সম্পাদকীয় / এবার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হোক
বিজিপি সদস্যসহ ৩৩০ জন মিয়ানমারের নাগরিকের দেশে ফেরত পাঠানো এই মুহূর্তে অত্যন্ত ইতিবাচক, স্বস্তিদায়ক ও সাফল্যের খবর। মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধের উত্তাপ ছড়িয়েছে দেশটির সীমান্তবর্তী দেশগুলোতেও। এই যুদ্ধ চলছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে। চলতি মাসের শুরুর দিকে উত্তেজনা সরাসরি পৌঁছে বাংলাদেশে। এর অংশ বা পক্ষ না হয়েও বাংলাদেশকে সরাসরি এ পরিস্থিতির ফল ভোগ করতে হচ্ছে। দিনরাত সীমান্তের ওপার মিয়ানমারে গোলাগুলির শব্দ, দেশের ভূখণ্ডে মর্টার শেল এসে পড়াসহ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে সীমান্তজুড়ে। বৃহস্পতিবারও সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপে মর্টার শেল ও গুলির বিকট শব্দ রীতিমতো আতঙ্ক ছড়ায়। চলতি মাসেই ওপার থেকে আসা গোলায় দেশের ভূখণ্ডের একাধিক ব্যক্তি নিহত ও আহত হন। এরই মধ্যে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান লড়াইয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে দেশটির সীমান্তরক্ষী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ ৩৩০ জন। অনুপ্রবেশের জন্য সীমান্তের ওপারে অপেক্ষায় থাকে শত শত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। এ পরিস্থিতিতে দেশের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা, নিরাপত্তা রক্ষা, অনুপ্রবেশ ঠেকানো এবং অনুপ্রবেশ করা মিয়ানমার নাগরিকদের ফেরত পাঠাতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তৎপর হয় বাংলাদেশ। ফলে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পালিয়ে আসা দেশটির ৩৩০ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। শুক্রবার কালবেলায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের ইনানী এলাকার নৌবাহিনী জেটিঘাট দিয়ে ওই ৩৩০ জনকে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ফেরত পাঠানো মিয়ানমারের নাগরিকদের মধ্যে রয়েছেন বিজিপির ৩০২ জন সদস্য, তাদের পরিবারের চার সদস্য, দুজন সেনাসদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং চারজন বেসামরিক নাগরিক। এ মাসের প্রথম সপ্তাহেই অনুপ্রবেশ ঘটে মিয়ানমার নাগরিকদের। তারা এসে অস্ত্রসহ বিজিবির কাছে আত্মসমর্পণ করেন। মিয়ানমারের এ নাগরিকদের বিজিবি হেফাজতে কক্সবাজারের টেকনাফ ও বান্দরবানের ঘুমধুমের দুটি স্কুলে রাখা হয়। এরপর শুরু হয় তাদের ফেরত পাঠানোর তৎপরতা। বিজিবির রামু সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মেহেদী হোসাইন কবীরের নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও পুলিশের প্রতিনিধির সমন্বয়ে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। মিয়ানমারের স্বাধীনতার পর থেকে সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে অভ্যন্তরে সংঘাত চলমান থাকলেও দেশটির জান্তা বা সামরিক শাসকরা এবারের সংকট সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের ৭৫ বছরের দীর্ঘ ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন। এমন পরিস্থিতিতে ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের যে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে, তা কিন্তু এখনো দূর হয়নি। একই সঙ্গে আরও শক্তিমত্তা নিয়ে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রশ্নটি সামনে এসেছে। মিয়ানমারের ৩৩০ জন নাগরিককে দুই দেশের কূটনৈতিক বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে যদি ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়, তাহলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ফেরত পাঠাতে বাধা কোথায়? আমরা মনে করি, সীমান্তজুড়ে উদ্ভূত সংকটময় পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের নাগরিকদের ফেরত পাঠানো দেশের কূটনৈতিক দপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের বড় সাফল্য। অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকার যে দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে এ বিষয়ে কৌশলী তৎপরতা চালিয়েছে, এ ঘটনা তারই সাক্ষ্য। সীমান্তজুড়ে কঠোর নিরাপত্তায় সর্বত্রভাবে সজাগ ও সতর্ক থেকে যেসব বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে, তারা সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, অনুপ্রবেশ ঠেকানো এবং সীমান্তবাসীর উদ্বেগ ও আতঙ্ক দূরে রাখবে এ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে, এটাই চাওয়া।
