নিভৃতে চলে গেল সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহর মৃত্যু বার্ষিকী
নির্ভীক, সৎ ও সাহসী সাংবাদিক ছিলেন মাহফুজউল্লাহ। তার মতো সাংবাদিক আজ সমাজে বিরল হয়ে যাচ্ছে। মতবিরোধ ও মতপার্থক্য থাকলেও তিনি তা উপস্থাপন করতেন শালীন ভাষায়।  শনিবার (২৭ এপ্রিল) সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহর ৫ম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে মীরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তার কবর জিয়ারত ও ফাতেহা অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেতারা এসব কথা বলেন।  বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, মাহফুজউল্লাহ সংগ্রাম করেছেন, যুদ্ধ করেছেন কিন্তু আত্মসমর্পণ করেনি। তিনি বলেন, মাহফুজউল্লাহর একটা গুণ ছিল মিলে-মিশে কাজ করার। আমি তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। মাহফুজউল্লাহর মতো উদার মনের মানুষ আজ সমাজে বিরল। তার মৃত্যুতে দলমত নির্বিশেষে সবাই শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন। তার কারণ একটাই এই সমাজ যেমন বিভক্ত, তেমন সাংবাদিকরাও বিভক্ত, এই বিভক্ত সমাজে মাহফুজউল্লাহ ছিলেন দিক-নির্দেশক। সে নির্ভীক, স্পষ্টবাদী, সৎ সাংবাদিক ছিলেন, তার তুলনা হয় না। তিনি বলেন, মাহফুজউল্লাহ আজীবন একটি গণতান্ত্রিক, দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আজীবন নিজের অবস্থানে থেকেই লড়াই করেছেন। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে রাষ্ট্রে যখন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ একে অপরকে ধ্বংস করতে ব্যস্ত সেই মুহূর্তে রাজনৈতিক শিষ্টারের অন্যতম দৃষ্টান্ত মাহফুজউল্লাহর ইন্তেকাল আমাদের সমাজের বড় ধরনের শূণ্যতা সৃষ্টি করল। এই শূণ্যতা পূরণ অনেক সময়ের প্রয়োজন হবে। বর্তমান দুঃসময়ে তার মতো একজন ঋজু ও দৃঢ়চেতা মানুষের বড়ই প্রয়োজন ছিল। মাহফুজ উল্লাহ স্মৃতি পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বাংলাপোস্ট পত্রিকা ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিক তালুকদার বলেন, মতপার্থক্য বা মতবিরোধ থাকলেও প্রতিপক্ষের সঙ্গে শিষ্টাচারের মধ্য থেকেই যে লড়াই করা যায় তারই উজ্জ্বলতম উদাহরণ হচ্ছেন মাহফুজউল্লাহ। রাজনৈতিক বিশ্বাসগতভাবে তার বিরোধী পক্ষও এ কথা স্বীকার করতে বাধ্য হবে। মতাপার্থক্য ও মতবিরোধদের মধ্যেও একটি সমাজ ও রাষ্ট্রে সহঅবস্থান কতটা জরুরি তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে সব সময় তার ব্যবহারে। তিনি বলেন, ’৬৯-এর গণঅভুত্থান, ’৭১এর মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের সব অধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে মাহফুজউল্লাহ অবদান সমগ্র জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। এ সময় বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া ও মাহফুজ উল্লাহ স্মৃতি পরিষদের সভাপতি বাংলাপোস্ট ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিক তালুকদার ছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন সাইদুল ইসলাম, ইকবাল হোসাইন, নুর আলম অনিক। মোনাজাত করেন মাওলানা ইব্রাহিম খলিল।   
২৭ এপ্রিল, ২০২৪

আয়েশা হাসান আবেদের মৃত্যু বার্ষিকী আজ
