মধ্যপ্রাচ্যে বন্ধু বাড়ছে ইরানের
মধ্যপ্রাচ্যে আরও একবার গোল দিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইব্রাহিম রাইসিকে হারিয়ে ইরান সরকার যখন শোকের সাগরে ভাসছে, তখন তেহরানের জন্য সুখবর এনে দিয়েছে মস্কো। মধ্যপ্রাচ্যে অপ্রত্যাশিত এক বন্ধু পেতে যাচ্ছে ইরান। আর পেছনের কারিগর রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। অথচ কয়েক বছর আগে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল ওই দেশ। ২০১৬ সালে রিয়াদে শিয়া ধর্মীয় নেতা নিমর আল নিমরকে মৃত্যুদণ্ড দেয় সৌদি আরব। এরপর একই বছর তেহরানে এবং মাশহাদে সৌদি দূতাবাস ও কনস্যুলেটে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক ছিন্ন হয়। এরই জের ধরে তেহরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বাহরাইন। দীর্ঘ আট বছর পর এখন ইরানের সঙ্গে আবারও সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে চায় মানামা প্রশাসন। সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে দেরি না করার ঘোষণা দেন বাহরাইনের বাদশাহ হামাদ। বাহরাইনের বাদশাহ হামাদ বলেন, ইরানের সঙ্গে আমাদের সমস্যা ছিল। কিন্তু এখন আর কোনো সমস্যা নেই। বৃহস্পতিবার মস্কোয় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বাদশাহ হামাদ। এর পরই এমন মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণে দেরি করার কোনো কারণ নেই। আমরা দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক স্বাভাবিকের চেষ্টা করছি। চলতি মাসে বাহরাইনে আরব লিগের ৩৩তম সামিট অনুষ্ঠিত হয়। ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে দুই রাষ্ট্র সমাধানের আলোচনা পুনরুজ্জীবিত করতে একটি আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করতে মানামার প্রতি আবেদন জানায় আরব লিগের সদস্য রাষ্ট্ররা। রাশিয়ার বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্সকে বাদশাহ হামাদ বলেন, এ সমস্যা সমাধানে আমরা সবার আগে রাশিয়ার সহায়তা চাই। গত বছরের মার্চে চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি আরব ও ইরান তাদের ভেঙে যাওয়া সম্পর্ক ফের জোড়া লাগায়। মধ্যপ্রাচ্যে পরিবর্তনের এমন হাওয়া বইতে শুরুর পর এটিকে স্বাগত জানায় বাহরাইন। ওই সময় বাহরাইনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, এ ধরনের চুক্তি মতবিরোধ দূর করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে। আর আলোচনা ও কূটনীতির মাধ্যমে আঞ্চলিক সংঘাত সমাপ্তির পথও তৈরি করবে। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে গত কয়েক বছরে অনেক পরিবর্তন এসেছে। ইসরায়েলের সঙ্গে যেমন আরব রাষ্ট্রগুলোর সম্পর্ক স্থাপনের পথ খুলেছে, তেমনি সংঘাতও বেড়েছে এই অঞ্চলে। এমতাবস্থায় কয়েক বছর আগে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে বাহরাইন। তবে নিজেদের চিরশত্রু ইরান যদি এবার বাহরাইনকে পাশে পায়, তাহলে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ‘বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে ইসরায়েল ও তার মিত্ররা’ : এদিকে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান স্বীকৃতি ইসরায়েল ও তার মিত্রদের বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে। বৃহস্পতিবার ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিলের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে হাকান ফিদান এ কথা বলেন। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন বাড়ছে। ক্রমবর্ধমানভাবে বিভিন্ন দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। বিশেষ করে ইউরোপে, ইসরায়েল এবং তার সমর্থকরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান ফিলিস্তিনকে তার ন্যায্য স্বীকৃতি পাওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে তিনি ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরব থাকার নীতি থেকে সরে এসে ইসরায়েলের বর্ণবাদী ও মৌলবাদী শাসন দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে। তাদের উচিত কূটনৈতিকভাবে ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগ করা এবং জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করা।
২৬ মে, ২০২৪

মধ্যপ্রাচ্যে বন্ধু বাড়ছে ইরানের, কী করবে ইসরায়েল
মধ্যপ্রাচ্যে আরও একবার গোল দিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইব্রাহিম রাইসিকে হারিয়ে ইরান সরকার যখন শোকের সাগরে ভাসছে, তখন তেহরানের জন্য সুখবর এনে দিয়েছে মস্কো। মধ্যপ্রাচ্যে অপ্রত্যাশিত এক বন্ধু পেতে যাচ্ছে ইরান। আর পেছনের কারিগর রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। অথচ কয়েক বছর আগে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল ওই দেশ। ২০১৬ সালে রিয়াদে শিয়া ধর্মীয় নেতা নিমর আল নিমরকে মৃত্যুদণ্ড দেয় সৌদি আরব। এরপর একই বছর তেহরানে এবং মাশহাদে সৌদি দূতাবাস ও কনস্যুলেটে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক ছিন্ন হয়। এরই জের ধরে তেহরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বাহরাইন। দীর্ঘ আট বছর পর এখন ইরানের সঙ্গে আবারও সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে চায় মানামা প্রশাসন। সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে দেরি না করার ঘোষণা দেন বাহরাইনের বাদশাহ হামাদ। বাহরাইনের বাদশাহ হামাদ বলেন, ইরানের সঙ্গে আমাদের সমস্যা ছিল। কিন্তু এখন আর কোনো সমস্যা নেই। বৃহস্পতিবার মস্কোয় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বাদশাহ হামাদ। এরপরই এমন মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণে দেরি করার কোনো কারণ নেই। আমরা দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক স্বাভাবিকের চেষ্টা করছি। চলতি মাসে বাহরাইনে আরব লিগের ৩৩তম সামিট অনুষ্ঠিত হয়। ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে দুই রাষ্ট্র সমাধানের আলোচনা পুনরুজ্জীবিত করতে একটি আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করতে মানামার প্রতি আবেদন জানায় আরব লিগের সদস্য রাষ্ট্ররা। রাশিয়ার বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্সকে বাদশাহ হামাদ বলেন, এই সমস্যা সমাধানে আমরা সবার আগে রাশিয়ার সহায়তা চাই। গেল বছরের মার্চে চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি আরব ও ইরান তাদের ভেঙে যাওয়া সম্পর্ক পুনরায় জোড়া লাগায়। মধ্যপ্রাচ্যে পরিবর্তনের এমন হাওয়া বইতে শুরুর পর এটিকে স্বাগত জানায় বাহরাইন। ওই সময় বাহরাইনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, এ ধরনের চুক্তি মতবিরোধ দূর করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে। আর আলোচনা ও কূটনীতির মাধ্যমে আঞ্চলিক সংঘাত সমাপ্তির পথও তৈরি করবে। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে গেল কয়েক বছরে অনেক পরিবর্তন এসেছে। ইসরায়েলের সঙ্গে যেমন আরব রাষ্ট্রগুলোর সম্পর্ক স্থাপনের পথ খুলেছে, তেমনি সংঘাতও বেড়েছে এই অঞ্চলে। এমতাবস্থায় কয়েক বছর আগে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে বাহরাইন। তবে নিজেদের চিরশত্রু ইরান যদি এবার বাহরাইনকে পাশে পায়, তাহলে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
২৫ মে, ২০২৪

এমপি আনারকে কলকাতায় ডেকে নেন বন্ধু শাহীনই
ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার পরিবারের কাছে বলে গিয়েছিলেন, চিকিৎসার জন্য কলকাতা যাচ্ছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন, আনার কলকাতায় গিয়েছিলেন তার পুরোনো বন্ধু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আক্তারুজ্জামান শাহীনের আহ্বানে। কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জীবনী গার্ডেনের যে ফ্ল্যাটে হত্যাকাণ্ড ঘটে, সেখানেই ব্যবসায়িক বৈঠক হওয়ার কথা ছিল তাদের। ওই বৈঠকে যোগ দিতে ১২ মে দর্শনা স্থলবন্দর হয়ে কলকাতায় যান এমপি আনার। এদিকে তাকে হত্যার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে এর দুদিন আগেই শাহীন দেশে ফিরে আসেন। তিনি যে দেশে ফিরে এসেছেন, তা এমপি আনারের কাছে গোপন রাখা হয়েছিল। তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্বর্ণ চোরাচালানের ২০০ কোটি টাকা নিয়ে শাহীন ও আনারের দ্বন্দ্ব ছিল। এই দ্বন্দ্ব থেকেই তিন মাস ধরে এমপি আনারকে হত্যার ছক আঁকা হয়। ছক অনুযায়ী আনারকে ব্যবসায়িক মিটিংয়ের কথা বলে ওই ফ্ল্যাটে নিয়ে হত্যা করা হয়। তবে আনারকে ফ্ল্যাটে নেওয়ার জন্য কোনো নারীকে দিয়ে ‘হানি ট্র্যাপ’ পাতা হয়েছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এমপি আনার হত্যার খবরটি প্রকাশ হওয়ার আগেই দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান শাহীন। তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব না হলেও হত্যার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। গ্রেপ্তাররা হলেন শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ সাইদ, তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমান। ডিবি জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৫ মিনিটে শিমুল ও তানভীরকে সাভারের লুটেরচর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্যে দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে উত্তরা থেকে শিলাস্তি রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল শুক্রবার তাদের ঢাকা মহানগর আদালতে হাজির করা হলে প্রত্যেকের ৮ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক। হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে ডিবি। আনার হত্যার সঙ্গে শাহীনের পাশাপাশি আরও কয়েকজন জড়িত থাকার ব্যাপারে সন্দেহ করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। এই তালিকায় সাবেক একজন সংসদ সদস্য, বড় একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ীর নামও রয়েছে। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, এমপি আনারের প্রভাবে সন্দেহভাজন এই ব্যক্তিরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। এদিকে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত জিহাদ হাওলাদার নামে এক কসাইকে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতা সিআইডি। তাকে ১২ দিন হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতের আদালত। ভারতের মুম্বাই থেকে এই বাংলাদেশি কসাইকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি ওয়ারী বিভাগের সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান জানান, আনারের সঙ্গে শাহীনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে। ব্যবসায়িক লেনদেনসহ কিছু বিষয় নিয়ে আনারের ওপর শাহীনের ক্ষোভ ছিল। এ ছাড়া গ্রেপ্তার মূল ঘাতক শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে আনারের মতাদর্শের দ্বন্দ্ব ছিল। শিমুল ছিলেন এক সময়ে খুলনার শীর্ষ চরমপন্থি নেতা। শাহীন ও শিমুল মিলে আনারকে কলকাতায় নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন। শাহীন অন্যদের নিয়ে ৩০ এপ্রিল থেকে কলকাতার নিউটাউনের একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন। ডিবির এই কর্মকর্তা জানান, পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১০ মে দেশে ফিরে আসেন শাহীন, যা এমপি আনার জানতেন না। আসার সময় শাহীন পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী শিমুল ভূঁইয়াকে দায়িত্ব দেন—কোনোভাবেই যেন কাজটা মিস না হয় এবং কোনো প্রমাণ না থাকে। ১২ তারিখ কলকাতায় যাওয়ার পর গোপাল নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী বন্ধুর বাসায় ছিলেন আনার। পরদিন শাহীনের