১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

আশা করি দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে পারব : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি কোনো সময় ভালো ছিল না। কখনো একটু ভালো হয়, আবার কখনো একটু খারাপ হয়। এ পরিস্থিতি সবসময় বিরাজমান। আমরা আশা করি, এ পরিস্থিতি সবসময় থাকবে না। আমরা অতি দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে পারব। রোববার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে সকালে চীন ও নেপালের রাষ্ট্রদূত এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘের প্রেসিডেন্টের কো-অর্ডিনেটর দেখা করতে আসেন। হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা বাংলাদেশের জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত সরকার। আমাদের পররাষ্ট্র নীতি হচ্ছে ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’। আমাদের সঙ্গে চীন, ভারত, রাশিয়ার যেমন অত্যন্ত চমৎকার সম্পর্ক, আমাদের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউকের সঙ্গেও চমৎকার সম্পর্ক। আজ সকালে চীনের রাষ্ট্রদূত, বাংলাদেশে জাতিসংঘের প্রেসিডেন্টের কো-অর্ডিনেটর এবং নেপালের রাষ্ট্রদূত আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীন আমাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী। বিশেষ করে আমাদের দেশের বড় বড় ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও সেতু নির্মাণে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। নির্বাচনের পরপরই চীনের প্রেসিডেন্ট অভিনন্দন জানিয়েছে। চীনের সঙ্গে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সহযোগিতা রয়েছে। এই বাণিজ্য এখনও চীনের ফেভারে। চীন থেকে আমরা তিসি আমদানি করি এবং গম রপ্তানি করি। এ বিষয়ে চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলাপ করেছি। তারা বাংলাদেশ থেকে পাট, চামড়া, মাংস, সিফুড ও মাছ আরও বেশি আমদানি করতে চায়। এর বাইরে তারা বাংলাদেশ থেকে আম আমদানি করতে চায়। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এ বছরের সেকেন্ড হাফ অর্থাৎ জুলাই মাসের পর থেকে তারা আমদানি করতে পারে। আমরা যেহেতু গম রপ্তানি করি এবং চীন আমাদের বড় একটা মার্কেট, এজন্য শুল্কমুক্ত বাণিজ্যিক সুবিধা নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনার মধ্যে আছি। আমরা যাতে চীনের শুল্কমুক্ত পণ্য প্রবেশের সুবিধা পাই। হাছান মাহমুদ বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আমাদের দেশের জন্য একটি বোঝা। আমাদের প্রধানমন্ত্রী মানবিক কারণে ২০১৭ সালে সীমান্ত খুলে দিয়েছিলেন। সেই সময় ওই এলাকার মানুষ তাদের হৃদয়ও খুলে দিয়েছিল। কিন্তু মিয়ানমারের শরণার্থীরা কক্সবাজারে যে এলাকায় আছে, সে এলাকার বাসিন্দারা এখন মাইনরিটি হয়ে গেছে। মিয়ানমারে সব রাইটসহ তাদের প্রত্যাবর্তন একমাত্র সমস্যার সমাধান। এটা নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে আলোচনা হয়েছে। আমরা চীনের সহযোগিতা কামনা করেছি। তারা আমাদের জানিয়েছে, তারা মিয়ানমারের সঙ্গে এনগেজমেন্টের মধ্যে আছে। তারা মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করেছে। তারা মিয়ানমারকে বলছে, অন্তত বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাবর্তনটা শুরু করার জন্য।
২৮ জানুয়ারি, ২০২৪

নির্বাচনের আগেই শুরু হবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সঙ্গে চীন নিবিড়ভাবে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই মিয়ানমারের রাখাইনে কিছু রোহিঙ্গাকে পাঠানোর মাধ্যমে প্রত্যাবাসন শুরু হবে। পাইলট প্রকল্পের যাত্রা হিসেবে শিগগিরই সফলতার যাত্রা করতে পারব আমরা। গতকাল শুক্রবার কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চীন দূতাবাস কর্তৃক প্রদত্ত মেডিকেল যন্ত্রপাতি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রত্যাবাসন একটা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। তারপরও আমাদের