ব্র্যাকের সূচনার দিনগুলোতে সমস্ত কর্মপ্রয়াসের সঙ্গে একটি উজ্জ্বল নাম অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে ছিল। সেই নাম আয়েশা হাসান আবেদ। অকালপ্রয়াত এই মহীয়সী নারীর নাম ব্র্যাকের অস্তিত্ব ও কর্মধারার সঙ্গে আজও অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। আজ (১১ই জুলাই) এই মহীয়সী নারীর মৃত্যু বার্ষিকী।  আয়েশা আবেদের জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৩ই জানুয়ারি ভারতের আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ শহরে। তাঁর পিতা ইয়াহিয়া খান চৌধুরী ছিলেন তদানীন্তন ব্রিটিশ-ভারতের করিমগঞ্জ মহকুমার প্রশাসক।  চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে আয়েশা ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। পিতার চাকরিসূত্রে ছোটোবেলা থেকে দেশের বিভিন্ন শহরে তিনি বেড়ে উঠেছেন। ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে সিনিয়র কেম্ব্রিজ পাশ করার পর তিনি কুষ্টিয়া কলেজে অধ্যয়ন করেন। এখান থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ঢাকার হলিক্রস কলেজে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ পরীক্ষায় হলিক্রস কলেজ থেকে তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭২-৭৩ সালে তিনি ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী মহিলা কলেজে শিক্ষকতা করেন।  যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে ব্র্যাক তখন সবেমাত্র তার যাত্রা শুরু করেছে। সুনামগঞ্জের শাল্লায় শুরু হয়েছে ব্র্যাকের সম্ভাবনাময় অগ্রযাত্রা। এমনি সময় ১৯৭৩ সালের ৭ই এপ্রিল ফজলে হাসান আবেদের সঙ্গে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।  এরপর তিনি নির্বাহী সহকারী হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্র্যাকে যোগ দেন। গ্রামীণ সমাজ কাঠামোয় যুগ যুগ ধরে চলে আসা শোষণপ্রক্রিয়া সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা অর্জনের জন্য তিনি গবেষণাকাজে যুক্ত হলেন।  আয়েশা আবেদের বিশ্বাস ছিল সাক্ষরতা ও সচেতনতা দুটোকেই একসঙ্গে পরিচালনা করতে হবে। বয়স্কদের জন্য ব্যবহারিক শিক্ষার উপকরণ তৈরি করার প্রয়োজনে ১৯৭৪ সালে ব্র্যাক ম্যাটেরিয়াল ডেভেলপমেন্ট ইউনিট গড়ে তোলে। এই ইউনিট গড়ে তোলা এবং পরিচালনায় আয়েশা আবেদ অনন্য ভূমিকা রেখেছিলেন। ব্রাজিলের বিশ্বখ্যাত শিক্ষাবিদ পাওলো ফ্রেইরির দর্শন ও পদ্ধতির আলোকে বয়স্ক সচেতনতা এবং সাক্ষরতাবিষয়ক উপকরণ, স্বাস্থ্যশিক্ষা চিত্রমালা প্রভৃতি তৈরির ক্ষেত্রে তিনিই ছিলেন প্রধান দিকনির্দেশক। ব্র্যাকের ব্যবহারিক শিক্ষা কর্মসূচিতে এই উপকরণগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে। ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮১ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি ব্র্যাকের মাসিক পত্রিকা ‘গণকেন্দ্র’-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এই পত্রিকার বিকাশ ও গণমুখী চরিত্রের জন্য তিনি ছিলেন অনুপ্রেরণার অন্যতম উৎস। একটি ন্যায়ভিত্তিক, বঞ্চনামুক্ত এবং সমৃদ্ধিশালী সমাজগঠনে তাঁর সুদৃঢ় অঙ্গীকার এই পত্রিকায় প্রতিফলিত হয়েছিল। বাংলাদেশের গ্রামীণ নারীসমাজ, পরিবারকাঠামোতে তাদের অবস্থান এবং তাদের ক্ষমতায়ন বিষয়ে আয়েশা আবেদ গভীরভাবে আগ্রহী ছিলেন। তিনি ছিলেন দরিদ্র ও পশ্চাৎপদ মানুষের মুক্তি অন্বেষায় একজন সক্রিয় কর্মী। সামগ্রিক উন্নয়নকর্মকাণ্ডে নারীদের যুক্ত করে কীভাবে তাদেরকে আত্মনির্ভরশীল করে তোলা যায়, সেই ভাবনা থেকে ‘আড়ং’ প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা রাখেন তিনি।  ১৯৮০ সালে এমসিসি-র কাছ থেকে আড়ং-এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ব্র্যাকের কাছে হস্তান্তরিত হয়। সে সময় থেকে জীবনের শেষ দু’টি বছর আয়েশা আবেদ আড়ং-এর প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আয়েশা আবেদের জীবন ছিল প্রকৃতই কর্মময়। তাঁর কর্মভাবনার মূলে ছিল এদেশের দরিদ্র মানুষ। একাধারে তিনি ছিলেন কর্মী, সংগঠক এবং পরিকল্পক, অন্যদিকে নিজের পরিবারপরিজন এবং বন্ধুদের কাছে তিনি ছিলেন স্নেহ এবং ভালোবাসার আশ্রয়। ১৯৮১ সালের ১১ই জুলাই অকাল প্রয়াণ বরণ করেন এই মহীয়সী নারী। 
১১ জুলাই, ২০২৩
X