ভাড়া করা ফ্ল্যাটে যান এমপি। সেখানেই শিমুল, তানভীর, শিলাস্তিসহ অন্যরা মিলে এমপি আনারকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। হত্যার পর লাশের মাংস ও হাড় আলাদা করে ট্রলি ব্যাগে ভরে বাসার বাইরে নিয়ে গুম করে ফেলে তারা। কয়েকদিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার খবর পরিবার থেকে জানানোর পর এমপি আনারের বন্ধু গোপাল ১৭ মে বরাহনগর থানায় জিডি করেন। এমপি আনারের পরিবার থেকেও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো হয়। আনারের সন্ধান করতে গিয়ে ওই অভিজাত ফ্ল্যাটের সন্ধান পায় পুলিশ। মরদেহের খণ্ডিত অংশ উদ্ধারে কলকাতা পুলিশ একের পর এক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার রাতেও কলকাতা ও উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার কিছু এলাকায় অভিযান চালানো হয়। কসাই জিহাদকে গ্রেপ্তারের পর লাশ উদ্ধারের এ অভিযান চালায় সিআইডি। দুই মাস আগে জিহাদকে কলকাতায় নেন শাহীন জিহাদ হাওলাদারকে গত বৃহস্পতিবার ভারতের মুম্বাই থেকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তার বাড়ি খুলনার দীঘলিয়ায়। পেশায় কসাই জিহাদকে দিই মাস আগে শাহীন কলকাতায় নিয়ে যান বলে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি। এমপি আনারকে শ্বাসরোধে হত্যার পর তার মরদেহ গুম করার জন্য টুকরো করতে কসাই জিহাদকে ব্যবহার করে হত্যাকারীরা। শাহীনের নির্দেশে পাঁচজন মিলে আনারকে হত্যার বিষয়টি পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির কাছে স্বীকার করেছেন জিহাদ। সিআইডি জানিয়েছে, নিহত এমপি আনারের পরিচয় যাতে বোঝা না যায়, সেজন্য হত্যাকারীরা তার শরীরের হাড় ও মাংস আলাদা করে ফেলে। এরপর হাড় ও মাংস টুকরা টুকরা করে কেটে বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেয়। এদিকে ঢাকায় গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ডিবির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, এমপি আনারকে হত্যার পর মরদেহ কেটে টুকরো করার পাশাপাশি হাড় থেকে মাংস কেটে আলাদা করা হয়। এরপর মাংসের টুকরাগুলো কিমা করে টয়লেটে ফেলে ফ্লাশ টানা হয়। মাথার খুলি, হাড়সহ দেহের অন্যান্য অংশ ট্রলি ব্যাগে ভরে বাইরে ফেলে আসে খুনিরা। খণ্ডিত অংশ উদ্ধারে দুদিন ধরে তল্লাশি কসাই জিহাদকে মুম্বাই থেকে গ্রেপ্তারের পর মরদেহের খণ্ডিত অংশ উদ্ধারে বৃহস্পতিবার রাত থেকে অভিযান চালাচ্ছে ভারতের সিআইডি। ওইদিন রাতে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ভাঙ্গর থানার জিরেনগাছা ব্রিজ এলাকায় তল্লাশি চালায় সিআইডি। তবে কোনো কিছু না পেয়ে রাতেই তল্লাশি শেষ করেন কর্মকর্তারা। গতকাল বিকেলে ভাঙ্গরের কৃষ্ণ মাটি এলাকায় তল্লাশি চালানো হয়। জলাশয়ের মধ্যে নেমে সিআইডি সদস্যদের তল্লাশি চালাতে দেখা যায়। তবে তিন ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়েও মরদেহের কোনো অংশের খোঁজ পাওয়া যায়নি। সিআইডি কর্মকর্তারা বলছেন, জিহাদ যে জায়গাকে চিহ্নিত করেছিল সেখানে কিছু পাওয়া যায়নি। সম্ভবত সে ইচ্ছে করেই ভুল জায়গা দেখিয়েছে। আজ শনিবারও তল্লাশি অব্যাহত থাকবে। দুই ফুটেজে যা দেখা গেছে নিউটাউনের সঞ্জিভা গার্ডেনের বেশ কিছু সিসি ক্যামেরার ফুটেজ হাতে পেয়েছেন গোয়েন্দারা। যেগুলোতে এমপি আনার ও তার সন্দেহভাজন খুনিদের গতিবিধি ধরা পড়েছে। ওই ফ্ল্যাটের সামনে স্থাপিত একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, ১৩ মে দুপুরে ২টা ৫৩ মিনিটের দিকে লিফট থেকে বের হয়ে ফ্ল্যাটের সামনে হাজির হন তিন ব্যক্তি। একজনের হাতে হলদে রংয়ের শপিং ব্যাগ। আরেকজনের কাঁধে ঝুলানো একটি সাইড ব্যাগ। তৃতীয় ব্যক্তির হাত খালি। কলিং বেল চাপলে ভেতর থেকে কেউ একজন দরজা খুলে দেন, একে একে তিনজন ভেতরে প্রবেশ করেন। ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ডিবির তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছে, তিনজনের মধ্যে হাতে হলদে রঙের শপিং ব্যাগ থাকা ব্যক্তিটি সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। কাঁধে ব্যাগ ঝুলানো ব্যক্তি শিমুল ভূঁইয়া ও অন্যজন ফয়সাল। আরেকটি সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, একই ফ্ল্যাট থেকে বের হচ্ছেন দুজন। তবে এবার তাদের সঙ্গে নেই সংসদ সদস্য আনার। তবে তাদের সঙ্গে আছে রহস্যজনক পেস্ট কালারের একটি লাগেজ। এই লাগেজটি নিয়ে ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে আসে একজন। অন্যজন বেশ কয়েকটি শপিং ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে আসেন। যিনি লাগেজটিকে নিয়ে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি শিমুল ভূঁইয়া ও শপিং ব্যাগ হাতে ছিল ভারতীয় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার কসাই জাহিদ।
২৫ মে, ২০২৪

বন্ধু হারাচ্ছে ইসরায়েল, চাপে নেতানিয়াহু
একে একে হাত ছাড়ছে মিত্ররা। আর তাই ক্রমেই একঘরে হয়ে পড়ছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। পরম মিত্র যুক্তরাষ্ট্র পাশে থাকলেও ইউরোপে পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে ইসরায়েলের। সারা দুনিয়া একদিকে আর নেতানিয়াহু একদিকে। কারও কথা গায়েই মাখছেন না তিনি। গাজায় নিরপরাধ নারী, শিশুসহ প্রায় ৩৫ হাজার মানুষকে হত্যার কুশীলব নেতানিয়াহুকে কেউই যেন থামাতে পারছে না। তবে বিশ্বজুড়ে চাপ বাড়ছে নেতানিয়াহুর ওপর। সম্প্রতি ইসরায়েলি সরকারকে একটি চিঠি লিখেছে বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ। বার্তা সংস্থা রয়টার্স শুক্রবার ওই চিঠিটি দেখেছে। সেখানে বলা হয়েছে, গাজায় যেন আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে ইসরায়েল। আর মানবিক সহায়তা নিশ্চিতেও ইসরায়েলি সরকারকে চাপ দিয়েছে বিশ্বের শক্তিশালী এসব দেশ। তাই মনে করা হচ্ছে, এবার ভালোই চাপে পড়বেন নেতানিয়াহু। