বর্জ্য দেখিয়ে ‘শিক্ষা’
সড়কের একপাশ দিয়ে অনেকটা জায়গাজুড়ে স্তূপ করে রাখা হয়েছে লেপ-তোশক, সোফা, কমোড, বেসিন, টায়ারসহ বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য। সেগুলোর পেছনে পোস্টারে লেখা সচেতনতামূলক বার্তা। প্রথম দেখায় মনে হতে পারে বর্জ্যগুলো কেউ সেখানে ফেলে গেছে, কিন্তু আসলে এটি একটি প্রদর্শনী। নাগরিকদের সচেতনতা শিক্ষা দিতে ব্যতিক্রমী এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।
নগরীর খাল, ড্রেন ও লেকে বাসাবাড়ির বর্জ্য না ফেলার জন্য নাগরিকদের সচেতন করতে বর্জ্য প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ডিএনসিসি। সপ্তাহব্যাপী প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে লেপ-তোশক, সোফা, কমোড, বেসিন, টায়ার, রিকশার অংশবিশেষ, প্লাস্টিকের বোতল, শো-পিস টেলিভিশনসহ বাসাবাড়িতে ব্যবহার্য পরিত্যক্ত পণ্য। এসব জিনিস রাজধানীবাসী আশপাশের খালগুলোতে ফেলে দিয়েছিলেন। খাল থেকে এসব উঠিয়ে ভিন্নধর্মী এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। প্রদর্শনী চলবে ১৭ মে পর্যন্ত।
গতকাল শনিবার গুলশানে ডিএনসিসির নগর ভবনের সামনে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি ঘুরে ঘুরে বর্জ্যগুলো দেখেন এবং প্রদর্শনীতে আসা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও নাগরিকদের সচেতন করেন।
সরেজমিন দেখা যায়, বিভিন্ন খালের নামে পোস্টার টানানো হয়েছে। যে যে খাল থেকে বর্জ্য হিসেবে যা কিছু পাওয়া গেছে তা সেখানে রাখা হয়েছে। খাল থেকে উদ্ধার করা পরিত্যক্ত পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে পরিত্যক্ত লেপ, তোশক, সোফা, লাগেজ, খাট, কেবল, টায়ার, কমোড, ফুলের টব, রিকশার অংশবিশেষ, টেবিল-চেয়ার, বেসিন, ব্যাগ, প্লাস্টিকের বিভিন্ন পাত্রসহ নানা পরিত্যক্ত পণ্য। নগরীর বাসিন্দারা নিজ বাসার সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ব্যবহার শেষে এসব পণ্য পরিত্যক্ত হওয়ার পর তা খালে ফেলে দিয়েছিলেন।
এসব কিছুর মধ্যে মোহাম্মদপুর কাদেরাবাদ হাউজিং খাল থেকে উদ্ধার করা সিরামিকের তৈরি একটি ‘ডানা ভাঙ্গা পরী’ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এটিকে নিয়েই আগত দর্শনার্থীরা আলোচনা করছিলেন। কেউ কেউ এটাকে খাল থেকে উঠে আসা ‘ডানাকাটা পরী’ বলেও সম্বোধন করেন।
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, উন্নত দেশে বাড়ির সামনের দিকে খাল থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে উল্টো চিত্র। সবাই খাল পেছনে রেখে বাড়ি বানায়। খালগুলোকে সবাই ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। কতটা অসচেতন হলে মানুষ খালে লেপ-তোশক, জাজিম, রিকশা, সোফা, কমোড ও টায়ার ফেলে।
তিনি বলেন, এসবের কারণেই পানিপ্রবাহ নষ্ট হয়ে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। মূলত সবাইকে দেখানোর জন্য, সচেতনতা তৈরি করার জন্য উদ্ধার হওয়া এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। আমরা চাই এসব সবাই দেখুক, নিজেরা সচেতন হোক, আর যেন কেউ খালে, ড্রেনে এভাবে পরিত্যক্ত জিনিস না ফেলে।
মেয়র বলেন, আমরা খালগুলোর প্রবাহ ঠিক করতে কাজ করছি। জনগণ যদি সচেতন না হয় তাহলে আমাদের এ কাজ করে কোনো লাভ হবে না।
নগরবাসীকে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আসুন আমরা ড্রেনে, খালে বা লেকে কোনো ধরনের ময়লা না ফেলি। ছয় মাস ধরে আমরা ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে যাচ্ছি। আরেক দিক থেকে ময়লা-আবর্জনা ভরাট হচ্ছে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্যই প্রদর্শনীর এ উদ্যোগ। নগরবাসী যদি এগিয়ে না আসে রাজধানী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ডিএনসিসির জন্য দুষ্কর ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে।
আতিকুল ইসলাম বলেন, ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার আওতায় আনা হবে রাজধানীর অতিগুরুত্বপূর্ণ খালগুলো। তাতে ময়লা-আবর্জনা ফেললে নেওয়া যাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।
১২ মে, ২০২৪