প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ
দৈনিক কালবেলা পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে গত ৪ মে প্রকাশিত ‘নিয়োগ-পদোন্নতিতে রুয়েট কর্মকর্তার ভয়াবহ জালিয়াতি’ শীর্ষক প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) অতিরিক্ত পরিচালক (গবেষণা ও সম্প্রসারণ) মুফতি মাহমুদ রনি।   এক প্রতিবাদপত্রে তিনি বলেন, প্রকাশিত সংবাদটিতে আমাকে নিয়ে যেসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা ও বানোয়াট। হেয় প্রতিপন্ন  করার জন্য একটি মহল এমন ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করছে। প্রকৃত তথ্য হচ্ছে, রুয়েটে যখন যে নীতিমালা ছিল তখন সেই সব নিয়ম মেনেই নিয়োগ এবং পদোন্নতি হয়েছে। তার সঙ্গে এখনকার বিদ্যমান নীতিমালা কিছু কিছু ক্ষেত্রে মিলবে না । তাই বলে এসব নিয়োগ ও পদোন্নতিকে জালিয়াতি বলা যাবে না। এমন মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ প্রচার করায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
১৭ ঘণ্টা আগে

জালিয়াতিতে ‘নাম্বার ওয়ান’ রুয়েট কর্মকর্তা মুফতি
রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিয়োগের শর্ত শিথিল করে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) ২০১১ সালের ৩০ মে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে চাকরি নেন মুফতি মাহমুদ রনি। বর্তমানে তিনি রুয়েটের গবেষণা ও সম্প্রসারণ বিভাগের ‘গায়েবি সৃষ্ট’ অতিরিক্ত পরিচালক। নিয়োগ থেকে শুরু করে পদোন্নতি, প্রতিটি ধাপে তাকে আশ্রয় নিতে হয়েছে অনিয়ম-দুর্নীতি, প্রতারণা আর জালিয়াতির। একাডেমিক বিভিন্ন সনদপত্র, থিসিস জালিয়াতির অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কালবেলার অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১০ সালের ৫ অক্টোবর প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আলোকে সহকারী রেজিস্ট্রার (সপ্তম গ্রেড) পদের জন্য ২৬ অক্টোবর আবেদন করেন মুফতি মাহমুদ। রুয়েটের চাকরির নীতিমালায় এই পদের ন্যূনতম যোগ্যতা সরকারি বা আধাসরকারি কিংবা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে প্রশাসনিক বা একাডেমিক কাজে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা। কিন্তু মুফতি মাহমুদ সহকারী রেজিস্ট্রার পদে চাকরিতে প্রবেশের জন্য রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চাপে ফেলে ওই সময় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত শিথিল করতে বাধ্য করেন। এরপর তিনি চাকরির আবেদন ফরমে ‘এসএম এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড’ নামে ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লিয়াজোঁ অফিসার হিসেবে ৬ বছর ৫ মাস ১১ দিনের (২০০৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০০৯ সালের ১৩ জুলাই) অভিজ্ঞতা উল্লেখ করেন। অথচ বিধিমালা অনুযায়ী, এসএম এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড একটি ঠিকাদারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় ওই পদে চাকরির জন্য তার আবেদন করার যোগ্যতাই ছিল না। কিন্তু তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে অবৈধভাবে তিনি বাগিয়ে নেন সপ্তম গ্রেডের এই চাকরি। শুধু তাই নয়, ৬ বছর ৫ মাস ১১ দিনের ‘লিয়াজোঁ অফিসার’ পদে যে সনদ দেখিয়ে তিনি সহকারী রেজিস্ট্রার পদে চাকরিতে ঢুকেছেন, ওই সময়ের মধ্যে তার আরও তিনটি প্রতিষ্ঠানে (আরএম সলিউশন, আব্দুর রহিম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস এবং রেডিয়েন্ট পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং) কাজ করার প্রমাণ মিলেছে। অবৈধভাবে চাকরি নিয়েই থেমে থাকেননি রুয়েটের এই কর্মকর্তা। ২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আলোকে মুফতি মাহমুদ উপপরিচালক (গবেষণা ও সম্প্রসারণ) পদে আবেদন করেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও রুয়েটের চাকরি নীতিমালা অনুযায়ী, এই পদে ন্যূনতম যোগ্যতা চাওয়া হয়েছিল গবেষণা সম্প্রসারণ বা প্রশাসনিক কাজে সরকারি বা আধাসরকারি কিংবা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা। এর মধ্যে সহকারী পরিচালক (গবেষণা ও সম্প্রসারণ) বা সমমানের পদে কমপক্ষে ৫ বছরের অভিজ্ঞতার বিষয়টি উল্লেখ ছিল। অথচ এই পদের জন্য আবেদনপত্রে তিনি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান হিসেবে রুয়েটে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে চাকরিরত ৪ বছর ৮ মাসের (৫ বছর হয়নি) অভিজ্ঞতা দেখিয়েছেন। আর এই পদে নিয়োগের জন্য কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতার শর্ত পূরণে তিনি আবারও পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া কথিত সেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের (এসএম এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড) ভুয়া সনদটিই ব্যবহার করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮০তম সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ২০১৭ সালের ২৯ এপ্রিল তিনি উপপরিচালক (গবেষণা ও সম্প্রসারণ) পদে নিয়োগ পান। এ ছাড়া রুয়েটের অর্গানোগ্রামে গবেষণা ও সম্প্রসারণ দপ্তরে অতিরিক্ত পরিচালকের কোনো পদের অস্তিত্ব নেই। অথচ তিনি প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ‘অস্তিত্বহীন’ এই পদেই বর্তমানে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। নিজের একাডেমিক শিক্ষাতেও মুফতি মাহমুদ আশ্রয় নিয়েছেন জালিয়াতির। ২০১১ সালে তিনি যখন সহকারী রেজিস্ট্রার পদে চাকরিতে প্রবেশ করেন, তখন তার চাকরির আবেদনে রুয়েটে এমএসসি এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) এমবিএ প্রোগ্রামে অধ্যয়নরত থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেননি। অথচ চাকরি পাওয়ার পর তিনি একই বছরের ১২ জুলাই এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স সম্পন্ন করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর আবেদন করেন। রুয়েটে চাকরিরত অবস্থায় এমএসসি কোর্স সম্পন্নের জন্য আবেদন করলেও একই সময়ে দুটি প্রতিষ্ঠানে (রুয়েটে এমএসসি ও রাবিতে এমবিএ) অধ্যয়নরত থাকায় রাবিতে এমবিএ কোর্স করার বিষয়টি গোপন রাখেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবহিত না করেই রাবি থেকে এমবিএ পরীক্ষার সনদপত্র পেয়ে যান তিনি। এমবিএ করার বিষয়টি গোপন রাখলেও শেষ পর্যন্ত এমবিএর সদনপত্র চাকরির ব্যক্তিগত নথিতে নথিভুক্ত করতে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই তৎকালীন উপাচার্য বরাবর আবেদন করেন মুফতি মাহমুদ। এভাবে তিনি একদিকে রুয়েটের চাকরির বিধি ও নীতিমালা লঙ্ঘন করে অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন; অন্যদিকে চাকরিরত অবস্থায় একই সময়ে দুই প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত থাকায় তিনি শিক্ষা সনদের বিধিও চরমভাবে লঙ্ঘন করেন। এখানেই শেষ নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রির (রোল: ০৮০৪২০২০০১) অংশ হিসেবে যে থিসিস করেছেন, সেখানেও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি ০৭২০৯৯ রোল নম্বরধারী মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও ০৭২০৬২ রোল নম্বরধারী কামরুন নাহার নামের বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের দুই শিক্ষার্থীর যৌথ থিসিস পেপার নকল করে নিজের পেপারস জমা দিয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের বিষয়ে মুফতি মাহমুদ রনি কালবেলাকে বলেন, ‘নিয়োগের সব শর্ত পূরণ করেই ২০১১ সালে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে প্রশাসন আমাকে চাকরি দেয়। আমার যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন নিয়োগ ও পদোন্নতি দিল?’ চাকরিরত অবস্থায় একই সঙ্গে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে কীভাবে অধ্যয়নরত ছিলেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রুয়েটে এমএসসি করার জন্য অনুমতি নিয়েছিলাম। রাবিতে এমবিএ সান্ধ্য কোর্স করেছি। কিন্তু সেখানে অনুমতি নেওয়া হয়নি।’ থিসিস জালিয়াতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওই দুই শিক্ষার্থী বিএসসির থিসিস করেছে। আর আমি করেছি এমএসসির থিসিস। কিন্তু আমাদের একই শিক্ষক তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। থিসিস করার সময় তাদের আমার সঙ্গে কাজ করতে বলেন। সংগত কারণে থিসিসের কিছু বিষয় একই ছিল। এটি কোনো জালিয়াতি বা কপি করার ঘটনা নয়।’ রুয়েটের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক সিরাজুল করিম চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, ‘১৩ বছর আগের কথা। ওই সময় নিয়োগে কী শর্ত চাওয়া হয়েছিল, সেগুলো তো মনে নেই। আমি ভিসি ছিলাম। এ ছাড়া নিয়োগ বোর্ডের ৬-৮ সদস্য ছিল। চাকরিপ্রার্থীকে পরীক্ষা-ভাইভা ফেস করেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তার বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট ছিল কি না, আমি মনে করতে পারছি না। অফিসের ফাইল ও রেকর্ডপত্র দেখলে বোঝা যাবে আসলে কী হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নিয়োগে চাপ তো ছিলই। স্থানীয় নেতারা নিয়োগের সময় অনবরত ফোন করতেই থাকেন। এটি সব নিয়োগের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে।’ ২০১৬ সালে যখন মুফতি মাহমুদ উপপরিচালক পদে নিয়োগ পান, তখন রুয়েটের রেজিস্ট্রার ছিলেন অধ্যাপক ড. মো. মোশাররফ হোসেন। কীভাবে যোগ্যতা ছাড়াই মুফতি মাহমুদ এই পদে চাকরি পেলেন, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে অনেক আগের বিষয়। ফাইল না দেখে বলতে পারব না।’ রুয়েটের বর্তমান রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) আরিফ হোসেন চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, ‘তৎকালীন প্রশাসন তাকে কোন ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে চাকরি দিয়েছে, তা আমার জানার কথা নয়। ফাইল দেখতে হবে। আর ফাইলপত্র ঘেঁটে দেখা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। যদি নিয়োগ কিংবা পদোন্নতির ক্ষেত্রে এই কর্মকর্তা জালিয়াতি করে থাকলে সেই বিষয়ে সিন্ডিকেট কিংবা ফাইলে নোট দিতে হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চাকরিত অবস্থায় অন্য কোথাও অধ্যয়নরত থাকলে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে। আর তিনি থিসিস জালিয়াতি করে থাকলে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন। কারও থিসিসের সঙ্গে ৩০ শতাংশের মিল পাওয়া গেলেও সেটি বাতিলযোগ্য।’
১৩ মে, ২০২৪

নিয়োগ-পদোন্নতিতে রুয়েট কর্মকর্তার ভয়াবহ জালিয়াতি
ক্ষমতার দাপট ও তৎকালীন প্রশাসনকে রাজনৈতিক প্রভাবের চাপে ফেলে নিয়োগের শর্ত শিথিল করে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) ২০১১ সালের ৩০ মে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে চাকরিতে প্রবেশ। অনুমোদনহীন সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদের (সহকারী রেজিস্ট্রার) বিপরীতে নিয়োগ পেয়ে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ‘অবৈধভাবে’ দীর্ঘ ১৩ বছরের চাকরি জীবনে সেই মুফতি মাহমুদ রনি এখন রুয়েটের গবেষণা ও সম্প্রসারণ বিভাগের ‘গায়েবি ‍সৃষ্ট’ অতিরিক্ত পরিচালক পদে কর্মরত। তবে এই পদে তিনি এমনিতেই আসেননি। এই অতিরিক্ত পরিচালক পদে আসতেও তাকে ধাপে ধাপে আশ্রয় নিতে হয়েছে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি, প্রতারণা আর জালিয়াতির। রুয়েটের ‘প্রভাবশালী’ এই কর্মকর্তার নিয়োগসহ পদোন্নতির প্রতিটি পদে পদে ভয়াবহ জালিয়াতি এবং একাডেমিক বিভিন্ন সনদপত্র, থিসিস জালিয়াতি নিতে নানা ‘কুটকৌশল’ কালবেলার দীর্ঘ অনুসন্ধানে