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ফোরাম, গ্রুপ সেভেনের সদস্য দেশ কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও যুক্তরাজ্য ওই চিঠিতে সই করেছে। তবে পিছুটান দিয়েছে গ্রুপের অন্যতম সদস্য যুক্তরাষ্ট্র। গ্রুপ সেভেনের বাইরেও অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, সুইডেন ও ফিনল্যান্ড চিঠিতে সই করেছে। এসব দেশের অধিকাংশের কাছ থেকেই অস্ত্র আমদানি করে ইসরায়েল। গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহতে অভিযান চালাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে নেতানিয়াহু সরকার। সেখানে থাকা হামাসের যোদ্ধাদের নির্মূল করতে চায় তেল আবিব। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছে, এতে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। কেননা গত সাত মাস ধরে গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি হামলার কারণে ১০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি রাফাহতে আশ্রয় নিয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো ইসরায়েলকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তারা রাফাহতে পূর্ণমাত্রার অভিযানের বিরোধী। একই সঙ্গে গাজার জনগোষ্ঠীর কাছে যেন ত্রাণ পৌঁছে, সেটিও নিশ্চিত করতে আহ্বান জানিয়েছে তারা। কিন্তু ইসরায়েল বলছে, তারা গাজায় ত্রাণ পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে না। যদিও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এর ভিন্ন চিত্রেরই দেখা মিলছে। কানাডার শাস্তিমূলক পদক্ষেপ: ইসরায়েলিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে কানাডা। ফিলিস্তিনি বেসামরিক বাসিন্দাদের রক্ষায় প্রথমবারের মতো দেশটি এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। ১৬ মে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কানাডার গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা ফিলিস্তিনিদের (পশ্চিম তীরে) বিরুদ্ধে ‘হিংসাত্মক ও অস্থিতিশীল’ পদক্ষেপের জন্য প্রথমবারের মতো ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বসতি স্থাপনকারীদের সঙ্গে লেনদেন এবং কানাডায় তাদের প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে। আইসিজের কাঠগড়ায় ইসরায়েল: গাজায় গণহত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) দক্ষিণ আফ্রিকার করা আবেদনের ওপর দ্বিতীয় দিনের শুনানি হয়েছে। গত ১৭ মে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে আদালতের কার্যালয়ে ইসরায়েল তার পক্ষে যু্ক্তিতর্ক তুলে ধরে। তারা বলে, দক্ষিণ আফ্রিকা মিথ্যা অভিযোগ করেছে। শুনানিতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে ইসরায়েল বলেছে, নিজেদের রক্ষায় ফিলিস্তিনের গাজায় সামরিক অভিযান চালানো হচ্ছে। ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। দক্ষিণ আফ্রিকার এ ধরনের আবেদন জাতিসংঘের জাতিগত নিধন সনদের সঙ্গে ‘ঠাট্টা’। তাই আবেদন নাকচ করে দেওয়ার দাবি জানান ইসরায়েলের আইনজীবীরা। ইসরায়েল আরও বলে, এটি বাস্তবতা থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন একটি আবেদন। রাফাহতে বিপুলসংখ্যক ফিলিস্তিনি অবস্থান করছে। ইসরায়েল বিষয়টি ভালোভাবে জানে।
১৯ মে, ২০২৪

মোনায়েম সরকারের নিবন্ধ / আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী আমার বন্ধু
বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী অতি পরিচিত, অতি প্রিয় একটি নাম। এই নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক অলিখিত ইতিহাস, অনেক ঐতিহাসিক গৌরবগাথা। অষ্টাশি বছরের দীর্ঘজীবনে তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করলেও ১৯৫২ সালের প্রেক্ষাপটে রচিত ‘অমর একুশে’ গানের জন্য চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে তার রচিত অমর সংগীত বিশ্বব্যাপী প্রচারিত হয়। এই গানটি তাকে অমরত্ব দান করেছে। আমার সৌভাগ্য যে, এমন একজন বরেণ্য মানুষ আমার অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন। তার প্রয়াণে সমগ্র বাঙালির মতো আমিও অশ্রুসিক্ত, শোকে ম্রিয়মাণ। একটি মহানক্ষত্রের পতন হলে যেমন করে কেঁপে ওঠে আকাশের বিশাল হৃদয়, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মতো একজন মহান মানুষের মহাপ্রয়াণেও বাংলা ও বিশ্ব-বাঙালির অন্তরজুড়ে দুলে উঠছে চাপা কান্না। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর অকালপ্রয়াণ এমন একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, যার জন্য আমরা কেউই মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম না। আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, তখন থেকেই আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে চিনি। তিনি বয়সে আমার চেয়ে ১০ বছরের বড় হলেও আমাকে ‘আপনি’ বলেই সম্বোধন করতেন। আমি তাকে গাফ্ফার ভাই বলে ডাকতাম, তিনিও আমাকে মোনায়েম ভাই বলে সম্বোধন করতেন। বাংলাদেশের স্বাধিকার আদায়ের সংগ্রামে তিনি ছিলেন একজন অগ্রগণ্য কলমযোদ্ধা। তার অগ্নিঝরা কলমে বাংলাদেশের ইতিহাস অবিকৃতভাবে উঠে এসেছে। যখনই তিনি বাংলাদেশ নিয়ে কোনো কিছু লিখেছেন, তখনই তিনি সত্যকে অবলীলায় স্বীকার করে নিয়েছেন। মিথ্যা ভাষণ কিংবা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে কখনোই তিনি ইতিহাসকে বিকৃত করেননি। নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে যারা বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করেছেন, গাফ্ফার ভাই তাদের অন্যতম। গাফ্ফার ভাইয়ের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা জন্মে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হলে আমি কলকাতায় স্বেচ্ছানির্বাসনে যাই। সেখানে প্রায় চার বছর অবস্থান করি এবং দেশে-বিদেশে বঙ্গবন্ধুর স্বঘোষিত খুনিদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলি। গাফ্ফার ভাই তখন লন্ডনে থেকে আমাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন এবং খুনিদের বিরুদ্ধে হাতে কলম তুলে নেন। সে সময়ে বাংলার ডাক, বজ্রকণ্ঠ, সোনার বাংলা (দ্বিভাষিক), সানরাইজ প্রভৃতি পত্রিকায় গাফ্ফার ভাই লিখতেন এবং সেসব পত্রিকা আমার কাছে অ্যাটাচে ব্যাগে করে কলকাতায় আসত। আমি অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে সেগুলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পাঠাতাম। এমনকি জেলখানায়ও আমি সেসব পত্রিকা লোক মারফত পাঠাতাম। এসব পত্রিকা পড়ে মুজিব আদর্শে বিশ্বাসী মানুষের মনোবল চাঙ্গা হতো। তারা ঘাতকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার দীপ্ত প্রত্যয়ে জ্বলে উঠত। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর গাফ্ফার ভাই যেভাবে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের পক্ষে সোচ্চার হয়ে ওঠেন, বাংলাদেশের খুব কমসংখ্যক বুদ্ধিজীবীর মধ্যেই আমি সেই বিদ্রোহী ভাব প্রত্যক্ষ করেছি। গাফ্ফার ভাই বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ ছিলেন বটে, কিন্তু তার অন্ধ সমর্থক ছিলেন না। ‘আপদ-বিপদ-মুসিবত’ বলতে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের যে তিনজন বরেণ্য সাংবাদিককে বোঝাতেন, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী সেই তিনজনের একজন ছিলেন। কথা ছিল গাফ্ফার ভাই বঙ্গবন্ধুর জীবনী লিখবেন। কিন্তু জীবনী লেখার আগেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর জীবনী লিখতে না পারার বেদনা আমৃত্যু গাফ্ফার ভাইকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের একুশ বছর পর বাংলাদেশের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে আমি বঙ্গবন্ধুর জীবনী লেখায় হাত দিই। ১৯৯৮ সালে আমি লন্ডনে গিয়ে গাফ্ফার ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করি এবং আমার পরিকল্পনার কথা তাকে খুলে বলি। আমার কথা শুনে তিনি আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠেন। আমি যতদিন সেবার লন্ডনে ছিলাম, বেশিরভাগ সময়ই আমি গাফ্ফার ভাইয়ের সান্নিধ্যে কাটাই। তৎকালীন অ্যাম্বাসাডর এ এইচ মাহমুদ আলীর বাসায় গাফ্ফার ভাই প্রতিদিন আসতেন এবং আমরা অনেক রাত পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতাম। রাতের খাওয়া-দাওয়ার পর গাফ্ফার ভাইয়ের বিদায়ের সময় অ্যাম্বাসাডর মাহমুদ আলী নিজে গাড়ি চালিয়ে গাফ্ফার ভাইকে টিউব স্টেশনে পৌঁছে দিতেন। গাফ্ফার ভাই টিউব রেলে চড়ে বাসায় চলে যেতেন। গাফ্ফার ভাই বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে এত কথা জানেন, এত ইতিহাস তার স্মৃতিতে জমে আছে, যা তার কাছে না শুনলে বোঝা যাবে না। কিছু কথা থাকে, যা সব সময় সেসব কথা লেখা যায় না, পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে হয় চুপ থাকতে হয়, নয়তো ভুলে যেতে হয়। গাফ্ফার ভাই এমন একজন অকুতোভয় সাহসী সাংবাদিক, যিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কখনোই কুণ্ঠিত হননি। অত্যন্ত খোলা মনে তিনি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন, কখনো কখনো সমালোচনাও করেছেন, বঙ্গবন্ধুর উদারতা ও আবেগী মনোভাবের জন্য। গাফ্ফার ভাই অনেক আশাবাদী মানুষ ছিলেন। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে নেতিবাচক বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতেন। বঙ্গবন্ধুর জীবনীগ্রন্থ লেখার সময়ই টের পেয়েছি—লেখালিখি কিংবা পর্যবেক্ষণ-বিশ্লেষণ করার সময় তিনি কতটা মনোযোগী হয়ে সবকিছু খেয়াল করতেন। আমার সম্পাদনায় বঙ্গবন্ধুর জীবনীগ্রন্থ দুই খণ্ডে প্রকাশ করে বাংলা একাডেমি (২০০৮ সালে)। বইটি দেখে গাফ্ফার ভাই উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন এবং আমাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ দেন। গাফ্ফার ভাই বাংলা ভাষার পাঠকদের জন্য প্রায় প্রতিদিনই কিছু না কিছু লিখতেন। তার লেখার মাধ্যম বাংলা হলেও ইংরেজিকে তিনি এড়িয়ে যাননি। ইংরেজিতেও তিনি নিয়মিত কলাম লিখতেন পত্র-পত্রিকায়। একদিন আমাদের ২৩, চামেলীবাগের বাসায় কথায় কথায় তার অকালপ্রয়াত স্ত্রীর কথা মনে করে তিনি আনমনা হয়ে যান। সে সময় আমাকে বলেন, ‘জানেন মোনায়েম ভাই, আপনার ভাবি হুইলচেয়ারে বসেই আমার জন্য লেখার কাগজ-কলম টেবিলে সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখত। একদিন সকালে আমি কী লিখব এটা ভেবে পায়চারি করছিলাম আর মাথা চুলকাচ্ছিলাম—এমন সময় আপনার ভাবি বলল, কী ব্যাপার, তুমি এমন করছ কেন? আমি বললাম, কী লিখব বিষয় খুঁজে পাচ্ছি না। তখন আপনার ভাবি বলল, ‘কেন, মোনায়েম ভাইকে ফোন দাও, তাহলেই তো তুমি লেখার বিষয় পেয়ে যাবে।’ এ কথা বলছিলেন আর বারবার চোখ মুছছিলেন। প্রতিদিন ভোরে গাফ্ফার ভাইয়ের সঙ্গে আমার টেলিফোনে কথা হতো। ১৯ তারিখে মৃত্যুর আগেও তার সঙ্গে আমার প্রায় এক ঘণ্টা কথা হয়। সে বিষয়ে কিছু বলার আগে গাফ্ফার ভাইয়ের ৮০তম জন্মদিন নিয়ে দু-একটি কথা লিখতে চাই। ২০১৫ সালে গাফ্ফার ভাই ৮০ বছরে পদার্পণ করেন। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য-বিশারদ হলে তার জন্মদিনের অনুষ্ঠান উদযাপিত হয়। তখন গাফ্ফার ভাই কিছুটা আর্থিক সমস্যায় ছিলেন। এ কথা জানতে পেরে আমি গাফ্ফার ভাইকে কিছুটা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠি। আমার ভাবনায় ছিল—হয় ২১ লাখ, না হয় ৫২ লাখ টাকা তাকে উপহার দেব। যে মানুষ ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি নিয়ে কালজয়ী গান রচনা করে বাংলা ভাষা আন্দোলনে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছেন, তার জন্য এটুকু আমরা করতেই পারি। সে সময় অর্থমন্ত্রী ছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত ভাই। তাকে টেলিফোন করলে তিনি আমার কথা শুনে আমাকে ধন্যবাদ দেন ও কিছুটা আশ্বস্ত করেন। পরে ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি নূরুল ফজল বুলবুলকে বিষয়টি অবগত করলে তারাও এগিয়ে আসে। নূরুল ফজল বুলবুল সেবার ২১ লাখ টাকার একটি চেক আমার হাতে দেয়, আমি তা গাফ্ফার ভাইকে হস্তান্তর করি। যতদূর মনে পড়ে, আমার টার্গেট অনুযায়ী প্রায় ৫২ লাখ টাকার মতোই সংগ্রহ করতে পেরেছিলাম। এত টাকা একসঙ্গে দেখে গাফ্ফার ভাই আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেন। শিশুসুলভ সরলতা নিয়ে বলেছিলেন, ‘জানেন মোনায়েম ভাই, একসঙ্গে এত টাকা আমি কোনোদিন গুনি নাই। আপনি আমার জন্য যা করলেন তা চিরদিন মনে থাকবে।’ ১৯৯৬ সালে আমি ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শামস কিবরিয়া মিলে গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ’ প্রতিষ্ঠা করি। বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন গাফ্ফার ভাইয়ের খুব প্রিয় জায়গা ছিল। তিনি যখনই বাংলাদেশে এসেছেন তখনই বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনে ছুটে এসেছেন। শেষের কয়েক বছর ঢাকা এলে তিনি ফাউন্ডেশনের অফিস কক্ষেই বসবাস করতেন। ঢাকার যে কোনো পাঁচতারকা হোটেলে থাকা তার জন্য কোনো ব্যাপারই ছিল না, কিন্তু তার দুই কন্যা চিনু ও বিনু আমাদের ফাউন্ডেশন ছাড়া আর কোথাও উঠতে চাইত না। গাফ্ফার ভাইও আমার কাছে থেকে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। ২০১৯ সালে শেষবারের মতো তিনি বাংলাদেশে ছোট মেয়ে বিনিতাকে (বিনু) নিয়ে এসেছিলেন। সে সময়ও তিনি আমাদের ফাউন্ডেশনেই ছিলেন। গাফ্ফার ভাই এলে বাংলাদেশের সব বরেণ্য ব্যক্তি এসে ভিড় করতেন আমাদের ২৩, চামেলীবাগে। কবি-সাহিত্যিক, নায়ক-গায়ক, নেতা-মন্ত্রী-আমলা সবাই আসতেন গাফ্ফার ভাইকে একনজর দেখতে। এদেশের মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা পেয়েছেন গাফ্ফার ভাই। আমার জীবনে আমি কম সাংবাদিক-কলাম লেখক দেখিনি, কিন্তু গাফ্ফার ভাইয়ের মতো এত জনপ্রিয় কলাম লেখক বোধহয় বাংলাদেশে বিরল। একজন অসাম্প্রদায়িক, দেশপ্রেমিক, সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিক হিসেবে গাফ্ফার ভাই চিরকাল মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সিক্ত হবেন। ১৮ মে বিকেল ৪টার দিকে তার সঙ্গে আমার প্রায় এক ঘণ্টা টেলিফোনে কথা হয়। তিনিই ফোন করেছিলেন। অনেক কথার ফাঁকে তিনি বললেন, ‘বহুবার আপনি আমাকে আমার আত্মজীবনী লিখতে অনুরোধ করেছেন, এবার ভাবছি হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাসায় গেলে আর কলাম লিখব না, আপনার কথামতো শুধু আত্মজীবনী লিখব।’ আমি তার কথায় খুশি হয়ে বললাম, ‘আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে যান, এই কামনাই করি। আশা করি এবার জাতি আপনার আত্মজীবনীর মধ্য দিয়ে অনেক অলিখিত ইতিহাসের হদিস খুঁজে পাবে।’ ১৯ মে দুপুর আড়াইটার দিকে খবর শুনতে পাই, গাফ্ফার ভাই আর আমাদের মধ্যে নেই। তখন আমি, সৈয়দ জাহিদ হাসান (কবি ও কথাশিল্পী) ও লায়লা খানম শিল্পী একসঙ্গে খেতে বসেছিলাম। খবর শুনে ভাত না খেয়ে হাত ধুয়ে উঠে পড়ি। এরপর দেশ-বিদেশ থেকে একের পর এক ফোন আসতে শুরু করে। বাংলা টিভি, এটিএন নিউজ ক্যামেরাম্যান পাঠিয়ে ইন্টারভিউ নিয়ে যায়। যুগান্তর, বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ আরও কয়েকটি কাগজ থেকে ফোন আসতে থাকে লেখার জন্য। সত্যি বলতে কী, গাফ্ফার ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদ শুনে আমি মোটেই স্বাভাবিক ছিলাম না। যার ৯০তম জন্মদিন উদযাপনের জন্য আমি মনে মনে কত পরিকল্পনা করে রেখেছি, হঠাৎ তার মৃত্যুসংবাদ শুনে আমি যেন হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। গাফ্ফার ভাইয়ের সঙ্গে আমার এত এত স্মৃতি জমে আছে যে, সেসব বলতে গেলে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, বরেণ্য সাংবাদিক, কলাম লেখক, কবি ও গীতিকার আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বাংলাদেশের একজন অতুলনীয় অভিভাবক ছিলেন। বাংলাদেশের যে কোনো সংকটে তিনি নির্ভীকভাবে এগিয়ে এসেছেন। তার মহাপ্রয়াণে বাংলাদেশ একজন প্রকৃত অভিভাবক হারাল, এই ক্ষতি অপূরণীয়। এই শোককে হৃদয়ে ধারণ করা অত্যন্ত বেদনার। পৃথিবীতে কিছু মানুষের জন্ম হয় অন্ধকারে আলো ছড়ানোর জন্য। গাফ্ফার ভাইও দুর্ভেদ্য অন্ধকারে আলো ছড়ানোর কঠিন তপস্যায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। আলোর মশাল হাতে নিয়ে অন্ধকার তাড়াতে তাড়াতে দৃষ্টিসীমার আড়ালে চলে গেলেন মধ্যরাতের সূর্যতাপস আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। তার অনন্তযাত্রা শান্তিময় হোক। ১৯ মে, ২০২৪ লেখক: রাজনীতিক, লেখক ও চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ
১৯ মে, ২০২৪

বন্ধু হারাচ্ছে ইসরায়েল, চাপে নেতানিয়াহু
একে একে হাত ছাড়ছে মিত্ররা। আর তাই ক্রমেই একঘরে হয়ে পড়ছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। পরম মিত্র যুক্তরাষ্ট্র পাশে থাকলেও ইউরোপে পায়ে নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে ইসরায়েলের। নেতানিয়াহুর পশ্চিমা বন্ধুরা এখন তার টুঁটি চেপে ধরেছেন। তাই বুঝি শেষ রক্ষা হচ্ছে না, ক্ষমতার লোভে মসনদ আঁকড়ে থাকা নেতানিয়াহুর। সারা দুনিয়া একদিকে আর নেতানিয়াহু একদিকে। কারও কথা গায়েই মাখছেন না তিনি। গাজায় নিরপরাধ নারী ও শিশুসহ প্রায় ৩৫ হাজার মানুষকে হত্যার কুশীলব নেতানিয়াহুকে, কেউই যেন থামাতে পারছে না। তবে বিশ্বজুড়ে চাপ বাড়ছে নেতানিয়াহুর ওপর। ঘরের ভেতরও জ্বলছে বিক্ষোভের আগুন। এবার সম্ভবত সবচেয়ে বড় ধাক্কাটাই খেতে যাচ্ছেন নেতানিয়াহু। সম্প্রতি ইসরায়েলি সরকারকে একটি চিঠি লিখেছে বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ। বার্তা সংস্থা রয়টার্স শুক্রবার ওই চিঠিটি দেখেছে। সেখানে বলা হয়েছে, গাজায় যেন আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে ইসরায়েল। আর মানবিক সহায়তা নিশ্চিতেও ইসরায়েলি সরকারকে চাপ দিয়েছে বিশ্বের শক্তিশালী এসব দেশ। তাই মনে করা হচ্ছে, এবার ভালোই চাপে পড়বেন নেতানিয়াহু। