মায়েদের জন্যই আজ পৃথিবী এতো সুন্দর: রিচি
অভিনেত্রী রিচি সোলায়মান। দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা তিনি। এখন সংসার-সন্তান নিয়েই তার ব্যস্ততা। তবে সুযোগ পেলেই ফিরে আসেন দেশে। সময় কাটান সহকর্মীদের সঙ্গে। সম্প্রতি মা দিবস উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন রিচি। একান্ত কথা বলেন কালবেলার সঙ্গে।  বিশ্ব মা দিবস নিয়ে রিচি বলেন, ‘বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষে পৃথিবীর সকল মাকে আমার ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। মাদের জন্যই আজ পৃথিবী এত সুন্দর। প্রতিটি সন্তানের সফলতার পেছনেই মায়েদের অবদান রয়েছে। তাই এমন একটি দিনে আমার মাকেও আমার কাজের জন্য সম্মানিত করা হয়েছে। যার জন্য আমি গর্বিত।’ রিচি সোলায়মান নব্বই দশক থেকে একাধারে বিজ্ঞাপন ও নাটকে অভিনয় করে দেশ ও দেশের বাইরে নিজের জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। সব মিলিয়ে ২০টির মতো নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। ২০০৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী রাসেকুর রহমানকে বিয়ে করেন রিচি সোলায়মান। এরপর থেকেই সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন তিনি।  
১২ মে, ২০২৪

আমার পৃথিবী আমার মা
‘মা’! ভীষণ ছোট্ট এই একটি শব্দের মধ্যে মিশে আছে বিশ্বের ভালোবাসা। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সম্পর্ক হলো ‘মা’। মা কখনো জীবনে হাজির হয়েছেন আবেগের আশ্রয় ভূমিকায়, আবার কখনো হয়ে উঠেছেন সংগ্রাম, আত্মত্যাগ, অধ্যবসায় ও সাফল্যের চাবিকাঠি। আর এই মাকে স্মরণ করতে পৃথিবীর প্রতিটি মায়ের প্রতি ভালোবাসা ও মাতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বিশ্ব ‘মা’ দিবস পালন করা হয়। এবারের মা দিবসে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেছেন মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ মা অতুলনীয় অনুভূতি  মা, যা এক অতুলনীয় অনুভূতির নাম। প্রিয় মা! মা এক অক্ষরের নামটির মধ্যে যেন মধু মাখা। মা-সন্তানের এই সুসম্পর্ক যুগ যুগ ধরে টিকে থাকে যেন মানুষের হৃদয়ে। আমি আমার মায়ের কাছে চিরঋণী। জীবনের নৈতিকতা, বুদ্ধি এবং সব শিক্ষা আমি আমার মায়ের কাছে থেকে গ্রহণ করেছি। একজন মা-ও যে বাবার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে সন্তানকে আগলে রেখে সুন্দর আগামীর পথ দেখাতে পারেন, তার বাস্তব উদাহরণ হচ্ছেন আমার মা। তিনি একটি পরিবারের আলোকবর্তিকা। আমার দৃষ্টিতে তিনি একজন মহীয়সী নারী। আমাদের প্রত্যেককেই মাকে ভালোবাসতে হবে, সম্মান করতে হবে; কিন্তু সেটা এক দিনের জন্য না। শুধু মা দিবসেই মাকে উপহার দিয়ে, কেক কেটে আমাদের দায়িত্ব যেন শেষ না হয়ে যায়। মায়ের খেয়াল রাখতে হবে রোজ, মায়ের যত্ন নিতে হবে, ভালোবাসতে হবে। ছোটবেলায় আমাদের শখ-আহ্লাদ পূরণের দায়িত্ব যেমন ছিল মায়ের, তেমনি এখন আমাদের মায়ের শখ-আহ্লাদ পূরণের দায়িত্ব নিতে হবে। কেননা এই পৃথিবীতে ভালোবাসার উদার উদাহরণ শুধু মায়ের পক্ষেই সৃষ্টি করা সম্ভব। অসাধারণ মায়ের ভালোবাসার কাছেই পৃথিবীর সব ভালোবাসা হার মানে। ভালো থাকুক পৃথিবীর প্রত্যেক মা! —সানজিদা আক্তার সেতু, শিক্ষার্থী ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিঃস্বার্থ ভালোবাসার নাম পৃথিবীর নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, অকৃত্রিম স্নেহ, আত্মিক মায়ার টান, এমন প্রতিটি জানা-অজানা শব্দের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবেই মিশে আছে ‘মা’। সমুদ্রের গভীরতা যেমন পরিমাপ করা সম্ভব নয়, তেমনি মায়ের আত্মত্যাগ তথা ভালোবাসার গভীরতাও পরিমাপ কখনো সম্ভব নয়। পৃথিবীর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল মায়ের কোল, যেখানের শীতলতা সন্তানকে বারবার টেনে নেয়। মায়ের থেকে যেন উন্মুক্ত বইও নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার শিক্ষা নেয় অন্যের জ্ঞানের পরিধি সমৃদ্ধির লক্ষ্যে। গর্ভধারণ থেকে শুরু করে সন্তানের জন্য মায়ের যে আত্মত্যাগ, সে যেন পৃথিবীর সব কিছুর ঊর্ধ্বে। মাকে ভালোবাসার জন্য কখনোই নির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণের সীমাবদ্ধতা নেই; কিন্তু বিশেষ দিন উদযাপন নিশ্চয়ই মায়ের ডোপামিন নিঃসরণ কয়েকগুণ বাড়িয়ে তোলে। ‘মা’ তো কখনো বিনিময় দাবি করেন না; কিন্তু মায়ের দিনগুলো রঙিন এবং উৎসবমুখর করতে প্রতিটি সন্তানের রয়েছে দায়িত্ববোধ। ‘মা’ হলেন ম্যাজিকম্যান, সন্তানের মুখের হাসির জন্য যিনি সর্বদা প্রস্তুত, তেমনি মায়ের জন্যও প্রতিটি সন্তান হোক সুপারম্যান। প্রতিদিনই হোক মায়ের সঙ্গে সময়ের বিনিময়, মায়ের মুখে হাসি থাকুক সব সময়। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে মা থাকুক স্মরণে। অনেক বেশি ভালোবাসি মা। মা দিবসে আমার এই নিবেদন। —কাব্য সাহা, শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ আজীবন যোদ্ধা  অবরোধবাসিনীদের মুক্তির জন্য লড়াই করেছেন বহু মহীয়সী। আমার মা ও আমার কাছে তাদেরই একজন। আশির দশকে উচ্চশিক্ষার প্রবল ইচ্ছা থেকে যে নারী ঘর ছেড়েছেন, সে-ই বা কম কিসে! যেন নিজের জীবনের জাগরণ ঘটানো ও এগিয়ে যাওয়ার প্রখর আন্তরিকতায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন মা। পড়াশোনা শেষে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন উন্নয়নকর্মী হিসেবে। ঋণ বিভাগে নামকরা সব সংস্থায় নারী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন দাপটের সঙ্গে। নারীর স্বাবলম্বিতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ আমি আমার ঘরেই দেখেছি। বড় হয়েছি এক স্বাধীন, শক্তিশালী নারীকে দেখে। আজীবন মায়ের চাইতে বন্ধু রূপেই তাকে বেশি পেয়েছি৷ শুধুমাত্র এই মানুষটার কাছেই আমি ‘ওপেন বুক’ হতে পারি। শ্রাবণ মাসের মতোই আমি কখনো মেঘ, কখনো বৃষ্টি আর কখনো রোদ হয়ে যাই। আর মা তার স্বভাবগত ভাবেই সহ্য করে চলেন আমাকে। আমাকে সামলে রাখতে গিয়ে মা এক মহীরুহে রূপান্তরিত হয়ে গেছেন নিজের অজান্তেই। বাবার মৃত্যুর পরও যেভাবে সব আগলে রেখেছেন, শূণ্যতা কখনো টের পেতে দেননি। মায়ের সবচেয়ে বড় শক্তি তিনি অপ্রকাশিতভাবে হাসতে পারেন যেকোন কঠিন মুহুর্তে দাঁড়িয়ে। অনেকটা, ‘জাহান্নামে বসিয়া হাসি পুস্পের হাসি’ এর মতো। একই রূপে আমার বাবা, মা, বন্ধু, সম্পদ সবই তিনি। প্রতিনিয়ত শিখছি মায়ের থেকে। আজীবন যোদ্ধার ছায়া তলে নিরাপদ থাকুক পৃথিবীর সকল সন্তানেরা। —সানজিদা জান্নাত পিংকি, শিক্ষার্থী আইন বিভাগ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়
১২ মে, ২০২৪

রনোর চোখে পৃথিবী দেখবেন দুজন
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) উপদেষ্টা হায়দার আকবর খান রনো আমৃত্যু গণমানুষের কল্যাণের কথা ভেবেছেন। তাই তো মরণোত্তর দান করেছিলেন চোখের কর্নিয়া। তার দান করে যাওয়া কর্নিয়ায় এখন পৃথিবীর আলো দেখবেন দৃষ্টিহীন দুজন মানুষ। গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এরপর গতকাল দুপুরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি রনোর কর্নিয়া সংগ্রহ করে। সিবিপি নেত্রী জলি তালুকদার বলেন, হায়দার আকবর খান রনো মরণোত্তর চক্ষুদান করেছিলেন। তার মৃত্যুর পর আমরা সন্ধানীতে বিষয়টি জানাই। সন্ধানীর জাতীয় চক্ষুদান সমিতির সমন্বয়ক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, রোববার দুপুরে ঢাকায় তাদের তত্ত্বাবধানে দুজন দৃষ্টিহীনের চোখে অস্ত্রোপচার করে বসানো হবে এ কর্নিয়া। এজন্য ৪-৫ জনের সঙ্গে এরই মধ্যে যোগাযোগ হয়েছে। কর্নিয়া নিতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা রোববার আসবেন। তখন যাচাই-বাছাই করে যাদের প্রয়োজন, এমন দুজনকে দেওয়া হবে। কর্নিয়া দুটি আই ব্যাংকে সংরক্ষিত আছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে। সবকিছু শেষ করে সার্জনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে, তারা সেগুলো প্রতিস্থাপন করবেন। সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি ও সন্ধানী আন্তর্জাতিক চক্ষু ব্যাংকের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু বলেন, সার্জন সৈয়দ এ হাসান কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করবেন। বাংলাদেশের ১৪ লাখ দৃষ্টিহীন ব্যক্তির মধ্যে অন্তত ৫ লাখ কর্নিয়াজনিত সমস্যায় ভুগছেন। কর্নিয়া দানে অনীহার কারণে লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হচ্ছে না। বাংলাদেশে এখন যে পরিমাণ কর্নিয়া পাওয়া যাচ্ছে, তাতে এই পাঁচ লাখ অন্ধের চোখে আলো ফেরাতে হলে কয়েক হাজার বছর লাগবে। এজন্য কর্নিয়া দান করতে মানুষকে উৎসাহিত করতে হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রথম পতাকার অন্যতম রূপকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাশ তার কর্নিয়া দান করে গেছেন। তার দুটি কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হয়েছে রংপুরের মশিউর রহমান এবং চাঁদপুরের আবুল কালামের চোখে। সমাজসেবক সালেহা সুলতানার দুটি কর্নিয়া দেওয়া হয়েছে ময়মনসিংহের খোকন রবি দাস ও বগুড়ার তানিয়া আক্তারকে। জনকণ্ঠের সম্পাদনা পরিষদের সহকারী হারুনুর রশিদের চোখে পৃথিবী দেখছেন কেরানীগঞ্জের মুকিম শেখ ও দাউদকান্দির আরব আলী। ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিনের চোখে পৃথিবীর আলো দেখছেন রেশমা। আর বাংলাদেশে প্রথম ক্যাডাভারিক অঙ্গদাতা সারাহ ইসলামের দুই চোখ দেওয়া হয়েছে ফেরদৌসী আক্তার ও সুজনকে। কমিউনিস্ট পার্টির নেতা রনোর নাম উঠল এখন এ তালিকায়। দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসতন্ত্রের নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। গত ৬ মে পান্থপথের হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল।