ওঠে এসেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১০ সালের ৫ অক্টোবর প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আলোকে সহকারী রেজিস্ট্রার (সপ্তম গ্রেড) পদের জন্য ২৬ অক্টোবর আবেদন করেন রনি। রুয়েটের চাকরির নীতিমালায় এই পদের ন্যূনতম যোগ্যতা সরকারি/আধাসরকারি কিংবা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে প্রশাসনিক/একাডেমিক/পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা অত্যাবশ্যক বলে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু তিনি সহকারী রেজিস্ট্রার পদে চাকরিতে প্রবেশের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চাপে ফেলে ওই সময় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত শিথিল করে যে কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে (সরকারি/আধাসরকারি কিংবা স্বায়ত্বশাসিত উল্লেখ ছিল না) প্রশাসনিক কাজে ৫ বছরের অভিজ্ঞতার বিষয়টি উল্লেখ করিয়ে চাকরিতে আবেদন করেন। এই সুযোগে তিনি চাকরির আবেদন ফরমে ‘এস.এম. এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড’ নামে ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের (বেসরকারি) লিয়াজোঁ অফিসার হিসেবে ৬ বছর ৫ মাস ১১ দিনের (২০০৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০০৯ সালের ১৩ জুলাই) অভিজ্ঞতা উল্লেখ করেন। অথচ বিধিমালা অনুযায়ী, এস.এম. এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড একটি ঠিকাদারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় ওই পদে চাকরির জন্য রনির আবেদন করার যোগ্যতাই ছিল না। কিন্তু তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে ‘লিয়াজোঁ’ ও প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে অবৈধভাবে তিনি বাগিয়ে নিয়েছেন সপ্তম গ্রেডের এই চাকরি। শুধু তাই নয়; ৬ বছর ৫ মাস ১১ দিনের ‘লিয়াজোঁ অফিসার’ পদে যে সনদ দেখিয়ে তিনি সহকারী রেজিস্ট্রার পদে চাকরিতে ঢুকেছেন ওই সময়ের মধ্যে তার (রনি) আরও তিনটি প্রতিষ্ঠানে (আর.এম সলিউশন, আব্দুর রহিম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস এবং রেডিয়েন্ট পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং) কাজ করার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে। অবৈধভাবে চাকরি নিয়েই থেমে থাকেননি রুয়েটের এই ‘অবৈধ’ কর্মকর্তা। ২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আলোকে তিনি উপ-পরিচালক (গবেষণা ও সম্প্রসারণ) পদে আবেদন করেন।  নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও রুয়েটের চাকরি নীতিমালা অনুযায়ী, এই পদে ন্যূনতম যোগ্যতা চাওয়া হয়েছিল গবেষণা সম্প্রসারণ/ প্রশাসনিক কাজে সরকারি/ আধাসরকারি কিংবা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা। এর মধ্যে সহকারী পরিচালক (গবেষণা ও সম্প্রসারণ) বা সমমানের পদে কমপক্ষে ৫ বছরের অভিজ্ঞতার বিষয়টি উল্লেখ ছিল। অথচ এই পদের জন্য আবেদনপত্রে তিনি সরকারি/ আধাসরকারি/ স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে রুয়েটে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে চাকরিরত ৪ বছর ৮ মাসের (৫ বছর হয়নি) অভিজ্ঞতা দেখিয়েছেন। আর এই পদে নিয়োগের জন্য সরকারি/ আধাসরকারি/ স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতার শর্ত পূরণে তিনি আবারও পুলিশ ভেরিফিকেশন ব্যতিত দ্বিতীয় নিয়োগপ্রাপ্তিতেও কথিত সেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের (এস.এম. এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড) ভুয়া সনদটিই ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়টির ৮০তম সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ২০১৭ সালের ২৯ এপ্রিল তিনি উপ-পরিচালক (গবেষণা ও সম্প্রসারণ) পদে ‘অবৈধভাবে’ নিয়োগ পান। এখানেই থেমে থাকেনি ‘অবৈধ’ এই কর্মকর্তার অনৈতিক পদোন্নতির লালসা। ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরি কমিশনের (ইউজিসি) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ জামিনুর রহমান স্বাক্ষতি এক চিঠিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে চতুর্থ গ্রেডভুক্ত পদ হিসেবে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার/সমমানের পদ সৃষ্টি প্রসঙ্গে একটি চিঠি ইস্যু হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শুধু রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অর্থ ও হিসাব এবং লাইব্রেরি- এই চার দপ্তরে চতুর্থ গ্রেডভুক্ত পদ থাকবে। সেখানে আরও বলা হয়েছে, জাতীয় বেতনস্কেল-২০১৫-তে বর্ণিত গ্রেড-৪ এর পূর্ণ বেতন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ন্যূনতম চাকরির যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা কোনোক্রমেই শিলিথযোগ্য নয়। এ ছাড়া চতুর্থ গ্রেডভুক্ত উল্লেখিত পদে জনবল সর্বদা উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ দিতে হবে; পদোন্নতি/আপগ্রেডেশন/পর্যায়োন্নয়ন দেওয়া যাবে না। কিন্তু এই কর্মকর্তা প্রশাসনকে জিম্মি করে বিশ্ববিদ্যালয়টির গবেষণা ও সম্প্রসারণ দপ্তরে উন্মুক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর চতুর্থ গ্রেডভুক্ত অতিরিক্ত পরিচালক (গবেষণা ও সম্প্রসারণ) পদে আপগ্রেডেশন/পর্যায়োন্নয়ন পান। এ ছাড়া চাকরির নীতিমালা অনুযায়ী, এই পদের জন্য সরকারি/আধাসরকারি কিংবা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে কমপক্ষে ১৩ বছরের অভিজ্ঞতার বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও মাত্র ১০ বছরের অভিজ্ঞাতেই তিনি অতিরিক্ত পরিচালক বনে যান। শুধু তাই নয়; রুয়েটের অর্গানোগ্রামে গবেষণা ও সম্প্রসারণ দপ্তরে অতিরিক্ত পরিচালকের কোনো পদের অস্তিত্ব নেই। অথচ তিনি আবারও তৎকালীন প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে ‘অস্তিত্ববিহীন’ এই পদেই বর্তমানে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এত গেল রুয়েটের এই কর্মকর্তার চাকরিপ্রাপ্তি ও পদোন্নতির অনিয়ম-জালিয়াতির খতিয়ান। নিজের একাডেমিক কাজেও তিনি আশ্রয় নিয়েছেন নানা অনিয়ম-জালিয়াতির। ২০১১ সালে রনি যখন সহকারী রেজিস্ট্রার পদে চাকরিতে প্রবেশ করেন তখন তার চাকরির আবেদনে রুয়েটে এম.