আশা, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রত্যাবাসন শুরু হবে। তবে এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। চীনকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ভালো বন্ধু দাবি করে ইয়াও ওয়েন বলেন, দুই দেশের অনুরোধে চীন সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করছে। আমরা তাদের একত্রিত করে রোহিঙ্গা সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করছি। আমরা খুশি যে, এই কাজে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। এখানে মিয়ানমারের কর্মকর্তারা এসেছেন এবং কিছু রোহিঙ্গা রাখাইনে গিয়ে ভিজিট করেছেন। আমি বিশ্বাস করি, একটা ঐকমত্য হয়েছে, যাতে পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু রোহিঙ্গা ফিরে যেতে পারে। চীন দূতাবাসের পক্ষ থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ১০টি মেডিকেল যন্ত্রপাতি হস্তান্তর করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হয়ে উপহার সামগ্রী গ্রহণ করেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আশিকুর রহমান। সঙ্গে ছিলেন পরিচালনা কমিটির সদস্য কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবু তাহেরসহ অন্যরা। এর আগে চীনের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্টকেও ৭টি মেডিকেল যন্ত্রপাতি হস্তান্তর করা হয় বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
১১ নভেম্বর, ২০২৩

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে টেকনাফে মিয়ানমারের ৩৪ প্রতিনিধিদল
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছেছে মিয়ানমারের ৩৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সকালে দুটি নৌযানে করে টেকনাফের ট্রানজিট জেটিঘাটে পৌঁছায় মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলটি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে এখনো দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। এর মধ্যে আগের ২টি ট্রানজিট ক্যাম্প ছাড়াও চলছে আরও ৩টি ট্রানজিট ক্যাম্প নির্মাণের কাজ। তার মধ্যে মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সকালে প্রত্যাবাসনের ইস্যুতে বাংলাদেশ এসেছে মিয়ানমারের ৩৪ সদস্যের প্রতিনিধিদল। প্রত্যাবাসনের পক্ষে রোহিঙ্গাদের উদ্বুদ্ধকরণ এবং যাচাই-বাছাই করতে মঙ্গলবার সকালে কক্সবাজারের টেকনাফ হয়ে মিয়ানমার প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ এসেছে। কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মো. মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, জল ও স্থল দুই পথেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হবে; যা ২০১৮ সালে দু’দেশের চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে। আমরা জল ও স্থল দুই পথেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুত রয়েছি। ২০১৮ সালে দুটি ট্রানজিট ক্যাম্প নির্মাণ করেছি। ধারণা করেছিলাম, ২০১৮ সাল থেকে প্রত্যাবাসন কার্যক্রমটা শুরু হবে। আমরা আরও ৩টি ট্রানজিট ক্যাম্প নির্মাণ হাতে নিয়েছি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরকে বরাদ্দ দিয়েছে প্রায় ৬ কোটি টাকার মতো। কাজ শুরু হয়েছে এবং দ্রুত শেষও হবে, যা আমরা তদারকি করছি। কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের সূত্র বলছে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু, ঘুমধুম ও টেকনাফে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য আরও নতুন ৩টি ট্রানজিট সেন্টার নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের তত্ত্বাবধানে এ সেন্টারগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। এর আগে ২০১৮ সালে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারের টেকনাফে ২টি ট্রানজিট সেন্টার নির্মাণ করা হয়। মিজানুর রহমান বলেন, চলতি বছর মিয়ানমার প্রতিনিধিদল দুবার বাংলাদেশে আসে। এর মধ্যে একবার রোহিঙ্গাদের যাচাই-বাছাই করে, এর পরের বার প্রতিনিধি দলটি রোহিঙ্গদের সঙ্গে বসে এবং তাদের দাবি-দাওয়ার কথাগুলো শোনেন। আজও একইভাবে আরেকটি মিয়ানমার প্রতিনিধিদল এসেছে। তারা রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলবেন। মূলত প্রত্যাবাসন নিয়ে রোহিঙ্গাদের দাবি-দাওয়া ছিল, তা মিয়ানমার প্রতিনিধিদল যে