১২ মে, ২০২৪

পৃথিবী যতদিন থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধু ও রবীন্দ্রনাথের দর্শন-কর্ম থাকবে : ঢাবি উপাচার্য
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেছেন, পৃথিবী যতদিন থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কর্ম, চিন্তা-ভাবনা, আদর্শ ও দর্শন বেঁচে থাকবে।  বুধবার (৮ মে) বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।  ‘সোনার বাংলা স্বপ্ন ও বাস্তবতা: রবীন্দ্রনাথ থেকে বঙ্গবন্ধু’ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে আয়োজিত এই আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ সম্মাননীয় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আজিজুল হক। রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন। উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, বঙ্গবন্ধু সারাজীবন কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের মুক্তির জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতা, গল্প, গান, রচনা, সাহিত্য ও শিল্পকর্মে দরিদ্র্য কৃষক ও শ্রমিকের মুক্তির গান গেয়েছেন। তারা উভয়ই অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ, উগ্রজাতীয়তাবাদ পরিহার এবং আত্মশুদ্ধির পন্থা অবলম্বন করেছেন।  তিনি আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথের চিন্তা-চেতনা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসাম্প্রদায়িক চেতনা, গণতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধ, দেশপ্রেম, মাটি ও মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা নিয়ে সারাজীবন আন্দোলন- সংগ্রাম ও অপরিসীম ত্যাগের মাধ্যমে আমাদেরকে স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন। মানুষকে ভালোবেসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ব্রিটিশ সরকার প্রদত্ত নাইটহুট উপাধি ত্যাগ করেছিলেন, ঠিক তেমনি নিজের জন্য খোঁড়া কবরের সামনে দাড়িয়ে পাকিস্তানি শাসকদের সাথে বাঙালীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও মুক্তির ব্যাপারে আপোস করেননি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এভাবেই বঙ্গবন্ধু ও রবীন্দ্রনাথের দর্শন ও চিন্তা-ভাবনায় অপূর্ব মিল রয়েছে।   প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কবিতা ও সাহিত্য কর্মে সমাজের নানা অসংগতি, কুসংস্কার, বৈষম্য, মানুষের কষ্ট, প্রকৃতি, পরিবেশ, মানবপ্রেমসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন। বঙ্গবন্ধু এবং রবীন্দ্রনাথ উভয়ই উগ্রজাতীয়তাবাদ বিরোধী ছিলেন। তাঁরা উভয়ই বিশ্বাস করতেন উগ্র জাতীয়তাবাদ সমাজে সংঘাত সৃষ্টি করে। অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ প্রতিষ্ঠায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিন্তাভাবনা ও দর্শন সকলের সামনে সবসময় তুলে ধরতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। অধ্যাপক ড. সৈয়দ আজিজুল হক মূল প্রবন্ধে বলেন, সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু ও রবীন্দ্রনাথের ভাবনায় ও কর্মে অনেক মিল ছিল। বাঙালির ন্যায়সংগত অধিকার আদায়ে আত্মশক্তি অর্জনে উভয়ই সোচ্চার ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ সৃজনশীল কাজগুলো তৎকালীন পূর্ববঙ্গের গ্রাম্যজীবন ও পদ্মাপাড়ের মানুষের জীবন নিয়ে রচিত। তিনি যেমন লেখনীর মাধ্যমে মানুষের চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন করে সমাজ সংস্কার করতে চেয়েছেন, তেমনি বঙ্গবন্ধু তাঁর দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনে অপরিসীম ত্যাগের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় এককভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আলোচনা পর্ব শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংগীত বিভাগ ও নৃত্যকলা বিভাগের যৌথ উদ্যোগে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
০৮ মে, ২০২৪

ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার নিবন্ধ / ‘যুদ্ধে নয় বরং পৃথিবী রক্ষায় অর্থ ব্যয় করা দরকার’
বর্তমানে পৃথিবীর আলোচিত এবং সংকটময় বিষয়গুলোর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন অন্যতম প্রধান একটি বিষয়। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন ঘটছে। জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে সমগ্র বিশ্বের প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা প্রকারের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেমন বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, খরা, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, নদী-ভাঙন, ভূমিধ্বস, শিলাবৃষ্টি ইত্যাদি। বৃদ্ধি পাচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ও ভূমিকম্প।  UNFCCC’র দেওয়া তথ্য বলছে, বিংশ শতাব্দীতে সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা ১০-২০ সেন্টিমিটার বেড়েছে এবং আগামীতে আরো ১৮-৫৯ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। আর এতে মালদ্বীপসহ তলিয়ে যাবে উপকূলবর্তী আমাদের বাংলাদেশ। মালদ্বীপ এবং বাংলাদেশের পাশাপাশি  বর্তমান বিশ্বের প্রতিটি দেশই জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তনের ফলে কমবেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।  জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া বন্ধে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে আমরা ব্যর্থ হলে আজকের পৃথিবী অচিরেই অস্তিত্ব সংকটে ভুগতে যাচ্ছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। কেননা জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক ধারা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবী মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীদের বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়বে। আগামী প্রজন্মকে সমৃদ্ধ, নিরাপদ এবং বসবাসযোগ্য এক পৃথিবীর নিশ্চয়তা প্রদানের লক্ষ্যে জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা উন্নত বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোকে যুদ্ধে অর্থ ব্যয়ের পরিবর্তে জলবায়ু প্রভাব মোকাবেলায় তা ব্যয়ের আহ্বান জানিয়েছেন। গত সোমবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘ন্যাশনাল অ্যাডাপশন প্ল্যান (ন্যাপ) এক্সপো-২০২৪’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধে অস্ত্র এবং অর্থ ব্যয় না করে সেই টাকাগুলো জলবায়ু পরিবর্তনে যদি ব্যয় করা হত তো বিশ^টা রক্ষা পেত।’ বর্তমান বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন যেখানে একটা আতঙ্কের বিষয় সেখানে এই ব্যাপারে উন্নত বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোর নিষ্ক্রিয় ভূমিকা হতাশ করার মতো। এই ব্যাপারে তাদের আগ্রহ বলতে শুধু জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের সম্মেলন করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তনের বিষয়ে বিশ্বের প্রতিটি দেশ যেখানে চিন্তিত সেখানে উন্নত রাষ্ট্রগুলো বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরণীন যুদ্ধ-বিগ্রহ নিয়ে ব্যস্ত।  যুদ্ধের পিছনে প্রতিবছর ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার অর্থ তারা খরচ করলেও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় অর্থ ব্যয়ে তাদের কোন ধরনের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, চলমান যুদ্ধ ও নতুন করে সংঘাতের ভয় থেকে বিশ্বে সামরিক ব্যয়ে নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। গত বছর তথা ২০২৩ সালে বৈশ্বিক সামরিক ব্যয় ছিল ২ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন তথা ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলার। যা এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। সুইডেনের প্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত সোমবার (২২ এপ্রিল, ২০২৪) এসআইপিআরআই বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এবারের প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বজুড়ে গত বছর সামরিক ব্যয় আগের বছরের চেয়ে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে।  