এসসি এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ প্রোগ্রামে অধ্যয়নরত থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেননি। অথচ চাকরি পাওয়ার পর তিনি ২০১১ সালের ১২ জুলাই এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ারিং কোর্স সম্পন্ন করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর আবেদন করেন। রুয়েটে চাকরিরত অবস্থায় এমএসসি কোর্স সম্পন্নের জন্য আবেদন করলেও একই সময়ে দুটি প্রতিষ্ঠানে (রুয়েটে এম.এসসি ও রাবিতে এমবিএ) অধ্যয়নরত থাকায় রাবিতে এমবিএ কোর্স করার বিষয়টি গোপন রাখেন রনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবহিত না করেই শেষাবধি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এমবিএ পরীক্ষার সনদপত্র পেয়ে যান তিনি। এমবিএ করার বিষয়টি গোপন রাখলেও শেষ পর্যন্ত এমবিএ’র সদনপত্র চাকরির ব্যক্তিগত নথিতে নথিভুক্ত করতে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই তৎকালীন ভিসি বরাবর তিনি আবেদন করেন। এভাবে রনি একদিকে রুয়েটের চাকরির বিধি ও নীতিমালা লঙ্ঘন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবহিত না করেই অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন; অপরদিকে চাকরিরত অবস্থায় একই সময়ে দুই প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত থাকায় তিনি শিক্ষা সনদের বিধিও চরমভাবে লঙ্ঘন করেন। এতেই থেমে থাকেনি রনি। এই কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রির (রোল: ০৮০৪২০২০০১) অংশ হিসেবে যে থিসিস করেছেন সেখানেও করেছেন ভয়াবহ জালিয়াতি। তিনি ০৭২০৯৯ রোল নম্বরধারী মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও ০৭২০৬২ রোল নম্বরধারী কামরুন নাহার নামের বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের দুই শিক্ষার্থীর যৌথ থিসিস পেপার নকল করে নিজের পেপারস জমা দিয়েছেন বলেও বিস্তর অভিযোগ পাওয়া গেছে। জালিয়াতির বিষয়ে অভিযুক্ত রুয়েট কর্মকর্তা মুফতি মাহমুদ রনি কালবেলাকে বলেন, ‘নিয়োগের সকল শর্ত পূরণ করেই ২০১১ সালে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে প্রশাসন আমাকে চাকরি দেয়। পরবর্তী নিয়োগ (উপ-পরিচালক) ও পদোন্নতিও ( অতিরিক্ত পরিচালক) নিয়োগের শর্ত, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাকে দিয়েছে। আমার যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন নিয়োগ ও পদোন্নতি দিল? চাকরিরত অবস্থায় একইসঙ্গে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে কীভাবে অধ্যয়নরত ছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রুয়েটে এমএসসি করার জন্য অনুমতি নিয়েছিলাম। কিন্তু রাবিতে এমবিএ সান্ধ্যকালীন কোর্স করেছি। কিন্তু সেখানে অনুমতি নেওয়া হয়নি।’ থিসিস জালিয়াতির বিষয়ে মুফতি মাহমুদ রনি বলেন, ‘ওই দুই শিক্ষার্থী বিএসসির থিসিস করেছে। আর আমি করেছি এমএসসির থিসিস। কিন্তু আমাদের একই শিক্ষক তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। থিসিস করার সময় তাদেরকে আমার সঙ্গে কাজ করতে বলে। সঙ্গত কারণে থিসিসের কিছু বিষয় একই ছিল। এটি কোনো জালিয়াতি বা কপি করার ঘটনা নয়।’ জানতে চাইলে রুয়েটের তৎকালীন ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ড. সিরাজুল করিম চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, ‘আজ থেকে ১৩ বছর আগের কথা। ওই সময় নিয়োগে কী শর্ত চাওয়া হয়েছিল সেগুলো তো মনে নেই। আমি ভিসি ছিলাম। এ ছাড়া নিয়োগ বোর্ডের ৬-৮ সদস্য ছিল। চাকরি প্রার্থীকে পরীক্ষা-ভাইভা ফেস করেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তার বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট ছিল কি না, আমি মনে করতে পারছি না। অফিসের ফাইল ও রেকর্ডপত্র দেখলে বোঝা যাবে আসলে কী হয়েছে না হয়েছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নিয়োগে চাপ তো ছিলই, স্থানীয় নেতারা নিয়োগের সময় অনবরত ফোন করতেই থাকে। এটি সব নিয়োগের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে।’   ২০১৬ এই কর্মকর্তা যখন উপ-পরিচালক পদে নিয়োগ পান তখন রুয়েটের রেজিস্ট্রার ছিলেন অধ্যাপক ড. মো. মোশাররফ হোসেন। কীভাবে যোগ্যতা ছাড়াই এই পদে চাকরি পেলেন তা জানতে তিনি বলেন, ‘আসলে অনেক আগের বিষয়। ফাইল না দেখে তো বলতে পারব না।’ বিস্তারিত জানতে তিনি বর্তমান রেজিস্ট্রারের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। যখন তিনি অতিরিক্ত পরিচালক (গবেষণা ও সম্প্রসারণ) পদে নিয়োগ পান তখন রুয়েটের ভিসি ও রেজিস্ট্রার ছিলেন অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম সেখ ও অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেন। যোগ্যতা না থাকা এবং রুয়েটের অর্গানোগ্রামে এই পদের কোনো অস্তিত্ব না থাকার পরও তিনি কীভাবে উক্ত পদে নিয়োগ পেলেন তা জানতে ভিসি ও রেজিস্ট্রারকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তারা রিসিভ করেননি। রুয়েটের বর্তমান রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) আরিফ হোসেন চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, ‘তৎকালীন প্রশাসন তাকে কোন ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে চাকরি দিয়েছেন তা আমার জানার কথা নয়। ফাইল দেখতে হবে। আর ফাইলপত্র ঘেটে দেখা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। যদি নিয়োগ কিংবা পদোন্নতির ক্ষেত্রে এই কর্মকর্তা জালিয়াতি করেই থাকে তাহলে সেই বিষয়ে সিন্ডিকেট কিংবা ফাইলে নোট দিতে হবে।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘চাকরিরত অবস্থায় অন্য কোথাও অধ্যয়নরত থাকলে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে। আর যদি সে থিসিস জালিয়াতি করে থাকেন তাহলে সে ফৌজদারি অপরাধ করেছে।’ রেজিস্ট্রার আরও বলেন, ‘কারও থিসিসের সঙ্গে যদি ৩০ শতাংশের মিল পাওয়া যায় তাহলে সেটি অপরাধ এবং বাতিলযোগ্য।’
