প্রাথমিকে নিয়োগ পরীক্ষার তৃতীয় ধাপেও জালিয়াতি
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে প্রথম দুই ধাপে প্রশ্নফাঁস ও ডিজিটাল ডিভাইস জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছিল। সেজন্য তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা আয়োজনে সতর্ক হয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ডিজিটাল ডিভাইস জালিয়াতি রোধে পরীক্ষামূলক (পাইলটিং) হিসেবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) উদ্ভাবিত ডিভাইস পাঁচটি কেন্দ্রে ব্যবহার করা হয়েছিল; কিন্তু এই ধাপেও সারা দেশে সুষ্ঠু পরিবেশে পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পরীক্ষার্থী বোন ও তার ভাই এবং কক্সবাজার সিটি কলেজকেন্দ্র থেকে দুজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে মোবাইল ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস। ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জেলার পৌর ডিগ্রি কলেজকেন্দ্রে গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হয়। এ সময় কেন্দ্রের ১০১নং কক্ষে পরীক্ষার্থী রিনা আক্তার পরীক্ষা শুরুর পরও প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে উত্তরপত্রে কোনো কিছু না লিখে বসে থাকেন। কেন্দ্রে ডিউটিরত কেন্দ্র পরিদর্শকের সন্দেহ হলে তার দেহ তল্লাশি করে বিশেষ কায়দায় কানের ভেতরে লুকিয়ে রাখা ছোট একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি তিনি কলেজের অধ্যক্ষকে জানালে অধ্যক্ষ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সেলিম শেখকে খবর দেন। পরবর্তী সময়ে ইউএনও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আটক পরীক্ষার্থী রিনা আক্তার জেলার বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের টুকচানপুর এলাকার আব্দুল মালেকের মেয়ে। তার দেওয়া তথ্যে তার ভাই ভাই আব্দুল জলিলকেও আটক করা হয়। ইউএনও মোহাম্মদ সেলিম শেখ জানান, এটি একটি বিশাল চক্র। ওই পরীক্ষার্থী তার ভাইয়ের মাধ্যমে ডিভাইসটি সংগ্রহ করে। পরে তার ভাইকেও আটক করা হয়। এ ঘটনায় একটি মামলা করা হয়েছে। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত সবাইকে আটক করা হবে। কক্সবাজার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইল ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে পরীক্ষা দিতে এসে কক্সবাজার সিটি কলেজকেন্দ্র থেকে আটক হয়েছেন দুই পরীক্ষার্থী। তারা হলেন সদর উপজেলার খুরুশকুল তেতৈয়া এলাকার নুরুল হকের ছেলে বশির আহমেদ এবং চকরিয়া চিরিঙ্গা ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা শামসুল আলমের ছেলে তোহিদুল ইসলাম। জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন কেন্দ্র সচিব কলেজ অধ্যক্ষ ক্যথিং অং। কক্সবাজার মডেল থানার ওসি মো. রাকিবুজ্জামান বলেন, আটক দুজন আমাদের হেফাজতে রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলার প্রস্তুতি চলছে।
৩০ মার্চ, ২০২৪

প্রাথমিকে নিয়োগ পরীক্ষায় গ্রেপ্তার প্রার্থীও পাস!