ব্যবস্থা নিয়েছেন সে ব্যাপারে রোহিঙ্গাদের অবহিত করবেন। আমরা এর একটি পরিবেশ ও আয়োজনের ব্যবস্থা করছি। মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের সদস্য সংখ্যা ৩৪ জন। তার মধ্যে ৪ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তারা ট্রলারে অবস্থান করবেন এবং বাকি ৩০ জন সদস্য রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলবেন। মো. মিজানুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার সকালে দুটি ট্রলারযোগে নৌপথে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলটি টেকনাফে পৌঁছেছে। তাদের জন্য টেকনাফের সড়ক ও জনপদ বিভাগের সরকারি রেস্ট হাউসে আয়োজন করা হয়েছে। রোহিঙ্গা নেতারা মিয়ানমার প্রতিনিধি দল আসার আগেই রেস্ট হাউসে উপস্থিত ছিলেন। এরপর মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রোহিঙ্গা নেতাদের আলোচনা হবে। আমরা আশা করি, দুপক্ষের কথাবার্তার মাধ্যমে তাদের মধ্যে যে আস্থার সংকট রয়েছে, সেটি দূর হবে এবং অচিরেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে, যার জন্য আমরা প্রস্তুত।
৩১ অক্টোবর, ২০২৩

বাংলাদেশের অগ্রাধিকার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন
জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো বাংলাদেশের অগ্রাধিকার বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক, নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়ার সঙ্গে জাতিসংঘের ৭৮তম অধিবেশনের ফাঁকে সৌজন্য সাক্ষাতে তিনি এ মন্তব্য করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন করা। আজরা জেয়া প্রধানমন্ত্রীকে জানান, রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের জন্য ১১৬ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরুর আগে তাদের নিরাপত্তা ও উন্নত জীবিকা নিশ্চিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন জেয়া। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা উচিত, অন্যথায় এ অঞ্চল নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে। কারণ, রোহিঙ্গারা এরই মধ্যে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে, যার মধ্যে রয়েছে হত্যা, আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান এবং মাদক ব্যবসা। শেখ হাসিনা আরও বলেন, রোহিঙ্গারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তাদের প্রত্যাবাসন দীর্ঘায়িত হচ্ছে, তারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। তারা সেখানে কোনো ভবিষ্যৎ অনুভব করছে না। এ সময় প্রধানমন্ত্রী গাম্বিয়ার আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) করা মামলায় আন্তর্জাতিক সমর্থনও চেয়েছেন। ফ্রান্স, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক ও মালদ্বীপ মামলার প্রতি সম্মতি দিয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচন নিয়েও আলোচনা করেন। এ প্রসঙ্গে আজরা জেয়া বলেন, তারা বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অহিংস নির্বাচন চান। দেশের সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচন হবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সহিংসতামুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। জনগণের ভোটে বিশ্বাস করি। জনগণের ভোট ছাড়া কেউ ক্ষমতায় আসতে পারে না। কারচুপির মাধ্যমে কেউ ক্ষমতায় এলে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। আসন্ন নির্বাচন ঘিরে অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে মোমেন বলেন, আগামী সাধারণ নির্বাচনে আমরা বিদেশি পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানাই। ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বেশিরভাগ দেশই নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের অনুমতি দেয় না। এ ছাড়া গণহত্যা প্রতিরোধে জাতিসংঘের বিশেষ দূত অ্যালিস ওয়াইরিমু এনদেরিতুও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যাকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান। এ ছাড়া তিনি মিয়ানমারে গণহত্যার বিচার অব্যাহত রাখতে জাতিসংঘের সহযোগিতা চেয়েছেন। এদিকে গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন প্রধানমন্ত্রী।
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
X