০৪ মে, ২০২৪

আজ রুয়েট ছাত্রলীগের ৪র্থ সম্মেলন
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) শাখা ছাত্রলীগের চতুর্থ সম্মেলন সাত বছর পর আজ (মঙ্গলবার) অনুষ্ঠিত হবে। নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলনের সার্বিক প্রস্তুতি শেষ। আজ সকাল ১০টায় রুয়েটের কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়াম চত্বরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। এদিকে রুয়েট ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী প্রায় অর্ধডজন নেতাকর্মী কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ সম্ভাব্য নেতাদের কাছে দৌড়ঝাঁপ করে যাচ্ছে। সবাই নিজেদের সাধ্যমতো চালিয়ে যাচ্ছে লবিং। পদপ্রত্যাশী এমন কিছু নেতার নাম এরই মধ্যে আলোচনায় উঠে এসেছে; যাদের বিতর্কিত বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। জানা গেছে, নতুন নেতৃত্বে আসার দৌড়ে এগিয়ে থাকাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বর্তমান কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য এবং রুয়েটের কম্পিউটার কৌশল বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সৌমিক সাহা, রুয়েট ছাত্রলীগের উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. ছালাতিজ্জোহা ইফতি, রুয়েট ছাত্রলীগের উপ-মানব সম্পদবিষয়ক সম্পাদক ইফতেখারুল হক দিগন্ত, উপ-দপ্তর সম্পাদক ও ইলেকট্রনিক অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী লাশিউর রহমান নাহিদ, কমিটির সহসভাপতি ও যন্ত্রকৌশল বিভাগের ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এমএম ওসমান হায়দার তমাল এবং রুয়েট ছাত্রলীগের আরেক সহসভাপতি ও পুরকৌশল বিভাগের ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. ফাহমিদ লতিফ লিয়ন। রুয়েট ছাত্রলীগের সহসভাপতি ফাহমিদ লতিফ সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ নিয়ে ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সেখানকার নেতৃত্বে ছিলেন। ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বেগবান করতে ‘রুয়েট কমনরুম’ নামে একটি ফেসবুক পেইজে লিখেছিলেন—‘আমরা আশা রাখি, যে যেই মতাদর্শের হই না কেন, অন্যায় দেখলে বিরোধিতা করব একসঙ্গে। সবার ওপরে দেশ, এই দর্শনটাই দেশটাকে পাল্টাতে পারে। অন্যায়-অবিচার নিপাত যাক, বাংলার মানুষ মুক্তি পাক।’ তার এমন পোস্টে বিস্মিত হন ছাত্রলীগের অন্য নেতাকর্মীরা। জানতে চাইলে ফাহমিদ বলেন, আসলে কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরুর দিকে ছাত্রলীগই নেতৃত্বে ছিল। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আমিও রুয়েট ক্যাম্পাসে এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলাম। যখন দেখলাম, কোটা সংস্কার আন্দোলন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হচ্ছে, তখনই আমি নিজেকে গুটিয়ে নিই। আসলে আমার বিরুদ্ধে কোনো ‘ক্লেম’ না পেয়ে বিরোধী পক্ষ কোটা আন্দোলনকে সামনে আনার চেষ্টা করছে। আরেক সহসভাপতি লাশিউর রহমান নাহিদের বিরুদ্ধেও মাদক-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া তিনি নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম করছিলেন। গত নভেম্বরে তিনি ক্যাম্পাস ছাড়েন। চলতি মাসের শুরুতে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর ক্যাম্পাসে এসে আবারও ছাত্রলীগে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করেন। এ বিষয়ে জানতে নাহিদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। ছাত্রলীগের উপ-মানব সম্পদবিষয়ক সম্পাদক ইফতেখারুল হক দিগন্ত বেশ আলোচনায় রয়েছে। তবে ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুবিজুর রহমান আবাসিক হলের গেস্টরুমে তার বিরুদ্ধে কিছু অবৈধ মালপত্রসহ অসামাজিক কাজে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ ওঠে। জানতে চাইলে ছাত্রলীগের এ নেতা বলেন, ওই দিন হলের গেস্টরুমে আরও বেশ কয়েকজন ছিলেন। সন্দেহের বশবর্তী হয়ে আমাকে তৎকালীন প্রভোস্ট কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিলেন। আসলে সম্মেলনকে ঘিরে অনেকেই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য সৌমিক সাহা বলেন, যোগ্য, সৎ এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে যারা সর্বদা সচেষ্ট থেকে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে, এমন রানিং কোনো শিক্ষার্থীকে শীর্ষ পদে নীতিনির্ধারকরা বসাবেন বলে প্রত্যাশা রাখি। রুয়েট ছাত্রলীগের উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. ছালাতিজ্জোহা ইফতি বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রকৃত সৈনিক এবং রুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগকে আরও বেশি গতিশীল করতে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে, এমন যোগ্য কেউ নেতৃত্বে আসবে বলে আশাবাদী। এ বিষয়ে রুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহা. ইসফাক ইয়াসশির ইপু বলেন, আলোচনায় যারাই থাকুক না কেন, নতুন কমিটিতে তাদেরই আসা উচিত যারা ছাত্রলীগের একমাত্র অভিভাবক দেশরত্ন শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করবে। এ ছাড়া তার পরিচ্ছন্ন ইমেজ এবং সততা থাকতে হবে। রুয়েটের কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। রুয়েট ছাত্রলীগ সভাপতি মোহা. ইসফাক ইয়াসশির ইপুর সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান বক্তা থাকবেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। রুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান তপুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ডা. আনিকা ফারিহা জামান অর্ণা।
