপকারী বৃক্ষ যেমন—বিভিন্ন ফলের গাছ, ঔষধি গাছ, কাষ্ঠল গাছও রোপণ করতে হবে। ছাদবাগান বৃদ্ধি করতে হবে। একটি বনাঞ্চল সরাসরি তাপ এবং কার্বন নির্গমন হ্রাস করে। ঢাকায় জলাভূমির পরিমাণও বৃদ্ধি করতে হবে। দখলকৃত জলাভূমি উদ্ধার করতে হবে। জলাভূমি ভরাট করে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। প্রয়োজনে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অবকাঠামো নির্মাণের সময়ও সচেতন হতে হবে এবং একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে ভবন নির্মাণ করতে হবে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং শহরাঞ্চল থেকে মানুষের আধিক্য কমাতে হবে। অবকাঠামো নির্মাণের সময় সচেতন হতে হবে এবং একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে ভবন নির্মাণ করতে হবে। যত্রতত্র প্লাস্টিক ও অন্যান্য বর্জ্য পোড়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে এবং প্লাস্টিক বর্জ্যকে যথাযথ ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং এর পরিবর্তে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। শহরের স্থানীয়, ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জননীতিকে মাথায় রেখে পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। সর্বোপরি সবাইকে এই তাপপ্রবাহ কমানোর লক্ষ্যে একযোগে কাজ করে যেতে হবে। লেখক: স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন। যুগ্ম সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন এবং প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)
২১ এপ্রিল, ২০২৪
X