ঋতুরাজ বসন্তকে স্বাগত জানিয়েছে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়
শাহজাদপুরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে প্রতিষ্ঠিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ণাঢ্যভাবে উদযাপন হয়েছে বসন্তবরণ উৎসব। ফাল্গুনের প্রথম দিনের সকালে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আনন্দমুখর পরিবেশে একাডেমিক ভবন-১ থেকে শোভাযাত্রাসহ একাডেমিক ভবন-৩ এ পৌঁছে। বসন্তবরণ উৎসবের উদ্বোধন করেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো: শাহ্ আজম। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ট্রেজারার প্রফেসর ড. ফিরোজ আহমেদ, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. ফখরুল ইসলামসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও শিক্ষকরা।
শোভাযাত্রা শেষে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন-৩ এ অনুষ্ঠিত হয় আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য শাহ্ আজম বলেন, বসন্ত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নানামাত্রিক সৃষ্টিকর্মে উদ্দীপিত-উৎসাহিত করেছে। তিনি বসন্ত নিয়ে লিখেছেন অসংখ্য গান-কবিতা। তার অমর সৃষ্টি-‘আহা আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে, এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়'। মনে পড়ছে 'ফাল্গুনী', 'বসন্ত' নাটকের কথা। ঋতুরাজ বসন্তকে রবীন্দ্রনাথ দেখেছেন নতুন প্রাণের বার্তাবাহক হিসেবে। জীবনে নতুনের আহ্বানের উদ্বোধক হিসেবে। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় তাই বসন্তকে আবাহন করে কবিগুরুর বসন্ত উদযাপনার অনুসরণে। আমরা প্রতিবছর ঋতুরাজ বসন্তকে আবাহনের মাধ্যমে ফুলে ফুলে ভরে যাওয়া বাংলার সবুজ প্রান্তরকে নতুন করে বরণ করি।
রবি উপাচার্য আরও বলেন, জরাজীর্ণ শীতের পর বসন্তের আগমনে প্রকৃতি সেজেছে নতুন রূপে। বসন্ত অনন্ত সম্ভাবনার ঋতু; প্রেম, বিরহ, মিলন, দ্রোহ-সংগ্রাম, বিজয় অর্জনের স্মৃতিময় সময়খণ্ডের অনন্য নাম বসন্ত।
উপাচার্য শাহ্ আজম বলেন, বসন্ত মানে নতুন করে জেগে ওঠা, নতুন আনন্দে-আশায় রঙিন হয়ে ওঠার সময়। এই শুভক্ষণে আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক- ক্ষুদ্রতা, পুরাতনকে পরিহার করে, বিভেদ-ব্যর্থতা ভুলে, নতুন প্রত্যয়ে, নতুন শক্তিতে বলীয়ান হয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার।
ড. শাহ্ আজম বলেন, ১৯৫২ সালের ৮ ফাল্গুন ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলার জন্য রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত, সফিকসহ নাম না জানা আরও অনেকে। সে আত্মত্যাগ আজ বিশ্বস্বীকৃত। বারবার ফিরে আসুক ফাল্গুন, আসুক বসন্ত, শোক নয়, দুর্বিনীত সাহস আর অপরিমেয় শক্তি হয়ে।
ট্রেজারার ফিরোজ আহমেদ বলেন, প্রাকৃতিক রূপ-রসে, কোকিলের কুহুতান, আমের মুকুলের সৌরভে আর পিঠাপুলির মৌতাতে বসন্তের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে গ্রাম থেকে শহরে। বসন্তের রঙিনদোলা, উচ্ছলতা ও উন্মাদনায় ভাসবে বাঙালি। বাংলার প্রকৃতিতে আজ ফাগুনের ছোঁয়া, আগুনরাঙা বসন্তের মোহময় সুর। হিম-কুয়াশায় ঢাকা শীতের পর রুক্ষ মৃতপ্রায় নিসর্গে উষ্ণতার স্পর্শ দিয়ে জীবনের স্পন্দন ফিরিয়ে এনেছে বসন্ত।
আলোচনায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, বসন্ত শুধু অশোক-পলাশ-শিমুলেই উচ্ছ্বাসের রং ছড়ায় না, আমাদের ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে শহীদদের রক্তের উপরও রং ছড়ায়। এই বসন্তেই রয়েছে বাঙালির দ্রোহ প্রেম, দেশ আর মাতৃভাষাপ্রীতির অনন্য নজির । কেননা আমাদের ভাষা- স্বাধীনতা সংগ্রাম এই বসন্তে শুরু হয়েছিল। তাই এই বসন্তে বাঙালি হৃদয় কিছুতেই ঘরে বসে থাকতে পারে না। যেমন থাকতে পারেনি- বাহান্ন ও একাত্তরে। যেকোনো সংকটে বাঙালিকে জেগে উঠতে এই বসন্ত সাহস জুগিয়েছে। একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে বিশ্ব দরবারে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে সামনে এগিয়ে যাবার প্রেরণা হয়ে থাকুক বসন্ত।
আলোচনাসভা শেষে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষাদের্থীর মনোমুগ্ধকর পরিবেশনায় আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় একাডেমিক ভবন প্রাঙ্গণ । অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানভীর আহমেদ।
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