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

বঙ্গবন্ধু ও সাঈদীর জানাজার তুলনা, রুয়েট কর্মকর্তার কক্ষে ছাত্রলীগের তালা
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আমৃত্যু দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজায় উপস্থিতির তুলনা দেখিয়ে একটি ছবি ফেসবুকে শেয়ার করা রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) কর্মকর্তা মো. মিলনুর রশিদকে তার কক্ষ থেকে বের করে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।  সোমবার (২৮ আগস্ট) বিকেল সোয়া ৩টার দিকে রুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধীনস্ত ফাউন্ড্রিশপ চেম্বার থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া অভিযুক্ত রুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের সেই সিনিয়র টেকনিক্যাল অফিসার মো. মিলনুর রশিদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তার এমন ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. নীরেন্দ্রনাথ মুস্তাফিকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।  ওই কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম।  কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের অধ্যাপক ড. আলি হোসেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও সম্প্রসারণ দপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক প্রকৌশলী মুফতি মাহমুদ রনি। রুয়েট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জানাজায় মানুষের উপস্থিতির সঙ্গে সম্প্রতি সাঈদীর জানাজায় উপস্থিতির তুলনা দেখিয়ে একটি কোলাজ ছবি নিজের ফেসবুকে শেয়ার করেন রুয়েটের কর্মকর্তা মো. মিলনুর রশিদ। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর এই নেতার মৃত্যুর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে তার জীবনকর্মসহ বিভিন্ন পোস্ট শেয়ার করেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে গত ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হেয় করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো জানাজার ওই ছবিটি শেয়ার করেন তিনি। এতে রুয়েটসহ পুরো রাজশাহীজুড়ে সমালোচনার ঝড় ও তোলপাড় শুরু হয়। শুধু এই কর্মকর্তাই নয়; দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী মারা যাওয়ার পর ‘আল্লাহ আল্লামা সাঈদীকে জান্নাতের মেহমান করে নিন’ এই শিরোনামে একটি বিক্ষোভের ভিডিও শেয়ার করেন রুয়েটের নির্বাহী প্রকৌশলী ও সাবেক শিবির নেতা আহসান হাবীব।  রুম থেকে বের করে দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিযুক্ত রুয়েট কর্মকর্তা মো. মিলনুর রশিদ বলেন, ‘ছাত্রলীগ আমার কক্ষে এসে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও জোরপূর্বক আমাকে আমার কক্ষ থেকে বের করে দিয়ে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। আমি এখন কথা বলার পরিস্থিতিতে নেই। পরে আপনার সঙ্গে কথা বলব।’ তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে তুচ্ছতাচ্ছিল্যের উদ্দেশে নয়; বরং নিজের ফেসবুকে বিষয়টি রেখে দেওয়ার জন্য শেয়ার করা হয়েছে। সত্য কথা বলতে ফেসবুক সম্পর্কে আমি তেমন কিছু জানি না, বুঝিও না। তবে কোনো কিছু ভালো লাগলে আমার ফেসবুকে শেয়ার করি।’  রুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহা. ইসফাক ইয়াসশির ইপু বলেন, ‘অভিযুক্ত রুয়েট কর্মকর্তার এমন জঘন্য কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানতে সোমবার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তার কক্ষে যান। এ সময় মিলনুর রশিদ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। এমন পরিস্থিতিতে ছাত্রলীগের উত্তেজিত নেতাকর্মীরা তাকে কক্ষ থেকে বের দিয়ে সেখানে তালা ঝুলিয়ে দেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. রবিউল আওয়ালের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলি এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করি। আমাদের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হেয়প্রতিপন্ন করে ফেসবুকে ছবি শেয়ারকারী ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আমরা ক্যাম্পাসে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।’ জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য, রুয়েটের গবেষণা ও সম্প্রসারণ দপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক প্রকৌশলী মুফতি মাহমুদ রনি বলেন, ‘আমাকে তদন্ত কমিটিতে রাখা হয়েছে সে বিষয়ে আমি অবগত নই। আপনার কাছেই শুনলাম। আগে চিঠিটা হাতে পাই তারপর বলতে পারব।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি আসলে এ বিষয়ে (বঙ্গবন্ধু ও সাঈদীর জানাজার তুলনা করে ছবি শেয়ারের বিষয়টি) কিছুই জানি না। না জেনে মন্তব্য করা তো ঠিক নয়।’ রুয়েট ভিসি অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘জাতির জনকের বিষয়ে কোনো আপস নয়। যারা বঙ্গবন্ধুকে অবমাননাকর বক্তব্য কিংবা কার্যকলাপ করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা ইতোমধ্যেই ওই ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। কমিটিতে তিন কর্মদিবসের মধ্যেই প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ও সর্বোচ্চ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’  এক প্রশ্নের জবাবে ভিসি বলেন, ‘অন্য কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এমন ঔদ্ধত্য দেখিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি শেয়ার করে থাকলে তদন্ত কমিটিকে তাদের বিষয়েও প্রতিবেদনে উল্লেখ করতে বলা হয়েছে।’  তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যেই আমরা সতর্কতামূলক একটি নোটিশ জারি করেছি। সেখানে বলেছি, রুয়েটের কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থী বর্ণিত বিষয়ে কোনো স্পর্শকাতর কনটেন্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট কিংবা শেয়ার করলে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’  