শুধু তাই নয়, ২০০৯ সালের পর প্রথমবারের মতো বিশ্বের সব ভৌগোলিক অঞ্চলে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের ফলে বিশ্ব যেখানে হুমকির মুখে সেখানে যুদ্ধ-বিগ্রহের পিছনে বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলোর ক্রমবর্ধমান সামরিক ব্যয়ের চিত্র সত্যিই আমাদের অনেক হতাশ করে। যুদ্ধ-বিগ্রহ পিছনের প্রতিবছর যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে তা যদি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় ব্যয় করা হতো তাহলে বিশ্ব তার অস্তিত্ব সংকট থেকে রক্ষা পেতো।  যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণের মাত্রা নিয়ে অবিরাম কথামালা চলতে থাকলেও তা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। তাদের পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের খেসারত টানতে হচ্ছে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে। বাংলাদেশসহ বিশ্ব অর্থনীতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশ্ব নেতৃত্ব আমাদের গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনানুযায়ী বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বিভিন্ন বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে ২০১০ সালে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে।   এর ট্রাস্টের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- সরকারের উন্নয়ন বা অনুন্নয়ন বাজেটের বাইরে বিশেষ ক্ষেত্র হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় এই ট্রাস্টের তহবিল ব্যবহার করা; জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উপযুক্ত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা; জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় তৃণমূল পর্যায়ে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রাতিষ্ঠানিক, সামাজিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও মানবসম্পদ উন্নয়নসংক্রান্ত প্রকল্প বা কর্মসূচি গ্রহণ করা; জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অভিযোজন, প্রশমন, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং অর্থ ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবহারিক গবেষণা করা এবং গবেষণালব্ধ ফলাফলের আলোকে উপযুক্ত বিস্তারসহ বা পাইলট কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা; জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপখাওয়ানো এবং ক্ষতিগ্রস্ততা মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন মেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং এর ভিত্তিতে কর্মসূচি বা প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা; পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে স্থাপিত জলবায়ু পরিবর্তন ইউনিটসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে এবং পরিবেশ অধিদপ্তরে গঠিত জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জলবায়ু পরিবর্তন সেল বা ফোকাল পয়েন্টকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সহায়তা করা; জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সম্ভাব্য পরিবেশ বিপর্যয় সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও বিপর্যয় মোকাবেলার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক, সামাজিক বা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে উপযুক্ত কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সহায়তা করা; এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ-পরবর্তী জরুরি কার্যক্রমে সহায়তা করা ইত্যাদি। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় বিভিন্ন ধরনের কৌশল গ্রহণের পাশাপাশি বাংলাদেশ সবসময়ই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে নিয়ে ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশীপ-বিসিডিপি’ গঠন করা হয়েছে। এতে সকল পক্ষ ঐকমত্য হয়েছে। আমরা আশা করি, মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান, ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যান, ন্যাশনাল ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন ও বাংলাদেশের রুপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে বিসিডিপি তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবে।  পাশাপাশি বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (এনএপি) ২০২২-২০৫০ প্রণয়ন করেছে। ২০২২ সালের অক্টোবরে এটি এইএনএফসিসিসি-তে দাখিল করা হয়েছে। এই পরিকল্পনায় বাংলাদেশ ১১টি জলবায়ু ঝুঁকিযুক্ত এলাকাতে ৮টি খাতে ১১৩টি অগ্রাধিকারমূলক কার্যক্রম চিহ্নিত করেছে। এছাড়াও বাংলাদেশ আগামী ২৭ বছরে ন্যাপ-এ গৃহীত কর্মপরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়নের জন্য প্রায় ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রয়োজন। এজন্য সুনির্দিষ্ট তহবিল ও অতিরিক্ত আর্থিক সংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারেও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ধনী দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বিশ্বে জলবায়ুর এই নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার রয়েছে জোড়ালো অবদান। তিনি জলবায়ু বিষয়ক সর্বোচ্চ বিশ্ব ফোরাম, জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসিসি)- এর কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ (সিওপি)- এ ২০১৫ সালে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের স্বীকৃতি হিসেবে পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ সম্মান ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ সম্মাননায় ভূষিত হয়েছিলেন। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই সম্মাননা ছিল, জলবায়ু পরিবর্তনের সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর বিশ্ব ফোরামে স্বল্পোন্নত দেশসমূহের মুখপাত্র হিসেবে নেতৃত্ব দেওয়ার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় অবদান রাখার পাশাপাশি বিশ্বজনীন আলোচনায় স্বীয় স্বার্থ সংরক্ষণে সদা সচেষ্ট রয়েছে শেখ হাসিনার বাংলাদেশ। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে জলবায়ু বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশন’র (জিসিএ) ঢাকা বৈঠকে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় অভিযোজন ও সামলে নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের কিছু ধারণা ও অভিজ্ঞতা আছে বিনিময় করার মতো। আমি শুধু নিজের দেশ নিয়ে ভাবি না। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে অনেক ছোট ছোট দ্বীপপুঞ্জ হারিয়ে যাবে। তখন সেখানকার মানুষেরা কোথায় যাবে, সে কথাও আমাদের ভাবতে হবে।’  জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট প্রতিকূলতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অনন্য দক্ষতা ও সাফল্য প্রদর্শনের সুবাদে সমগ্র বিশ্বের কাছে আজ একটি রোল মডেল হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে বাংলাদেশ এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। এই ব্যাপারে জাতিসংঘের মহাসচিব জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজনের জন্য বাংলাদেশকে একটি মডেল হিসেবে বর্ণনা করে জানিয়েছেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজনে বাংলাদেশ সেরা শিক্ষক।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে তিনি জানিয়েছেন, ‘শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতাদের মধ্যে অন্যতম যিনি জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যাটি নিয়ে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন।’ তবে আমাদের নিজেদের অস্তিত্ব পৃথিবীতে টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সমস্যার সমাধানে বিশ্বের সকল নেতৃত্বকে সমানভাবে এবং সমানতালে এগিয়ে আসা দরকার। কারণ বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্র এবং তাদের নেতৃবৃন্দের সহযোগিতা ছাড়া গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে একা এই গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবেনা। এমতাবস্থায় বিশ্বের সকল দেশ ও নেতৃবৃন্দের উচিত যুদ্ধ-বিগ্রহের পিছনে না ছুটে জলবায়ু পরিবর্তনের এই নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় এগিয়ে আসা। যুদ্ধ-বিগ্রহের পিছনে অর্থ ব্যয় না করে জলবায়ু পরিবর্তনের এই নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় ঐসব অর্থ ব্যয় করা।  তাহলে জলবায়ুর পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব থেকে মুক্তির পাশাপাশি যুদ্ধ-বিগ্রহের ফলে সৃষ্ট সমস্যা থেকে বেঁচে যাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাসরত মানুষগুলো। আর পৃথিবী বেঁচে যাবে অস্তিত্ব সংকটের হাত থেকে। বর্তমান বিশ্বে এই মুহূর্তে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলার চেয়ে আর গুরুত্বপূর্ণ কোন সমস্যা থাকতে পারেনা। সুতরাং, আমাদের আগত প্রজন্মকে একটি সুন্দর, সমৃদ্ধ এবং নিরাপদ পৃথিবী উপহার দিতে হলে বিশ্বের উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রগুলোকে যুদ্ধে নয় বরং পৃথিবী রক্ষায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় অর্থ ব্যয় করা দরকার। ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া: উপাচার্য, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান  