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ফোরাম, গ্রুপ সেভেনের সদস্য দেশ- কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও যুক্তরাজ্য ওই চিঠিতে সই করেছে। তবে পিঠ টান দিয়েছে গ্রুপের অন্যতম সদস্য যুক্তরাষ্ট্র। গ্রুপ সেভেনের বাইরেও অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, সুইডেন ও ফিনল্যান্ড চিঠিতে সই করেছে। এসব দেশের অধিকাংশের কাছ থেকেই অস্ত্র আমদানি করে ইসরায়েল। গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় অভিযান চালাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে নেতানিয়াহু সরকার। সেখানে থাকা হামাসের যোদ্ধাদের নির্মূল করতে চায় তেল আবিব। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছে, এতে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। কেননা গেল প্রায় সাত মাস ধরে গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি হামলার কারণে ১০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি রাফায় আশ্রয় নিয়েছে। চিঠিতে ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্ররা জানায়, নিজের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে গেলেও দেশটিকে পুরোপুরিভাবে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে হবে। গেল ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভেতর ঢুকে হামাসের হামলার ঘটনার পর একই মাসের শেষদিকে নেতানিয়াহু প্রশাসন পাল্টা পদক্ষেপ নেয়, তবে তা অনেক ক্ষেত্রেই আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। পশ্চিমা দেশগুলো ইসরায়েলকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তারা রাফায় পূর্ণমাত্রার অভিযানের বিরোধী। একই সঙ্গে গাজার জনগোষ্ঠীর কাছে যেন ত্রাণ পৌঁছে সেটাও নিশ্চিত করতে আহ্বান জানিয়েছে তারা। কিন্তু ইসরায়েল বলছে, তারা গাজায় ত্রাণ পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে না। যদিও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এর ভিন্ন চিত্রই দেখা মিলছে।
১৮ মে, ২০২৪

হোয়াটসঅ্যাপে প্রতারণা এড়াতে যা করবেন
বর্তমানে সারা বিশ্বে অন্যতম জনপ্রিয় যোগাযোগমাধ্যম মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপ। ব্যবহারে সহজ পদ্ধতি এবং উন্নত সুরক্ষা ব্যবস্থার জন্য সবার কাছেই অ্যাপটি জনপ্রিয়। ব্যবহারকারীদের সাইবার হামলাসহ প্রতারণা এড়াতে বেশকিছু নিরাপত্তা–সুবিধা রয়েছে হোয়াটসঅ্যাপে। অনেক সময় দেখা যায় হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধু এবং আত্মীয়ের ছদ্মবেশে প্রতারণা করছে প্রতারকরা। এক্ষেত্রে তারা প্রেফাইল ছবিসহ কিছু কৌশল নিয়ে থাকে। এ জন্য পরিচিত ব্যক্তির পরিচয়ে আলাদা নম্বর থেকে মেসেজ করলে বা টাকা চাইলে অবশ্যই ব্যক্তির পরিচয় যাচাই করতে হবে। সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক- হিমাংশু নামে এক যুবক হোয়াটসঅ্যাপ প্রোফাইল ফটো ব্যবহার করে প্রতারকরা তার কলেজের চার বন্ধুকে টাকা পাঠানোর জন্য হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠায়। আর, এই ঘটনাটি তখন প্রকাশ্যে আসে যখন হিমাংশুর এক বন্ধু তাকে ফোন করে জানায় যে, কেউ একজন হিমাংশুর প্রোফাইল ফটো ব্যবহার করে তাকে মেসেজ করে ২ হাজার টাকা পাঠাতে বলছে, যা ছিল প্রতারণা।   প্রতারণা থেকে নিজেকে রক্ষা করবেন যেভাবে ১. যোগাযোগের বিবরণ অনলাইনে শেয়ার করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন। ২. যদি কেউ কল, ইমেইল অথবা মেসেজের মাধ্যমে ব্যক্তিগত এবং সংবেদনশীল তথ্য জানতে চায়, তাহলে অবিলম্বে সতর্ক হয়ে যাবেন। ৩. অজানা সোর্স থেকে আসা কোনো মেসেজের লিঙ্কে কখনো ক্লিক করবেন না অথবা অজানা সোর্স থেকে কোনো কিছু ডাউনলোড করবেন না। ৪. শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। ৫. মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন এনাবল করুন। ৬. সংবেদনশীল ডেটা রক্ষা করতে এনক্রিপশন ব্যবহার করুন।
১৮ মে, ২০২৪

মোটরসাইকেল-অটোরিকশা সংঘর্ষে ২ বন্ধু নিহত
শেরপুরের শ্রীবরদীতে মোটরসাইকেল ও অটোরিকশার সংঘর্ষে দুই বন্ধু নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরেক বন্ধু। শুক্রবার (১৭ মে) দুপুর ১২টায় উপজেলার ঘোষাইপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলো- শ্রীবরদী উপজেলার কুড়িকাহনিয়া গ্রামের ফয়সাল আহমেদ রনি ও হৃদয় আহমেদ। একই গ্রামের আহত তৌহিদুর রহমানকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তারা স্থানীয় একটি স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করত। স্থানীয়রা জানান, ফয়সাল, হৃদয় ও তৌহিদসহ ছয় বন্ধু মিলে তিনটি মোটরসাইকেল নিয়ে বকশীগঞ্জ উপজেলার একটি মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে যাচ্ছিল। এ সময় অটোরিকশার সঙ্গে মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগে। এতে তিনজন গুরুতর আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে হৃদয়কে শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও ফয়সালকে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তৌহিদুর রহমানকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতদের গ্রামের বাড়ি কুড়িকাহনিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, নিহত হৃদয়ের বাবা জাহাঙ্গীর আলম মুকুল বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছেন। ছেলেকে হারিয়ে তিনি কাউকে চিনতে পারছেন না। হৃদয়ের মা বিলাপ করছেন। পাশের ফয়সালের বাড়িতে একই অবস্থা। দুটি তাজা প্রাণ অকালে ঝরে পড়ায় কুড়িকাহনিয়া গ্রামে শোকের মাতম চলছে। আহত তৌহিদুর রহমানের জেঠা মো. কুরবান আলী বলেন, বর্তমানে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। শ্রীবরদী থানার ওসি কাইয়ুম খান সিদ্দিকী কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় নিহত দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