২৮ আগস্ট, ২০২৩

বঙ্গবন্ধু ও সাঈদীর জানাজার তুলনা করে ছবি শেয়ার রুয়েট কর্মকর্তার
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজায় উপস্থিতির তুলনা দেখিয়ে একটি ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) কর্মকর্তা মো. মিলনুর রশিদ। গত সোমবার ছবিটি শেয়ার করেন তিনি। তার এমন কাণ্ডে রাজশাহীজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। মো. মিলনুর রশিদ রুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের সিনিয়র টেকনিক্যাল অফিসার হিসেবে কর্মরত। এ ছাড়া তিনি রুয়েট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। এ প্রসঙ্গে মিলনুর রশিদ বলেন, বঙ্গবন্ধুকে তুচ্ছতাচ্ছিল্যের উদ্দেশ্যে নয়; বরং নিজের ফেসবুকে বিষয়টি রেখে দেওয়ার জন্য শেয়ার করা হয়েছে। সত্য কথা বলতে ফেসবুক সম্পর্কে আমি তেমন কিছু জানি না, বুঝি না। তবে কোনো কিছু ভালো লাগলে আমার ফেসবুকে শেয়ার করি। এ বিষয়ে রুয়েট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মো. আল বেরুনী ফারুক বলেন, ‘আমি ফেসবুক চালাই না, বিষয়টি আমাকে কেউ অবগতও করেনি। ফলে বিষয়টি সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহাল নই।’ রুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইসফাক ইয়াসশির ইপু বলেন, রুয়েট কর্মকর্তার এমন জঘন্য কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু পরিষদ রুয়েট শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান রিপন বলেন, ওই কর্মকর্তা জঘন্য অপরাধ করেছেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। রুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এটি কোনো প্রফেশনাল কথা হচ্ছে না, এগুলো কোনো পলিটিক্যাল পার্টিকে জিজ্ঞেস করেন। কোনো ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনিক্যাল প্রশ্ন করলে আমি উত্তর দিতে পারব।’
২৮ আগস্ট, ২০২৩

রুয়েট কর্মকর্তার ‘বঙ্গবন্ধু ও সাঈদীর জানাজার’ ছবি শেয়ার নিয়ে তোলপাড়
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে ওপর নির্মিত একটি চলচ্চিত্র থেকে ১৯৭৫ সালে তার জানাজায় মানুষের উপস্থিতির একটি ছবির সঙ্গে সম্প্রতি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজায় উপস্থিতির তুলনা দেখিয়ে একটি কোলাজ ছবি নিজের ফেসবুকে প্রোফাইলে শেয়ার করেছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) কর্মকর্তা মো. মিলনুর রশিদ।  মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর এই নেতার মৃত্যুর পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে তার জীবনকর্মসহ বিভিন্ন পোস্ট শেয়ার করেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে গত ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে ‘হেয়’ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া জানাজার ওই ছবিটি শেয়ার করেন তিনি। এতে রুয়েটসহ রাজশাহীজুড়ে সমালোচনার ঝড় ও তোলপাড় শুরু হয়েছে। অভিযুক্ত মো. মিলনুর রশিদ রুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের সিনিয়র টেকনিক্যাল অফিসার হিসেবে কর্মরত। এ ছাড়া রুয়েট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। অভিযোগের বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মো. মিলনুর রশিদ বলেন, বঙ্গবন্ধুকে তুচ্ছতাচ্ছিল্যের উদ্দেশে নয়, বরং নিজের ফেসবুকে বিষয়টি রেখে দেওয়ার জন্য শেয়ার করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সত্য কথা বলতে ফেসবুক সম্পর্কে আমি তেমন কিছু জানিই না, বুঝিই না। তবে কোনো কিছু ভালো লাগলে আমার ফেসবুকে শেয়ার করি।' প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন টেকনিক্যাল অফিসার হয়ে প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা নেই কেন জানতে চাইলে মো. মিলনুর রশিদ বলেন, 'এটা আমার মূর্খতা বা অজ্ঞতা। ফলে কোনো কিছু বুঝে এটা করিনি। জাস্ট শেয়ার করে রেখেছি।’ এ বিষয়ে জানতে রুয়েট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মো. আল বেরুনী ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও ফেসবুক ব্যবহার করেন না জানিয়ে বলেন, ‘আমি কখনো ফেসবুক চালাই না, বিষয়টি আমাকে কেউ অবগতও করেনি।  ফলে বিষয়টি সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহাল নই।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা অরাজনৈতিক সংগঠন। ফলে আমাদের নীতির বাইরে গিয়ে এমন কর্মকাণ্ড করলে আমাদের সাথে থাকতে পারবে না। বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ রুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহা. ইসফাক ইয়াসশির ইপু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দেশের অন্য যে কোনো মানুষের তুলনা হয় না। সুতরাং একজন মানবতাবিরোধী সাজাপ্রাপ্ত আসামির সঙ্গে জাতির জনকের তুলনা আমরা কোনোভাবেই মানতে পারি না। আমরা রুয়েট কর্মকর্তার এমন জঘন্য কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।’ বঙ্গবন্ধু পরিষদ রুয়েট শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান রিপন বলেন, ‘রুয়েটের ওই কর্মকর্তা জঘন্য অপরাধ করেছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সংবিধান স্বীকৃত একটি নাম। তার সাথে হাইকোর্টের আপিল বিভাগ থেকে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত একজন আসামির তুলনা করা জঘন্য অপরাধের শামিল। জাতির জনককে নিয়ে এমন ধৃষ্টতা প্রদর্শনকারী রুয়েটের ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমরা রুয়েট প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি। সেই সাথে রুয়েটের বঙ্গবন্ধু পরিষদের অন্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে এই বিষয়ে দ্রুত আমরা আমাদের করণীয় ঠিক ঠিক করব।’      