২৫ এপ্রিল, ২০২৪

অশান্ত পৃথিবী ও আমাদের বাস্তবতা
জীবন এখন কোথাও নিরাপদ নয়। আমরা আমাদের দেশের কথা বলি, ভাবি। কিন্তু শুধু কি বাংলাদেশ? আজ যদি আপনি বিশ্বের দিকে চোখ রাখেন দেখবেন উন্নত নামে পরিচিত দেশগুলোর সমাজ ও সামাজিক পরিবেশ ভয়াবহ। আমেরিকা দুনিয়ার সেরা একটি দেশ বলেই আমরা জানি। কেন সেরা? সে বিচার এখন দূর অস্ত। চীন, রাশিয়া, ভারত যে যত এগোক বা পেছাতে থাক, পরিসংখ্যান মতে যুক্তরাষ্ট্রই শীর্ষে। এই শীর্ষে থাকা তার অধিকার হয়ে গেছে। নানা বিচারে এখনো তাদের সেরা জায়গাটা মানতে হবে। কিন্তু আপনি কি চীন, রাশিয়া বা ভারতের স্কুলে এমন কিলিং মিশন দেখেন? বাচ্চাদের শিশুদের এভাবে মারার রেকর্ডে আমেরিকা সবাইকে ছাড়িয়ে। কদিন পরপর একেকটা ঘটনায় বুকের রক্ত হিম হয়ে এলেও এ গুলি থামে না। মিয়ানমারের রাখাইনে জান্তা বাহিনী এবং বিদ্রোহী আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘাত চলছে গত কয়েক মাস ধরেই। এর আগে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তিন শতাধিক বিজিপি সদস্য আশ্রয় নিয়েছিলেন বাংলাদেশে। একাধিক সীমান্ত চৌকি আরাকান আর্মির দখলে যাওয়ায় সে সময় তাদের পালাতে হয়েছিল। পরে তাদের একটি বড় অংশকে ফেরত পাঠানো হলেও দেড়শর মতো মিয়ানমারের নাগরিক বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর আশ্রয়ে ছিলেন। গত কয়েক দিনে নতুন অনুপ্রবেশের ফলে সে সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে ২৬০ জনে। প্রতিবেশী মিয়ানমারে কী হচ্ছে আসলে? রাখাইনদের রোহিঙ্গাদের নিধন ও বিতাড়নের পর এখন বিদ্রোহীদের সঙ্গে সেনাদের যুদ্ধ চলছে। একটা দেশের ভেতর কী পরিমাণ জুলুম আর যুদ্ধাবস্থা থাকলে সে দেশের সরকারি সৈন্য পালিয়ে আসে বা আসতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দেয়। আবার দেখলাম ফেরতও যাচ্ছে তারা। এসব বাস্তবতার পরও আমরা মনে করি আমাদের সমাজেই খালি অশান্তি। জি না, এই যে আমাদের শান্তির শহর সিডনি, এতদিন আমরা এমন কোনো ঘটনার কথা চিন্তাও করিনি। অথচ নয়নাভিরাম বন্ডাই বিচের লাগোয়া শপিংমলে ঘটে গেল ন্যক্কারজনক হত্যাকাণ্ড। একটি শিশুও গুলিবিদ্ধ হয়েছে সে ঘটনায়। জানে বাঁচলেও শিশুর মা মারা গেছেন আততায়ীর ছুরির আঘাতে। পাকিস্তানি সিকিউরিটি গার্ড এ দেশে এসেছিল শরণার্থী হয়ে। কাজের প্রথম দিনেই জান হারিয়েছে এ যুবক। আহমদিয়া সম্প্রদায়ের এ যুবক এখন পাকিস্তানের হিরো। দেখা যাচ্ছে কোথাও শান্তি নেই। গাজায় হাজার হাজার মানুষের জান গেছে। শিশু-নারী কেউ বাদ যায়নি। এখন ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের মুখোমুখি সারা দুনিয়া। এ লড়াই হবে কি না আর হলে কী হবে সেটা জানলেও চুপ আছে বিশ্ব মিডিয়া। এই যে চরম বাস্তবতা, এ বাস্তবতায় বাংলাদেশ আজ মোটামুটি একটি শান্তি পরিবেশে বসবাস করছে। কিন্তু আমাদের অশান্তি বা খারাপের উৎস অন্য জায়গায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল যে আদর্শে, যে মূল্যবোধে; তার অবনতি সমাজকে পলে পলে দগ্ধ করছে। আমি বাইরের দেশে দেখছি সমাজের অবনতি আর পাপই মূলত প্রধান সমস্যা। মানুষের হাতে টাকা থাকলেই যে তারা নিরাপদ, তা কিন্তু নয়। যে দেশ ও ঘটনাগুলোর কথা লিখেছি তাদের আর্থিক অবস্থা আমাদের চেয়ে ভালো। সমাজ ও সুসংহত। অথচ আজ কেন বারবার মানুষ অন্যের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে? এর মূল কারণ অশান্তি। সমাজ সৃষ্ট বিবেচনাহীন মূল্যবোধ আর নৈতিকতার অধঃপতন এখন দৃশ্যমান। একসময় যেটাকে আধুনিক মনে করা হতো সে আধুনিকতার নাগপাশ তাকে পেঁচিয়ে ধরেছে। এই অভিশাপের নাম একাকিত্ব। এই একা থাকার কারণে যে নৈরাজ্য আর অশান্তি বাসা বাঁধে তার কারণেই মন হয়ে যায় বিষাক্ত। সে বিষ পান করে যুবকরা আজ মারমুখো। তারা নিজেরা তো বাঁচেই না, অন্যদেরও বাঁচতে দেয় না। একসময় আমাদের দেশে জঙ্গিবাদ আর সন্ত্রাস আতঙ্কের মূল কারণ ছিল। আপাতত সেগুলো মাথাচাড়া দিতে পারছে না। কিন্তু বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে আমাদের তারুণ্যকে যেভাবে প্রলুব্ধ ও উত্তেজক করা তোলা হয়, তা ভবিষ্যতের জন্য দুশ্চিন্তার বিষয়। খেয়াল করবেন সমাজে আধুনিকতা আর বিশ্বাস এখন পরস্পর সাংঘর্ষিক। প্রতিনিয়ত একদল মানুষ কোনো না কোনোভাবে উসকানি দিচ্ছে। চোখ-মুখ খিঁচিয়ে কথা বললেই কি বুদ্ধিজীবী হয়ে যায় কেউ? যা জানেন তা বলেন, যা জানেন না তা ডাবল বলেন। ভাবখানা এই তিনি বা তার বাইরে আর কিছু কেউ জানে না। এই মূর্খদের কবলে সমাজ পড়েছে। এর পরিণাম ভয়াবহ হতে বাধ্য। একদিন এই দানব কীভাবে আক্রমণ করবে সেটাই ভাবার বিষয়। যে কারণে বাইরের দেশে এখন অশান্তি আর নৈরাজ্য তার মূল কিন্তু সমাজে। আমাদের সমাজে এখন আর শিক্ষা কোনো ব্যাপার না। শিক্ষা যদি ঠিক থাকত আর যাই হোক, মৌলবাদী চিন্তার প্রসার ঘটত না। মূলত রাজনীতিবিহীন দেশে উত্তেজনার কারণগুলো হয় সামাজিক। কারণ এ উত্তেজনা পাহারার কোনো অভিভাবক নেই। ভালো হোক মন্দ হোক একদল মানুষ এগুলো পাহারা দেবেন এটাই রীতি। সে রীতি এখন আর নেই। জুটেছে মিডিয়ার একক আধিপত্য। মিডিয়াকে দোষারোপ করার আগে ভাবতে হবে তাদের কাজ হচ্ছে খবর বিক্রি। বিক্রেতা সবসময় চান তার প্রোডাক্ট হট কেকের মতো চলুক। ফলে নেগেটিভ বিষয়ে আগ্রহ বেশি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আমার ধারণা এখানেও নজরদারির একটা ব্যাপার আছে, যা নিয়ন্ত্রণ নয় কিন্তু যার একতা নীতিমালা থাকে। সে নীতিমালা থাকলে বাক স্বাধীনতা হয় অর্থবহ। তখন কেউ চাইলেও মনগড়া কথা বলে আমাদের জাতীয় সংগীতের স্রষ্টা রবীন্দ্রনাথকে এভাবে অপমান করতে পারত না। পারত না বৈশাখ ও মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে বাজে কথা বলতে। জোর করে আমরা শোভাযাত্রা কতদিন করতে পারব? আর তা যদি স্বতঃস্ফূর্ত হয় তো তাকে কেউ বন্ধও করতে পারবে না। প্রয়োজন স্বচ্ছ আর স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড। অথচ সে জায়গাটায় পদে পদে বাধা। দেখেশুনে মনে হয় আনুকূল্য আর পাহারা ছাড়া আমাদের বুদ্ধিবৃত্তি ও মঙ্গল বিষয়টাই আজ অসহায়। এর ফলে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে সেটা কি মনে করিয়ে দিচ্ছে না যে দেশে প্রতিক্রিয়াশীলতার এক নীরব অভ্যুত্থান ঘটে গেছে? যদি তা হয় তাহলে বাদবাকি সমাজ যে আবারও বিপদে পড়বে বা পড়তে পারে সেটাই আমাদের আশঙ্কার বিষয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একা সামাল দিয়ে চলেছেন। তিনি আছেন বলে অন্যায় সীমা পেরোতে ভয় পায়। আমাদের চাওয়া এই নেতার আমলেই আমরা যেমন বহু উন্নত দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলেছি, তেমনি আমাদের শান্তি-কল্যাণও থাকুক অম্লান। সভ্য নামের দেশ ও সমাজের দিকে তাকালে এখন ভয় করে। ভয় যুদ্ধের, ভয় জীবনের, ভয় সম্মানের। ভয়মুক্ত পৃথিবী কি তাহলে কথার কথা হয়েই থাকবে চিরকাল? লেখক: ছড়াকার, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট, সিডনি প্রবাসী
২৩ এপ্রিল, ২০২৪

‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ ও সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে চাই’