১৭ মে, ২০২৪

যে কারণে বন্ধু শি’র দেশ সফরে পুতিন
বিশ্বজুড়ে পশ্চিমাদের যে একক আধিপত্য, তার ইতি টানতে বদ্ধপরিকর চীন। এই কাজে দেশটির পাশে রয়েছে আরেক পরাশক্তি রাশিয়া। দেশ দুটির প্রেসিডেন্টের মধ্যেও রয়েছে দারুণ শখ্য। যখন ন্যাটোভুক্তিতে বাধা দিতে ইউক্রেনে হামলা চালায় মস্কো। এর জেরে নজিরবিহীন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত হয়ে যায় পুতিনের দেশ। শঙ্কা ছিল- নিষেধাজ্ঞার তলে চাপা পড়বে রাশিয়ার অর্থনীতি। কিন্তু ইরান, উত্তর কোরিয়া ও চীনের মতো দেশের কারণে নিষেধাজ্ঞা কাবু করতে পারেনি মস্কোকে। বরং যুদ্ধ ও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে চীন ও রাশিয়ার সম্পর্ক আরও নিবিড় হয়েছে। সেই সম্পর্কের পার আরও চড়িয়ে দিতে এবার বন্ধু শি জিনপিংয়ের দেশে সফরে যাচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।  কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, পঞ্চমবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে চীনে যাচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। দুই দেশের পক্ষ থেকেই পুতিনের সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রার সামরিক হামলা চালানোর নির্দেশ দেন পুতিন। এর কয়েকদিন আগে বেইজিংয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক হয় তার। এরপর দুজন একসঙ্গে ঘোষণা দেন চীন ও রাশিয়ার মধ্যে ‘সীমাহীন’ বন্ধুত্ব থাকবে। পুতিনের চীন সফরের ব্যাপারে রুশ প্রেসিডেন্টের দপ্তর ক্রেমলিন বলেছে, “চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আমন্ত্রণে ভ্লাদিমির পুতিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে ১৬ থেকে ১৭ মে পর্যন্ত চীনে রাষ্ট্রীয় সফরে যাবেন।” গেল ছয় মাসের মধ্যে পুতিনের এটি দ্বিতীয় চীন সফর হবে। ইউক্রেনে হামলার জেরে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় দেশটির অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে চীন। রাশিয়ার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখায় চীন পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনার মুখে পড়েছে। যদিও এগুলো তারা উড়িয়ে দিয়েছে। তবে মস্কোর সঙ্গে বেইজিংয়ের অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্কটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে পশ্চিমা দেশগুলো। বর্তমানে চীনের অপরিশোধিত তেলের সবচেয়ে বড় জোগানদাতা হলো রাশিয়া। পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গত বছর চীনে রাশিয়ার তেল রপ্তানির পরিমাণ ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিং এক বিবৃতিতে বলেছেন, পুতিন এবং জিনপিং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলবেন।
১৫ মে, ২০২৪

কেন বন্ধু শি’র সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন পুতিন?
বিশ্বজুড়ে পশ্চিমাদের যে একক আধিপত্য, তার ইতি টানতে বদ্ধপরিকর চীন। এই কাজে দেশটির পাশে রয়েছে আরেক পরাশক্তি রাশিয়া। দেশ দুটির প্রেসিডেন্টের মধ্যেও রয়েছে দারুণ সখ্যতা। ন্যাটোভুক্তিতে বাধা দিতে ইউক্রেনে হামলা চালায় মস্কো। এর জেরে নজিরবিহীন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত হচ্ছে পুতিনের দেশ। শঙ্কা ছিল- নিষেধাজ্ঞার তলে চাপা পড়বে রাশিয়ার অর্থনীতি। কিন্তু ইরান, উত্তর কোরিয়া ও চীনের মতো দেশের কারণে নিষেধাজ্ঞা কাবু করতে পারেনি মস্কোকে। বরং যুদ্ধ ও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে চীন ও রাশিয়ার সম্পর্ক আরও নিবিড় হয়েছে। সেই সম্পর্কের পার আরও চড়িয়ে দিতে এবার বন্ধু শি জিনপিংয়ের দেশে সফরে যাচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।  কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, পঞ্চমবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে চীনে যাচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। দুই দেশের পক্ষ থেকেই পুতিনের সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রার সামরিক হামলা চালানোর নির্দেশ দেন পুতিন। এর কয়েক দিন আগে বেইজিংয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক হয় তার। এরপর দুজন একসঙ্গে ঘোষণা দেন চীন ও রাশিয়ার মধ্যে ‘সীমাহীন’ বন্ধুত্ব থাকবে। পুতিনের চীন সফরের ব্যাপারে রুশ প্রেসিডেন্টের দপ্তর ক্রেমলিন বলেছে, ‘চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আমন্ত্রণে ভ্লাদিমির পুতিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে ১৬ থেকে ১৭ মে পর্যন্ত চীনে রাষ্ট্রীয় সফরে যাবেন।’ গেল ছয় মাসের মধ্যে পুতিনের এটি দ্বিতীয় চীন সফর হবে। ইউক্রেনে হামলার জেরে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় দেশটির অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে চীন। রাশিয়ার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখায় চীন পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনার মুখে পড়েছে। যদিও এগুলো তারা উড়িয়ে দিয়েছে। তবে মস্কোর সঙ্গে বেইজিংয়ের অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্কটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে পশ্চিমা দেশগুলো। বর্তমানে চীনের অপরিশোধিত তেলের সবচেয়ে বড় জোগানদাতা হলো রাশিয়া। পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গত বছর চীনে রাশিয়ার তেল রপ্তানির পরিমাণ ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিং এক বিবৃতিতে বলেছেন, পুতিন এবং জিনপিং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলবেন।
১৫ মে, ২০২৪
X