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে প্রথম পর্বের পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার মো. রফিকুল ইসলাম। অথচ তাকে পাস দেখিয়ে মৌখিক পরীক্ষা জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। ৪১২৩৫৯১ রোল নম্বরধারী ওই প্রার্থীর ওএমআর শিটে সেট কোড ছিল ‘যমুনা’। তার বাবার নাম মো. শামসুল হুদা। গত ২০ ডিসেম্বর রাতে প্রকাশিত লিখিত পরীক্ষার ফলে নির্বাচিতদের তালিকায় রফিকুল ইসলামের রোল নম্বর থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকে। তিনি ৮ ডিসেম্বর পরীক্ষার দিন সকালে গ্রেপ্তার হন। রফিকুল ইসলামের প্রবেশপত্র, ব্যবহৃত ডিভাইসের তথ্য এবং গ্রেপ্তারের দিনের ছবি ও ভিডিও কালবেলার হাতে এসেছে। পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া খবর, ছবি ও ভিডিও যাচাই করেছে কালবেলা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলে ওই প্রার্থীর রোল নম্বর দেখা গেছে। এ ছাড়া এলাকায় খোঁজ নিয়েও বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে। গত ৮ ডিসেম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে প্রথম পর্বের (বরিশাল, সিলেট ও রংপুর বিভাগ) পরীক্ষায় ব্যাপক জালিয়াতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। প্রক্সি, প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অন্তত দেড়শ জনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের মধ্যে চাকরিপ্রার্থীর পাশাপাশি জালিয়াতিতে সহযোগিতাকারীও ছিলেন। তাদের নামে মামলাও হয়েছে। জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় বি-টু এক্স ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রশ্নপত্রের উত্তর বাইরে থেকে দেওয়ার চুক্তি করে একটি চক্র। এ তথ্য পাওয়ার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে জালিয়াতির চেষ্টা করা চাকরিপ্রার্থী ও সহযোগীদের গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার হওয়াদের মধ্যে ছিলেন রফিকুল ইসলামও। জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পরও কীভাবে তিনি উত্তীর্ণ হলেন জানতে চাইলে লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার রায় চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা জানি না ওই প্রার্থী পাস করেছে কি না। কারণ তার রোল আমাদের জানা নেই। অনেকেই তো বহিষ্কার হয়েছে। সবার রোল নাম্বার আমাদের মনে রাখা সম্ভব না। অধিদপ্তর থেকে আনুষ্ঠানিক ফল পাঠালে রোল নাম্বার মিলিয়ে দেখব।’ এ বিষয়ে জানতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে একাধিকবার কল করলেও তিনি সাড়া দেননি। অধিদপ্তরের গবেষণা কর্মকর্তা (নিয়োগ) এস এম মাহবুব আলম কালবেলাকে বলেন, ‘আমাদের কাছে এমন কোনো তথ্য নেই। কেউ অভিযোগ করলে আমরা ভেবে দেখব।’ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ কালবেলাকে বলেন, ‘নিয়োগ কমিটি এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবে।’ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) শাহ রেজওয়ান হায়াতের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বুয়েটের কারিগরি টিম দক্ষতার সঙ্গে এই ফল প্রস্তুতের কাজ করে থাকে। এমন ভুল হওয়ার কথা নয়। তারপরও আমরা বিষয়টি দেখব।’
২৩ ডিসেম্বর, ২০২৩

প্রাথমিকে নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ নিয়ে গণশিক্ষা সচিবের বার্তা
সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের ৮ হাজারের বেশি পদ শূন্য। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পর প্রায় সাড়ে ১১ লাখ আবেদন জমা পড়েছে। তবে, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে চলতি বছর নিয়োগ পরীক্ষা হবে কি না, তা নিয়ে চাকরিপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছে শঙ্কা। সম্প্রতি এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ গণমাধ্যমকে জানান, চলতি বছরই সহকারী শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা আয়োজন করতে চাইছি। নিয়োগ পরীক্ষার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়, বুয়েটসহ অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করেই পরীক্ষার তারিখ চূড়ান্ত করা হবে। জানা যায়, বর্তমানে- সারাদেশে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের ৮ হাজারের বেশি পদ শূন্য রয়েছে। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপে রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে আবেদন জমা পড়ে ৩ লাখ ৬০ হাজার ৭০০টি। দ্বিতীয় ধাপে ২৩ মার্চ ময়মনসিংহ, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে আবেদন জমা পড়ে ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৪৩৮টি। গত ১৮ জুন তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এ ধাপে আবেদন জমা পড়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজারের কিছু বেশি। আগের মতো কোটাপদ্ধতি মেনে নিয়োগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা-২০১৯ অনুসারে আগের মতো কোটাপদ্ধতি মেনে এবারও সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা-২০১৯ অনুসারে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগ বিধিমালায় কোটার বিষয়ে যেভাবে বলা আছে, তা অনুসরণ করে প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হবে। নিয়োগ বিধিমালা-২০১৯–এ বলা হয়েছে, সহকারী শিক্ষক পদে ৬০ শতাংশ নারী কোটা, ২০ শতাংশ পোষ্য কোটা ও ২০ শতাংশ পুরুষ কোটা। এই তিন কোটার প্রতিটি ক্যাটাগরিতে অবশ্যই ২০ শতাংশ বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রিধারী প্রার্থীদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। তবে এভাবে তিন কোটায় বিজ্ঞান বিষয়ের যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া যাবে। নারী, পোষ্য ও পুরুষ কোটা পূরণের ক্ষেত্রে আপাতত বলবৎ অন্য কোনো বিধি বা সরকারি সিদ্ধান্তে কোনো বিশেষ শ্রেণির কোটা নির্ধারিত থাকলে সেই কোটাসংক্রান্ত বিধান অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে।  
১২ আগস্ট, ২০২৩
X