যুদ্ধে অস্ত্র এবং অর্থ ব্যয় না করে সেই টাকা জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় করা হলে বিশ্ব রক্ষা পেত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে চাই। এ জন্য প্রয়োজন- অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধি, সহিষ্ণুতা শক্তিশালী করা এবং ঝুঁকি হ্রাসে সমন্বিতভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা। সোমবার (২২ এপ্রিল) সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ন্যাপ এক্সপো ও বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে বাংলাদেশের অবদান ০ দশমিক ৪৮ শতাংশের কম হলেও; এর নেতিবাচক প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশসমূহের মধ্যে আমরা অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তনের এ বিরূপ প্রভাব আমাদের সম্ভাব্য উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি এক পয়েন্ট ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে সীমিত রাখতে উন্নত বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসে বাংলাদেশ ২০১৫ সালে ইনটেন্ড ন্যাশনালি ডিটারমাইনড কনট্রিবিউশন (আইএনডিসি) প্রণয়ন করে। আর ২০২১ সালে তা হালনাগাদ করা হয় এবং ইউএনএফসিসিসিতে জমা দেওয়া হয়। এতে আমরা শর্তহীন ৬ পয়েন্ট ৭ ৩ পারসেন্ট এবং শর্তযুক্ত পণ্য পয়েন্ট ১ ২ পারসেন্ট গ্রিস হাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার হ্রাস করে, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার বৃদ্ধি করা হয়েছে। যাতে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস পায়। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় বাংলাদেশ সবসময়ই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রতলের উচ্চতা বাড়ায়; বাংলাদেশের প্রায় ১২ থেকে ১৭ শতাংশ অঞ্চল এ শতাব্দীর শেষ দিকে সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েুছে। আগামী ২৭ বছরে ন্যাপে এ গৃহীত কর্মপরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়নের জন্য আমাদের প্রায় ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রয়োজন। এ জন্য সুনির্দিষ্ট তহবিল ও অতিরিক্ত আর্থিক সংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণে ধনী দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলো ব্যাপক কার্বন নিঃসরণের মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে অধিক ভূমিকা রেখে চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণকে রক্ষা করা, তাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা প্রত্যাশা করি, উন্নত দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে। বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে বাংলাদেশের অবদান ০ দশমিক ৪৮ শতাংশের কম হলেও; এর নেতিবাচক প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশসমূহের মধ্যে আমরা অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তনের এ বিরূপ প্রভাব আমাদের সম্ভাব্য উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পরেও বাংলাদেশসহ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের হুমকিতে থাকা দেশগুলো যাতে অব্যাহতভাবে আর্থিক, বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা পায়, সেজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও ধনী দেশগুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যে সকল দেশ এরই মধ্যে ন্যাপ প্রণয়ন করেছে, তারা যেন ন্যাপ বাস্তবায়নে সহজে এবং দ্রুততার সঙ্গে আর্থিক সহযোগিতা পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। জলবায়ু অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধি ও ঝুঁকি হ্রাসে আন্তর্জাতিকভাবে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণে ৬ দফা প্রস্তাবনার দেন প্রধানমন্ত্রী। ৬ দফা প্রস্তাবনার মধ্যে উন্নত দেশগুলোর দ্বারা জলবায়ু তহবিলে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে- এ কথা জানিয়ে আবারও তিনি বলেন, যুদ্ধ ও অস্ত্র কেনায় ব্যয় না করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অর্থ ব্যয় করলে বিশ্ব রক্ষা পেত।
২২ এপ্রিল, ২০২৪

যতদিন পৃথিবী থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ টিকে থাকবে : ঢাবি উপাচার্য 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এমন এক মহান নেতা যিনি কোনো সময়ের মধ্যে আবদ্ধ একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন। তিনি কালজয়ী একজন অনন্য সাধারণ বিশ্বনেতা। পৃথিবী যতদিন টিকে থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সংগ্রামী জীবন, আদর্শ ও দর্শন টিকে থাকবে।  রোববার (১৭ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য এসব কথা বলেন। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষ্যে এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ধরে আনব হাসি সবার ঘরে’। আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মোল্লা মোহাম্মাদ আবু কাওছারসহ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী সমিতি, কারিগরী কর্মচারী সমিতি ও ৪র্থ শ্রেণি কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সভা সঞ্চালন করেন রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অমর স্মৃতির গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, যে কোনো অন্যায়, অত্যাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শৈশবকাল থেকেই প্রতিবাদী ছিলেন। তিনি শৈশব থেকেই অসহায়, নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। যখন যেখানে, যেভাবে ছিলেন সেখানেই তিনি এ দেশের মানুষের কথা ভাবতেন। এ দেশের মানুষকে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্র উপহার দেওয়াই ছিল তার জীবনের স্বপ্ন, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। ক্রমাগত আন্দোলন, সংগ্রাম ও অপরিসীম ত্যাগের মাধ্যমে তিনি তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন এবং আমাদের রাজনৈতিক, ভৌগোলিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দিয়েছেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শিশুদের অনেক ভালোবাসতেন। শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করে দেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি এখনো বিভিন্ন চক্রান্ত ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।  উপাচার্য আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করে দেশবিরোধী অপশক্তি সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। এসব দেশবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে তরুণ সমাজসহ সকলকে সজাগ থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি স্মার্ট ক্যাম্পাস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে শিক্ষার্থীদের বিশ্বমানের দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য শিক্ষক, গবেষকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি উপাচার্য আহ্বান জানান। প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ জাতির পিতার সাহসী, সংগ্রামী ও কর্মময় জীবনের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, বঙ্গবন্ধু ধীরে ধীরে নানা আন্দোলন-সংগ্রাম পাড়ি দিয়ে পৃথিবীর বুকে আমাদের জন্য একটি স্বাধীন মানচিত্র দিয়ে গেছেন। জীবনের সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য এবং পরিবারকে বঞ্চিত করে তিনি দেশের মানুষের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক চেতনা নিয়ে সবসময় মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। এই অবিসংবাদিত ও ক্ষণজন্মা নেতার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন ও সংগ্রামের মধ্যে দিয়েই আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, চেতনা ও আমাদের স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস শিশু, তরুণ প্রজন্মসহ সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। দিবসটি উপলক্ষ্যে সকালে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন), প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা), সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, ডিন, প্রাধ্যক্ষ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ সকালে ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর চত্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এছাড়া, চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে সকালে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের ক্যাফেটেরিয়ায় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল প্রধান অতিথি থেকে এই চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করেন। এ সময় চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেনসহ শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। মোট ৩টি গ্রুপে এই প্রতিযোগিতায় ঢাকা ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল ও কলেজ, উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নীলক্ষেত উচ্চ বিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকার শিশুরা অংশগ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস-২০২৪ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে রাত ১২টা ১ মিনিটে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে কেক কাটা হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল প্রধান অতিথি থেকে এই কেক কাটেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আকরাম হোসেন উপস্থিত ছিলেন। দিবসটি উপলক্ষ্যে বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামিয়ায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় এবং আবাসিক হল ও হোস্টেলের মসজিদ ও উপাসনালয়ে দোয়া, প্রার্থনা এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
১৭ মার্চ, ২০২৪

৭ মার্চ : যে ভাষণে আন্দোলিত হয়েছিল পুরো পৃথিবী