সার্বিক বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে রুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এটা কোনো প্রফেশনাল কথা হচ্ছে না, এগুলো কোনো পলিটিক্যাল পার্টিকে জিজ্ঞাসা করেন। কোনো ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনিক্যাল প্রশ্ন করলে আমি উত্তর দিতে পারব। ভূমিকম্প, প্ল্যানিং, আর্কিটেকচার, গাড়ি বানানো এগুলো বললে আমি উত্তর দিতে পারব।’ ফেসবুকে সাঈদীর প্রচারণা চালানো ব্যক্তি রুয়েটের কর্মকর্তা বলেই আপনাকে ফোন করা হয়েছে জানালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘আপনি একজন ইঞ্জিনিয়ারকে, একজন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে প্রফেশনাল কথা জিজ্ঞাসা করেন নাই। আপনি কী বলেছেন আমি শুনিও নাই। যারা পলিটিক্যাল এসব বিষয়ে আপনি তাদের প্রশ্ন করেন।’
২৭ আগস্ট, ২০২৩

এক বছর পর উপাচার্য পেল রুয়েট
এক বছরের বেশি সময় পর রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) নিয়মিত উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম আগামী চার বছরের জন্য এই নিয়োগ পেয়েছেন। গতকাল রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রোখছানা বেগম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। এদিকে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ড. মো. দিদার-উল আলম। রুয়েট সূত্রে জানা যায়, গত বছরের জুলাইয়ে নিয়মিত উপাচার্য রফিকুল ইসলামের মেয়াদ শেষ হয়। পরে ৩ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেনকে উপাচার্যের দৈনন্দিন কার্যসম্পাদনের দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়। তবে গত ২৮ মে পদোন্নতির দাবিতে শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন তিনি। দ্বিতীয় মেয়াদে নোবিপ্রবির উপাচার্য দিদার-উল আলম: নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) উপাচার্য পদে দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মো. দিদার-উল আলম। গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালের ১২ জুন প্রথম মেয়াদে উপাচার্য পদে নিয়োগ পান অধ্যাপক ড. দিদার।
১৪ আগস্ট, ২০২৩

এক বছর পর উপাচার্য পেল রুয়েট
এক বছরের বেশি সময় পর রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) নিয়মিত উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম আগামী চার বছরের জন্য এই নিয়োগ পেয়েছেন। রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোছা. রোখছানা বেগম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৩ -এর ১০(১) ধারা অনুযায়ী চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলমকে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর পদে নিয়োগ করা হলো। নিয়োগের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি শর্ত দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে তার নিয়োগের মেয়াদ যোগদানের তারিখ থেকে চার বছর হবে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর প্রয়োজনে যে কোনো সময় এ নিয়োগ বাতিল করতে পারবেন। ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে তিনি তার বর্তমান পদের সমপরিমাণ বেতনভাতাদি এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সার্বক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন এবং এ নিয়োগ তার যোগদানের তারিখ থেকে কার্যকর। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের জুলাইয়ের শেষ দিকে নিয়মিত উপাচার্য রফিকুল ইসলামের মেয়াদ শেষ হয়। পরে ৩ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে রুয়েটের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ও অ্যাপ্লায়েড সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ অনুষদের ডিন সাজ্জাদ হোসেনকে উপাচার্যের দৈনন্দিন কার্যসম্পাদনের দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়। তবে চলতি বছর ২৮ মে পদোন্নতির দাবিতে শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন তিনি। তাকে নিয়োগের সময় শিক্ষকদের পদোন্নতির ক্ষমতা দেওয়া হয়নি, এই কারণ জানিয়ে তিনি পদত্যাগ করেন। এর পর থেকে একাডেমিক পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়। গত ২২ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ সিরিজের (২০১৭ সালের) শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার দাবিতে আন্দোলন করেন। পরে বিভিন্ন অনুষদের ডিনদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন শিক্ষার্থীরা। ২ আগস্টের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরীক্ষার রুটিন দেওয়া হবে বলে শিক্ষকরা আশ্বস্ত করেন। পরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেন। এরই মধ্যে ১ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে পুরকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিয়ামুল বারিকে একাডেমিক কার্যক্রমের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু বিভাগীয় প্রধান না থাকায় সব বিভাগের সঙ্গে পরীক্ষায় বসতে পারছিলেন না দুই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। সেই শিক্ষার্থীদের একটি বিভাগ আবার আন্দোলনে নামেন। রুয়েটের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক সেলিম হোসেন বলেন, নিয়মিত উপাচার্য যোগদান করলেই রুয়েটের অচলাবস্থা দূর হয়ে যাবে। দ্রুতই তিনি এখানে যোগদান করবেন। নিয়মিত উপাচার্য পাওয়ায় রুয়েটের সবাই খুশি হয়েছেন।
১৩ আগস্ট, ২০২৩
X