Jakob F. Field সম্পাদিত ÒWe Shall Fight on the Beaches: The Speeches that Inspired HistoryÓ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ইতিহাসের অন্যতম ভাষণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৩১ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ইতিহাস সৃষ্টিকারী ভাষণগুলোর মধ্যে ৭ মার্চ যেমন শিল্প-সাহিত্যে অভিব্যক্ত হয়েছে তেমনি আলোড়ন সৃষ্টি করে চলেছে বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গনে। কোটি বছর বয়সী এই পৃথিবীর পাঁচ হাজার বছরের মানব সভ্যতার ইতিহাসে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের মতো কোনো ভাষণ শোনা যায়নি। যদিও অনেকে এই মহাকাব্যিক ভাষণের তুলনা করে থাকেন আব্রাহাম লিংকনের গেটিসবার্গের ভাষণের সঙ্গে অথবা তুলনা দেওয়া হয় মহাত্মা গান্ধীর ১৯৪১ সালের ৮ আগস্ট কুইট ইন্ডিয়া ভাষণের। কিন্তু লিংকন অথবা গান্ধীর শব্দ উচ্চারণ, ক্ষোভ প্রকাশ, মানব মুক্তির স্বপ্ন সবই ভিন্ন ছিল আমাদের জাতির পিতার ঐতিহাসিক ভাষণটি থেকে।  সেদিনের রেসকোর্স ময়দান ও বর্তমানের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সেই ভাষণটিকে কেন্দ্র করে নির্মলেন্দু গুণের ‘স্বাধীনতা এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো’ কবিতার পঙ্‌ক্তিমালায় যথার্থই উপস্থাপিত হয়েছে- ‘লাখ লাখ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে/ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে।’ দশ লাখেরও বেশি মানুষের সেই সমাবেশ মানব সভ্যতার ইতিহাসের বিরল ঘটনা। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে জয়ী হয়ে দীর্ঘদিনের শোষণ বঞ্চনা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন জনগণের মুক্তির স্বপ্নে বিভোর ঠিক তখনই পাকিস্তানি শাসকচক্র ষড়যন্ত্র করে ১ মার্চ ঘোষণা দিয়ে ৩ মার্চের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করে। কারণ পাকিস্তানি পিপলস পার্টির নেতা ভুট্টো বলেছিল তাদের দল বাদ দিয়ে অধিবেশন বসলে পেশোয়ার থেকে করাচি পর্যন্ত জীবনযাত্রা নীরব নিথর করে দেওয়া হবে। ইয়াহিয়া তার হুমকির কাছে মাথা নত করে। আর তার ঘোষণার পরে বাংলাদেশ অগ্নিগর্ভ উত্তাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়।    প্রথমে অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিলেও ৭ মার্চের ভাষণেই বঙ্গবন্ধু সশস্ত্র সংগ্রামের ডাক দেন। ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার আহ্বান ছিল এরকম- ‘তোমাদের কাছে অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সবকিছুই- আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে।’ একই বক্তৃতায় তিনি হানাদার পাকিস্তানিদের প্রতি শান্তি প্রস্তাব দিয়েছেন; বলেছেন- ‘তোমরা আমার ভাই, তোমরা ব্যারাকে থাকো, কেউ তোমাদের কিছু বলবে না।’ এই প্রস্তাবে সাড়া না দিলে ‘আমরা ভাতে মারবো, আমরা পানিতে মারবো’ অর্থাৎ নিরস্ত্র প্রতিরোধের ডাকও দিয়েছেন তিনি। ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্লেষণ করে সকলেই স্বীকার করেছেন এটি ছিল স্বতঃস্ফূর্ত কিন্তু সুচিন্তিত এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এর প্রভাব ছিল প্রত্যক্ষ।  মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের ডাক ছিল বঙ্গবন্ধুর সাময়িক কৌশল; বিশ্বাস নয়। তার বিশ্বাস ছিল সুভাষচন্দ্রের সশস্ত্র যুদ্ধের রাজনৈতিক বিশ্বাস। লক্ষণীয় তার ভাষণজুড়ে রয়েছে সামরিক প্রসঙ্গ। পাকিস্তানিদের তিনি নির্দেশ দিয়েছেন- ক) সামরিক আইন বা মার্শাল ল প্রত্যাহার করতে হবে। খ) সামরিক বাহিনীর সমস্ত লোকদের ব্যারাকের ভিতর ঢুকতে হবে। গ) যে ভাইদের সেনাবাহিনী হত্যা করেছে তার তদন্ত করতে হবে। তার এই নির্দেশ ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে কর্মরত বাঙালিদের জন্য ‘গ্রিন সিগন্যাল’। এ জন্যই ২৫ মার্চের হানাদার বাহিনীর আক্রমণের পরে দ্রুত বাঙালি সেনা অফিসাররা প্রতিরোধ যুদ্ধে নেমে পড়েন। ৭ মার্চের পরেই ছাত্রজনতা এবং আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কর্মীরা সংগ্রামের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীদের ডামি রাইফেল নিয়ে সামরিক ট্রেনিং শুরুর সেই চিত্র সকলেরই মনে থাকার কথা। পূর্ববাংলা বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন ১৫ মার্চ কর্মীদের মধ্যে এক বিশেষ গোপন সার্কুলার প্রচার করেছিল। সেটির একটি অংশ- ‘জাতি আজ বুঝিতে পারিয়াছে যে, একমাত্র সশস্ত্র সংগ্রামেই সে স্বাধীনতা অর্জন করিতে পারে এবং সেইজন্য নিজস্ব উদ্যোগে সশস্ত্র হইবার চেষ্টা করিতেছে।... আমরা আজ এক যুদ্ধকালীন অবস্থার মধ্যে রহিয়াছি। এ যুদ্ধ জাতীয় যুদ্ধ। এই যুদ্ধে আমরা অংশগ্রহণ করিতেছি এবং জয়যুক্ত হইতে চাই।...‘  ১৮ মার্চ বিমানবাহিনীর সাবেক জওয়ানরা ঢাকায় শহীদ মিনারে এক সমাবেশ করে বাংলার মুক্তিসংগ্রামকে ভিয়েতনামের মুক্তিসংগ্রামের মতো রূপ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন। স্বাধীন বাংলা বিমানবাহিনী গঠনের লক্ষ্যে তাদের সমাবেশ ছিল ৭ মার্চের প্রত্যক্ষ ফল। ১৯ মার্চ সামরিক কর্তৃপক্ষ জয়দেবপুরে অবস্থানরত এক ব্যাটালিয়ন বাঙালি সৈন্যকে অস্ত্রসমর্পণের নির্দেশ দেয়, কিন্তু বাঙালি সৈন্যরা এ নির্দেশ মানতে অস্বীকার করেন। অন্যদিকে একইদিনে বঙ্গবন্ধু ও কর্নেল ওসমানী ঢাকায় এক গোপন বৈঠকে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বিভিন্ন খুঁটিনাটি দিক পর্যালোচনা করেছিলেন। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অনেক অফিসারও এসময় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে গোপনে দেখা করে নির্দেশাবলি গ্রহণ করেন।  ২০ মার্চ ছাত্র ইউনিয়নের ট্রেনিংপ্রাপ্ত শত শত গণবাহিনীর ঢাকার রাজপথে ডামি রাইফেল কাঁধে নিয়ে মার্চপাস্ট ছিল মানুষের কাছে নতুন উদ্যমের দৃষ্টান্ত। পাকিস্তানি দিবস হিসেবে পালন করে আসা ২৩ মার্চকে বঙ্গবন্ধু ‘লাহোর প্রস্তাব দিবস’ ঘোষণা করেন এবং দিনটি ছুটি ঘোষিত হয়। সেদিন পল্টন ময়দানে সকাল ৯টায় ‘জয় বাংলা বাহিনী’র কুচকাওয়াজ ও মহড়া অনুষ্ঠিত হয় এবং কুচকাওয়াজ শেষে সারাশহর ঘুরে মার্চ করে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে গিয়ে তার অভিবাদনের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়। আর এসব আয়োজনই সম্ভব হয়েছিল ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর প্রদীপ্ত ভাষণের পরে। সে জন্য কামান, মর্টার ও রাইফেল নিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ২৫ মার্চ বাঙালিদের ওপর অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়লে প্রাথমিক প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয়েছে তাদের। ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হয়ে ফার্মগেটে এসে পাকিরা যেমন বাধা পেয়েছে তেমনি পিলখানায় ইপিআর আর রাজারবাগে পুলিশের প্রতিরোধের মধ্যে পড়েছে। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু এই সংবাদ পেয়ে ওয়ারলেস, টেলিগ্রাফ ও টেলিফোনে ‘সমস্ত শক্তি জড়ো করে প্রতিরোধ আর স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুতি নিতে’ নির্দেশ দেন। বঙ্গবন্ধু ২৫ মার্চের রাতে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘এই-ই হয়তো তোমাদের জন্য আমার শেষ বাণী। আজকে থেকে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। যে যেখানেই থেকে থাকো, যে অবস্থায় থাকো, হাতে যার যা আছে, তাই দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে, যতদিন পর্যন্ত না দখলদার পাকিস্তানিদের শেষ সৈনিকটি বাংলাদেশের মাটি থেকে বহিষ্কৃত হচ্ছে এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হচ্ছে।’   বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণেই তিনি স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন। ২৫ মার্চ বললেন, ‘বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ'। বঙ্গবন্ধু ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা থেকে শুরু করে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পূর্বদিন পর্যন্ত দেশের গণমানুষের উন্নয়নের কথা বলেছেন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের পক্ষে ছিল তার রাষ্ট্রনীতি। তিনি সবসময় শোষিতের মুক্তি কামনা করেছেন। আজীবন সংগ্রামে যেমন তিনি অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি; তেমনি স্বাধীন দেশের সমাজকে সব অপশক্তির কবল থেকে মুক্ত করার জন্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিল তার বলিষ্ঠ ভূমিকা। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা এবং ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগের ৬ দফা কর্মসূচিতেও শোষণের বিরুদ্ধে অবস্থান ঘোষণা করা হয়। ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক ভাষণে বঙ্গবন্ধু সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির কথা বলেন। তিনি দীপ্তকণ্ঠে উচ্চারণ করেন, ‘আওয়ামী লীগের মাথা কেনার মতো ক্ষমতা পুঁজিপতিদের নেই।’ সদ্য স্বাধীন দেশে ১৯৭২ সালে ১৬ জানুয়ারি তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু ব্যবসায়ী জিনিসপত্রের দাম বাড়াবার চেষ্টা করছে।’ এসব মুনাফাখোর কালোবাজারীদের কঠোর ভাষায় হুঁশিয়ারি করে দেন তিনি। এ সময় তিনি শোষণহীন সমাজ গড়ার জন্য ধৈর্য ধরে কাজ করার কথাও বারবার উল্লেখ করেন। অন্যদিকে সাতচল্লিশের দেশভাগের আগেই শেখ মুজিবুর রহমান অসাম্প্রদায়িক চেতনায় স্নাত হন।  তিনি তার আত্মজীবনী লেখার ডিকটেশন দেয়ার সময় আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে বলেছিলেন, ‘দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন থেকে ফজলুল হক, ফজলুল হক থেকে সুভাষচন্দ্র, সুভাষচন্দ্র থেকে আবুল হাশিম-শরৎচন্দ্র (সুভাষ বসুর ভাই) এবং দেশভাগের পর ভাষা আন্দোলন ও ছয়দফা পর্যন্ত যদি বাংলার রাজনীতির গতিধারা বিশ্লেষণ করো, তাহলে দেখবে অসামপ্রদায়িক স্বাধীন বাংলার সুপ্ত চেতনার জন্ম সাতচল্লিশের বাংলাভাগের আগেই এবং সেই চেতনারই প্রথম বহিঃপ্রকাশ আটচল্লিশ সালেই অসাম্প্রদায়িক ভাষা আন্দোলনের মধ্যদিয়ে।’ আর ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধু। এভাবে ঐতিহাসিক কালানুক্রমিক ঘটনাধারা মনে রাখলে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব সহজেই অনুধাবন করা সম্ভব।  একাত্তরের ১৩ মার্চে কূটনৈতিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী কিসিঞ্জার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে এক স্মারকে জানিয়েছিলেন, ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দান থেকে নিবৃত্ত থাকাটা দৃশ্যত কৌশলগত। আর এই স্মারকেই কিসিঞ্জার বঙ্গবন্ধুর প্রতি একটা গভীর শ্রদ্ধাপূর্ণ মন্তব্য করেন। শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে তাঁর নেতিবাচক মন্তব্যগুলো অনেক বেশি প্রচার পেয়েছে কিন্তু যেটি পায়নি সেটি হলো কিসিঞ্জার নিজেই নিক্সনকে বলেছিলেন, শেখ মুজিব যেভাবে গান্ধীর মতো অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পরিচালনা করছেন, তাতে সেখানে দমন-পীড়ন চালানোর যথার্থতা দেওয়া কঠিন। কিসিঞ্জারের নিজের ভাষায়, ...রহমান হ্যাজ এমবার্কড অন এ গান্ধিয়ান টাইপ নন-ভায়োলেন্ট নন-কো-অপারেশন ক্যাম্পেইন হুইচ মেকস ইট হার্ডার টু জাস্টিফাই রিপ্রেশন। ১ থেকে ৭ মার্চ-বিষয়ক নথির একটি পৃষ্ঠা ৭ মার্চের ভাষণ সম্পর্কে কিসিঞ্জারের ঘনিষ্ঠ সহকারী জোসেফ সিসকো ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ‘সব ইঙ্গিত স্পষ্ট করেছে যে ৭ মার্চে শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবেন এবং সম্ভবত সেটা হবে স্বাধীনতার সমতুল্য।’ আগামী প্রজন্ম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সামগ্রিক ইতিহাসের পটভূমিতে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর ৭ মার্চের ভাষণে উল্লিখিত স্বাধীনতার তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস। কারণ পৃথিবীর কোথাও এ রকম ভাষণ শোনা যায়নি।  সেদিনের রেসকোর্স ময়দান ও বর্তমানের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ৭ মার্চের ভাষণটিকে কেন্দ্র করে নির্মলেন্দু গুণের ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো’ কবিতার পঙ্‌ক্তিমালায় যথার্থই উপস্থাপিত হয়েছে- ‘লাখ লাখ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে/ ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে।’ দশ লাখেরও বেশি মানুষের সেই সমাবেশ মানব সভ্যতার ইতিহাসের বিরল ঘটনা। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে জয়ী হয়ে দীর্ঘদিনের শোষণ বঞ্চনা থেকে বঙ্গবন্ধু যখন জনগণের মুক্তির স্বপ্নে বিভোর ঠিক তখনই পাকিস্তানি শাসকচক্র ষড়যন্ত্র করে ১ মার্চ ঘোষণা দিয়ে ৩ মার্চের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করে। নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী ক্ষমতা হস্তান্তর করলে ভুট্টোদের বঙ্গবন্ধুর কর্তৃত্ব মেনে নিতে হতো। সেটা না মানার জন্যই পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা ভুট্টো বলেছিল তাদের দল বাদ দিয়ে অধিবেশন বসলে পেশোয়ার থেকে করাচি পর্যন্ত জীবনযাত্রা নীরব নিথর করে দেওয়া হবে।  ইয়াহিয়া তার হুমকির কাছে মাথা নত করে। আর তার ঘোষণার পরে বাংলাদেশ অগ্নিগর্ভ উত্তাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ‘জাগো জাগো বাঙালি জাগো’, ‘পদ্মা- মেঘনা-যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো সোনার বাংলা মুক্ত করো’, ‘পিণ্ডি না ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা’, ‘পাঞ্জাব না বাংলা, বাংলা বাংলা’, ‘ভুট্টোর মুখে লাথি মারো বাংলাদেশ স্বাধীন করো’- এসব স্লোগান কণ্ঠে নিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশ তখন মিছিলের সমুদ্র। বঙ্গবন্ধু জানান বিনা চ্যালেঞ্জে তিনি কোনো কিছুই ছাড়বেন না। ছয়দফার প্রশ্নে আপস না করারও ঘোষণা আসে। ১ থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল চলতে থাকে।  বঙ্গবন্ধুর আদেশে ছাত্রলীগ আর ডাকসুর সমন্বয়ে ‘স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’গঠিত হয়। চলমান অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। গণজাগরণের এই পরিস্থিতিতে ৭ মার্চ ছিল স্মরণীয় দিন। ৭ মার্চের ভাষণের মধ্যে কলকাতার অধুনালুপ্ত দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার এককালের সম্পাদক বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় দেখেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা এবং উপমহাদেশের দুটি শক্তিশালী রাজনৈতিক ধারার দর্শনের প্রভাব অর্থাৎ গান্ধীজির নিরস্ত্র নৈতিক যুদ্ধের আহ্বান এবং নেতাজী সুভাষচন্দ্রের সশস্ত্র সংগ্রামের রাজনৈতিক দর্শন। এ ছাড়া স্বাধীনতা যুদ্ধের পরবর্তী ধাপেরও নির্দেশ রয়েছে বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণে। উপরন্তু ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বাক্যটি সারা দুনিয়ার নির্যাতিত মানুষের কাছে মুক্তিমন্ত্রতুল্য। খ্যাতিমান গবেষকের মন্তব্য, ‘বাঙালির মুক্তির সনদ ছিল এই ভাষণটি। এই দিনই রাষ্ট্রের ভিত্তি তৈরি হয়ে যায়। পাকিস্তানকে বাঙালিরা প্রত্যাখ্যান করে।’ ৭ মার্চ নিয়ে রচিত হয়েছে অনেকগুলো কবিতা। ‘রাজনীতির কবি’র ৭ মার্চের ভাষণই একটি মহাকবিতা। পাকিস্তানের অপশাসনের বিরুদ্ধে তার জ্বালাময়ী ভাষণ জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছে বারবার, ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬৬-এর ছয় দফা, ৬৯-এর গণআন্দোলন সংঘটিত হয় তার নেতৃত্বে। ৭১-এর প্রথম মাস জানুয়ারি থেকে তিনি মুক্তিকামী মানুষের শৃঙ্খল মোচনের শপথে উদ্দীপিত করেন সাধারণ মানুষকে- রাজনৈতিক কর্মী ও মুক্তিযোদ্ধা এবং বুদ্ধিজীবী মহলের প্রত্যেককে; কবি-শিল্পী-সাহিত্যিক নির্বিশেষ। বাঙালির নিজের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে চিনতে শেখা তার মাধ্যমেই। ৭ মার্চে ভাষণের আগে ‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়া হয়েছিল। এসবই আছে কবিতার মধ্যে। বঙ্গবন্ধুর আত্মদানকে অর্থবহ করার জন্যই এই কবিতাবলি। তার রক্তের ঋণ শোধ হবে না কিন্তু তার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় জেগে থাকবে এসব কবিতার মধ্য দিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের সময় লিখিত জসীম উদ্দীনের ‘বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক কবিতায় এই ঐতিহাসিক ভাষণের কথা বলা হয়েছে। বিশেষত বঙ্গবন্ধুর একাত্তরের মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া অসহযোগ আন্দোলনের বিষয়টিকে কবি তুলে ধরেছেন দীর্ঘ কবিতাটির একটি অংশে- ‘তোমার হুকুমে রেল-জাহাজের চাকা যে চলেনি আর হাইকোর্টের বন্ধ দরজা খুলিবে সাধ্য কার! . . .         . . .            . . . তোমার হুকুমে তুচ্ছ করিয়া শাসন-ত্রাসন ভয়, আমরা বাঙালি মৃত্যুর পথে চলেছি আনিতে জয়।’ কবি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের গুণাবলির প্রশংসা করেছেন। তার আপসহীন অবস্থান ও মানুষের আস্থা-ভরসার নেতা হিসেবে মুক্তিসংগ্রামে বিজয়ের চিত্রও তুলে ধরেছেন তিনি। ৭ মার্চের ভাষণই মানুষকে নতুন এক স্বপ্নে আন্দোলিত করে। জাগরণ ও শিহরণে উদ্দীপিত মানুষ মুক্তির স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে উৎসাহী হয়। জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান বঙ্গবন্ধু। নির্মলেন্দু গুণের ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’, ওমর আলীর ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’, সানাউল হকের ‘সাতই মার্চ একাত্তর’, আল মাহমুদের ‘নিশিডাক’ বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণকেন্দ্রিক কবিতা। নির্মলেন্দুর কবিতার একটি অংশ- ‘শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন। তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল, হৃদয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার সকল দুয়ার খোলা। কে রোধে তাহার বজ্রকণ্ঠ বাণী? গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি; ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের।’ কবির বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে ৭ই মার্চের ভাষণই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। ১৫ আগস্টের পরে জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে গণ্য করার প্রচেষ্টা নিরর্থক - এই কবিতাই তার সাক্ষ্য। আল মাহমুদের কবিতার অংশ বিশেষ- ‘তাঁর আহ্বান ছিল নিশিডাকের শিস্ তোলা তীব্র বাঁশীর মত। প্রতিটি মানুষের রক্তবাহী শিরায় কাঁপন ধরিয়ে দিয়ে তা বাজত . . . সে যখন বলল, ‘ভাইসব’। অমনি অরণ্যের এলোমেলো গাছেরাও সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে গেল  সে যখন ডাকলো, ‘ভাইয়েরা আমার’।. . . অসীম সাহার কবিতায় এভাবে প্রকাশিত ৭ই মার্চ-  ‘তুমি হাত উত্তোলিত করলেই হিমালয় মাথা নিচু করে তোমার পায়ের কাছে এসে আনত প্রজার মতো জানায় কুর্নিশ।’  এ ছাড়া শামসুল আলমের ‘এবারের সংগ্রাম... স্বাধীনতার সংগ্রাম’, তাহমীদুল ইসলামের ‘সমুদ্রের অর্কেস্ট্রাঃ ৭ মার্চ ১৯৭১ খৃস্টাব্দ’ প্রভৃতি কবিতা একই প্রসঙ্গে রচিত। শামসুল আলমের কবিতায় ৭ই মার্চের ভাষণকে ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।    ‘স্বাধীনতার কবি’ শামসুর রাহমানের একাধিক কবিতায় বঙ্গবন্ধু রূপক-প্রতীকে আবার কখনো সরাসরি আত্মপ্রকাশ করেছে। ‘ধন্য সেই পুরুষ’, ‘যাঁর মাথায় ইতিহাসের জ্যোতির্বলয়’, ‘ইলেকট্রার গান’, ‘তোমারই পদধ্বনি’ প্রধান কবিতা। ‘ইলেকট্রার গান’ বেশ ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত বাঙলাদেশের সাথে: ‘বিদেশী মাটিতে ঝরে নি রক্ত; নিজ বাসভূমে,/ নিজবাসগৃহে নিরস্ত্র তাঁকে সহসা হেনেছে ওরা।’ স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডকে। কিন্তু কবিতাটি আদ্যন্ত গীতিময়, জাতিসত্তার বাণীবহ মহাকাব্যিক চারিত্র এর নয়। তবে এ কবিতায় এ্যাগামেননের (বঙ্গবন্ধু) হত্যাকাণ্ডের পর নিহত পিতার জন্য কন্যা ইলেকট্রার(শেখ হাসিনা) শোক সার্বজনীন হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে ১৫ আগস্টের পর বঙ্গবন্ধুর জন্য হাহাকার ব্যক্ত হয়েছে। এ কবিতায় বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়াকে নিয়তি বলে ধরে নিতে দেখা যায়। শোকে কবি লুকিয়ে বিলাপ করেন, তাতে মন সান্ত্বনা মানে না। হত্যাকারীরা নির্ভয়ে ঘুরে বেড়ায় আর কবির ওপর চোখ রাখে। তবুও কবি অন্তরে শোক লালন করে যাবেন। ‘ধন্য সেই পুরুষ’ কবিতায় উন্মোচিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর মহিমা। তাঁর নেতৃত্ব ও মানুষের জন্য ব্রতের সমুজ্জ্বল চিত্রণ এখানে অনন্য। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত এই কবিতাটি আমার মতে শামসুর রাহমানের শ্রেষ্ঠ কবিতা। কবির বিভিন্ন কবিতার কিছু কিছু অংশ-   ক) ‘ধন্য সেই পুরুষ, যার নামের ওপর পতাকার মতো      দুলতে থাকে স্বাধীনতা,      ধন্য সেই পুরুষ, যার নামের ওপর ঝরে      মুক্তিযোদ্ধাদের জয়ধ্বনি।’ খ) ‘যতদিন আমি এই পৃথিবীর প্রত্যহ ভোরে     মেলব দুচোখ, দেখব নিয়ত রৌদ্র-ছায়ার খেলা,      যতদিন পাব বাতাসের চুমো, দেখব তরুণ       হরিণের লাফ, ততদিন আমি লালন করব শোক। . . .              . . .        . . .      নিহত জনক, এ্যাগামেমনন, কবরে শায়িত আজ।’ গ) ‘তারই কি আশ্চর্য প্রতিদান     যিশুর ধরনে পেয়ে গেলে তুমি। তবে ইতিহাস     চিরকাল মিথ্যার কুহক ছিঁড়ে গাইব সত্যের জয়গান।’ কবিতাকে শেখ মুজিবের সূর্যমুখী ভাষণের মতো বলেছেন কবি। মুজিবের নাম জুঁইয়ের মতো, কৃষকের সানকিতে ফোটার কথাও বলেছেন তিনি। অন্যদিকে শামসুর রাহমানের মতো যিশুর প্রতীকটি মুহম্মদ নূরুল হুদার কবিতায়ও উচ্চারিত হয়েছে- ‘ফুরাবে না গঙ্গাধারা, ফুরাবে না বঙ্গভাষী কবিদের নিব ফুরাবে না এই রক্ত, পিতা, তুমি যিসাস মুজিব।’   বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত কবিতায় পিতৃ-ইমেজ ব্যবহার সম্পর্কে কবীর চৌধুরী বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু যখন কবিতায় এসেছেন তখন স্বাভাবিকভাবেই জনক বা পিতার অনুষঙ্গ বারবার কবিদের লেখায় ব্যবহৃত হয়েছে। পিতার ইমেজ সহজভাবে কবিদের লেখনীতে উঠে এসেছে, যেমনভাবে জাতির জনকের শিরোপা তার মাথায় কৃতজ্ঞ জাতি স্বতঃস্ফূর্তভাবে পরিয়ে দিয়েছে।’ পিতৃইমেজ আছে মহাদেব সাহার ‘তোমার হত্যাকারী’ এবং শিহাব সরকারের ‘পিতা’ কবিতায়। শোকাভিভূত কবিদের চেতনায় এভাবেই পিতৃহত্যার প্রতিশোধ স্পৃহা জেগে ওঠে। এজন্য আসাদ চৌধুরী ‘এ কেমন জন্মদিনে’ বলেন - ‘ যে ঘাতক তোমার সুবিশাল ছায়াতলে  থেকে কেড়ে নিলো তোমার নিশ্বাস- শিশুঘাতী, নারীঘাতী ঘাতকেরে যে করিবে ক্ষমা তার ক্ষমা নাই- আমরণ অনুগত, তোমারই অবাধ্য হবে আজ, পিতা, অনুমতি দাও।’ মূলত বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত কবিতায় বাঙালি জাতির ভাষার স্মৃতি উচ্চকিত হয়েছে। তাঁর মতো মহাপুরুষকে নিয়ে রচিত সৃজনকলায় কবিরা সমাজ ও জীবনের প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে বাধ্য। কারণ কবিতার মাধ্যমে কবি একাত্মতার বাণী প্রচার করেন। মানুষের সঙ্গে মানুষের একাত্ম হওয়ার এই বাণী অসংখ্য কবির অজস্র চরণে কখনো শেখ মুজিব, কখনো বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষরিত হয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে। স্বাধীনতার মহাকাব্য ৭ মার্চের ভাষণ শিল্প-সাহিত্যের অনন্য উদ্দীপনা। কারণ এই ভাষণেই স্বাধীনতার ঘোষণা দেদীপ্যমান। (ভাষা ও বানানরীতি লেখকের নিজস্ব) ড. মিল্টন বিশ্বাস: বঙ্গবন্ধু গবেষক, অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ  
০৯ মার্চ, ২০২৪

বহুভাষার সংস্কৃতির মেলবন্ধন শান্তির পৃথিবী গড়বে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বহুভাষার সংস্কৃতির মেলবন্ধন পৃথিবীতে শান্তি, সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) একুশে ফেব্রুয়ারি দুপুরে রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে 'বহুভাষায় শিক্ষা : শেখা এবং প্রজন্মান্তরের শিক্ষার সোপান' প্রতিপাদ্য নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী এ কথা বলেন। বক্তৃতার শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে মন্ত্রী ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষার দাবিতে শহিদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরসহ  সকল ভাষাশহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।  বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের ইতিহাস তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তখনকার তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান সেই সময় ভাষার দাবিতে আন্দোলনের কারণেই জেলে বন্দি ছিলেন। জেলখানায় বসে সহযোগীদের সঙ্গে সভা করে তিনি সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন ২১ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ দিবস পালিত হবে। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে জাতিসংঘে স্বীকৃত হওয়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ড. হাছান বলেন, কানাডা প্রবাসী দুজন বাঙালি রফিক ও সালামের উদ্যোগ এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ত্বরিৎ সিদ্ধান্তে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাঠানোর পর ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর এক ঘোষণায় ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়।  এর মধ্য দিয়ে বাঙালির সেই আত্মত্যাগের দিনটি বিশ্বের প্রতিটি মানুষের মায়ের ভাষার অধিকার রক্ষার দিন হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে এবং মানুষ  বহুভাষাকে সযত্ন ধারণের প্রেরণা পেয়েছে, বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।  পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, সামুদ্রিক বিষয় ইউনিট সচিব রিয়ার এডমিরাল (অব:) মো. খুরশেদ আলম, অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব ড. মুহ: নজরুল ইসলামসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ ও বিদেশি কূটনীতিক এবং তাদের পরিবারবর্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্র সচিব তার বক্তৃতায় মাতৃভাষা দিবসটিকে বিভিন্ন ভাষাভাষীর সম্প্রীতির দিন হিসেবে বর্ণনা করেন। বহুভাষা নির্ভর এ অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা অণুবিভাগের পরিচালক সামিয়া ইসরাত রনির পরিচালনায় কর্মকর্তা-শিল্পীবৃন্দের পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া, রাশিয়া ও ফ্রান্স দূতাবাসের শিল্পীরা গান ও কবিতাসহ নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপস্থাপন করে। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি গানটি বাংলা, পর্তুগিজ ও আররিতে পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়।
২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
X